২.০৫ Happiness is beneficial for the body

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

Happiness is beneficial for the body
but it is grief that develop the Powers of the mind

গভীর রাতকে মাঝে মাঝে মনে হয় কালো এক অশ্বারোহী। ছুটে চলেছে নতুন এক দিনের দিকে। কখনও মনে হয় জুয়াড়ি। প্রদীপের আলোয় মাথা নিচু করে বসে তিন তাস খেলছে। আগামী প্রভাত

কে দেখবে আর কে না দেখবে!

পাশের ঘর থেকে মুকু বেরিয়ে এল সেই ডুরে শাড়িটা পরে। ঘরে ঢুকেই বললে, সমস্ত দরজা জানলা বন্ধ করো। নীচের সব বন্ধ হয়েছে?

হয়েছে।

ঘুপচিঘাপচি সব দেখে এসেছ, কেউ ঢুকে বসে নেই তো ঘাপটি মেরে!

না, তা তো দেখিনি। সদরে খিল লাগিয়ে উঠে এসেছি।

বাঃ, টর্চের আলো ফেলে একবার দেখে এলে না? লুকিয়ে থাকার জায়গার তো অভাব নেই। যাও একবার দেখে এসো।

কঠিন পরীক্ষা। আমি ভিতু। ভয়ংকর রকমের ভিতু। ভূতের ভয়, চোরের ভয়, সাপের ভয়, এমনকী ব্যাংকেও ভয় পাই আমি। ব্যাঙের বিশ্রী একটা স্বভাব হল, লাফিয়ে কোলের ওপর আসার চেষ্টা। সেইজন্যেই বলে কোলা ব্যাং। আমাকে ইতস্তত করতে দেখে মুকু বললে, ধরেছে তো! ভয়ে একেবারে মরে যাচ্ছ!

তুমিও চলো না।

না, তোমাকে একা যেতে হবে। পুরুষমানুষ, সাহস করো। ছায়া দেখে চিৎকার করে উঠো না। সেই পাঁচ সেলের টর্চটা নিয়ে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছি। ড্যাম্প। সোঁদা সোঁদা গন্ধ। দেয়ালে নোনা ধরেছে। আপনা আপনিই নানা দেশের মানচিত্র হয়ে বসে আছে। দরজার ফাটলে ফাটলে উচ্চিংড়ের কলরোল। রাতের ঝিল্লি যেন কাঁপছে দিনের গর্ভযন্ত্রণায়! মনে হচ্ছে পাতালে নামছি। পায়ের দিক থেকে একটা গুড়গুড়ে শীত তলপেট পর্যন্ত উঠে আসছে। অন্ধকার যেন কফিনে শুয়ে আছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে, এই বুঝি কাঁধে কেউ হিমশীতল হাত রাখবে। ঘাড়ে ফেলবে বরফ-নিশ্বাস।

দেখেশুনে ফিরে এলুম। মুকু খাটে আড় হয়ে শুয়ে আছে রাজরানির মতো। কিছু চুল সামনে ঝুলছে, কিছু পিঠের দিকে। একটা ডায়েরি খুঁজে বের করেছে কোথা থেকে। গম্ভীর মুখে পাতা ওলটাচ্ছে। নীল চাঁদরের ওপর মুকুকে বেশ মানিয়েছে। মুখ তুলে বললে, সব ঠিক আছে?

আছে।

আমি মেসোমশাইয়ের একটা ডায়েরি খুঁজে বের করেছি। বেশ কিছু ঠিকানা লেখা আছে। এই ঠিকানা ধরে আমরা অনুসন্ধান করে দেখতে পারি।

সবই কি কলকাতার? বেশির ভাগই কলকাতার, বাইরেরও আছে কিছু। দক্ষিণভারত, উত্তরভারত, মধ্যভারত।

ওইসব ঠিকানার সঙ্গে বছরে একবারই যোগাযোগ। বিজয়ার চিঠি। ওর কোনওটাতেই তাঁকে। পাওয়া যাবে না।

তোমার অনেক দোষের একটা হল, তুমি নিরাশাবাদী। সব কিছুতেই না। হ্যাঁ বলতে জানোনা? যাক তোমার সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই। দরজা বন্ধ করে গয়নার বাক্স বের করো। আজই লিস্টটা তৈরি করে ফেলি।

অনেক রাত হল, না?

হল তো হল, তাতে তোমারই বা কী, আমারই বা কী? রাতের সম্পর্ক ঘুমের সঙ্গে। সময় নষ্ট না করে সব নিয়ে এসো।

গয়নার বাক্সটা খাটের মাঝখানে রাখা হল। একপাশে আমি আর একপাশে মুকু। মুকুর হাতে কাগজ আর কলম। প্রথমেই বেরোল ছ’টা আংটি। একটা আংটি হাতে নিয়ে মুকু বললে, পাথরটা মনে হচ্ছে হিরে?

হ্যাঁ, হিরে। ওটা আমার মায়ের আঙুলের। বিয়ের আংটি।

আংটিটি নিজের অনামিকায় গলিয়ে মুকু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। একটা অশরীরী আলো ছিটকোচ্ছে। মুকু বললে, মায়ের আঙুল আর আমার আঙুল একই মাপ। আমি যে আসব মা বোধহয় জানতেন। এ সবই তো আমার।

অবাক হয়ে মুকুর দিকে তাকালুম। এত লোভী!

মুকু বললে, খুব খারাপ লাগল শুনতে, তাই না? ইচ্ছে করে বললুম, তোমার মনে হেঁকা দেবার জন্যে। সবই তোমার, গয়নার লোভ আমার নেই। পুরো বাক্সটা উপুড় করে দাও। আমি এক একটা লিখব, আর তুমি তুলবে।

বাক্সটা উপুড় করে দিলুম। চুড়িতে রুলিতে ঠোকাঠুকি হয়ে কিনকিন শব্দ করে উঠল। মনটা কেমন ছাত করে উঠল। যাঁদের অঙ্গে এইসব শোভা পেত, তারা পৃথিবীর খেলা শেষ করে বহুদিন হল চলে গেছেন। হিরের আংটি আঙুলে। মা হারমোনিয়ম বাজিয়ে গান গাইছেন। হিরে ঝিলিক মারছে। নাকে হিরের নাকছাবি। কানে মুক্তোর দুল। কত সুখ ছিল এই সংসারে! মৃত্যু এসে ঈগল পাখির মতো একে একে সব ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেল।

মুকু বললে, অতীত থেকে দয়া করে ফিরে এসো বর্তমানে। এই নাও, নাম্বার ওয়ান। হিরের আংটি। নাম্বার টু, রুবির আংটি, পোখরাজ, নীলা।

লিস্ট ক্রমশই বড় হচ্ছে। বিছে হার, প্রজাপতি হার, চেন, সাপ বালা। জোড়া সাপ। সাপের চোখে রুবি। প্রজাপতি হারটার অবাক করা শোভা। মোটামোটা চুড়ি, রুলি, আর্মলেট, টায়রা, ব্রোচ। শেষ গয়নাটা যখন বাক্সে ফিরে এল ঘড়িতে তখন রাত দুটো। আমার হাই উঠছে। মুকু আমার চুলে হাত বুলিয়ে বললে, এইবার বাবুর ঘুম পেয়েছে গো! যাও সব তুলে রাখো। কাল আমরা দুজনে গিয়ে ব্যাঙ্কে জমা করে দিয়ে আসব।

আলমারির মধ্যে বাক্সটা চালান করে দিলুম। চন্দনের গন্ধ, ন্যাফথালিনের গন্ধ ছড়িয়ে গেল ঘরে। নানারকম সুগন্ধীর সঙ্গে আমার পিতার যোগ ছিল। ফালি ফালি কাপড়ে নানারকম সেন্ট মাখিয়ে জানলায় জানলায় ঝুলিয়ে দিয়ে মোটা গালচে পেতে এসরাজ বাজাতে বসতেন। সুর আর সুগন্ধ একসঙ্গে ছড়াত সারা বাড়িতে। এসরাজটা সিল্কের আলখাল্লা পরে কোণের টেবিলে দাঁড়িয়ে আছে। আর কি কোনওদিন বেজে উঠবে!

মুকু আলগোছে ঢকঢক করে জল খেল। খাটের চাদরটা টানটান করে বালিশ পেতে দিয়ে বললে, নাও শুয়ে পড়ো। শোওয়ার আগে জল খেয়ো।

আর তুমি?

আমি পাশের ঘরে।

সেকী? এই বিশাল খাটে আমাদের দু’জনেরই তো চমৎকার হয়ে যেতে পারে!

আরে ছি, ছি, দু’জনে একই বিছানায় শোওয়া যায়, না শোওয়া উচিত? তিনি থাকলে পারতে? না-থাকায় তিনি আরও আছেন। এই কথাটা যেন ভীষণভাবে মনে থাকে! কোনও অপবিত্র আদর্শবিরোধী কাজ এই বাড়িতে চলবে না। এটা জ্ঞানপীঠ, সাধনপীঠ! পাশাপাশি চুপচাপ দু’জনে শুলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

মহাভারত অশুদ্ধ না হলেও, দেহ অশুদ্ধ হবে। তুমি একটু একটু করে আমার দিকে সরবে, আমি সরব তোমার দিকে। রাত ভোর হবার আগেই যা হবার তা হয়ে যাবে। লোহা আর চুম্বক দূরে দূরে থাকতে পারে না।

আমি কথা দিচ্ছি।

তোমার কথা যে আমি বিশ্বাস করি না মহারাজ। তুমি মিথ্যাবাদী।

মিথ্যাবাদী? আমি মিথ্যাবাদী?

ডাহা মিথ্যাবাদী। বিকেলে তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলুম, সারাদিন তুমি কী খেলে? অম্লান বদনে বললে, টুকটাক, সামান্য কিছু। মানে, প্রায় উপোসই করে আছ। ইতু বউদি বললেন, তুমি দুপুরে পাত পেড়ে চর্ব-চুষ্য খেয়ে গেছ। এই ডাহা মিথ্যেটা তুমি বললে কেন? আমি জানি কেন বললে! তোমার সবটাই লোকদেখানো। তুমি দেখাতে চাইলে, দেখো, আমি কত বিচলিত, নাওয়া খাওয়া ভুলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি আওয়ারা হয়ে। আসলে, ব্যাপারটা তুমি বেশ মেনে নিয়েছ শান্ত মনে, হজম করে ফেলেছ। কোনও কিছু তোমার মন স্পর্শ করে না। মন ছুঁয়ে চলে যায়। ছোট ছোট ব্যাপারেই মানুষকে চেনা যায়, বড় ব্যাপারে যে কী করবে! আর যেই করুক তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করেননি তোমার বাবাও। নাও এখন শুয়ে পড়ো। আমি পাশের ঘরে চললুম। আমার প্রবল ঘুম পেয়েছে এইবার। আর দাঁড়াতে পারছি না। শোওয়ার আগে হাত জোড় করে প্রার্থনা করবে, ঈশ্বর! আমাকে চরিত্র দাও, আবেগ দাও, চোখে জল দাও। লোককে দেখাব না, নিজেকে দেখাব। নিজেই নিজেকে দেখে বাহবা করে উঠব। সার্টিফিকেট বাইরের কেউ দিতে পারে না। নিজের সার্টিফিকেট নিজেই দেওয়া যায়।

মুকু যেন আগুনের মতো জ্বলছে। আমার বিবেক যেন আমার সঙ্গে কথা বলছে। পাশের ঘরের দরজা বন্ধ করার শব্দ হল। আমি বসে রইলুম গুম মেরে। আমার ঘুম ছুটে গেছে। হাওয়া কোন দিকে ঘুরছে কে জানে? নিস্তব্ধ চরাচর। উত্তুরে বাতাস ছেড়েছে। দমকে দমকে। গাছের পাতায় ঝুপঝাঁপ শব্দ। হঠাৎ একটা গান ভেসে এল মনে,

সুদূর কোন নদীর পারে গহন কোন বনের ধারে
গভীর কোন অন্ধকারে হতেছ তুমি পার ॥

তিনি কে? তিনি আমার পিতা, শ্ৰীযুত হরিশঙ্কর। নিরুদ্দিষ্টের কলামে বিজ্ঞাপন দিতে হলে লিখতে হবে: প্রবীণ এক মানুষ। সুঠাম শরীর। উচ্চতা, পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি। মাথার চুল পাতলা হয়ে এসেছে। বুকের মাঝখানে অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়ার দাগ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। পাতলা ক্ষুরধার ঠোঁট। উন্নত নাসা। তিনি সুদূর কোন নদীর পারে গহন কোন বনের ধারে এই গভীর নিশায় দাঁড়িয়ে আছেন একা। একটি খেয়া হঠাৎ খুলে গেল তীর থেকে। গভীর কোন অন্ধকারে হতেছ তুমি পার। আর ভাবতে পারছি না। এইবার শুয়ে পড়ি।

ঘুম ভেঙে গেল। দরজায় টকটক শব্দ। জানলায় উজ্জ্বল প্রভাত। মুকুর গলা, গেট আপ মাই বয়। বাইরে এসে অবাক হয়ে গেলুম। শাড়ির আঁচল কোমরে জড়ানো। হাতে একটা ঝাড়। খোঁপা মাথার উপর উঁচু করে বাঁধা।

মুকু বললে, গুড মর্নিং।

মর্নিং। তোমার এ কী বেশ?

কাজের লোকের বেশ। তোমার ঘরটা ছাড়া সবই পরিষ্কার করা হয়ে গেছে। উনুনে আগুন পড়েছে। এইবার চা চাপছে। মুখ ধুয়ে নাও।

কখন উঠেছ তুমি?

উঠেছি? কখন শুয়েছি তাই বলো?

সেকী, সারারাত জেগে ছিলে? কেন? ঘুম এল না?

তা হলে এই দেখো।

মুকু নিমেষে তার ডান উরুটা আমার সামনে খুলে ধরল। ফরসা ধবধবে। এত ফরসা যে চোখে ধাঁধা লেগে গেল। সেই শুভ্র ত্বকে থর নিয়ে উঠেছে লাল চাকামতো একটা কী।

চমকে প্রশ্ন করলুম, কী ওটা?

শাড়ি নামিয়ে দিয়ে মুকু বললে, যন্ত্রণা। সবে শুয়েছি। ঘুমও প্রায় এসে গেছে। এমন সময় দিলে কামড়ে।

কী কামড়াল?

বিছে। খপ করে চেপে ধরলুম অন্ধকারে। চটকে রগড়ে রসটা মাখিয়ে দিলুম। জানো তো, বিষের ওষুধ বিষ। সারারাত জ্বলল হুহু করে লঙ্কাবাটার মতো। বসে বসেই রাতটা কেটে গেল।

আমাকে ডাকলে না কেন?

তুমি আমার সুখের সাথী। দুঃখের সাথী হতে যাবে কেন?

কাল থেকে তুমি খুব পাকাঁপাকা কথা বলছ। কই দেখি আর একবার?

মুকু হেসে বললে, আর না মশাই। একবারই যথেষ্ট।

তুমি আমাকে কী ভাবো বলল তো! চলো, একটু ওষুধ লাগিয়ে দিই।

কোনও প্রয়োজন নেই, আপনিই সেরে যাবে। তুমি তোমার কাজে যাও, আমি যাই আমার কাজে। মুকু আমার ঘরে ঢুকে গেল। মশারি তুলে, বিছানা গোছগাছের কাজে লেগে গেল। দাঁত বুরুশ করতে করতে নিজেকে ধিক্কার দিলুম– সত্যিই তুমি বাপু শয়তান। তোমার ছলের অভাব নেই। মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছ না? মানুষের একটা প্রত্যঙ্গ তোমাকে এমনভাবে কাবু করে ফেলল? হবে না, তোমার কিছু হবে না। সেই দুই সন্ন্যাসীর গল্প। দু’জনেই চলেছেন, এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায়। খুব বৃষ্টি হয়েছে ক’দিন। চারপাশে জলকাদা। ডোবা, খানাখন্দ। সন্ন্যাসী দু’জন চলেছেন। পেছনে আসছিলেন এক সুন্দরী যুবতী মহিলা। তেমনি তার সুন্দর সাজপোশাক। সামনেই একটা কাদার ঈক। মহিলা ইতস্তত করছেন। ওই কাদায় নামলে শাড়ি জুতো সবই যাবে। তাঁর ইতস্তত ভাব দেখে এক সন্ন্যাসী তার দিকে এগিয়ে গেলেন। মহিলা কিছু বলার আগেই পাঁজাকোলা করে তাকে কাদার অংশটুকু পার করে দিলেন। আবার চলতে শুরু করলেন দুই সন্ন্যাসী। হাঁটতে হাঁটতে তারা এসে পৌঁছোলেন এক মঠে। রাত হল। দু’জনেই শুয়েছেন এক ঘরে। হঠাৎ দ্বিতীয় সন্ন্যাসী বললেন, পরমানন্দ! তুমি এটা কী করলে?

কোনটা?

তুমি তো জানো, আমাদের মতো সন্ন্যাসীর নারীদর্শনেও চিত্তচাঞ্চল্য হতে পারে। স্পর্শ! সে তো আরও ভয়ংকর! আর তুমি সেই মহিলাকে কোলে করে কাদা পার করালে! কাজটা কি ভাল করলে?

পরমানন্দ হাসতে হাসতে বললেন, হায় হরি! আমি তো তাকে কখন কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছি, তুমি এখনও তাকে বয়ে বেড়াচ্ছ!

ওই দ্বিতীয় সন্ন্যাসীর অবস্থা হয়েছে আমার। কতক্ষণে ওই নিদারুণ প্রত্যঙ্গ মন থেকে সরে যায় দেখি! সারাটা দিনই থাকবে। নিজেকে তো ভালই চিনি। মুকুর ডাক ভেসে এল, কতক্ষণ ধরে সঁাত মাজবে! তোমার ক’টা দাঁত? বত্রিশটা না চৌষট্টিটা?

মুকুর বেশ দেখে চমকে উঠলুম। আমার একটা পাজামা আর পাঞ্জাবি পরে দুকাপ চা হাতে নিয়ে ঘরের দিকে চলেছে।

এ তোমার কী বেশ?

কী করব, বাসী কাপড়চোপড় সব কেচে দিয়েছি। আর তো নেই কিছু।

কেন, যে-শাড়িটা পরে এসেছিলে?

সেটা তো রাস্তার কাপড়। ওটা পরে রান্নার কিছু ছোঁয়া যায়!

উঃ, তুমি একটা হয়েছ বটে! তোমার ওই জায়গাটা কেমন আছে?

আবার সেই চিন্তা! বেশ আছে, ভাল আছে। মাঝে মাঝে চিনচিন করছে।

ডাক্তারবাবুকে কল দোব?

তার আগে এসো দু’জনে মিলে বাড়িটা পরিষ্কার করি। বাজারে যাবে তো?

কী রাঁধবে?

সব নিরামিষ।

আমরা তো শাক্ত!

মেসোমশাই মাছ, মাংস, ডিম সব ছেড়ে দিয়েছিলেন। দাদু শেষটায় হয়েছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। পিতার আদর্শকে যে-ছেলে ধরে রাখতে পারে সে-ই সুসন্তান। একথা আমার নয় কনফুসিয়াসের।

তোমার হস্টেলের কী হবে!

বারোটার সময় আমরা দুজনে বেরোব খেয়েদেয়ে। প্রথমে যাব ব্যাঙ্কে। সেখান থেকে হস্টেলে। যা আছে সব নিয়ে চলে আসব।

আর ইউনিভার্সিটি?

কাল থেকে আবার ক্লাস শুরু হবে।

আর আমার চাকরি?

কাল থেকে বেরোও। কতদিন আর বাড়িতে বসে থাকবে!

আমাকে তো দেরাদুনে বদলি করেছে।

তুমি তোমার অসুবিধের কথা গিয়ে বললো। বলল আমি এখন কলকাতায় থাকব।

সে হয় না। অত বড় একটা প্রোমোশন নোব না!

তাই বলো! লোভ! লোভে ধরেছে। তা হলে দোরতাড়া বন্ধ করে দেরাদুনে চলে যাও। আমি আমার হস্টেলেই ফিরে যাই।

একটা কথা বলব সাহস করে?

বলো।

বেশ কিছুক্ষণ ইতস্তত করলুম। বলব কি বলব না? শেষে আমতা আমতা করে বলেই ফেললুম, আমরা যদি বিয়ে করি? করে সোজা দেরাদুনে চলে যাই?

মুকু হাহা করে হেসে উঠল, বিয়ে করবে? মেসোমশাইয়ের অবর্তমানে, অনুমতি ছাড়াই? তিনি বাঁচলেন কি মরলেন একবার দেখবে না! নিজের সুখ নিজের কেরিয়ারটাই কেবল দেখতে চাও! যে-মানুষ সমস্ত ত্যাগ করে তোমাকে মানুষ করলেন, শেষটায় তিনি এইভাবেই হারিয়ে যাবেন!

তা হলে আমি করবটা কী? শূন্য ঘাটে আমি কী-যে করি, রঙিন পালে কবে আসবে তরী?

একটা কাজই তুমি করবে, ওই রবীন্দ্রসংগীতের প্রথম লাইনে যা আছে, তোমায় চেয়ে আছি বসে পথের ধারে সুন্দর হে। তুমি বসে থাকবে, সব যেমন ছিল সেইভাবে বজায় রেখে। একেবারে টিপটপ করে রাখতে হবে। তিনি আসবেন, আসতে তাকে হবেই। আমার মন বলছে। প্রয়োজন হলে তোমাকে চাকরি ছাড়তে হবে।

খাব কী?

খাবে না। মাস্টারি করবে। অন্য কোথাও চাকরির চেষ্টা করবে। টেকনিক্যাল লাইনে চাকরির অভাব হবার কথা নয়। না হয় দু’পয়সা কমই মাইনে হবে। মা-মরা ছেলেরা অবশ্য স্বার্থপরই হয়। তুমি একটু বেশি স্বার্থপর, এই যা তফাত।

তা হলে কী করব এখন?

বাজার করবে। বারোটার মধ্যে বেরোতে হবে। একেবারে বর্তমানের কথাটাই আগে ভাবো, তারপর আগামী দিনের কথা ভাবা যাবে। তোমাকে আমি বাজে পরামর্শ দোব না।

ব্যাগ বগলে রাস্তায় নেমে এলুম। চারপাশে যেন গ্যাজগ্যাজ করছে। রাস্তায় নেমে মনে হল, আমি ভীষণ অসুস্থ। জীবনের সুর কেটে গেছে। দু’পা যেতে-না-যেতেই পেছন থেকে মেয়েলি গলায় ডাক। এল, এই যে পিন্টু, পিন্টু।

এ পাড়ার বিখ্যাত মেনিদা। সাতসকালেই মুখে ডবল খিলি পান। চ্যাকোর চ্যাকোর করে চিবোচ্ছেন। হাতে ধরে আছেন পানের বোঁটায় চুন। জিজ্ঞেস করলুম, কী বলছেন?

তোমার বাবা উঠেছেন?

না।

আঃ, ভেরি লেট রাইজার। ভোরে ওঠার মহিমা বুঝল না। সারাজীবন শুধু শুনেই গেল সূর্য পুব দিকে ওঠে। দেখা আর হল না। তুমি তো ডেকে দিতে পারো। এই বয়েসে ভোরবেলা বেড়ানোই হল বেস্ট একসারসাইজ। আমি সেই ভোর পাঁচটা থেকে ঘুরছি। তা কখন গেলে দেখা হবে বলে তো?

তিনি কিছুদিনের জন্যে বাইরে গেছেন।

তাই নাকি, চেঞ্জে? তা আমি যে আবার অন্যরকম শুনলুম। সেই বিধবা মাগিটাকে নিয়ে সংসার পাততে গেছে!

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে গেল। সপাটে এক চড় ভদ্রলোকের মুখে। মাথাটা একপাশে টলে গেল। জীবনের প্রথম চড়। জামার কলারটা বুকের কাছে খামচে ধরলুম। এক ঝাঁকানি মেরে বললুম, কী বললেন?

মেনিবাবু বললেন, বাস্টার্ড! থুঃ করে এক ধাবড়া পানের পিক ছুঁড়ে দিলেন আমার দিকে। এক ধাক্কা মারতেই ভদ্রলোক পড়ে গেলেন চিতপাত হয়ে। সঙ্গে সঙ্গে লোক জড়ো হয়ে গেল। মেনিবাবু শুয়ে শুয়েই বললেন, গুরুজনের গায়ে হাত তোলা! হারামজাদা! যেমন বাপ তার তেমনি ছেলে!

আমি একটা লাথি মারার জন্যে ডান পা-টা তুলেছিলুম। আমাকে কে একজন পেছন থেকে জাপটে ধরলে, কী হচ্ছে কী! খুন করে জেলে যেতে চাও?

চতুর্দিক থেকে প্রশ্ন, কী হয়েছে কী! একটা বৃদ্ধ নিরীহ মানুষকে ধরে ঠ্যাঙাচ্ছ? ভদ্রলোকের ছেলের এ কী দুর্মতি!

কী হয়েছে, এককথায় বলি কী করে! আমার পিতাকে অপমান! লোকটার জিভ আমি টেনে ছিঁড়ে দোব। জেলে যেতে হয় যাব। জমায়েত দু’ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ আমার দিকে, এক ভাগ মেনিবাবুর দিকে। মেনি খুব তড়পাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলুম, তোমার বাবা কোথায়? তা ঝড়াকসে একটা চড় কষিয়ে দিলে! আমার দিকে যাঁরা ছিলেন, তাদের মধ্যে প্রবীণ পরেশবাবু খুব রাশভারী। মানুষ। তিনি বললেন, মেনি, এই প্রশ্নে কেউ চড় মারতে পারে না, পাগল ছাড়া? এই ছেলেটিকে আমি ভালভাবেই চিনি, তোমাকেও আমার চিনতে বাকি নেই। পিন্টু, মেনি তোমাকে কী বলেছিল?

জ্যাঠামশাই, এমন অশ্লীল কথা, যা আমি মুখে আনতে পারব না।

মেনিবাবুর তিন মেয়ে খুব ওড়াওড়ি করে। মেনির দিকে আমার বয়সি কিছু স্বাভাবিক কারণেই জুটেছে। তাদের একজন বললে, অকারণে কেউ অশ্লীল কথা বলে! হয় ও পায়ে ধরে ক্ষমা চাক, নয় পেদানি খাক।

পরেশবাবু বললেন, পিন্টু, পায়ে ধরে নয়, এমনিই তুমি.ক্ষমা চেয়ে নাও, যতই হোক প্রবীণ মানুষ।

আমি পারব না জ্যাঠামশাই। কে কাকে পেঁদায়, আমি একবার দেখতে চাই। হয়ে যাক।

কখন আমার বন্ধু মিহির পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল লক্ষ করিনি। সে এগিয়ে এল, কে মারবে? মারবে কে? সাহস থাকে এগিয়ে আয়! মিহির আমাকে জিজ্ঞেস করলে, মেনিমুখোটা কী বলেছিল রে! তোর মতো ঠান্ডা ছেলে খেপে গেল। আমি বললুম মেনির মন্তব্য।

পরেশবাবু বললেন, আরে ছি ছি। একজন ঋষিতুল্য মানুষ। আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধা করি। মেনি, তুমি তো একেবারে উচ্ছন্নে গেছ হে! এ পাড়ায় তো তোমার থাকা উচিত নয়। তোমার এ কী স্বভাব! তুমি চোদ্দোটা ছেলেমেয়ের বাপ। আজ বাদে কাল ঘাটে যাবে!

মিহির বললে, তোর জামার বুকে লালমতো কী রে! রক্ত?

না, পানের পিক দিয়েছে।

মিহির বললে, মেনিবাবু, আজ আপনাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি, নিজের ব্যাপার ছাড়া অন্যের ব্যাপারে নাক গলালে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমাকে আপনি ভালই চেনেন। নিজের মেয়ে তিনটেকে আগে সামলান। পিন্টু, তুই বাড়ি যা।

আমি জিতেছি না হেরেছি বুঝতে পারলুম না। দাগরাজি বুকে বাড়ি ফিরে এলুম। বাজার আর হল না।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন