পিথাগোরাস (আনু. ৫৮২–৫০৭ খ্রি. পূ.) – তিনি বলেছিলেন—পৃথিবী গোলাকার

ভবেশ রায়

আদি যুগের কথা। তখন জ্ঞান এবং বিজ্ঞান কোনোটাই বেশি অগ্রসর হয়নি। মানুষের জানার পরিধি ছিল খুবই কম। মানুষ তখন বিশ্বাস করত, আমাদের পৃথিবী বুঝি সমতল। খালি চোখে অবশ্য সমতল বলেই মনে হয়। সাধারণ চোখে দেখেই তারা মনে করত, তাদের এই চোখে দেখার মতোই হয়তো সমতল এই পৃথিবী।

কিন্তু পৃথিবীর মানুষের মধ্যে যিনি প্রথম এর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, না, পৃথিবী সমতল নয়, গোলাকার। আমরা এর সবটা একসাথে খালিচোখে দেখতে পাই না বলেই একে সমতল বলে মনে হয়। এই প্রতিবাদকারী ব্যক্তিই ছিলেন প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ। আদি বিজ্ঞানী থ্যালিসের পরই করতে হয় তাঁর নাম। তিনি আর কেউ নন পিথাগোরাস (Pythagoras)।

তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন গ্রিসের সামোস দ্বীপে। তাঁর বাল্যশিক্ষা হয় স্থানীয় এক পণ্ডিতের কাছে। তারপর যুবক বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য যান মিশর ও ব্যাবিলনে। সেখানেই তিনি অঙ্কশাস্ত্রের ওপর বিস্তর পড়াশোনা করেন।

শিক্ষাশেষে আবার ফিরে আসেন নিজের জন্মভূমি সামোস দ্বীপে।

দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি একসময় রাজনীতির সাথেও জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের সামোস দ্বীপ ছিল পোলিক্র্যাটস রাজার অধীনে। তিনি ছিলেন অত্যাচারী। তার অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই তিনি রাজার কুনজরে পড়ে যান। ফলে তাঁকে ছাড়তে হয় জন্মভূমি। রাজার কোপদৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য সামোস থেকে পালিয়ে যান দক্ষিণ ইতালির ক্রোটন শহরে। এখানেই তিনি বসবাস করেন ৫৩০ থেকে ৫২০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত।

এখানে এসেই তিনি স্থাপন করেন একটি বিদ্যালয়। তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে শুরু করেন একই সাথে অঙ্কশাস্ত্রের অধ্যয়ন ও পাঠদানের কাজ।

তাঁর স্কুলে শুধু অঙ্কশাস্ত্র নয়, পাশপাশি ধর্মশাস্ত্র, দর্শন এবং রাজনীতি বিষয়েও পাঠদান এবং আলোচনা করাহত। অল্পকালের মধ্যেই তাঁর স্কুল থেকে প্রচারিত রাজনৈতিক দর্শন অভিজাত মহলে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

তিনি রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে, রাজনীতিতে কেবল একচেটিয়া অধিকার থাকবে হল সমাজের অভিজাত শ্রেণীর। এতে সমাজের সাধারণ মানুষ অংশ নিতে পারবে না। কারণ, দেশের শাসনক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হবে অভিজাত শ্রেণীর লোকদের দ্বারা। ফলে স্বাভাবিক কারণেই দেশের অভিজাত মহল তাঁর আদর্শকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন। প্রায় দু দশক কাল পর্যন্ত পিথাগোরাস অঙ্কশাস্ত্রের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শও প্রচার করেন।

কিন্তু একসময় তাঁর এই রাজনৈতিক আদর্শের বিরুদ্ধেই সৃষ্টি হয় প্ৰতিবাদ আন্দোলন। ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাঁর স্থাপিত বিদ্যালয়ে হামলা চালায় দেশের গণতন্ত্রমনা সাধারণ মানুষেরা। তাঁর বিদ্যালয়টিকে তছনছ করে দেওয়া হয়। এই সংঘর্ষে পিথাগোরাসের কয়েকজন অনুসারী মারা পর্যন্ত যান।

এই অসস্থায় পিথাগোরাস নিজেও তাঁর স্কুল ছেড়ে পালিয়ে চলে যান মেটাপন্টাম নামের এক শহরে। তিনি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের পদ থেকেও অবসর গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি আরও বিশ বছর জীবিত ছিলেন। এই অবসর সময়টা তিনি একান্তই নিভৃতে বসে কাটিয়েছেন কেবল অঙ্কশাস্ত্রের ওপর গবেষণা করে।

তারপর এই মেটাপন্টাম শহরেই তিনি ৫০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

পিথাগোরাসের শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল বিচিত্র ধরনের। তিনি এ জন্য ব্যবহার করতেন একটি বিশেষ পদ্ধতি। এর নাম ছিল অ্যাকৌসমাতা, যার অর্থ ‘শ্রবণযোগ্য বিষয়াদি’।

শ্রবণযোগ্য বিষয় ছিল কতগুলো সংকেতমাত্র। এই সংকেত যারা শ্রবণ করত তাদের বলা হতো অ্যাকৌসমাতিকোই অর্থাৎ শ্রবণকারী। সহজ কথায় এরা হলো ছাত্র।

গুরু বা শিক্ষকের ওষ্ঠাধর থেকে যে সংকেত নির্গত হবে, শিক্ষার্থীরা তা-ই শ্রবণ এবং হৃদয় দিয়ে তা অনুভব করবে।

এজন্য চাই শ্রেণীকক্ষে নিরবছিন্ন নীরবতা। শিক্ষার্থীরা কোনো রকম প্রশ্ন করতে পারবে না। শুধু শিক্ষকের কথা শুনে যাবে এবং বোঝার চেষ্টা করবে। এখানে কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো বিতর্ক নেই।

এমনি করে ছাত্রদের জ্ঞানার্জনের পথে অগ্রসর হবার প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এই প্রশিক্ষণে যে ছাত্র সাফল্য লাভ করত, সে ম্যাথেম্যাটিকোই কোর্স পাস করেছে বলে ধরে নেওয়া হতো।

এই কোর্সে পাস করার পরই কেবল একজন ছাত্র ক্লাসে শিক্ষকের কাছে প্রশ্ন করার যোগ্যতা অর্জন করত এবং তাঁর সাথে বিতর্কেও অবতীর্ণ হতে পারত।

আধুনিক পণ্ডিতরা মনে করেন, পিথাগোরাসের এই শিক্ষাপদ্ধতি ছিল অচল এবং অর্থহীন। কারণ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি প্রশ্নের আদান-প্রদান করার সুযোগ না থাকে, তাহলে সেখানে কখনওই শিক্ষার পূর্ণতা আসে না। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে হয়তো কথাটি সত্যি। কিন্তু পিথাগোরাস তাঁর এই শিক্ষাপদ্ধতির প্রবর্তন করেছিলেন প্রাচ্যের ধর্মীয় শিক্ষার আদর্শ, পবিত্রতা এবং শৃঙ্খলাবোধকে অনুসরণ করে।

প্রাচ্যের জৈন ও বৌদ্ধধর্মের শিক্ষাপদ্ধতিও ঠিক এ-রকমেরই। এখানে শিষ্যরা কেবল গুরুবাক্য শ্রবণ করবে এবং তা অনুভব করবে। গুরুর সাথে বিতর্কে যাবে না, যতক্ষণ না তার শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে পরিপক্বতা আসে। এতে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধাবোধ অটুট থাকে ও শিক্ষকের আভিজাত্য বৃদ্ধি পায়। আধুনিক কালের অঙ্কশাস্ত্র। শব্দটিরও আদি সৃস্টিকর্তা পিথাগোরাস। তাঁর বিদ্যালয়ে ব্যবহৃত ম্যাথেম্যাটিকোই শব্দ থেকেই আধুনিক ম্যাথেম্যাটিক্স্ শব্দটির উৎপত্তি।

তবে তখনকার সময়ে ম্যাথেম্যাটিক্স্ বলতে কেবল অঙ্কশাস্ত্রকেই বোঝানো হতো না। তখন ম্যাথিম্যাটিক্স্ শব্দের অর্থ ছিল উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ জ্ঞান। এই অর্থ পরে পরিবর্তিত হতে হতে অঙ্কশাস্ত্রে এসে দাঁড়িয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে থাকেন। এই বিশ্বাস পিথাগোরাসেরও ছিল। তিনিও বিশ্বাস করতেন, মানুষের আত্মা অমর, আত্মার কোনো মৃত্যু নেই। আত্মা এক দেহ ছেড়ে অন্য দেহে প্রবেশ করে। তার বারবার হয় নবজন্ম। অবশ্য, তাঁর এই বিশ্বাস ও দর্শনের পক্ষে তিনি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

তিনি তাঁর নিজের জন্মান্তর গ্রহণ সম্পর্কেও বলে গেছেন বেশিকিছু মজার কথা। তিনি বলতেন, স্বর্গের দেবতা পোসিডনের আশীর্বাদ লাভ করেছেন তিনি। এই আশীর্বাদের বলেই তিনি তাঁর পূর্বজন্মের কথাও বলতে পারেন।

পূর্বজন্মে তিনি পোসিডনের পুত্ররূপে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন তাঁর নাম ছিল ইউফরবস। তিনি ট্রয়ের যুদ্ধে অংশ নিয়ে আহতও হয়েছিলেন।

এর পরের বার তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এক জেলের ঘরে। তারপর সাত শো বছর ছিলেন স্বর্গবাসী। এবার তিনি পৃথিবীতে এসেছেন অ্যাপোলোদেবের পুত্ররূপে।

তিনি বলতেন, মানুষ যদি এই জীবনে সৎকর্ম ও সৎজীবন-যাপন করে, তবে তার জন্মও উন্নত হবে। আর খারাপ কাজ করলে তাকে নিকৃষ্ট প্রাণী হয়ে জন্মাতে হবে।

পিথাগোরাসকেই বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মদাতা। জ্যামিতিক সূত্রের আবিষ্কার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর সব থেকে বড় অবদান। তাঁর মৃত্যুর দুশো বছর পর অ্যারিস্টটল নিজেও একথা স্বীকার করে গেছেন।

পিথাগোরাসের জ্যামিতিক আবিষ্কারগুলো কী ছিল, তার কিছুটা নমুনা দেওয়া যেতে পারে।

আজ আমরা জ্যামিতি বইতে পড়ছি—একটি সমকোনী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র অপর দুটো বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের চেয়ে বড় হবে। আজ এই সূত্রটিকে সহজ বলে মনে হলে কী হবে, সেই আড়াই হাজার বছর আগে বিজ্ঞানের আদি যুগে এই সূত্রে আবিষ্কার কম বড় কৃতিত্বের কথা ছিল না।

তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে, পৃথিবী গোলাকার। তিনি কেমন করে জানলেন পৃথিবী গেলাকার, তার অবশ্য কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি যা বলেছিলেন, তার সবই ছিল অনুমাননির্ভর।

পিথাগোরাসের সময় বিশ্বজগৎ সম্পর্কে একটি সর্বজনস্বীকৃত ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল। সে সময় মনে করা হতো, পৃথিবী এই বিশ্বজগতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে। আর বিশ্বের যাবতীয় গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।

পিথাগোরাসও তাই বিশ্বাস করতেন। তাঁর ধারণা ছিল, গোলক বা বৃত্ত হলো সবচেয়ে চমৎকার জিনিস এবং গ্রহ সর্বোত্তম জ্যামিতিক আকারবিশিষ্ট। আর পৃথিবী যদি মহাবিশ্বের কেন্দ্র হয় এবং নক্ষত্র ও সূর্য যদি পৃথিবীকে বৃত্তাকার পথেই প্রদক্ষিণ করে, তবে নিশ্চয়ই পৃথিবীর আকারও গোলাকার। এটা ছিল পিথাগোরাসের অনুমাননির্ভর ধারণা বা বিশ্বাস।

তখনকার সব পণ্ডিত এবং বিজ্ঞানী তাঁর এই অনুমানকে সত্য বলে মেনেও নিয়েছিলেন। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন, সংখ্যাই হলো বিশ্বজগতের আদি উপাদান।

একটি মজার ব্যাপার হলো, পিথাগোরাসের প্রায় সবগুলো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই ছিল রহস্যময়তায় ঘেরা। তিনি যা বলতেন, তা যুক্তি দিয়েই বলতেন। কিন্তু সেইসব মৌখিক যুক্তির কোনো বাস্তব ও বিজ্ঞানভিক্তিক প্রমাণ হাজির করতে পারতেন না। আর তাঁর এই অস্পষ্টতার জন্য সেইকালে এবং আজও তিনি মিস্টিক বা অতীন্দ্রিয়বাদী বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত।

সংখ্যা কেমন করে পদার্থরূপে ব্যক্ত হতে পারে তা কারও বোধগম্য হবার কথা নয়। কিন্তু তিনি সেটা বলে গেছেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সহকারে ব্যাখ্যাও করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানে এটা প্রতিভাত হয়েছে এক নতুন তাৎপর্য নিয়ে। বিশ্বজগতের স্বরূপ বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে সংখ্যা সত্যিকারভাবেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বস্তুজগৎ সম্পর্কে কোনো রাশির পরিমাণ বের করতে গেলেই সংখ্যা দিয়ে তা নির্ণয় করতে হয়।

যেমন, আধুনিক বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বলেছেন, “তুমি যার কথা বলছ, সেটা যখন তুমি মাপতে এবং সংখ্যায় প্রকাশ করতে পার, তখন তার সম্পর্কে তুমি কিছুটা হলেও জেনেছ বলা যায়। কিন্তু যখন তাকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবে না, তখন তোমার সে-জ্ঞান নতুন, নগণ্য এবং অসন্তোষজনক বলে মনে হবে।”

আধুনিক বিজ্ঞানীরা বিশ্বজগতের সমস্ত ঘটনার অন্তরালে যেসব নিয়মের সন্ধান পেয়েছেন, সেগুলোও তাঁরা গাণিতিক আকারে প্রকাশ করেছেন। এসব সংখ্যার সমাবেশ মাত্র। যেমন, শূন্যস্থানের ভেতর দিয়ে তরঙ্গের আকারে আলোর ও বিদ্যুতের সঞ্চালন, উষ্ণ পদার্থ থেকে ইলেকট্রনের নিঃসরণ ইত্যাদি ঘটনার তাৎপর্য ব্যাখ্যার জন্য সূক্ষ্ম গাণিতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। আধুনিককালের আরেক বিজ্ঞানী জেমস জিনস বলেছেন, বিশ্বের গঠন দেখে মনে হয় বিশ্ববিধাতা নিশ্চয়ই একজন মস্ত বড় অঙ্কশাস্ত্রবিদ।

পিথাগোরাস বলতেন, সংখ্যাই হলো বিশ্বজগতের প্রকৃত ভাষা। শুধু সংখ্যা দিয়েই বিশ্বজগতের সমস্ত কিছুকে প্রকাশ করা যায়। তিনি দেখিয়েছেন, একটি বিন্দু (.) হলো একটি নির্দিষ্ট স্থান। আবার দুটো বিন্দুকে যোগ করলে হয় সরল রেখা। তিনটি বিন্দুকে যোগ করলে হয় একটি ত্রিকোণ ক্ষেত্র বা ত্রিভুজ। চারটি বিন্দুকে যোগ করলে হয় চতুর্ভুজ বা বর্গক্ষেত্র।

এই সংখ্যা দিয়ে আরও জিনিসকে বোঝানো যায়, অর্থাৎ মানুষের মাথা হল একটি (১), চোখ দুটি (২), আঙুলের জোড়া তিনটি (৩), প্রত্যঙ্গ ৪টি (দুটো হাত, দুটো পা), প্রতি হাতে-পায়ে আছে পাঁচ সংখ্যা (পাঁচটি করে আঙুল) ইত্যাদি। এভাবে তিনি সংখ্যা দিয়ে মানুষের দেহকে বিশ্লেষণ করেছেন।

তিনি সংখ্যার পিরামিড তৈরির কৌশলও দেখিয়েছেন। যেমন ৪ ( = ৩ + ১), ১০ ( = ৬ + ৩ + ১), ২০ ( = ১০ + ৬ + ৩ + ১) ইত্যাদি। তিনি তাঁর সংখ্যা-পিরামিডের আরও নমুনা দিয়েছেন। যেমন, ১, ৩, ৬ ও ১০ সংখ্যার পিড়ামিড। তার চিত্ররূপটা হলো

এ-রকমের :

পিড়ামিড

তিনি এধরনের সংখ্যা নিয়ে আরও বহু ধরনের মজার কাণ্ড করে দেখিয়েছেন। কে জানে পিথাগোরাসের কাছেও বিশ্বরহস্য এমনি করেই ধরা পড়েছিল কি না! এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয় ৫০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। আজও বিজ্ঞানের জগতে তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্রবিশেষ।

পিথাগোরাসের মহান দুটি রচনাকর্মের নাম যথাক্রমে ‘আলমাগেস্ট’’ (Almagest) ও ‘জিওগ্রাফিক্যাল আউটলাইন’ (Geographical Outline)।

সকল অধ্যায়

১. হযরত মুহাম্মদ (দঃ) (৫৭০-৬৩২) – সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী
২. জরথুশত্র (৬২৮-৫৫১ খ্রি. পূ.) – পারশি ধর্মের প্রবর্তক
৩. বর্ধমান মহাবীর (৫৯৯–৫২৭ খ্রি. পূ.) – জৈন দর্শন ও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
৪. গৌতম বুদ্ধ (৫৬৩–৪৮৩ খ্রি. পূ.) – বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক
৫. কনফুসিয়াস (৫৫১–৪৭৯ খ্রি. পূ.) – চীনের প্রাচীনতম ধর্মমতবাদের প্রবর্তক
৬. সক্রেটিস (আনু. ৪৬৯–৩৯৯ খ্রি. পূ.) – দর্শনশাস্ত্রের আদিজনক
৭. প্লেটো (৪২৮–৩৪৭ খ্রি. পূ.) – দর্শনশাস্ত্র যাঁর হাতে পেয়েছিল পূর্নাঙ্গরূপ
৮. ডায়োজিনিস (৪১২–৩২২ খ্রি. পূ.) – একনিষ্ঠ জ্ঞান সাধক
৯. অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রি. পূ.) – যুক্তিশাস্ত্রের জনক
১০. যিশু খ্রিস্ট (আনু. ৬ খ্রি. পূ.–আনু. ২৯ খ্রি.) – খ্রিস্টানধর্মের প্রবর্তক
১১. অতীশ দীপঙ্কর (৯৮২–১০৫৩) – জ্ঞানসাধক বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক
১২. গুরু নানক (১৪৬৯–১৫৩৮) – শিখ ধর্মমতের প্রবর্তক
১৩. মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) – ধর্মের সংস্কারক এবং ‘প্রটেস্টানিজম’ মতবাদের স্রষ্টা
১৪. মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩) – বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক
১৫. রামমোহন রায় (১৭৭২–১৮৩৩) – ভারতবর্ষে নবযুগের প্রবর্তক
১৬. রামকৃষ্ণ পরমহংস (১৮৩৬–১৮৮৬) – ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমি ঈশ্বরকে দর্শন করেছি’
১৭. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২–১৯৭০ ) – যুদ্ধ-বিরোধী ও মানবতাবাদী দার্শনিক
১৮. থ্যালিস (আনু. ৬২৪–৫৬৫ খ্রি. পূ.) – বিজ্ঞানশাস্ত্রের আদিপুরুষ
১৯. পিথাগোরাস (আনু. ৫৮২–৫০৭ খ্রি. পূ.) – তিনি বলেছিলেন—পৃথিবী গোলাকার
২০. হিপোক্র্যাটিস (আনু: ৪৬০–৩৭০ খ্রি. পূ.) – চিকিৎসাশাস্ত্রের আদিজনক
২১. আর্কিমিডিস (২৮৭–২১২ খ্রি. পূ.) – ঊর্ধ্বমুখী বল সূত্রের আবিষ্কারক
২২. ক্লডিয়াস টলেমি (১০০–১৮০ খ্রি.) – জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথম কোষগ্রন্থ প্রণেতা
২৩. ক্লডিয়াস গ্যালেন (১৩১–২০১ খ্রি.) – চিকিৎসাশাস্ত্রের আধুনিক পদ্ধতির আদি জনক
২৪. ইবনে সিনা (৯৮০–১০৩৭) – জ্ঞানসাধনায় কাটিয়েছিলেন সমগ্র জীবন
২৫. কোপারনিকাস (১৪৭৩–১৫৪৩) – আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্ৰবক্তা
২৬. জিওর্দানো ব্রুনো (আনু. ১৫৪৮–১৬০০ ) – সত্যপ্রচারের অপরাধে যাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল
২৭. গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২) – যাঁর গাণিতিক পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি
২৮. লিওয়েন হুক (১৬৩২–১৭৩৩) – মুদি দোকানদার থেকে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী
২৯. আইজাক নিউটন (১৬৪২–১৭২৭) – মাধ্যাকর্ষন শক্তির আবিষ্কারক
৩০. রিচার্ড আর্করাইট (১৭৩২–১৭৯২) – আধুনিক বস্ত্রশিল্পে বৈপ্লবিক ধারা প্রবর্তক
৩১. উইলিয়াম হার্শেল (১৭৩৮–১৮২২) – ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কারক
৩২. লরেঁ লাভোয়সিয়ের (১৭৪৩–১৭৯৪) – রসায়নশাস্ত্রের জনক
৩৩. মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) – তাড়িত-চুম্বক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা
৩৪. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) – প্রাণিজগতের বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যাদাতা
৩৫. লুই পাস্তুর (১৮২২–১৮৯৫) – জীবাণু আর জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধকের আবিষ্কারক
৩৬. আলফ্রেড নোবেল (১৮৩৩–১৮৯৬) – যাঁর নামে দেয়া হয় নোবেল পুরস্কার
৩৭. আলভা এডিসন (১৮৪৭–১৯৩১) – সর্বাধিক আবিষ্কারের জনক
৩৮. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৯–১৯৩৭) – যিনি বলেছিলেন গাছেরও প্রাণ আছে
৩৯. মাদাম কুরি (১৮৬৭–১৯৩৪) – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা বিজ্ঞানী
৪০. মার্কোনি (১৮৭৪–১৯৩৭) – বেতারযন্ত্রের আবিষ্কারক
৪১. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯–১৯৫৫) – আপেক্ষিক তত্ত্বের জনক
৪২. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১–১৯৫৫) – পেনিসিলিনের আবিষ্কারক
৪৩. হোমার (আনু. ৭০০-? খ্রি. পূ.) – বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দুটি মহাকাব্যের রচয়িতা
৪৪. ঈশপ (আ. কা. ৬২০–৫৬০ খ্রি. পূ.) – কালজয়ী নীতিগল্পকার
৪৫. সোফোক্লেস (আনু. ৪৯৫-৪০৬ খ্রি. পূ.) – গ্রিক ট্র্যাজেডি নাট্যধারার রূপকার
৪৬. হেরোডোটাস (আনু. ৪৮৫–৪২৫ খ্রি. পূ.) – ইতিহাসশাস্ত্রের জনক
৪৭. অ্যারিস্টোফানিস (আনু. ৪৪৪–৩৮৫ খ্রি. পূ.) – যাঁর সাহিত্যকর্মে আর্তমানবতার কথা প্রতিফলিত
৪৮. মহাকবি কালিদাস (আনু. ৫৭০-৬৫০ খ্রি.) – সংস্কৃতি সাহিত্যের অমর কবি
৪৯. লেওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২–১৫১৯) – সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী
৫০. মিকেলাঞ্জেলো (১৪৭৫–১৫৬৪) – পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাস্কর শিল্পী
৫১. তানসেন (১৫০৬–১৫৮৫) – কিংবদন্তির গায়ক
৫২. শেকসপিয়ার (১৫৬৪-১৬১৬) – বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী নাট্যকার
৫৩. ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) – বিখ্যাত ফরাসি চিন্তাবিদ
৫৪. জঁ-জাক্ রুসো (১৭১২–১৭৭৮) – ফরাসি বিপ্লবের রূপকার
৫৫. লর্ড বায়রন (১৭৮৮–১৮২৪) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি
৫৬. ভিক্টর হুগো (১৮০২-১৮৮৫) – ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল
৫৭. ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন (১৮০৫–১৮৭৫) – যাঁকে বলা হয় রূপকথার জাদুকর
৫৮. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২–১৮৭০) – ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল
৫৯. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২) – মার্কিন সাহিত্যের যুগ-প্রবর্তক কবি
৬০. লিয়েফ তলস্তোয় (১৮২৮–১৯১০) – বিশ্বের মহান সাহিত্যিকদের অন্যতম
৬১. জুল ভের্ন (১৮২৮–১৯০৫) – কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর স্রষ্টা
৬২. মার্ক টোয়েন (১৮৩৫–১৯১০) – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রসস্রষ্টা
৬৩. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৫৬–১৯৫০) – যিনি প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) – শ্রেষ্ঠ বাঙালি মনীষা, পৃথিবীর মহত্তম সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব
৬৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮–১৯৩৬) – যাঁর সাহিত্যকর্মের প্রধান উপজীব্য গণমানুষের কথা
৬৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮) – যাঁর খ্যাতিকে নেপোলিয়নের সঙ্গে তুলনা করা হতো
৬৭. আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৮–১৯৬১) – জীবনবাদী মার্কিন কথাসাহিত্যিক
৬৮. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯–১৯৭৬) – বাংলার বিদ্রোহী কবি
৬৯. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২–১৭৯৯) – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট
৭০. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) – ইতিহাসের কিংবদন্তির মহানায়ক
৭১. জুসেপ্পে গারিবলদি (১৮০৭–১৮৮২) – ইতালির জনক বলে যাঁর খ্যাতি
৭২. আব্রাহাম লিংকন (১৮০৯-১৮৬৫) – যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্রীতদাসপ্রথা রহিত করেছিলেন
৭৩. অটো ফন বিসমার্ক (১৮১৫–১৮৯৮) – জার্মান সাম্রাজ্যের স্থপতি
৭৪. মহাত্মা গান্ধি (১৮৬৯–১৯৪৮) – ‘সবকো সুমতি দে ভগবান’
৭৫. কমরেড লেনিন (১৮৭০–১৯২৪) – বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা
৭৬. উইনস্টন চার্চিল (১৮৭৪–১৯৬৫) – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ডাকসাইটে প্রধানমন্ত্রী
৭৭. জোসেফ স্ট্যালিন (১৮৭৯–১৯৫৩) – সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়েনের ‘লৌহমানব’
৭৮. কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১–১৯৩৮) – নব্য-তুরস্কের জনক
৭৯. ডি ভ্যালেরা (১৮৮২-১৯৭৫) – আয়ারল্যান্ডের প্রথম প্রেসিডেন্ট
৮০. জওহরলাল নেহরু (১৮৮৯-১৯৬৪) – ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
৮১. আইসেনহাওয়ার (১৮৯০-১৯৬৯) – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
৮২. শার্ল দ্য গল (১৮৯০-১৯৭০) – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা
৮৩. হো-চি-মিন (১৮৯০-১৯৬৯) – ভিয়েতনামের মুক্তিদাতা পুরুষ
৮৪. মার্শাল টিটো (১৮৯২–১৯৮০) – জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা
৮৫. মাও-সে-তুং (১৮৯৫–১৯৭৬) – চীন সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা
৮৬. সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭–১৯৪৫) – ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’
৮৭. জন এফ কেনেডি (১৯১৭–১৯৬৩) – গুপ্তঘাতকের হাতে যাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছিল
৮৮. ইন্দিরা গান্ধি (১৯১৭–১৯৮৪) – বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
৮৯. নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮) – দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিদাতা পুরুষ
৯০. শেখ মুজিবর রহমান (১৯২০–১৯৭৫) – বাংলাদেশের জাতির জনক
৯১. প্যাট্রিস লুমুম্বা (১৯২৫-১৯৬১) – কঙ্গোর মুক্তিদাতা পুরুষ
৯২. মার্কো পোলো (১২৫৬–১৩২৩) – দুঃসাহসিক অভিযাত্রী
৯৩. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (আনু. ১৪৪৬-১৫০৬) – আমেরিকার আবিষ্কারক
৯৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩) – আফ্রিকার আবিষ্কারক
৯৫. উইলিয়াম জোন্স (১৭৪৬–১৭৯৪) – এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
৯৬. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০–১৯১০) – আধুনিক ‘নার্সিং’ বৃত্তির অগ্রপথিক
৯৭. হেনরি ডুনান্ট (১৮২৮–১৯১০) – রেডক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
৯৮. ব্যাডেন পাওয়েল (১৮৫৭–১৯৪১) – বয়স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা
৯৯. মাদার তেরেসা (১৯১০–১৯৯৭) – প্রেম, করুণা ও ধর্মের মূর্ত প্রতিমা
১০০. অ্যাডাম স্মিথ (১৭২৩–১৭৯০) – রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিজ্ঞানের জনক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন