২.১১ As certain as stars at night.

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

As certain as stars at night.
Ordawn after darkness.
Inherent as the lift of the blowing grass
whatever your despair or your frustration
This too, will pass.

আমার অবস্থা কিঞ্চিৎ শোচনীয়। একপাশে সুরঞ্জনা, আর একপাশে মহারাজ। এক পাশে সন্ন্যাস, অপর পাশে সংসার। মহারাজের দিকে চাপতে পারছি না। সংকোচ হচ্ছে। ভাববেন, আমাকে একেবারে ঠেসে ধরছে। সুরঞ্জনার স্পর্শ বাঁচাবার চেষ্টাও করতে হচ্ছে। ভাববে, সুযোগ নিচ্ছে। সিল্ক-জড়ানো ওই শরীরের স্পর্শ যে কী সাংঘাতিক, তা আমার বয়সি একটি ছেলেই কেবল জানে! বাতাস ছুটে আসছে উলটো দিক থেকে। কাঁধের আঁচল মাঝে মাঝে অবাধ্য হয়ে আমার ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। দু-এক গুছি চুল খেলে যাচ্ছে বা গাল ছুঁয়ে। কোনও ভাবেই বাঁ দিকে তাকাতে পারছি না। সিল্ক বড় অবাধ্য। জুতসই হয়ে বুকের ওপর থাকতে জানে না। বাঁ দিকে ঘাড় ঘোরালেই সুরঞ্জনা সচেতন হয়ে একটু চাপাচুপি দেবার জন্যে ব্যস্ত হচ্ছে। আমার বাঁ পাশে বড় অশান্তি। মহারাজ ভাবস্থ। তার ধারণাই নেই, এক আঙুল তফাতে জীবনের কোন চোরাস্রোত বইছে। যতটা সম্ভব ছোট হয়ে বসে থাকার চেষ্টা করছি আমি। একেই বলে ছোট হওয়ার সাধনা। দেহের অবস্থা আমার মনেরই মতো। ত্যাগ আর ভোগের মাঝখানে কুঁকড়ে বসে আছি। নিজের মনেই হাসছে জ্ঞানপাপী। স্বামী বিবেকানন্দের কথা মনে পড়ছে। অনেকে মনে করে, মেয়েমানুষ না দেখলেই হল। মেয়েমানুষ দেখে ঘাড় নিচু করলে কী হবে? যতক্ষণ আমার কাম, ততক্ষণই স্ত্রীলোক, তা না হলে স্ত্রী-পুরুষ ভেদ-বোধ থাকে না। শিশুদের তো নারী-পুরুষ ভেদ থাকে না। বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোথা থেকে কী একটা বেরিয়ে আসে, আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বাঘের খেলা।

মহারাজ নির্দেশ দিলেন, গাড়ি যেন কলেজ স্ট্রিট ধরে যায়। কলেজ স্ট্রিটের আলাদা একটা আভিজাত্য আছে। গাড়ি সেই মতোই চলেছে। সুরঞ্জনা মৃদু গলায় কথা শুরু করল, অঙ্ক আপনার কেমন আসে?

খুব একটা খারাপ নয়।

বাবা তো অর্থনীতির। দাদা আমাকে অঙ্কটা দেখিয়ে দিত। ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাসটা আমার একেবারে মাথায় ঢোকে না। বেশি না, সপ্তাহে একদিন আমাকে দেখিয়ে দেবেন?

কেন দেব না? আজ আমার বাবা থাকলে আপনার কোনও ভাবনাই থাকত না। তার মতো অঙ্কে পাণ্ডিত্য, শুধু অঙ্ক কেন সব শাস্ত্রে, আমি খুব কম দেখেছি। আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেলেন।

এইবার আমার কান্না আসছে। বুকের ভেতরটা মথিত করছে অপরিসীম এক নিঃসঙ্গতা। শেষ প্রিয়জনকে হারাবার বেদনা। হঠাৎ সুরঞ্জনা আমার হাতে হাত রাখল। আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। একেই বলে নারী!

সুরঞ্জনা বললে, আপনার আর আমার একই দুঃখ। কী আর করা যাবে বলুন! মৃত্যু যেমন সকলকে সমান করে, ডেথ দি ইকোয়ালাইজার, দুঃখও সেইরকম। সুরঞ্জনার মুখে এইরকম একটা কথা শুনে ভারী ভাল লাগল। মনের দিক থেকে এরই মধ্যে কতটা কাছে সরে এসেছে আমার। এই মুহূর্তে ঈশ্বরে বিশ্বাস ফিরে আসছে। তিনিই সব করান। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি/বাহির পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয় পানে চাইনি /আমার সকল ভালবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়/তুমি ছিলে আমার কাছে/তোমার কাছে যাইনি ॥

সুরঞ্জনা ডান হাত দিয়ে আমার বাঁ হাতটা ধরে রেখেছিল। অনেক ইতস্তত করে মহারাজের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে আমার ডান হাতটা তার হাতের ওপর রাখলুম। মনে হল, জীবনটা যদি এই রকমেরই একটা নিশ্চিন্ত চলা হত! প্রথম অনুভূতি নিয়ে। পাশ দিয়ে বিপরীতে ছুটবে জগৎ জীবন। আমরা নিশ্চেষ্ট। ঘাটে বসে আছি আনমনা, যেতেছে বহিয়া সুসময়।

সুসময় যে কত সহজে কত দুঃসময় হয়ে যেতে পারে আমার বোধবুদ্ধিতে ছিল না। সেই গানটার মতো, যাচ্ছ তুমি হেসে হেসে কাঁদতে হবে অবশেষে। ঠিক মির্জাপুরের কাছে এসে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। পুলিশ হাত তুলেছে। বাঁ দিকে তাকিয়েই শরীর হিম হয়ে গেল। ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছে মুকু। পাছে চোখাচুখি হয়ে যায়। আমি চোখ বুজিয়ে ফেলেছি। খট করে বাঁ দিকের দরজাটা খুলে গেল। একটা হাত আমার বুকের কাছের জামাটা খামচে ধরেছে। আমার চোখ খুলে গেল। মুকুর রুদ্রাণী মূর্তি, নেমে এসো শয়তান। নেমে এসো। মুকু জামা ধরে হিড়হিড় করে টানছে। সুরঞ্জনা ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। মুকুর শরীরের বেশ কিছুটা সুরঞ্জনার শরীর ছুঁয়ে গাড়ির ভেতর ঢুকে এসেছে। মুকুর রং যেন ফসফরাসের মতো জ্বলছে। মুকু আর একবার ঝাঁকানি মেরে বললে, নেমে এসো শয়তান।

পেছনের সব গাড়ি আটকে গেছে। ভোঁ ভোঁ, পা পোঁ হর্ন। মহারাজ যথেষ্ট বিরক্তির গলায় বললেন, নাটক না করে এখনই নেমে যাও। রাস্তার মাঝখানে এ কী অসভ্যতা! আমার একটা মানসম্মান নেই? ছিঃ ছিঃ, তুমি তো মহা বদ ছেলে!

সুরঞ্জনার হাঁটু ঘেঁচে কোনওরকমে রাস্তায় গিয়ে পড়লুম। ভালভাবে দাঁড়াবারও অবকাশ মিলল, মুকুর প্রবল আকর্ষণে প্রায় টলে পড়ে যাই আর কী! এরই মাঝে সশব্দে দরজা বন্ধ হল, গাড়ি চলে গেল। এইবার মুকু আর আমি মুখোমুখি। মুকু দু’হাতে আমার বুকে চাপড় মারতে মারতে ক্রমান্বয়ে বলে চলেছে, শয়তান শয়তান, বলো কোথায় ছিলে, কোথায় ছিলে সারারাত!

মুকু জানে না কলকাতার মানুষ কী সাংঘাতিক কৌতূহলী! চারপাশে লোক জড়ো হয়ে গেছে। সবাই ভাবছে, কী না কী হয়ে গেছে! আমিও বুঝে উঠতে পারছি না, ব্যাপারটা কী? মুকু হস্টেলে ছিল। মুকু ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছিল, এইটুকু বুঝে নিতে অসুবিধে হল না, কিন্তু তারপর? ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল, এই তো চাই। মেয়েরা না জাগলে বাঁদররা শায়েস্তা হবেনা। জুতো, জুতো, জুতো লাগাও, জুতো।

মুকু হঠাৎ ভিড়ের দিকে তাকিয়ে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে কাঠ কাটার গলায় বললে, মজা দেখছেন, খুব মজা! যান এখান থেকে!

ভিড় একটু থমকে গেল। মুকু বীরাঙ্গনার মতো আমার হাত ধরে টানতে টানতে কলেজ স্কোয়ারে ঢুকে পড়ল। এত জোরে টানছে, আমি সামলাতে পারছি না। মনে হচ্ছে, টাল খেয়ে পড়ে যাব। পায়ে পা বেধে যাচ্ছে। ভিড়ের কে একজন বলে উঠল, এ অন্য কেস, অন্য কেস। কানে আর একটা মন্তব্য এল, বিয়ে করব বলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, আজ একেবারে ক্যাচ, কট, কট। বাছা ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখোনি!

লজ্জায় অপমানে আমার চোখে জল এসে গেছে। সবচেয়ে প্রিয়জন, সকলের চোখের সামনে এইভাবে অপমান করতে পারে? এ তো প্রকাশ্য রাজপথে জামাকাপড় খুলে নেওয়ার মতো। মহারাজের শেষ কথা ছুঁচের মতো মর্মে বিধেছে, নামিয়ে দাও, নামিয়ে দাও। যেন আমি তার পাশে বসে কোনও অপকর্ম করে ফেলেছি।

মুকু টানতে টানতে আমাকে একটা নিরালায় নিয়ে এল। গাছের আড়ালে। সরোবরের জল আলোয় টলটল করছে। মুকু আমার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠল, তুমি আমাকে ফেলে কাল সারারাত কোথায় ছিলে? কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ! তুমি কোথায় যাচ্ছিলে! আমার জামাটা খামচে ধরে আছে। সেটা ছাড়েনি।

যেখানে দাঁড়িয়েছিলুম সেইখানেই বসে পড়লুম ময়দার তালের মতো। প্রথমে মুকুর ওপরে রেগে আগুন হয়েছিলুম, এ কেমন ধারা অসভ্যতা! মহারাজের সামনে, সুরঞ্জনার সামনে, রাস্তার কিছু উটকো লোকের সামনে একেবারে বেইজ্জত! তার মুখ, চোখে জল, ভয়ংকর একটা আবেগ দেখে রাগের ভাবটা চলে গেল। এইবার অবাক হবার পালা। মুকু জানল কী করে, সারারাত আমি বাড়িতে নেই?

মুকু আমার সামনে বসেছে বাবু হয়ে। কোলের ওপর অলস ভঙ্গিতে পড়ে আছে ফরসা ফরসা নিটোল দুটো হাত। শিশু কান্না থেমে যাবার পর যেভাবে ফেঁপায় সেইভাবে থেকে থেকে ফুলে উঠছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে। দু’চোখে আকাশ। কোনও কথা বলতে পারছে না। দিঘির জলে গোটাকতক ছেলে খুব কঁপাই জুড়ছে।

অবশেষে আমাকেই জিজ্ঞেস করতে হল, তোমার হঠাৎ কী হল! সকলের সামনে এইরকম একটা বিশ্রী কাণ্ড করলে! লোকে তো আমাকে কচুরি ধোলাই দিত আর একটু হলে!

মুকু মুখ ফিরিয়ে রইল। এতক্ষণ যে এত সরব ছিল, প্রায় বাঘিনির মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শিকারের ওপর, সে এখন শিথিল, নির্বাক। আমি বললুম, বলবে তো, কী হয়েছে? তুমি সেই হস্টেলে ঢুকলে আর বেরোলে না। আমি প্রায় দু’ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলুম।

মুকু এইবার সরাসরি আমার দিকে তাকাল। চোখদুটো জ্বলছে। আবার রাগ আসছে। মুকু দাঁতে সঁত চেপে বললে, তুমি রাতে বাড়ি ফিরেছিলে?

না।

কোথায় ছিলে তুমি? বলো মিথ্যে বলল। অম্লান বদনে বলো, টিপের বাড়িতে ছিলুম।

তা বলব কেন? কাল আমার অনেক খোয়ার গেছে। আমি সারারাত পথেই ছিলুম।

আবার মিথ্যে কথা! তাই তোমার এই তেল চুকচুকে চেহারা? বাহারি টেরি? একটা মেয়ের হাত ধরে গদগদ হয়ে, নতুন একটা গাড়ি চেপে কোথায় যাচ্ছিলে লীলা করতে?

আমার ওপাশে মহারাজ ছিলেন, সেটা তোমার চোখে পড়েছিল?

তোমাকে আমার চিনতে বাকি নেই। তুমি ওরই মধ্যে তোমার কাজ সেরে নিতে পারো। তোমার অসীম ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার পরিচয় আমি অনেকবার পেয়েছি!

এইবার আমার ভয়ংকর রাগ এল। অকারণে মেয়েটা আমাকে তড়পাচ্ছে। অপরাধ করল নিজে, দোষ দিচ্ছে আমাকে। অফেন্স ইজ দি বেস্ট ডিফেন্স। সেই টেকনিক। আমি একটু ঝুঁঝের গলায় বললুম, চিরকালের জন্যে তুমি আমাকে মহারাজের চোখে ছোট করে দিলে। আমার আশ্রমে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল।

তোমার মতো চরিত্র আশ্রম-টাশ্রমে যত কম যায় ধর্মের পক্ষে ততই ভাল।

কেন বলো তো! আমার ওপর তোমার অত রাগ কেন?

রাত ন’টার সময় আমি তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলুম।

সেকী? কী করে?

যেভাবে সবাই যায়। বাসে করে।

তোমাকে তো পুলিশে ধরেছিল!

কোন অপরাধে? আমি চোর না ডাকাত?

তা হলে তোমাদের হস্টেলের সামনে পুলিশের গাড়ি ছিল কেন?

হস্টেলে একটা বড় রকমের চুরি হয়েছে। পুলিশ এসেছিল অনুসন্ধানে।

তা তুমি আমাকে দু’ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখলে কেন?

জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হবে, সুপারিনটেন্ডেন্টকে বলব, অনুমতি নোব, তারপর তো আসব!

সেই কথাটা আমাকে জানাতে কী হয়েছিল?

নিশ্চয় কোনও কারণ ছিল।

তা হলে আমার অপরাধটা কোথায়?

তোমার অপরাধ? তুমি একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বার্থপর। তোমার জন্যে আমাকে ট্যাক্সি করে পড়ি কি মরি ছুটতে হয়েছে, কারণ তা না হলে তুমি বাড়ি ঢুকতে পারতে না।

কেন?

বাড়ির চাবিটা কার কাছে?

সত্যিই তো চাবিটা কার কাছে? সে খেয়াল তো আমার হয়নি। মুকু বলতে লাগল, হস্টেলে প্রথমে আমাকে একটা মুচলেকা লিখে দিতে হল। আমি আমার দায়িত্বে হস্টেল ছেড়ে আমার মেসোমশাইয়ের বাড়িতে যাচ্ছি। রাত ন’টার সময় ওই ভয়ংকর ভৌতিক বাড়ির দরজা খুলে অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে দোতলায় উঠলাম। হঠাৎ সমস্ত বাড়ির আলো ফিউজ হয়ে গেল। না। আছে একটা দেশলাই, না আছে একটা হ্যারিকেন। কোনও কিছুই হাতের কাছে নেই। তোমার বাবাও গেছেন, ঘরের লক্ষ্মীও চলে গেছেন। না আছে হাতের কাছে একটা টর্চ। এদিকে যাই তো চেয়ারের সঙ্গে ধাক্কা, ওদিকে যাই তো টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা। উত্তরের বারান্দায় ধপাস করে কী একটা পড়ল। ভাগ্যিস ম্যাও করে ডাকল।

তুমি রান্নাঘরে গেলে না কেন? ছাতের সিঁড়িতেই তো হ্যারিকেন, তেলের বোতল সবই ছিল।

তোমাকে আর উপদেশ দিতে হবে না। তোমাদের বাড়ির ওই দিকটায় যেতে আলো থাকলেও বুক কাপে তো অন্ধকারে! তাও আমি গেলুম। উঁচু উঁচু চৌকাঠ। এখানে বালতি, ওখানে মগ। ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। সিমসিম করছে গাছপালা। যাও বা একটা দেশলাই পেলুম, কাঠি নেই। ভোলা উনুনের ঝিকে লেগে শাড়ির তলাটা ফেঁসে গেল। বেড়ালটা ওত পেতে বসে আছে। অন্ধকারে চোখদুটো ধকধক করছে। আবার হাতড়াতে হাতড়াতে ফিরে এলুম। একটা ছুঁচো উঠে এসেছিল নীচে থেকে। চিক চাক করে পায়ের ওপর দিয়ে ছুটে পালাল। আমার অবস্থাটা তুমি একবার ভাবো! ঠোক্কর খেতে খেতে নেমে এলুম নীচে। তালা লাগালুম। দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে বেরোতে দেখে এক কলি গান বেরোল। আমি গ্রাহ্য করলুম না। সোজা বিটুদার দোকানে। দোকান ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার সঙ্গে চলে এলেন। দেশলাই আর মোমবাতি নিয়ে। সেই অন্ধকারে তিনি ফিউজ পালটে দিলেন। আলো আবার জ্বলে উঠল। বিষ্টুদা বললেন, একা তুমি থাকবে কেন, চলো আমাদের বাড়িতে। আমি বললুম, দেখি, এইবার হয়তো ফিরবে। দশটা তো বাজল। বিষ্টুদা বললেন, তোমার ভয় করবে না? বললুম, করলেও উপায় নেই। বিষ্টুদা চলে গেলেন। ওই ফাঁকা বাড়িতে আমি একা বসে আছি। দশটা বাজল, এগারোটা বাজল। তোমার পাত্তা নেই। বিষ্টুদা আবার এলেন টিপকে নিয়ে। তোমার জন্যে আমাদের সে কী দুর্ভাবনা! কী হল, আসছে না কেন? কোনও অ্যাক্সিডেন্ট হল! সারাটা রাত আমরা তিনজনে জেগে বসে রইলুম। তোমার একবারও মনে হল, বাড়ি ফিরে দেখি সেখানে কী হচ্ছে! সারাটা রাত তুমি আঘাটায় ফুর্তি করলে। দশটা বাজল, সকাল দশটা। তখনও তোমার পাত্তা নেই। শেষে ধ্যাততেরিকা বলে বেরিয়ে পড়লুম। চাবিটা রেখে এলুম বিষ্টুদার কাছে। এইবার বলো, তোমাকে কী করা উচিত! ফুল বেলপাতা দিয়ে পুজো! সারারাত তুমি ছিলে কোথায়! ওই মেয়েটা কে, যাকে জাপটে ধরে বসে ছিলে?

তুমি এখানে কী করছিলে?

ইউনিভার্সিটির সামনে লোকে কী করে?

তুমি আমাকে ওইভাবে টেনে হিঁচড়ে নামালে কেন? এতে কার সম্মান বাড়ল? তোমার না আমার? মহারাজ কী ভাবলেন? আর আমি কোনওদিন ওঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব?

আমি তো সেইটাই চাই, যাতে তুমি দাঁড়াতে না পারো, যাতে তুমি ধর্মের ভণ্ডামি ছেড়ে কর্মে আসতে পারো।

তোমার ধর্মের ওপর এত রাগ কেন মুকু?

ধর্মের ওপর রাগ নয়, রাগ তোমার ধর্মের ওপর। তুমি হলে কলির কেষ্ট। যেখানে যাচ্ছ সেইখানেই নববৃন্দাবন লীলা। তোমার গুণের তো ঘাট নেই!

এইবার আমার কাহিনিটা একটু শুনবে?

কী হবে শুনে? নব্বই ভাগ মিথ্যে, দশ ভাগ হয়তো সত্য।

এরপর আর কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। যে যার নিজেরটাকেই বড় করে দেখে। এমন একটা মেয়ের সঙ্গে জীবন গাঁথার চেয়ে, কোনওক্রমে সরে পড়াই ভাল। মনে হচ্ছে, মাথার। অসুখ আছে। সংসারে থাকলে, যেখানেই থাকি কাঁক করে ধরবে। গোখরার কামড়। সন্ন্যাসীই হতে হবে। তবে স্বামী নির্মলানন্দজির কাছে গেলে, তিনি আমাকে দূর করে দেবেন। তিনি মুকুকে চেনেন না। মুকুর সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক তাও জানেন না। বোঝাতে গেলেও শুনতে চাইবেন না।

মুকু আবার জিজ্ঞেস করলে, মেয়েটা কে?

আমি একটু রাগের গলাতেই বললুম, তোমার কী মনে হয়?

ওটি তোমার কত নম্বর?

তোমার এত সন্দেহ কেন মুকু?

মেয়েরা সহজে নিজের অধিকার ছাড়তে চায় না।

তুমি কিছুই না জেনে সন্দেহ করছ কেন? এটা খুবই খারাপ। নিজেকে ছোট করছ। মেয়েটির নাম সুরঞ্জনা। আজই পরিচয় মহারাজের আশ্রমে। সুরঞ্জনার বাবা পুলিশের বড়কর্তা। মহারাজকে নিয়ে আমরা সুরঞ্জনার বাড়িতেই যাচ্ছিলুম। ওঁদের খুব বিপদ। মাঝখান থেকে তুমি এই অসভ্যতা করলে।

আমি দেখিয়ে দিলুম, তুমি কার! আমার চোখের সামনে দিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে! তাও ওইভাবে? একেবারে গদগদ যেন মোহনভোগ। কোলের ওপর হাত নিয়ে কী করছিলে? ইকির মিকির চাম চিকির খেলা করছিলে? তুমি নিমেষে অত দূর এগোও কী করে?

হেসে ফেললুম, আমার মনে কোনও পাপ নেই বলে। আমার ভেতরের শিশুটাকে আমি কখনও বড় হতে দিই না। সেই কারণেই সবাই আমার সঙ্গে সহজ হতে পারে। যেমন তুমি আমাকে সবসময় বকো। যেন, আমি তোমার ছেলে।

তুমি তো এক এক সময় আমার ছেলেই। কাল সারাটা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে দাওনি।

কাল সারারাত আমিও জেগেছিলুম মুকু। খালধারের মশা আমার বোতল বোতল রক্ত শুষেছে।

আমাদের সামনে একটা ছায়া পড়ল। ছায়ার পেছন পেছন এক মহিলা এসে দাঁড়ালেন। বুকের কাছে তোয়ালে জড়ানো কী একটা ধরে আছেন। মহিলার বয়স বেশি নয়। মুকুর বয়সিই হবেন। চেহারায় একটু অযত্নের ছাপ। চোখের কোণে কালি পড়েছে। পরপর অনেকদিন রাত জাগলে যেমন হয়। শাড়িটা কিন্তু যথেষ্ট দামি। মহিলা মুকুকে বললেন, ভাই, আমার এই বাচ্চাটাকে একটু ধরবেন? এই পাঁচ-দশ মিনিটের জন্যে। আমি একটা কাজ সেরে আসব এই কাছাকাছিই। আর চাপতে পারছি না।

মুকু স্পষ্ট জবাব দিল, সম্ভব নয়।

মহিলা একটু থতমত খেয়ে গেলেন। আমার কেমন মায়া হল। উদাসী চৈত্রের মতো চেহারা। আমি মুকুকে বললুম, ধরো না একটু। কী হয়েছে! বলো তো আমি ধরছি।

মুকু আমাকে এক ধমক লাগাল, চুপ করো। মহিলার দিকে মুখ তুলে বললে, আপনি অন্য কোথাও দেখুন, আমরা উঠে যাচ্ছি।

মুকু উঠে পড়ে বললে, চলো চলল। আমার ক্লাস আছে।

মহিলা অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুটা এসে মুকু আমাকে বললে, তুমি সত্যিই একটা ছাগল। জগতের কিছুই বোঝো না?

কেন, এইরকম কেন বলছ?

ওই বাচ্চাটাকে সারাজীবন তুমি ধরতে পারবে?

তার মানে? মহিলার বড় অথবা ছোট যে-কোনও একটা বাইরে পেয়েছে।

তোমার মাথা। ছাগল একটা। এই বুদ্ধি নিয়ে সংসারে চলা যায়! এমনও তো হতে পারে, ও ওই বাচ্চাটাকে কায়দা করে গছাতে চাইছে। অবৈধ সন্তান, অথবা মানুষ করার সংগতি নেই।

তোমার কল্পনার দৌড় আছে মুকু। ভদ্রমহিলাকে দেখে তোমার কি সেইরকম মনে হল?

সেইরকমই মনে হল। তোমার চোখ থাকলে তুমিও বুঝতে পারতে। চোখের কোলে এক পোঁছ কালি। অসংযমীর জীবন। আর জানবে, মেয়েরা যখন সাধারণ অবস্থায় সিল্কের শাড়ি পরে, তখন শেষ অবস্থা। সবই তার গেছে।

তাই হবে। মেয়েরাই মেয়েদের বেশি বুঝবে। মুকু, আমার এখনও কিছু খাওয়া হয়নি।

খাওয়া আমারও হয়নি। চলো, কোথাও খেয়ে নিই।

আমার পকেটে আছে একটি মাত্র টাকা।

একটা কেন? কাল তো অনেক টাকা ছিল। কোথায় ওড়ালে?

ওড়াইনি, পকেট মেরে দিয়েছে।

বাঃ, খুব ভাল। সংসারে শনি লেগেছে। আমার কাছে কিছু টাকা আছে। দু’জনের খাওয়া হয়ে যাবে, কিন্তু খাব না। বাইরে খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল হবে না, পয়সারও শ্রাদ্ধ। চলো বাড়ি যাই, গিয়ে রান্না করি। এখন থেকে আমাদের বুঝেসুঝে চলতে হবে। কত গেল?

তা শ’তিনেক হবে।

তুমি কোন ভাবে ছিলে? কার ধ্যান করছিলে?

মা কালীর। ঠনঠনের কালীমন্দিরে মায়ের আরতি হচ্ছিল। বিভোর হয়ে দেখছিলুম। আরতি শেষ হল। চোখ বুজিয়ে মাকে হৃদকমলে দেখার চেষ্টা করছিলুম। চোখ খুললুম, ট্রামে উঠলুম, ভাড়া দিতে গেলুম, পকেট ফাঁকা। ট্রামের কনডাক্টর একটা টাকা দিলেন।

যে-মা তোমার পকেট সামলাতে পারেন না, সেই মাকে ডেকে কী লাভ! বুঝতেই পারছ, একালে দেব-দেবীর কোনও ক্ষমতা নেই। অকারণ সময় নষ্ট।

মুকুর সঙ্গে আমার আর তর্কযুদ্ধে যাবার ইচ্ছা হল না। তা হলে আমি বলতে পারতুম ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথায়, কী জানো, যার যা কর্মের ভোগ আছে তা তার করতে হয়। সংস্কার, প্রারব্ধ এসব মানতে হয়। বলতে ইচ্ছা করল না। এখনই হয়তো বলবে, রাখো তোমার শ্রীরামকৃষ্ণ। মগের দেশের মেয়ে। ঠাকুরের কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘সুখ-দুঃখ দেহধারণের ধর্ম। কবিকঙ্কন চণ্ডীতে আছে যে কালুবীর জেলে গিছিল, তার বুকে পাষাণ দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু কালুবীর ভগবতীর বরপুত্র। দেহধারণ করলেই সুখ-দুঃখ ভোগ আছে। শ্ৰীমন্ত বড় ভক্ত। আর তার মা খুল্লনাকে ভগবতী কত ভালবাসতেন। সেই শ্ৰীমন্তের কত বিপদ। মশানে কাটতে নিয়ে গিছিল। একজন কাঠুরে পরমভক্ত, ভগবতীর দর্শন পেলে। তিনি কত ভালবাসলেন, কত কৃপা করলেন। কিন্তু তার কাঠুরের কাজ আর ঘুচল না। সেই কাঠ কেটে আবার খেতে হবে। কারাগারে চতুর্ভুজ শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী ভগবান দেবকীর দর্শন হল। কিন্তু কারাগার ঘুচল না।’ এইসব আমি বলে একটা তর্ক জুড়ে দিতে পারতুম। মনে হল, কী হবে? যার যার বিশ্বাস, তার তার বিশ্বাস। এখন তোমার বয়স কম, তায় আবার সুন্দরী। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে, এমন কেউ নেই যে না ফিরে তাকাবে। এইমাত্র একজন সাইকেল চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। নিজের দেমাকেই মটমট করছে। তোমার সমর্পণ আসে কী করে? তবে এ কথা ঠিক, সাংঘাতিক তেজি মেয়ে। অন্য অনেক গুণ। আছে।

ভয়ে ভয়ে বললুম, মুকু, বাড়ি গিয়ে রাঁধতে রাঁধতে বিকেল হয়ে যাবে। পেট জ্বলছে। দশ পয়সা, কি দু’আনার ছোলাভাজা কিনব?

ছোলাভাজা ফুটো হয়, দাঁড়াও বাদামভাজা কিনি।

ফুটো হয় মানে?

মানে একশোটা ছোলার পঞ্চাশটাই পোকা ধরা। কোনওটাই নিরামিষ নয় আমিষ।

মুকুর বাদামভাজা কেনা শুরু হল। জীবনে এমন দেখিনি। প্রথমেই দর হল। তারপর দরাদরি। দরে যদিও বা পোষাল, মুকু বললে, বেছে নোব। বাদামঅলা বললে, বাদাম কি বাছা যায় দিদি?

খুব যায়। চালুনিতে ফেলে নাড়ো। বড়গুলো ওপরে চলে আসবে।

তাই হল। বাদামঅলা ওজন করতে যাচ্ছিল। মুকু বললে, দাঁড়াও, আগে খোসা ছাড়াই।

আগে ওজন করে খোসা ছাড়িয়ে দোব দিদি।

আজ্ঞে না। ওজন বেড়ে যাবে। আর তুমি ফুঁ দেবে কী! সে বাদাম আমি খাব কেন? বাদামঅলা হাঁ হয়ে গেল। এমন খদ্দের সে জীবনে দেখেনি।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন