২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
যাইতে, শুনিয়াছিনু,–কাঁদিয়া কাঁদিয়া
কহিছে কর্দম-পিণ্ড নরকণ্ঠে যেন,–
‘ধীরে, বন্ধু, বাজে বড়, মেরো না বাঁধিয়া!’

একটা কথা আছে, মহাগুরু নিপাত যোগ। পিতার মৃত্যুর পর একটা বছর এই যোগ চলে। যতরকম দুর্ভাগ্য নেমে আসে মানুষের জীবনে। আমি যেন সেই যোগের মধ্যে পড়েছি। শ্রীহরিশঙ্কর কোথায় অদৃশ্য হলেন জানি না। তিনি নেই। এই না-থাকাটা মৃত্যুরই সামিল। অসভ্য ইতর মেনি, তাল-তোবড়ানো মুখ। ঠোঁটদুটো ছুঁচোলো করে, এক ধাবড়া পানের পিক দিয়ে দিলে আমার বুকে! সারা গা ঘিনঘিন করছে। জামাটা তো গেলই। ভেতরের গেঞ্জিটাও গেছে।

মুকু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। একটাও কথা নেই মুখে। তীব্র চোখে দেখছে আমাকে। অপরাধী সন্তানের মতো মাথা নিচু করে আছি আমি। আমি দোষী? আমার দোষটা। কোথায়?

মুকু ঝাঁঝালো গলায় বললে, আধ ঘণ্টার মধ্যে একটা কাণ্ড করে চলে এলে! গেলে এক কাজে, করে এলে আর এক কাজ? তোমার কী দরকার ছিল খুঁচিয়ে ঘা করার।

বাঃ, আমার বাবার নামে যা-তা বলবে আর আমি চুপ করে থাকব?

তুমি হাত তুলতে গেলে কেন? তোমার তো মুখ ছিল। এই যে জল ঘোলা করে এলে, আরও কিছু শত্রু তৈরি হল। এরপর তুমি এ পাড়ায় টিকতে পারবে? যেতে আসতে টিটকিরি মারবে। একজন মানী মানুষের মানসম্মান ধুলোয় লোটাবে। এত সহজে মেজাজ খারাপ করলে চলে? পৃথিবীটা পৃথিবীই, স্বর্গ নয়। তোমার মতো বোকা পৃথিবীতে আর দুটো নেই। ঠিক ফাঁদে গিয়ে পড়লে!

ফাঁদ আবার কী!

মানুষ কত উদ্দেশ্যে কত কাজ করে তোমার ধারণা আছে? নেই।

এ পাড়ায় আমারও কিছু বন্ধু আছে।

বিপদে কারওকে খুঁজে পাবে না। যাও, জামাটা খুলে ফেলে দিয়ে চান করে এসো।

কোনওরকমে খাওয়াদাওয়া হল। নিরানন্দ ভোজন। মুকু সেই থেকে আমার সঙ্গে কথা প্রায় বলছেই না। নীরবে সবকিছু করে যাচ্ছে। তার সাজগোজ হয়ে গেছে। গয়নার বাক্সটা আলমারি থেকে বের করলুম। মুকু হঠাৎ বললে, ওটাকে তুমি কি ওইভাবেই নিয়ে যাবে?

তা হলে?

কী তোমার বুদ্ধি? এ যেন ফুল দিয়ে সাজিয়ে শ্মশানে মড়া নিয়ে যাওয়া। বলো হরি! এক ঝটকায় কেড়ে নিলে কী করবে? ফাঁসফাস করে কাদবে?

তা হলে কী করে নিয়ে যাব?

বাজার করার চটের ব্যাগটা নিয়ে এসো। একটা খবরের কাগজে সব জড়িয়ে ওর মধ্যে ফেলো। তার ওপর একটা কাপড় চাপা দাও।

অক্ষরে অক্ষরে মুকুর নির্দেশ পালন করে পৌনে বারোটা নাগাদ আমরা রাস্তায় নেমে এলুম। মোড়ের মাথায় তিন-চারটে ছেলে জটলা করছে। একজনের সঙ্গে একটা সাইকেল। আমরা কাছাকাছি যেতেই একজন সিক করে একটা সিটি মারল। তিরের মতো লাগল। মন ছুঁড়ে গেল।

মুকু বললে, উঁহু, একেবারে পাত্তা দেবে না।

দু’পা এগোতে-না-এগোতেই আর একজন বলে উঠল, মালটা ভালই জুটিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আর একটা মন্তব্য, আসবে নাকি? খাওয়াব চাটিম কলা।

আমার কানদুটো গরম হয়ে গেল। হাতের মুঠো কষকষ করছে। ইচ্ছে করছে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমি যাঁর সন্তান, সেই হরিশঙ্কর হলে রক্তগঙ্গা বয়ে যেত। আমার মাতামহ হলে, সবকটাকে এক এক করে তুলে আছাড় মারতেন। ঠিকই বলতেন তিনি, ভঁটে চলাফেরা করার দুটো হাতিয়ার, ব্রহ্মচর্য আর মুগুর।

এলাকা ছাড়িয়ে আসার পর মুকু বললে, একা হবে না, দল চাই। লোফারদের চেনো!

একটাকে মনে হল চেনাচেনা। আর তিনটে বেপাড়ার। আমার কী মনে হচ্ছে জানো? সবকটাকে ছিঁড়ে খণ্ড খণ্ড করি।

একা পারবে না। নিজেই খণ্ড খণ্ড হয়ে যাবে। দলের সঙ্গে লড়তে হলে দল চাই। তুমি একা। তোমাদের পাড়াটা খুবই খারাপ।

আগে এইরকম ছিল না। হঠাৎ হয়ে গেছে।

এর একমাত্র কারণ, দেশবিভাগ।

এ পাড়ায় আর থাকা যাবে না মুকু।

তা বললে তো চলবে না। এত বছরের বসবাস ছেড়ে পালাবে কোথায়? আরও খারাপ দিন। আসছে। হেরে গেলে হবে না। কায়দা করে থাকতে হবে। কোনও কিছু গ্রাহ্য করবে না। যব হাতি চলে বাজার কুত্তা ভুকে হাজার।

ব্যাঙ্কের ম্যানেজার খুব ভাল ব্যবহার করলেন। আমি একা থাকলে হয়তো করতেন না। মুকুই কারণ। চোখ ঠিকরে দেবার মতো রূপ, তেমনি স্মার্ট। ম্যানেজার ভদ্রলোক চেয়ার থেকে শরীরটাকে আধখানা তুলে ফেলে এদিকে-ওদিকে দুলতে লাগলেন লগবগে নাচের পুতুলের মতো। মুকুই হেসে বললে, বসুন আপনি। ভদ্রলোকের চোখদুটো টিপের মতো আটকে রইল মুকুর মুখে। আমার বেশ মজা লাগছিল। হঠাৎ এক ছত্র কবিতা প্রজাপতির মতো উড়ে এল,

Man is the hunter, woman is his game;
The sleek and shining creatures of the chase,
We hunt them for the beauty of their skins
They love us for it, and we ride them down.

কিছু কিছু মানুষ আছেন উত্তেজনায় তোতলা হয়ে যান। ভদ্রলোকের তাই হল। অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস, এই একটি লাইন বলতে চেয়েছিলেন। কী বিপদেই যে পড়লেন! অল অল করলেন বারকতক। শব্দজব্দের মতো, পরের শব্দটা কী হবে আমরা অনুমান করার চেষ্টা করছি। ওয়েজটা মুক্তি পাবার পর আমরা সাহায্য করলুম, অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস। ভদ্রলোক যেন মুক্তির নিশ্বাস ফেললেন। বেল টিপলেন। দৌড়ে এল বেয়ারা। বেয়ারার সামনে তিনি ক্ষমতাশালী ম্যানেজার। দাপটে হুকুম দিলেন, চা নিয়ে এসো।

ইন্টারনাল ফোন তুলে কাকে যেন আসতে বললেন। চা আর ভদ্রলোক আসার ফাঁকে ম্যানেজার মুকুকে আবার একটা কিছু বলতে চাইলেন। সেই একই সমস্যা। আপনিতে এমনভাবে আটকে গেলেন, মনের কথা মনেই রয়ে গেল। কথা যখন চিউয়িংগাম হয়ে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না।

চটের ব্যাগ থেকে একে একে গয়না বেরোচ্ছে। ক্যাশিয়ার ভদ্রলোক মুকুর বুদ্ধির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। কী প্র্যাকটিক্যাল, কী ইন্টেলিজেন্ট! ম্যানেজার শুধু তারিফের হাসি হাসতে লাগলেন। কাগজপত্র তৈরি হল। সইসাবুদ হল। মুক্তির আনন্দ নিয়ে আমরা বেরিয়ে এলুম। এত দুঃখ, যে এই সামান্য ব্যাপারটাকেই মনে হচ্ছে কত বড় সুখ!

মুকু রাস্তায় নেমে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বললে, হারি আপ মাই বয়!

মুকু আমার বাবার এই কথা দুটো কোথা থেকে পেল, কাম অন মাই বয়, হারি আপ মাই বয়! তিনিই কি কথা বলছেন মুকুর কণ্ঠে বসে! বড় পরিচিত কথা।

আমার হাতে সেই বিশ্রী চটের ব্যাগটা। জিজ্ঞেস করলুম, মুকু, এইটার কী ব্যবস্থা হবে?

গোল করে পাকিয়ে বগলে চেপে রাখো। কেন, লজ্জা করছে?

পোশাকের সঙ্গে মানাচ্ছে না।

বাবা! দেখো। সেরকম হলে আমার কাছে দাও।

এরপর আর কিছু বলা যায় না। ঊর্ধ্বশ্বাসে আরও কিছু দূর হাঁটার পর জিজ্ঞেস করলুম, এরপর আমরা কোথায় যাব?

আমার হস্টেলে। তুমি একটা ট্যাক্সি ডাকবে। মালপত্র তুলব। সোজা চলে আসব বাড়ি।

কিছু কথা ছিল।

কী কথা?

কোথাও একটু বসা দরকার।

বসার দরকার নেই। বুঝেছি, তুমি কী বলতে চাও। ভয়ে মরছ। তুমি চাও না আমি তোমার সঙ্গে থাকি! পাড়ার ওই লোফারগুলো তোমাকে টিটকিরি মারবে। এই হল তোমার এক নম্বর ভয়। দু’নম্বর ভয়, যদি মেসোমশাই ফিরে আসেন, তা হলে আমাকে দেখে কী ভাববেন? তোমার ওইসব ভয়কে আমি পাত্তা দিচ্ছি না। তোমাকে আমি একলা থাকতে দেব না। তোমার একটা গুণ ছিল না, সেইটা হঠাৎ এসেছে, কথায় কথায় মারামারি করা। একই সঙ্গে তোমার বাবা আর মা হয়ে তোমাকে আগলাতে হবে।

মুকুর কথা শুনে আমি থমকে গেলুম। এ অভিনয়, আদিখ্যেতা, না সত্যিই প্রেম!

মুকু বললে, হাঁ করে তাকাবার মতো আমি কিছু বলিনি। তুমি এখন আমার মুঠোয়।

বাস আসছে। স্টপেজ কিছুটা দূরে। মুকু বললে, হারি আপ মাই বয়!

আমরা বাসে উঠে পড়লুম। ফাঁকা। পাশাপাশি বসলুম। কিছু দূর যেতে-না-যেতেই আমার মাথায় আর এক চিন্তা এল, টাকা। অন্নচিন্তা চমৎকারা। মুকু যদি আমার সঙ্গে থাকে তা হলে রোজগার চাই। ভাল রোজগার। চাকরি ছাড়ার উপায় নেই। সংসারে জড়িয়ে পড়ার এই বিপদ। একা হলে কোনও কথাই ছিল না। খাওদাও বগল বাজাও।

খুব মৃদু গলায় ডাকলুম, মুকু।

চোখ বুজিয়ে বসে ছিল। চোখ না খুলেই বললে, আবার কী সমস্যা!

সবার আগে আমার ফ্যাক্টরিতে তো একবার যেতে হয়।

চলল। এর জন্যে অত ভাবার কী আছে?

তা হলে টিকিটটা সেইভাবেই কাটি।

কাটো। তোমার ম্যানেজিং ডিরেক্টারের সঙ্গে আমি কথা বলব।

আমিই সব গুছিয়ে বলতে পারব।

আমি বললে আরও ভাল পারব। তা ছাড়া আমার সঙ্গে পরিচয়ও হয়ে যাবে।

যদি কিছু মনে করেন?

তোমার এই এক হয়েছে! সবেতেই দুর্ভাবনা। মনে করলে করবেন।

তুমি বললে, এম ডি ভাববেন ছেলেটার কোনও ব্যক্তিত্ব নেই।

তোমার সত্যিই কি কোনও ব্যক্তিত্ব আছে? নিজে নিজে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারো?

চুপ মেরে গেলুম। মুকুর গলা ক্রমশই চড়ছে। যাত্রীরা আমাদের দিকে তাকাচ্ছেন অবাক হয়ে। একজন সাংঘাতিক সুন্দরী মেয়ে বোকাবোকা একটা ছেলেকে তেড়ে ধমকাচ্ছে। ভাবছেন, ব্যাপারটা কী?

ফ্যাক্টরির গেটের সামনে দু’জনে এসে দাঁড়ালুম। দ্বিতীয় শিফটের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অফিস আর ল্যাবরেটরি বিল্ডিং-এর পেছন দিকে কারখানার বিশাল চিমনি, ভুসভুস করে ধোঁয়া ছাড়ছে। বেশ ভারী একটা লাঞ্চের পর যেন ধূমপান করছেন বড়সড় কোনও মানুষ। অফিস গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের পাবলিসিটি অফিসার। খুব সাজগোজ করেন। নিজেই যেন এক জীবন্ত পাবলিসিটি। কোম্পানির যত কসমেটিক্স আছে সবই মেখে বসে আছেন। প্রতিদিনই তাই করেন। এইটাই তার ধরন। মেয়েলি চেহারা, মেয়েলি ভাবভঙ্গি। পোশাকে কখনও বাঙালি, কখনও পাক্কা সাহেব। আজ সাহেব। সাদা জামার ওপর টাই ঝুলছে। আমার সাথে মোটামুটি ভালই খাতির। খাতিরের কারণ, আমাকে মাঝে মাঝেই তাঁর কবিতা শুনতে হয়। প্রবল প্রেমের কবিতা। প্রেমিকা কোথায় আছেন জানি না। সেই প্রেমিকাকে তিনি প্লেটে সাজিয়ে কখনও দিচ্ছেন রক্তঝরা হৃদয়, কখনও ফুসফুস, কখনও অঞ্জলি দিচ্ছেন নয়নপদ্ম। বাকি আছে, যকৃৎ, প্লীহা। একমাত্র কোনও সার্জেনই এই কাণ্ড করতে পারেন।

আজ সাহেবি পোশাক বলে সাহেবের মতো আচরণ, হ্যাল্লো। হাউ ডু ইউ ডু! শোনাল, হাডুডু। আর একটু হলেই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিত কিত! সামলে নিলুম কোনওক্রমে। হাতটা ধরে কষে আঁকানি মারলেন। তারপর মুকুর দিকে তাকিয়ে কুমডোর ফালির মতো হাসলেন। হেসেই রইলেন। চোখ দেখে মনে হল, অসীম কৌতূহল পরিচয় জানার।

বলেই দিলুম প্রশ্ন করার আগে, আমার বোন।

দেখেই বুঝেছি মুখের মিল। অসম্ভব সাদৃশ্য।

হাতে একটা চেনবাঁধা চাবি ছিল। উত্তেজনায় পাঁইপাই ঘোরালেন একবার। শেষে অদ্ভুত এক প্রশ্ন করলেন, তোমার চুল কত বড়?

মুকু অবাক হয়ে বলল, আমার চুল?

হ্যাঁ তোমার চুল।

তা হবে, কোমর পর্যন্ত নামবে তো বটেই।

ব্যস, আমার একটা মস্ত চিন্তা গেল। তোমাকে আমাদের তেলের বিজ্ঞাপনের মডেল করব। এমন সুন্দর চেহারা, চাঁদের মতো মুখ। মডেলিং-এর ফিউচার জানো, ভেরি ব্রাইট। কাপড়ের বিজ্ঞাপন হলে তোমাকে কখনই বলতুম না। চুলের বিজ্ঞাপন অ্যাবসলিউটলি ইনোসেন্ট। চুল আঁচড়াবে, চুল খুলবে, ব্লোয়ার দিয়ে চুল উড়িয়ে দোব, তুমি একটা টার্নটেবিলে ঘুরবে। স্লো-মোশনে দেখানো হবে। গোটা চারেক কথা। কবিতাও হতে পারে। আমাদের পেমেন্ট খুব ভাল। ক্যাশ। তোমাকে আজ আমি বলে রাখছি, তুমি ফিমস্টার হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। লেখাপড়া কী করেছ?

মুকু যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। কোনওরকমে বেরিয়ে এসে বললে, এম এ পড়ছি।

তা হলে? সেটাও তো একটা ব্যাপার। তুমি তো আমাদের পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে জয়েন করতে পারো। একটা ওপনিং আছে। ভাইবোন একসঙ্গে আসবে, একসঙ্গে যাবে। এম ডি-কে বললে এখুনি রাজি হয়ে যাবেন। তোমার ভাইকে ভীষণ ভালবাসেন তো! তা তোমরা দু’জনে যাচ্ছ কোথায়?

আমি বললুম, ছুটিতে আছি, এম ডি-র সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।

তা যাও যাও, দেখা করো। পারলে কথাটা পেড়ো।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মুকু বললে, মেয়েদের জীবনে কত বিপদ দেখেছ? সামনের রার ছেলে হয়ে জন্মাব।

আমি কী ভাবছি জানো? সামনের বার মেয়ে হয়ে জন্মাব। মেয়েদের কী ডিম্যান্ড।

মুকু শেষপর্যন্ত এম ডি-র ঘরে ঢুকল না। বসে রইল ভিজিটার্স রুমের সোফায়। আমি ঢুকতেই তিনি বললেন, একী, তুমি কলকাতায়? যাওনি এখনও? বোসো বোসো।

চেয়ার টেনে বসলুম। সামনে বিশাল টেবিল ঝকঝক করছে। পেছনে সার সার বুক শেলফে রাজ্যের রসায়ন শাস্ত্রের বই। দেয়ালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ছবি! সারাঘরে চোখ ঘুরে এল। চেয়ারে সামান্য নড়াচড়া করে বললুম, আমি খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে ছুটে এসেছি। আমার খুব প্যাথেটিক অবস্থা।

এম ডি উদ্বিগ্ন মুখে আমার দিকে তাকালেন। আমি বেশ গুছিয়ে আমার কাহিনি বললুম। শেষে যোগ করলুম, আপনি যদি আমাকে কলকাতায় থাকতে দেন তবেই আমার এই চাকরিটা থাকে।

তিনি অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তোমারও দুর্ভাগ্য আমাদেরও দুর্ভাগ্য। নতুন একটি প্রোজেক্ট হাতে নিলুম, এখন তোমার মতো ভাল ছেলে পাই কোথায়!

আমার যা মনে হয় স্যার, মাস তিনেকের মধ্যে তাকে খুঁজে পাব এবং ফিরিয়ে আনতে পারব।

আমার তা মনে হয় না। তোমাদের পরিবারে একটা বৈরাগ্যের বাতাস ঘুরছে। তা ছাড়া হরিশঙ্করকে আমি যতদূর জানি, সে কোনও হঠকারিতা করার পাত্র নয়। কলেজ লাইফ থেকে আমি তাকে চিনি। সব ব্যাপারেই ভেরি সিরিয়াস। আর বৈরাগ্য, এ বড় মজার জিনিস। হঠাৎ আসে প্রশ্ন নিয়ে, একেবারে বেসিক প্রশ্ন,

তাই কি? সকলি ছায়া? আসে থাকে আর মিলে যায়?
তুমি শুধু একা আছ, আর সব আছে আর নাই?
যুগ যুগান্তর ধরে ফুল ফুটে ফুল ঝরে তাই?
প্রাণ পেয়ে প্রাণ দিই সে কি শুধু মরণের পায়?

এম ডি উজ্জ্বল মুখে আমার দিকে তাকালেন, কার লেখা?

রবীন্দ্রনাথ।

এম ডি নিজেই একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলেন। মনে হয় একই প্রশ্ন তাকেও পীড়া দিচ্ছে,

কোথা রাত্রি কোথা দিন, কোথা ফুটে চন্দ্র সূর্য তারা!
কেবা আসে, কেবা যায়, কোথা বসে জীবনের মেলা!
কেবা হাসে, কেবা গায়, কোথা খেলে হৃদয়ের খেলা!
কোথা পথ, কোথা গৃহ, কোথা পান্থ, কোথা পথহারা!
কোথা খসে পড়ে পত্র জগতের মহাবৃক্ষ হতে,

ফরসা টকটকে মুখ, অনেকটা গ্রিক ভাস্কর্যের মতো। সোনার ফ্রেমের চশমা। ছোট্ট টিকোলো নাক। সর্ব অর্থে সফল একজন মানুষ। মস্ত বড় একজন রাসায়নিক। তাঁর চোখেও জল চিকচিক করছে। কার কথা ভেবে? কোথায় যাবার কথা ভেবে? এত পূর্ণতার মাঝেও রিক্ততা। আমি, আমার, এর নাম অজ্ঞান; তুমি, তোমার, জ্ঞান। আমিই তুমি, তুমিই আমি, এর নাম বিজ্ঞান। এম ডি এই মুহূর্তে সেই বিজ্ঞানী।

হঠাৎ বললেন, তুমি তো গান জানো? এই গানটা গাইতে পারো, গোল ছেড়ে মাল লও বেছে। গোলমালে মাল মিশানো আছে ॥ জানো না মন রাগের কারণ। যেমন বালির সঙ্গে চিনির মিলন। সহস্র বর্ণে মিশেছে। পুরোপুরি কেমিস্ত্রি! কী বলো? ফিলট্রেশন, ডিক্যান্টেশন, ডিস্টিলেশন, অ্যানালিসিস, অ্যাসে, টাইট্রেশন। বিশাল এই হিউম্যান ল্যাবরেটরিতে তিনিই হলেন চিফ কেমিস্ট। আমি কী বলি জানো? আমি তো তোমার পিতার মতোই। একটা ভাল পরামর্শ দোব?

আমি তো আপনার পরামর্শের জন্যেই সব ছেড়ে ছুটে এসেছি।

তুমি দেরাদুনে যাও। বড় কাজের মধ্যে নিজেকে ছেড়ে দাও। আর দেরাদুন হল হিমালয়ান সেন্টার। ওইখান থেকে অনুসন্ধান চালাও হরিদ্বার, ঋষিকেশ, রুদ্রপ্রয়াগ, দেবপ্রয়াগ। তাকে পাওয়ার কাজটা সহজ হবে।

একটাই যে সমস্যা, এখানকার বাড়িতে কে থাকবে!

ওটা কোনও সমস্যাই নয়। অনেক সময় সব সপরিবারে বাইরে বেড়াতে যায়, তখন কী হয়? বাড়ি তালাবন্ধ থাকে। এক মাস, দুমাস।

সব যে ধুলো পড়ে যাবে! চুরির ভয় আছে।

কেন? তোমাদের পাড়া কি তেমন সুবিধের নয়? ধুলোকে ভয় নেই। ঝাড়লেই উড়ে যাবে। ভয় হল চোরের।

একসময় খুব ভাল পাড়া ছিল। এখন আর তেমন নেই।

তা হলে এক কাজ করা যায়। তোমাকে একজন বিশ্বাসী তোক দিতে পারি, কেয়ারটেকারের মতো। ভীষণ বিশ্বাসী মানুষ। আসলে কী জানো, তোমাকে আমি ভীষণ ভালবেসে ফেলেছি। কেন তা বলতে পারব না। তোমার ফিউচার আমি গড়ে দিয়ে যেতে চাই। আমার আর ক’দিন? হরিশঙ্কর চলে গিয়ে আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। হরিশঙ্করের ছেলে মানে আমার ছেলে। তা ছাড়া আমার ছেলে নেই। একটি মাত্র মেয়ে। আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে?

আজ্ঞে না।

শান্তিনিকেতন থেকে এবার এলেই তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দোব। তা হলে তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলো। চলে যাও দেরাদুনে। ওখানে নিখিল তোমার অপেক্ষায় আছে। দেখবে কী সুন্দর বাংলো! সামনেই মুসৌরি হিল। পেছনে ফরেস্ট। একটু দূরেই সহস্রধারা। মিলিটারি অ্যাকাডেমি।

আমি তা হলে আসি আজ।

কাল আমাকে জানাবে। রাতটা ভেবে নাও ভাল করে। বেশি ভেবো না। সারেন্ডার করে দাও নিজেকে। ঘটনা মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কৌশল হল নিজেকে ভাসিয়ে রাখা। জীবন অনেকটা নৌকোর মতো, ভাসতে তোমাকে হবেই। হালটা শুধু ধরিয়ে দাও শক্ত হাতে। তার হাতে।

উঠে প্রায় দরজার কাছে চলে এসেছি এমন সময় পাবলিসিটি অফিসার ঢুকলেন। ঢুকেই বললেন, তোমার বোনকে বাইরে বসিয়ে রেখেছ কেন? বেচারা মুখ চুন করে বসে আছে।

এম ডি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, তোমার বোন? তোমার বোন আছে জানতুম না তো? তা হলে তো তোমার দেরাদুন যাওয়া হবে না।

একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলুম। ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার। এম ডি নিজের ঘর ছেড়ে ভিজিটার্স রুমে বেরিয়ে এসেছেন। মুকু উঠে দাঁড়িয়েছে। সহবত জানা মেয়ে, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। এম ডি তাড়াতাড়ি মুকুর মাথায় হাত রেখে বললেন, বাঃ ভারী সুন্দর মেয়ে তো। কী নাম তোমার মা?

মুকুলিকা।

পাবলিসিটি অফিসার বললেন, আমার একটা সমস্যা মিটে গেছে। একে আমার বিজ্ঞাপনের মডেল করব। মেয়েটি শিক্ষিতা, এম এ পড়ছে। ভাবছি, আপনার অনুমতি নিয়ে ওকে আমার ডিপার্টমেন্টে নিয়ে নোব। ভাইবোন একই সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবে। বেশ হবে।

এম ডি আমার পিঠে হাত রেখে বললেন, তা হলে তুমি কলকাতাতেই থাকো। তোমার জায়গায় সুহাসকেই পাঠাই। সেইটাই হবে বেস্ট সলিউশন। আচ্ছা, আমি আর তোমাদের সময় দিতে পারছি না। আমার আবার চেম্বার অব কমার্সে মিটিং আছে। আমি আর মুকু পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন