১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

সিন্নি দেখেই এগোই
কেঁতকা দেখে পেছোই

খাঁখাঁ দুপুর। খাঁখাঁ বাড়ি। বাগানের গাছে আবার ঘুঘু ডাকছে। নির্জন দুপুরের কারিগর। মনে হয় যেন স্যাকরার হাতুড়ি পিটছে! কনক চাল, ডাল, তরিতরকারি সবই বের করেছিল। রান্নার সময় পায়নি। প্রতাপ রায় তুলে নিয়ে গেছে। বড়লোকের সাতমহলা বাড়ি। জলসাঘর, ঝাড়লণ্ঠন, দাসদাসী। আস্তাবল, ওয়েলার ঘোড়া। তেলরঙে আঁকা পূর্বপুরুষদের ছবি। কার্পেটের ওপর আলতো পায়ে কনক ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। ভেতরটা কেমন যেন করছে। একেই বলে হিংসে।

পিতৃদেবের বেশ জ্বর এসে গেছে পায়ের তাড়সে। ইজিচেয়ারে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। কোলের ওপর গণিতের বই। পাশের টেবিলে খাতা আর পেনসিল। গল্পের বই পড়তে চান না। তাতে মন নাকি এলিয়ে পড়ে। বুদ্ধিবৃত্তি উপন্যাসের খোটা বেয়ে লতিয়ে উঠতে থাকে। মন হবে বটবৃক্ষের মতো। শিকড় নেমে যাবে বিজ্ঞানে, দর্শনে, তর্কশাস্ত্রে, চিকিৎসাবিদ্যায়। শাখাপ্রশাখায় বিশাল মহীরুহ। আসুক বাতাস, আসুক ঝড়, অচল অটল, ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশ। তলায় শীতল ছায়া। পারো তো একটুখানি উদারতার বেদি বাঁধিয়ে দাও। বাট্রান্ড রাসেলের খুব আত্মহত্যার ইচ্ছে হত। গণিতে বাঁচার প্রেরণা পেয়েছিলেন। যখনই মনে হত এইবার ঝুলে পড়ি তখনই বসে যেতেন অঙ্ক নিয়ে। গণিত থেকে চলে গেলেন দর্শনে। পিতৃদেব গণিত নিয়ে পড়েছেন, মাঝে মাঝে দর্শনের দিকে ঝুঁকেছেন, মৃত্যু সম্পর্কে অসীম কৌতুকের ভাব। কারুর মৃত্যুতে কখনও আহা আহা করতে শুনিনি। আহার নিদ্রার মতোই একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। পেয়াদা এসে খাজনা নিয়ে গেল। মেনিদার মা মারা গেলেন। বুড়ির জন্যে ছেলে ফাঁসোর ফোঁসর করে অস্থির। শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ করতে এসে কান্নায় একেবারে ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। পিতা বললেন, সদ্য-বিধবার মতো অমন হাপুস হুপুস করছেন কেন? বয়েসে মানুষ তো মরবেই! আপনার ইনটেলেক্ট তো তেমন খোলেনি। তেরাত্তির কঁদবেন, চতুর্থ রাতেই তো হেসে হেসে জর্দাপান খাবেন! পৃথিবীতে সে মৃত্যু কোথায়, যার শোকে মানুষ সারাজীবন মুহ্যমান থাকবে! Death borders upon our birth, and our cradle stands in the grave.

জ্বর মনে হয় বেশ তেড়েই আসছে। মাঝে মাঝে আড়মোড়া ভাঙছেন। চোখ বেশ জবাফুলের মতো লাল হয়ে উঠছে। মুখের চেহারা শুকনো শুকনো। ফটিফাইভ। এ পরিবারের অ্যাভারেজ পরমায়ু নাকি পঁয়তাল্লিশ। সেই বয়েস যেই পেরোবে জল ঝেড়ে বইঠা তুলে পাটাতনে তুলে রাখো। মনকে বলো, যা আছে সব চটপট তাড়াতাড়ি সেরে নাও। এখন আমার সময় হল, যাবার দুয়ার খোলো। সেপটিক ফিভার। সেরকম কিছু হবে না তো! আমার মনের অত জোর নেই। মচকাব না, একেবারে মট করে ভেঙে যাব।

শোনো!

ভয়ে ভয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালুম।

জ্বর বেশ আঁকিয়ে আসছে। বুঝলে!

আজ্ঞে হ্যাঁ।

পা-টাও বেশ টাটিয়ে উঠেছে।

সন্ধেবেলা ডাক্তারবাবুকে একবার ডেকে আনি।

কোনও প্রয়োজন নেই। ডোন্ট বি নার্ভাস। বোসো না, দাঁড়িয়ে কেন? হ্যাঁ, যা বলছিলুম। বয়েস বাড়ছে, বুঝেছ?

আজ্ঞে না।

অ্যাঁ সেকী, বয়েস বাড়ছে, তুমি বুঝতে পারছ না! তুমি কি ভাবো, সময় স্ট্যাটিক। তোমার মা কত বছর হল মারা গেছেন জানো? চোদ্দো বছর হয়ে গেল। লং ফোর্টিন ইয়ার্স। তখন আমার। বয়েস ধরো পঁয়ত্রিশ কি ছত্রিশ হবে। নাউ আই অ্যাম ফিফটি। পঞ্চাশ বছর! হাফ এ সেঞ্চুরি মাই সন। পঞ্চাশটা বছর দুঃখে সুখে পার করে দিলুম। কী বলছ তুমি! অ্যান্ড লাস্ট ফোর্টিন ইয়ার্স আই। অ্যাম অ্যালোন। এ লোন ফাঁইটার। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। আই কেয়ার এ ফিগ ফর দেম। পৃথিবীকেও আমি থোড়াই কেয়ার করি। জন্মের দরজা দিয়ে স্টেজে ঢুকেছি মৃত্যুর দরজা দিয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে যাব। যতদিন শক্তি আছে ততদিন অভিনয়।

Wavering between the
profit and the loss
In this brief transit
Where the dreams
cross
The dream crossed
twilight between birth
and dying.

না হে, বয়েস বাড়লেও স্মৃতিটা এখনও আছে। তোমার মনে পড়ে?

আজ্ঞে কী মনে পড়ে? পড়া?

না না পড়া নয়, তোমার মায়ের কথা?

খুব অল্প। অস্পষ্ট। একটা-দুটো ঘটনা।

তুমি ‘লাকি’। ভেরি, ভেরি ‘লাকি’।

আজ্ঞে মায়ের মৃত্যু তো ছেলের পক্ষে দুর্ভাগ্যের ঘটনা। আপনি আমাকে ‘লাকি’ বলছেন?

অফকোর্স। যে বয়েসে তোমার মা মারা গেছেন, সে বয়েসে তোমার স্মৃতি তৈরি হয়নি, অজ্ঞান শিশু। কিন্তু আমি! আমার কথাটা একবার ভাবো। হাজার হাজার টুকরো টুকরো স্মৃতি বহুবর্ণ পাথরের মতো মজা নদীর বুকে বিছিয়ে পড়ে আছে। দিন নেই, রাত নেই, আমি একবার এটা তুলি তো ওটা ফেলি, ওটা ফেলি তো এটা তুলি। নো, আই শুড নট বি উইক, আই শুড নট বি এ সেন্টিমেন্টাল ফুল The dream crossed twilight between birth and dying.

আপনার জ্বর খুব বেড়েছে। বিছানা করে দিই শুয়ে পড়ুন একটু।

ছেলেমানুষ! আমি একশো তিন জ্বরে অফিস করেছি। জ্বর একটা বার্নিং প্রসেস। ভেতরের সমস্ত বিষ পুড়িয়ে দিচ্ছে। অত সহজে শুয়ে পড়লে চলে।

The hurt is not enough:
I long for weight
and strength
To feel the earth
as rough To all my length.

তুমি ভাবছ আমি জ্বরের ঘোরে ভুল বকছি! তা হলে এসো, চেয়ারটা আমার কাছে নিয়ে এসো, বসে বসে দেখো আমি স্টেপ বাই স্টেপ কী কঠিন একটা অঙ্ক করছি।

না না, আমি ভুল বকার কথা বলিনি।

দেন ইট ইজ অলরাইট। তা হলে জেনে রাখো, শরীরকে কখনও বেশি প্রশ্রয় দেবে না। শরীর হল কুকুর। নাই দিয়েছ কী মাথায় উঠে বসবে। সবসময় পায়ের তলায় রাখবে। বেচাল দেখলেই লাথি। এ টাইমলি কিক। একটু চা করতে পারবে?

কেন পারব না?

ক’টা বাজল?

তিনটে-সাড়ে তিনটে হবে।

তা হলে চারটে নাগাদ বসিয়ো। কেন জানি না, আজ সব পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে। জানবে, অতীত যখন মনে এসে ভিড় করে, তখন বুঝতে হবে বয়েস বাড়ছে। দেয়ালে ওই বড় আয়নাটা দেখেছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ, খুব সুন্দর। বেলজিয়ান গ্লাস।

শুধু সুন্দর নয়। ওটা তোমার মায়ের। ওই কাঁচে তোমার মায়ের মুখ লেগে আছে। আমরা দু’জনেই প্রায় মাথায় মাথায় ছিলুম। সেম হাইট। আচ্ছা, তুমি তোমার মায়ের মুখটা পেলে, স্বভাবও পেলে, রংটা কেন পেলে না বলো তো!

আজ্ঞে, তা তো জানি না।

আমি জানি। আমি তোমার রং কালচে করে দিয়েছি। শুধু মা সুন্দরী হলে হয় না, পিতাকেও সুন্দর হতে হবে। আগেকার দিনের জমিদারদের সন্তান কন্দর্পকান্তি কেন হত জানো? অনেক খুঁজে খুঁজে, দেখে দেখে সেরা সুন্দরীদের সঙ্গে ছেলেদের বিয়ে দিতেন। বংশ দেখতেন। ফুটফুটে ছেলে, ফুটফুটে মেয়ে হত। নিষ্ঠা চাই। বুঝলে? হিউম্যান ব্রিডিংও একটা আর্ট। গ্রিক আর রোমানদের দিকে তাকিয়ে দেখো। ইজিপশিয়ানদের কথা ভাবো। ক্লিওপেট্রার নাম নিশ্চয়ই শুনেছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

তবে? তবে কেন অত ছটফট করো!

আজ্ঞে করি না তো।

না কখনও করবে না। কোনও টিয়া কি কাককে বিয়ে করে! বউ কথা কও কি হাঁড়িচাচার জন্যে পাগল হয়? ময়ূর কি বকের পেছনে দৌড়োয়? ঘুঘু কি গোলাপায়রাকে লাভ লেটার্স লেখে?

আজ্ঞে না।

মেনটেন ইয়োর ব্রিড। তোমার মায়ের সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়া উচিত হয়নি। শি ওয়াজ এ প্যারাগন অফ বিউটি। আর আমি! এ লিটল বিট অফ এ সিমপ্যাঞ্জি। আমার সবকিছু কোর্স। স্কিন, হেয়ার, কমপ্লেকশন।

আজ্ঞে না, ইউ আর সো ম্যাসকুলাইন!

ও, ডোন্ট ফ্ল্যাটার মি। ম্যাসকুলাইন! দ্যাট ইজ মাই সাধনা। যৌবনে পিটে পিটে শরীরটাকে তৈরি করেছিলুম। তোমার মায়ের সঙ্গে কোনও সুন্দর পুরুষের বিয়ে হলে, তুমি কত সুন্দর হতে পারতে! তুমি আমার দিকে অ্যাকিউজিং ফিঙ্গার তুলে বলতে পারো, কেন আপনি আমার সর্বনাশ করলেন, কেন আপনি আমাকে পৃথিবীতে আনলেন, আমি কন্দর্প হয়ে আসতে পারতুম!

আজ্ঞে, আমি তা কখনও বলব না।

তোমার বলা উচিত। তুমি বলতে পারো। আই ওন্ট মাইন্ড। আই হ্যাভ ডেস্ট্রয়েড এ পসিবিলিটি। একটা ভাল পুট কাঁচা হাতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেল। তোমার জীবনী অন্যভাবে লেখা হতে পারত!

আমি ভাগ্যকে বিশ্বাস করি।

হ্যাঁ করবেই তো! তুমি যে দুর্বল। তাইমুর কি চেঙ্গিজ ভাগ্যকে বিশ্বাস করতেন না। নেলসন কি নেপোলিয়ান ভাগ্যকে বিশ্বাস করতেন না। তোমার রক্তে হোয়াইট ব্লাড কর্পাসল রেড ব্লাড সেলের চেয়ে অনেক বেশি। তুমি অ্যানিমিক। ভাল করে খাওয়াদাওয়া করো, ভাগ্য পালাবে। জীবন সম্পর্কে একটা পজিটিভ অ্যাটিচিউড আসবে। নির্জীব থেকে সজীব হয়ে উঠবে। ক্লীব থেকে জীব। তোমার রক্তে কিছু লোহার প্রয়োজন। ইউ নিড সাম মিনারেলস।

যাই, এইবার চা করে আনি।

হ্যাঁ, যাও, নাও ইট ইজ টাইম ফর টি।

উত্তর মহল আজ অসম্ভব ফাঁকা। কেউ কোথাও নেই। নির্জন দেয়ালে মাঝে মাঝে টিকটিকি টকাস টকাস শব্দ করে দরজা খোলাতে চাইছে। লম্বা লম্বা শাড়ি ঝুলছে। শুকিয়ে গেছে। হাওয়া দিলেই প্রাণ পেয়ে নড়াচড়া করছে। ছাতে ওঠার সিঁড়ির একপাশে কনকের, মুকুর ছাড়া জামাকাপড় তালগোল পাকানো পড়ে আছে। দু’জোড়া হাইহিল জুতো সিঁড়ি ভাঙার জন্যে যেন প্রস্তুত হয়ে আছে। ওয়ান, টু, থ্রি বললেই টকাস টকাস করে এগোতে থাকবে। রান্নাঘরের কুলুঙ্গিতে এক টুকরো কাগজ রোল করা। কীসের ক্যাশমেমো? কনকের হাতের লেখা, ‘পিন্টু, তুমি কিছু মনে কোরো না। বাবার ভয়ে দূরে দূরে থাকছি। মেয়েদের একটু অভিনয় করে চলতে হয়, নইলে তলিয়ে যেতে হয়। মেয়ে হলে বুঝতে।’ কখন লিখল! মনে আবার ভাঙন ধরাতে চাইছে।

চা নিয়ে এসে দেখলুম, পিতা জ্বরে হাঁসফাস করছেন। দেয়াল আয়নার দিকে দৃষ্টি স্থির। দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমেছে। হাত বাড়িয়ে চা নিলেন।

কী, খুব যন্ত্রণা হচ্ছে আপনার?

শরীরে নয়, মনে। জীবনে ছোটখাটো দু-একটা ভুল করে ফেলেছি। My thoughtless youth was winged with vain desirers/My manhood, long misled by wandering fires. আর তো শৈশবে ফিরে যাওয়া যাবে না, আর তো যৌবনে ফিরে আসবে না। Where is the Life we have lost in living?/where is the wisdom we have lost in Knowledge?/where is the knowledge we have lost in information?

চায়ে চুমুক দিলেন। যা কোনওদিন হয় না, আজ হাত কাঁপছে। চোখ আরও রক্তবর্ণ। উচ্চ চাপ মনে হয় বেড়েছে। এত আবেগই বা কোথায় ছিল? বাঁধভাঙা নদীর প্রবল স্রোতধারায় বেরিয়ে আসছে।

ওই যে আয়নাটা দেখছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

ওই আয়নায় আমার যৌবন ধরা আছে, তোমার কৈশোর আছে, তোমার মায়ের ছায়া আছে। তা হলে শোনো একদিনের কথা বলি। তাড়া আছে?

আজ্ঞে না।

তা হলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার মতো পা ইকছ কেন? বোসো। তোমার বয়েস তখন তিন কি চার। ভীষণ জ্বর। তিন কি চার। উঠছে নামছে। সকালে এক পুরিয়া ওষুধ দিয়ে ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে অফিসে গেলুম। কাজে মন বসছে না। ছটফট করছি। ল্যাবরেটরিতে অ্যানালিসিসে একটা স্যাম্পল চড়িয়েছি। অন্যমনস্ক, ইথারের বোতলে আগুন ধরে গেল। পুড়তে পুড়তে বেঁচে গেলুম। আমার অ্যাসিস্টেন্ট অন্নদা বললে, আজ আপনার কী হয়েছে বলুন তো? আমি বললুম, তুমি কিছুক্ষণ সামলাও, আমি একবার চট করে বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। ছেলেটার খুব জ্বর দেখে এসেছি। ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছি। সাড়াশব্দ নেই। নিস্তব্ধ বাড়ি। ঘরে ঢুকে দেখি, তোমার মা ওই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। সবে চান সেরেছে। ভিজে চুল কোমর ছাপিয়ে পায়ের কাছে চামরের মতো দুলছে। চাঁপাফুল রঙের শাড়ি পরেছে। গালে গোলাপি আভা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপালে সিঁদুরের টিপ পরছে। আর তুমি খাটে শুয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছ। আয়নায় আমাকে দেখে ঘুরে দাঁড়াল, আঙুল কপালের টিপে, তুমি? হ্যাঁ আমি। খোকা কেমন আছে? হেসে বললে, জ্বর ছেড়ে গেছে। Time, you old gipsy man/Will you not stay/Put up your caravan/Just for one day/Just for one day?

আপনার চা যে ঠান্ডা হয়ে গেল। টাটকা আর এক কাপ করে দিই।

নাঃ, মুখে আর ভাল লাগছে না কিছু। বিস্বাদ হয়ে গেছে। ওই কোটের পকেট থেকে আমাকে বড় রুমালটা দাও। মাথায় একটা ফেট্টি বাঁধি। যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে।

শুয়ে পড়ুন। একটু টিপে দিই।

দুর পাগল। সেবা নিলে মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। He who was living is now dead/We who were living are now dying/With a little patience. তুমি বরং ওই রেকর্ডটা একবার চাপাও তো।

কোনটা বলুন?

ওই যে, তোমায় নতুন করে পাব বলে হারাই বারে বারে।

কোণের দিকে ছোট্ট একটা টেবিলে আদ্যিকালের চোঙা-লাগানো গ্রামোফোন। হাতল ঘুরিয়ে দম দিয়ে রেকর্ড চাপাতে হয়। ঘুঘু আর ডাকছে না। বাইরের কার্নিসে গোটাকতক বুড়ো পায়রা বাতের ব্যথায় অনবরত কোত পেড়ে চলেছে। গান বেজে উঠল। পিনটা পালটানো উচিত ছিল। পিতা চোখ বুজে গান শুনছেন। গান একসময় থেমে গেল। তবু চোখ খুলছেন না। মাথার কাছে এগিয়ে গেলুম। জ্বরে বেহুশ মতো হয়ে গেছেন। এখান থেকে হলঘরে মায়ের ছবিটা স্পষ্ট দেখা যায়। পশ্চিমের একচিলতে রোদ পড়েছে। জ্বলজ্বল করছে। আয়নাটাও কেমন যেন গভীর আকাশের চেহারা নিয়েছে। মেসোমশাইদের ঘরের খাটের চাঁদরের একটা অংশ আয়নায় ভেসে আছে। আয়নার জগৎ একেবারে নির্জন নয়। বাতাসে চাদর নড়লে ছায়াও নড়ে উঠছে। মনে হচ্ছে বহু দূর থেকে কেউ যেন আঁচল উড়িয়ে আসছে। ভারী অদ্ভুত লাগছে। বিরাট বড় একটা দায়িত্ব পেয়ে গেছি। বিশাল শক্তিশালী এই মানুষটি আজ কত অসহায়! অদৃশ্য বন্ধনের কত আকর্ষণ। ফেলে যাব কোথায়! সন্ন্যাস কি মুখের কথা! সব ছাড়োয়ে বললেই কি সব ছাড়া যায়!

মাথার নীচে ছোট একটা বালিশ লাগাতে গেলুম। চমকে উঠলেন। ক’টা বাজল?

প্রায় সাড়ে চারটে।

রোদ পড়ে এসেছে। ছাতের গাছে একটু করে জল দিতে হবে।

রোদের ঝঝ কমুক, এখন দিলে শুকিয়ে যাবে।

হ্যাঁ, সন্ধের মুখে দিয়ো। আমার পা-টা বেশ টাটিয়েছে। ওঁরা ফিরেছেন?

আজ্ঞে না।

সকালে আমি একটু বেশি ইমোশানাল হয়ে পড়েছিলুম। তোমাকে কেউ আক্রমণ করলে আমার অ্যানিম্যাল ইনস্টিংক্ট প্রখর হয়ে ওঠে।

The world turns and the world changes
But one thing does not change
In all of my years, one thing does not change
However you disguise it, this thing does not change
The perpetual struggle of good and evil.

দেবতা আর অসুরের মাঝখানে পাতলা কাগজের ডায়াফ্রাম। একটু এদিক-ওদিক হলেই ফরদাফাঁই। নাঃ, সংযত হতে হবে। কী করব? তুমি যে আমার সন্তান। তোমার মধ্যে যে আমার বিশালের ছায়া আছে। আমাকে শেক্সপিয়ারের কমপ্লিট ওয়ার্কসটা একবার দাও তো।

বই না পড়ে, একটু শুয়ে পড়ুন না। শরীর খারাপ হলে রেস্ট নিতে হয়।

তুমি আমাকে শুইয়ে দিতে চাইছ কেন? তাতে তোমার কী লাভ?

বাপ রে? সিন্নি দেখে এগিয়েছিলুম, কেতকা দেখে আবার পেছিয়ে এলুম। দুর্গ জয় করা কি অত সহজ কাজ। মনোদুর্গে বসবাস, আলোছায়া খেলে অধরাকে ধরা কি সহজ? পিতার সঙ্গে আমার একদিন কবির লড়াই হলে বেশ হয়। দেখি কার স্টকে কত কবিতা আছে?

বোদ মিলিয়ে গেল রাতের ছায়ায়। বেগুনি রঙের আলোয় পৃথিবী বড় বিষণ্ণ। ফুলগাছের টবে জল দিচ্ছি। দু’-এক ফোঁটা ছাদে পড়লেই সোঁ সোঁ করে টেনে নিচ্ছে। মিট্টিকা আতরের মতো গন্ধ বেরোচ্ছে। কাকের দল যেদিকে উড়ে গেল বাসায়, সেদিক থেকে বাদুড় উড়ে আসছে। পেছনে ধপ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ হল। বেশ ভারী। পেছন ফিরে তাকাতেই চমকে উঠতে হল। খুনি আততায়ীর মতো এ কে?

জটেবুড়ির মতো চেহারা। জট-পাকানো লাল লাল চুল চারপাশে উড়ছে। মুখ লাল টকটকে। চোখদুটো ছাদের আবছা বেগুনি আলোয় পাথরের মতো জ্বলছে। পোশাকও অদ্ভুত। লাল একটা ঘাগরা। ঘাগরা নয় সায়া। তার ওপর হলদে রঙের একটা ব্লাউজ। কোথা থেকে এল? আকাশ থেকে পড়ল নাকি? সতীমার ক্ষুদ্র সংস্করণ? সামনের দিকে দৌড়ে পালাবার উপায় নেই। ছাদের বাইরে চলে যেতে হবে। মূর্তির গলায় শব্দ বেরোল,

পিন্টুদা?

কে, জবা?

হ্যাঁ, চিনতে পারছ না?

তুমি কোথা থেকে এলে? কীভাবে এলে?

তোমাদের ছাদের আলসে টপকে।

আমাদের ছাত অবদি এলে কী করে?

আমাদের বাড়ির কার্নিসে নেমে তোমাদের বাড়ির কার্নিসে পা রাখলুম।

ভয়ে আমার চোখ বুজে এল। গা শিরশির করে উঠল। যদি একবার পড়ে যেত, নির্ঘাত মৃত্যু।

তুমি এভাবে আসতে গেলে কেন?

আমার শাড়ি খুলে নিয়ে ঘরে শেল বন্ধ করে রেখেছিল। এ সব হল আমার মাসিটার কাজ।

মাসি মানে?

ওই হল, ছোট মা। তুমি আর কথা বাড়িও না। তোমার সামনে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার লজ্জা করছে। চট করে একটা শাড়ি এনে দাও।

শাড়ি পাব কোথায়?

তোমাদের বাড়িতে দু-দুটো মেয়ে, শাড়ি পাব কোথায়? যাও শিগগির নিয়ে এসো। এখুনি খোঁজপাত শুরু হবে।

নীচের তারে কনকের শাড়ি ঝুলছিল। যা হয় তবে, এখন দিয়ে তো দিই। কনককে বোঝালে। নিশ্চয়ই বুঝবে। জবার হাতে শাড়িটা দিতেই বলল, এত দামি কাপড় না আনলেই পারতে।

শাড়িটা পরতে পরতে বললে, তোমাদের পেছন দিকের দরজা দিয়ে আমি বেরিয়ে যাব।

কোথায় যাবে?

আমার জায়গায়।

সেটা আবার কোথায়?

বিয়ের পর মেয়েদের জায়গা কোথায় জানো না!

জবা সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে চলল। জোরে চেঁচাতেও পারছি না। পেছন পেছন নামতে নামতে ফিসফিস করে বললুম, সুখেন নেই। দীনু তাকে কোথায় যেন নিয়ে গেছে।

যাক, আমি ঠিক খুঁজে বের করব।

তোমার চেহারাটা একটু ঠিক করে নিলে হত না।

সময় নেই, উপায়ও নেই। আমি চুপিচুপি নেমে বেরিয়ে যাচ্ছি, তোমাকে আর আসতে হবে না। যদি কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে, বলবে আমি কিছু জানি না।

তোমাকে আবার ধরে ফেলবে।

কারুর বাপের ক্ষমতা নেই।

জবা পায়ে পায়ে নীচে নেমে গেল। ভাগ্য ভাল, পিতৃদেব জ্বরে ইজিচেয়ারশায়ী। উঃ, সুখেনের বরাতটা তো খুব ভাল! এত প্রেম! দু’জনে এক সুরে বাঁধা! এমন তত বড় একটা দেখা যায় না। জলের ঝারিটা আনতে গিয়ে কানে এল, জবাদের বাড়িতে এক মহিলা খ্যানখ্যানে গলায় চিৎকার করছে, জবা, জবা। পালাও জবা, পালাও।

কোলের ওপর শেক্সপিয়ার, চেয়ারে পিতা আচ্ছন্ন। মাথায় ফেট্টি, চোখ বন্ধ। বাড়িতে বয়স্ক কেউ থাকলে একটু সাহস পাওয়া যেত। ঘরে ঘুটুর ঘুটুর করছি, চোখ না খুলেই পিতা বললেন, রাতে আমার উপবাস। তুমি যা হয় একটা কিছু নিজের মতো করে নাও। ওঁরা তো এখনও ফিরলেন না!

না, বেশ দেরি হচ্ছে।

মুখ থেকে কথা সরতে-নাসরতেই বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামল। প্রতাপ রায় এলেন। দু’জনে কথা বলতে বলতে ওপরে উঠছেন। মেসোমশাইকে বেশ খুশিখুশি দেখাচ্ছে। ভোজনতৃপ্ত চেহারা। ঘরে ঢুকে কিছু একটা বলতে গিয়ে পিতার অবস্থা দেখে থেমে গেলেন। কী হল? শরীর। খুব খারাপ হয়েছে?

চোখ না খুলে পিতা বললেন, আপনার কাজ হল?

প্রশ্ন প্রশ্নে চাপা পড়ে গেল। এ বেশ ভাল কৌশল। যে-প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না পালটা প্রশ্ন করে পাশ কাটিয়ে যাই। কনক আর মুকু কোথায় গেল? তাদের দেখছি না তো!

হ্যাঁ, কাজ হয়েছে। প্রতাপের মতো ছেলে হয় না। হরিদা, আপনার অনুমতি চাইছি।

অনুমতির প্রয়োজন নেই। ম্যাটার অফ কনভিনিয়েন্স। আপনি যেতে পারেন।

যাবার কথাই জিজ্ঞেস করছি কী করে বুঝলেন।

কমন সেন্স বিনয়দা, কমন সেন্স।

প্রতাপের বাড়িটা বিশাল, জনপ্রাণী নেই।

লেখাপড়ার সুবিধে হবে।

ঠিক বলেছেন, তা ছাড়া…

নীচের তলাতেই ডাক্তারের চেম্বার।

ঠিক বলেছেন, তা ছাড়া…

প্রতাপের বিষয় সম্পত্তির মামলা এমন জড়ভট্টি হয়ে আছে, জট ছাড়াতে হলে কাছেই থাকা দরকার।

ঠিক বলেছেন, তা ছাড়া…

কলকাতায় থাকলে পরীক্ষা দেবার সুবিধে অনেক।

ঠিক বলেছেন, তা ছাড়া প্রতাপের এক কাকা দর্শনের অধ্যাপক। কাছাকাছি থাকলে আমার চেয়ে ভাল কোচিং পাবে।

এই মুহূর্তে আপনি চলে যান। আর একটুও দেরি করবেন না।

আপনি চোখ খুলছেন না কেন?

কোনও কোনও সময় চোখ বুজিয়ে থাকলে পৃথিবীকে কম কর্কশ মনে হয়।

প্রতাপ রায় বললেন, আপনাকে বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছে। চলুন না একবার স্পেশালিস্ট দেখিয়ে দিই।

তেমন স্পেশাল কিছু হয়নি প্রতাপ। ধন্যবাদ।

মেসোমশাইয়ের চেয়ে প্রতাপ রায়ের উৎসাহ যেন বেশি। মেসোমশাই বিক্ষিপ্ত সমস্ত জিনিস গোছগাছ করে সুটকেসে ভরতে লাগলেন। মেয়েদের শাড়ির হিসেব রাখেন না, তাই জানতেও পারলেন না একখানা শাড়ি নেই। আশ্চর্য, মেয়ে দুটোকে কেন রেখে এলেন?

মেসোমশাইয়ের সেই প্রথম দিনের বেশ। হাতে শোলার টুপি।

হরিদা, আমি তা হলে আসছি। মেয়েদুটো থিয়েটার দেখতে গেছে। অনেকদিনের শখ কলকাতার থিয়েটার দেখবে। যাবার আগে দেখা করে যাব। দিনকতক আপনার অসুবিধে করে গেলুম।

অসুবিধে হলে যাবার আগেও আসতে পারেন।

নাঃ অসুবিধে আর কী? প্রাসাদতুল্য বাড়ি। দাসদাসী। আচ্ছা আসি।

দু’জনে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলেন, আগে পরে। প্রতাপ রায়ের এত উৎসাহ কীসের! পিতা এতক্ষণে চোখ খুললেন।

কী বুঝলে?

আমাকে আর বুঝতে হল না। মাতামহ আসছেন গাইতে গাইতে, রিপুর বশে চললেম আগে, ভাবলেম না কী হবে পাছে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন