পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু

পৌলোমী সেনগুপ্ত

পটলাকে নিয়ে আবার আমরা এক প্রবলেমে পড়েছি। অবশ্য পটলা আমাদের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ ক্লাবের শিরোমণি কাম কামধেনু। পটলাদের বাড়ির অবস্থা খুবই ভাল। কুলেপাড়ায় সবটাই প্রায় ওদের। পটলা ওদের বংশের একমাত্র শিবরাত্রির সলতে-জ্বলা বংশপ্রদীপ। ওর ঠাকুরমার নামেও বিশাল বাজার। ওর বাবা-কাকার দু’-তিনটে চালু কারখানা।

সেই পটলাই আমাদের ক্লাবের কামধেনু। ওদের দৌলতেই ক্লাবের পাকা বাড়ি, ঘেরা মাঠ, ব্যায়ামাগার। তাই যে গোরুর দুধ দোয় দুধওলা, তাকে গুঁতো যেমন খেতে হয়, আমরাও তেমনই ওই কামধেনু পটলার হম্বিতম্বিও মুখ বুজে সহ্য করতে বাধ্য হই। আর তাই নিয়ে আমরাও নানা সমস্যায় পড়ে নাজেহাল হই।

পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের পাঁচটি মাথা আমি, হোঁতকা, গোবর্ধন, ফটিক আর সকলের আগে থাকে নৈবেদ্যের গায়ে কদমার মতো এই পটলচন্দ্র। ক্লাবের জন্য পটলার ভাবনারও অন্ত নেই। পটলা অবশ্য তার জন্য টাকাও খরচ করে দু’হাতে। ফান্ড আসে ওর ঠাকুরমার তহবিল থেকে।

পটলা এবার বেশ কিছুদিন থেকেই প্ল্যান করেছে ক্লাবের দুর্গাপুজোয় সে এমন একটা চটকদার থিমের রূপায়ণ করবে যে, কলকাতায় ইদানীং যেসব প্রতিষ্ঠান পুজোমণ্ডপ, মূর্তি ইত্যাদির জন্য প্রাইজ দেয়, তাদের সবকটা প্রাইজই পটলা এবার লুটে নেবে। আর দুর্গাপুজো নয়, হবে এবার ওই থিম নামক কোনও নতুন আমদানি করা অদৃশ্য দেবতার পুজো। তাই নিয়ে ক্লাবে জরুরি মিটিংও ডাকা হয়েছে। অবশ্য তার আগে পটলা ভোটগুলো নির্বিঘ্নে পাওয়ার জন্য আমাদের চারমূর্তিকে ওর বাড়িতে ডেকে ভূরিভোজ করিয়েছে।

ওর ঠাকুরমাও বললেন, “হ্যাঁ রে সমীর, হোঁতকা, ফটিক, গোবর্ধন তোরা এসেছিস? পটল এবার কী নতুন পুজো করবে বলে জেদ ধরেছে! তোরা ওকে পুজোটা ওর মনোমতো করেই করতে দে!”

আমরাও জানি, ওই অর্থবান ঠাকুরমার একমাত্র নাতির প্রতি বেশ দুর্বলতাই রয়েছে। তার জন্য ওঁর সিন্দুকে অঢেল টাকাও রয়েছে। আমরাও পটলার দৌলতে বেশ রসেবশেই আছি। ক্লাবও চলে স্বমহিমায়। ফুটবল টিম, টুর্নামেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গণভোজন, নানা কিছু হয়। তাই ঠাকুরমার কথায় বাধ্য হয়েই বললাম, “ঠিক আছে ঠাকুরমা। আপনি যখন বলছেন, তাই হবে। পটলার থিমপুজোই হবে এবার। তবে এত টাকা খরচ…।”

ঠাকুরমা বললেন, “খরচাপাতির জন্য ভাবতে হবে না। আমি সরকারমশাইকে বলে দেব।”

লাগে কড়ি দেবে গৌরী সেন। যাই হোক, আমাদেরই ক্লাবের নাম ছড়াবে।

তাই পটলার মিটিংয়ে দু’-চারজন বাধা দিয়ে পুরনো প্রথায় পুজো করার কথা বলেছিল বটে, কিন্তু তাদের নস্যাৎ করে পটলার থিমকে বিপুল ভোটে জয়ী করিয়ে এনেছি। পটলাও খুশি। সেদিন সন্ধ্যেয় ক্লাবে পটলাই ন্যাপার দোকান থেকে গরম গরম প্রন-কাটলেট আর কফি আনিয়ে বলল, “তা হলে পু-পুজোর কাজ শুরু করা যাক?”

তখন অন্য ক্লাব, বিশেষ করে আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘ইলেভেন বুলেটস’ সবে তাদের পুজোর থিম নিয়ে গোপন বৈঠক সেরে কোথায় আদিবাসী শিল্পীদের পাওয়া যায় তার সন্ধানে রয়েছে। তাই আমাদেরও প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

হোঁতকা বলল, “তয় তর থিমখান কী তা আমাগোর খুইল্যা বল।”

পটলা বলল, “খুব সি-সিক্রেট কেস।”

পটলা উত্তেজিত হলে ওর জিভটা আলটাকরায় সেট হয়ে যায়। পটলা বলল, “তোদের সব জানাব। মা হবেন মাধুর্যময়ী। একেবারে প্রচলিত ধারায় যেমন হন, তেমন রূপই হবে। আমরা নতুন করে গ্রামীণ সংস্কৃতিকে তুলে ধরব মাতৃমূর্তির মাধ্যমে।”

পটলা পড়াশোনাতেও ভাল। যখন যা করে তা বাস্তব-অবাস্তব যা-ই হোক, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে, অবশ্য তার নিজস্ব রীতিতে। ফটিক গান-বাজনা-নাটক এসব নিয়ে থাকে। ও আমাদের ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। হোঁতকা গেম সেক্রেটারি। সে ফুটবলম্যাচ, ক্রিকেটম্যাচ নিয়েই থাকে। গোবরার শরীরটাও প্রকাণ্ড, আর ওদের মধ্যে একটু বেরসিক। ওর বাবা ব্যাবসা করেন। ফটিক বলল, “গ্রামীণ সংস্কৃতির কুটির শিল্পটিল্প নিয়ে কাজ এখন পাবলিক নেয় বেশি।”

পটলা বলল, “কা-কারেক্ট! সেই গ্রামীণ শিল্পীদেরই নিয়ে এসে প্রতিমা গড়াব। মায় প্যা-প্যান্ডেলও সাজাব ওই সব দিয়ে। তার নমুনাও এনেছি।”

পটলা এবার ঝোলা থেকে বিড়াল বের করার মতো জামার ভিতর থেকে প্লাস্টিকে মোড়া একটা জিনিস বের করে টেবিলে রাখল। অবশ্য তার আগে ঘরের দরজা বন্ধ করে এসেছে। পটলা বলল, “যা দেখছিস, কাউকে বলবি না। একদম চুপচাপ থাকিস।”

মোড়ক খুলতে দেখা গেল কয়েকটা চিনির তৈরি মঠ, গণেশমূর্তি, মন্দিরের চুড়ো। ফুটকড়াই ভাজার সঙ্গে রঙিন চিনির তৈরি ছোট বড় এই সব মঠও দোকানে বিক্রি হয়। মঠগুলো দেখিয়ে পটলা বলল, “এইসব ক্ষুদ্র শিল্পই প্রমাণ করার জন্য এবার চিনির বিশেষ ধরনের পাক করে রং দিয়ে মূর্তি তৈরি হবে। আর প্যান্ডেলও সাজানো হবে এই জিনিসের তৈরি নানা পুতুল দিয়ে। জিনিসগুলো বেশ শক্তই। রংটং করলে ভালই লাগবে।”

হোঁতকা বলল, “চিনির পাকের ঠাকুর হইব! তা মন্দ হইব না। বিসর্জন করার লাগব না। এক-একজন এক-একখানা কইর‍্যা বড়ি খাই লমু। চিনি ফেলতে হইব না। আমাগোর অসুরখানাই দিবি।”

পটলা বলল, “ওসব পরে ভাবা যাবে। এখন চল, মানকর গিয়ে এসবের কারিগরদের আনতে হবে। তাদের সব প্ল্যান বুঝিয়ে দিতে হবে।”

আমরা ক’জন ক্লাবের পয়সায় বের হয়েছি মানকরের উদ্দেশে। বর্ধমানে মানকর এককালে বেশ নামী জায়গাই ছিল। আমরা মানকরে এসে ট্রেন থেকে নেমেছি। এদিকটা পুরনো আমলের গ্রাম। বাজারও আছে। আর সেখানে তৈরি হয় বড়-ছোট নানা সাইজের কদমা। ওদিকে বড় চালার নীচে কড়াইয়ে পাক হচ্ছে চিনি। তারা সেই পুরু পাকটাকে ছাঁচে ফেলে রং-বেরঙের সরেস মঠ, ছোট-বড় গণেশ, হাতি, সিংহ, অনেক কিছুই তৈরি করছে। অবশ্য সেই কারিগররা বলল, অনেক পুরনো তাদের এই ব্যাবসা। এ জিনিসের কদর ছিল সারা দেশে। এখান থেকে চালান যেত সব জায়গায়। কিন্তু এখন যুগ আধুনিক হয়েছে, মানুষ এই কদমা-মঠ শিল্পকে আর কদর করে না। এখন এসেছে ভুজিয়া আর নানা ভুজিওয়ালার মিঠাই-প্যাঁড়া। এদের ব্যাবসা এখন লাটে উঠেছে।

পটলা বলল, “এই মৃতপ্রায় কুটির শিল্পকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্যই আমরা এই পরিকল্পনা নিয়েছি। আপনাদের কয়েকজনকে কলকাতায় নিয়ে যাব। সেখানে আপনাদের এই শিল্পকে আমরা মাতৃমূর্তির দেবী দুর্গা রূপে কলকাতায় তথা সারা দেশের সামনে তুলে ধরব।”

ফটিক বলল, “টিভির সাংবাদিকরা তো এখন হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন কে নতুন কী করছে? দেখবেন, যা পাবলিসিটি হবে এই শিল্পের, অর্ডার যা আসবে, সামলাতে পারবেন না।”

ওদিকে হোঁতকা, গোবরা তখন একটা বড় ঠোঙায় বেশ কিছু কদমা-মঠ নিয়ে টেস্ট করতে শুরু করেছে।

হোঁতকা বলল, “তা মন্দ হইব না। পটলা, তর আইডিয়াখান নতুন হইব মনে হইত্যাছে।”

ফটিক বলল, “দেখবি, এবার প্রাইজ নিয়ে শেষ করতে পারবি না। জিতা রহো পটলা। যুগ যুগ জিও!”

কদমা-শিল্পীদের নিয়ে আমরা সেই রাতেই ফিরে এলাম।

পুজোর এখনও দেরি। তবে আকাশে শরতের রোদ ফিকে হয়ে দেখা দিয়েছে। সন্ধের সময় থেকেই এখানে-ওখানে দু’-একটা ঘুমন্ত শিউলিগাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে টিভির সাংবাদিকরা বের হয়েছেন। রাস্তাজুড়ে বাঁশ পড়েছে। প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়েছে। ইলেভেন বুলেটস ক্লাবের প্রস্তুতির খবরও আসছে। তবে তাদের থিম সম্বন্ধে এখনও কোনও খবর আসেনি।

আমাদের ক্লাবের মাঠেও বাঁশ পড়েছে। টিভি চ্যানেল এর মধ্যে পুজোর গণভোট ফোন বা এসএমএস চালু করেছে। ফটিক, গোবরাও ইতিমধ্যে দু’-তিনটে টিভির সাংবাদিককে বেশ কায়দা করে কফি-কাটলেট খাইয়ে পটলার পুজোর ব্যাপারে বাজার গরম করছে। তাদের প্যান্ডেলের কাজও শুরু হয়েছে।

তবে আমাদের আসল কাজ চলছে গোপনে, পটলাদের বাড়ির বাগানে। সেটা এককালে পটলাদের গোডাউন ছিল। সেই গোডাউনের মধ্যে মন মন চিনি এসেছে। আর শিল্পীরাও বড় বড় কড়াইয়ে চিনির পাক করে এর মধ্যে মা দুর্গার অসুর, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ করছেন। মাটির সিংহের আদলেই চিনির পাক দিয়ে পিস পিস করে সিংহ করেছেন। ওগুলো শুকিয়ে বেশ শক্তপোক্ত হয়ে গেলেই মূর্তিগুলোকে জুড়ে জুড়ে একেবারে জীবন্ত করে তোলা হবে।

বাতাসে চিনিপাকের মিষ্টি গন্ধ উঠল। পটলা, হোঁতকা এসব কাজের তদ্বির করছে। তবে আমরাও মাঝে মাঝে ওখানে যাই। প্রসাদ হিসেবে তৈরি মুড়কি-মোয়া খেয়ে আবার প্যান্ডেলে আসি। প্যান্ডেল তৈরি হলে সেখানে নানা ধরনের চিনির মূর্তিই বসবে।

এর মধ্যে টিভিতে প্রচার শুরু হয়েছে, পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব এবার এক লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ শিল্পকে থিম করে যা খেল দেখাবে, তাতে নাকি তামাম কলকাতার লোক হাঁ হয়ে যাবে। এর মধ্যে কোনও কোনও সংস্থার শংসাপত্র এসে গিয়েছে। গোটা কুলেপাড়া অঞ্চল কেন, কলকাতার অনেক পুজো কমিটিই ছুটে এসেছে আমাদের প্যান্ডেলে। তবে তারা আমাদের কারখানায় কী হচ্ছে সেটা জানতে পারেনি। তবু হাওয়াতেই আমাদের নাম ছড়িয়ে পড়ছে।

পুজোর দিন এগিয়ে আসছে। প্যান্ডেলের কাজ শেষ হয়েছে। ওদিকে গোডাউনও ভরতি হয়ে গিয়েছে নানা শিল্পকর্মে। ওঁরা বেশ কয়েকদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাটির বদলে ওই চিনির পাক দিয়ে দারুণ মূর্তি গড়ে তুলেছেন। বিষ্ণুপুরের শিল্পীরা মাটির ফলকে যে শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়ে ওই টেরাকোটার মন্দির তৈরি করেছিলেন, এই শিল্পীরাও। বেশ কয়েকদিন পরিশ্রম করে তেমনই শিল্পীসত্তার পরিচয় দিয়েছেন ঠাকুর তৈরি করে।

এইসব ঠাকুরকে, ওই ছবিগুলোকে বাটাম দিয়ে সেট করে সারা প্যান্ডেলে ফিট করে মন্দিরের পরিবেশই রচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে টিভির পরদায় ওইসব শিল্পকলার পরিচয় পেয়েছে কলকাতার মানুষ। সংবাদপত্রে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব নাকি মূর্তিশিল্পেও বিপ্লব আনবে।

পটলা যেন এবার সব প্রাইজই পেয়ে গিয়েছে, এই ভাব এনে বলল, “দেখবি, এই পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব এবার টপ!”

হোঁতকা বলল, “পটলা, এবার বেশ ভাল একখান টুর করতে হইব। কৈলাস-মায়ের দয়ায় ফার্স্ট হইবই। আমাগোর হিমালয়ের টুর করতে হইব।”

আমরা জানি ঠাকুরমার মত হলে এই টুরও হবে। তাই বডি থ্রো করি ঠাকুরমার কাছে। ঠাকুরমা এর মধ্যে টিভিতে পটলার নাম এবং তার প্রচার শুনেও খুশি। ঠাকুরমা বললেন, “তা যাবি বেড়াতে? সরকারকে বলে দিচ্ছি, টাকা নিয়ে যা। অফিস থেকেই তোদের জন্যে টিকিট করে দেবে। পুজোর পরই তোরা সকলে বের হয়ে পড়বি।”

হোঁতকা এসব বিষয়ে পটু। সেই-ই বলল, “তাই ভাল ঠাকুরমা। আগে থনে টিকিট কাইট্যা রাখুম।”

ঠাকুরমা বললেন, “তাই কর।”

এবার আরও উৎসাহ নিয়েই পুজোর আয়োজন করছি। পুজোর পরই বের হব আমরা হিমালয়ের উদ্দেশে। রাতের অন্ধকারে গোডাউন থেকে ট্রাকবন্দি দেবদেবীর মূর্তিগুলো প্যান্ডেলে এনে দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। শিল্পীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে মূর্তিগুলোকে যেন প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। দেখে বোঝা যাবে না যে, ওসব চিনির পাক করে তৈরি করা হয়েছে। দেবীমূর্তির গায়ের রংও জোরদার। চোখমুখও জীবন্ত। সিংহ-অসুর যেন প্রাণময়। অসুরের শরীরের মাস্‌লগুলো বর্ণবৈচিত্র্যে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। গণেশজিকে দেখে এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ওই শিল্পীদের দিয়ে গণেশ তৈরি করানোর কথা ভাবছে। টিভির পরদায় মঠের মূর্তি দেখে দর্শকরা বিস্মিত। মণ্ডপের পরিবেশ হয়ে উঠেছে অতীতের বিষ্ণুদেবের মন্দির। সেই যোড়শ শতাব্দী যেন বাস্তবে ফিরে এসেছে।

এবার পটলা বলল আমাদের, “শিয়োর থাক। সব প্রাইজ আমাদেরই।”

ষষ্ঠীর উদ্বোধনের দিনই জনারণ্য হয়ে গেল। নামল মানুষের ঢল। পুলিশ এবং আমাদের ভলান্টিয়াররা হিমশিম খাচ্ছে। মনে হচ্ছে সারা কলকাতাই এবার ভেঙে পড়বে পঞ্চপাণ্ডবের প্যান্ডেলে।

কিন্তু পটলা মানেই প্রবলেম। সেটা আমরা বুঝেও বুঝি না। ভুলই করি বারবার। এবারও সেই প্রবলেমই শুরু হল। আর তা এমন ঘোরালো হয়ে উঠবে আমরা ভাবিনি।

সপ্তমীর দিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। আমরা ভাবছি পুজোর দিন না মাটি হয়ে যায়! আমরা প্যান্ডেলে বসে আছি। বৃষ্টি শুরু হল। বেশ ভালই বৃষ্টি পড়ছে। আর বৃষ্টিতে এখন কলকাতার দুরবস্থা সবচেয়ে বেশি। এখানে-ওখানে জল জমে যায়। ট্রাম, বাস বন্ধ হয়ে যায়, এসব জানা কথা। কিন্তু বর্ষার মেঘ এভাবে জমাট বেঁধে আসবে তা ভাবিনি। প্রথম দিকে বৃষ্টি জোর এলেও মনে হয়েছিল একটু পরেই থেমে যাবে। কিন্তু ক্রমশ মেঘ যত জমাট বাঁধতে থাকল, বৃষ্টির তেজও তত বাড়তে থাকল। অন্ধকার হয়ে এল চারদিক। রাস্তায় সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড়। কিন্তু বৃষ্টি জোরে নামতেই ক্রমশ রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে গেল। গাড়ি কিছু চলছিল, রাস্তাঘাটে জলও ক্রমশ বাড়ছে। আমরা প্যান্ডেলে রয়েছি। বেশ শক্তপোক্ত প্যান্ডেলই করা হয়েছে। ত্রিপলও দেওয়া হয়েছে ভালভাবে।

হোঁতকা বলল, “হেভি রেন হইতাছে রে! এক্কেবারে বর্ষার মতোই।”

ফটিক বলল, “শারদ মেঘ গর্জতি, ন বৰ্ষতি। শুধু গুড়গুড় করবে। দেখবি বৃষ্টি হবে না।”

পটলা আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তখন প্যান্ডেলে পুরোহিতমশাই পুজোর আয়োজন শুরু করেছেন। যথাবিহিত সপ্তমী পুজো তো করতেই হবে। পুরোহিত, কয়েকজন লোক আর ঢাকিরাই রয়েছেন। ওদিকে বসে আছি আমরা।

আমাদের অঞ্চলটা বেশ নিচু। ওদিকের বড় রাস্তার ওপাশের জল এদিকে আসতে শুরু করেছে। বলতে গেলে সারা এলাকার বৃষ্টির জমা জল এদিকে ধেয়ে আসছে। রাস্তা ছাপিয়ে জল আসছে মাঠে এবং তা পুকুরের চেহারা নিচ্ছে। ওদিকে ঠাকুরমশাই মন্ত্র পড়ছেন। মায়ের পুজো নামেই হচ্ছে মাত্র। ধূপ-দীপ জ্বলছে আর তেমনই বৃষ্টির দাপট। মুষলধারায় একটানা চলছে বৃষ্টি। চারদিক আবছা হয়ে গিয়েছে বৃষ্টিতে। মাঠে তখন বৃষ্টির জল গোড়ালি ছাপিয়ে উপরে উঠতে শুরু করেছে। একদিকে মাঠের জল, তার উপর প্যান্ডেলের মাথা থেকে ত্রিপলের ফুটোফাটা দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে শুরু করেছে।

আমরাও এবার সচকিত হয়ে উঠেছি। ওদিকে ত্রিপলের ফাঁক দিয়ে জল পড়ে চিনির পাকের তৈরি মূর্তি তখন গলতে শুরু করেছে। পটলা চিৎকার করল, “ড-ড-ডেকোরেটর্সের লোকজনদের ডাক। কোথায় তারা?”

তখন দেখা গেল প্যান্ডেলের নীচের কাঠ ভিজে সপসপ করছে। এখান-ওখান দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। এর উপর জলের ঝাপটা। নীচে তখন হাঁটু পর্যন্ত জল।

ঘণ্টাখানেক কেটে গিয়েছে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। প্যান্ডেল ফাঁকা, লোকজন নেই। নীচে জল থইথই করছে। একটা হাঁড়ি ভেসে চলেছে। প্যান্ডেলের শতছিদ্র অবস্থা। আর সেইসঙ্গে গলে পড়ছে এতদিন ধরে গড়ে-তোলা চিনির কাজগুলো। হঠাৎ প্রচণ্ড একটা শব্দে তাকিয়ে দেখলাম, দেবীমূর্তির মাথার উপর প্যান্ডেলে প্রচুর জলের চাপ রাখতে না পেরে বাঁশটাই মড়মড় করে ভেঙে গেল এবং ত্রিপল ছিঁড়ে সমেত পড়ল একেবারে চিনির তৈরি দেবীমূর্তির উপর। সঙ্গে সঙ্গে বেশ খানিকটা গলে গিয়ে পুরো কাঠামোটাই কাত হয়ে গেল। সিংহ আর অসুরের অবস্থাও প্রায় এক। যে-কোনও সময় পুরো প্যান্ডেলটাই কাত হয়ে যাবে।

আমি চিৎকার করলাম, ‘পটলা, হোঁতকা বেরিয়ে আয় ঠাকুরমশাইকে সঙ্গে নিয়ে। না হলে চাপা পড়বি।’

হাঁটুজল তখন কোমরের দিকে উঠছে। সারা প্যান্ডেলটাই পরিণত হয়েছে একটা পুকুরে। কোনওমতে জল টপকে ভাঙা বাঁশ-ত্রিপল সরিয়ে বের হয়ে এলাম। একটু পরেই প্যান্ডেলটা মড়মড় করে ভেঙে পড়ল। পুরো প্যান্ডেলটাই তখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি তখনও সমানে চলছে। সপ্তমীর দিনই আমাদের প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেল। শুধু বিসর্জনই নয়, সর্বনাশই ঘটে গেল।

আবার আমরা ছোট করে পুজো শুরু করলাম আমাদের ক্লাবের ভিতর। ওখানটা বেশ উঁচু। এবার পটলার থিমপুজোর ভূত ঘাড়ে চেপেছিল। পটলা থিম নিয়েই মেতেছিল প্রাইজ পাওয়ার জন্যই। বিশাল প্যান্ডেল করেছিল ওই মাঠে যেটা আগে ছিল নিচু জলাশয় বা হোগলা বন, এখন কলকাতায় জনসংখ্যা বাড়ার ফলে ওই সব জমিও লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেই জমি এখন কর্পোরেশনের বিচিত্র নিকাশি ব্যবস্থার ফলে হাঁটু পর্যন্ত জলে ডুবছে। আমাদের ঠাকুরেরও এবার অকাল বিসর্জন হয়ে গেল।

ফটিক বলল, “কলিযুগে বিচিত্র সব ঘটনা ঘটে রে!”

হোঁতকা ওদিকে চুপচাপ বসে ছিল। জামা-প্যান্ট সব ভিজে গিয়েছে। মাথার চুলগুলো উসকোখুসকো। ভিজে কাকের মতো চেহারা। হোঁতকা বলল, “ক্যান?”

ফটিক বলল, “রামচন্দ্র বসন্তকালের বদলে শরৎকালে দুর্গাপুজো করেছিলেন। আর পটলা অকালে বিসর্জন করে দিল মায়ের।”

গোবরা ফুট কাটল, “খুবই অশুভ ব্যাপার। পটলার গ্রহযোগ খুবই গড়বড়ে। ওর কুষ্ঠিতে ছিল, পুজোয় এমন ঘটবে। যেন এর চেয়ে খারাপ না হয়।”

আমরা দেখছি ওই ধ্বংসস্তূপের দিকে। এতক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। আমাদের প্যান্ডেল তখন ভাসমান। বাঁশ-ত্রিপল তখন কাত হয়ে পড়েছে জলে। প্রতিমার সাজপোশাক জলে ভেসে চলেছে। ঘট তখন জলের তলায়।

আমি বললাম, “বিপদের আর কিছু বাকি নেই। এখন কী হবে?”

বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। জলস্রোত তখনও কলকল করে বয়ে চলেছে। এবার দেখলাম, এদিক-ওদিক থেকে কৌতূহলী জনতা এসে জুটেছে। এসেছে ইলেভেন বুলেটসের ছেলেরাও। তাদের প্রতিমার তেমন কোনও ক্ষতিই হয়নি। শুভ বলল, “এ কী থিম করলি রে পটলা যে, জলে ভেসেই গেল!”

পটলা তখন চুপ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য খবরটা পটলাদের বাড়িতে পৌঁছতেই এবার ওদের সরকারমশাই লোকজন নিয়ে হাজির হয়েছেন। মোবাইলে কথা বলছেন ডেকোরেটর্সের সঙ্গে। আমরা যেন শবদাহের পর নীরব শ্মশানে বসে আছি। মুখ্য ভূমিকায় এখন সরকারমশাই আর তার কারখানার লোকজন। বৃষ্টি থামতেই এবার ডেকোরেটর্সের লোক এসে ক্লাবের পাশে উঁচু জায়গায় ছোটখাটো প্যান্ডেলও করে ফেলল। আর ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে এসে পড়ল কুমোরটুলিতে পড়ে থাকা একটা ছোট্ট প্রতিমা। ভাল প্রতিমা আর নেই। আমরা এতক্ষণ ওই বিপর্যয়ের পর একেবারে হতাশ হয়ে বসে ছিলাম।

এবার এদের উদ্যোগ-আয়োজন দেখে তেড়েফুড়ে উঠে হোঁতকা বলল, “পটলা, বৃষ্টির সামনে আমাগোর লড়াই শেষ হয়নি। আবার ফাইট করতি হইব।”

পটলা এবার সরকারমশাইয়ের দিকে তাকাল। সরকারমশাই বললেন, “বড়মা সব শুনেটুনে হুকুম দিয়েছেন, নতুন প্যান্ডেল করে নতুন মূর্তি এনে আবার পুজোর ব্যবস্থা করতে হবে। মায়ের পুজোয় যেন কোনও ব্যাঘাত না হয়।”

পটলার মুখে যেন আবার হাসি ফুটল। নতুন প্রতিমা নামানো হচ্ছে ট্রাক থেকে। তখন জল অনেক কমে গিয়েছে। মেঘের ফাঁক দিয়ে বিকেলের সূর্যের সোনালি আভা পড়েছে বর্ষণসিক্ত গাছগাছালিতে, ওই ধ্বংসস্তূপে। পটলাও তেড়েফুঁড়ে উঠল।

গোবর্ধন জয়ধ্বনি দিল, “দুর্গা মাতা কি জয়!”

এর মধ্যে ইলেকট্রিশিয়ানও এসে গিয়েছে। নতুন প্যান্ডেলের জাঁকজমক তেমন নেই। তবু সেখানে আলো জ্বলে উঠল। ঢাকিরা ওদিকে মুখ বুজে বসে ছিল। পুজোর প্রথম দিনই এভাবে অকালবিসর্জন হবে তা ওরাও ভাবেনি। ওরা ভাবছিল ওদের লোকসানের কথা। ওরাও এবার নতুন মণ্ডপে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা হতে দেখে ঢাক-ঢোল-কাসি নিয়ে বাদ্যি শুরু করল।

আশপাশের লোকজনও অবাক হল। তারা ভেবেছিল পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের অকালবিসর্জন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আবার নতুন প্রতিমা এনে যথারীতি পুজোও শুরু করেছে দেখে এবার অনেকেই আসতে শুরু করল।

কিছুক্ষণ আগে আমরা বাড়ি গিয়ে জামাপ্যান্ট বদলে কিছু খেয়ে আবার মণ্ডপে এসেছি।

পটলা বলল, “না রে, থিমপুজো করে বাজে খরচাই করেছি। এবার আসল পুজোই করব আমরা।”

ওই অকালবর্ষণে এলাকার গরিব মানুষ রাস্তার ধারে যারা ঝুপড়িতে থাকে, তাদের অবস্থা খুবই করুণ। এসব মানুষের জন্য পটলার ঠাকুরমা এবার ঢালাও অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করেছেন। সারা মাঠ জুড়ে শুরু হয়েছে তাদের জন্য অন্নসত্র। অনেক মলিন সর্বহারার মুখে অন্নের ব্যবস্থা করেছেন ঠাকুরমা।

পুজোর ক’দিন ওদের আর অন্নচিন্তা করতে হবে না। তাই তারা ক’দিন এই আনন্দ উৎসবে সামিল হতে পেরেছে।

ছোট অনাড়ম্বর মণ্ডপ, নেই থিমের সেই প্রচার, সেই অপার বর্ণবৈচিত্র্য। সাবেকি একটা মাতৃমূর্তি। ওই হাজার সর্বহারার হাসির আভা যেন ফুটে উঠেছে ওই মাতৃমূর্তিতে। পটলা বলল, “মনে পড়ে সেই কবিতা;

দ্বারে যদি থাকে দাঁড়াইয়া

ম্লান মুখ, মলিন বিরস

তবে মিছে সহকার শাখা

তবে মিছে মঙ্গল কলস।”

হোঁতকা বলল, “না, মাঝে মাঝে তর মাথায় ভাল আইডিয়া আইসে। এবার নতুন স্টাইলে পুজো করছিস। এটাও ভালই।”

এবার আমরা কোনও পুরস্কার অবশ্য পাইনি। তবে একটা তৃপ্তির আভাস দেখেছি ওই হাজারও মানুষের মুখে-চোখে। মনে হয়, এটা ওই পুরস্কারের চেয়ে অনেক বড়!

৫ অক্টোবর ২০০৮

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন