১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

সামনে যখন যাবি ওরে থাকনা পিছন পিছে পড়ে

আসুন, আসুন, বিষ্ণুবাবু আসুন।

বিক্রেতা মাতুলের খাতির করার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ইনি একজন ক্রেতা। পরনে ঝলঝলে ট্রাউজার, দু’পকেটঅলা বুশশার্ট। পকেটদুটো কাগজপত্রে ঠাসা। একটা পকেটে উঁকি মারছে সোনালি সিগারেট কেস। আর এক পকেটে লেদার পার্স। ভদ্রলোকের বেশ গোদা চেহারা। ভুড়ি-ওলটানো গামলার মতো বুশশার্টকে সামনের দিকে ঠেলে রেখেছে। চৌকাঠের ওপর দিয়ে ঘরে একটা পা ফেললেন, বেশ কম্পন অনুভব করা গেল। কাপডিশ চিন করে উঠল।

অ, আসর বসে গেছে!

আমার বলতে ইচ্ছে করল, আ, বসেছে। মুখে এসেও আটকে গেল। ভদ্রলোকের অবয়ব থেকে। ঐশ্বর্যের বদ গন্ধ বেরোচ্ছে। যা ধান্যেশ্বরীর গন্ধকেও হার মানায়, এমন বদবিটকেলে! আমরা সবাই মেঝেতে গালচের ওপর বসে আছি, তিনি দুম করে সোফায় গিয়ে বসলেন। সোফা সেই শরীরের ভারে নাচতে লাগল।

পিতার চোখ অনুসরণ করছে প্রতিটি গতিবিধি, ভাবভঙ্গি। বেশ বুঝতে পারছি, মনে মনে বারকতক ভালগার বলা হয়ে গেছে। ভদ্রলোকের নীচের ঠোঁট অসম্ভব পুরু। দুধে ভেজানো কালো পাউরুটির মতো। আমার মনে হয়, ইনি খাবার সময় হুসহাস শব্দ করেন। ঢেউ করে ঢেঁকুর তোলেন। খেয়ে উঠে সঁত খোঁচান, দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যাংশ বের করার জন্যে এক ধরনের চুসুক চুসুক শব্দ করেন। খাট কাঁপয়ে দুম করে পাশ ফেরেন এবং পাশবালিশ ব্যবহার করেন। নিঃসন্দেহে ইনি একজন মদমত্ত পুরুষ। ঘামে অবশ্যই দুর্গন্ধ আছে। পিতা একদিন নিশ্চয়ই বলবেন, ওয়েলদি ফ্রগ। সর্ব অঙ্গে টাকার পিটুইটারি গ্ল্যান্ড।

সোফাকে আর একবার নাচিয়ে বললেন, স্প্রিং ঠিক আছে তো! একটু দেবে দেবে গেছে মনে হচ্ছে।

মাতুল বললেন, না না, একেবারে নতুনের মতোই আছে। আমার কাছে জিনিসপত্র খুব যত্নেই থাকে। তা ছাড়া বাড়িতে ছোট ছেলেপুলে নেই।

অ।

পায়ের ওপর পা তুলে বারকতক নাচিয়ে নিলেন। বাহাদুর এসে এক প্লেট শিঙাড়া আর এক কাপ চা ধরে দিয়ে গেল। ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে শিঙাড়ার প্লেট নিতে নিতে বললেন, এসব আবার কেন, এসব আবার কেন। দু’আঙুলে একটা শিঙাড়া ধরে কামড় মেরেই হা হা করতে লাগলেন। গরম লেগেছে। মুখ দিয়ে যেন ড্রাগনের নিশ্বাস বেরোচ্ছে। কতটা গরম ঠিক আন্দাজ করতে পারেননি। কোনওরকমে গলা দিয়ে নামালেন। মুখ দেখে মনে হচ্ছে, বেশ কাবু হয়ে পড়েছেন। মা যেমন গরম-লেগে-যাওয়া সন্তানকে দুলিয়ে দুলিয়ে হাওয়া খাইয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন, ভদ্রলোক তেমনি আধ-খাওয়া শিঙাড়াটিকে হাওয়া খাওয়াতে লাগলেন। একটু সামলে নিয়ে বললেন, গান থামল কেন? চলুক না চলুক। একটু ভৈরবী-টেরবি।

মাতুলের ভুরুর কাছটা কুঁচকে গেল। আমি জানি এই ধরনের কথা তিনি সহ্য করতে পারেন না। ভেতরে ভেতরে তেতে উঠছেন। ফেটে পড়লেন বলে। মাতামহের হাতের মুঠো খুলছে, বন্ধ হচ্ছে। এইসব ক্ষেত্রে সাধারণত তার যা বলার ইচ্ছে হয়, তা হল, ধুর মড়া! খুব কষ্টে নিজেকে সংযত রেখেছেন।

এতক্ষণে পিতা মুখ খুললেন, জয়, ইনিই কি তোমার সেই সোফার ক্রেতা?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

পেমেন্ট করেছেন?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

কত?

হাজার।

ভদ্রলোক ফড়াস করে চায়ে চুমুক মেরে বললেন, এখন মনে হচ্ছে দামটা একটু বেশি হয়ে গেছে। সাতশো-টাতশো হলেই ভাল হত। আবার একটা দোর্দণ্ড চুমুক।

পিতা কুমিরের চামড়ার সেই বাক্সটি খুলে, একটা দশ টাকার নোটের কড়কড়ে বান্ডিল হাতে তুলে নিলেন। বান্ডিলটা ভদ্রলোকের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, হিয়ার ইউ আর।

নোটের বান্ডিল সোফায় পড়ে অল্প একটু নেচে উঠল। ভদ্রলোক কাপ নামিয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, এর মানে?

পিতা বললেন, ভেরি সিম্পল। হাজার আছে কি না দেখে নিন, তারপর যেমন এসেছিলেন তেমনি চলে যান।

কেন কেন, সোফা বিক্রি হবে না?

না।

তার মানে? আপনি কে?

জানার প্রয়োজন নেই। চা খাওয়া হয়েছে? আচ্ছা, তা হলে আসুন।

পিতা হাত জোড় করে মুখে অদ্ভুত এক হাসি ভাঙলেন। ভদ্রলোক বললেন, সেকী! মেয়ের বিয়ে, জামাইকে সোফাসেট দোব, সব ঠিক।

বেশ তো নতুন কিনে দিন, কত আর পড়বে, এই ধরনের জিনিস হাজার তিনেকে হয়ে যাবে, তবে, বাঘছালের কভার হবে না।

অ্যাঁ, এটা বাঘছাল নাকি?

বসে আছেন, বুঝতে পারছেন না!

বাঘছাল! সোফায় বাঘছালের কভার। এর দাম তো তা হলে দশ বারো হাজারও হতে পারে।

অবশ্যই পারে।

তা হলে?

তা হলে টাকাটা তুলে নিয়ে দয়া করে আসুন।

কে যে আপনি? কোথা থেকে যে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন!

মাতামহ দুম করে গালচের ওপর একটা চাপড় মেরে জানিয়ে দিলেন, আর বেশিক্ষণ সহ্য করব না। এইবার লেগে যাবে ধুন্ধুমার। মাতুল বললেন, কাকে কী বলছেন? জানেন ইনি কে?

ভদ্রলোক বললেন, আমার জানার দরকার নেই। বিক্রির সময় উনি কি ছিলেন?

মাতামহ বললেন, হরিশঙ্কর, আর তো সহ্য করা যাচ্ছে না। তোমার রাগ হচ্ছে না?

রাগের বদলে দুঃখ হচ্ছে। এই ভদ্রলোকের কী অবস্থা দেখেছেন, লোভে একেবারে জরোজরো। দিগ্বিদিক-জ্ঞানশূন্য। শিকার ফসকে গেলে সব পশুরই এক অবস্থা হয়।

ভদ্রলোক এবার উঠে দাঁড়ালেন। ঘরে একটা ঝাড়লণ্ঠন ঝুলছিল, সেই দিকে তাকিয়ে বললেন, এটা কী হবে?

পিতা বললেন, ওটা যেমন ঝুলছে, ঝুলবে, আলো দেবে।

অ। আর কিছু বিক্রি হবে, টি-সেট শরবত সেট?

মাতামহ বললেন, হ্যাঁগো, এ যে একের পর এক ফ্যাচাং বার করছে।

মাতুল বললেন, না, আর কিছু বিক্রি হবে না।

অ, হঠাৎ তা হলে অবস্থার উন্নতি হয়ে গেল!

সোফার কভারে আদরের হাত বুলিয়ে বললেন, সত্যি বাঘের ছাল?

মাতামহ বললেন, সন্দেহ থাকলে চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘের গায়ে একবার হাত বুলিয়ে এসো না বাপু।

ভদ্রলোক দু’পা ফাঁক করে অসভ্য অহংকারীর মতো দাঁড়িয়ে, সোনার সিগারেট কেস থেকে সিগারেট বের করতে করতে বললেন, আর এক হাজার বাড়িয়ে দোব? কড়কড়ে হাজার।

মাতামহ বললেন, একী গো! এ যে আমাদের সামনে সিগারেট ফোঁকার তালে আছে।

মাতামহ গালচে ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলেন, পিতা হাত ধরে টেনে বসালেন, যাবেন কোথায়? পয়সা আর শূকরের বিষ্ঠা, দুটোরই একরকম গন্ধ, একটু সহ্য আপনাকে করতেই হবে। পালাবেন কোথায়?

ভদ্রলোক বাঁকা চোখে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, মাতুল হাত ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে গেলেন। আর তখনই দেখলুম, লোকটির ঘাড়ে এক ধ্যাবড়া পাউডার।

মাতামহ বললেন, বুঝলে হরিশঙ্কর, আমাদের বাবুর অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে।

কী ক্ষমতা?

ভূত ধরার। এই মড়াকে কোত্থেকে ধরে নিয়ে এল বলো তো! সারাজীবন শুধু ভূত ভোজন আর ভূতের নৃত্য!

কী করবে বলুন? আজকাল ভূত যে খুব জন্মাচ্ছে।

ঘরের বাইরে ভদ্রলোকের চড়া গলা শোনা গেল, মাল তো পেলুমই না, উলটে ঠ্যালাভাড়াটাই আমার লস।

পিতা উঠে বাইরে গেলেন। মাতামহ বললেন, আরে ওকে ধরো ধরো, চড়চাপড় মেরে দিতে পারে। বড় রাগী মানুষ।

বারান্দার রেলিং-এ কনুই রেখে ভদ্রলোক সিগারেট ফুঁকছেন। পিতা নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ধোঁয়ার প্রকোপ বাঁচাতে বাঁচাতে জিজ্ঞেস করলেন, মহাশয়ের ঠ্যালাভাড়া কত?

দশ।

পিতা বুকপকেটে হাত দিলেন। দরজার সামনে মাতামহ। তিনি বললেন, দশ কী হে! কোথায় যাবে? বেশি বলছে হরিশঙ্কর। ঝট করে দিয়ে দিয়ো না, একটু দরদস্তুর করা ভাল।

ভদ্রলোক বললেন, কতটা যেতে হবে জানেন?

কতটা? যতটাই হোক, তুমি যে লরির ভাড়া বলছ। পাঁচ দিয়ে ছেড়ে দাও, হরিশঙ্কর। পাঁচের বেশি হতেই পারে না।

ভদ্রলোক বললেন, এই লোড নিয়ে কেউ পাঁচ টাকায় যাবে না।

না যায় না যাবে, থাক আমার মাল পড়ে।

পিতা বললেন, আপনি চুপ করুন। এই ক্লাসের সঙ্গে আজকাল আর তর্ক চলে না। যা চাইবে তাই দিতে হবে। দেশ যে স্বাধীন হয়েছে।

ভদ্রলোক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, কোন ক্লাস?

এই ঠ্যালাঅলা, রিকশাঅলা, রেলওয়ে পোর্টার।

অ। তাই বলুন। আমি ভাবলুম, আমাকে বলছেন বুঝি।

না, আপনাকে বলব কেন? এই নিন আপনার দশ টাকা।

ভদ্রলোকের প্রকৃতই কোনও চক্ষুলজ্জা নেই। হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়ে পকেটে পুরলেন।

মাতামহ বললেন, বাবু এখনও হাল ছাড়েননি, জপাবার চেষ্টা চলছে।

পিতা মাতামহের হাত ধরে ঘরে টেনে আনলেন। ঢুকতে ঢুকতে বললেন, আমাদের ছুটি। এখন আমাদের আর কিছু করার নেই। বেশ একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল, কোথা থেকে এসে সব ওলটপালট করে দিয়ে গেল।

মাতুল ঘরে এলেন। ভদ্রলোক বিদায় নিয়েছেন। ঘরে ঢুকে মাতুল মৃদু হাসলেন। অপরাধীর হাসি।

মাতামহ জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে তুমি এসব জিনিস আমদানি করো? যেমন সিন্ধুঘোটকের মতো চেহারা!

এর বাবা মস্ত বড়লোক ছিলেন। ছেলেটা কেমন যেন একটু বখে গেছে।

ছেলে আর বোলো না। দামড়া বলাই ভাল।

পিতা বললেন, ওইরকমই হয়! বাপ বড় হলে ছেলে খারাপ হয়। বিদ্যাসাগরের ছেলে পানাপুকুর।

মাতুল প্রসঙ্গে ফিরে এলেন, এসব আপনি কী করছেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

বুঝলে না? একে বলে শেষের সময় হাল ধরা। মেরামতির কাজ।

এমন তো কেউ করে না।

কেউ কেউ করে। করে বলেই সংসার অচল হয় না। কেউ-না-কেউ ঘড়িতে দম দেয় তাই সময় চলে, কাঁটা ঘোরে। এ বাড়ির যা গেছে তা গেছে। আর নতুন করে কিছু যাবে না।

আমাকে তো যেতেই হবে।

তুমি যাবে, অবশ্যই যাবে। স্থির পুরুষের কাছে ভাগ্য ফিরে আসে না। যে-জলে স্রোত নেই, সে জলে কচুরিপানা, ঝাঁজির দঁক তৈরি হয়। তুমি বউমা দু’জনেই যাবে। বউমা তোমার সঙ্গে না থাকলে তুমি ভেসে যাবে। সব নৌকোরই নোঙর থাকা চাই। এ বাড়ি দেখবে বাহাদুর। মাইনে আমি দোব। আমরা মাঝে মাঝে এসে দেখাশোনা করে যাব।

মাতামহের দিকে তাকিয়ে বললেন, হঠাৎ এইসময় মাথায় হিমালয় চাপল! এই তো গত বছর, না আগের বছর ঘুরে এলেন।

পদ্মাসনে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন তিনি। প্রশ্ন শুনে মৃদু মৃদু হাসতে লাগলেন, মাথা দোলাচ্ছেন, আর মেঝেতে আঙুল ঠুকছেন।

পিতা বললেন, কী? উত্তর দিন।

মাতামহ মুখ তুললেন। সারামুখে অদ্ভুত এক ধরনের বিষণ্ণ হাসি। বললেন, উত্তর চাও হরিশঙ্কর, উত্তর? নৌকো আর নোঙরের কথা বললে না? কোনও কোনও নৌকোর নোঙর না থাকাই ভাল হরিশঙ্কর। তাদের যে ভেড়ার মতো ঘাট নেই। বাণিজ্য করার মতো হাট নেই। সে নৌকো কেবল ভেসেই চলে, ভেসেই চলে। ভাসতে ভাসতে একদিন সাগরে।

বড় অভিমান জমেছে মনে? কীসের অভিমান? প্রসাদের গান করেন, সব অভিমান মায়ের দিকে ঠেলে দিতে পারেন না?

তুমি পারো হরিশঙ্কর? কোনও মানুষ পারে?

পিতা নীরব হয়ে গেলেন। একটা বয়েসে সব মানুষের চোখেই কেমন এক ধরনের দৃষ্টি আসে, মরা আগুনের মতো। সে দৃষ্টি জগতের কোনও কিছুকেই যেন স্পর্শ করতে চায় না। এখানে নেই, ওখানে নেই, কোথায় যে আছে ধরা যায় না। মেঘলা আকাশের মতো নিষ্প্রভ। মাতামহের চোখদুটি বেশ আয়ত। সেই আয়ত দুটি চোখে যেন একজোড়া গাংচিল উড়ছে। সমুদ্রের দূর দিকচক্রবালে তারা ডানা মেলে চক্কর খেয়ে চলেছে।

পিতা উঠে পড়লেন। ঘরের এ পাশ থেকে ও পাশে দু’বার ঘুরে এলেন। কল্পনায় অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। দশ বছর আগে, বিশ বছর আগে, তিরিশ বছর আগে, যেখানে যা ছিল সেই সব বসাতে চাইছেন, জহুরি যেমন জড়োয়ার গহনায় চিমটে দিয়ে লাল নীল সবুজ পাথর সেট করার চেষ্টা করেন।

ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি যাই। যা ছিল তা আর নেই। যা আছে তাও হয়তো থাকবে না। যা যাবেই তা যাবেই, ব্যর্থ চেষ্টা, তবু চেষ্টা। মন যখন চাইছে, তখন ঘুরে আসুন একবার হরিদ্বার। তবে পনেরো দিনের মধ্যে ফিরতে হবে। সব ব্যাপারে জীবনদর্শন, মৃত্যু, লক্ষ রকমের প্যানপ্যানানি টেনে আনা এক ধরনের কল্পবিলাস। আমাদের অলস জীবনেই এসব প্রশ্রয় পায়, ইয়োরোপের মানুষ পাত্তা দেয় না। জয়, তোমার সেই খাটটা কত টাকায় বিক্রি করলে?

এখনও দাম পাইনি। দুপুরে তারা আসবেন দেখতে।

এলে বোলো, খাট বিক্রি হবেনা। বিষয় সম্পত্তি বিক্রি করার অভ্যাস বড় খারাপ। আমি সহ্য করতে পারি না। তোমার টাকাপয়সার অবস্থা কীরকম? নতুন জায়গায় গিয়ে ক’দিন সামলাতে পারবে?

শ’পাঁচেক আছে।

আরও শ’পাঁচেক রাখো।

পিতা মাতুলের দিকে পাঁচখানা একশো টাকার নোট এগিয়ে দিলেন। মাতুল ইতস্তত করছেন।

নাও ধরো। জীবনে একটু বাস্তববুদ্ধি আনার চেষ্টা করা। পুরুষ হবে পুরুষের মতো। মেয়েরা হবে মেয়েদের মতো। নাও নাও, আমার সময়ের অনেক দাম।

মাতুল হাত পেতে নোট পাঁচখানা নিয়ে মাথায় ঠেকালেন। পিতা বললেন, সেন্টিমেন্টাল হয়ে সিন ক্রিয়েট কোরো না।

দরজার বাইরে আসতেই মাতামহ বললেন, হরিশঙ্কর, তুমি একবার আমার ঘরে আসবে? তোমার সঙ্গে একান্তে আমার দু-একটা কথা আছে।

হ্যাঁ, কেন যাব না?

মাতামহ আমার মাথার পেছন দিকে হাত রেখে বললেন, সুদের সুদ তুমিও আসতে পারো।

নারকেল গাছের তলায় মাতামহের কুটির। ঠিক যেন বৈরাগীর আশ্রম। এই ঘরে আমাদের দু’জনের কত গানের আসর বসেছে। বেসুরো, বেতালা। পেছনের দিকের ওই জানলায় এসে রাস্তার ছেলেরা কুকুর ডেকেছে, বেড়াল ডেকেছে।

আমরা ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মাতামহ দরজা ভেজিয়ে দিলেন। ঘরটি বেশ নিভৃত হয়ে উঠল। চৌকির ওপর কম্বল-মোড়া বিছানা গোল করে গোটানো। দেয়ালে মা জগদম্বা রোজ যেমন হাসেন তেমনই হাসছেন। পুণ্যবান হয়তো সে হাসির খলখল শব্দ শুনতে পাবেন।

মাতামহ বললেন, তোমাকে আমি দুটো জিনিস দেখাব হরিশঙ্কর। প্রথমে, তুমি আমাকে দেখো।

আপনাকে আর নতুন করে কী দেখব বলুন!

হরিশঙ্কর, আমার একটা কিছু হয়েছে, বুঝলে।

বৈরাগ্য!

সে তো মনে। আমি বলছি দেহে। দেখবে তুমি? এই দেখো।

মাতামহ ডান পা-টা সামনে বাড়িয়ে দিলেন। পায়ের পাতা ফুলে তপতপ করছে। একটু নয়, বেশ ফুলেছে। পিতা বললেন, একী? এ যে বেশ ফুলেছে! দেখি।

পিতা নিচু হয়ে পায়ের পাতার একটা জায়গা আঙুল দিয়ে টিপে আঙুলটা তুলে নিলেন। জায়গাটা দেবেই রইল। জিজ্ঞেস করলেন, কতদিন হল এইরকম হয়েছে?

কদিন ধরেই অল্প অল্প ফুলছিল। আজ দিন তিনেক হল ভীষণ ফুলেছে।

দুটো পাতাই?

হ্যাঁ দুটোই, এই দেখো না।

এর সঙ্গে আর কোনও অসুবিধে আছে?

আছে। প্রস্রাব তেমন ভাল হচ্ছে না। চলাফেরা করলে হাঁপ ধরছে, মাথা ঘুরছে।

খিদে?

একেবারে নেই। খেলেই গা গুলোচ্ছে। বমিবমি লাগছে। ওই দেখো না, অনেকদিন আলুর চপ খাইনি, সকালে গোটা চারেক গরম চপ এনেছিলুম, আধখানা খেয়ে ফেলে রেখেছি। ওপরে গরম শিঙাড়া দিলে মুখে রুচল না। চা অত ভালবাসতুম, চা-ও আর ভাল লাগে না। এক চুমুক খাই আর ফেলে দিই। আমার কী হল বলো তো?

পিতা চৌকির একধারে বসে বললেন, হুঁ। আজই, এখুনি হগ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, না হয় কল দিতে হবে। ফেলে রাখা যাবে না।

তুমি এক পুরিয়া হোমিওপ্যাথি দাও না আগে। তোমার ওষুধে আমার ভীষণ কাজ হয়।

শুনুন, আমি ঠেকা দিতে পারি, পারিবারিক চিকিৎসা পর্যন্ত আমার জ্ঞান। ওর ওপর বিশেষ ভরসা। করা যায় না।

আমি হরিশঙ্কর অ্যালোপেথিতে যেতে চাই না। ভীষণ খরচ।

খরচের কথা কে আপনাকে ভাবতে বলেছে? সে ভাবনা আমার। আপনি জামাকাপড় পরে নিন।

এ বেলা থাক, ও বেলা হবে।

কথা একদম বাড়াবেন না। যা বলব তাই শুনতে হবে।

আচ্ছা, সে আমি পরছি। তোমার অবাধ্য হবার সাহস আমার নেই। তার আগে তোমাকে আর একটা জিনিস দেখাই। বড় মূল্যবান!

মাতামহ সেই সিন্দুকটি খুললেন। কতকাল আগের কোন পূর্বপুরুষের জিনিস কে জানে! একসময় অনেক কারুকাজ ছিল। কাঠের দুটো চোখ বসানো। বয়েসে চোখের দৃষ্টি ম্লান হয়ে গেছে। ডালা-খোলা সিন্দুকের সামনে মাতামহ ঝুঁকে পড়লেন। দু’হাত ক্রমশ নীচের দিকে নেমে চলেছে। এত কী জিনিস আছে।

একেবারে তলা থেকে কাপড়ের বাক্সের মতো একটা জিনিস বেরোল। সেটি নিয়ে তিনি চৌকিতে এসে বসলেন। সুতোর ফস খুলতে খুলতে বললেন, বড় পবিত্র জিনিস হরিশঙ্কর, তুমি কুমারী পুজোর কথা শুনেছ?

শুনেছি, দেখিনি কোনওদিন।

তুলসীর বয়েস তখন সাত কি আট।

মাতামহ কথা বন্ধ করে বাক্সর ঢাকা খুললেন। অদ্ভুত এক ধরনের গন্ধ বেরোল। প্রাচীন কালেরও একটা গন্ধ আছে। সময়ের সুবাস। মাতামহ বললেন, এটা একটা বেনারসি। এর বুননে বুননে সোনা আর রুপোর সুতোর কেরামতি! জমি আর আঁচলা খুললে তোমাদের তাক লেগে যাবে। জমিদার প্রসন্ন। চৌধুরীর বাড়িতে খুব বড় পুজো হত।

কোথায়?

বলাগড়ে। সেইখানে তুলসীকে কুমারী করেছিল। সে এক দৃশ্য, হরিশঙ্কর। তুলসীর সেই রূপ! বেনারসি পরেছে। গায়ে গহনার সাজ, এলো চুল, ফুলের মালা, মটুক, রাজরাজেশ্বরীর মতো সিংহাসনে বসেছে, ধূপ আর ধুনোর ধোঁয়া। তুমি দেখো হরিশঙ্কর, পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে একটা বেনারসির পরমায়ু কত বেশি। তুলসী কোথায় চলে গেল! তুলসী! যাবার আগে তোমাকেই দিয়ে যাই, বড় পবিত্র জিনিস। যে-সংসারে থাকবে, সে সংসারের মঙ্গল।

আয় আয়, প্রণাম কর।

কাছে এগিয়ে গেলুম। একজনের না-থাকাটা যত দূরে সরে যাচ্ছে, তার রেখে যাওয়া জিনিসের মূল্য তত বেড়ে যাচ্ছে। তুমি ছিলে এই তো তার প্রমাণ। এই ঘরে, ও ঘরে, এ বাড়িতে, ও বাড়িতে, দুটি পা চলে বেড়াত, একটি শরীর নিশ্বাস নিত, দুটি চোখ দেখত, হাসি খেলত ঠোঁটে, কণ্ঠস্বর ভেসে বেড়াত। সেই বলাগড় জানি না কোথায়। যাইনি কোনওদিন। গ্রামের পথে ধুলো উড়ছে। শরতের শিশির পড়ে আছে ভোরের ঘাসে। শিউলি ঝরে, এখনও ঝরে। জমিদার প্রসন্ন চৌধুরী, কে তিনি? অষ্টমীর দ্বিপ্রহর, একটি মেয়ে এই বেনারসি পরে সিংহাসনে বসে আছে, জলচৌকিতে রুপোর থালার ওপর তার দুটি পায়ে কী ফুল? জবা, পদ্ম, টগর, শিউলি। হোমের আগুন, ধূপের ধোঁয়া, ধুনো, গুগগুল, চন্দন। কপালে ঘাম, ঠোঁটে মুক্তোর বিন্দুর মতো ঘাম। আমার মা। পৃথিবী আরও সাত বছর, দশ বছর পাক খেল মহাশূন্যে। কে জানত তখন তিনিই আমার মা হবেন। তারপর খেলা না ফুরাতে খেলাঘর ভেঙে যায়। কেউ যদি এইসময় ওই রবীন্দ্রসংগীতটি একটু শোনাতে পারতেন:

ওই-রে তর দিল খুলে
তোর বোঝা কে নেবে তুলে।
সামনে যখন যাবি ওরে,
থাক না পিছন পিছে পড়ে—

পিতা বললেন, মনটা বড় খারাপ করে দিলেন।

শোনো হরিশঙ্কর, এ খারাপে বড় আনন্দ আছে। তোমাকে বলি, আনন্দে তেমন আনন্দ নেই। থাকার চেয়েনা-থাকাটা আরও বেশি থাকা। তুমি কত লেখাপড়া জানা মানুষ, তোমাকে আমি কী বলব? আমার কাছে আর একটা জিনিস আছে, দেখবে? সেটা কিন্তু তোমাকে আমি দিতে পারব না।

মাতামহ আবার উঠে গেলেন সিন্দুকের কাছে। তলার দিকে হাত চালালেন। একটা বড় খাম বেরিয়ে এল। তার মধ্যে অজস্র টুকরো টুকরো কাগজ। বেছে বেছে ভাঁজ করা একটা কাগজ তুলে নিলেন। দোক্তার পাতার মতো রং হয়ে গেছে। ভাঁজে ভাঁজে ফাট ধরেছে।

এটা কী বলো তো? তুলসীর চিঠি। বিয়ের পর বাপের কাছে তার প্রথম চিঠি। সেই তোমরা জামতাড়ায় চেঞ্জে গিয়েছিলে, সেইখান থেকে লিখছে। দেখো, তোমার সম্পর্কে কী লিখেছে!

‘তোমার জামাই একটু রাগী হলে কী হবে, মনটা আকাশের মতো, কিছুই লেগে থাকে না। সিল্কের কাপড়ের মতো মসৃণ, তবে ঘষা লাগলেই গরম হয়ে ওঠে। তুমি কিছু ভেবো না, আমার চারদিকেই সুখ।‘

জানতে তুমি! এসব তুমি জানতে? কত বড় ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট!বলো একবার!হাতের লেখাটা দেখো, ছোট্ট ছোট্ট, মুক্তোর দানার মতো। ছিল কালো, হয়ে গেছে বাদামি। হ্যাঁগো, অদৃশ্য হয়ে যাবে না তো?

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন