১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
শেষ মূল্য পায় যেন তার

বেশি বেলা হয়নি। বারোটা বেজে কয়েক মিনিট হয়েছে। শনিবার অর্ধদিবস হলেও, দুটোর আগে দোকানপাট বন্ধ হবে না। মুকুকে একটা কিছু দেবার ইচ্ছে আমারও ছিল। কাকিমাকে দেখে সেই ইচ্ছেটা আরও প্রবল হয়ে উঠল। একটা ভাবনা ছিল, যদি না নেয়। অহংকার কমেছে, তবে কতটা কমেছে! কাকিমার দেওয়া শাড়িটা যখন নিয়েছে, তখন আমি একটা শাড়ি দিলে নেবে না কেন!

ঝট করে স্নান সেরে একবার বেরিয়ে যাই। কতক্ষণ আর লাগবে! শ্যামবাজারের মোড়ে অনেক বড় বড় দোকান আছে। একটাই সমস্যা জীবনে কখনও শাড়ি কিনিনি। কাকিমাকে নিয়ে গেলে কেমন হয়! এখন তো বাড়িতে করার মতো তেমন কাজ নেই। ট্রেনের জলখাবার করার অনেক সময় আছে।

কাকিমাকে বলতেই এককথায় রাজি হয়ে গেলেন। বাড়ির বাইরে যেতে যে-কোনও বয়েসের মেয়েই খুব আনন্দ পায়। একঘেয়ে জীবনে তবু একটু বৈচিত্র্য।

কাকিমা বললেন, খেয়ে যাবে, না এসে খাবে?

খাওয়ার পর বড় আলস্য আসে। চাপা থাক, এসে খাওয়া যাবে।

চান করে কিছু না খেলে তোমার যে পিত্তি পড়বে।

ধুর, অনিয়মে এত বড় হলুম, গোঁফদাড়ি গজিয়ে গেল, আপনি এখন আমাকে নিয়মে ফেলতে চাইছেন! স্নান করতে করতে ভাবলুম, কাকিমাকে যত তাড়াতাড়ি আমাদের জীবনবৃত্তে টেনে নেওয়া যায় ততই ভাল। হঠাৎ মনে পড়ল, আমার সেই বেড়াল পোষার অভিজ্ঞতা। এতটুকু বয়েস থেকে খাইয়ে আদর করে যত্ন করে সুন্দরী রমণী করে তুললুম, তারপর সে দেখি আমাকে আর পাত্তাই দেয় না। ডাকলে আসে না। কোলে তুলে নিলে আঁচড়ে পালাবার চেষ্টা করে। তার একটা আলাদা স্বাধীন জগৎ। সব ছেড়ে বেড়াল রমণী তার প্রকৃতির জগতে ফিরে যেতে চায়। একদিন সে সত্যিই চলে গেল। পড়ে রইল তার ঘুমোবার বাক্স, দুধ খাবার বাটি, পাউডারের পাফ, খেলার গোল লাল বল। বিজাতীয় মানুষের মায়ায় তাকে বাঁধা গেল না। ফেরার অপেক্ষায় দিন থেকে সপ্তাহ গেল, মাস গেল, বছর ঘুরে গেল। বেড়াল আর এল না।

কাকিমারও নিজস্ব একটা জগৎ আছে। যেই জানবেন এখানকার পাট শেষ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফিরে যেতে চাইবেন তার নিজস্ব ব্যবস্থায়। নিরালম্ব মানুষ বাঁচতে পারে না, বিশেষত মেয়েরা। মেয়েরা বাঁচতে চায় দাবি নিয়ে, যে-কোনও একটা সম্পর্ক নিয়ে। বলতে খারাপ লাগছে, কোনও কোনও মহিলা কারুর রক্ষিতা হয়েও বেশ দাপটে বেঁচে থাকেন। আমাদের পাড়ার ললিতবাবু! তার। একজন রক্ষিতা ছিলেন। বাবু মারা গেছেন। তার সম্পত্তিতে মহিলা এখনও কেমন দাপটে বেঁচে আছেন! দান-ধ্যান, পূজাপার্বণ। রাধাগোবিন্দর মন্দির সংস্কার করিয়ে দিয়েছেন। সেখানে পাথরের ফলকে উৎকীর্ণ নাম জ্বলজ্বল করছে। বছরে একবার বাড়িতে বিশাল ভোজ হয়। সকলকেই তো পাতা পেড়ে খেতে দেখি। নিন্দনীয় সম্পর্ককে মেনে নেবার উদারতা সমাজের এসেছে। কাকিমা কী সম্পর্কের জোরে এখানে থাকবেন! যে-জমির ওপর মালিকানা নেই, সে জমির ওপর কেউ ইমারত বানায় না। ভালবাসার ভিত কোথায়! বাতাসের মতো। শ্বাসপ্রশ্বাস নিলেও মূল্য বোঝা যায় না। কারুর আশ্রিতা হয়ে, কারুর দয়ায় বেঁচে থাকার পাত্রী কাকিমা নন।

বেরোবার সময় মুকু জিজ্ঞেস করলে, দু’জনে সেজেগুঁজে চললে কোথায়?

ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ফিরে আসছি। তুমি বাড়ি পাহারা দাও।

কোথায় চললে বলবে তো?

ফুল কিনতে।

ফুল? ফুল কী হবে?

তোমার গলায় পরাব মালা করে।

হঠাৎ মুখ ফসকে এমন একটা অশালীন কথা বেরিয়ে গেল। প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে ভেবে ভীষণ ঘাবড়ে গেলুম। বোমার পলতেয় আগুন লাগিয়ে মানুষ যেমন সিটিয়ে থাকে আমি সেইভাবে বেশ কিছুক্ষণ রইলুম। দৃষ্টি মুকুর মুখের দিকে। ভাবের কোনও পরিবর্তন যদি ধরা পড়ে!

না, বিস্ফোরণ হল না। মুখে ক্রোধের কোনও প্রকাশ দেখা গেল না।

কিছু মনে করলে তুমি?

মুকু মুখ নিচু করল। যখন মুখ তুলল, চোখদুটো ছলছলে। মালা পরার ভাগ্য করে আমি জন্মাইনি। মুকু আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। প্রায় ছুটে চলে গেল। কাকিমা আমার মুখের দিকে তাকালেন, আমি কাকিমার মুখের দিকে। ব্যাপারটা কী হল কিছুই বোঝা গেল না। মুকুর কোথাও একটা তীব্র বেদনা, তীক্ষ্ণ হতাশা জমে আছে। কেন? কারণটা কী? বড়লোকের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ ডিঙোতে চলেছে। তার আবার দুঃখ কীসের!

আজ আমি নবাবি করব। ট্যাক্সি চাপব। বাইরে কোথাও বসে প্রাণ যা চায় তাই খাব। পেট্রল পাম্পে শরৎদার গাড়ি তেল নিচ্ছে। চেনা গাড়িতে উঠব না। সারাটা পথ বকবক করবে। দু’পা এগোতেই আর একটা গাড়ি পেয়ে গেলুম। গাড়িটা কোথা থেকে এল কে জানে! শ্মশান থেকে নাকি! পেছনের আসনে সাদা ফুলের ছেঁড়া পাপড়ি পড়ে আছে। গাড়ি চলেছে শ্যামবাজারের দিকে। মুকুর মুখ কিছুতেই কেন ভুলতে পারছি না। সব বেদনা আজ যেন দুধের মতো উথলে উঠেছে। মানুষ বুকের ভেতর কী যে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। ওপর দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। বিজলী ছলিয়া যায়, কাঁদে মেঘ ঝরি ঝরি;/বসন্ত জ্বলিয়া যায়, থাকে শুষ্ক পাতা পড়ি/স্বপন চলিয়া যায়/তন্দ্রা করে হায় হায়!

পাশে বসে আছেন কাকিমা অনেকটা করুণ ভৈরবীর মতো নারীর যতরকম রূপ আছে, সব মিলেমিশে এই বাইরে এসে কাকিমাকে এমন দেখাচ্ছে, যার তুলনা কাকিমা নিজেই। অন্য কারুর সঙ্গে তুলনা চলে না। কাকিমা মৃদু গলায় বললেন, কী ভাবছ তুমি?

আমি ভাবছি মুকুর কথা।

জানো আমিও ওই একই কথা ভাবছি। তোমার এই মেসোমশাই কেমন মানুষ পিন্টু?

সত্যি বলছি, আমি বিশেষ কিছু জানি না। কাউকে প্রশ্ন করে জানার চেষ্টাও করিনি। মেসোমশাই মানে মেসোমশাই, এইটুকুই জানি। আর জানি, পেশায় আইনব্যবসায়ী, প্রচুর পয়সার মালিক।

মানুষটি তেমন সুবিধের নয় পিন্টু।

কীরকম!

কাকিমা উত্তর দিতে ইতস্তত করছেন। গাড়ি ছুটছে হুহু করে। দুপুরের রাস্তাঘাট একেবারে ফঁকা। পথ ফুরোবার আগে উত্তর পাব কি?

বললেন না তো, কী কম সুবিধের নয়?

তুমি দেখো, ওঁর বড় বড় দুই মেয়ে, এক মেয়েকে আমি দেখিনি, মুকুকে দেখেছি। তার মানে ভদ্রলোকের বয়েস নেহাত কম নয়!

তা তো নয়ই, দেখলেই বোঝা যায়। মনে হয় পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে।

পঞ্চাশ তো হবেই, বেশিও হতে পারে। তা হলে দেখো!

কী দেখার কথা বলছেন?

তুমি আমার কাছে আর কিছু জানতে চেয়ো না। সংসারের অনেক নোংরা দিক আছে। তুমি আমার পবিত্র ছেলে, তোমাকে সেসব আমি জানতে দেব না। কাকও পাখি, চন্দনাও পাখি। একজন খোঁজে আঁস্তাকুড় আর একজন খোঁজে গাছের উঁচু ডাল। বিশ্বাস কর পিন্টু, আমার নিজের ছেলে থাকলে তাকেও আমি হয়তো এত ভালবাসতুম না। আমি রাতে তোকে স্বপ্নে দেখি। আমার কত কল্পনা! তুই বড় হতে হতে একেবারে আকাশের মতো হয়ে গেছিস। আমি কোথায় থাকব জানি না, যেখানেই থাকি, দূর থেকে শুনব তোর নামডাক। সবাই বলবে আমার পিন্টুর কথা। কত মানুষ তোর আশ্রয়ে থাকবে! তোর জীবনে রাতটাও হয়ে থাকবে দিনের মতো। কাগজে ছবি ছাপা হবে, নাম বেরোবে। সব মানুষের মুখে মুখে তোর নাম ফিরবে! ভাবতে ভাবতে আমি কীরকম পাগলের মতো হয়ে যাই, ছটফট করি মনে মনে, কেন হচ্ছে না! কেন এত দেরি হচ্ছে। সময় যে হুহু করে চলে যাচ্ছে। আমি কি দেখে যেতে পারব! কে কখন কোথায় কীভাবে থাকে! কাছ থেকে দূরে চলে যায়, দূর থেকে আসে কাছে। তোর ভাগ্য খুব ভাল পিন্টু। বটঠাকুরের মতো মানুষ হয় না। একেবারে সাধুর মতো। তোর সুখের জন্যে কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন!

কী ত্যাগ?

সে ত্যাগের কোনও তুলনা নেই। সাধারণ মানুষ যা পারে না। তোমার মেসোমশাই যা কোনওদিন পারবেন না। সেই ত্যাগ বোঝার বয়েস তোমার হয়নি। মানুষ যার জন্যে পাগলপাগল। দিন নেই, রাত নেই, ছটফট ছটফট করছে।

একটু একটু বুঝেছি।

কাকিমা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন। হুহু করে বয়ে আসছে দুপুরের গরম বাতাস। কানের পাশের চুল উড়ছে। ফেরানো মুখের ওপর আলোর আভা খেলছে। বড় বড় চোখের পাতা স্থির, নিশ্চল। কপাল আর নাকের অংশ প্রোফাইলে ধরা পড়েছে। নাকছাবির পাথর ঝিলিক মেরে উঠছে মাঝে মাঝে।

এমন একজন মহিলাকে যেচে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ দিয়ে বৈধব্যের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়! রঙিন একটা জগৎ থেকে স্নান বিমর্ষ এক জগতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাওয়া!

কেন হারাবার লাগি এতখানি পাওয়া।
জানি না, এ আজিকার মুছে ফেলা ছবি
আবার নতুন রঙে আঁকিবে কি তুমি, শিল্পীকবি।

জীবন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে তা কি আর জোড়া লাগে! যা আছে, যদ্দিন আছে, যেমন আছে সেইরকমই থাক। দেখাই যাক না কী হয়! তারপর না হয় প্রশ্ন করা যাবে, কেন মরে গেল নদী/আমি বাঁধ বাঁধি তারে চাহি ধরিবারে পাইবারে নিরবধি/তাই মরে গেল নদী ॥ গাড়ি হুহু করে ছুটছে। মাইলের পর মাইল পথ গিলে ফেলছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এই চলা কখনও যদি শেষ না হত।

অনেক দূরে কোথাও কোনও শিমুল গাছে তুলোর বীজ ফাটলে, একটা-দুটো পলাতক বীজ পাখা মেলে উড়তে উড়তে জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে বাতাসে ভাসতে থাকে। হঠাৎ কোথা থেকে অদ্ভুত একটা উড়ো চিন্তা মনের ঘরে ভেসে এল। বিলেতে একজন পুরুষ অথবা নারী বহুবার বিবাহ করতে পারে। সারাজীবন একই স্বামী বা একই স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। না পোষালেই বিবাহবিচ্ছেদ। বিপত্নীক কিংবা বিধবা হলেও আবার সংসার পাতারও কোনও বাধা নেই। তা হলে!

ছি ছি, এ আমি কী ভাবছি! মনের কোন স্তর থেকে আমার এই ভাবনার উদয়? কিছু বাজে বই। পড়ে কি আমি অসম্ভব রকমের ভেঁপো হয়ে গেলুম! কেন পড়তে গেলুম লরেন্সের ম্যানিফেস্টো’

…another hunger
Very deep, and revening…
redder than death, more clamorous,
The hunger for the woman…

চিন্তাটাকে যতই চেপে রাখতে চাইছি, ততই যেন ঠেলে ঠেলে উঠছে। যা ভাবছি, তা যদি ঘটে যায়, আমি মনে মনে ভীষণ সুখী হব। এমন একটা আলয় পেয়ে যাব, স্নেহের আলয়, যা দেহবোধে কলুষিত নয়! এ দেশের রক্ষণশীল মানুষের সে সাহসই হবে না। চরিত্র বড় আদরের বস্তু, সমমানের বস্তু। বস্তুটা আসলে কী তা জানা নেই। যদি এমন হত, আহারে চরিত্র নষ্ট হয়, তা হলে বহু মানুষ অনাহারে মারা পড়ে প্রমাণ করে যেতেন, তিনি চরিত্রবান। হিন্দু রমণীর আদর্শ সামনে রেখে কাকিমা বলবেন, ছি ছি, তা হয় না, তা হয় না। জীবন এক ধরনের লটারি। মারার সুযোগ একবারই পাবে। লেগে যায় ভাল, নয়তো দান আর বাজির টাকা দুটোই তামাদি হয়ে গেল। কাকিমাকে গ্রহণের কথা বললে তিনি আমাকে নির্ঘাত জুতোপেটা করবেন। অথচ কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে পরিষ্কার বিধান দিয়ে গেছেন, স্বামী যদি নীচ চরিত্রের হন, যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন, রাজদ্রোহের অপরাধে অপরাধী হন, খুনি হন, তিনি যদি কোনও কারণে পতিত হয়ে থাকেন, কিংবা ক্লীব, সন্তান উৎপাদনে অক্ষম, তা হলে স্ত্রী অমন স্বামীকে ত্যাগ করতে পারেন। বিধবা বিবাহ চালু করতে গিয়ে বিদ্যাসাগরের মতো রিফর্মার হিমশিম খেয়ে গিয়েছিলেন। তাও কি ঠিকমতো চালু হয়েছে! করা যায়। কিন্তু ক’জন করেন? করলেও সমাজ আওয়াজ দেয়। কেমন একটা ব্যভিচারের ইঙ্গিতে সকলে আধ-বোজা চোখে তাকাতে থাকে।

থাক, ঘটক হয়ে আর দরকার নেই। ভাবনার রাশ টেনে রাখো। কেউ শুনলে বলবে, ছোকরার জ্ঞানের বদহজম হয়েছে। তবু মনে হয়, আমাদের বগাহীন সংসারে বগা ধরার ক্ষমতা, আমার পাশে কোলের ওপর আলতো পড়ে থাকা ওই দুটি হাতের ছিল। যে-হাতে অনধিকারীর মতো এখনও একজোড়া শাখা প্রাণদণ্ডের প্রহর গুনছে।

কাকিমা হঠাৎ আমার দিকে ফিরে তাকালেন।

মেয়েছেলে হয়ে জন্মাসনি খুব বেঁচে গেছিস! আমাদের জীবন বর্ণপরিচয়ের প্রথম দুটো অক্ষরে পড়ে আছে।

তার মানে?

অ, আর আ। অ-এ অজগর আসছে তেড়ে, আ-এ আমটি খাব পেড়ে।

কাকিমা হাসতে লাগলেন, আর আমি ভাবতে লাগলুম কথাটা অনেক অংশেই নির্ভুল। খুব ন্যায়ের কথা হচ্ছে, নীতির কথা হচ্ছে, সাহিত্য হচ্ছে, সংগীত হচ্ছে, হতে হতে শেষ কথা, চলো, তা হলে এবার একটু শোওয়া যাক। শুদ্রকের মৃচ্ছকটিকের গোটাকতক লাইন মনে পড়ছে, প্রমোদিনীরা সবসময় যুবকের সঙ্গী হবে। পথের পাশের লতানে গাছের মতো, সকলেরই তার ওপর সাধারণ অধিকার থাকবে। তোমার শরীর হল পণ্য, স্বর্ণের বিনিময়ে বিকিয়ে যাও। এখনকার কালে স্বর্ণ শব্দটি কেটে দাও, তার বদলে লেখো, অন্ন আর বস্ত্র।

আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। পাশাপাশি সার সার দোকান এ মাথা থেকে ও মাথায় চলে গেছে। যোগমায়া বস্ত্রালয়, মহামায়া বস্ত্রালয়। সবই মায়ার খেলা। বাইরের আলোয় কাকিমাকে এর আগে এত ভাল করে দেখিনি। গাঢ় নীল রঙের শাড়ি। সাদা ব্লাউজ। গায়ের রং ফরসা আর স্বাস্থ্য ভাল হলে মেয়েদের গালে অদ্ভুত একটা গোলাপি আভা খেলে। ঈশ্বর এক জীব সৃষ্টি করেছিলেন বটে, যার সবটাই নরম। মন নরম, দেহ নরম, পাউরুটির ভেতরের অংশটির মতো।

কাউন্টারে একের পর এক শাড়ি নামছে। কচি কলাপাতার রং, নীল, আরও নীল, কমলা, লাল। একটু দেখতে শুনতে ভাল কোনও মহিলা কাউন্টারে এসে শাড়ি দেখতে চাইলে দোকানদারের উৎসাহ বেড়ে যায়। পাশ থেকে শাড়ি বেরোয়, মাথার ওপর থেকে শাড়ি নামে। তিন-চারজন চার পাশ থেকে ব্রহ্মাস্ত্রের মতো শাড়ি ছুঁড়তে থাকেন। কাকিমার নীলের ওপর একটা দুর্বলতা আছে। একটা নীল হাতে তুলে নিতেই বিক্রেতা বললেন, নীল তো পরেই আছেন, একখানা চাপাফুল নিন না, জমিটা খুব ভাল।

কাকিমা আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললুম, আপনারও একটা হবে। বলেই মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে গেল। ঠিক যেন সমুদ্রের বালিতে বাড়ি তৈরির চেষ্টা। গোটাকতক ঢেউয়ে সব চুরমার।

কাকিমা বললেন, আর দু’-একটা দোকান দেখা যাক। সেলসম্যান হতাশ হয়ে বললেন, এত দেখালুম, তাও পছন্দ হল না!

এইবার মহামায়া থেকে যোগমায়া। আরও বড় দোকান। অনেক বেশি আলো, অনেক বেশি খদ্দের।

কাকিমা দোকান দেখে খুব খুশি হয়ে বললেন, কিনতে হলে বড় দোকান থেকে কিনব, ভাল দোকান থেকে কিনব। জানো তো, আমার মামাশ্বশুরের বিশাল বড় কাপড়ের দোকান ছিল। বিয়ের পর থেকে কাপড়ের কথা শুনতে শুনতে, কাপড় চিনতেও শিখে গেছি।

কাকিমা আজ রাজরানির মতো হয়ে গেছেন। চেহারায়, চলনে বলনে। দুঃখের পরিবেশ ছেড়ে বেরোতে পারলেই মানুষ সুখী হয়ে ওঠে। সুখ কোথায় আছে কীসে আছে কারুর সঠিক জানা নেই। অনেকটা চোরকাটার মতো। ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, হঠাৎ একসময় নীচের দিকে তাকাতেই অবাক। কাপড়ে ফিনকি ফিনকি রাশি রাশি আটকে আছে। আজ যেসব সুখের মুহূর্ত দিয়ে জীবন চলেছে, একটু পরেই চলে যাবে বহু দূরে। রেলগাড়ি যেমন ব্রিজ বা টানেল পেরিয়ে চলে যায় রাতের অন্ধকারে। মাইলের পর মাইল সামনে পড়ে থাকে বৈচিত্র্যহীন দু’সার অনুভূতিহীন লৌহপথ। কেন জানি না, আজ বড় একঘেয়ে জীবন-ভাবনা আসছে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধের মতো। জীবন যদি ব্লটিং পেপারের মতো এক ফোঁটা সুখের মুহূর্তকে ধরে অনেকটা বড় করে দিতে পারত, তা হলে বেশ হত।

দুমদাম কাপড় নেমে এল কাউন্টারে। ঝলমলে রঙের বাহার। চোখে জীবনের নেশা লেগে যাচ্ছে। শাড়ির সঙ্গে সঙ্গে শরীর দেখতে পাচ্ছি। শরীরের ভেতর মন দেখতে পাচ্ছি। মায়ার বন্ধন দেখতে পাচ্ছি, যেবাঁধনে জগৎসংসার ধুকছে, ফুঁসছে, ছিঁড়ছে, জোড়া লাগছে। শাড়ির রঙিন জমিতে স্বপ্ন হাঁটছে। আমি হাঁটছি, আমার পাশে মুকু হাঁটছে। সুখের হাত মেলানোয় কোনও তৃপ্তি নেই। দুঃখের সঙ্গে সুখ মিলে যখন দুঃখের চোখের জল মুছে গিয়ে মুখে হাসি ফোটে তখন মন যেন কানায় কানায় ভরে ওঠে। দেহ কিছু নয়, অভ্যাসে বাঁচাটা বাঁচা নয়। মনের সঙ্গে মন মিলে গেলে পৃথিবীটাই স্বর্গ হয়ে ওঠে!

কাকিমা শাড়ি পছন্দ করে ফেলেছেন। আমি বললুম, এবার আপনারটা। রং আমি পছন্দ করি, জমি পছন্দ করুন আপনি।

এই প্রস্তাবের পেছনে আমার একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। খুব চড়া নয়, হালকা কোনও একটা রং বেছে নেব। বলা যায় না, যদি রঙিন শাড়ি পরা বন্ধ হয়ে যায় তা হলেও যেন পরতে পারেন। সেলসম্যান বলছেন, দিদির আমার পছন্দ আছে। সেরা শাড়িটাই বেছেছেন।

কাকিমার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। যেন হোমের আগুন লেগেছে মুখে।

আমি বললুম, এইবার দু-একটা হালকা রং দেখাবেন?

দেখাতে বলে যেই পেছন দিকে মুখ ঘুরিয়েছি, ভয়ে কণ্ঠতালু শুকিয়ে গেল। এতক্ষণ সুখের যে বুদবুদটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল, একটি পিনের খোঁচায় যেন নিমেষে ফেটে গেল। সেই অদ্ভুত চেহারার অষ্টাবক্র লোকটি, যে আমাকে গল্প শুনিয়ে হাতঘড়িটা নিয়ে সরে পড়েছিল, কোণের কাউন্টারে পাজামা কিনছে ঝুল মেপে মেপে। পাশে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অশ্লীল একজন মহিলা। দেখলেই মনে হয়, মহিলা দেহে বেঁচে আছেন, মনে নয়।

লোকটির সঙ্গে আমার চোখাচোখি হয়েছে। চোখ সরিয়ে নিলেও দেখতে পাচ্ছি, সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখুনি আক্রমণ করবে। পাঁচ মারবে? এবার ধরে ফেলবে দু’জনকে একসঙ্গে। সেভাবে না তাকালেও আমি দেখতে পাচ্ছি, লোকটি হাসছে। চোখদুটো হয়ে উঠেছে। শিকারি বেড়ালের মতো। পাজামা ফেলে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

আমি কাকিমার ডান হাত মুঠোয় চেপে ধরলুম। কাকিমা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন। মুখের চেহারা দেখে ভয় পেয়েছেন। জিজ্ঞেস করলেন, কী হল? কী হল তোমার!

আর সময় নেই। কাকিমার হাত ধরে টেনে নিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে চলে এলুম দোকানের বাইরে। পায়ে পায়ে জড়িয়ে পড়ে যাবার মতো হচ্ছিল। কোনওক্রমে সামলে নিলুম। পেছন থেকে সেলসম্যান চিৎকার করছেন, কী হল দাদা, শাড়ি! শাড়ি নেবেন না!

লোকটি দোকানের মাঝখানে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। দেখেছি আমি।

ভিড়ে গা মিলিয়ে মিশে গিয়ে কাকিমাকে হাত ধরে টানতে টানতে, ছোটাতে ছোটাতে, ট্রাম ডিপোর পাশ দিয়ে আর একটা রাস্তায় পড়লুম। লোক চলাচল কম। জনারণ্যে মিশে হারিয়ে যেতে হবে। বুঝতে না পেরে কাকিমা নানারকম প্রশ্ন করে চলেছেন। আমার জবাব দেবার অবসর নেই। এ রাস্তা ও রাস্তা করে একসময় মনে হল অনেক দূরে চলে এসেছি। আর ধরতে পারবে না, তবু সাবধানের মার নেই। সামনেই বিশ্রী চেহারার এক রেস্তোরাঁ। কলেজের ছেলেমেয়েদের প্রেম করার জন্যে পরদা-ফেলা ছোট ছোট খুপরি। একটু গা-ঢাকা দিয়ে বসে থাকা উচিত। বিশ্রামের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কাকিমা হাঁপাচ্ছেন।

রেস্তোরাঁর খুপরি ঘরে দু’জনে বসতেই, হাফপ্যান্ট পরা একটা ছেলে এসে ময়লা পরদাটা টেনে দিয়ে গেল। একবার ভাবলুম বলি, না, ভোলা থাক, তারপর মনে হল একটু আবরু থাকা ভাল। তেলতেলে মোটা কাঁচের গেলাসে দু’গেলাস জল দিয়ে গেল। গেলাসটা দুহাতে ধরে কাকিমা জিজ্ঞেস করলেন, কী হল বলল তো?

কী বলি? কীভাবে বলি! একটু ইতস্তত ভাব। বিশ্বাসযোগ্য একটা গল্প বানাতে হবে। বয় এসে ধমকের গলায় জিজ্ঞেস করলে, কী খাবেন?

কী আছে?

ছেলেটি চোখ বুজিয়ে পাখিপড়ার মতো বলতে লাগল, মোগলাই, ফিশ চপ, ফিশ ফ্রাই, কবিরাজি, মটন কারি, কষা, কোরমা, মটন কাটলেট, প্রন কাটলেট, ডেভিল..।

গড়গড়িয়ে আরও কতদূরে চলে যেত কে জানে? থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলুম, কেক আছে। ভাই?

প্যাস্ট্রি আছে।

দুটো ওই আর দুকাপ চা।

ছেলেটি ক্ষুণ্ণ হয়ে বললে, আর কিছু না!

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন