ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

পৌলোমী সেনগুপ্ত

ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শহরে বাঘ, ভালুক কিংবা গন্ডার নেই বটে, তবে কিনা চোর-ডাকাত আর ছেলেধরা সব সময় গিসগিস করছে। আমার ছোটমাসির কাছে তাই এই শহরটাও গভীর জঙ্গলের মতন। সব সময় সাবধানে থাকতে হবে।

ছোটমাসির দুই মেয়ে, রুমু আর ঝুমু। ওদের আরও দুটো বেশ ভাল ভাল নাম আছে বটে, কিন্তু সে-দুটো বেশ শক্ত, রুমু ঝুমু নামেই সবাই চেনে। ছোটমাসি তাদের এক মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করেন না। নেহাত ইস্কুলের সময়টুকু ছাড়া। তাও ছোটমাসি ওদের ইস্কুলে পৌঁছে দেন, দুপুরে টিফিনের সময় যান, আবার বিকেলে যান নিয়ে আসতে। রুমু আর ঝুমু পড়ে ক্লাস এইট আর নাইনে। ওরা বেশ বড় হয়ে গেছে, নিজেরাই স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে, কিন্তু তার কোনও উপায়ই নেই, ছোটমাসি সবসময় ওদের পাহারা দিয়ে রাখতে চান যে!

আমি একদিন বলেছিলাম, “এই তো বাড়ির কাছেই স্কুল, ওরা তো হেঁটেই চলে আসতে পারে, কত ছেলেমেয়ে আসে।”

ছোটমাসি চোখ গোল গোল করে বললেন, “আর যদি ছেলেধরা ওদের ধরে নিয়ে যায়? ও পাশের পার্কটায় কয়েকটা বিচ্ছিরি চেহারার লোক বসে থাকে, দেখলেই আমার কী রকম যেন সন্দেহ হয়!”

আমি বললাম, “ছেলেধরা ওদের ধরবে কেন? ওরা তো ছেলে নয়!”

ছোটমাসি তখন এক ধমক দিলেন, “তুই চুপ কর। তুই কিছু বুঝিস না!”

টিফিনের সময় গিয়ে ছোটমাসি কড়া নজর রাখেন ওরা যাতে কোনওরকমে ফুচকা বা ঝালমুড়ি না খেয়ে ফেলে! রুমু-ঝুমুর ক্লাসের বন্ধুরা মনের সুখে আলুকাবলি আর ঘুগনি-চটপটি খায়, কিন্তু ওদের সেদিকে যাবারই উপায় নেই। ছোটমাসির চোখের সামনে বসে ওদের বাড়িতে-তৈরি খাবার খেতে হয়।

আমি অবশ্য মাঝে মাঝে লুকিয়ে-চুরিয়ে ওদের ডালমুট, চানাচুর আর হজমি গুলি খাওয়াই। যদিও জানি, ধরা পড়ে গেলে ছোটমাসির হাতে আমাকেও বোধহয় মার খেতে হবে!

ছোটমাসির ধারণা, চোর-ডাকাতের মতন অসুখের জীবাণুরাও সব সময় আমাদের চারপাশে ওত পেতে আছে। কখন যে তারা মুখ দিয়ে নাক দিয়ে ঢুকে পড়ে তার ঠিক নেই। সেইজন্য বাইরের কোনও জিনিস খাওয়া ওঁর মেয়েদের একদম বারণ।

একদিন আমি ছোটমাসির বাড়ির রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলাম। দেখি কী, সেখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখটা একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ছোটমাসি, ও কে?”

ছোটমাসি বললেন, “ও-ই তো আমাদের রান্নার ঠাকুর!”

“ওর মুখ বাঁধা কেন?”

“বাঃ মুখ বাঁধা থাকবে না? আমার রান্নাঘরে মুখ-খোলা কারওকে ঢুকতে দিই না। মনে কর, দুধ জ্বাল দিচ্ছে কিংবা ঝোল রাঁধছে, এমন সময় আপন মনে কথা বলে ফেলল! আর কথা বললেই একটু থুতু ছিটকে বেরিয়ে আসতে পারে! তা হলে ওদের সেই থুতুমাখা জিনিস আমরা খাব?”

“রান্না করতে করতে আপন মনে কথা বলবে কেন?”

“যদি বলে? হঠাৎ বলে ফেলতেও তো পারে!”

আমি হাসতে হাসতে বললাম, “আমরা কথা বলার সময় তো থুতু বেরোয় না!”

ছোটমাসিও হাসতে হাসতে বললেন, “একটু একটু বেরোয়, চোখে দেখা যায় না। স্বাস্থ্য বইতে লেখা আছে!”

আর একদিন দেখেছিলাম, ও বাড়ির বাজার করা। সব বাড়ির লোকেরা বাজারে যায় থলি নিয়ে। আর ছোটমাসির চাকর যায় একটা বড় প্লাস্টিকের বালতি নিয়ে, সেটায় আবার জল ভরা থাকে। সেই বালতিতে করে আনা হয় জ্যান্ত মাছ। ছোটমাসি তখন দাঁড়িয়ে থাকেন দোতলার বারান্দায়। চাকর বালতি থেকে মাছটা তুলে ছুড়ে দেয় উঠোনে। তখন মাছটা যদি দু’-তিনবার লাফায় তা হলে ছোটমাসি খুশি। আর যদি বেচারা মাছটা লাফাতে না পারে অমনি ছোটমাসি বলবেন, “যা, এক্ষুনি ফেরত দিয়ে আয়।”

ছোটমাসিদের দুধ নেওয়া হয় বাড়ির সামনেরই একজন গোয়ালার কাছ থেকে। দুধ দোয়াবার সময় ছোটমাসি রোজ সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে একফোঁটাও জল মেশানো না হয়। এ-ব্যাপারে তিনি ঠাকুর-চাকরদেরও বিশ্বাস করেন না। শুধু তাই নয়, তিনি আর-একটা কাণ্ডও করেন। সেটা অবশ্য আমি নিজে দেখিনি, তবে শুনেছি। দুধ দোয়াবার আগে নাকি ছোটমাসি রোজ সেই গোরুকে দশখানা জেলুসিল ট্যাবলেট গুঁড়ো করে খাইয়ে দেন। গোরুর যদি অম্বল হয়, তা হলে সেই দুধ খেয়ে ওঁর মেয়েদেরও অম্বল হবে সেইজন্য এই ব্যবস্থা।

এই তো গেল খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার। কিন্তু কলকাতার রাস্তাঘাটে তো অনেক নোংরা থাকে, আর নিশ্বাসের সঙ্গে তার গন্ধও নাকে ঢুকে যায়। রাস্তায় বেরুলে নিশ্বাস তো নিতেই হবে। সেইজন্য ছোটমাসি মেয়েদের নাকেরও ব্যায়াম করান।

প্রত্যেক শনি-রবিবার ছোটমাসি দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যান ঠাকুরপুকুর। সেখানে ওঁদের আর-একটা চমৎকার বাড়ি আছে। সাদারঙের তিনতলা বাড়ি, মস্ত বড় বাগান, সবটাই উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা, একদিকের দেয়ালের পাশে একটা ছোট্ট পুকুর। এখানে থাকেন রুমু-ঝুমুর দাদু আর দিদিমা।

এখানে ছোটমাসি মেয়েদের নিয়ে আসেন টাটকা হাওয়া খাওয়াতে। এখানে ধুলোবালি নেই, কাছাকাছি কোনও কলকারখানা নেই বলে বাতাসে ধোঁয়া নেই, খুবই স্বাস্থ্যকর জায়গা।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ছোটমাসি রুমু-ঝুমুকে নিয়ে চলে আসেন সেই বাড়ির ছাদে। তারপর তাদের পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে বলেন, “নিশ্বাস নে! ভাল করে নিশ্বাস নে!”

ঠিক ড্রিল মাস্টারের মতন ছোটমাসি সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন, “নিশ্বাস নে, এবার ছাড়, ছাড়। আবার নে!”

খানিকক্ষণ এরকম করার পর ছোটমাসি বলেন, “এবার হাঁ করে খানিকটা হাওয়া খেয়ে ফ্যাল। এরকম টাটকা হাওয়া তো কলকাতায় পাবি না!”

রুমু-ঝুমু মায়ের সব কথা শুনে যায় লক্ষ্মী মেয়ের মতন। ওরা বুঝে গেছে, প্রতিবাদ করে কোনও লাভ নেই। ছোটমাসির মনটা বড্ড নরম, কেউ ওর কথায় কোনওদিন প্রতিবাদ করলেই উনি অমনি কেঁদে ফেলেন!

এত সব করেও রুমু-ঝুমুর চেহারা বেশ সুন্দর হয়েছে, পড়াশুনোতেও ওরা ভাল। ছোটমাসির এরকম বাড়াবাড়ি দেখে আমরা মাঝে মাঝে হাসাহাসি করি বটে, তাতে কিন্তু ছোটমাসি চটে যান না। নিজেও হেসে ফেলে বলেন, “তবুও দ্যাখ না, এত সাবধানে থেকেও কি সবসময় ভাল জিনিস পাওয়ার উপায় আছে? সেদিন ওদের খাওয়ার জন্য খুব বেছে বেছে ছোলা ভিজিয়ে দিলুম, তারপর ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে দেখি কী, একটা ছোলা পোকায় ফুটো করা!”

একদিন আমি ছোটমাসিদের বাড়িতে দুপুরে বেড়াতে গেছি। ছোটমাসি তখন স্নান করছিলেন। বাথরুম থেকে যখন বেরিয়ে এলেন, তখন তাঁর চোখ দুটি কপালে উঠে গেছে, মুখে দারুণ ভয়ের চিহ্ন!

আমিও ভয় পেয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কী হল?”

ছোটমাসি বললেন, “হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল, আর তারপরেই যা বুকটা কাঁপতে লাগল…”

“কী কথা?”

“তুই জানিস, পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ হল?”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এটা আবার একটা নতুন কথা নাকি? এতে ভয় পাবারই বা কী আছে?

আমি বললাম, “তাতে কী হয়েছে?”

ছোটমাসি বললেন, “পৃথিবীর তিনভাগ জল এটা আগে খেয়াল করিনি। তার মানে আমার মেয়েরা তো কখনও-না কখনও জলের ধারে যাবেই। এদিকে আমি ওদের সাঁতার শেখাইনি। ওরা ডুবে যাবে যে! কালই যদি ডুবে যায়?”

আমি হাসতে লাগলাম।

ছোটমাসি বললেন, “ধর, ওরা লেখাপড়ায় খুব ভাল হল। তারপর বিলেত-আমেরিকায় গেল…”

আমি বললাম, “তা তো যেতেই পারে।”

“তখন সমুদ্র পেরিয়ে যেতে হবে… মনে কর, সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্লেন যাচ্ছে, হঠাৎ প্লেনটা ভেঙে গেল আর ওরা সমুদ্রে গিয়ে পড়বে… তখন যদি সাঁতার না জানে, উরিব্‌বাবাঃ, কী সাংঘাতিক ব্যাপার হবে!’

“বালাই ষাট, ওদের প্লেন কেন ভাঙবে! তবে যদি প্লেন ভেঙেই যায়, তখন অত উঁচু থেকে সমুদ্রে পড়লে…”

“প্যারাশুট থাকবে তো! প্লেনে প্যারাশুট থাকে না? প্যারাশুটে করে জলে নামবে, তারপর তো সাঁতার জানতে হবে।”

আমি কল্পনা করতে লাগলুম প্লেন থেকে প্যারাশুট নিয়ে আমাদের রুমু আর ঝুমু নামছে আটলান্টিক মহাসাগরে, তারপর জলপরিদের মতন সাঁতার কাটতে লাগল।

“যদি জাহাজে করে যায়, জাহাজও তো ফুটো হয়ে যেতে পারে?”

“তা তো বটেই!”

“পরশু থেকে ওদের গরমের ছুটি। পরশু থেকেই আমি ওদের সাঁতার শেখাব!”

“ঠিক আছে আমিই সাঁতার শিখিয়ে দেব ওদের।”

“তুই সাঁতার শেখাবি? কোথায়?”

“কেন, গঙ্গায়।”

“গঙ্গায়? সাঁতার না শিখেই কেউ গঙ্গায় নামে? রোজ কত লোক ডুবে যায়।”

“তা হলে বালিগঞ্জের লেকে?”

“ধুত ওখানে একগাদা লোক সাঁতার কাটে। কত রকম নোংরা থাকে জলে…।”

ছোটমাসি উঠেপড়ে লেগে গেলেন তাঁর দুই মেয়ের সাঁতার শেখাবার ব্যবস্থা করতে। যে-কোনও জায়গায় তো ছোটমাসি মেয়েদের সাঁতার শেখাতে রাজি হতে পারেন না। একদম পরিষ্কার জল চাই, সেই জলে আবার ওষুধ ফেলতে হবে। তার আগে মেয়েদেরও নিতে হবে নানারকম ইঞ্জেকশন।

ছোটমাসির নানান জায়গায় চেনাশুনো। শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা করে ফেললেন কলকাতার খুব বড় একটা ক্লাবের সুইমিং পুলে। তাও অন্য সকলের সঙ্গে নয়। খুব ভোরবেলা যখন কেউ যায় না, সেই সময় আগের দিনের জল বদলে নতুন জল ভরা হবে, তাতে মেশাবেন ছোটমাসি তার নিজস্ব ওষুধ। এবং সাঁতার শেখাবার জন্য ছোটমাসি ঠিক করলেন একজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়েকে। ছোটমাসির ধারণা, যারা ইংরিজি বলে তারা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, রুমু-ঝুমু এর আগে কখনও মায়ের কথার অবাধ্য না হলেও সাঁতার শিখতে রাজি হল না। দু’জনেই বলল, জলে নামতে ওদের ভয় করে।

এদিকে ছোটমাসি একটা জিনিস ধরলে কিছুতেই সেটা মাঝপথে ছাড়েন না। ওদের কত করে বোঝালেন। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “এত ভয় কীসের? দেখবি একদিন-দু’দিন নামলেই ভয় কেটে যাবে। ভাল ট্রেনার থাকবে। দরকার হলে আমি জলে ঝাঁপিয়ে পড়ব!”

মেয়েরা তবু শুনতে চায় না। কাঁচুমাচু মুখ করে বলতে লাগল, “এ বছর না, পরের বছর!”

সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক, এখন মেয়েরা রাজি না হলে কি চলে? কত কষ্ট করে ছোটমাসি সেই ক্লাবের লোকদের রাজি করিয়েছেন আলাদা ব্যবস্থা করবার জন্য। সুতরাং ছোটমাসি কাঁদতে শুরু করলেন।

কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন, “আমি তোদের ভালর জন্য এত সব করি। আর তোরা আমার কথা শুনবি না? সাঁতার না শিখলে কবে হঠাৎ ডুবে যাবি, পৃথিবীর তিন ভাগ জল, এক ভাগ স্থল!”

সুতরাং শেষ পর্যন্ত রুমু-ঝুমুকে রাজি হতেই হল।

যেদিন প্রথম সাঁতার শিখতে যাওয়া হবে সেদিন আমিও ভোরবেলা গিয়ে হাজির হলাম। ওদের উৎসাহ দিতে হবে তো! রুমু-ঝুমুর মুখচোখে খুব ভয় ভয় ভাব। তখনও বলছে, “মা, আজ না গেলে হয় না? বড্ড ভয় করছে!”

ছোটমাসি খুব নরম গলায় বললেন, “দেখিস, কোনও ভয় নেই। আমি তো পাশেই থাকব।”

সেই ক্লাবে গিয়ে সুইমিং পুলের কাছে দাঁড়িয়ে রুমু আর ঝুমু এ-ওর মুখে দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হি হি করে হেসে উঠল। ওদের ট্রেনার মেয়েটি জলে নেমে দাঁড়িয়ে আছে। সে অবাক। আমরা আরও বেশি অবাক। ভয়ের চোটে রুমু-ঝুমুর মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?

ছোটমাসি বললেন, “ওমা, তোরা ওরকম করছিস কেন? ভয় নেই! ভয় নেই!”

ওরা আরও জোরে হেসে উঠল।

ছোটমাসি বললেন, “থাক, থাক, ভয় পাচ্ছে। ওদের নামতে হবে না।”

রুমু আর ঝুমু অমনি লাফিয়ে পড়ল জলে। ছোটমাসি আঁতকে উঠলেন যেন।

তারপরই দেখলাম একটা মজার দৃশ্য। ট্রেনার মেয়েটি ওদের দু’জনকে ধরতে আসতেই ওরা পাশ কাটিয়ে ঝপাস ঝপাস করে সাঁতার কেটে দূরে চলে গেল। খুব পাকা সাঁতারুর মতন।

অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়েটিও হেসে উঠল। ছোটমাসি প্রথমটায় ঠিক বুঝতে পারেননি। তিনি ভ্যাবাচাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হল? মেয়েটি হাসছে কেন?”

আমি বললাম, “ওর বোধহয় খুব হাসিখুশি স্বভাব!”

তারপর ছোটমাসি বললেন, “ওরা অতদূর চলে গেল কী করে? সাঁতার না জেনেও সাঁতার কাটছে?”

আমি বললাম, “তোমারই মেয়ে তো। তুমি খুব ভাল সাঁতার জানো, তাই ওদের আর শেখার দরকার হয়নি!”

রুমু-ঝুমু এই সময় টুপ করে ডুবে গেল। আর ওঠেই না, ওঠেই না। তখন ছোটমাসি খুব ভয় পেয়ে নিজেই শাড়িটাড়ি পরা অবস্থায় জলে লাফিয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন, আমি ওঁর হাত টেনে ধরলাম। রুমু-ঝুমু ডুবসাঁতার কেটে অনেক দূরে গিয়ে ভুশ করে আবার মাথা তুলল।

এবার ছোটমাসি বুঝলেন। গালে হাত দিয়ে বললেন, “ওমা ওরা সাঁতার জানে? এই, তোরা কোথায় সাঁতার শিখলি? কবে শিখলি?”

রুমু-ঝুমু চিত-সাঁতার কাটতে কাটতে উত্তর দিল, “ঠাকুরপুকুরে।”

ছোটমাসি আরও অবাক হয়ে বললেন, “ঠাকুরপুকুরে ওরা কোথায় সাঁতার শিখল?”

আমি বললাম, “ঠাকুরপুকুর নাম যখন, নিশ্চয়ই সেখানে অনেক পুকুর আছে।”

ছোটমাসি বললেন, “পুকুর কোথায়? আমাদের ঠাকুরপুকুরের বাড়িতে একটা নোংরা ডোবা আছে।

সেটা তো পানায় ভরা, কেউ নামে না!”

রুমু-ঝুমু বলল, “আমরা সেটাতেই সাঁতার শিখেছি।”

“কে শেখাল?”

“কেউ শেখায়নি। নিজে নিজে!

ছোটমাসি ধপাস করে একটা বেঞ্চির ওপর বসে পড়ে বললেন, “হায়, হায়, কী হবে? একা একা সাঁতার শেখা কী সাংঘাতিক কথা! আর ওই বিচ্ছিরি নোংরা পুকুর, কতকাল ওর জল পরিষ্কার করা হয় না, সেটাতে নেমেছে আমার মেয়েরা! ওরা বেঁচে আছে কী করে? হ্যাঁরে নিলু, কী হল বল তো!”

আমি বললাম, “সত্যিই তো, ওরা বেঁচে আছে। কী করে! খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার!”

রুমু-ঝুমু তখন মনের আনন্দে জল তোলপাড় করে সাঁতার কাটছে।

অক্টোবর ১৯৭৮

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন