সতীশচন্দ্র মিত্র
বঙ্গদেশের দক্ষিণ-সীমায় অবস্থিত সমুদ্র-কূলবর্ত্তী জঙ্গলাকীর্ণ ভূভাগকে সুন্দরবন বলে। নিম্নবঙ্গে যেখানে গঙ্গা বহুশাখা বিস্তার করিয়া, সাগরে আত্মবিসর্জ্জন করিয়াছেন, প্রাচীন সমতটের দক্ষিণাংশে অবস্থিত সেই লবণাক্ত পল্বলময় অসংখ্য বৃক্ষগুল্ম-সমাচ্ছাদিত শ্বাপদ-সঙ্কুল চরভাগ সুন্দরবন বলিয়া পরিকীর্তিত হয়। ইহা পশ্চিমে ভাগীরথীর মোহানা হইতে পূর্ব্বে মেঘনার মোহানা পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত। কেহ কেহ মেঘনার মোহানারও পূর্ব্বে অর্থাৎ নোয়াখালি, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলার এবং হাতিয়া, সন্দ্বীপ প্রভৃতি দ্বীপের দক্ষিণভাগে অবস্থিত বনভাগকেও সুন্দরবনের অন্তর্গত মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে গঙ্গা ও মেঘনার অন্তবর্ত্তী ভূভাগই সুন্দরবন। ইহা বর্তমানকালে চব্বিশপরগণা, খুলনা এবং বাখরগঞ্জ এই তিনটি জেলার অন্তর্গত এবং এই তিনটি জেলার যে অংশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের স্বত্বাধীন, তাহার দক্ষিণভাগে অবস্থিত। পূৰ্ব্ব-পশ্চিমে সুন্দরবনের দৈর্ঘ্য ১৬০ মাইল এবং উত্তর-দক্ষিণে ইহার প্রস্থ পশ্চিমদিকে ৭০ মাইল হইতে পূৰ্ব্বদিকে ৩০ মাইলের অধিক হইবে না। গড়ে বিস্তৃতি ৫০ মাইল ধরিলে, সুন্দরবনের পরিমাণফল ৮০০০ বর্গমাইল হয়। তন্মধ্যে খুলনা জেলার মধ্যে ২২৯৭ বর্গমাইল রক্ষিত বন বা কাঁচা বাদা, উহাতে লোকের বসতি নাই। তবুও নদীপথে নৌকায় সর্ব্বদা ৪/৫ হাজার লোক থাকে।[১] এই বসতিশূন্য রক্ষিত বন খুলনার অন্তর্গত দাকোপ, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, রামপাল, মরেলগঞ্জ ও স্বরণখোলা, এই কয়েকটি থানার শাসনাধীন। তাহারও প্রায় ৫০০ বর্গমাইল জলভাগ। পশ্চিমে ভাগীরথী হইতে কালিন্দী নদী পর্য্যন্ত চব্বিশ-পরগণা, কালিন্দী হইতে মধুমতী নদী পৰ্য্যন্ত খুলনা জেলা এবং মধুমতী হইতে মেঘনার মোহানা পর্য্যন্ত বরিশাল জেলার অন্তর্গত।
সুন্দরবনের নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে বহু মত আছে। সুন্দরবনে সুন্দরী (Heritiera minor) নামক এক প্রকার বৃক্ষ বহু পরিমাণে দেখা যায়। ইহার কাষ্ঠ দেখিতে পরিষ্কার লাল বর্ণ, তজ্জন্য সুন্দর। এই নিমিত্ত ইহাকে সুন্দরী বা সুন্দর বৃক্ষ বলে। এই বৃক্ষের আধিক্য বশতঃই বনভাগের নাম সুন্দরীবন বা সুন্দরবন হইয়াছে। নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে ইহাই সাধারণ এবং প্রবল মত। কেহ বলেন, এরূপ নামকরণ হওয়া উচিত নহে, কারণ এই বনে অনেকস্থলে সুন্দরী গাছ নাই, অথচ সর্ব্বত্রই ইহাকে সুন্দরবন বলে। তাহাদের মতে সম্ভবতঃ ইহা সমুদ্রবন শব্দের অপভ্রংশ; সাধারণ লোকে সমুদ্র বলিতে সমুন্দুর বলিয়া থাকে।[২] বাখরগঞ্জের ইতিহাস-লেখক মহাপণ্ডিত বিভারিজ সাহেব অনুমান করেন যে, ঐ জেলার সুন্ধা নদী হইতে সুন্দরবন নামের উৎপত্তি হইয়াছে। বাখরগঞ্জে সুগন্ধা নামে একটি প্রবল নদী ছিল। এই নদীর কূলে একটি পীঠস্থান আছে; সতীদেহ ছিন্ন হইলে এইস্থানে মায়ের নাসিকা পতিত হয়; তদনুসারে স্থান ও নদীর নাম সুগন্ধা হইয়াছিল। সুগন্ধাকেই সাধারণ লোকে সুন্ধা বলে। বাখরগঞ্জের একাংশ পূর্ব্বে সুন্ধার কূল বলিয়া উল্লিখিত হইত। বাখরগঞ্জের সভ্যতা ও প্রতিভা এই সুন্ধার কূলেই প্রথম বিভাসিত হইয়াছিল। এই কূলবর্ত্তী বনভাগ সুন্ধারবন বা সুন্দরবনে পরিণত হইয়াছে।[৩] কিন্তু এরূপ ধরিলে, অন্যান্য জেলার অন্তর্গত বনভাগ যে সুন্ধার বন বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইবে, ইহা সম্ভবপর নহে। অপর পক্ষে সুন্দরী বৃক্ষ অল্পাধিক পরিমাণে প্রায় সকল বনেই আছে; এবং উহাই সুন্দরবনের প্রধান, স্থায়ী ও মূল্যবান কাষ্ঠ। ইহার গাছে খুব সার হয়; কাষ্ঠ অত্যন্ত শক্ত ও ভারী; গাছগুলিতে অধিক ডাল হয় না বলিয়া, ইহাতে লম্বা কাঠ পাওয়া যায়; গৃহের সরঞ্জাম, নৌকার উপাদান প্রভৃতিরূপে এই কাষ্ঠে অসংখ্য রকম প্রয়োজন সিদ্ধি করে। এজন্য সুন্দরী কাষ্ঠ সুন্দরবনের কাঠের রাজা এবং তাহারই নামানুসারে সুন্দরবন নাম হওয়া সঙ্গত ও স্বাভাবিক।
কেহ কেহ এরূপ অনুমান করিতেও কুণ্ঠিত হন নাই যে, পূর্ব্বে বাখরগঞ্জ অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল; চন্দ্রদ্বীপের বনভাগকে চন্দ্রদ্বীপবন বলিত। সেই চন্দ্রবন হইতেই সুন্দরবন হইয়াছে। আবার কেহ বা চণ্ডভণ্ড নামে এক বন্য জাতির সহিতও এই নামের সম্বন্ধ স্থাপন করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। এই জাতির কথা বাখরগঞ্জের ইদিলপুরে প্রাপ্ত তাম্রশাসনে উল্লিখিত হইয়াছে।
যাহা হইক, সুন্দরবন নামটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক। পূর্ব্বে এই প্রদেশকে ভাটি প্রদেশ বলিত। নদীমাতৃক বঙ্গের ভাটা দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয় বলিয়া সমুদ্রকূলবর্তী দক্ষিণ প্রদেশকে ভাটিদেশ বলিত এবং এক সময়ে এই সকল প্রদেশীয় বারজন রাজার প্রাধান্য জন্য বাঙ্গালা দেশেরই নাম হইয়াছিল— ‘বারভাটি বাঙ্গালা’।[৪] মুসলমান ঐতিহাসিকেরা ভাটি নামেই এই দেশের বর্ণনা করিয়াছেন।[৫]
কিন্তু নাম যাহাই থাকুক, সুন্দরবন চিরকাল আছে। হয়ত ইহা পূর্ব্বে যেখানে ছিল, এখন সেখানে নাই, কিন্তু ইহা আছে চিরকাল। গঙ্গা বহু শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হইয়া যেখানে সমুদ্রে পতিত হইয়াছিলেন, সেই স্থানেই বেলাভূমির উপরিভাগ জঙ্গলাকীর্ণ হইয়া সুন্দরবনে পরিণত হয়। ভগীরথআনীতা গঙ্গা পূৰ্ব্বকালে যেখানে সমুদ্রে পতিত হন, সেস্থান হইতে বৰ্ত্তমান গঙ্গাসঙ্গম বহুশত মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। গঙ্গা হিমালয় শীর্ষ হইতে অত্যধিক পরিমাণে গৈরিক মৃত্তিকা বহন করিয়া সাগরে লইয়া যান। এই গিরিমাটী এবং পার্শ্ববর্তী প্রদেশের ভগ্ন বা ক্ষয়িত ভূমিভাগ পলিমাটীরূপে মোহানার সন্নিকটে সঞ্চিত হইয়া ক্রমশঃ ভূভাগের সৃষ্টি করে, এবং প্রথমতঃ দ্বীপাকারে ও পরে জঙ্গলাকীর্ণ হইয়া নিবিড় বনে পরিণত হইয়া যায়। গঙ্গানীতা পলিমাটী ও সুমিষ্ট জলের সহিত সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সংযোগে কতকগুলি বিশেষ বিশেষ বৃক্ষগুল্মের সমুদ্ভব করে। উহাই সুন্দরবনের বিশেষত্ব। এইরূপে গঙ্গার মোহানা যত দক্ষিণদিকে সরিতেছে, সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনও তত দক্ষিণবৰ্ত্তী হইয়া পড়িতেছে। এইরূপে ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্ত্তী ত্রিকোণ প্রদেশ বা সমতট সমুদ্ভূত হইয়াছে। পূৰ্ব্বে সমতটের আকার ক্ষুদ্র ছিল; ক্রমে দক্ষিণবর্ত্তী তটভাগ বর্দ্ধিত হইতেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবন সরিয়া যাইতেছে। ভূতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ ইহার বিশেষ পরীক্ষা করিয়াছেন। তাঁহারা সমতটের ভূগর্ভ খনন করিয়া নানা তত্ত্বের আবিষ্কার করিয়াছেন। লক্ষ্ণৌ সহরের সন্নিকটে ভূগর্ভ খনন করিবার সময় সুন্দরবনের বৃক্ষাবশেষ পাওয়া গিয়াছে। গঙ্গার মোহানার সঙ্গে সুন্দরবনও যে ক্রমে দক্ষিণ সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হইতেছে, ইহা তাহার একটি প্রমাণ। ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্তী প্রদেশের যে-কোন স্থানে জলাশয়াদি খনন করিবার সময় দেখা যায়, মৃত্তিকার স্তরবিভাগ প্রায় একই প্রকার রহিয়াছে।[৬] খুলনা সহরের পশ্চিম পার্শ্বে এবং কলিকাতার শিয়ালদহের নিকট পুষ্করিণী খননকালে উভয় পুষ্করিণীতে মৃত্তিকা স্তরের একই প্রকার অবস্থা দেখা গিয়াছে। উভয়স্থলে মৃত্তিকানিম্নে যে অসংখ্য গাছের গুঁড়ি পাওয়া যায়, তাহা সুন্দরী বৃক্ষ বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে।[৭] সুতরাং সমতটের সর্ব্বত্র যে সুন্দরবন ছিল, তাহা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে। আর কোন একস্থলে ভাগীরথীর উভয় পারের মৃত্তিকা খনন করিলে, পশ্চিম পারের বা রাঢ়ের মৃত্তিকার প্রকৃতি সমতটের মৃত্তিকার প্রকৃতি হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন বলিয়া বোধ হয়। সুতরাং সমতটের মৃত্তিকা যে ক্রমে পলি সংযোগে গঠিত হইতে হইতে দক্ষিণ মুখে অগ্রসর হইতেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।[৮]
সুন্দরবন বাস্তবিকই অতি সুন্দর বন। এ বনে ফল-বৃক্ষ নাই। দুই-একটি ফলবান বৃক্ষ দেখিতে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তাহাতে মনুষ্যের কোন ফল নাই, কারণ উহার ফল অধিকাংশই মনুষ্যের অভক্ষ্য। এ বনে স্নিগ্ধচ্ছায় বহুবিস্তৃত অশ্বত্থাদি বিটপী নাই; সুন্দরবনের বৃক্ষগুলি প্রায়ই দীর্ঘ হইয়া উঠে, অধিক শাখা প্রশাখা হয় না। এ বনে পুষ্পোদ্যান নাই; ফুল ফুটে বটে, কিন্তু মনুষ্যোদ্যানের মত সযত্নবর্দ্ধিত সুরভি পুষ্পতরু এখানে দুষ্প্রাপ্য। আবার যাহা কিছু আছে, তাহাও মনুষ্যের উপভোগের বিষয় নহে। কারণ বন এতই নিবিড়, এতই কণ্টকাকীর্ণ, এতই কদ্দমাক্ত এবং সর্ব্বোপরি সর্ব্বত্র এরূপ দুর্দান্ত হিংস্র শ্বাপদসঙ্কুল যে, এ বনে মানুষের বিহার করিবার সাধ্য নাই। তবুও সুন্দরবন বড়ই সুন্দর। এ স্থানে বন-প্রকৃতির বন্য শোভা যিনি নিজ চক্ষুতে না দেখিয়াছেন, তিনি তাহা অনুভব করিতে পারিবেন না। বঙ্গদেশই নদীমাতৃক, সুন্দরবন ততোধিক। কোনও ক্ষীণকায় নদীস্রোত যতই দক্ষিণদিকে সমুদ্রাভিমুখে অগ্রসর হইয়াছে, ততই বিস্তৃত, ততই প্রশস্ত, ততই তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ হইয়া, অবশেষে সাগরোপমকায়ে সাগরে আত্মসমৰ্পণ করিয়াছে। যাইতে যাইতে প্রত্যেক নদী পথের পার্শ্বে কত শাখা প্রশাখা, খাল নালা বিস্তার করিতে করিতে গিয়াছে, তাহার সংখ্যা করিবার উপায় নাই। নদীসমূহের পার্শ্বে কোথায়ও বলার ঝোপ এবং বন্য সুন্দরী ও হেন্তাল প্রভৃতি ক্ষুদ্র গাছ সমূহ স্রোতের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া, তীরভূমি অন্ধকার করিয়া রাখিয়াছে; কোথও সুন্দরী, পশুর, গর্জ্জন বা আমূর প্রভৃতি বৃক্ষের দীর্ঘ শিকড়সমূহ বহু বিস্তৃত হইয়া প্রবল প্রবাহ হইতে বৃক্ষগুলিকে রক্ষা করিতে গিয়া ভগ্নতীরের সহিত জড়াজড়ি করিতেছে। কোথায়ও বা নদী হইতে খাল উঠিয়া আঁকা বাঁকা ভাবে বনের ভিতর চলিয়া গিয়াছে, উহার দুই পার্শ্বে গোলগাছের সারিগুলি সুড়ঙ্গ পথের প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়াইয়া থাকিয়া এক অতি অদ্ভুত অথচ মনোরম বন্যশোভা বিস্তার করিয়াছে। এইরূপে নানা শোভা দেখিতে দেখিতে নদীর স্রোতে কোন ত্রিমোহানা বা বাঁকের মুখে পৌঁছিলে দেখা যায়, সে এক অপূৰ্ব্ব দৃশ্য— দুই পার্শ্বে বিস্তৃত চড়া, চড়ার উপর হরিদ্বর্ণ কেওড়া বৃক্ষের শ্রেণী এবং তাহার অন্তরালে বনস্থলী। কোথাও সে চওড়া চরের উপরে কেওড়াতলায় সুন্দর ছায়ায় হরিণ চরিতেছে, কোথায়ও বা বৃক্ষের ডালে বানর নাচিতেছে এবং ডাল পাতা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া হরিণ ডাকিতেছে। ভাগ্যবশে এইরূপ চড়ার সন্নিকটে পৌঁছিবার সুযোগ ঘটিলে, তাহার সৌন্দর্য্য অনুভব করা অতি সহজ, কিন্তু ভাষায় তাহার বর্ণনা করিতে কেহই পারে না। এইরূপে কোন মোহানায় কোনদিন নদীর স্থিরতরঙ্গে কেন্দ্রস্থলে দাঁড়াইয়া চতুৰ্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিলে দেখিতে পাওয়া যায়, কোনদিকে অকূল জলরাশি ধুমাকারে ধূ ধূ করিতেছে, কোনদিকে নবনির্ম্মিত বেলাভূমির উপরিস্থিত চরে উচ্চ কেওড়া বৃক্ষসমূহের ঘনপত্রে কে যেন হরিদ্বর্ণ ঢালিয়া দিয়াছে, কোনদিকে বা নদীর উচ্চ পাহাড় ভাঙ্গিয়া পড়িয়া সুন্দরবনের বৃক্ষসমূহের শিকড়রাশির প্রাচুর্য্য প্রদর্শন করিতেছে, আর তাহার নিকট দিয়া ‘রূপার সূতার মত’ খালগুলি সবুজ বনস্থলীর মধ্যে বঙ্কিম ভাবে প্রবেশ করিয়াছে। এ দৃশ্য যিনি হৃদয় ও চক্ষু লইয়া দর্শন করিয়াছেন, তিনি কখনও ভাবহীন কর্কশ ভাষায় বলিতে পারেন না যে, সুন্দরবনের দৃশ্যে কোন সৌন্দৰ্য্য নাই।[৯] তবে একই প্রকার পদার্থ বহুবার ও বহুক্ষণ দেখিলে সকলেই বিরক্ত হয়। এজন্য বৈদেশিক ভ্রমণকারী সুন্দরবনের মধ্যে ভ্রমণ করিতে করিতে, একই প্রকার নদী নালা, একই রকম বনস্থলী, চর ও নদীতীর দেখিতে দেখিতে ক্লান্ত হইয়া পড়েন এবং যতদিন না উত্তরদিগ্বর্ত্তী সেই যতদূর নয়ন যায় ততদূর বিস্তৃত, কখনও শ্যামায়মান, কখনও স্বর্ণবর্ণ, ধান্যক্ষেত্রসমূহ দেখিতে না পান, ততদিন তাহাদের নয়নে ও মনে তৃপ্তি আসে না।[১০] সুন্দরবনের বাদা বা বনভূমি যেমন নিরবচ্ছিন্ন জঙ্গলাকীর্ণ, তাহার পার্শ্ববর্ত্তী আবাদ বা ধান্যভূমি সেইরূপ পরিষ্কৃত ও শস্যাস্তরণে আবৃত হইয়া নয়নানন্দ বর্দ্ধন করে।
পাদটীকা :
১. ১৯২১ খৃষ্টাব্দের আদম-সুমারী অনুযায়ী সুন্দরবনে ১৩১৮টি নৌকায় ৫,৬০৩ লোক গণনা হয়।—শি মি
২. Revenue History of Sunderbans by F. E. Pargiter, (1885), and Calcutta Review, Sunderbans, Vol. 89, P. 280 (1889).
৩. The District of Bakarganj : Its History and Statistics, by H. Beveridge, P. 24 (note) and pp 70-71.
৪. ‘Always included under the local description of Bhatty with all the neighbouring low lands over- flowed by the tides.’-Grant’s Analysis of the Finances of Bengal.
৫. ‘Esan Afghan carried his conquests towards the east into a country called Bhatty which is reckoned a part of this Soobah (Bengal)’ Gladwin’s Ayeen Akbari, Part 1, P. 298. (See also Jarrett’s Ain-I- Akbari, 2nd ed. (1949), by J. N. Sarkar, P. 130-ft f)
৬. J. R. A. S. No XXXIV of 1864, P. 154-8 H. F. Blanford.
৭. “The trees in question were pronounced by Dr. Anderson (Superintendent of the Botanical Garden) to be Sundri/-Gastrell’s Statistical Reports of Jessore, Faridpur and Bakerganj, P. 27.
৮. ‘The whole of the country including Sunderbans proper lying between the Hooghly on the west and the Meghna on the east is only the delta caused by the deposition of the debris carried down by the rivers Ganges and Brahamaputra and their tributaries’-Dr. Thomas Oldham, quoted in the Khulna Gazetteer, P. 4.
৯. ‘The scenery in the Sunderbans possesses no beauty. The view even from a short distance is a wide stretch of low forest with an outline almost even and rarely broken by a tree rising above dull expanse.’ -F. E. Pargiter. Calcutta Review. The Sunderbans, Vol. 89, P. 281.
হয়ত লেখক কোনও দিন সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে কোন ক্ষুদ্র নদীর মধ্যে দ্রুতগামী ষ্টীমার হইতে গরাণবন দেখিয়া একটি বদ্ধমূল শুষ্কভাববশে নিদয় সমালোচকের মত সমস্ত সুন্দরবনের উপর লেখনী চালনা করিয়াছেন। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনকে সৌন্দর্য্যবর্জ্জিত বলিলে নিসর্গসুন্দরী প্রকৃতির প্রতি কশাঘাত করা হয়।
১০. ‘Most travellers in passing through this labyrinth of interminable forest, mud and water, become exceedingly wearied with the monotonous appearance of the banks and creeks, and are only too glad when they escape into the open and cultivated northern parts of the delta where all the breadth of the land is one vast sheet of rice cultivation.’ Calcutta Review, March, 1859.
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন