ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ

পৌলোমী সেনগুপ্ত

ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ

“আচ্ছা বলো তো, আমার ডটপেনটা কোথায় রাখলাম? ‘আনন্দমেলা’র শব্দসন্ধান করছিলাম, ফোন ধরতে ওঠার পর ফিরে এসে দেখি পেনটা গন।”

ধীরেনবাবুর প্রশ্নে স্ত্রী রাধারানি কিচেন থেকে উত্তর দিলেন, “টেলিফোনের পাশে খোঁজ করো, পেনটা পেয়ে যাবে।”

এই এক বিপদ হয়েছে ধীরেনবাবুর। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর মাঝে মাঝেই অনেক কিছুর বিস্মরণ ঘটছে। গজগজ করতে করতে রাধারানিদেবী এসে ঘরে ঢুকে বললেন, “এই তো তোমার পেন, ফোনের পাশে পড়ে আছে। দিন দিন তোমার কী হচ্ছে বলো তো! অবিশ্যি চিরকালই তুমি ভুলো মনের লোক। কিন্তু পঞ্চাশ বছরের পর থেকে তোমার রোগ বাড়তে বাড়তে এখন এই ষাট পার হয়ে একেবারে সাংঘাতিক অবস্থায় পৌঁছেছে। সবকিছু হারিয়ে ফেলছ, লোকের নাম ভুলে যাচ্ছ। সুনীলবাবুকে সেদিন তুমি হীরেন বলে ডেকে উঠলে। হয় তুমি সাইকিয়াটিস্ট কনসাল্ট করো নয়তো এবার আমি তোমার ওই ভুলের জ্বালায় মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি চলে যাব। কী করে যে তুমি এমকম পাশ করেছিলে, আর এতদিন ধরে কী করে যে সরকারি অডিট অফিসে চাকরি করলে, সেটা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছি।

“গতকাল তুমি যা করলে সেটা একটা কাণ্ড বটে। আমরা টেপে গান শুনব বলে তুমি সুচিত্রা মিত্র আর দেবব্রত বিশ্বাসের দুটো ক্যাসেট নীলিমাদের বাড়ি থেকে জোগাড় করলে, পথে নারায়ণী মেডিক্যাল থেকে তোমার হজমের ওষুধ কিনতে গিয়ে ক্যাসেট দুটো দোকানের সেলস কাউন্টারে ফেলে রেখে শুধু ওষুধ নিয়ে বাড়ি চলে এলে! ভাগ্যিস আন্দাজে আমি এক ঘণ্টার মধ্যে নারায়ণীতে দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ওদের শিবু বলল, ‘হ্যাঁ, ক্যাসেট দুটো তুলে রাখা আছে।’ এখন যদি অন্য খদ্দের ও দুটো নিয়ে চলে যেত তা হলে কী ঝামেলায় পড়তে হত বলো দেখি!”

ধীরেনবাবুর এই ভুলো মনের ব্যাপারটা ‘বল্ডউইন কো-অপ হাউজ়িং কমপ্লেক্স’-এর প্রায় সকল বাসিন্দাই জেনে গেছেন। কসবায় এই হাউজ়িং সোসাইটির ফাউন্ডার মেম্বারদের প্রত্যেকের মাথায় টাক থাকায় এই নাম। হাউজ়িং কমপ্লেক্সে মোট আটটি হুবহু এক রকম দেখতে চারতলা বাড়ি, অর্থাৎ ‘এ’ থেকে ‘এইচ’ ব্লক আছে। প্রতি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট, পরিবেশ শান্ত আর নির্জন। চারপাশের জমিতে কনকচাঁপা, কদম, ছাতিম, নিম প্রভৃতি গাছের সঙ্গে টগর, শিউলি, জবা প্রভৃতি ফুলের গাছও আছে। রিটায়ারমেন্টের কিছু আগে এলআইসি থেকে লোন এবং নিজের জমানো টাকায় ‘এইচ’ ব্লকের দোতলায় দু’কামরার সাউথ ফেসিং সুন্দর ফ্ল্যাটটি কিনে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন ঝাড়া হাত-পা ধীরেনবাবু বসবাস করছেন। তাঁর কিন্তু শৈশব থেকে কৈশোর বয়সের অনেক কথাই মনে আছে। স্কুলে পড়ার সময় ক্লাসের সতীর্থ বাল্যবন্ধুদের নাম, তাদের চেহারা, এমনকী, অনেক খুঁটিনাটি ঘটনাও চেষ্টা করলে দিব্যি মনে করতে পারেন। নির্জন দুপুরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করলে সিনেমার ছবির মতো সব পরপর সামনে ভেসে ওঠে। ভবানীপুরের সেই বিখ্যাত ভবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, হেডস্যার, দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইংরেজির স্যার মিহিরবাবু, অঙ্ক ও ইতিহাসের শিক্ষক, সংস্কৃতের পণ্ডিতমশাই রাধাগোবিন্দ কাব্যতীর্থ প্রমুখ সবাইকে। তাঁর বিশেষ বন্ধুদের মধ্যে ছিল অজিত, দিলীপ, মনোজ, পঞ্চানন ওরফে পাঁচু, আর কালীচরণ ওরফে কালী।

কালী আর পাঁচুর মধ্যে একবার ধুন্ধুমার ঝগড়া লেগে গিয়েছিল। ইংরেজির স্যার মিহিরবাবু মুখে মুখে ট্রান্সলেশন ধরতেন। আগের দিন আলোচনা করে পরের দিন পড়া ধরতেন। ক্লাসের ৪০ জন ছাত্রের প্রত্যেককে এক একটি বাক্যের বাংলা থেকে ইংরেজির অনুবাদ করতে হত। পড়া না পারলে ছাত্রদের ভাগ্যে জুটত বিকট ধমক আর তার সঙ্গে ফাউ হিসেবে নির্মম কানমলা আর প্রচণ্ড চড়চাপড়। মিহিরবাবু ছিলেন ছাত্রদের কাছে, একেবারে যাকে বলে স্টোনম্যান।

ক্লাস নাইনে পড়ার সময় একদিন মিহিরবাবু কালীকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি এবার ঠেলাটা বোঝো-র ইংরেজি অনুবাদ কী হবে?” কালী উঠে দাঁড়াল এবং আগের দিনের বলে দেওয়া উত্তর ভুলে গেল। পাশে পাঁচু বসেছিল। কালী স্যারের দিকে তাকিয়ে পাঁচুর গায়ে আঙুল দিয়ে খোঁচা মারতে মারতে ফিসফিস করে, “কী উত্তর হবে রে, কী উত্তর হবে রে,” করতে লাগল। পাঁচু চুপ করে রইল। সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এবার স্যার প্রহার এবং সেইসঙ্গে চণ্ডীপাঠ শুরু করবেন। এমন সময় দুষ্টবুদ্ধি-পাঁচু ফিসফিস করে কী একটা বলল। আতঙ্কগ্রস্ত কালীর মাথা তখন আর কাজ করছে না। পাঁচুর উত্তরটা শুনেই ক্লাসের মধ্যে কালী চেঁচিয়ে বলে উঠল, “নাউ ইউ পুশ দ্য আন্ডারস্ট্যান্ড।” শুনেই মিহিরবাবু চেয়ার থেকে উঠে কালীর দিকে এগোতে এগোতে চেঁচাতে লাগলেন, “ওরে মর্কট, আমার সঙ্গে ধাষ্টামো, এবার ঠেলাটা তুই বোঝ, গত দিন ক্লাসে কি তোদের আমি বলে দিইনি যে, ‘ফেস দ্য মিউজিক’ কোথায় অ্যাপ্লাই হয়?” বলেই দু’হাতে কালীর দুটো কান আচ্ছা করে দলাইমলাই শুরু করে দিলেন। ক্লাস শেষ হওয়ার পর কালী পাঁচুর উপর একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অতি কষ্টে ধীরেন, অজিত, দিলীপ, মনোজ, দু’জনকে মারামারি থেকে সরিয়ে দিল, কিন্তু বহুদিন কালী আর পাঁচুর মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ ছিল।

এই ঘটনার ঠিক পরেই ধীরেন বাড়িতে বসে কৃতান্তকুমার রায়ের লেখা বিখ্যাত অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস ‘উগান্ডার গুন্ডারা’ পড়ছিল। বইটা ধীরেন পাঁচুর কাছ থেকে ধার করে এনেছিল। বইটার প্রথম পাতায় লেখা, “জন্মদিনে পাঁচুকে স্নেহের উপহার— জেঠুমণি।’ মারাত্মক রোমহর্ষক সব ঘটনার বর্ণনা আছে বইটায়। বাঘ, সিংহ, গোরিলা, কুমির, এমনকী নরমুণ্ড শিকারিদের কবলে পড়েও চারজন বাঙালি তরুণ কীভাবে হতোদ্যম না হয়ে অসংখ্য শত্রুনিধন করতে করতে কিলিমাঞ্জারো পর্বতে গিয়ে হাজির হয়ে অবশেষে দুর্ধর্ষ চৈনিক দস্যু ও তার দলবলের মোকাবিলা করল তারই রোমাঞ্চকর রুদ্ধশ্বাস কাহিনি। বইটা ধীরেনের বারতিনেক পড়া হয়ে গেছে। চতুর্থবারের মতো পড়া চলছিল রবিবার সকালে, এমন সময় বন্ধুবর কালীচরণ এসে উপস্থিত। খানিকক্ষণ গল্পগুজব করে জলখাবার খেয়ে কালী বলল, “কী বই পড়ছিস রে, আমাকে একবার পড়তে দিবি? পড়েই ফেরত দেব।”

ধীরেন বলল, “এটা একটা দারুণ বই, তুই পড়েই আমাকে ফেরত দিবি।”

কালীচরণ বই নিয়ে বাড়ি চলে গেল। কিন্তু তিন-চারদিন পর ধীরেন বই ফেরত চাওয়ায় কালী জানাল, বইটা তার মাসতুতো ভাই তাকে না জানিয়ে জামশেদপুরে নিয়ে চলে গেছে। এখন পাওয়া যাবে না। পরে সে কলকাতায় ফিরলে ফেরত দেবে। এই কথার মধ্যে কতটা সত্যি আর কতটা মিথ্যে, ধীরেন বুঝে উঠতে পারল না। এদিকে পাঁচু জোর তাগাদা শুরু করে দিয়েছে তাঁর বই ফেরত পাওয়ার জন্য। শেষে তাগাদায় ব্যতিব্যস্ত ধীরেন পাঁচুকে সবকিছু খুলে বলল, আর সব শুনে পাঁচু বলল, “তা হলে ওই বই ফেরত পাওয়ার আর কোনও চান্স নেই। কালী সেদিন ক্লাসে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার বইটা মেরে দিল।”

শেষমেশ ধীরেন কালীকে বলল, “ওটা পাঁচুর বই, তুই যেভাবে পারিস এনে দে। না হলে পাঁচুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভীষণ খারাপ হয়ে যাবে।”

শুনে কালী বলল, “ঠিক আছে, পাঁচুকে বল একদিন আমার বাড়িতে এসে বইটা ফেরত চাক, তারপর দেখি আমি কী করতে পারি।”

কিন্তু পাঁচুও আর কোনওদিন কালীর বাড়ি যায়নি, বইও ফেরত চায়নি। ধীরেন অবশ্য বাজার থেকে বইটা কিনে দিতে পারত। কিন্তু দুটো টাকাও ১৯৫২ সালে ছোটদের কাছে বেশ দুর্মূল্য ছিল। চোখ বুজে এখনও বইটা দেখতে পান ধীরেনবাবু। ময়লা লাগার ভয়ে পাঁচু বইয়ের মলাট খবরের কাগজ দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল। ১৯৫২ সালের কোনও একদিনের দৈনিক আনন্দবাজারের প্রথম পাতা দিয়ে মোড়া ছিল সেটা।

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এত কিছু ভুলে যাওয়া সত্ত্বেও শৈশব ও কৈশোরের বহু ঘটনা এখনও তাঁর অনুপুঙ্খ মনে আছে। অথচ এ-জিনিসটা তাঁর স্ত্রী থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কেউই বিশ্বাস করতে চায় না। সকলেই তাঁর সাম্প্রতিক ভুলো মনের ঘটনাগুলোকে বড় করে দেখে। আর ধীরেনবাবুও মাস তিন-চারেকের মধ্যে যে দুটো বড় ধরনের কেলেঙ্কারি করেছেন তাঁর জন্য চেনা-পরিচিত সকলেই আড্ডা-জমায়েতে সেই ঘটনাবলির সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে ঠাট্টা-তামাশা শুরু করে দেয়।

প্রথম ঘটনাটা হল, কিছুদিন আগে সকাল সাড়ে দশটায় পুরনো বাল্যবন্ধু অজিতের বাড়িতে সময় কাটিয়ে তিনি বল্ডউইন হাউজ়িং-এ ফিরে এসে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ঘরে ঢুকে জামাকাপড় চেঞ্জ করে লুঙ্গি পরে বিছানায় শুয়ে পড়েন। ঘরে ঢোকার সময় অবশ্য তাঁর একবার মনে হয়েছিল ঘরের জিনিসপত্র একটু বেশি অন্যরকম। এমনকী, আলনায় রাখা লুঙ্গিটার রংও আলাদা। কিন্তু তাঁর স্ত্রী নীলিমাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ায় তিনি ভাবলেন যে, রাধারানিদেবী ফিরে এলে ঘরের এবং জামাকাপড়ের এইসব পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞেস করবেন। শরীর ক্লান্ত থাকায় একটু ঘুমঘুম এসে গিয়েছিল। কিন্তু একটু পরেই ‘জি’ ব্লকের দোতলার ফ্ল্যাটের মালিক গিরিজাশঙ্করবাবু ও তাঁর স্ত্রীর গলার আওয়াজে তাঁর ঘুম ছুটে গেল। গিরিজাবাবু তাঁর শরীরের উপর ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করছেন, “কী ব্যাপার ধীরেনবাবু, আপনার শরীর খারাপ নাকি? নিশ্চয়ই খারাপ, তা না হলে আপনি আমার ফ্ল্যাটে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করে খালি গায়ে লুঙ্গি পরে শুয়ে আছেন যে! একটু শুয়ে থাকুন, এখনই ডাক্তার ডেকে আনছি। আসলে আমি ও আমার স্ত্রী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেসলুম, দরজাটা খোলাই ছিল, এখন ফিরে এসে দেখছি আপনার এই অবস্থা।”

বিশাল এক হাত জিভ কেটে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে ধীরেনবাবু বলতে লাগলেন, “এঃ, ছি ছি, বড় ভুল হয়ে গেছে। আমি দেখছি ‘এইচ’ ব্লকে না ঢুকে ‘জি’ ব্লকে এসে পড়েছি। সবই তো একরকম দেখতে। তা ছাড়া আপনার ও আমার ফ্ল্যাট দুটোই দোতলায় একই পজিশনে, ফলে একেবারে গুলিয়ে গেছে। আমাকে আপনারা মাপ করে দিন।”

দ্বিতীয় ঘটনাটা হল, ধীরেনবাবু তাঁর মাসতুতো ভাই অচিনের ছেলে ভোম্বলের বিয়েতে নিমন্ত্রিত হয়ে যে কেলোটা করেছিলেন। উত্তর কলকাতার কাশীপুরে ‘আনন্দনিকেতন’ বিয়েবাড়ি ভাড়া নেওয়ার হয়েছিল। বিয়েবাড়িটা চার নম্বর বাস টার্মিনাসের ঠিক উলটো দিকে। সদ্য পাটভাঙা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে সেন্ট মেখে হাতে উপহারের প্যাকেট নিয়ে ধীরেনবাবু ট্যাক্সি থেকে কাশীপুরে চার নম্বর বাস টার্মিনাসের সামনে নেমে ট্যাক্সিভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সামনের দিকে তাকালেন। তিনি একাই এসেছেন, কারণ, স্ত্রী রাধারানিদেবী তাঁর পুরনো এক বান্ধবীর মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ একই দিনে পড়ায় সেখানে চলে গেছেন। ধীরেনবাবু তাকিয়ে দেখলেন, সামনেই একটা দোতলা বিয়েবাড়ি। সানাইয়ের আওয়াজ আসছে। চারদিক আলোকমালায় ঝলমল করছে। বাড়ির সামনে অনেক গাড়ি আর সেজেগুজে লোকজন ভিড় করে আছে। সুতরাং ধীরেনবাবু প্যাকেট হাতে সেদিকে দ্রুতবেগে ধাবমান হলেন। গেটের কাছে একজন বয়স্ক লোককে জিজ্ঞেস করতেই তিনি সসম্মানে জানালেন, “হ্যাঁ, ঠিকই, এটাই আনন্দনিকেতন বিয়েবাড়ি।”

শোনামাত্র ধীরেনবাবু, “ভোম্বল কোথায় রে? ভোম্বল কোথায় রে?” বলতে বলতে ভিতরে ঢুকে লক্ষ করলেন, সবাই তাঁর সম্ভ্রম-জাগানো চেহারা ও সাজপোশাক দেখে বিশাল খাতির ও সমাদর শুরু করে দিয়েছে। একটি কমবয়সি ছেলে তাঁর গায়ে গোলাপজল স্প্রে করে দিয়ে বলল, “দাদু, এখন ভোম্বলদাকে খুঁজে বের করা মহামুশকিল। আপনি খাবার জায়গায় চলে যান, ওখানেই ভোম্বলদাকে পেয়ে যাবেন।”

পাতপেড়ে খাওয়া এবং বুফে— দু’রকম ব্যবস্থাই ভোম্বলরা করেছিল। ব্যাচ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় না থেকে ধীরেনবাবু বুফের দিকেই এগোলেন। অলরেডি সেখানে নিমন্ত্রিতদের একটা লাইন পড়ে গেছে। সারি সারি বার্নারের উপর স্টেনলেস স্টিলের বউলে বিরিয়ানি, চিকেন মশালা, মটন কষা, ফিশ ফ্রাই-এর প্রাণকাড়া গন্ধে জায়গাটা একেবারে ম-ম করছে। সুড়ুত করে জিভের জলটা সামলে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার প্লেট, কাঁটা চামচ, স্পুন, পেপার ন্যাপকিন হাতে নিয়ে লাইন ধরে এগোতে এগোতে ভাবলেন মোটা মোটা রাধাবল্লভী, আলুর দম প্রভৃতি আজেবাজে জিনিস না খেয়ে শুধুমাত্র পছন্দসই সেরা জিনিসগুলোই খাবেন। প্লেটে খাবার সাজিয়ে তারিয়ে তারিয়ে অপূর্ব সুখাদ্য খেতে খেতে অনেকের সঙ্গেই দেখা হল। যেমন ওর মাসতুতো দাদা গুপিদা, চারুমামা, বৃদ্ধ মেসোমশাই সুধীরবাবু এবং আরও অনেকে। খেতে খেতে গল্পগুজব চলতে লাগল। এর মধ্যে খুঁজে খুঁজে ভোম্বল এসে হাজির। এসেই বলল, “চলো ধীরেনদা, নতুন বউয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। ফাঁকতালে উপহার গছিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেটে পড়বেন, সেটি হচ্ছে না।”

ফলে খাওয়া শেষ হওয়ার পর ভোম্বল তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বউয়ের থ্রোনের কাছে চলে এল। ঘরে ঢোকার সময় দোকান থেকে সদ্য কেনা ঝকঝকে নতুন স্যান্ডেলজোড়া খুলে রেখে বিভিন্ন বয়সি মহিলা পরিবৃতা নববধূর কাছে গিয়ে উপহারের বইয়ের প্যাকেট ‘সত্যজিৎ রায়ের গল্প ১০১’ গিফট করলেন। ঘর থেকে বেরিয়ে ভোম্বলকে বললেন, “তোর বউ তো দারুণ হয়েছে রে! এ তো দেখছি বাঁদরের গলায় মুক্তোর হার।”

রাত্রি সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরে দেখলেন, তাঁর স্ত্রী কিছুক্ষণ আগেই চলে এসেছেন। সুতরাং ধীরেনবাবু নিশ্চিন্ত মনে বেশবাস পরিবর্তন করে মুখ, হাত-পা ধুয়ে ঘুমোতে চলে গেলেন। বোমাটা ফাটল পরের দিন সকালে স্ত্রী রাধারানিদেবীর চিৎকারে, “তুমি কি চোখের মাথা খেয়েছ?”

সদ্য ঘুমভাঙা চোখে হকচকিয়ে ধীরেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “হলটা কী? আমি আবার কী করলাম?”

“কী না করেছ তুমি! গতকাল বিয়েবাড়ি থেকে কার একপাটি স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে চলে এসেছ?”

“তাঁর মানে?”

“একবার নিজের চোখে জুতো রাখার র‍্যাকে গিয়ে দেখে এসো না।”

অগত্যা ধীরেনবাবু সদ্য ঘুমভাঙা চোখে যা দেখলেন তা হল একজোড়া স্যান্ডেল, ডান পায়েরটা ঝকঝকে নতুন, আর বাঁ পায়েরটা ভাল কোম্পানির ঠিকই এবং একই মাপেরও বটে, কিন্তু সেটা খুব পুরনো, রংচটা। দেখে মনে হচ্ছে দু’-একদিনের মধ্যেই ওটার স্ট্র্যাপ-ফ্যাপ সব ছিঁড়ে যাবে।

রাধারানিদেবী বললেন, “নাক ডাকিয়ে তো বেলা সাড়ে আটটা অবধি ঘুমোচ্ছ, এদিকে একটু আগে তোমার মাসতুতো দাদা গুপিদার স্ত্রী ললিতা ফোন করে জানাল, “ওঁর স্বামী অদ্ভুত একজোড়া স্যান্ডেল পরে ভোম্বলদের বিয়েবাড়ি থেকে গতকাল ফিরেছেন। অনেক খুঁজেও গুপিদা ওঁর স্যান্ডেলের একপাটি খুঁজে পাননি। অথচ অন্য কারও একই মাপের বাঁ পায়ের নতুন একপাটি স্যান্ডেল পড়ে আছে। গুপিদা আর কী করেন, খালি পায়ে তো আর হাঁটা যায় না, ফলে ওই অদ্ভুত কম্বিনেশনের একজোড়া জুতো পায়ে দিয়েই বাড়ি ফিরেছেন।”

“এ হে হে হে, তা হলে গণ্ডগোল আমিই করেছি।” ধীরেনবাবুর অকপট স্বীকারোক্তি।

“তা ছাড়া আবার কী! ফোনটা রাখার পর আমার সন্দেহ হল, জুতোর র‍্যাকের কাছে গিয়ে দেখি যা ভেবেছি ঠিক তাই,” রাধারানিদেবী আক্ষেপের সুরে বললেন, “হ্যাঁ গো, তোমার পায়ে কি পক্ষাঘাত হয়েছে, কোনও সাড় নেই বুঝি। ছি ছি ছি, কী কেলেঙ্কারি। এখন যাও, ওই একপাটি জুতো নিয়ে গুপিদার বাড়ি গিয়ে বদলাবদলি করে নিয়ে এসো।”

এসব দেখেশুনে ধীরেনবাবুর নিজের উপর ঘেন্না ধরে যাচ্ছে। আত্মবিশ্বাসের একান্ত অভাব তিনি এবার অনুভব করছেন।

এই শেষ বয়সের দিকে তিনি খুব কষ্ট করে খোঁজখবর নিয়ে ভবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো ক্লাসফ্রেন্ডদের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর জোগাড় করেছেন। অজিত আর দিলীপ তাঁর মতো কলকাতাতেই বরাবর চাকরি করে এখন রিটায়ার করেছেন। তাঁরা দু’জনেই সল্টলেকের দিকে নতুন বাড়ি করে সেখানে থাকেন। কিন্তু মনোজ, পাঁচু ও কালী চাকরিসূত্রে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অর্থাৎ দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই প্রভৃতি শহরে চাকুরিজীবন কাটিয়ে অবসরগ্রহণের পর অতি সম্প্রতি কলকাতায় ফিরে এসেছেন। মনোজ গল্‌ফগ্রিনে একটা নতুন ঝকঝকে ফ্ল্যাট কিনেছেন কিন্তু পাঁচু ও কালী যথাক্রমে হরিশ মুখার্জি রোড ও মনোহরপুকুর রোডে তাঁদের সাবেকি পৈতৃক বাড়িতে ফিরে এসেছেন। সকলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে একদিন রবিবার সকালে ধীরেনবাবু ওঁদের নিজের ফ্ল্যাটে চায়ের নেমন্তন্ন করলেন।

রবিবার পাঁচ বন্ধু এক-এক করে সকালের দিকে ধীরেনবাবুর ফ্ল্যাটে এসে হাজির হলেন। মনোজ, কালী, পাঁচু, অজিত, দিলীপদের সঙ্গে ধীরেনবাবু অনেকক্ষণ জমিয়ে আড্ডা মারলেন। প্রত্যেকেরই বয়স ষাটের উপর। কারও মাথা কেশবিরল, কারও মাথায় পলিতকেশ। কিন্তু একটু ভাল করে মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলে ফেলে-আসা শৈশবের দুষ্টুবুদ্ধিভরা চোখ, ঠোঁটের হাসি এখনও চেনা যায়। আড্ডার মাঝে শিঙাড়া, ইলিশের ডিমভাজা, রসগোল্লা, চা, বিস্কুট রাধারানি ধীরেনবাবুর বাল্যবন্ধুদের পরিবেশন করে গেলেন। পুরনো স্কুল, খেলার মাঠ, স্যারদের কথার স্মৃতিচারণ করে বেলা বারোটা নাগাদ সকলে গাত্রোত্থান করলেন। আসর ভাঙার সময় ঠিক হল, এবার থেকে প্রতি রবিবার সকালে কোনও-না-কোনও বন্ধুর বাড়িতে আবার সকলে মিলিত হবেন। দেখা গেল, কালী ও পাঁচুর মধ্যে আর কোনও মনোমালিন্য নেই। বোধহয় ছেলেবেলার তুচ্ছ ঘটনা ভুলে গেছেন। ধীরেনবাবুও আর ব্যাপারটা খুঁচিয়ে তুললেন না। কালী শুধু যাওয়ার আগে ধীরেনবাবুকে বললেন, “ধীরু, পারিস তো এর মাঝে একদিন আমার মনোহরপুকুরের বাড়িতে ফোন করে সকালের দিকে চলে আয় না, তুই তো স্কুলে পড়ার সময় আমাদের বাড়িতে বহুবার এসেছিস। তোর তো সবই চেনা।”

ধীরেনবাবু দু’দিন বাদে অর্থাৎ বুধবার সকালে কালীর মনোহরপুকুর রোডের বাড়িতে আড্ডা মারতে গেলেন। ডোরবেল বাজাতে কালী নিজে দরজা খুলে ধীরেণবাবুকে ভিতরে বসবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। আগে এ-ঘরে কালীর বাবা করালীচরণবাবু বসতেন। ঘরটা বেশ বড়। এখন কালীই হচ্ছেন এ-বাড়ির সর্বময় কর্তা। ঘরের ডান দিকে প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে বইয়ের র‍্যাক, বাঁ দিকে টেবিল, চেয়ার, টিপয় প্রভৃতি রাখা আছে। গল্প করতে করতে ধীরেনবাবু বললেন, “দ্যাখ কালী, ছেলেবেলার বন্ধুরাই আসল প্রাণের বন্ধু। চাকরিজীবনে প্রকৃত বন্ধু আর হয় না। কেননা, তখন শুধুই ধান্দাবাজি, ইঁদুর দৌড়, এসব শুরু হয়ে যায়। এইজন্য আমি বুড়োবয়সে সব সময় শৈশবের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকি। আর ছোটদের গল্পের বই আবার নতুন করে পড়তে শুরু করেছি, বেশ ভাল লাগছে।”

কালী বললেন, “আমি অবশ্যি সব রকমের বই-ই পড়ি, ছোটদের বা বড়দের কিছুই বাদ দিই না। এই নানা বিষয়ের বই পড়েই তো এখন আমার সময় কাটে। ঘরের ওদিকের র‍্যাকে আমার বইয়ের কালেকশন, তুই ইচ্ছে করলে দেখতে পারিস।” এর মধ্যে চা-বিস্কুট নিয়ে কাজের লোক ঘরে ঢুকল। চা খেয়ে ধীরেনবাবু বইয়ের র‍্যাকের দিকে এগোলেন, আর কালী সকালের আনন্দবাজারটা আবার পড়তে শুরু করলেন।

বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাবলির পর একধারে বাঁধানো ‘আনন্দমেলা’, ‘শিশুসাথী’, ‘রংমশাল’, ‘মৌচাক’ প্রভৃতি সাজানো আছে। বেশ কিছু পূজাবার্ষিকীও রয়েছে দেখা যাচ্ছে। ধীরেনবাবুর হঠাৎ চোখে পড়ল বহুদিনের পুরনো আনন্দবাজারে মোড়া একখানি বই। বইটার শুধু স্পাইনটা দেখা যাচ্ছে। ওইটুকু অংশই ধীরেনবাবুর স্মৃতিকোঠার একটা দরজা যেন ধাক্কা মেরে খুলে দিল। ধীরেনবাবু কালীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “দু’-একটা ছোটদের বই পড়ার জন্য ধার নিতে পারি কি?”

খবরের কাগজের দিকে চোখ রেখে কালী বললেন, “স্বচ্ছন্দে। যে বই পছন্দ নিয়ে যা না।”

দুটো বাঁধানো রংমশাল আর মৌচাকের ফাঁকে আনন্দবাজারে মোড়া ছোট্ট বইটাও নিঃশব্দে ধীরেনবাবুর কাঁধে ঝোলানো সাইডব্যাগে চলে এল। অপটু হাতের হাতসাফাই কালী দেখতেই পেলেন না। কালীকে ধীরেনবাবু বললেন, “একটা বাঁধানো মৌচাক আর রংমশাল নিয়ে যাচ্ছি, পড়ে এক হপ্তার মধ্যেই ফেরত দিয়ে যাব।”

এরপর সোজা হরিশ মুখার্জি রোডে পাঁচুর বাড়িতে এসে ধীরেনবাবু কলিংবেল বাজালেন। পাঁচু বাড়িতেই ছিলেন। হঠাৎ ছেলেবেলার বন্ধু ধীরেনকে দেখে হাসিমুখে বললেন, “আয়, আয়, এই অবেলায় কী মনে করে?”

কোনও উত্তর না দিয়ে ভিতরে ঢুকে ধীরেনবাবু চেয়ারে বসে সাইডব্যাগ থেকে আনন্দবাজারে মোড়া বইটা পাঁচুর হাতে তুলে দিলেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর পর আসল মালিকের হাতে হারানো বই পৌঁছে গেল। পাঁচু অবাক হয়ে ধীরেনবাবুর দিকে তাকিয়ে বইটা খুললেন। হাসিতে পাঁচুর মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। এবার সব মনে পড়ে গেছে, কারণ, বইয়ের একেবারে গোড়ার দিকে প্রথম পাতায় লেখা আছে, ‘জন্মদিনে পাঁচুকে স্নেহের উপহার— জেঠুমণি’।

জানুয়ারি ২০০৫

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন