২.৩৮ God, like a gardener

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

God, like a gardener, sows people as they are
leaving them to grow without interfering here on earth.

এমন ফাঁপরেও মানুষ পড়ে! বৃদ্ধ পণ্ডিতের অদ্ভুত এক আকর্ষণী শক্তি। বলতেও পারছি না, আমাকে যেতে হবে। আমার জন্যে সবাই অপেক্ষা করে বসে আছেন। দানাপানি পড়েনি পেটে। ঘরের কোথাও বোধহয় চাঁপাফুল আছে। ভুরভুর করে গন্ধ বেরোচ্ছে। বৃদ্ধ আমার সামনে বসলেন। একটা চৌকি টেনে নিয়ে হাতদুটো তার ওপর রাখলেন। আশি বছরের তুলনায় বেশ ভালই স্বাস্থ্য। চামড়ায় সামান্য কুঞ্চন।

বৃদ্ধ প্রশ্ন করলেন, একটা গন্ধ পাচ্ছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ, চাপাফুলের।

ত্রিসীমানায় কোথাও চম্পক নেই। রহস্যটা আজও আমার কাছে পরিষ্কার নয়, তবে এইসময় একটা স্বর্ণগোধিকা আসে বাগানে। তার শরীর থেকে এই গন্ধ বেরোয় কি না জানি না। তোমার জানা আছে?

আজ্ঞে না। আমি তো কলকাতার ছেলে।

ও, তার মানে সর্ব বিষয়ে অজ্ঞ। তোমরা তো দাসত্ব করার জন্যে জন্মাও। তুমি দাস হয়েছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ। একটা চাকরি করি।

ঘোড়া হয়েছ?

আজ্ঞে প্রশ্নটা সবিশেষ বোধগম্য হল না।

মানে লাগাম চড়িয়ে কোনও রমণী পৃষ্ঠদেশে আরোহণ করেছে?

আজ্ঞে না, বিবাহ এখনও করিনি।

আর দেরি নেই এইবার হয়ে যাবে। শোনো, যে কারণে তোমাকে বসালুম, আমি নৈয়ায়িক, তোমাকে আমি বুঝিয়ে দেব কেন পৃথিবী শয়তানের! হিরণ্যকশিপুর নাম শুনেছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

আর কিছু জানো?

অসুর ছিলেন।

সুর-অসুরের প্রশ্ন ছাড়ো। এই পৃথিবীরই এক সম্রাট ছিলেন। কার সন্তান? না মহাঋষি কশ্যপের সন্তান। বোঝে ঠ্যালা। ঋষিরও কাম আছে। তিনি আবার দুই স্ত্রী রেখেছিলেন দিতি আর অদিতি। আমরা এক বিবাহতেই ভয়ে মরি। ছেলেপুলে বেশি হলে লজ্জা পাই। এইবার কী হল? দিতি একদিন ভরসন্ধ্যাবেলা কশ্যপের কাছে এসে হাজির। পূজা-পাঠ-প্রার্থনার জন্যে নয়। সন্ধ্যার প্রদীপ দিতে বা শাঁখ বাজাতেও নয়। তিনি স্বামীকে বললেন, এসো আমাতে উপগত হও। আমি একটি বলবান পুত্র চাই। মহর্ষিও তেমনি, সন্ধ্যাহ্নিক ভুলে সেই কালবেলাতেই মেতে গেলেন কামকলায়। বলতে পারলেন না, সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হোক, জপাহ্নিক সমাধা হোক, রাত্রি গভীর হোক, তারপর না হয় দেখা যাবে। শাস্ত্রের নির্দেশই আছে, প্রাতে দ্বিপ্রহরে সায়াহ্নে মিলিত হওয়া উচিত নয়। সন্ধ্যায় নিতান্ত সাধারণ মানুষও ক্ষণকালের জন্যে ঈশ্বর চিন্তা করে। যেমন ঋষি তার তেমন পত্নী। কশ্যপ জানতেন কামজ সন্তান সুসন্তান হতে পারে না। তিনি যে সময়ের, সেই সময় হল ভারতের আধ্যাত্মিক উন্মেষের কাল। বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ তৈরি হচ্ছে ঋষিদের তপোবনে। প্রজনন কামক্রিয়া নয়, এক মহাযজ্ঞানুষ্ঠান। যোষারূপ অগ্নিতে বীৰ্যাহুতি। ছান্দোগ্য উপনিষদ বলছেন যোষাবাব গৌতম! অগ্নিঃ। তস্মিন্ এতস্মিন্ অগ্নৌ দেবা রেতো জুহুতি তস্যা আহুতেঃ গর্ভঃ সম্ভবতি। বুঝলে কিছু? সংস্কৃতর চর্চা তো উঠেই গেল দেশ থেকে। সায়েবরা সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, দিশি সায়েবরা এসে সোজা গলায় ঠ্যাং তুলে দিলে। পাতলুন পরা বড় সায়েবের দল। দেশটা তেনাদের বাতকর্মে দুর্গন্ধময়। তুমি অমন ছটফট করছ কেন বাবাজি? প্রকৃতির ডাক?

আজ্ঞে না, আমার তো এখনও আহারাদি হয়নি।

সে তো আমারও হয়নি। আমার তো স্বপাক। তুমি ব্রাহ্মণ? আমার তো তাই মনে হয়।

আজ্ঞে যথার্থই।

তবে? ব্রাহ্মণের জীবনধারণের বিধি কী? আমি কীভাবে বললুম তুমি ব্রাহ্মণ? তোমার শরীরে কোথাও লেখা আছে? না, আছে তোমার সূক্ষ্ম শরীরে। আমি সেই সূক্ষ্মের বর্ণ দেখতে পাচ্ছি ব্রাহ্মণানাং সিতো বর্ণঃ ক্ষত্রিয়ানাং চ লোহিতঃ। বৈশ্যানাং পীতকশ্চৈব শূদ্রাণাম অসিতস্তথা ॥ পদ্মপুরাণে একথা বলা হয়েছে। মানুষের ভেতরের বর্ণ দেখা যায়, তোমরা ইংরিজিতে যাকে বললো টাইপ। ব্রাহ্মণের বর্ণ শুক্ল, ক্ষত্রিয়ের লোহিত, বৈশ্যের পীত, শূদ্রের কৃষ্ণ। শুক্ল মানে শ্বেত, মানে সাদা, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ হবে সাত্ত্বিক। খাওয়া হল না খাওয়া হল না বলে ছটফট করছ। একদিন আহার না হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে! এক তো নিজেকে পতিত করে ফেলেছ শবৃত্তি নিয়ে। শবৃত্তির অর্থ বুঝলে?

আজ্ঞে না। তবে ওই ধরনেরই একটা শব্দের অর্থ কুকুর।

কাছাকাছি গেছ। শব্দটার অর্থ দাসত্ব। ব্রাহ্মণের দাসত্ব করা উচিত নয়। মনুর নির্দেশ, নিজের জীবনযাত্রার প্রয়োজন এরূপভাবে সংকীর্ণ করবে যেন কোনওদিন না শবৃত্তির আশ্রয় নিতে হয়। সংস্কৃত শুনলে ভয়ংকর উত্তেজিত হয়ে পড়ছ, তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, তবু আমি বলব যাতে তোমার কান তৈরি হয় ঋতামৃতাভ্যাং জীবেৎ তু, মৃতেন প্রমৃতেন বা/ সত্যান্তাখ্যয়া বাপি ন খুবৃত্ত্যা কদাচন ॥ ব্রাহ্মণ ঋত ও অমৃত দ্বারা, মৃত ও প্রমৃত দ্বারা, সত্য ও অনৃতদ্বারা জীবিকা অর্জন করবেন, কদাচ শবৃত্তি করবেন না। এইবার আমার পিসবাবু পড়েছেন বিপদে। শ্লোকে বহু শব্দ, যার অর্থ তিনি জানেন না। তাকিয়ে আছেন বোকার মতো। ঋতের অর্থ কী? শিলোঞ্ছবৃত্তি। সেটা কী? কৃষকেরা ফসল কেটে নিয়ে যাবার পর ক্ষেত্রে যে শস্যকণা পড়ে থাকে তা সংগ্রহ করে জীবনধারণ। অমৃতের অর্থ অ্যঞা, অর্থাৎ কারও কাছে কখনও কিছু না চাওয়া, মৃতের অর্থ ভিক্ষাচর্য। প্রমৃতের অর্থ কৃষিকর্ম আর সত্যানৃতের অর্থ বাণিজ্য! তুমি এই সবকটি করতে পারো; কিন্তু শবৃত্তি কখনও নয়।

সাহস করে বললুম, যদি অনুমতি করেন তা হলে আমি এইবার নিজকর্মে যাই।

আজ্ঞে না, তোমার এখনও ছুটি হয়নি। বলরাম এখনও তোমাকে ছুটি দেয়নি অবোধ। এই প্রসঙ্গের শেষ কথাটি তোমাকে বলা হয়নি। সেটি মহাভারতের বনপর্বে আছে। মানুষের জীবনের কাম্য কী? সুখ। সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু/অনলে পুড়িয়া গেল/অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে/সকলি গরল ভেল।/সখি কি মোর করমে লেখি/শীতল বলিয়া ও চাঁদ সেবি/ভানুর কিরণ দেখি। /উচল বলিয়া অচলে চড়িতে/পড়িনু অগাধ জলে/লছিমী চাহিতে দারিদ্র বেঢ়ল/মাণিক হারানু হেলে ॥ জ্ঞানদাসের পদ। সবই সুখের লাগি। সুখ কোথায়? সুখ মহাভারতের বনপর্বে। যুধিষ্ঠির বলছেন ধর্মকে, পঞ্চমেহহনি ষষ্ঠে, বা শাকং পচতি স্বেগৃহে/অনৃণী চাপ্রবাসী চ স বারিচর মোদতে ।। হে জলচর যক্ষ! যে ব্যক্তি পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনে নিজের গৃহে বসে শাকান্নও পাক করে অথচ সে ঋণী ও প্রবাসী নয়, সে-ই সুখী। অতএব তুমি কী খাওয়ার জন্যে ব্যস্ত হচ্ছ! শবৃত্তির জন্যে তোমাকে তো প্রবাসী হতে হবে।

অবাক হয়ে চেয়ে রইলুম পণ্ডিতমশাইয়ের শীর্ণ কিন্তু উজ্জ্বল মুখের দিকে, আপনি কেমন করে জানলেন?

বৃদ্ধ রহস্যের হাসি হেসে বললেন, সৎ, সাত্ত্বিক, শাস্ত্রসম্মত জীবনযাপন করলে মানুষের মধ্যে একটা শক্তি জাগ্রত হয়! তার প্রমাণ তুমি এইমাত্র পেলে।

আজ্ঞে আমি এইবার আসি হলে। এইবার আমাকে খুঁজতে বেরোবে। বিশ্বাস করুন আমি প্রায় সবই বুঝতে পেরেছি।

তুমি কিছুই যে বোঝোনি তোমার আচরণই তার প্রমাণ। তুমি শুধু জীবিকার দাস নও তুমি সময়ের দাস, পরিবেশের দাস, ঘটনার দাস। তোমার অবস্থা খোটায় বাঁধা গোরুর মতো। তোমাকে অমূল্য কিছু সম্পদ দিতে চাইছি, তুমি নিতে পারছ না। তোমার ভেতরে আধ্যাত্মিক একটা আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল না?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

কোথায় গেল?

মনে হয় চাপা পড়ে গেছে।

তোমার কিন্তু সংস্কার ছিল। কু-চিন্তা আসে? কদাচারে অভ্যস্ত?

আজ্ঞে না।

তা হলে তো তুমি মহাপুরুষ হে! বৃদ্ধ হাহা করে ব্যঙ্গের হাসি হাসলেন। হাসি থেমে গেল। মুখ ভয়াবহ আকার ধারণ করল। চোখ রক্তবর্ণ। হিরণ্যকশিপুর মতো হুংকার ছাড়লেন, অনৃতভাষী। কুচিন্তা আর অবিরত বীর্যক্ষয় ছাড়া কারও এমন মলিন চেহারা হয় না। তোমার। স্মৃতি-মেধা-ধৃতি-পুষ্টি, সবই সছিদ্র পাত্রের জলের মতো বেরিয়ে যাচ্ছে। তুমি পাপাচারী।

আজ্ঞে, বিশ্বাস করুন আমার অসুখ করেছিল।

করেছিল কী? করে আছে। সেই অসুখ সারাতে হবে যুক্তি তর্ক বুদ্ধি দিয়ে। সংকল্প দিয়ে, শ্রম দিয়ে।

বিশ্বাস করুন, আমি খুব চেষ্টা করছি।

কোথায় বসে? জ্বরের রোগী বসে আছ আচারের ঘরে!

আমাকে একজন বলেছেন ডন-বৈঠক মারতে। হাজার ডন, হাজার বৈঠক। তা হলে কুচিন্তা কুভাব কেটে যাবে।

ঠিক, ঠিক বলেছেন। এ তো স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের দাওয়াই। তা তোমার যা শরীর, পঞ্চাশে উঠতেই হার্টফেল করবে।

একটা কথা বলব? আমার পিতা আপনার চেয়েও ক্রোধী। আমি এখন যাই। ওদিকটা সামলে আবার আসব।

শোনো, যা দিয়ে শুরু সেটা শেষ না হলে যাবে কী করে! পৃথিবী শয়তানের এইটাই তো ছিল আমাদের প্রমেয়। বললেই তো হল না, প্রমাণ করতে হবে। ধরো আমি বললুম আকাশ নীল। তুমি দেখলে। দেখে বললে, আজ্ঞে হ্ৰা, আকাশ নীল। বিজ্ঞানী এসে বললেন, তোমরা দু’জনেই ভুল। করলে, আকাশ কালো, অজস্র ধূলিকণায় সূর্যকিরণ প্রতিফলিত হয়ে নীল দেখায়। বিজ্ঞানের প্রমাণ গবেষণাগারে। মতের প্রমাণ ন্যায়শাস্ত্রে, যুক্তিতে। আমি যদি বলি, মানুষ দেবতা নয় দানব, আমাকে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। সবার আগে নির্দেশ করতে হবে সংজ্ঞা। দানবের সংজ্ঞা কী? দেবতার সংজ্ঞা কী? আর দেব ও দানবের মাঝে মানবেরই বা সংজ্ঞা কী? দিতি যখন শয্যা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন কশ্যপ তখন বললেন, তোমার চিত্ত অপবিত্র, তুমি কামাতুরা, তোমার দুই অধম পুত্র হবে, তারা হবে অসুর। তিনি যখন অসুর বলছেন, তখন অসুরের একটা সংজ্ঞা আছে। যেমন ধরো। আম। আমের সংজ্ঞা নির্দেশে বিচার্য কী কী? প্রথম আকার, আকৃতি, বর্ণ। দ্বিতীয়, তার অভ্যন্তর, তৃতীয়, তার স্বাদ। চতুর্থ বৃক্ষ। এখন তুমি যদি বলো আমের স্বাদ মিষ্টি, তা হলে হল না। আম ভীষণ মিষ্টিও হতে পারে, ভীষণ টকও হতে পারে। তোমাকে বলতে হবে অম্লমধুর। এইবার এসো জননী বৃক্ষে। আবৃক্ষসকল একইরকম দেখতে হলেও ফল মিষ্ট হতে পারে, অশ্লও হতে পারে, অতঃপর উপমা স্থানান্তর। বৃক্ষ থেকে মানবে। মানব যোনি থেকে দেবতা আবির্ভূত হতে পারে অসুরেরও জন্ম হতে পারে। যেমন, কশ্যপের দুই স্ত্রী, দিতি ও অদিতি। অদিতির পুত্ররা হলেন দেবতা, দিতির পুত্ররা হলেন দানব। সুতরাং আমের সংজ্ঞা নির্ধারণে বৃক্ষের যে ভূমিকা, দেব-দানবের সংজ্ঞা নির্ধারণে যোনিরও সেই ভূমিকা। অতএব ওটি গৌণ। আমাদের বিচার থেকে উৎসকে সরিয়ে রেখে আর একটি বিচার আনব যা ওই বিচার থেকেই উৎপন্ন, সেটি হল বীজ ও মৃত্তিকা। বীজ ও মৃত্তিকাকে ভেঙে আনব উপাদান ও পরিবেশ। পরিবেশকে ভাঙো, খনিজ উপাদান, জলবায়ু। বীজকে ভাঙো, অর্থাৎ বীজের সংস্কার। এখানে একটা ব্যতিক্রম চিহ্নিত করি। এক, ল্যাংড়ার বীজে ল্যাংড়াই হবে। দুই, হিরণ্যকশিপুর বীজে অসুরই হবে। প্রশ্ন, হিরণ্যকশিপুর প্রহ্লাদ হল কেন, কশ্যপের কেন হিরণ্যকশিপু হল? দ্বিতীয় প্রশ্ন, বীজ কি তা হলে মৃত্তিকার গুণে গুণান্বিত! অনুসন্ধান, ল্যাংড়ার কি গুণভেদ হয়? হয়। উত্তরপ্রদেশের ল্যাংড়া অতিশয় সুস্বাদু, আঁটি পাতলা, আঁশ নেই। পশ্চিমবাংলায় সামান্য আঁশ আছে, আঁটি বড়, স্বাদে অম্লমধুর। সিদ্ধান্ত, কশ্যপের বীজ, মূল বীজ, দিতির যোনি ভাল নয়, হিরণ্যকশিপু ও হিরণ্যাক্ষের জন্ম। হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কয়াধুর যোনি ভাল ছিল। তাই কশ্যপের বীজ হিরণ্যকশিপু বাহিত হয়ে কয়াধুর গর্ভে দেবোপম প্রহ্লাদের জন্মের কারণ। অতএব মৃত্তিকাই নিয়ামক। অর্থাৎ পৃথিবী হল অধঃপতনের স্থান। পতিত জায়গা। প্রমাণ…।

আমি মৃত্তিকা ছেড়ে উঠেই পড়েছি। বিদ্যুৎগতিতে দরজার বাইরে থেকে জুতোজাড়া তুলে। নিয়ে দে ছুট। কোন দিকে দৌড়োচ্ছি খেয়াল নেই। একটা কালভার্টের ওপর এসে জুতো গলাবার ফুরসত হল। ওরে সর্বনাশ, কী পাল্লায় পড়েছিলুম! এক সাঁওতাল রমণী পাশ দিয়ে চলেছে। খোঁপায়। একটা কাঠি গোঁজা। এক থোকা সাদা ফুল। বয়স তেমন বেশি নয়। তবু সাহস করে জিজ্ঞেস করলুম, দোকানবাজার কোন দিকে বলতে পারেন ভাই! বেশ সাহসের দরকার হল। শুনেছি, সাঁওতাল যুবতীদের সঙ্গে কথা বললেই বন থেকে তির ছুটে আসে। মেয়েটি চিৎকার করল না, বরং হেসে জবাব দিল, সে-ও ওই দিকেই যাচ্ছে। তাকে অনুসরণ করলেই বাজার। আমি ভয়ে ভয়ে একটু পেছিয়ে গেলুম। ভয়ংকর শক্তিশালী চেহারা। পালিশ করা শরীর। উঁচু, নিচু, বর্তুল, যাবতীয় জ্যামিতির ছড়াছড়ি। অসহনীয়। কিছুক্ষণ অনুসরণের পর মনে হল, মন মহাভারত হয়ে যাচ্ছে। পণ্ডিতমশাইয়ের আর কী? তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে। এখন তিনি দিবসের অষ্টমভাগে। শাকান্ন খাবেন। যুবকের মন কী বুঝবেন! এই যে আমি পশ্চাৎগামী আর ওই যে বনবালা পুরোগামী, ষাট বছর আগের পণ্ডিতমশাই হলে কী করতেন? এখন তো তার চর্পট-পঞ্জরিকা অবস্থা–অঙ্গং গলিতং পলিতং মুণ্ডং, দশনবিহীনং জাতং তুণ্ডম। এখন তো ভজ গোবিন্দং হবেই। হরিশঙ্কর বলেন, নিরামিষাশী কেন, না দাঁত আর পারমিট করছে না হাড় চিবোনো।

হঠাৎ পেছনে হইচই, ওই তো, ওই তো যাচ্ছে।

হরিশঙ্করের গলা, পাতাল প্রবেশ করেছিল।

থেমে পড়ে পেছন ফিরে তাকালুম। তিনজন হন্তদন্ত হয়ে আসছেন, পিতা হরিশঙ্কর, ছোটদাদু, মোহনবাবু। তিনজনে এসে পড়লেন। হরিশঙ্কর বললেন, কী কায়দায় অদৃশ্য হয়েছিলে! গ্রামাঞ্চলে ভুলভুলাইয়া বলে একটা ভূত আছে, তুমি কি সেইরকম কোনও ভূতের পাল্লায় পড়েছিলে? তুমি জানো সবাই তোমার অপেক্ষায় থাকবে না খেয়ে। কবে যে তুমি একটু মানুষ হবে! মাছ ধরছিলে, না পাখি দেখছিলে?

আজ্ঞে, ওসব কিছু নয়, আমাকে বলরাম পণ্ডিতমশাই ধরেছিলেন।

মোহনদা বললেন, সর্বনাশ, তুমি ছাড়া পেলে কী করে! মহাপণ্ডিত, তবে ইদানীং মাথার গোলমাল দেখা দিয়েছে।

আমাকে ওই চতুম্পাঠীর ভেতরে নিয়ে গিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করছিলেন, পৃথিবীটা শয়তানের, ভগবানের নয়। তারপর একসময় আমি ছুটে পালিয়ে এসেছি।

হরিশঙ্কর ভয়ংকর উল্লসিত হয়ে বললেন, তাই নাকি? এমন এক পণ্ডিত আছেন এখানে? আমার মতের সমর্থক। তা হলে এক রাউন্ড বসে যাই। এমন সুযোগ আর পাব না। আমি প্রথমে অস্বীকার করব। শুরু হবে তর্ক। কতকাল পরে আবার তর্কযুদ্ধ। প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয়, নিগমন। ন্যায়শাস্ত্রের লন্ডভন্ড। চলো চলো, যাই। এমন সুযোগ আর পাব না।

ছোটদাদুও লাফিয়ে উঠলেন, চল চল, দুই চৈতন্যের লড়াই দেখি।

মোহনবাবু করুণ মুখে বললেন, একেবারে অবেলা হয়ে গেছে, যা হয় কিছু সেবা করে নিন আগে। পিত্তি পড়ে যাচ্ছে। বিমলা বসে আছে পথ চেয়ে। তা ছাড়া দুর্ভাবনা, ছেলেটা দামোদরেই চলে গেল কি না!

হরিশঙ্কর বললেন, তা হলে একবার দর্শন করে যাই। অন্তত জানিয়ে যাই, আমরা আসছি, একঘণ্টার মধ্যে।

আমি বললুম, পণ্ডিতমশাই মোহনবাবুর খুব প্রশংসা করছিলেন। তা তিনি নিজেও অভুক্ত। পণ্ডিতমশাইকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গেলে হয় না?

মোহনবাবু বললেন, তিনি স্বপাক ছাড়া খান না। আর এক যদি তার মা বেঁধে দেন। চলুন তাঁকে আমরা বলে চলে যাই।

ছোটদাদু বললেন, আর কি আমরা সময় পাব! আমাদের তো যেতে হবে।

মোহনবাবু বললেন, আজ আর যাওয়া হবে না। কাল সকালে বেরোবেন। দূরের পথ। পৌঁছোতে অনেক রাত হয়ে যাবে।

আমরা সদলে চতুম্পাঠীতে প্রবেশ করলুম। জানতুম প্রথম থেকেই হরিশঙ্কর মুগ্ধ বিমুগ্ধ হতে হতে একেবারেই সমাহিত অবস্থায় চলে যাবেন। এত গাছ, ফুল, প্রজাপতি, কঞ্চির বেড়া, মৌচাক, ভ্রমর। আহা ওহো করছেন আর ছোটদাদু তাকে ঠেলছেন, চল, চল এগিয়ে চল এগিয়ে চল।

অবশেষে পণ্ডিতমশাইকে পাওয়া গেল পেছনের বারান্দায়। ইটের মাঝখানে কাঠ জ্বেলেছেন। যত না আগুন তার চেয়ে বেশি ধোঁয়া। মাটির হাঁড়িতে ভাত ফুটছে। আস্ত একটা বেগুন জলচর প্রাণীর মতো হাবুডুবু খাচ্ছে। পণ্ডিতমশাই একপাশে বেশ আরামে বসে শাক বাছছেন। এতই তন্ময় আমাদের উপস্থিতি টের পেলেন না। নিজের ভাবেই মৃদু মৃদু হাসছেন। হঠাৎ বললেন, যাবে যাও। কে তোমাকে ধরে রেখেছে?

মোহনবাবু যেই ডেকেছেন, পণ্ডিতমশাই, অমনি চমকে উঠেছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন?

আরে একটু আগে একটি ছেলে এসেছিল, সে নাকি তোমার ওখানেই অতিথি হয়েছে, তাকে দেখতে ঠিক আমার সেই বড় ছেলেটার মতো, সেই যে গো জয়রাম, টাইফয়েডে মারা গেল, ছেলেটা ছুটে পালাল। অনেকদিন পরে তার সঙ্গে বেশ একটু শাস্ত্র আলোচনা হচ্ছিল, যেমন হত জয়রামের সঙ্গে, আহা বেচারার বোধহয় খুব খিদে পেয়েছিল, বুঝলে মোহন!

পণ্ডিতমশাই, সে আবার এসেছে। সঙ্গে তার পিতা আর মহাসাধক দাদু এসেছেন।

পণ্ডিতমশাই তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর কোল থেকে কিছু শাকপাতা ঝরে পড়ল। তিনি আকুল হয়ে বলতে লাগলেন, কোথায় আমার জয়রাম কোথায়, কোথায় আমার রাম!

রাম রাম বলতে বলতে বৃদ্ধ অঝোরে কেঁদে ফেললেন। বৃদ্ধের চুল সাদা, বৃদ্ধের ভুরু সাদা, সাদা চোখের পাতা। দু’গাল বেয়ে জলের ধারা নেমেছে। ঠোঁটদুটো তিরতির করে কাঁপছে, আর মাঝে মাঝে শব্দ বেরোচ্ছে, রাম, জয়রাম।

তিনি কাঁপতে কাঁপতে একপাশে হেলে পড়ছিলেন, ছোটদাদু এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, যো জিসকো শরণ লিয়ে সো রাখে/উসিকো লাজ/উলট জলমে মছলি চলে/বহি যায় গজরাজ। পণ্ডিতমশাই কার কথা?

প্রশ্ন? আর যায় কোথায়, পণ্ডিতমশাই কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেন, মহামান্য, এ তো তুলসীদাস!

ছোটদাদু বললেন, তবে? অর্থ যথা পদধুলি হোয়, যৌবন নদী কর বেগ/মানুখ জলখে বিন্দু হোয়, জীবন ফেন করি লেখ ॥ এর অর্থ কী পণ্ডিতমশাই?

ছোটদাদুর আলিঙ্গনমুক্ত পণ্ডিতমশাই বললেন, ধন পদরজের ন্যায় অতি তুচ্ছ, যৌবনদশা বেগবৎ চঞ্চল, নরগণের শরীর জলবিন্দু সদৃশ; অতএব ক্ষণভঙ্গুর দেহের জন্য আপাতত সুখকর সংসারসুখে কেন মুগ্ধ, মোক্ষলাভের নিমিত্ত ধর্মোপার্জনই কর্তব্য।

তবে আপনি এমন বিচলিত হচ্ছেন কেন?

মহাশয়, মানুষের ধর্মই হল বিচলিত হওয়া। কারণ মনই মানুষের কর্তা। আমার আমি যতদিন এই দেহকে ঘিরে আছে, ততদিনই আমার দুঃখ, সুখ, জরা, ব্যাধি। তেষু বিনষ্টেষু সসু স্বয়ং বিনশ্যতি। ধর্ম হল দুর্বল মানুষের হাতিয়ার। ঈশ্বর হলেন জ্বরের রোগীর কপালের জলপটি। রোগারোগ্য হয় না, সাময়িক উপশম হয় মাত্র। আপনাদের তত্ত্বকথা অনুলেপন মাত্র। আমি ভক্ত নই। আমি বিচারশীল এক মানব। ইহলোকাৎ পরো নান্যঃস্বর্গোহস্তি নরকা ন চ। ইহলোকের পর। স্বর্গও নেই, নরকও নেই মহামান্য। সবই এইখানে। ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ। আমার দুঃখ-বেদনা-অনুশোচনার কোনও প্রলেপ নেই। সহ্যই আমার শক্তি।

হরিশঙ্কর সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এসে করমর্দন করতে করতে বললেন, এই তো চাই, এই তো চাই। এতদিনে একজন বীর মানব খুঁজে পেয়েছি। এঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করা চলে।

পণ্ডিতমশাই বললেন, অনুমান সঠিক, আপনি আমার জয়রামের পিতা।

আজ্ঞে, জন্মদাতা।

উপযুক্ত উত্তর। আপনি অতিশয় জ্ঞানী। আর ইনি এক বিশ্বাসী সাধক। মাতৃ উপাসক। মানবের পাঁচটি পিতা, পঞ্চপিতা, জন্মদাতা ভয়ত্রাতা কন্যাদাতা বিদ্যাদাতা অথবা দীক্ষাদাতা ও অন্নদাতা।

মোহনবাবু আমার কানে কানে বললেন, হয়ে গেল। আজ সাড়ে সর্বনাশ। তিন জ্ঞানী একত্র হয়েছেন।

পণ্ডিতমশাই আবার শুরু করলেন, জগৎকারণের মূল হল অহংকার। অহংকার দু’রকম, জীবের অহংকার, মানবের সমবেত অহংকার। সমবেত অহংকার সভ্যতার চাকা। আর যে-শক্তিতে পশু লেজ নাড়ে, সেই শক্তিই ব্যক্তির অহংকার। তর্জনগর্জন আস্ফালনাদি ইত্যাকার লাঙ্গুল সঞ্চালনাদি কর্ম, উপনিষদোক্ত, উত্তিষ্ঠত জাগ্রত। অহংকারশূন্য মানব কর্তিতলাল বৃহন্নলাবৎ।

হরিশঙ্করের চোখমুখ উজ্জ্বল। সার-পাওয়া লতার মতো। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন, শাবাশ, শাবাশ।

এমন সময় ভাতের ফেন উথলাল। মোহনবাবু বললেন, পণ্ডিতমশাই অন্ন প্রস্তুত। আপনি আহারাদি সেরে নিন, আমরা আবার আসছি।

হরিশঙ্কর বললেন, শাক আপনি কীভাবে প্রস্তুত করবেন?

অতি সহজ। পাত্রে জল, জলে কিঞ্চিৎ হলুদ, কালো জিরা ও লবণ। তাইতে শাক ছেড়ে দোব। সুসিদ্ধ হলে নামিয়ে নোব। অতিশয় সুস্বাদু।

ছোটদাদু জিজ্ঞেস করলেন, এই আপনার দিবসের আহার? রাত্রিকালে?

আমি একাহারী!

শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে না?

মহাশয়, মেধাই আমার বৃত্তি। শরীর নয়। আমার কায়িক-শ্রম নেই বললেই চলে। আমার কোনও ক্ষয় নেই। কোনও দুশ্চিন্তা নেই। একেবারে গণিতের নিয়মে শরীর চলছে।

গণিত! গণিত হরিশঙ্করের ঈশ্বর। মেধা হরিশঙ্করের ইষ্ট। তিনি লাফিয়ে উঠলেন, এই তো চাই। গণিত আপনার জীবন। আপনি সিদ্ধ মহাপুরুষ!

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন