হযরত মুহাম্মদ (দঃ) (৫৭০-৬৩২) – সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী

ভবেশ রায়

যুগে যুগে যাঁদের আবির্ভাবে ধরাপৃষ্ঠ পবিত্র হয়েছে, যাঁরা স্বীয় নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের প্রভাবে সাধারণ মানুষ থেকে মহামানবে পরিণত হয়েছেন, অকাতরে নিজের ধন-প্রাণ উৎসর্গ করে মানুষের কল্যাণ সাধন করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, হযরত মুহাম্মদ (দঃ) তাঁদের অন্যতম।

মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি এবং জ্ঞানের বিকাশ সাধনের জন্য তিনি আজীবন সাধনা করে গেছেন। সমগ্র আরব যখন অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখনই হযরত মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহ্ রহমত হিসেবে শান্তির বাণী নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন পৃথিবীর মাটিতে। তিনি আরবের মক্কা নগরীতে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট (১২ রবিউল আউয়াল) কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

জন্মের অব্যবহিত পরেই পিতামহ আবদুল মোতালিব নাতির নাম ঘোষণা করেন ‘মুহাম্মদ’। অন্যদিকে মা আমিনা শিশু পুত্রকে আদর করে ডাকতে শুরু করেন ‘আহমদ’ বলে। আত্মীয়-স্বজনরা তাঁকে দু’নামেই ডাকতে থাকেন।

উল্লেখ্য, সেসময় আরবে সম্ভ্রান্ত পরিবারে নবজাত শিশুকে দুধ-মায়ের হাতে ছেড়ে দেয়ার রেওয়াজ ছিল। এই প্রথা অনুসারে দুধ-মা বা ধাত্রীমাতা হালিমার হাতে হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর লালন-পালনের ভার অর্পিত হয়।

এই সময় আরববাসীরা বহু গোত্রে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে কুরাইশ বংশই ছিল সবচেয়ে বেশি গণ্যমান্য। পবিত্র কাবার রক্ষণাবেক্ষণের ভারও ন্যস্ত ছিল কুরাইশবংশীয় লোকদের ওপর। এই বংশ আবার বিভক্ত ছিল অনেক শাখা বা গোত্রে। এদের মধ্যে হাশেমি এবং ওমাইয়া গোত্র ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বনি হাশেম গোত্র ছিল সেইকালে শিক্ষাদীক্ষায়, ধন-দৌলত ও মান-সম্মানে সর্বশ্রেষ্ঠ। এই গোত্রেই জন্মগ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মদ (দঃ)।

হযরতের পিতার নাম আবদুল্লাহ্ এবং মাতার নাম আমিনা। পিতা আবদুল্লাহ্ তাঁর জন্মের ৮ মাস আগেই ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন। মাকে তিনি হারিয়েছিলেন মাত্র ৮ বছর বয়সে।

সারা মুসলিম জাহানের কল্যাণের জন্য যাঁর আবির্ভাব, তিনি নিজেই ছিলেন আজন্ম এতিম। বৃদ্ধ পিতামহ আবদুল মোতালিব ও চাচা আবু তালিবের কাছে তিনি বাল্যে লালিত-পালিত হন। মাতা-পিতার স্নেহবঞ্চিত হয়ে অতিবাহিত হয়েছিল তাঁর বাল্যকাল। ফলে বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হন।

চাচা আবু তালিবের অবস্থা সচ্ছল ছিল না। তাই হযরতকে অল্প বয়সেই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি মাঠে মেষ চরাতেন। চাচার ব্যবসার কাজে সহায়তা করতেন। এই ব্যবসা উপলক্ষে চাচার সঙ্গে তিনি সিরিয়া যান। সেখান থেকে ফিরে বালক মুহাম্মদ (দঃ) প্রত্যক্ষ করেন ফিজার যুদ্ধের বিভীষিকা। কাইস গোত্র অন্যায়ভাবে এ যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল কুরাইশদের ওপর। এ যুদ্ধ চলেছিল দীর্ঘ পাঁচ বছর পর্যন্ত। এতে মুহাম্মদ (দঃ) সরাসরি অংশ গ্রহণ করেননি। এই যুদ্ধের বিভীষিকায় তাঁর কোমল হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তাই তিনি শান্তিকামী উৎসাহী যুবকদের নিয়ে গঠন করেন ‘হিলফুল ফুযূল’ বা শান্তিসংঘ।

তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত চিন্তাশীল, পরোপকারী এবং সত্যবাদী। তাঁর এই সত্যবাদিতার জন্যই আরববাসীরা তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী উপাধি দিয়েছিলেন।

একটু বয়স বাড়তেই চাচা আবু তালিব হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-কে নিয়ে চলে আসেন মক্কায়। উদ্দেশ্য, দুজনে মিলে ব্যবসা করা। কিন্তু মূলধন কোথায় পাবেন! এই চিন্তায় মগ্ন চাচা আবু তালিবের মনে পড়ল খাদিজা (রাঃ) বিবির কথা। তিনি ব্যবসার মূলধন হিসেবে খাদিজা (রাঃ)-র কাছে কিছু টাকা ধার চাওয়ার জন্য গেলেন। খাদিজা (রাঃ) সে সময়কার মক্কার একজন ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন। হেজাজ, সিরিয়া, ইয়েমেন ও তায়েবসহ নানা জায়গায় তাঁর বাণিজ্য কাফেলা যাতায়ত করত। এই ব্যবসা উপলক্ষে এসেই বিবি খাজিদা (রাঃ)-র সঙ্গে পরিচয় ঘটে হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর।

হযরত মুহাম্মদ (দঃ) ছিলেন কাজেকর্মে একজন দক্ষ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তাঁর কর্মদক্ষতা ও ন্যায়নীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েই আরবের এই ধনবতী ও গুণবতী খাদিজা (রাঃ) তাঁকে একসময় বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। এই সময় বিবি খাদিজার (রাঃ) বয়স ছিল চল্লিশ আর হযরতের পঁচিশ বছর।

বিবি খাদিজা (রাঃ) ছিলেন মক্কার কুরাইশ বংশের অন্যতম ধনী খুওয়াইলিদের একমাত্র কন্যা। খুওয়াইলিদ আরবের এক বিরাট ধনী ও সম্ভ্রান্ত যুবকের সাথে কন্যার বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের কিছুদিন পরেই খাদিজার (রাঃ) স্বামী মারা যান। খাদিজার (রাঃ) স্বামীর অন্য কোনো ওয়ারিশ না থাকায় তিনিই স্বামীর যাবতীয় ধনসম্পদের অধিকারী হন। তিনি স্বামীর সব সম্পত্তি নিয়ে পিতার সংসারেই বসবাস করতে থাকেন। এর কিছুকাল পর তাঁর পিতাও মারা যান। খাদিজা তাঁর পিতার ধনদৌলতেরও একমাত্র অধিকারী হন।

বিয়ের পর হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর আর্থিক সংকট দূর হয়। ফলে ধর্মচিন্তার প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন আরও বেশি করে। একান্তভাবে নিমগ্ন হন স্রষ্টার ধ্যানে। চারদিকের অন্যায়, অবিচার আর পাপাচার দেখে তাঁর অন্তর ভরে ওঠে বেদনায়। কীভাবে পৃথিবীকে পাপমুক্ত করা যায়, একমাত্র তা-ই হয়ে উঠতে থাকে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান।

জীবনের এই পর্যায়ে অধিকাংশ সময় তিনি মক্কার কাছাকাছি হেরা পর্বতের গুহায় নির্জনে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। দীর্ঘ পনেরো বছরকাল তিনি কাটিয়েছিলেন এই ধ্যানমগ্নতায়। অবশেষে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে চল্লিশ বছর বয়সে তিনি স্বর্গীয় দূত জিবরাইলের কাছ থেকে আল্লাহর বাণী লাভ করে নবুয়তপ্রাপ্ত হন।

নবুয়ত লাভ করেই তিনি একান্তভাবে ব্রতী হন ইসলাম ধর্মের প্রচারে। এক আল্লাহর উপাসনা করার জন্যে তিনি সকল আরববাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বিবি খাদিজাই (রাঃ) সর্বপ্রথম কালেমা তাইয়েব পাঠ করেন এবং হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-কে সত্যিকার নবী বলে বিশ্বাস করে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন।

কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর এক আল্লাহ্ উপাসনা করার আহ্বানে প্রথমে সবাই সাড়া দেয়নি, বরং কেউ কেউ এতে ভয়ানক খেপে ওঠে এবং শুরু করে তাঁর ওপর চরম অত্যাচার। কিন্তু হাজারো দুঃখ-কষ্ট, বাধাবিঘ্নের কাছে তিনি নতি স্বীকার করেননি। সমস্ত বিপদের মধ্যেও নির্ভীক চিত্তে তিনি ঘোষণা করেন, “কুরাইশরা যদি আমার ডান হাতে সূর্য আর বাম হাতে চাঁদও এনে দেয়, তবু আমি সত্যের প্রচার থেকে বিরত হব না।”

প্রায় তিন বছর পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত গোপনে ও সন্তর্পণে তাঁর নতুন ধর্মের প্রচার চালাতে থাকেন। তাঁর প্রচারিত ধর্মে অনুরক্ত ও অনুপ্রানিত হয়ে হযরত ওসমান (রাঃ)সহ আরও অনেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। হযরত মাঝেমধ্যে তাঁদের নিয়ে দূরে কোনও পর্বতের আড়ালে চলে যেতেন এবং সেখানে একাগ্র মনে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগি করতেন। তাঁর ধর্ম প্রচারের পথে কুরাইশদের প্রতিবন্ধকতাই ছিল মুখ্য।

কুরাইশদের অত্যাচার শুধু হযরতের নিজের ওপরে নয়, যাঁরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়েছিলেন, হযরতকে নবী বলে মেনে নিয়েছিলেন, তাঁদের ওপরও চলে সমান নির্যাতন।

মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র ও কাফেরদের ক্রীতদাস। তাঁদের প্রতিই অত্যাচার করা শুরু করা হয় বেশি করে। তাঁদের না ছিল অর্থবল, না ছিল অস্ত্রবল। অন্যদিকে কাফেরদের ধনবল, জনবল ও অস্ত্রবল ছিল অসীম। কাজেই নীরবে অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া মুসলমানদের কোনোই উপায় ছিল না।

শুধু তা-ই নয়, ইসলাম-বিরোধীরা হযরতকে হত্যা করার জন্যও সুযোগের সন্ধান করতে থাকে। অবশেষে তিনি তাঁর প্রিয় সহচর হযরত আবু বকরকে সাথে নিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনাবাসীরা তাঁকে গ্রহণ করেন সাদরে। ইংরেজি ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর হযরত মুহাম্মদ (দঃ) সর্বপ্রথম মদিনায় আগমন করেন। উল্লেখ্য, তাঁর মক্কা ছেড়ে মদিনায় প্রবেশের দিন থেকেই হিজরি সাল গণনার শুরু হয়।

হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর মদিনায় হিজরত করারও দু’বছর আগে অর্থাৎ ৬২০ খ্রিস্টাব্দে (তাঁর নবুয়তের দশম বছরে) পবিত্র রমজান মাসের দশ তারিখে বিবি খাদিজা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন।

এদিকে হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর প্রচারিত ধর্মাদর্শের প্রতি মনেপ্রাণে আনুগত্য প্রকাশ করে দলে দলে মদিনার মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে শুরু করেন। কাঁচা ইটের গাঁথুনি এবং খেজুর পাতার ছাউনি দিয়ে মুসলমানদের জন্যে তৈরি করা হয় মসজিদ। এই মসজিদে বসেই হযরত মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর ধর্ম প্রচার করতেন।

একদিকে মুসলমান আর অন্যদিকে কাফের। মুসলমান আর কাফেরদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে যুদ্ধ হয়, তা বদরের যুদ্ধ। সংখ্যায় কম হলেও মুসলমানরা এ যুদ্ধে জয়ী হয়। বদরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কাফেররা প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তৈরি হতে থাকে। তারা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে আবার এক বিরাট সৈন্যদল গঠন করে ওহোদের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু এবারও কাফেররা পরাজিত হয়।

ওহোদের যুদ্ধের পর আর একটি বড় ধরনের যুদ্ধ হয় মদিনায়। তাকে বলা হয় খন্দকের যুদ্ধ। মক্কার কুরাইশরা মদিনায় উপস্থিত হয়ে এর চারিদিক ঘেরাও করে রাখলেও এ যুদ্ধেও কাফেরদের পরাজয় বরণ করতে হয়।

মক্কার কুরাইশরা একাদিক্রমে কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বুঝতে পারে যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কোনো লাভ নেই, তাদের পরাজিত করা সম্ভব নয়।

হিজরি অষ্টম সনের রমজান মাসে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) দশ হাজার মুসলমানকে সাথে নিয়ে মক্কা বিজয়ে রওনা হন। তাঁরা বীরবিক্রমে মক্কার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এই অবস্থা দেখে কুরাইশরা মুসলমানদের বাধা দিতে সাহসী হলো না। সুতরাং সম্পূর্ণ বিনা যুদ্ধেই মুসলমানরা অবশেষে মক্কা অধিকার করেন।

এরপর অগণিত কুরাইশসহ তাদের দলপতি আবু সুফিয়ান হযরতের কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে গ্রহণ করেন ইসলাম ধর্ম।

বিনা যুদ্ধে ও সম্পূর্ণ বিনা রক্তপাতে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) মক্কা জয় করেন। এরপর তিনি অত্যন্ত আদব ও ভক্তির সাথে হেরেম শরিফে প্রবেশ করে পবিত্র কাবাগৃহ তোওয়াফ করেন।

হযরতের ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও মহান আদর্শের জন্য দলে দলে লোক এসে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে থাকে। এইভাবে সমগ্র আরব তথা সারা বিশ্ব আবদ্ধ হলো ইসলামের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।

দশম হিজরী অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দ তিনি মক্কায় ‘আরাফাতের’ ময়দানে উপস্থিত হন এবং সমবেত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। ইতিহাসে এটাই বিদায় হজ্বের ভাষণ নামে খ্যাত।

অবশেষে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন মোতাবেক ১১শ হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) ইহলোক ত্যাগ করেন।

হযরত মুহাম্মদ (দঃ) ছিলেন একজন মহামানব। তাঁর সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “হযরতের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সুন্দরতম আদর্শ।” সত্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা ও সংকল্পের দৃঢ়তাই তাঁর জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলে। তিনি ছিলেন স্নেহময় পিতা, প্রেমময় স্বামী, সদাশয় মানব, অসীম দয়ার আধার। আপন-পর, শত্রু-মিত্র সকলের প্রতি ছিল তাঁর সমান করুণা। প্রাণঘাতী শত্রুকেও তিনি হাতে পেয়ে ক্ষমা করেছেন। দারিদ্র্য ছিল তাঁর গৌরব এবং দরিদ্রের সেবাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। মানবজীবনে ধর্ম ও কর্মের এমন অভূতপূর্ব সমাবেশ জগতে বিরল।

হযরতের চরিত্রের মহত্ত্ব ও উদারতা এবং পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তাঁর সংযম ও কর্মনৈপুণ্য দেখে লোকে তাঁকে ফেরেশতা বলে মনে করত। এর উত্তরে তিনি বলতেন, আমি তোমাদের মতোই মানুষ। আমি ফেরেশতা নই। আল্লাহ্তায়ালার দূত। ধর্মের ইতিহাসে এটা যেমন বিরল, তেমনি মানবতার ইতিহাসেও এক যুগান্ত সৃষ্টিকারী ঘটনা।

অধ্যায় ১ / ১০০

সকল অধ্যায়

১. হযরত মুহাম্মদ (দঃ) (৫৭০-৬৩২) – সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী
২. জরথুশত্র (৬২৮-৫৫১ খ্রি. পূ.) – পারশি ধর্মের প্রবর্তক
৩. বর্ধমান মহাবীর (৫৯৯–৫২৭ খ্রি. পূ.) – জৈন দর্শন ও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
৪. গৌতম বুদ্ধ (৫৬৩–৪৮৩ খ্রি. পূ.) – বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক
৫. কনফুসিয়াস (৫৫১–৪৭৯ খ্রি. পূ.) – চীনের প্রাচীনতম ধর্মমতবাদের প্রবর্তক
৬. সক্রেটিস (আনু. ৪৬৯–৩৯৯ খ্রি. পূ.) – দর্শনশাস্ত্রের আদিজনক
৭. প্লেটো (৪২৮–৩৪৭ খ্রি. পূ.) – দর্শনশাস্ত্র যাঁর হাতে পেয়েছিল পূর্নাঙ্গরূপ
৮. ডায়োজিনিস (৪১২–৩২২ খ্রি. পূ.) – একনিষ্ঠ জ্ঞান সাধক
৯. অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রি. পূ.) – যুক্তিশাস্ত্রের জনক
১০. যিশু খ্রিস্ট (আনু. ৬ খ্রি. পূ.–আনু. ২৯ খ্রি.) – খ্রিস্টানধর্মের প্রবর্তক
১১. অতীশ দীপঙ্কর (৯৮২–১০৫৩) – জ্ঞানসাধক বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক
১২. গুরু নানক (১৪৬৯–১৫৩৮) – শিখ ধর্মমতের প্রবর্তক
১৩. মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) – ধর্মের সংস্কারক এবং ‘প্রটেস্টানিজম’ মতবাদের স্রষ্টা
১৪. মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩) – বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক
১৫. রামমোহন রায় (১৭৭২–১৮৩৩) – ভারতবর্ষে নবযুগের প্রবর্তক
১৬. রামকৃষ্ণ পরমহংস (১৮৩৬–১৮৮৬) – ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমি ঈশ্বরকে দর্শন করেছি’
১৭. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২–১৯৭০ ) – যুদ্ধ-বিরোধী ও মানবতাবাদী দার্শনিক
১৮. থ্যালিস (আনু. ৬২৪–৫৬৫ খ্রি. পূ.) – বিজ্ঞানশাস্ত্রের আদিপুরুষ
১৯. পিথাগোরাস (আনু. ৫৮২–৫০৭ খ্রি. পূ.) – তিনি বলেছিলেন—পৃথিবী গোলাকার
২০. হিপোক্র্যাটিস (আনু: ৪৬০–৩৭০ খ্রি. পূ.) – চিকিৎসাশাস্ত্রের আদিজনক
২১. আর্কিমিডিস (২৮৭–২১২ খ্রি. পূ.) – ঊর্ধ্বমুখী বল সূত্রের আবিষ্কারক
২২. ক্লডিয়াস টলেমি (১০০–১৮০ খ্রি.) – জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথম কোষগ্রন্থ প্রণেতা
২৩. ক্লডিয়াস গ্যালেন (১৩১–২০১ খ্রি.) – চিকিৎসাশাস্ত্রের আধুনিক পদ্ধতির আদি জনক
২৪. ইবনে সিনা (৯৮০–১০৩৭) – জ্ঞানসাধনায় কাটিয়েছিলেন সমগ্র জীবন
২৫. কোপারনিকাস (১৪৭৩–১৫৪৩) – আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্ৰবক্তা
২৬. জিওর্দানো ব্রুনো (আনু. ১৫৪৮–১৬০০ ) – সত্যপ্রচারের অপরাধে যাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল
২৭. গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২) – যাঁর গাণিতিক পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি
২৮. লিওয়েন হুক (১৬৩২–১৭৩৩) – মুদি দোকানদার থেকে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী
২৯. আইজাক নিউটন (১৬৪২–১৭২৭) – মাধ্যাকর্ষন শক্তির আবিষ্কারক
৩০. রিচার্ড আর্করাইট (১৭৩২–১৭৯২) – আধুনিক বস্ত্রশিল্পে বৈপ্লবিক ধারা প্রবর্তক
৩১. উইলিয়াম হার্শেল (১৭৩৮–১৮২২) – ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কারক
৩২. লরেঁ লাভোয়সিয়ের (১৭৪৩–১৭৯৪) – রসায়নশাস্ত্রের জনক
৩৩. মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) – তাড়িত-চুম্বক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা
৩৪. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) – প্রাণিজগতের বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যাদাতা
৩৫. লুই পাস্তুর (১৮২২–১৮৯৫) – জীবাণু আর জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধকের আবিষ্কারক
৩৬. আলফ্রেড নোবেল (১৮৩৩–১৮৯৬) – যাঁর নামে দেয়া হয় নোবেল পুরস্কার
৩৭. আলভা এডিসন (১৮৪৭–১৯৩১) – সর্বাধিক আবিষ্কারের জনক
৩৮. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৯–১৯৩৭) – যিনি বলেছিলেন গাছেরও প্রাণ আছে
৩৯. মাদাম কুরি (১৮৬৭–১৯৩৪) – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা বিজ্ঞানী
৪০. মার্কোনি (১৮৭৪–১৯৩৭) – বেতারযন্ত্রের আবিষ্কারক
৪১. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯–১৯৫৫) – আপেক্ষিক তত্ত্বের জনক
৪২. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১–১৯৫৫) – পেনিসিলিনের আবিষ্কারক
৪৩. হোমার (আনু. ৭০০-? খ্রি. পূ.) – বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দুটি মহাকাব্যের রচয়িতা
৪৪. ঈশপ (আ. কা. ৬২০–৫৬০ খ্রি. পূ.) – কালজয়ী নীতিগল্পকার
৪৫. সোফোক্লেস (আনু. ৪৯৫-৪০৬ খ্রি. পূ.) – গ্রিক ট্র্যাজেডি নাট্যধারার রূপকার
৪৬. হেরোডোটাস (আনু. ৪৮৫–৪২৫ খ্রি. পূ.) – ইতিহাসশাস্ত্রের জনক
৪৭. অ্যারিস্টোফানিস (আনু. ৪৪৪–৩৮৫ খ্রি. পূ.) – যাঁর সাহিত্যকর্মে আর্তমানবতার কথা প্রতিফলিত
৪৮. মহাকবি কালিদাস (আনু. ৫৭০-৬৫০ খ্রি.) – সংস্কৃতি সাহিত্যের অমর কবি
৪৯. লেওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২–১৫১৯) – সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী
৫০. মিকেলাঞ্জেলো (১৪৭৫–১৫৬৪) – পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাস্কর শিল্পী
৫১. তানসেন (১৫০৬–১৫৮৫) – কিংবদন্তির গায়ক
৫২. শেকসপিয়ার (১৫৬৪-১৬১৬) – বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী নাট্যকার
৫৩. ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) – বিখ্যাত ফরাসি চিন্তাবিদ
৫৪. জঁ-জাক্ রুসো (১৭১২–১৭৭৮) – ফরাসি বিপ্লবের রূপকার
৫৫. লর্ড বায়রন (১৭৮৮–১৮২৪) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি
৫৬. ভিক্টর হুগো (১৮০২-১৮৮৫) – ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল
৫৭. ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন (১৮০৫–১৮৭৫) – যাঁকে বলা হয় রূপকথার জাদুকর
৫৮. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২–১৮৭০) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল
৫৯. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২) – মার্কিন সাহিত্যের যুগ-প্রবর্তক কবি
৬০. লিয়েফ তলস্তোয় (১৮২৮–১৯১০) – বিশ্বের মহান সাহিত্যিকদের অন্যতম
৬১. জুল ভের্ন (১৮২৮–১৯০৫) – কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর স্রষ্টা
৬২. মার্ক টোয়েন (১৮৩৫–১৯১০) – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রসস্রষ্টা
৬৩. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৫৬–১৯৫০) – যিনি প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) – শ্রেষ্ঠ বাঙালি মনীষা, পৃথিবীর মহত্তম সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব
৬৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮–১৯৩৬) – যাঁর সাহিত্যকর্মের প্রধান উপজীব্য গণমানুষের কথা
৬৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮) – যাঁর খ্যাতিকে নেপোলিয়নের সঙ্গে তুলনা করা হতো
৬৭. আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৮–১৯৬১) – জীবনবাদী মার্কিন কথাসাহিত্যিক
৬৮. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯–১৯৭৬) – বাংলার বিদ্রোহী কবি
৬৯. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২–১৭৯৯) – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট
৭০. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) – ইতিহাসের কিংবদন্তির মহানায়ক
৭১. জুসেপ্পে গারিবলদি (১৮০৭–১৮৮২) – ইতালির জনক বলে যাঁর খ্যাতি
৭২. আব্রাহাম লিংকন (১৮০৯-১৮৬৫) – যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্রীতদাসপ্রথা রহিত করেছিলেন
৭৩. অটো ফন বিসমার্ক (১৮১৫–১৮৯৮) – জার্মান সাম্রাজ্যের স্থপতি
৭৪. মহাত্মা গান্ধি (১৮৬৯–১৯৪৮) – ‘সবকো সুমতি দে ভগবান’
৭৫. কমরেড লেনিন (১৮৭০–১৯২৪) – বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা
৭৬. উইনস্টন চার্চিল (১৮৭৪–১৯৬৫) – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ডাকসাইটে প্রধানমন্ত্রী
৭৭. জোসেফ স্ট্যালিন (১৮৭৯–১৯৫৩) – সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়েনের ‘লৌহমানব’
৭৮. কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১–১৯৩৮) – নব্য-তুরস্কের জনক
৭৯. ডি ভ্যালেরা (১৮৮২-১৯৭৫) – আয়ারল্যান্ডের প্রথম প্রেসিডেন্ট
৮০. জওহরলাল নেহরু (১৮৮৯-১৯৬৪) – ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
৮১. আইসেনহাওয়ার (১৮৯০-১৯৬৯) – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
৮২. শার্ল দ্য গল (১৮৯০-১৯৭০) – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা
৮৩. হো-চি-মিন (১৮৯০-১৯৬৯) – ভিয়েতনামের মুক্তিদাতা পুরুষ
৮৪. মার্শাল টিটো (১৮৯২–১৯৮০) – জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা
৮৫. মাও-সে-তুং (১৮৯৫–১৯৭৬) – চীন সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা
৮৬. সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭–১৯৪৫) – ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’
৮৭. জন এফ কেনেডি (১৯১৭–১৯৬৩) – গুপ্তঘাতকের হাতে যাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছিল
৮৮. ইন্দিরা গান্ধি (১৯১৭–১৯৮৪) – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
৮৯. নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮) – দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিদাতা পুরুষ
৯০. শেখ মুজিবর রহমান (১৯২০–১৯৭৫) – বাংলাদেশের জাতির জনক
৯১. প্যাট্রিস লুমুম্বা (১৯২৫-১৯৬১) – কঙ্গোর মুক্তিদাতা পুরুষ
৯২. মার্কো পোলো (১২৫৬–১৩২৩) – দুঃসাহসিক অভিযাত্রী
৯৩. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (আনু. ১৪৪৬-১৫০৬) – আমেরিকার আবিষ্কারক
৯৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩) – আফ্রিকার আবিষ্কারক
৯৫. উইলিয়াম জোন্স (১৭৪৬–১৭৯৪) – এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
৯৬. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০–১৯১০) – আধুনিক ‘নার্সিং’ বৃত্তির অগ্রপথিক
৯৭. হেনরি ডুনান্ট (১৮২৮–১৯১০) – রেডক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
৯৮. ব্যাডেন পাওয়েল (১৮৫৭–১৯৪১) – বয়স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা
৯৯. মাদার তেরেসা (১৯১০–১৯৯৭) – প্রেম, করুণা ও ধর্মের মূর্ত প্রতিমা
১০০. অ্যাডাম স্মিথ (১৭২৩–১৭৯০) – রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিজ্ঞানের জনক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন