৭. খালিফাতাবাদ

সতীশচন্দ্র মিত্র

সপ্তম পরিচ্ছেদ – খালিফাতাবাদ

খাঁ জাহান আলি পয়োগ্রামে মহম্মদ তাহেরকে রাখিয়া, স্বয়ং সসৈন্যে পূর্ব্বমুখে অগ্রসর হন। তাঁহার অভ্যস্ত প্রণালী মত তিনি গতিপথে রাস্তা নির্ম্মাণ এবং পার্শ্বে স্থানে স্থানে পুষ্করিণী খনন করিতে করিতে যাইতেছিলেন। পয়োগ্রাম হইতে বাহির হইয়া তিনি কোন্ দিকে যাইবেন, তাহা সম্ভবতঃ স্থির ছিল না; তিনি প্রথমতঃ ভৈরব নদ পার হইয়া পূর্ব্বোত্তর দিকে যাইতে থাকেন। লোকে এখনও তাঁহার পারঘাট দেখাইয়া থাকে। এই ঘাট পার হইয়াই কসবায় আসিতে হইত। ক্রমে এ ঘাট সুপরিচিত হইয়া পড়ে। পরবর্ত্তী সময় এক ব্যক্তি এখানে পাকা ঘাট নির্মাণ করেন, উহার ভগ্নচিহ্ন আছে।

খাঁ জাহান প্রথমতঃ বাসুড়ী গ্রামে আস্তানা করেন। তথায় একটি প্রকাণ্ড দীর্ঘিকা তাঁহার কীৰ্ত্তি চিরস্থায়িনী করিয়াছে। এই জলাশয়ের পরিমাণ ৫৫০×৪৫০ হত হইবে। তীরভূমি লইয়া এ দীঘি ৭০ বিঘা জমি অধিকার করিয়াছিল। বর্ত্তমানকালে দীঘির অবস্থা খারাপ হইয়াছে; উহা ক্রমশঃ ভরাট হইয়া উঠিতেছে; গ্রীষ্মকালে উহাতে ৫/৬ হাতের অধিক জল থাকে না। দীঘির পাহাড়ে যথেষ্ট ফলবৃক্ষ আছে; দক্ষিণ পাহাড়ে চৈত্রপূর্ণিমায় মেলা বসিয়া দীর্ঘকাল থাকে। খাঞ্জালি পীরের নামে বহু লোক মানসা করে এবং সির্ণী দেয়। পূর্ব্বে মেলার বিশেষ জাঁকজমক ছিল, এখন তাহা নাই। কিই বা আছে?

বোধ হয় খাঞ্জালি সাহেব নড়াইল অঞ্চলে যাইবার মনস্থ করিয়াছিলেন; কিন্তু সম্মুখবর্তী বিলের অবস্থা দেখিয়া বা অন্য কোন কারণে সে সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিয়া ভৈরবকূল বাহিয়া অগ্রসর হওয়াই শ্রেয়ঃ মনে করেন। তদনুসারে তিনি ফিরিয়া পুনরায় শুভরাঢ়া প্রভৃতি গ্রামের মধ্যে আসিয়া পড়েন। যে বিলে খাঁ জাহানের গতি রুদ্ধ করিয়াছিল, তাহার নাম চাঁদের বিল। এ প্রদেশে চাঁদ সওদাগর নামে এক ব্যবসায়ী বাস করিতেন। ইনি পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত চাঁদ বা চন্দ্রধর সওদাগর নহেন; প্রবাদ আছে, এখানকার চাঁদ সওদাগর মুসলমান। তাঁহার সময়ে এ প্রদেশে অসংখ্য মুসলমান বাওয়ালীর বাস ছিল। তাঁহারা সুন্দরবন হইতে কাঠ কাটিয়া এবং অন্যবিধ নানা ব্যবসায় করিয়া জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিতেন। তখন শুভরাঢ়ার পূর্ব্বভাগে যে লেবুখালির খাল ছিল, উহা নাকি ভৈরব অপেক্ষাও বড় ও প্রবল ছিল। চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যতরীসমূহ প্রধানতঃ এই লেবুখালির শোভা বর্দ্ধন করিত। শুভরাঢ়া গ্রামের একাংশে ‘সদার বাড়ীর পুকুর’, ‘পুঁড়ার পুকুর’ প্রভৃতি এবং তাহাদের পার্শ্ববর্ত্তী ইষ্টকরাশিপূর্ণ জঙ্গলসমূহ চাঁদের সহিত যে ঐতিহাসিক সংস্রব ছিল, তাহা প্রবাদমুখে কীৰ্ত্তন করিতেছে। চাঁদ সওদাগর খাঁ জাহানের পূর্ব্ববর্ত্তী বা পরবর্ত্তী লোক তাহা নির্ণয় করিবার উপায় নাই। সম্ভবতঃ পয়োগ্রাম প্রদেশে পাঠান রাজধানী স্থাপিত হওয়ার পর, এই সকল স্থানে নানা ব্যবসায়ীর বসতি হয়; চাঁদ সওদাগর উহাদের অন্যতম।

শুভরাঢ়া গ্রামে ভৈরবকূলে একটি খাঞ্জালি মজিদ আছে। ইহাতে একটি মাত্র গুম্বজ, চারিকোণে চারিটি মিনার ছিল। মজিদের ভিতরের মাপ, ১৬ ́-১০ ́ ́ ×১৬ ́-১০ ́ ́ ইঞ্চি, উচ্চতা ২৫ ́ ফুট। বাহিরের মাপ এক মিনারের মধ্যবিন্দু হইতে অন্য মিনারের মধ্যবিন্দু পর্য্যন্ত ২৮ ́-৬ ́ ́ ইঞ্চি। উত্তর, পূর্ব্ব ও দক্ষিণে তিনটি দরজা আছে। পূর্ব্বদিকে সদর দরজা, উহার খিলান ১১ ফুট উচ্চ এবং ৪ ́-১০ ́ ́ প্রস্থ। এই মজিদে অতি প্রকাণ্ড ও অতিক্ষুদ্র, সব রকমের ইট ব্যবহৃত হইয়াছিল। ইটের পরিমাণ ১২ ́ ×১০ ́ ́ হইতে ৪ ́ ×৩ ́ ́ ইঞ্চি পৰ্য্যন্ত দেখা যায়। মজিদের অনেক অংশ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে, তবুও বিশেষ বিশেষ পর্ব্বে এখানে নমাজ হইয়া থাকে।

খাঞ্জালি শুভরাঢ়া হইতে রাণাগাতি, গোপীনাথপুর, নাউলী দিয়া ধূলগ্রামে উপনীত হন। তখন রাণাগাতির খাল ছিল কিনা সন্দেহ। নাউলী হইতে ধূলগ্রামের মধ্যে প্রকাণ্ড খাঞ্জালি রাস্তা এখনও বিদ্যমান রহিয়াছে; উহার পার্শ্বে একটি খাঞ্জালি দীঘিও আছে। ধূলগ্রাম হইতে সোজা নদীর কূল দিয়া সিদ্ধিপাশার মধ্য দিয়া রাস্তা করিতে করিতে, খাঁ জাহান বারকপুর উপনীত হন। তখন মুজদখালির খাল ছিল না। বারকপুর নাম খাঁ জাহানেরই প্রদত্ত বলিয়া বোধ হয়। সংস্কৃত বারক শব্দে অশ্ব বুঝায়, প্রধানতঃ অশ্বারোহী সৈন্যের আস্তানাকে বারকপুর বলা হইত। পাঠান আমলে যেখানে যেখানে সৈন্যাবাস স্থাপিত হইত, সেখানেই বারকপুর নাম দেওয়া হইত। এই নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে পরে আরও আলোচনা করা যাইবে (পরবর্ত্তী খণ্ডে ‘প্রতাপাদিত্যের রাজধানী’ পরিচ্ছেদে)। বারকপুর হইতে খাঁ জাহান ঘোষগাতি, দীঘলিয়া প্রভৃতি গ্রামের মধ্য দিয়া স্বনির্ম্মিত পথে সেনহাটির পশ্চিমাংশে উপস্থিত হন, এই স্থানের পূর্ব্বনাম দেবনগর। তথায় বহু হিন্দুর বাস ছিল, বহু দেবমন্দির ছিল বলিয়া বোধ হয়। এই স্থানে ডিষ্ট্রীক বোর্ডের দীঘি খনন কালে সম্প্রতি একটি অতি সুন্দর বাসুদেবমূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। সম্ভবতঃ খাঁ জাহানের সৈন্যদলের আগমনকালে ঐ মূৰ্ত্তি জলমধ্যে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল। এই স্থানে খাঁ জাহান পূৰ্ব্ব হইতে আহারের ব্যবস্থা রাখিতে অনুমতি করিয়াছিলেন। সেজন্য পরে ঐ স্থানের নাম ফরমাইজখানা হইয়াছিল। তথা হইতে সেনহাটি, চন্দনীমহল দিয়া আতাই নদী পার হইয়া শোলপুরের পথে সেনেরবাজারে উপনীত হন। চন্দনীমহলে যে বিষ্ণুমূৰ্ত্তি সম্প্রতি ভূগর্ভে পাওয়া গিয়াছে, উহাও সম্ভবতঃ ঐ সময়ে লুক্কায়িত হয়। বারকপুর হইতে সেনেরবাজার পর্য্যন্ত ৮/৯ মাইল রাস্তা এক্ষণে খুলনা-মুজখালি ডিষ্ট্রীক্ট-বোর্ড- রাস্তা নামে পরিচিত। ইহা এক্ষণেও এ প্রদেশের একটি বিখ্যাত রাজপথ।

সেনেরবাজার তখন একটি প্রধান বন্দর ছিল। খাঞ্জালির রাস্তাদ্বারা ইহার পসার আরও বাড়িয়াছিল। বৰ্ত্তমান সেনেরবাজার যেখানে আছে, পূর্ব্বর্তন সেনেরবাজার তাহা অপেক্ষা প্ৰায় এক মাইল দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব কোণে ছিল; উহারই অপর পারে ছিল প্রাচীন খুলনা বা বর্তমান রেণীগঞ্জ। এখন যেখানে খুলনা শহর, সেস্থানে জঙ্গলাকীর্ণ ছিল এবং ঐ স্থান হইতেই সুন্দরবনের আরম্ভ ছিল। খাঞ্জালি সেনেরবাজার হইতে নদীপার হইয়া তালিমপুর, শ্রীরামপুর, ও পরে বক্রপথে লখপুর, বল্লভপুর প্রভৃতি স্থানের মধ্য দিয়া ক্রমে রাঙ্গদিয়া, মধুদিয়া ভেদ করিয়া বাগেরহাটের সন্নিকটে উপস্থিত হন।[১] বল্লভপুরে ‘আঁধিপুকুর’ খাঞ্জালি’ জলাশয় বলিয়া কথিত হয়। তখন বাগেরহাট নাম হয় নাই। তিনি যে স্থানে প্রথম উপনীত হইয়া সৈন্যাবাস সংস্থাপন করেন, উহারই নাম রাখেন বারকপুর। সেই স্থানেই তাঁহার প্রথম দীঘি খনিত হয়।

এই দীঘির নাম ঘোড়া দীঘি। প্রবাদ এই— একটি ঘোড়া যতদূর দৌড়াইয়া গিয়াছিল, তত দীর্ঘ করিয়া এই প্রকাণ্ড দীর্ঘিকা খনিত হয়। ইহার জলাশয়ের পরিমাণ ১০০০X৬০০ হাত হইবে ইহার জল খুব ভাল; সীতারামের দীঘি ব্যতীত এমন সুন্দর জল নিম্নবঙ্গের কোন জলাশয়ে আছে কি না সন্দেহ। এ দীঘি অত্যন্ত গভীর, ইহার জল কখনও শুকায় না; ইহাতে বারোমাস গভীর জল থাকে। এই সকল প্রকাণ্ড জলাশয় এক অপূর্ব্ব জলদানপুণ্যের মহিমা বিঘোষিত করে। ইহাদের বিশাল বিস্তারে জলদাতার হৃদয়ের বিশালত্ব প্রকটিত হইতেছে। কোন কোন বিষয়ে পাঠানের আগমনে আদিম অধিবাসী হিন্দুর উপর অত্যাচার হইয়াছিল সত্য; কিন্তু এই বীর সন্ন্যাসী খাঁ জাহান আলির অবিশ্রান্ত জন-হিতৈষণায় সে সব ঢাকিয়া ফেলিয়াছে। বৰ্ত্তমান সময়ে ইংরাজ গবর্ণমেণ্ট জল-ব্যবস্থার জন্য প্রতি বৎসর অপরিমিত অর্থ ধূলিমুষ্টির মত দেশময় ছড়াইয়া দিতেছেন বটে, কিন্তু জলদুর্ভিক্ষ ঘুচিতেছে না এবং এরূপ চিরস্থায়িনী কীৰ্ত্তিও সংস্থাপিত হইতেছে কিনা সন্দেহ। কারণ এই যে, এখন সব কাজ অর্থে করিতে হয় কিন্তু সব কাজ অর্থে হয় না এবং গবর্ণমেণ্ট শত কাজের মধ্যে এই কাজের জন্য সমগ্র দৃষ্টি দিতে পারেন না। তখন অবস্থা স্বতন্ত্ৰ ছিল; নবাগত সেনাপতি স্বকীয় কীর্তি রক্ষার জন্য একাগ্র চেষ্টায় সমস্ত সৈন্যের সাহায্যে বিনা ব্যয়ে স্বল্পায়াসে দুরূহ কার্য্য সম্পাদন করিতেন এবং তাঁহার কার্য্যক্ষেত্রও সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ ছিল। যাহা হউক, জলদানের মত পুণ্য নাই এবং এ পুণ্যের উপযুক্ত ক্ষেত্রই ভারতবর্ষ।[২] খাঁ জাহান আলি এই পুণ্যে সমস্ত জাতীয় অধিবাসীর হৃদয়ে এক অপূৰ্ব্ব আধিপত্য সংস্থাপন করিয়াছিলেন; এবং তাহারই বলে তিনি আজ হিন্দু মুসলমান উভয় জাতি দ্বারা পীর বা দেবতাজ্ঞানে পূজিত হইতেছেন।

ঘোড়া দীঘি পূৰ্ব্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ এবং ইহারই পূর্ব্ব-পার্শ্বে খাঞ্জালির সুবিখ্যাত ষাটগুম্বজ বা সাত গুম্বজ বিরাট কীর্তিমন্দির। এই ইষ্টকনির্ম্মিত অট্টালিকা উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ ও সাধারণ মজিদের নিয়মানুসারে পূৰ্ব্বদিকে ইহার সদর। ইহার বাহিরের মাপ ১৫৯ ́-৮ ́ ́×১০৪ ́-৬ ́ ́ এবং ভিতরের মাপ ১৪৩ ́-৩ ́ ́ ×৮৮ ́-৬ ́ ́ ইঞ্চি, ভিত্তি ৮ ফুট; গৃহের ভিতর গুম্বুজের ছাদের উচ্চতা প্রায় ২১ ফুট।[৩] সমস্ত গৃহে পূর্ব্বপশ্চিম ৭টি করিয়া মোট ১১ সারিতে ৭৭টি গুম্বজ আছে; উহারা বেষ্টন প্রাচীর ও মধ্যবর্ত্তী (১০২৬) অর্থাৎ ৬০টি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। পূর্ব্বদিকে সদর দরজার সোজাসুজি একসারি অর্থাৎ ৭টি করিয়া ১৪টি দরজা এবং পূর্ব্বদিকে ১১ সারির মুখে ১১টি দরজা মোট দরজার সংখ্যা ২৫টি; ইহার সবগুলিই খোলা। ইহা ব্যতীত পশ্চিম প্রাচীরে একটি মাত্র দরজা আছে; সেটি সম্ভবতঃ বন্ধ থাকিত। কোন মসজিদে পশ্চিম দিকে দরজা থাকে না, এখানে বোধ হয় প্রকাণ্ড অট্টালিকা বলিয়া এবং উহার পশ্চিমদিকে দীঘি আছে বলিয়া সে নিয়মের একটু ব্যতিক্রম হইয়াছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দরজাগুলি বাহির হইতে ছোট দেখায়, উহার প্রস্থ ৩ ́-৪ ́ ́ ইঞ্চি এবং ভিতরে প্রস্থ ৬ ́-২ ́ ́ ইঞ্চি। পূর্ব্বদিকের ১১টি দরজার মধ্যে সদর দরজার প্রস্থ ৯ ́-৭ ́ ́ ইঞ্চি এবং অপরগুলি ৫ ́-১০ ́ ́ ইঞ্চি; উহার কোন কোনটি ৬ ́-২ ́ ́ ইঞ্চিও আছে। গৃহটির চারি কোণে চারিটি মিনার আছে; উহারা ছাদ হইতে ১৩ ফুট উচ্চ। ইহার মধ্যে পূর্ব্বদিকের দুইটি মিনারের মধ্যে ঘুরান সিঁড়ি আছে এবং ঐ দুইটি পশ্চাদ্ভাগের দুইটি মিনার অপেক্ষা উচ্চ; উহার একটির নাম রোসন কোঠা বা আলোক ঘর, অন্যটির নাম আঁধার কোঠা। মুয়াজিম এই সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিয়া প্রত্যেক নমাজের পূর্ব্বে ‘আজান’ দিতেন অর্থাৎ মুসলমানদিগকে নমাজের জন্য এই বিরাট মজিদ বা ভজনালয়ে আহ্বান করিতেন।

ষাট-গুম্বজ দুইটি উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিত, ইহা একটি বিরাট মসজিদ ছিল, প্রত্যেক নির্দ্দিষ্ট সময়ে এখানে জুম্মা নমাজ পাঠ হইত এবং ইহা শাসনকর্তা খাঁ জাহানের প্রধান দরবার-গৃহ ছিল। এখানে প্রাতঃকাল হইতে রীতিমত দরবার বসিত, সমবেত প্রজাবর্গের নিকট হইতে রাজস্ব সংগ্রহ, তাহাদের নানা প্রার্থনার উত্তর এবং অভিযোগের বিচার চলিত; সেই সকল কার্য্য চলিবার সময়ে নমাজের কাল উপস্থিত হইলে, মুসলমান প্রজাগণ ঐ গৃহেই শ্রেণীবদ্ধ হইয়া নমাজ পড়িতেন। সদর দরজা দিয়া প্রবেশ করিলে উহার সোজাসুজি পশ্চিমদিকের বদ্ধপ্রাচীরের গাত্রে একটি প্রস্তরবেদী ছিল; উহার উত্তরদিকে মধ্যস্থানে আর দুইটি ইষ্টক-বেদী ছিল। নমাজের সময় উহার একটি বেদীতে খাঁ জাহান এবং অন্য দুইটিতে প্রধান মৌলবীগণ দণ্ডায়মান হইতেন এবং অন্য সময়ে খাঁ জাহান ও তাঁহার উজীর উত্তরদিকের দুইটি ইষ্টক-বেদীতে সমাসীন হইয়া রাজকার্য্য নির্ব্বাহ করিতেন।

এই বিরাট অট্টালিকাকে ষাটগুম্বজ বলে কেন, ইহা একটি বিবেচনার বিষয়। এ বিষয়ে নানা মত আছে। গুম্বজ হিসাবে না হইলে, ইহাতে ৭৭টি গুম্বজ আছে বলিয়া সাতাত্তর গুম্বজ এইরূপ নাম হইত। এই সাতাত্তর কথার সংক্ষিপ্ত অপভ্রংশে সাত গুম্বজ হওয়া বিচিত্র নহে; আবার পূর্ব্ব-পশ্চিমে গুম্বুজের সারি গণনা করিলে, সাতটি সারি আছে বলিয়া সাত গুম্বজ হইতেও পারে। দূরে রাস্তা হইতে দেখিলে মসজিদের উপরিভাগে গুম্বুজগুলি সাতটি বলিয়া বোধ হয়, তাহা হইতেও সাত গুম্বজ হইতে পারে। মসজিদটিকে সাধারণ লোকের ভাষায় ‘ষাটগুমটে’ এবং ‘ষাটগুমট’ বা ‘ষাটঘোমট’ বলে;

মসজিদের গুম্বুজগুলি ষাটটি স্তম্ভের উপর সংস্থাপিত। কিন্তু গুমট্ বা ঘোমট শব্দে স্তম্ভ বুঝায় বলিয়া জানি না। সুতরাং স্তম্ভের হিসাবে যে নামকরণ হইয়াছে, এরূপ বোধ হয় না। কেহ বলেন, ঘোমট শব্দে দরজা বুঝায় এবং মসজিদটিতে ৬০টি দরজা আছে, এজন্য ইহাকে ষাটঘোমট বলে। ইনি চক্ষু দিয়া দেখিয়া বিবরণ লিখেন নাই, ইহা সুনিশ্চিত, কারণ গৃহটির ষাটটি দরজা নাই। মজিদ হইতে বাহিরে যাইবার পথগুলিকে দরজা ধরিলে ২৬টির অধিক দরজা নাই; আর খোলা খিলানের সবগুলিকেই যদি দরজা ধরা যায়, তাহা হইলে দরজার সংখ্যা ১৬২টি হয়। সুতরাং দরজার হিসাবে নাম হয় নাই। যাহা হউক, নামের উৎপত্তির প্রকৃত কারণ এখনও নির্ণীত হয় নাই। আমরা ইহাকে ষাটগুম্বজ বা সাতগুম্বজ এই উভয় নামে অনির্ব্বিশেষে উল্লেখ করিয়াছি।

ষাটগুম্বজের পূর্ব্বভাগে প্রকাণ্ড সদর তোরণ ছিল, উহার দুই পার্শ্বে গৃহ ছিল। সম্ভবতঃ এখানেও বিষয়াদি কাৰ্য্য হইত। এ সমস্ত গৃহগুলি ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। ষাটগুম্বুজেরও সে দিন আর নাই। এক সময়ে ইহার অবস্থা অতীব শোচনীয় হইয়াছিল; বিস্তৃত হৰ্ম্ম জঙ্গলে আবৃত হইয়াছিল, মিনারগুলি ও গুম্বুজের অনেকগুলি ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিল; খাঁ জাহানের অন্যান্য অনেক মসজিদের দশা যাহা হইয়াছিল, ইহারও তাহা বাকী ছিল না; ইষ্টকাদি খসাইয়া লইয়া লোকে অন্য কাজে ব্যবহার করিত। কিন্তু সদাশয় গবর্ণমেন্টের কৃপায়, লর্ড কার্জনের প্রবর্ত্তিত Ancient Monuments Preservation Act এর ফলে ইহার সামান্য সংস্কার ব্যবস্থা হইয়াছে; জঙ্গল পরিষ্কৃত হইয়াছে; সমস্ত কম্পাউণ্ডের চতুঃপার্শ্বে তারের বেড়া দিয়া ঘিরিয়া রাখা হইয়াছে এবং একজন বেতনভোগী চৌকিদার নিযুক্ত আছে। ষাটগুম্বুজের চারিটি মিনারের শীর্ষ গুম্বজ সম্পূর্ণ সংস্কৃত হইয়াছে; ২৮টি গুম্বুজের উপর অল্প অল্প মেরামত করা হইয়াছে, ১৫টি গুম্বজ সম্পূর্ণ নূতন করিয়া গঠিত হইয়াছে; অপর ৩৪টি গুম্বুজের উপর হস্তস্পর্শ হয় নাই, উহাদের উপরিভাগের জমাট খসিয়া পড়িয়াছে বটে, কিন্তু অপূৰ্ব্ব স্থাপত্য-কৌশলে গুম্বজ এখনও সুদৃঢ় রহিয়াছে। গুম্বজ গঠন কিরূপ কঠিন ব্যাপার ছিল, তাহা সংস্কারের সময় গবর্ণমেন্টের কার্য্যকারকগণ অনুভব করিয়াছেন। যাহা হউক, কীর্তিমন্দির রক্ষাবিষয়ক আইন এখানে প্রযুক্ত হওয়ায় নিম্নবঙ্গের একটি প্রধান কীৰ্ত্তি রক্ষিত হইয়াছে। প্রস্তরবিহীন খুলনা জেলায় ষাম্বজের মত বিরাট অট্টালিকা যেন দিল্লি-আগ্রার মর্ম্মরস্বপ্নের স্থান অধিকার করিয়া আছে।

খাঁ জাহানের খালিফাতাবাদ সহর পশ্চিমে ঘোড়াদীঘি হইতে পূৰ্ব্বদিকে চারি মাইল দূরবর্ত্তী ভৈরবনদের কূল পর্য্যন্ত এবং উত্তরে ভৈরবের প্রাচীন খাত বা মগরার খাল হইতে দক্ষিণে ২/৩ মাইল দূরবর্তী কাড়াপাড়ার বিল পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল। সহরের বাহিরে এবং উত্তর ও পশ্চিমদিকে অনেকদূর পর্য্যন্ত তাঁহার নিজের ও সহচরবর্গের নানা কীৰ্ত্তি দেখা যায়। প্রবাদ এই— ৩৬০ জন আউলিয়া বা ধর্মপ্রাণ ফকির তাঁহার সঙ্গী হইয়া আসিয়াছিলেন। এই সংখ্যার সত্যতায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করিলেও, তাঁহার সহচরের সংখ্যা যে শতাধিক ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কথিত আছে, প্রত্যেক সঙ্গীর জন্য তিনি একটি মসজিদ নির্ম্মাণ ও একটি পুষ্করিণী খনন করিয়া দিয়াছিলেন; এখন শতাধিক এবম্বিধ মসজিদের ভগ্নাবশেষ দেখিতে পাওয়া যাইতেছে।

খাঁ জাহানের সহচরগণের মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়াছে : গরিব শাহ্ বেরম শাহ; বুড়া খাঁ, ফতে খাঁ; পীর খাঁ; মীর খাঁ; চাঁদ খাঁ; এক্তিয়ার খাঁ, বক্তার খাঁ; আলম খাঁ; আনর খাঁ; সাহাদাদ খাঁ, সন্দেশ খাঁ (সাতোষ খাঁ), সের খাঁ, বাহাদুর খাঁ, দরিয়া খাঁ, দিদার খাঁ, গঙ্গা খাঁ, মহম্মদ তাহের খাঁ, (পীর আলি) ও আহম্মদ খাঁ (জিন্দা পীর)। এতদ্ব্যতীত মেহেরউদ্দীন, পীর জয়ন্তী প্রভৃতি যে আরও কয়েকজন খাঁ জাহানের অনুচর বলিয়া কল্পিত হইয়া থাকেন, তাঁহাদের কথা পূর্ব্বে বলিয়াছি। পূৰ্ব্বোক্ত কয়েকজনের মধ্যে গরিব শাহ ও বেরাম শাহের সমাধি যশোহরে আছে এবং বুড়া খাঁ ও ফতে খাঁর সমাধি আমাদি গ্রামে দেখা গিয়াছে। কিন্তু ইঁহারা বাগেরহাটেও আসিতেন, তাহার পরিচয় আছে। ষাটগুম্বজ হইতে ২/৩ মাইল পশ্চিমদিকে সায়েড়া গ্রামে ভুটিয়ামারির হাটের দক্ষিণে গরিব শাহের দীঘি ও চেল্লাখানা বা সাধনস্থান ছিল। একটি প্রকাণ্ড মৃত্তিকার ঢিপির মধ্যে একটি গুহাতে এই চেল্লা ছিল। এখন সাধারণ লোকে ঐ স্থানকে ‘ছিলেখানা” বলিয়া থাকে। খালিফাতাবাদে বুড়া খাঁর দীঘি এখনও আছে।

ষাটগুম্বজ হইতে ক্রমে পূর্ব্বমুখে অগ্রসর হইলে আমরা খাঁ জাহান ও তাঁহার সহচরগণের নামীয় নানা কীৰ্ত্তিচিহ্ন দেখিতে পাইব। ষাটগুম্বজ হইতে একটি রাস্তা উত্তরমুখে ভৈরবের কূল পর্য্যন্ত গিয়াছিল। ঐ রাস্তারই পূর্ব্বপার্শ্বে খাঁ জাহানের গড়বেষ্টিত আবাসবাটী ও তাহার সংলগ্ন মজিদ ছিল। নদীর তীরে গড়বেষ্টিত বাড়ীর সদর দ্বার ছিল। বেষ্টনপ্রাচীর ও তাহার চিহ্ন এখনও আছে। ১৫০ ́×১২০ ́ ফুট পরিমিত স্থানে ইস্টকস্তূপসমূহ পূর্ব্বকীর্তির আভাস দেয়। সেই স্তূপের ভিতর খনন করায় ১৪/১৫টি প্রস্তরস্তম্ভ পাওয়া গিয়াছে।[৫] এখনও সাধারণ লোকের মুখে গল্পকথায় শুনিতে পাওয়া যায়, খাঁ জাহানের সোণাবিবি ও রূপাবিবি নামক দুই স্ত্রী ছিলেন, তাঁহারা ঐ বাড়ীতেই বাস করিতেন। এজন্য সাধারণ লোকে ইহাকে সোণাবিবির বাড়ী বলে। দুই স্ত্রী থাকিলেই ঝগড়া হয়; সোণাবিবি ও রূপাবিবির মধ্যেও ঝগড়া বিবাদ হইত। তাহার ফলে একজন বিষ খাইয়া বাটীর পার্শ্ববর্ত্তী পুকুরে ঝাঁপ দিয়া মরেন; ঐ পুকুরকে এখনও বিষপুকুরিয়া বলে; অন্যজন মৃত্যুমুখে পতিত হইলে, ঘোড়াদীঘির পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে সমাহিত হন, ঐ সমাধিস্থানকে বিবিজানের মসজিদ বলে। খাঁ জাহানের পূর্ব্ব পরিচয় সম্বন্ধে আমরা পূর্ব্বে যে আলোচনা করিয়াছি তাহাতে তিনি নপুংসক ছিলেন বলিয়া জানা যায়। তাঁহার যে কোন পুত্রসন্তান ছিল না, তাহা সত্য। বাগেরহাট অঞ্চলে কোন স্থানে কোন কীৰ্ত্তিচিহ্নে বা গল্পগুজবে প্রসঙ্গক্রমেও খাঁ জাহানের সন্তানাদির কথার উল্লেখ নাই। তিনি আজীবন অতি পবিত্রভাবে জীবনলীলা সম্পন্ন করিয়াছিলেন। তাঁহার যেরূপ প্রবল পরাক্রম এবং রাজকীয় প্রতিপত্তি ছিল, তাহাতে তিনি সাধারণ পাঠান রাজার মত ইচ্ছা করিলে বহু স্ত্রী গ্রহণ করিতে পারিতেন, কিন্তু সেরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। পাঠান আমলের বহু অত্যাচারের কথা শুনা গিয়াছে, কিন্তু খাঁ জাহান আলি বা তাঁহার অনুচর-সম্প্রদায় কখনও কোন স্ত্রীলোকের উপর অত্যাচার করিয়াছেন বলিয়া কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইন্দ্রিয়বিজয় যদি দেবতার চিহ্ন হয়। তবে খাঁ জাহান ও তাঁহার আউলিয়াদিগকে পীর বলিতে কোন সম্প্রদায়ের আপত্তি হইতে পারে না। এই সকল প্রসঙ্গ হইতে অনুমান হয়, সোণাবিবি, রূপাবিবি তাঁহার বিবাহিতা বা রক্ষিতা স্ত্রী ছিলেন না। হয়ত তাঁহার দুইটি পরিচারিকার এইরূপ নাম ছিল। তাঁহার বিবাহিতা কোন স্ত্রী থাকিলে তাঁহার সমাধি খাঁ জাহানের সমাধির পার্শ্বেই দেখা যাইত, সহরের এক কোণে অতি হীনাবস্থায় একটি এক গুম্বজ মসজিদে দেখা যাইত না।

যেখানে নদীর উপর খাঁ জাহানের বাটীর তোরণ ছিল, ঐ স্থান হইতে একটি রাস্তা পূৰ্ব্ব- দক্ষিণমুখে আসিয়া ষাটগুম্বুজের রাস্তায় মিশিয়াছে, অন্য একটি রাস্তা পশ্চিম-দক্ষিণমুখে মগরা গ্রামের মধ্য দিয়া চলিয়া গিয়াছে এবং তৃতীয় রাস্তা মগরার খালের কূল দিয়া সোজা পূর্ব্বমুখে গিয়াছিল। উক্ত তোরণদ্বারের অপর পারে গ্রাম্যরাস্তা ও মগরার রাস্তার মধ্যস্থলে একটি প্রকাণ্ড অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ আছে, উহাই কোতোয়ালী চৌতারা, অর্থাৎ এই স্থানে সহরের অধ্যক্ষ বা কোতোয়াল সসৈন্যে অধিষ্ঠান করিতেন। ভৈরবের যে প্রাচীন খাতকে এক্ষণে মগরার খাল বলে, তাহাই ছিল মগরানদী। মগরানদী এখানে একটি বাঁক ঘুরিয়া অপর পারে বাগমারা গ্রাম গঠন করিয়াছিল। সেই বাঁকের মাথায় নগরপালের অবস্থান যে যুদ্ধনীতির সম্পূর্ণ অনুগত ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। নগর নির্মাণের নিমিত্ত দূরদেশ হইতে যে প্রস্তরাদি নানা দ্রব্যজাত আনীত হইত তাহা এই কোতোয়ালী চৌতারার সন্নিকটে অবতরণ করাইয়া লওয়া হইত। সেই অবতরণ-স্থানের নাম ছিল জাহাজঘাটা। এখনও একটি ভূপ্রোথিত প্রস্তরস্তম্ভ সেই জাহাজঘাটার স্থান নির্দ্দেশ করিতেছে।

আমরা পূর্ব্বে দেখাইয়াছি যে, একটি প্রাচীন বৌদ্ধ নগরীর ধ্বংসাবশেষের সাহায্যে খাঁ জাহান স্বকীয় সহরের গঠন সম্পন্ন করিয়াছিলেন। ষাটগুম্বজ হইতে জাহাজঘাটা পর্য্যন্ত যে রাস্তা গিয়াছে, উহারই উভয় পার্শ্বে নানা বৌদ্ধকীৰ্ত্তি ছিল, এইজন্য এইস্থানেই প্রথম সহর প্রতিষ্ঠার কল্পনা করা হয়। জাহাজঘাটার প্রস্তরস্তম্ভ যে কোন পুরাতন হিন্দুমন্দিরের অংশবিশেষ তাহা পূৰ্ব্বে দেখাইয়াছি।[৬] উহার গাত্রে একটি অষ্টভুজা মহিষমৰ্দ্দিনী দেবীমূৰ্ত্তি ছিল বলিয়াই খাঁ জাহান এই স্তম্ভটিকে কোন অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণে প্রয়োগ করেন নাই; যেগুলির গাত্রে এমন পরিস্ফুট মূৰ্ত্তি অঙ্কিত ছিল না বা যাহার মূর্ত্তিচিহ্ন সহজে বিলুপ্ত করা গিয়াছিল, তাহাই দিয়া তিনি নিজের বাড়ী বা ষাটগুম্বজ নামক দরবারগৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তাহা হইলেও তিনি যে সমস্তই পরের পাথর লইয়া কার্য্য করিয়াছিলেন, তাহা নহে। তাঁহার আবশ্যকমত সমস্ত পাথরই যে সেখানে সঞ্চিত ছিল, এমন হইতেও পারে না। স্তম্ভ ব্যতীত অন্য পাথরেরও তিনি যথেষ্ট ব্যবহার করিয়াছেন। তাঁহার সমাধিগৃহের ভিত্তিমূল হইতে মাটীর উপর তিন ফুট পর্যন্ত সমস্তই পাথরে গঠিত। এ সকল পাথর কোথা হইতে আসিল?

শুনা যায়, তিনি আবশ্যকীয় প্রস্তর চট্টগ্রাম হইতে আনিয়াছিলেন। পাঠান আমলে সুন্দরবনের এ অংশ চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সময়ে চট্টগ্রাম সহরে বায়াজিৎ বোস্তান নামক একজন প্রসিদ্ধ বুগ বা অদ্ভুতকর্ম্মা সাধু বাস করিতেন।[৭] খাঁ জাহান যখন জনৈক পরিচিত ব্যক্তির নিকট পত্র লিখিয়া চট্টগ্রাম হইতে প্রস্তর আনিবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন; তখন তাহা শুনিয়া এই ফকির বলিয়াছিলেন, ‘দেড়বুড়ির ভারাণী, তাঁ’র চাটিগায় বরাত’, অর্থাৎ সামান্য একজন লোক, সে দ্রব্যাদির জন্য চাটিগাঁয়ে পত্র লিখিয়া পাঠায়। যাহা হউক, অবশেষে বায়াজিৎ খাঁ জাহানের ধন প্রতিপত্তি ও ধর্মনিষ্ঠার পরিচয় পাইয়া তাঁহার প্রতি সদয় হন। খাঁ জাহানও তাঁহার শিষ্যতুল্য হন এবং সাধুর সহিত দেখা করিবার জন্য অনেক সময় চট্টগ্রাম যাইতেন।[৯] চট্টগ্রামের সহিত ক্রমে এরূপ ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছিল যে, খাঁ জাহান খালিফাতাবাদ হইতে চট্টগ্রাম পর্য্যন্ত এক রাস্তা নির্ম্মাণ করেন। ষাটগুম্বজ হইতে যে রাস্তা পূর্ব্বমুখে বর্তমান বাগেরহাট সহরের দিকে গিয়াছে, ঐ রাস্তাই কাড়াপাড়া রাস্তা ছাড়িয়া একটু অগ্রবর্ত্তী হইয়া বাসাবাটি গ্রামের মধ্য দিয়া পুরাতন ভৈরব ও বলেশ্বরের অন্তর্বর্তী প্রদেশ পার হইয়া চলিয়া গিয়াছে। বাগেরহাটে পূৰ্ব্বদিকে এখন যেমন দড়াটানা প্রবল নদী, তখন সে নদী ছিল না। রাস্তাটি ভৈরবের বাঁকের মাথা দিয়া বৈটপুর, কচুয়া, চিংড়াখালি প্রভৃতি গ্রামের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইয়া হোগলাবুনিয়ার নিকট বলেশ্বর পার হইয়া বরিশাল জেলায় প্রবেশ করিয়াছে। তথা হইতে চাঁদপুর পর্য্যন্ত ঐ রাস্তার বিশেষ নিদর্শন পাওয়া যায় না। কারণ, ঐ প্রদেশের অনেকাংশ নানা বিপ্লবে সমুদ্রগর্ভস্থ ও বিপৰ্য্যস্ত হইয়াছে। মেঘনার মোহনার সন্নিকটে যে বাঙ্গালা নামক সহর ছিল, যাহার সমৃদ্ধি-গৌরবের কথা মার্কোপলো ও বহু পর্তুগীজ প্রভৃতি ভ্রমণকারী জ্বলন্ত ভাষায় বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন, তাহার কোন নিদর্শন নাই; উহা সম্পূর্ণরূপে ভীষণ সমুদ্রের কুক্ষিগত হইয়াছে। উক্ত রাস্তা দ্বারা ‘বাঙ্গালা’ নগরীর সহিত খালিফাতাবাদের সম্বন্ধ স্থাপিত হইতেও পারে। যাহা হউক, সেই বিষয় কোন নিশ্চয়তা নাই। তবে চাঁদপুর হইতে চট্টগ্রাম পর্য্যন্ত একটি জঙ্গলাবৃত রাস্তা খাঞ্জালির রাস্তা বলিয়া প্রসিদ্ধ আছে, তাহা আমরা জানি।

চট্টগ্রাম হইতে খাঁ জাহান অনেক প্রস্তর আনিতেন। সে সকল প্রস্তরবোঝাই নৌকা বলেশ্বর ও ভৈরবের পথে মগরার খালে প্রবেশ করিত এবং পূর্ব্বোক্ত জাহাজঘাটায় অবতরণের পর গো-শকটে করিয়া নানাস্থানে নীত হইত। কোতোয়ালী চৌতারা হইতে একটি রাস্তা পশ্চিমমুখে গিয়াছিল, ঐ রাস্তার বামে দক্ষিণে অনেকগুলি মসজিদের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়, উহার একটিকে লোকে ‘ছিলেখানা’ বলে; এখানে নিশ্চয়ই কোন ফকিরের সাধনক্ষেত্র ছিল। চৌতারা হইতে যে রাস্তা পূৰ্ব্বমুখে গিয়াছে, তাহার দক্ষিণে অবস্থিত বিষপুকুরের পূর্ব্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলি মসজিদ ছিল। ইহার মধ্যে দিদার খাঁর নামীয় নবগুম্বজ মসজিদটি সুন্দর। ইহার ভিতরের মাপ ৪০ ́X৪০ ́ ফুট; ভিত্তি ৭ ́ ফুট; পশ্চিমদিকে দরজা নাই, অন্য ৩ দিকে ৩টি করিয়া নয়টি দরজা, প্রত্যেকটির প্রস্থ ৬ ́-৩ ́ ́ ইঞ্চি। গুম্বুজের মধ্যে মধ্যবর্তীটি কিছু বড়, উহার ভূমিপরিমাণ ১৪ ́×১৪ ́, অপর ৮টির প্রত্যেক দিকে ১২ ́-৬ ́ ́ ইঞ্চি। চারিটি প্রস্তর স্তম্ভের উপর গুম্বজগুলি প্রতিষ্ঠিত।

এই মসজিদ ছাড়িয়া আর একটু অগ্রসর হইলে ষাটগুম্বুজের প্রধান রাস্তার সহিত মিলন হয়; ঐ স্থান হইতে সোজা পূৰ্ব্বমুখে ৩ মাইল পথ অতিক্রম করিলে বাগেরহাট সহর পাওয়া যায়। মিলনস্থানের দক্ষিণদিকে কাঁঠালতলা ও বাদামতলা নামক ক্ষুদ্র পল্লী এবং উত্তরদিকে বাগমারা গ্রাম। বাগমারায় আনর খাঁ মসজিদ ও দীঘি আছে এবং কাঁঠালতলার মধ্যে গঙ্গা খাঁ ও অন্যান্য নামীয় আরও কয়েকটি মজিদের ভগ্নাবশেষ আছে। ক্রমে পূৰ্ব্বমুখে অগ্রসর হইলে দক্ষিণে রণবিজয়পুর গ্রামের মধ্যে খাঁ জাহানের দরগা, দরিয়া খাঁ ও আহম্মদ খাঁর মসজিদ ও দীঘি এবং কাঁঠালগ্রামের মধ্যে কাটানি মসজিদ দেখা যায়। বামভাগে কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যে হুসেন শাহের নামীয় মসজিদ ও দীঘি, হাবসীখানা, এক্তিয়ার খাঁর প্রকাণ্ড দীঘি ও মজিদ এবং অবশেষে দশানিগ্রামের মধ্যে বুড়া খাঁর দীঘি দেখা যায়। হুসেন শাহের প্রসঙ্গ পরে তুলিব, বুড়া খাঁর কথা পূর্ব্বে বলিয়াছি। এক্তিয়ার খাঁর দীঘি ছাড়িয়া আসিলে দক্ষিণদিকে কাড়াপাড়ার রাস্তা। ইহারই পশ্চিম গায়ে প্রায় আধমাইল দীর্ঘ পচা-দীঘি। একটি প্রাচীন নদীখাতে বাঁধ দিয়া এই দীঘি হয়। দৈর্ঘ্যের তুলনায় ইহার বিস্তার কিছু কম। এরূপ দীর্ঘ দীঘি এতদঞ্চলে আর নাই। তবে ইহার জল ভাল নহে; সম্ভবতঃ তজ্জন্যই ইহার নাম হইয়াছে পচা-দীঘি।

সামান্য কয়েকটিমাত্র কীর্তির কথা বলা হইল। প্রদত্ত মানচিত্রে অন্য কতকগুলি কীর্তির স্থান নির্দ্দেশ করা হইয়াছে। আরও কতগুলি যে বিনষ্ট হইয়াছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। সমস্ত প্রাচীন সহরের জঙ্গলের মধ্যে অনুসন্ধান করিলে, যেখানে-সেখানে মজিদের ধ্বংসচিহ্ন দেখা যায়। সমস্ত প্রদেশ ভরিয়া অনুসন্ধান করিলে ৩৬০টি মসজিদ ও দীঘির কথা অপ্রত্যয় করিবার কারণ থাকে না। কতকগুলি বিলুপ্ত-কীর্তির কথা এখানে উল্লেখ করা যাইতেছে; ঠাকুর দীঘির দক্ষিণে ঘুঘুখালির ডহরের মধ্যে সাতোষ খাঁর দীঘির পশ্চিম পারে যে মজিদ দণ্ডায়মান ছিল, তাহা কেহ কেহ ভাঙ্গিয়া লইয়া গিয়াছে; মগরা গ্রামে একটি প্রকাণ্ড মসজিদ জনৈক মুসলমান অন্য কাহারও নিকট বিক্রয় করিয়া ফেলিয়াছেন; ঐ ব্যক্তি খাঁ জাহানের বাড়ীর দক্ষিণভাগে অবস্থিত মসজিদটিও ভাঙ্গিয়া বিক্রয় করিয়াছেন; কোতোয়ালী চৌতারার সুন্দর অট্টালিকা ভাঙ্গিয়া লইয়া গিয়াছে; কাঁঠালগ্রামের বসুবাটীর ভিতর যে দুইটি মজিদ ছিল, তাহার কতকদ্বারা তাহাদের নিজের বাটী নির্ম্মিত ও কতক অন্যের নিকট বিক্রীত হইয়াছে। উক্ত বাটীতে ২/৩টি হামামখানা ছিল, তাহা আর নাই। উহার প্রত্যেকটির ভিতর সুগভীর কুয়া ছিল; কুয়াগুলি ইষ্টকপ্রাচীরে বেষ্টিত এবং উপরিভাগে গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। রণবিজয়পুর গ্রামে একটি বাড়ীতে মসজিদ ও পুকুর প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল, জনৈক মুসলমান উহা ভাঙ্গিয়া লইয়া নিজের গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছেন; যে পল্লীতে ষাটগুম্বজ অবস্থিত উহাকে সুন্দরঘো’ণা বলে, ঐ গ্রামেও বাদামতলায় কয়েকটি মসজিদ ছিল, তাহা লোকে আত্মসাৎ করিয়াছে। যে যে-প্রকারে পারিয়াছে, ইট লইয়া নিজের কাজে লাগাইয়াছে। গৃহ নির্ম্মাণ করিবার ক্ষমতা বা সুযোগ যাহার হয় নাই, সে বাড়ীর সদর দরজা, ঘরের সিঁড়ি প্রভৃতি নানা কাজে ইট লাগাইয়াছে। পার্শ্ববর্ত্তী কতকগুলি গ্রামেও খাঞ্জালি কীৰ্ত্তিচিহ্ন আছে। আফরা গ্রামে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ ল’র দীঘি, খসীগ্রামে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ বুড়াখা দীঘি, পাঁচালী গ্রামে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ সরাফকাঁদি দীঘি, বাদখালিগ্রামে তালপুকুরিয়া ও দৌলতের পুকুর এবং রাজাপুরে হাজিবুনিয়া নামক পূর্ব্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ পুকুর খাঞ্জালিরই জলদান-পুণ্যের মহিমা কীর্ত্তন করিতেছে।

পাদটীকা :

১. সেনেরবাজার হইতে নদী পার হইয়া খাঁ জাহান ভৈরবকূল দিয়া বাগেরহাটে যান নাই বটে, কিন্তু ভৈরবের দুইধারে তাঁহার নানা কীৰ্ত্তিচিহ্ন এখনও বৰ্ত্তমান। সম্ভবতঃ তিনি যখন বাগেরহাটে স্থায়িভাবে অবস্থান করিয়া পার্শ্ববর্ত্তী স্থানের মালিক হইয়া রাজস্ব সংগ্রহ করিতেন, তখন তাঁহার শিষ্যেরা ভৈরবকূলবর্তী বসতি স্থানগুলিতে ধর্মপ্রচারার্থ আসিতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা, জলাশয় ও মজিদ গড়িয়া অধিবাসিগণের উপকার ও মনোরঞ্জন করিতেন। ফকিরহাট থানার নিকটে একটি অতি পুরাতন মসজিদের ভগ্নাবশেষ আছে, উহাকে দরবারের মজিদ বলে। যে ফকিরের নামে ফকিরহাট হইয়াছে, সে ফকির খাঁ জাহানের শিষ্য আউলিয়া এবং মজিদের রচয়িতা কিনা জানি না। পরপারে মূলঘর গ্রামের ‘জেন্দার আলি’ নামক খান তাঁহার অনুচর জেন্দাপীরের নামযুক্ত হইতে পারে। পার্শ্ববর্ত্তী সৈয়দমহল্যা ও কামটা গ্রামে খাঞ্জালি দীঘি আছে।

২. বিশ্ববিখ্যাত ইংরাজবাগ্মী মহামতি বার্ক কর্ণাটদেশীয় জলাশয় প্রসঙ্গে যাহা বলিয়া গিয়াছেন, খাঞ্জালি ও সীতারামের জলপুণ্য সম্বন্ধে তাহা অবিকল উক্ত হইতে পারে : These are the monuments of real kings, who were the fathers of their people; testators to a posterity which they embraced as their own. These are the grand sepulchres built by ambition, but by the ambition of an insatiabale benevolence which, not contented with reigning in the dispensation of happiness during the contracted tenure of human life, had strained with all the reachings and graspings of a vivacious mind of extend the dominion of that bounty beyond the limits of nature and to perpetuate themselves through generations of generations as the guardians, the protectors and the nourishers of mankind.’ – Burke, Works, 1815. IV. P. 266

৩. গৌরদাস বসাক মহাশয় বাগেরহাটে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকিবার সময় এই সকল স্থান পরিদর্শন করেন এবং খাঞ্জালির কীর্তি সম্বন্ধে ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে এসিয়াটিক সোসাইটিতে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। উহাতে যে সকল পরিমাণ দেওয়া হইয়াছিল, তাহার কয়েকটি ঠিক নহে। বসাক মহাশয় ভিতরের মাপ ১৪৪ ́ ×৯৬ ́ দিয়াছিলেন।

৪. ‘ঐতিহাসিক চিত্র’, পৌষ, ১৩১৭, ২৯৭ পৃ।

৫. পরবর্ত্তী খণ্ডে ডিড ‘শিল্প ও সাহিত্য’ পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।

৬. দ্বিতীয় অংশ : অষ্টম পরিচ্ছেদ, বৌদ্ধ সংঘারাম কোথায় ছিল দ্রষ্টব্য।

৭. বায়াজিৎ পূর্ব্বে পারস্যের অন্তর্গত বোস্তান নগরের সুলতান ছিলেন। একটি দৈব ঘটনায় তাঁহার নির্ব্বেদ উপস্থিত হইলে, তিনি হঠাৎ সংসার ত্যাগ করেন এবং চট্টগ্রাম সহরের উত্তরাংশে এক দরগা স্থাপন করিয়া অবস্থান করেন (বিজয়া, ১৩১৯, কাৰ্ত্তিক, ৭৩ পৃ)। প্রবাদ এই, তিনি দৈববলে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়া হাঁটিয়া যাইতে পারিতেন। ‘তাজ-কেরাত-উল-আউলিয়া’ নামক মুসলমানী গ্রন্থে এই সাধুর জীবন-চরিত লিখিত আছে। সাধু ফকির হইবার অনেক কাল পরে বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, সংসার ত্যাগ না করিয়াও সাধু হওয়া যায়। তাহার সেই গার্হস্থ্যধর্ম্মের পরিপোষণ জন্য একটি কথা প্রচলিত আছে,–’বাজীৎ বোস্তান, আগে মস্তান (উদাসীন), শেষে পস্তান’ (অনুতপ্ত হন)।

৮. যাহারা ধান্য হইতে চাউল প্রস্তুত করিয়া সেই ব্যবসায় দ্বারা জীবিকানির্ব্বাহ করে, তাহাদিগকে ‘ভারাণী’ বলে। ‘বুড়ি’ অর্থে পয়সা। দেড় পয়সার ভারাণী, অর্থাৎ অতি সামান্য লোক। এক্ষণে সামান্য ব্যক্তির উচ্চ আশা দেখিলেই খুলনা জেলায় লোকে এই প্রবাদের উল্লেখ করিয়া থাকেন। কিন্তু এ প্রবাদের সহিত খাঁ জাহানের জীবনের কি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে, তাহা অনেকে জানেন না।

৯. ‘…to Chittagong khan jahan was wont to visit a great Mahamedan saint Bayazid Bistanu (called by Mr. Westland Bazid Bostan). The newly discovered Ms. History of Chittagong gives a good deal of information concerning this holy man.’ – Hunter’s statistical Accounts. Vol. II. P. 230 আমরা চেষ্টা করিয়াও এই হস্তলিখিত পুস্তকের সন্ধান পাই নাই।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্রথম পরিচ্ছেদ – উপক্রমণিকা
২. ২. বাহ্য প্রকৃতি ও বিভাগ
৩. ৩. নদী-সংস্থান
৪. ৪. ব’দ্বীপের প্রকৃতি
৫. ৫. অন্যান্য প্রাকৃতিক বিশেষত্ব
৬. ৬. সুন্দরবন
৭. ৭. সুন্দরবনের উত্থান ও পতন
৮. ৮. সুন্দরবনে মনুষ্যাবাস
৯. ৯. সুন্দরবনের বৃক্ষলতা
১০. ১০. সুন্দরবনের জীবজন্তু
১১. ১১. সুন্দরবনে শিকার ও ভ্রমণ
১২. ১২. সুন্দরবনের জঙ্গলা ভাষা
১৩. ১. প্রথম পরিচ্ছেদ – উপবঙ্গে দ্বীপমালা
১৪. ২. দ্বীপের প্রকৃতি
১৫. ৩. আদি হিন্দু-যুগ
১৬. ৪. জৈন-বৌদ্ধ যুগ
১৭. ৫. গুপ্ত-সাম্রাজ্য
১৮. ৬. সমতটে চীন-পৰ্য্যটক
১৯. ৭. মাৎস্য-ন্যায়
২০. ৮. বৌদ্ধ-সংঘারাম কোথায় ছিল
২১. ৯. সেন-রাজত্ব
২২. ১০. সেন-রাজত্বের শেষ
২৩. ১১. আভিজাত্য
২৪. ১. তামস যুগ
২৫. ২. বসতি ও সমাজ
২৬. ৩. দনুজমৰ্দ্দন দেব
২৭. ৪. খাঁ জাহান আলি
২৮. ৫. খাঁ জাহানের কার্য্যকাহিনী
২৯. ৬. পয়োগ্রাম কসবা
৩০. ৭. খালিফাতাবাদ
৩১. ৮. খাঁ জাহানের শেষ জীবন
৩২. ৯. হুসেন শাহ
৩৩. ১০. রূপ-সনাতন
৩৪. ১১. লোকনাথ
৩৫. ১২. হরিদাস
৩৬. ১৩. রামচন্দ্র খাঁ
৩৭. ১৪. গাজীর আবির্ভাব
৩৮. ১৫. মুকুট রায়
৩৯. ১৬. দক্ষিণরায় ও গাজীর কথার শেষ
৪০. ১৭. পাঠান আমলে দেশের অবস্থা
৪১. পরিশিষ্ট ।। ক – সুন্দরবনের বিনষ্ট নগরী নলদী
৪২. পরিশিষ্ট ।। খ – ভরত-ভায়না স্তূপ
৪৩. পরিশিষ্ট ।। গ – দেগঙ্গা ও বালাণ্ডা
৪৪. পরিশিষ্ট ।। ঘ – বংশাবলী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন