চার্লস ডিকেন্স (১৮১২–১৮৭০) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল

ভবেশ রায়

ইংরেজি সাহিত্যের আজও যিনি সর্বাধিক আলোচিত লেখক এবং সর্বাধিক গ্রন্থের প্রণেতা বলে খ্যাত, সেই চার্লস ডিকেন্স (Charles Dickens) যখন প্রথম লেখা শুরু করেন, তখন তাঁর মনে ছিল কত সংকোচ। পাছে লোকে তাঁকে লেখক বলে ঠাট্টা-তামাশা করে, তাঁর লেখা নিয়ে উপহাস করে, এই ছিল তাঁর একমাত্র ভয়।

প্রথম একটি গল্প তিনি লিখে ফেলেন খুব ভয়ে ভয়ে আর লুকিয়ে লুকিয়ে। তারপর গল্পটাকে কপি করে রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি ডাকবাক্সে ফেলে দিয়ে এসেছিলেন, যাতে কেউ জানতে না পারে।

তারপর গল্পটা যখন সত্যি সত্যি ছাপা হলো, তিনি কী যে খুশি হয়েছিলেন! খুশিতে একেবারে কেঁদে ফেলেছিলেন। শুরু করেছিলেন রাস্তায় নেমে পাগলের মতো ছুটোছুটি। অবশ্য এই প্রথম লেখাটার জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক পাননি। এর পরের গল্পের জন্যও তিনি কিছু পাননি।

তাঁর জীবনের প্রথম একটি গল্পের জন্য যিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন মাত্র পাঁচ ডলার, পরবর্তীকালে সেই ডিকেন্সেরই পাণ্ডুলিপির প্রতিটি শব্দের জন্য পারিশ্রমিক ধার্য করা হয়েছিল পনেরো ডলার করে। সর্বকালের সকল লেখকের মধ্যে এটাই ছিল সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

তাঁর লেখকজীবনের সূচনালগ্নে বড়দিনে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল, আর এই বইটিই তাঁর ভাগ্যকে দিয়েছিল ফিরিয়ে। এটি ছিল ক্ষুদ্র একটি বই। কিন্তু যেদিন বইটি প্রকাশিত হয়, সেইদিনই বিক্রি হয়েছিল এক হাজার কপি। তখন থেকেই এই বইটির হয়েছে অজস্র সংস্করণ। পৃথিবীর বহু ভাষায় প্রকাশ হয়েছে এর অনুবাদ। ডিকেন্সের এই বিখ্যাত বইটির নাম হল ‘এ ক্রিসমাস ক্যারল’ (A Christmass carol)

ডিকেন্সের বইয়ের জনপ্রিয়তা প্রায় প্রবাদের মতো। কেবল বাইবেল এবং শেপিয়ারের বইগুলো ছাড়া ইংরেজি সাহিত্যে আর কারও বই-ই এত বেশি সংখ্যায় বিক্রি হয়নি।

এই বিশ্ববরেণ্য লেখক চার্লস ডিকেন্স জীবনে সর্বমোট চার বছরের বেশি স্কুলেই যাননি। অথচ তিনিই পরবর্তীকালে ইংরেজি ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সতেরোটি উপন্যাসের লেখক হয়েছিলেন।

চার্লস ডিকেন্সের পুরো নাম ছিল চার্লস জন হুফাম ডিকেন্স (Charles John Huffam Dickens)। তাঁর জন্ম ১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ জেলার পোর্টসি নামের একটি ছোট্ট শহরে।

তাঁর পিতা জন ডিকেন্স ছিলেন স্থানীয় চাথাম ডকইয়ার্ডে নেভি অফিসের একজন কেরানি, মায়ের নাম ছিল এলিজাবেথ ব্যারো।

তাঁর শৈশবকাল ছিল বেশ সুখেরই। বাবা-মায়ের সাথে থাকতেন চচাথাম ডকইয়ার্ডের কাছে এক বাসাবাড়িতে। এখানকারই এক প্রাইমারি স্কুলে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন।

তারপর ১৮২৩ সালে তাঁর যখন এগারো বছর বয়স, তখনই তাঁদের পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগ—তাঁর বাবার চাকরি চলে যায়। তারপর তাঁরা জীবিকার সন্ধানে চলে আসেন লন্ডনে, সেখান থেকে চামডেন শহরে। কিন্তু কোনোখানেই চাকরির ব্যবস্থা হয় না। তাঁদের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃখ আর দারিদ্র্য।

এক সময়ের স্কুলের সেরা ছাত্র, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বিলাসী কিশোর চার্লসের জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার। এমনকি তাঁর স্কুলের পড়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। চার্লসের বাবাকে দেনার দায়ে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল।

এই অসহায় অবস্থায় তাঁদের দেখাশোনা করার কেউ ছিল না। আয়ের অন্য কোনো উৎসও ছিল না। তাই পেটের দায়ে প্রতদিনই সকালবেলা বাড়ির একটা করে আসবাবপত্র বিক্রি করতে হতো। নইলে খাবারের পয়সা আসবে কোত্থেকে? ঘরের – জিনিসপত্র বেচতে বেচতে শেষে এমন হয়েছিল যে, তাঁর প্রিয় দশটি বই পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছিল মাকে। এই প্রিয় বইগুলো বিক্রি করার সময় ডিকেন্সের মনের কী করুণ অবস্থা হয়েছিল, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি পরবর্তীকালে তাঁর জীবনকথায় লিখেছিলেন, “আমি যখন আমার বইগুলো বিক্রি করতাম, মনে হতো, আমার অন্তরটা বুঝি ভেঙে যাচ্ছে।”

এত করেও কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারলেন না। অবশেষে ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি চার্লসসহ চার সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সাথে জেলে বাস করতে গেলেন। তিনি স্বেচ্ছায় কারাবরণ করলেন।

চার্লস প্রতিদিন সকালে জেলখানায় যেতেন এবং সারাদিন জেলে মা-বাবা- ভাইবোনদের সাথে কাটিয়ে সন্ধেয় ফিরে আসতেন নিজের বাড়িতে। তাঁদের বাড়িতে দোতলায় একটি নোংরা চিলেকোঠা ছিল। ডিকেন্স সেখানেই ঘুমাতেন একা। এর কিছুদিন পর চার্লস একটি রঙের দোকানে চাকরি পেলেন। এটি ছিল চারিং ক্রসের হাংগারফোর্ড স্টেয়ারসে অবস্থিত ওয়ারেন্স ব্ল্যাকিং ফ্যাক্টরি নামের একটি রঙের দোকান। বেতন ছিল সপ্তাহে ছয় শিলিং। তাঁর কাজ ছিল একটি ইঁদুরভর্তি নোংরা গুদামঘরে বসে রঙের বোতলে লেবেল লাগানো। প্রথম উপার্জনের মাত্র কয়েক পেনি দিয়ে চার্লস এক কানাগলির ভৈতরে একটি ছোট্ট খুপরি ভাড়া করেন। তখনকার সামান্য এই ছোট্ট খুপরিটাই ছিল তাঁর জন্য স্বর্গতুল্য। পরবর্তী সময়ে লিখিত ডেভিড কপারফিল্ড উপন্যাসে তাঁর এই নোংরা জীবনেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

কিন্তু এখানেও বেশিদিন চাকরি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই নোংরা পরিবেশ তাঁর কাছেও একসময় অসহ্য হয়ে ওঠে। তিনি বাধ্য হয়ে কারখানার চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে ফিরে এলেন।

মা-বাবার আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও ডিকেন্স নিজেই এসে ভর্তি হলেন স্কুলে। এই সময় থেকেই শুরু হয় তাঁর লেখালেখির কাজ।

তিনি নিজের মনেই গল্প বানিয়ে লিখতে শুরু করেন। তারপর নিজের লেখা গল্পগুলো তিনি কপি করে করে বিতরণ করতেন তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে। আর এমনি করেই তিনি স্কুলের সকলের কাছে লেখক বলে পরিচিতি লাভ করলেন। তিনি হয়ে উঠলেন সকল ছেলের সর্দার।

কিন্তু এবারও তাঁর স্কুলের পড়া শেষ হলো না। কলেজে যাবার আগেই আবার তাঁকে স্কুল ছেড়ে চাকরিতে ঢুকতে হলো। তিনি স্কুল ছেড়ে এক উকিলের কাছে আফিস-বয়ের চাকরি নিলেন, আর সেইসাথে অবসর সময়ে শর্টহ্যান্ড শিখতে লাগলেন।

শর্টহ্যান্ড কোর্স শেষ হওয়ার পরপরই তিনি শুরু করলেন সাংবাদিকতা। সংসদ- বিষয়ক সংবাদদাতা। এই কাজে অল্পদিনের মধ্যেই চমৎকার দক্ষতা দেখাতে লাগলেন তিনি। তিনি একই সাথে আইন-আদালত বিষয়ক রিপোর্টও করতে লাগলেন।

এই রিপোর্টিং-এর কাজে নেমেই বাড়তে লাগল তাঁর অভিজ্ঞতা। আইন সম্পর্কে জ্ঞান, সমাজের বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসারও সুযোগ হলো তাঁর, যে অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর লিখিত উপন্যাসগুলোতে।

তাঁর জীবনের এই যে উঠতি সময়, যে সময়টাকে তিনি পরবর্তীকালে ‘অনভিজ্ঞ, সুখী এবং নিবুদ্ধিতার কাল’ বলে উল্লেখ করেছেন, তখনই তিনি সত্যি সত্যি একটি বোকার মতো কাজ করে ফেলেছিলেন। তিনি মারিয়া বিডনেল নামে এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন। মেয়েটা দেখতে সুন্দরী হলেও স্বভাবচরিত্র ছিল মন্দ, এবং বুদ্ধিশুদ্ধি ছিল মোটা। অথচ এমনই একটি ফালতু মেয়ের সাথে তাঁর চলল গোপন প্রেম। গোপনে চিঠিপত্রাদি লেখা। মেয়েটি চার্লসকে বিয়ে করবে বলে পাকা কথাও দিয়েছিল। ওর বাবা-মাও রাজি ছিলেন। কিন্তু কী কারণে বিয়ের ঠিক আগমুহূর্তে ‘না’ করে বসল মেয়েটি। বিয়ে আর হলো না। এই মারিয়ার চরিত্রটিকেই তিনি পরবর্তী সময়ে তাঁর বিখ্যাত ডেভিড কপারফিল্ড (David Copperfield) উপন্যাসে ডোরা কপারফিল্ড চরিত্র হিসেবে রূপায়িত করেছেন।

তিনি সংসদীয় রিপোর্টারের কাজে ভ্রমণ করতে থাকেন ইংল্যান্ডের বহু দুর্গম ও শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা। সংগৃহীত হতে থাকে প্রচুর রিপোর্ট। এই সংগ্রহগুলোকেই তিনি নাম দেন ‘স্কেচেস অব বজ’ ( Sketches of Boz)। এসব রিপোর্ট তিনি টাইমস পত্রিকায় প্রকাশ করেন ১৮৩৬ সালের ২৬ মার্চ তারিখে। এটাই উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় ‘দি পসটিউম্যাস পেপারস অব দি পিকউইক ক্লাব’ (The Posthumous Papers of the Pickwick Club) নামে।

এটি ছিল আসলে একটি হাস্যরসাত্মক গ্রন্থ। বাস্তব জীবনের ওপর ভিত্তি করে হাস্যরসসমৃদ্ধ এধরনের রচনা এর আগে গোটা ইংরেজি সাহিত্যে আর রচিত হয়নি। বইটি প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ জুড়ে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

পিকউইক ক্লাব প্রকাশিত হবার মাত্র দুদিন পরেই বিয়ে করেন ডিকেন্স। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল ক্যাথেরিন হগার্থ।

ক্যাথেরিনরা ছিলেন তিন বোন। অন্য দু বোনের নাম ছিল জর্জিনা এবং ম্যারি। বিয়ের বছরখানেক পর ডিকেন্স তাঁর এক পুত্রসন্তানসহ স্ত্রী ও ছোট শ্যালিকা ম্যারিকে নিয়ে চলে আসেন ব্লুম্‌বারি শহরের ৬টি স্ট্রিটের এক বাড়িতে।

ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ছোট শ্যালিকা ম্যারির প্রতি ছিল ডিকেন্সের ভালোবাসা। কিন্তু ডিকেন্সের এই প্রেম সফল হয়নি। এখানে আসার কিছুদিনের মধ্যেই ম্যারির আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে খুব দুঃখ পান ডিকেন্স।

পিকউইক ক্লাব-এর সাফল্যের পরপরই বের হয় তাঁর ‘অলিভার টুইস্ট’ (Oliver Twist)। এটি ছিল একটি কারখানার বাস্তব চিত্র। তারপর বের হয় তাঁর ‘নিকোলাস নিকেলবাই’ (Nicholas Nickleby) উপন্যাস। এটি ছিল ইয়র্কশায়ারের একটি স্কুলের অব্যবস্থার কাহিনী।

যত দিন যেতে লাগল ততই জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগল ডিকেন্সের। একদিকে যেমন তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগল, তেমনি বাড়তে লাগল তাঁর আয়, সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল তাঁর সন্তানের সংখ্যাও।

তাঁর এর পরের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল ‘বার্নাবি রুজ’ (Barnaby Rudge) এবং ‘দি ওল্ড কিউরিওসিটি শপ’ (The Old curiosity Shop)। তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হলো ‘মাস্টার হামফ্রিস ক্লক’ (Master Humphrey’s Clock)।

১৮৪১ সালে তিনি আমেরিকায় যান। আমেরিকায় তিনি প্রাণঢালা অভিনন্দন পেলেও সেখানকার খোলামেলা জীবন তাঁর ভালো লাগেনি। তিনি এই ভালো না লাগার কথাটাই প্রকাশ করেছেন তাঁর ‘আমেরিকান নোট্স্’ (American Notes) এবং ‘মার্টিন চুজলউইট্’ (Martin Chuzzlewit) গ্রন্থে। গ্রন্থ দুটি পড়ার পর আমেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে।

কিন্তু আমেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তা কমলেও গোটা ইংল্যান্ড এবং ইউরোপে তাঁর বইয়ের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে।

তাঁর দুটো কিশোরগ্রন্থের নাম যথাক্রমে ‘ডমবি অ্যান্ড সন’ (Dombey and Son) এবং ‘এ ক্রিসমাস ক্যারোল’ (A Christmas Carol)।

১৮৪৮ সালে ডিকেন্স তাঁর অষ্টম সন্তান লাভ করেন এবং একই বছর প্রকাশিত হয় তাঁর সর্বাধিক জনপিয় উপন্যাস ‘ডেভিড কপারফিল্ড ’(David Copperfield)।

১৮৫৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন সাময়িক পত্রিকা ‘হাউসহোল্ড ওয়ার্ডস’ (House- hold words)। এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় তাঁর শিশুতোষ রচনাসমূহ, যেমন, ‘ব্লিক হাউস’ (Bleak House), ‘লিট্ল ডরিট’ (Little Dorrit) এবং ‘হার্ড টাইমস’ (Hard Times)।

১৭৮৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম নাটক ‘দি ফ্রোজেন ডিপ’ ( The Frozen Deep)।

ডিকেন্সের লেখায় ছিল বাস্তব জীবনের আনন্দময় প্রতিচ্ছবি। কিন্তু মজার ব্যাপার, তাঁর নিজের জীবনটাই ছিল চরম ব্যর্থতার এক করুণ ইতিহাস।

তিনি এমন এক স্ত্রীর সাথে বাস করতেন, যাঁকে তিনি আদৌ ভালোবাসতেন না। এই মহিলা তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন দশ-দশটি সন্তান, আর সেই সুবাদে চরম দারিদ্র্য। সাহিত্যখ্যাতিতে সারা বিশ্ব যখন প্রায় তাঁর পায়ের তলায়, তখন তাঁর আপন গৃহ ছিল হতাশা আর দুঃখ-দুর্দশায় পরিপূর্ণ।

নিজের দুরবস্থা সহ্য করতে না পেরে চার্লস করে বসলেন এক অভাবনীয় কাণ্ড। তিনি একদিন পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে বসলেন যে, তিনি আর তাঁর স্ত্রী আলাদা হয়ে গেছেন। সমস্ত দোষটা তিনি চাপালেন স্ত্রীর ওপর।

আসলেও তিনি তাঁর স্ত্রীকে দুচোখে দেখতে পারতেন না। তবে তিনি যখন মারা যান, তখন তাঁর এক শ্যালিকাকে এক মিলিয়ন ডলারের পাঁচ ভাগের এক ভাগ দান করে যান। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে দিয়ে যান মাত্র ৩৫ ডলার।

চার্লস ডিকেন্সের নিজের চেহারা ছিল দারুণ চমৎকার। এ নিয়ে তাঁর অহঙ্কার ও ছিল। তিনি ১৮৪২ সালে প্রথমবারের মতো গিয়েছিলেন আমেরিকায়। তখন তিনি তাঁর উজ্জ্বল লাল রঙের ওয়েস্ট কোট ও হালকা নীল রঙের ওভারকোট গায়ে দিয়ে সকলের চোখে প্ৰায় ধাঁধা লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

চার্লস ডিকেন্স ছিলেন তাঁর সময়কার সবচাইতে সম্মানিত এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যখন তিনি আমেরিকা সফর করতে যান, তখন তাঁকে এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার লোক জমা হয়েছিল। হাড়-কাঁপানো শীতে বক্তৃতা শোনার জন্য ভক্তরা তুষারপাত এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি নিয়েও আগুন জ্বেলে রাস্তার পাশে মাদুর বিছিয়ে বসে থাকতেন।

বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাস বহু বিচিত্র চরিত্রে পরিপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও সব দিক বিচার করলে চার্লস ডিকেন্সই ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিস্ময়কর মানুষ। এই মহান পুরুষের মৃত্যু হয় ১৮৭০ সালে।

সকল অধ্যায়

১. হযরত মুহাম্মদ (দঃ) (৫৭০-৬৩২) – সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী
২. জরথুশত্র (৬২৮-৫৫১ খ্রি. পূ.) – পারশি ধর্মের প্রবর্তক
৩. বর্ধমান মহাবীর (৫৯৯–৫২৭ খ্রি. পূ.) – জৈন দর্শন ও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
৪. গৌতম বুদ্ধ (৫৬৩–৪৮৩ খ্রি. পূ.) – বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক
৫. কনফুসিয়াস (৫৫১–৪৭৯ খ্রি. পূ.) – চীনের প্রাচীনতম ধর্মমতবাদের প্রবর্তক
৬. সক্রেটিস (আনু. ৪৬৯–৩৯৯ খ্রি. পূ.) – দর্শনশাস্ত্রের আদিজনক
৭. প্লেটো (৪২৮–৩৪৭ খ্রি. পূ.) – দর্শনশাস্ত্র যাঁর হাতে পেয়েছিল পূর্নাঙ্গরূপ
৮. ডায়োজিনিস (৪১২–৩২২ খ্রি. পূ.) – একনিষ্ঠ জ্ঞান সাধক
৯. অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রি. পূ.) – যুক্তিশাস্ত্রের জনক
১০. যিশু খ্রিস্ট (আনু. ৬ খ্রি. পূ.–আনু. ২৯ খ্রি.) – খ্রিস্টানধর্মের প্রবর্তক
১১. অতীশ দীপঙ্কর (৯৮২–১০৫৩) – জ্ঞানসাধক বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক
১২. গুরু নানক (১৪৬৯–১৫৩৮) – শিখ ধর্মমতের প্রবর্তক
১৩. মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) – ধর্মের সংস্কারক এবং ‘প্রটেস্টানিজম’ মতবাদের স্রষ্টা
১৪. মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩) – বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক
১৫. রামমোহন রায় (১৭৭২–১৮৩৩) – ভারতবর্ষে নবযুগের প্রবর্তক
১৬. রামকৃষ্ণ পরমহংস (১৮৩৬–১৮৮৬) – ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমি ঈশ্বরকে দর্শন করেছি’
১৭. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২–১৯৭০ ) – যুদ্ধ-বিরোধী ও মানবতাবাদী দার্শনিক
১৮. থ্যালিস (আনু. ৬২৪–৫৬৫ খ্রি. পূ.) – বিজ্ঞানশাস্ত্রের আদিপুরুষ
১৯. পিথাগোরাস (আনু. ৫৮২–৫০৭ খ্রি. পূ.) – তিনি বলেছিলেন—পৃথিবী গোলাকার
২০. হিপোক্র্যাটিস (আনু: ৪৬০–৩৭০ খ্রি. পূ.) – চিকিৎসাশাস্ত্রের আদিজনক
২১. আর্কিমিডিস (২৮৭–২১২ খ্রি. পূ.) – ঊর্ধ্বমুখী বল সূত্রের আবিষ্কারক
২২. ক্লডিয়াস টলেমি (১০০–১৮০ খ্রি.) – জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথম কোষগ্রন্থ প্রণেতা
২৩. ক্লডিয়াস গ্যালেন (১৩১–২০১ খ্রি.) – চিকিৎসাশাস্ত্রের আধুনিক পদ্ধতির আদি জনক
২৪. ইবনে সিনা (৯৮০–১০৩৭) – জ্ঞানসাধনায় কাটিয়েছিলেন সমগ্র জীবন
২৫. কোপারনিকাস (১৪৭৩–১৫৪৩) – আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্ৰবক্তা
২৬. জিওর্দানো ব্রুনো (আনু. ১৫৪৮–১৬০০ ) – সত্যপ্রচারের অপরাধে যাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল
২৭. গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২) – যাঁর গাণিতিক পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি
২৮. লিওয়েন হুক (১৬৩২–১৭৩৩) – মুদি দোকানদার থেকে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী
২৯. আইজাক নিউটন (১৬৪২–১৭২৭) – মাধ্যাকর্ষন শক্তির আবিষ্কারক
৩০. রিচার্ড আর্করাইট (১৭৩২–১৭৯২) – আধুনিক বস্ত্রশিল্পে বৈপ্লবিক ধারা প্রবর্তক
৩১. উইলিয়াম হার্শেল (১৭৩৮–১৮২২) – ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কারক
৩২. লরেঁ লাভোয়সিয়ের (১৭৪৩–১৭৯৪) – রসায়নশাস্ত্রের জনক
৩৩. মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) – তাড়িত-চুম্বক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা
৩৪. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) – প্রাণিজগতের বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যাদাতা
৩৫. লুই পাস্তুর (১৮২২–১৮৯৫) – জীবাণু আর জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধকের আবিষ্কারক
৩৬. আলফ্রেড নোবেল (১৮৩৩–১৮৯৬) – যাঁর নামে দেয়া হয় নোবেল পুরস্কার
৩৭. আলভা এডিসন (১৮৪৭–১৯৩১) – সর্বাধিক আবিষ্কারের জনক
৩৮. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৯–১৯৩৭) – যিনি বলেছিলেন গাছেরও প্রাণ আছে
৩৯. মাদাম কুরি (১৮৬৭–১৯৩৪) – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা বিজ্ঞানী
৪০. মার্কোনি (১৮৭৪–১৯৩৭) – বেতারযন্ত্রের আবিষ্কারক
৪১. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯–১৯৫৫) – আপেক্ষিক তত্ত্বের জনক
৪২. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১–১৯৫৫) – পেনিসিলিনের আবিষ্কারক
৪৩. হোমার (আনু. ৭০০-? খ্রি. পূ.) – বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দুটি মহাকাব্যের রচয়িতা
৪৪. ঈশপ (আ. কা. ৬২০–৫৬০ খ্রি. পূ.) – কালজয়ী নীতিগল্পকার
৪৫. সোফোক্লেস (আনু. ৪৯৫-৪০৬ খ্রি. পূ.) – গ্রিক ট্র্যাজেডি নাট্যধারার রূপকার
৪৬. হেরোডোটাস (আনু. ৪৮৫–৪২৫ খ্রি. পূ.) – ইতিহাসশাস্ত্রের জনক
৪৭. অ্যারিস্টোফানিস (আনু. ৪৪৪–৩৮৫ খ্রি. পূ.) – যাঁর সাহিত্যকর্মে আর্তমানবতার কথা প্রতিফলিত
৪৮. মহাকবি কালিদাস (আনু. ৫৭০-৬৫০ খ্রি.) – সংস্কৃতি সাহিত্যের অমর কবি
৪৯. লেওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২–১৫১৯) – সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী
৫০. মিকেলাঞ্জেলো (১৪৭৫–১৫৬৪) – পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাস্কর শিল্পী
৫১. তানসেন (১৫০৬–১৫৮৫) – কিংবদন্তির গায়ক
৫২. শেকসপিয়ার (১৫৬৪-১৬১৬) – বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী নাট্যকার
৫৩. ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) – বিখ্যাত ফরাসি চিন্তাবিদ
৫৪. জঁ-জাক্ রুসো (১৭১২–১৭৭৮) – ফরাসি বিপ্লবের রূপকার
৫৫. লর্ড বায়রন (১৭৮৮–১৮২৪) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি
৫৬. ভিক্টর হুগো (১৮০২-১৮৮৫) – ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল
৫৭. ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন (১৮০৫–১৮৭৫) – যাঁকে বলা হয় রূপকথার জাদুকর
৫৮. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২–১৮৭০) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল
৫৯. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২) – মার্কিন সাহিত্যের যুগ-প্রবর্তক কবি
৬০. লিয়েফ তলস্তোয় (১৮২৮–১৯১০) – বিশ্বের মহান সাহিত্যিকদের অন্যতম
৬১. জুল ভের্ন (১৮২৮–১৯০৫) – কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর স্রষ্টা
৬২. মার্ক টোয়েন (১৮৩৫–১৯১০) – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রসস্রষ্টা
৬৩. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৫৬–১৯৫০) – যিনি প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) – শ্রেষ্ঠ বাঙালি মনীষা, পৃথিবীর মহত্তম সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব
৬৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮–১৯৩৬) – যাঁর সাহিত্যকর্মের প্রধান উপজীব্য গণমানুষের কথা
৬৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮) – যাঁর খ্যাতিকে নেপোলিয়নের সঙ্গে তুলনা করা হতো
৬৭. আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৮–১৯৬১) – জীবনবাদী মার্কিন কথাসাহিত্যিক
৬৮. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯–১৯৭৬) – বাংলার বিদ্রোহী কবি
৬৯. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২–১৭৯৯) – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট
৭০. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) – ইতিহাসের কিংবদন্তির মহানায়ক
৭১. জুসেপ্পে গারিবলদি (১৮০৭–১৮৮২) – ইতালির জনক বলে যাঁর খ্যাতি
৭২. আব্রাহাম লিংকন (১৮০৯-১৮৬৫) – যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্রীতদাসপ্রথা রহিত করেছিলেন
৭৩. অটো ফন বিসমার্ক (১৮১৫–১৮৯৮) – জার্মান সাম্রাজ্যের স্থপতি
৭৪. মহাত্মা গান্ধি (১৮৬৯–১৯৪৮) – ‘সবকো সুমতি দে ভগবান’
৭৫. কমরেড লেনিন (১৮৭০–১৯২৪) – বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা
৭৬. উইনস্টন চার্চিল (১৮৭৪–১৯৬৫) – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ডাকসাইটে প্রধানমন্ত্রী
৭৭. জোসেফ স্ট্যালিন (১৮৭৯–১৯৫৩) – সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়েনের ‘লৌহমানব’
৭৮. কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১–১৯৩৮) – নব্য-তুরস্কের জনক
৭৯. ডি ভ্যালেরা (১৮৮২-১৯৭৫) – আয়ারল্যান্ডের প্রথম প্রেসিডেন্ট
৮০. জওহরলাল নেহরু (১৮৮৯-১৯৬৪) – ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
৮১. আইসেনহাওয়ার (১৮৯০-১৯৬৯) – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
৮২. শার্ল দ্য গল (১৮৯০-১৯৭০) – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা
৮৩. হো-চি-মিন (১৮৯০-১৯৬৯) – ভিয়েতনামের মুক্তিদাতা পুরুষ
৮৪. মার্শাল টিটো (১৮৯২–১৯৮০) – জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা
৮৫. মাও-সে-তুং (১৮৯৫–১৯৭৬) – চীন সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা
৮৬. সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭–১৯৪৫) – ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’
৮৭. জন এফ কেনেডি (১৯১৭–১৯৬৩) – গুপ্তঘাতকের হাতে যাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছিল
৮৮. ইন্দিরা গান্ধি (১৯১৭–১৯৮৪) – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
৮৯. নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮) – দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিদাতা পুরুষ
৯০. শেখ মুজিবর রহমান (১৯২০–১৯৭৫) – বাংলাদেশের জাতির জনক
৯১. প্যাট্রিস লুমুম্বা (১৯২৫-১৯৬১) – কঙ্গোর মুক্তিদাতা পুরুষ
৯২. মার্কো পোলো (১২৫৬–১৩২৩) – দুঃসাহসিক অভিযাত্রী
৯৩. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (আনু. ১৪৪৬-১৫০৬) – আমেরিকার আবিষ্কারক
৯৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩) – আফ্রিকার আবিষ্কারক
৯৫. উইলিয়াম জোন্স (১৭৪৬–১৭৯৪) – এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
৯৬. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০–১৯১০) – আধুনিক ‘নার্সিং’ বৃত্তির অগ্রপথিক
৯৭. হেনরি ডুনান্ট (১৮২৮–১৯১০) – রেডক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
৯৮. ব্যাডেন পাওয়েল (১৮৫৭–১৯৪১) – বয়স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা
৯৯. মাদার তেরেসা (১৯১০–১৯৯৭) – প্রেম, করুণা ও ধর্মের মূর্ত প্রতিমা
১০০. অ্যাডাম স্মিথ (১৭২৩–১৭৯০) – রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিজ্ঞানের জনক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন