সতীশচন্দ্র মিত্র
ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশের মত বঙ্গেরও একটা বিশেষত্ব আছে। মহারাষ্ট্রের বিশেষত্ব শিবাজী, রাজপুতনার বিশেষত্ব বীরত্ব, পঞ্জাবের শিখনীতি, অযোধ্যাদি প্রদেশের রামকথা, বিহারের জৈনবৌদ্ধ-বিহার, আর বঙ্গের বিশেষত্ব চৈতন্যধর্ম্ম। জগতে যাহা কেহ কখনও শুনায় নাই, বঙ্গদেশ চৈতন্যের মুখে ভগবানের সেই নামের মহিমা শুনাইয়া, বঙ্গদেশের চৈতন্য-সম্পাদন করিয়াছে। অস্ত্রেশস্ত্রে নহে, শাস্ত্রতর্কে নহে, বঙ্গ শুধু অশ্রুপাতে নামানুকীৰ্ত্তনে আত্মপ্রতিষ্ঠা করিয়াছে। প্ৰেম বঙ্গে রূপ পরিগ্রহ করিয়া চৈতন্য-মূৰ্ত্তিতে আবির্ভূত হইয়াছিল। আর সে রূপের মহিমায় শিক্ষা দীক্ষা, শাস্ত্ৰ ইতিহাস, তান্ত্রিক বামাচার, মায়াবাদীর শুষ্কতর্ক ভাসাইয়া লইয়া গিয়াছিল। তাহার ফলে দীনা বঙ্গভাষা সুরতরঙ্গিণীর তরঙ্গ-ভঙ্গের মত প্রবলতা ও পবিত্রতা পাইয়া ধন্য হইয়াছিল; আর বাঙ্গালীর জাতীয়তা এক নবপ্রকৃতি পরিগ্রহ করিয়া ভারত-প্রাঙ্গণে নৃত্য করিতেছিল।
কোন নদীর স্থানবিশেষে জলোচ্ছ্বাস হইলে, তাহার নাম বান; আর পার্বত্য জলোচ্ছ্বাস যখন নদীর দু’কূল ছাপাইয়া দেশ ভাসাইয়া চলিয়া যায়, তখন তাহার নাম বন্যা। স্থানবিশেষে প্ৰচলিত অবস্থার বিপক্ষে মুষ্টিমেয় লোকের যে উত্থান, তাহার নাম বিদ্রোহ; আর সমস্ত দেশ ভরিয়া প্রতিষ্ঠিত অবস্থার বিরুদ্ধে অগণিত জনসংঘের যে আন্দোলন, তাহার নাম বিপ্লব। বানের মত বিদ্রোহ স্থানিক ও সাময়িক; বন্যার মত বিপ্লব দেশব্যাপী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিদ্রোহের মূল কৃত্রিম, কিন্তু বিপ্লবের কারণ স্বাভাবিক হইয়া থাকে। পাঠানযুগে বঙ্গের নানাস্থানে হিন্দু-মুসলমানে যে বিবাদ, তাহা বিদ্রোহের সংজ্ঞাভুক্ত; আর হুসেন শাহের আমলের সুবর্ণযুগে শ্রীচৈতন্য কর্তৃক যে দেশময় ধৰ্ম্মান্দোলন হইয়াছিল, তাহা বিপ্লব। ফরাসী বিপ্লবে সমস্ত ইয়ুরোপের গতিমতি ফিরাইয়া দিয়াছিল, চৈতন্যবিপ্লবে বঙ্গকে এক নূতন ছাঁচে গড়িয়াছে। কিন্তু চৈতন্য যে বিপ্লবের প্রবর্তক, তাহার পথ বহুদিন হইতে প্রস্তুত হইতেছিল। চৈতন্যের জন্মে নবদ্বীপ পবিত্র হইয়াছে বটে, কিন্তু শত শত চৈতন্যের আবির্ভাবে বঙ্গের প্রতিবিভাগ তখন সে আন্দোলনের পোষকতা করিবার জন্য উদ্গ্রীব হইয়াছিল। নগণ্য যশোহর-খুলনাও তখন সে যজ্ঞের আহুতি দিতে পরাঙ্মুখ হয় নাই। চৈতন্য কেন্দ্রমূর্ত্তি হইলেও, রূপ-সনাতন, লোকনাথ বা হরিদাসের মত তাঁহার ভক্ত পার্ষদগণ যে তাঁহার পার্শ্বদেশ সমুজ্জ্বল করিয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। যশোহর-খুলনার রূপ-সনাতন, লোকনাথ ও হরিদাস স্বীয় স্বীয় জন্মপল্লীর গণ্ডী ছাড়াইয়া বৈষ্ণবধর্ম্মের সুদৃঢ় স্তম্ভরূপে দেশের সম্পত্তি হইয়া রহিয়াছেন। আমরা রূপ-সনাতনের পুণ্যকথা এখানে বলিয়া পরে লোকনাথ ও হরিদাসের পবিত্র প্রসঙ্গ তুলিব।[১]
পাঠান-রাজত্বের শেষাংশে চৈতন্যই প্রধান চরিত্র। তাঁহাকে বাদ দিয়া বঙ্গের ইতিহাসের কথাও চলে না, জেলার ইতিহাসও হয় না। জেলায় জেলায় যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চৈতন্যের আবির্ভাব হইয়াছিল, তাহা বাদ দিলে চৈতন্যের প্রভাব নিষ্প্রভ হইয়া পড়ে। রূপ-সনাতনের অকুণ্ঠিত শাস্ত্রজ্ঞান, লোকনাথের ঐকান্তিক সেবা-নিষ্ঠা ও হরিদাসের অলৌকিক প্রেমোন্মাদনা একত্র করিলে চৈতন্যের আভাস পাওয়া যায়। তাই যশোহর-খুলনা চৈতন্য ছাড়া নহে।
সুলতান হুসেন শাহ হিন্দু-প্রতিভার বিশেষ সমাদর করিতেন। তিনি বাছিয়া বাছিয়া হিন্দুর মধ্য হইতে তাঁহার উচ্চ কর্মচারী নির্ব্বাচন করিতেন। রাজত্বের প্রথম হইতে তাঁহার প্রধান অমাত্য ছিলেন, দক্ষিণরাঢ়ীয় কায়স্থ-কুলতিলক গোপীনাথ বসু। এই গোপীনাথকে তিনি উপাধি দিয়াছিলেন পুরন্দর খাঁ। পুরন্দর খাঁর পর তাঁহার প্রধান অমাত্য বা উজীর হইয়াছিলেন রূপ ও সনাতন। সনাতন শেষজীবনে ‘বৈষ্ণবতোষণী’ নামক এক গ্রন্থ রচনা করেন; তাহার ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীজীবগোস্বামী তাঁহার অনুমতিক্রমে উহার সংক্ষেপ করিয়াছিলেন। ইহারই নাম ‘লঘুতোষণী’। লঘুতোষণী হইতে রূপ-সনাতনের বংশপরিচয় পাই। ইহা অপেক্ষা প্রামাণিক বিবরণ আর কিছু হইতে পারে না। উহাই এখানে প্রদত্ত হইতেছে।
কর্ণাট দেশে শ্রীসৰ্ব্বজ্ঞ জগদ্গুরু নামক ভরদ্বাজ-গোত্রীয় এক ব্রাহ্মণ রাজা ছিলেন। তাঁহার পুত্র অনিরুদ্ধদেব। অনিরুদ্ধের দুই পুত্র; উঁহারা বৈমাত্রেয় ভ্রাতা, জ্যেষ্ঠ রূপেশ্বর, কনিষ্ঠ হরিহর। উদ্ধত হরিহর জ্যেষ্ঠকে তাড়াইয়া দিয়া নিজে রাজা হন। রূপেশ্বর সপত্নীক পৌরস্তদেশে পলায়ন করেন। তথায় তাঁহার পদ্মনাভ নামে এক সৰ্ব্বগুণান্বিত পুত্র হয় (১৩০৮ শক)।
‘স্ফুরৎসুরতঙ্গিণীতটনিবাসপৰ্যৎসুকঃ,
ততো দনুজমর্দনক্ষিতিপপূজ্যপাদঃক্রম—
দুবাস নবহট্টকে স কিল পদ্মনাভঃ কৃতী।’—লঘুতোষণী।[৩]
অর্থাৎ পদ্মনাভ গঙ্গাতটে বাস করিতে সমুৎসুক হইয়া, রাজা দনুজমৰ্দ্দন কর্তৃক পূজিত হইয়া গঙ্গাতীরে নৈহাটি গ্রামে বসতি করেন। পদ্মনাভের পাঁচ পুত্র জন্মে। তাঁহাদের নাম পুরুষোত্তম, জগন্নাথ, নারায়ণ, মুরারি, মুকুন্দ।
সর্ব্বকনিষ্ঠ মুকুন্দের পুত্রের নাম কুমার। তিনি–
‘কিঞ্চিদ্দ্রোহমবাপ্য সৎকুলজনিবঙ্গালয়ং সঙ্গতঃ।’[৪]
অর্থাৎ বিশেষ কোন বিবাদের জন্য তিনি জন্মস্থান ত্যাগ করিয়া বঙ্গদেশে উঠিয়া যান।
লঘুতোষণীর বর্ণনা হইতে আমরা দেখিতে পাইলাম যে, পদ্মনাভ যখন নৈহাটিতে বাসস্থান নির্দ্দেশ করেন, তখন তিনি দনুজমৰ্দ্দন নামক এক রাজার দ্বারা পূজিত হইয়াছিলেন। আমরা পূৰ্ব্বে দেখিয়াছি, মহেন্দ্রদেব যবনকুল নাশ করিয়া ১৪১৪ খৃষ্টাব্দে পাণ্ডুনগরে এক রাজ্য স্থাপন করেন। ১৪১৭ খৃষ্টাব্দে তাঁহার মৃত্যুর পর তৎপুত্র দনুজমৰ্দ্দনদেব চন্দ্রদ্বীপ গিয়া এক রাজ্যস্থাপন করেন। দনুজমর্দন দেবদ্বিজে ভক্তিপরায়ণ ছিলেন। রূপেশ্বর কর্ণাট ত্যাগ করিয়া বঙ্গে আসিলে সম্ভবতঃ রাজধানীর সন্নিকটে গৌড় বা পাণ্ডুনগরে বাসস্থান নির্দ্দেশ করিয়াছিলেন। তৎসূত্রে দেববংশীয় রাজগণের সহিত তাঁহার পরিচয় হওয়া অসম্ভব নহে। যে বিভ্রাটে দনুজমৰ্দ্দন পাণ্ডুনগর ত্যাগ করিয়া চন্দ্রদ্বীপে গিয়াছিলেন, তাহারই ফলে পদ্মনাভেরও পাণ্ডুনগর ত্যাগ করিতে হয়। দনুজমদনের রাজ্যস্থাপনের পরে তিনি চন্দ্রদ্বীপে গিয়া তৎকর্তৃক সৎকৃত হইয়াছিলেন; এবং তাঁহারই নিকট হইতে ভূমিবৃত্তি পাইয়া গঙ্গাতীরে কাটোয়ার সন্নিকটে নৈহাটিতে বাস করেন। ১৪২০ খৃষ্টাব্দের নিকটবর্ত্তী কোন সময়ে এই ঘটনা হইতে পারে। গঙ্গাতীরে তাঁহারা দুই পুরুষ বাস করিয়াছিলেন; তাহাতে ৫০ বৎসর কাটিয়া যাইতে পারে। সুতরাং পদ্মনাভের পৌত্র দ্বিজবর কুমারের গঙ্গাবাস ত্যাগের কাল ১৪৬০ খৃষ্টাব্দ আনুমানিক ধরিতে পারি।
‘ভক্তিরত্নাকর’ নামক প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব গ্রন্থে দেখিতে পাই, কুমারদেব অতি শুদ্ধাচারী নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি যজ্ঞাদি ক্রিয়া করিতেন, এবং কদাচারী লোকের স্পর্শে এত ভীত হইতেন যে, সেরূপ কাহাকেও দেখিলে প্রায়শ্চিত্ত না করিয়া অনুগ্রহণ করিতেন না।৫ এই সময়ে পীরালির অত্যাচারে পশ্চিমবঙ্গ উৎসন্ন হইতেছিল। যে নবদ্বীপ অঞ্চলে নৈহাটিতে কুমারদেব বাস করিতেন, সেখানে এই অত্যাচার বড় বেশী হইয়াছিল। এজন্য তিনি দনুজমর্দনের নব প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যে আশ্রয় পাইবার প্রত্যাশায় বালায় চলিয়া যান।
“যবনের ভয়ে কুমার নৈহাটী ছাড়িলা।
কিছুদিন বঙ্গে চন্দ্রদ্বীপে বাস কৈল॥’
—প্রেমবিলাস, ২৩শ, ২২২ পৃ।
চন্দ্রদ্বীপে তখন দনুজমৰ্দ্দনের বংশধর হিন্দুরাজা প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করিতেছিলেন। সে প্রদেশে ঐ জাতীয় অত্যাচার ছিল না। কুমারদেব সেখানে বাসভূমি পাইয়া ভক্তির সাধনায় স্বচ্ছন্দে জীবিকা নির্ব্বাহ করিতেন। এই স্থানেই তাঁহার ভূবনপাবন পরম ভক্ত পুত্রত্রয় জন্মগ্রহণ করেন। উঁহাদের নাম অমর, সন্তোষ ও বল্লভ। শ্রীচৈতন্যদেব যখন তাঁহাদিগকে ভক্তির পথে টানিয়া আনিয়াছিলেন, তখন ইঁহাদের তিনজনেরই নাম পরিবর্ত্তন করিয়া যথাক্রমে শ্রীসনাতন, শ্রীরূপ ও অনুপম এই নূতন নাম রাখিয়াছিলেন। সেই নামেই তাঁহারা পরিচিত
বল্লভের জন্মের কিছুদিন পরে কুমারদেব অকস্মাৎ নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন। তখনও তাঁহার পিতা মুকুন্দদেব গৌড়-রাজসরকারে উচ্চ রাজকার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন। রাজধানীর পার্শ্ববর্ত্তী রামকেলি গ্রামে তাঁহার বাসাবাটী ছিল। পৌত্রদিগকে তিনি রামকেলিতে লইয়া গিয়া উঁহাদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। মুকুন্দদেবের মৃত্যুর পর (১৪৮৩ খৃষ্টাব্দ) উঁহারা ক্রমে ক্রমে রাজসরকারে প্রবেশ করেন। হুসেন শাহের রাজত্বকালে স্বীয় স্বীয় প্রতিভাবলে উঁহাদের দ্রুত পদোন্নতি হইয়াছিল। সনাতন হইলেন ‘দবীর খাস’ (প্রধান অমাত্য); শ্রীরূপের কার্য্যোপাধি হইল ‘সাকর (বিশ্বস্ত) মল্লিক’, তিনি রাজস্ব বিভাগে সর্ব্বময় কর্তা ছিলেন। বল্লভেরও মল্লিক উপাধি ছিল, তিনি টাঁকশালের অধ্যক্ষ ছিলেন। রামকেলিতে এখনও তাঁহাদের নামীয় জলাশয় ও কীৰ্ত্তিচিহ্ন আছে। এই স্থানে বল্লভের একমাত্র পুত্র শ্রীজীবের জন্ম হয়।
হুসেনের রাজসভায় যখন সনাতন ও রূপ ‘মহামন্ত্রী’ ছিলেন, তখন তাঁহাদের প্রতিপত্তি বা সমৃদ্ধির পার ছিল না। কয়েকটি খণ্ডপ্রদেশই তাঁহাদিগকে দেওয়া হইয়াছিল; তাঁহারা কিঞ্চিৎ কর দিয়া সে সব রাজ্য ভোগ করিতেন। উহাদের মধ্যে একটি রাজ্যখণ্ড ছিল ফতেহাবাদের অন্তর্গত ইউসর ও চেঙ্গুটিয়া পরগণা। গৌড় হইতে বালা বড় বেশী দূর বলিয়া, তাঁহারা সেখানে যাতায়াতের প্রায় অর্দ্ধপথে, বর্তমান যশোহর জেলায়, প্রসন্ন-সলিল ভৈরবনদের তীরে এক অপূর্ব্ব পুরী নির্ম্মাণ করিয়া তাঁহাদের প্রেমময় পবিত্র জীবনের স্মৃতির স্বরূপ নব নির্ব্বাচিত স্থানের নাম দিয়াছিলেন—প্রেমভাগ।[৬]
যশোহর জেলায় চেঙ্গুটিয়া নামক রেলওয়ে ষ্টেশনের এক মাইল পশ্চিমদিকে প্রেমভাগ গ্ৰাম অবস্থিত। সাধারণ লোকের মৌখিক ভাষায় উহা এক্ষণে পমভাগ হইয়াছে। প্রেমভাগ এক্ষণে নদী হইতে সামান্য দূরে পড়িয়াছে বটে, কিন্তু পূর্ব্বে যখন ভৈরব জগন্নাথপুরের দক্ষিণ সীমা দিয়া প্রবাহিত হইত, তখন প্রেমভাগ নদীর সন্নিকটে ছিল। এক সময়ে তপনভাগ বা তপোবন ভাগ এবং প্রেমভাগ পরস্পর সংলগ্ন গ্রাম ছিল এবং উহা সেখহাটি বা জগন্নাথপুরেরই অংশবিশেষ ছিল। পূর্ব্বে আমরা এ সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা করিয়াছি।[৭] বৈষ্ণব সাহিত্য আলোচনায় সকল ঘটনার সামঞ্জস্য রাখিয়া সনাতন ও রূপ সম্বন্ধীয় যে কালনির্ণয় করিতে পারি তদনুসারে বালার বাটীতে শ্রীসনাতন ১৪৬৫ খৃঃ অব্দে (১৩৮৭ শক), শ্রীরূপ ১৪৭০ খৃঃ অব্দে (১৩৯২ শক), এবং শ্রীবল্লভ ১৪৭৩ খৃঃ অব্দে (১৩৯৫ শক) জন্মগ্রহণ করেন। ইহার কয়েক বৎসর পরে ১৪৮৬ খৃঃ অব্দে (১৪০৭ শক) শ্রীগৌরাঙ্গ নবদ্বীপে আবির্ভূত হন। সুতরাং শ্রীচৈতন্যদেব বয়সে এই তিন ভ্রাতা অপেক্ষা কনিষ্ঠ। তিনি ১৫১৩ খৃঃ অব্দে (১৪৩৫ শক) গৌড়-রামকেলিতে গিয়া ভ্রাতৃযুগলকে আত্মসাৎ করেন। তজ্জন্য পরবৎসর (১৫১৪ খৃঃ অব্দ) শ্রীরূপ অগ্রে সংসার ত্যাগ করেন; এক বৎসর পরে সনাতনও গৃহত্যাগী হন। শ্রীরূপ অগ্রে গৃহত্যাগ করেন এবং তাঁহার গুরুদত্ত নাম স্বল্পাক্ষর যুক্ত বলিয়া রূপ-সনাতন এই জোড়ানামে রূপের নামই অগ্রে আছে। চৈতন্যধর্ম্ম প্রচারিত হইলে উভয় ভ্রাতা উহাতে বিমুগ্ধ হন; অবশেষে গৌড়ে চৈতন্যের দর্শনলাভ করিয়া উভয়ে এমন আত্মহারা হন যে, রাজপ্রতিম শক্তি-সমৃদ্ধি পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করেন। অগ্রে রূপ রাজকার্য্য পরিত্যাগ করেন, পরে সনাতন ব্যগ্র হইলে হুসেন তাঁহাকে কিছুতেই নিরস্ত করিতে না পারিয়া বন্দী করেন; তখন সনাতন কারারক্ষীকে উৎকোচ দিয়া ছুটিয়া গিয়া কাশীধামে চৈতন্যের কৃপালাভ করেন। উভয় ভ্রাতায় ৪০ বৎসরেরও অধিককাল মথুরা-বৃন্দাবনে ধর্ম্মসাধনায়, শাস্ত্র-চর্চ্চায় এবং ভক্তিগ্রন্থ-রচনায় অতিবাহিত করেন। তাঁহারা যেমন অসাধারণ পণ্ডিত, তেমনি সৰ্ব্বত্যাগী ভক্ত সন্ন্যাসী। জ্ঞান-ভক্তির অপূৰ্ব্ব সম্মিলনে তাঁহাদের মধুর চরিত্রকথা অসংখ্য বৈষ্ণবগ্রন্থকে মধুময় করিয়া রাখিয়াছে। এখানে অপ্রাসঙ্গিক হইবে আশঙ্কায় আমরা সে মধুর কথা বলিবার লোভ অত্যন্ত অনিচ্ছায় সম্বরণ করিলাম। আজ যে মথুরা বৃন্দাবনের যেখানে সেখানে কৃষ্ণলীলার ঐতিহাসিকতা প্রতিপন্ন হইতেছে, আজ যে ব্রজমণ্ডলে বৃন্দাবনধাম বাঙ্গালীর প্রতিপত্তি, বাঙ্গালীর কীর্তিকথায় পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে, রূপ-সনাতন ও লোকনাথ তাহার মূল। এ বিষয়ে যশোহরবাসীর যথেষ্ট গৌরব করিবার আছে।
শ্রীরূপ রামকেলি হইতে গৃহত্যাগকালে, তাঁহাদের ধনসম্পত্তি যাহা ছিল, গুছাইয়া লইয়া নৌকায় বোঝাই করিয়া প্রেমভাগের বাটীর দিকে যাত্রা করেন; কেবল মাত্র,
‘গৌড়ে রাখিল মুদ্রা দশ হাজার।
সনাতন ব্যয় করে রহে মুদিঘর।’
এই টাকা হইতেই সনাতন পরবৎসর কারাধ্যক্ষকে উৎকোচ দিয়া পলায়ন করেন। শ্রীরূপ ও বল্লভ রামকেলি হইতে পরিবারবর্গ সঙ্গে লইয়া কতক বালার পুরাতন বাটীতে, কতক ফতেহাবাদের অন্তর্গত প্রেমভাগে পাঠাইলেন।[৮] বল্লভ পরিবারবর্গ লইয়া বালার বাটীতে গেলেন, শ্রীরূপ ধনভার লইয়া প্রেমভাগে থাকিলেন। তথায় আসিয়া অৰ্দ্ধেক অর্থ ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবগণকে দান করিলেন, বাকী যাহা রহিল তাহার অর্দ্ধেক আত্মীয় কুটুম্বগণের মধ্যে বিতরণ করিলেন এবং বাকী চতুর্থাংশ আকস্মিক কোন বিপদ হইতে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ বিশ্বস্ত ব্রাহ্মণের নিকট গচ্ছিত রাখিলেন।[৯] উঁহাদের প্রপিতামহ পদ্মনাভ কাটোয়ার সন্নিকটে গঙ্গাতীরে নৈহাটি গ্রামে বাস করেন, পিতামহ মুকুন্দও সেখানে ছিলেন, তাহা বলিয়াছি। ঐ গ্রামের ২/৩ মাইল দূরে দক্ষিণখণ্ড নামে একটি গ্রাম এখনও আছে। তথাকার গোস্বামী বংশীয়েরা পদ্মনাভের গুরুপদে বরিত হন। রূপেরও কুলগুরু উঁহারাই। তিনি প্রেমভাগে আসিয়া, গুরুবংশে যিনি জীবিত ছিলেন তাঁহাকে তথায় আহ্বান করেন এবং তিনি আসিলে পারসীক ভাষায় এক দানপত্র লিখিয়া দিয়া প্রেমভাগ ও নিকটবর্ত্তী স্থানে বহুল পরিমাণ ভূমি উঁহাকে দান করেন। দক্ষিণখণ্ডের গোস্বামী বংশীয় নৃসিংহনাথ ঠাকুর মহাশয় জীবিত আছেন, তিনি প্রেমভাগের বহু সম্পত্তির মালিক বলিয়া গত সেটলমেন্টে ধাৰ্য্য হইয়াছে।
প্রেমভাগে রূপ-সনাতনের সময়ের কিছু কিছু কীৰ্ত্তিচিহ্ন এখনও আছে; ঐগুলিকে চারি শ্রেণীতে বিভক্ত করিতে পারি। প্রথমতঃ তাঁহাদের জলাশয়সমূহ। সরকারী রাস্তা হইতে প্ৰেমভাগ গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করিলে কতকগুলি প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পুকুর সর্ব্বপ্রথমে দর্শকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। সর্ব্বপ্রথমে (১) সদরপুকুর— ইহার দক্ষিণের ঘাটটি প্রস্তরদ্বারা বাঁধা ছিল। বহুদিন পূর্ব্বে ইংরাজ আমলে একবার সরকারী রাস্তার পুল নির্মাণের ইট প্রস্তুত করিবার জন্য পুষ্করিণীর খাতের দক্ষিণদিকে গর্ত খনন করা হয়, তখন সেই পুরাতন বাঁধাঘাটের প্রস্তর-ভিত্তি দেখা গিয়াছিল। এই দক্ষিণ পাহাড়ের সন্নিকটে রূপ-সনাতনের বসতি বাড়ী ছিল। এখনও সেখানে স্থানে স্থানে পুরাতন ইট পাওয়া যায়। (২) চাল ধোয়ানীর পুকুর-বর্তমান হাটের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। (৩) মধ্যপুষ্করিণী বা বামনের পুকুর— ইহা সদর পুকুরের পূর্ব্বধারে অবস্থিত; এ পুকুরে বসিয়া ব্রাহ্মণেরা সন্ধ্যাহ্নিক করিতেন। (৪) মধ্যপুকুরের পূর্ব্বদিকে কাণাপুকুর। (৫) সরকারী রাস্তার পশ্চিমে এক্ষণে ধোপার পুকুর নামে অভিহিত। (৬) ছোটপুকুরিয়া— ইহা বর্ত্তমান বাহিরঘাট গ্রামের মধ্যে পড়িয়াছে। (৭) হাটপুকুরিয়া—রেলের রাস্তার পশ্চিম গায়ে অবস্থিত। এই সাতটি পুষ্করিণী রূপ-সনাতনের সময়ে খনিত বলিয়া কথিত। সাংরাজ নামে আর একটি পুরাতন খাত ছিল, কিন্তু উহা এই সাতপুকুরের অন্তর্ভুক্ত নহে
দ্বিতীয়তঃ, রূপসনাতনের মঠবাড়ী। পমভাগের সীমার মধ্যে সিঙ্গিয়াবাওড়ের পশ্চিমধারে একটি আমবাগান আছে; উহা মঠবাড়ী নামে খ্যাত। এখানে রূপ-সনাতনের একটি বিখ্যাত দেবমন্দির ছিল; সে মন্দির এক্ষণে মৃত্তিকা-প্রোথিত হইয়াছে। তৃতীয়তঃ, পাটবাড়ী। প্রেমভাগের গায়ে গাদগাছি গ্রামে ২৫ বিঘা জমিতে বিস্তৃত বাগান ছিল। এ বাগে ফলের বৃক্ষই অধিক ছিল। বাগানের মধ্যে পুকুর ছিল। এখানে পাটপূজা, দোলপূজা প্রভৃতি উৎসব হইত। এইজন্য ইহার নাম ছিল পাটবাড়ী। চতুর্থতঃ ফুলবাড়ি। উক্ত বাগানের সন্নিকটে কয়েক বিঘা জমিতে সুন্দর ফুলবাগান ও পুকুর ছিল। পার্শ্ববর্ত্তী উত্তমনগর গ্রামেও কিছু কিছু কীৰ্ত্তিচিহ্ন ছিল। পুরুষানুক্রমে এই সকল স্থানের অধিকার রূপ-সনাতনের গুরু বংশীয়গণের ছিল।
রূপ-সনাতনের অন্য কোন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন বলিয়া জানা যায় না। তবুও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে লিখিত আছে, রূপের সংসার ত্যাগের পর যখন সনাতন রাজকার্য্যে শিথিলপ্রযত্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন, তখন একদা হুসেন শাহ তাঁহাকে তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিলেন :
‘তোমার বড় ভাই করে দস্যু ব্যবহার।
জীব বহু মারি কৈল চালা ছারখার।
হেথা তুমি কৈলা মোর সর্ব্ব-কার্য্য নাশ।’
এখানে ‘বড় ভাই’ বলিতে স্ত্রীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বড় শ্যালককে বুঝাইতেছে। মুসলমানেরা কখনও কখনও বড় শ্যালককে বড় ভাই বলিতেন। সনাতনের বহু আত্মীয়স্বজন রাজসরকারে চাকরী করিতেন। তাঁহার এক ভগিনীপতি শ্রীকান্ত উচ্চ কর্ম্মচারী ছিলেন। সম্ভবতঃ রাজকার্য্য উপলক্ষে রূপ-সনাতন রামকেলিতে বাস করিবার পর উক্ত আত্মীয় কোন চাক্লার কর্ম্মাধ্যক্ষরূপে প্রেমভাগে বাস করিতেছিলেন। তাঁহার কথা উল্লেখ করিয়া হুসেন শাহ সনাতনকে তিরস্কার করিয়াছিলেন। পূর্ব্বে বলিয়াছি, কুমারদেবের সময় হইতে চন্দ্রদ্বীপেও একটি বাড়ী ছিল। ঐ স্থানে কনিষ্ঠ ভ্রাতা বল্লভ বাস করিতেন। এই বল্লভের পুত্র সুপ্রসিদ্ধ শ্রীজীব গোস্বামী। জীব অতি শিশুকালে রামকেলিতে জ্যেষ্ঠতাতদ্বয়ের সহিত বাস করিবার সময় শ্রীচৈতন্যদেব তথায় গিয়াছিলেন। শ্রীজীব গোপনে মহাপ্রভুকে দেখিয়াছিলেন। রূপ-সনাতনের গৃহত্যাগের পর শ্রীজীবও নবধর্ম্মে আত্মসমর্পণ করিতে ব্যাকুল হইয়া পড়েন। তখন তিনি চন্দ্রদ্বীপে বাস করিতেছিলেন। ‘ভক্তি-রত্নাকরে’ শ্রীজীব সম্পৰ্কে আছে :
‘অধ্যয়ন ছলে নবদ্বীপ যাত্রা কৈল॥’[১০]
চন্দ্রদ্বীপবাসী লোক বিচারিল মনে।
অবশ্য শ্রীজীব যাইবেন বৃন্দাবনে।।
শ্রীজীব সঙ্গের লোক বিদায় করিয়া।
ফতেয়া হইতে চলে এক ভৃত্য লইয়া।।’
এই ‘ফতেয়া হইতে’ ফতেহাবাদের অন্তর্গত প্রেমভাগই বুঝাইতেছে। এখান হইতে শ্রীজীব প্রথমতঃ নবদ্বীপ, পরে কাশীতে বিখ্যাত গুরুর নিকট বেদান্তাদি দর্শনশাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্যলাভ করিয়া বৃন্দাবনে গিয়া জ্যেষ্ঠতাত শ্রীরূপের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। বৈষ্ণব গ্রন্থ আলোচনায় বুঝিতে পারি শ্রীজীব ১৫১৩ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করিয়া ১৫৩৩ খৃষ্টাব্দে নবদ্বীপ যান।’[১১] রূপ- সনাতনের দেহত্যাগের পর শ্রীজীবই বৃন্দাবনে প্রধান গোস্বামী হন। বৃন্দাবনের আচার্য্যপদে মহাপ্রভু রূপ-সনাতনকে বরণ করিয়াছিলেন। তথাকার আচার্য্যদিগের মধ্যে এই যে ছয়জন গোস্বামী বৈষ্ণবজগতে সৰ্ব্বজনপরিচিত হইয়াছেন, তন্মধ্যে রূপ-সনাতন এবং শ্রীজীবই প্ৰধান :
‘শ্রীরূপ, সনাতন, ভট্টরঘুনাথ।
শ্রীজীব, গোপাল ভট্ট, দাস রঘুনাথ।।’
প্রেমভাগ প্রভৃতি স্থানে প্রবাদ আছে, সনাতনের এক আত্মীয় রাজকর্মচারী প্রকৃতই অত্যাচারী ছিলেন। তিনি এক ব্রাহ্মণের জমি আত্মসাৎ করিয়া লন। এই ব্রাহ্মণ সেই ঘটনা বৃন্দাবনে গিয়া শ্রীরূপকে জানান। শ্রীরূপ তাহাতে নিম্নলিখিত শ্লোকের আদ্যক্ষর কয়েকটি একখানি পাথরের উপর লিখিয়া ব্রাহ্মণের হস্তে প্রদান করেন; ব্রাহ্মণ উহা উক্ত আত্মীয়কে দেখাইয়া নিষ্কৃতি লাভ করেন। তিনিও সেই উপদেশে শিক্ষালাভ করিয়া গঙ্গাতীরে বাস করেন। সে শ্লোকটি এই :
‘যদুপতেঃ কুগতা মথুরাপুরী
রঘুপতেঃ ক্বগতোত্তরকোশলা।
ইতি বিচিন্ত্য কুরুম্ব মনঃ স্থিরং
নসদিদং জগদিত্যবধারয়।।’
ইহার আদ্যক্ষরসম্বলিত ‘যরইন’ অঙ্কিত একখানি প্রস্তরফলক বহুকাল প্রেমভাগে ছিল।[১২] এমন কি, দুই একজন বৃদ্ধলোকে তাহা দেখিয়াছেন বলিয়াও শুনা গিয়াছে। এই গল্পটি আবার সনাতনের উপরও আরোপিত হইয়া থাকে। অর্থাৎ শ্রীরূপের নিকট হইতে উক্ত প্রস্তরখানি পাইয়া সনাতন সংসার ত্যাগ করেন।[১৩] ইহাতে বোধ হয়, শ্রীরূপ যখন যান, তখন যেন সনাতনের নির্ব্বেদ উপস্থিত হয় নাই, এই শ্লোক দ্বারা তিনি জ্যেষ্ঠকে জগতের নশ্বরত্ব বুঝাইয়া দিতেছেন। রূপ অগ্রে সংসার ত্যাগ করেন সত্য, কিন্তু তিনি জ্ঞান-বৈরাগ্যে সনাতনের শিক্ষাদাতা বলিয়া মনে হয় না। সনাতনই সর্ব্বাগ্রে দন্তে তৃণ করিয়া শ্রীচৈতন্যচরণে নিপতিত হন। এ সম্বন্ধে আরও একটা কথা আছে; প্রেমভাগের পুকুরগুলি, মঠবাড়ী, ফুলবাড়ী, পাটবাড়ী, উত্তমনগর প্রভৃতি স্থানগুলি কাটোয়ার নিকটবর্ত্তী দক্ষিণখণ্ডের গোস্বামিবংশীয়দিগের অধিকারভুক্ত ছিল, একথা বলিয়াছি। এখনও কতকাংশ তাঁহাদের আছে; অবশিষ্ট কোন প্রকারে নড়াইলের জমিদারগণ আত্মাধিকারভুক্ত করিয়া লইয়াছেন। লোকে বলে, প্রেমভাগে সদর পুকুরের দক্ষিণতীরে একটি বোধনবিল্বমূলে শ্রীরূপের হস্তাঙ্কিত পাথরখানি নাকি অনেকদিন পর্য্যন্ত ছিল। সেই স্থানে ২/১ বৎসর রূপ-সনাতনের জন্য উৎসব হইয়াছিল। সে উৎসব প্রতি বৎসর অনুষ্ঠিত হইলে নির্জীব রাজ্যের একটা প্রাণের পরিচয় পাওয়া যাইবে। রূপ-সনাতনের পরবর্ত্তী জীবনের সহিত যশোহরের কোন সম্পর্ক নাই, তবুও একদিন যশোহরে তাঁহাদের অধিষ্ঠান ছিল, ইহাও যশোহরের কম গৌরবের বিষয় নহে।[১৪]
পাদটীকা :
১. শ্রীসনাতন ও শ্রীরূপগোস্বামীর সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্ত পাঠকগণ মৎ-প্রণীত ‘সপ্তগোস্বামী’ গ্রন্থে পাঠ করিবেন।
২. পৌরস্ত্য দেশ নামক কোন বিশেষ দেশ আছে বলিয়া জানি না। পৌরস্ত্য বলিতে পূৰ্ব্বদিক বুঝায়। সুতরাং রূপেশ্বর পূর্ব্বদিকে আসিয়াছিলেন, ইহাই বোধ হয়। সম্ভবতঃ রূপেশ্বর এই সময়ে পূর্ব্বোত্তর কোণে বঙ্গেই আসিয়াছিলেন। সেনরাজগণও পূর্ব্বে কর্ণাট হইতে এদেশে আসেন।
৩. [বিশ্বকোষ, ২১ খণ্ড, ১৩৫ পৃ দ্রষ্টব্য।—শি মি]
৪. [উপরোক্ত।— শি মি]
৫. মৎ-প্রণীত ‘সপ্তগোস্বামী’, ৬৩ পৃ।
৬. বিশ্বকোষেও চেঙ্গুটিয়ার সন্নিকটে রূপ-সনাতনের মঠের কথা উল্লিখিত হইয়াছে—২১ শ খণ্ড, ১৩৬ পৃ।
৭. এই বই-এর দ্বিতীয় অংশ : সেন রাজত্ব, ১৪-১৭ তম স্তবক দ্রষ্টব্য।
৮. ‘পূর্ব্বে পরিজনে পাঠাইলা সাবহিতে।
কত চন্দ্ৰদ্বীপে কত ফতেহাবাদেতে।।
শ্রীরূপ বল্লভসহ নৌকায় চড়িয়া।
বহুধন লৈয়া গৃহে গেলা হর্ষ হৈরয়।।’— ভক্তিরত্নাকর, ১ম, ৪৬ পৃ
৯. শ্রীরূপ গোসাঞি তবে নৌকাতে ভরিয়া।
আপনার ঘর আইলা বহুধন লঞা।।
ব্রাহ্মণ বৈষ্ণবে দিল তার অর্দ্ধ ধনে।
এক চৌঠি ধন দিলা কুটুম্ব ভরণে।।
দণ্ডবন্ধ লাগি চৌঠি সঞ্চয় করিল।
ভাল ভাল বিপ্রস্থানে স্থাপ্য রাখিল।।’— শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, মধ্য, ১৯শ
১০. তখন তাঁহার বয়স ২০ বৎসর মাত্র, সুতরাং ১৪৫৫ শক।
১১. বিশ্বকোষ, সপ্তম খণ্ড, ১০৯ পৃ; মৎপ্রণীত ‘সপ্তগোস্বামী ২০৭-৮ পৃ।
১২. কেহ কেহ বলেন উক্ত লিপিতে শ্লোকটির আদ্যক্ষর ও শেষাক্ষর লইয়া ‘ঘরীরলাইরং নয়’ এই অষ্টাক্ষর লেখা ছিল।— ‘বঙ্গীয় সমাজ’ ১২১ পৃ।
১৩. শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে আছে যে রূপের পত্র পাইয়া সনাতন কাৰ্য্যত্যাগ করেন, কিন্তু এরূপ কোন শ্লোকের কথা নাই।
১৪. মৎপ্রণীত ‘সপ্তগোস্বামী’ গ্রন্থে তাঁহাদের সেই সূৰ্য্যালোক-দীপ্তিবৎ সমুজ্জ্বল জীবনবৃত্ত সংক্ষেপে বিবৃত হইয়াছে। ঐ পুস্তকে যে সাত গোস্বামীর কথা আলোচিত হইয়াছে, তন্মধ্যে সনাতন, রূপ, শ্রীজীব ও লোকনাথের সহিত যশোহরের সম্পর্ক আছে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন