১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

জানি না কে বা, এসেছি কোথায়,
কেন বা এসেছি, কে বা নিয়ে যায়।

একে অমাবস্যা। তায় শনিবার। তার ওপর রটন্টি কালীপূজা। রাত একেবারে গমগম করছে। পিচকালো আকাশে তারার খই ফুটছে। শুকনো বাতাস বইছে। ঘুরঘুরে বাবার আশ্রম কেমন যেন থমথম করছে। দূরে কোথাও শেয়াল ডাকছে। রাত যে এত রহস্যময়ী এখানে না এলে বোঝা যেত না।

মেসোমশাই রেগে মেয়েকে নিয়ে প্রতাপ রায়ের বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। ভদ্রলোকের সে দাপট আর নেই। বেশ ভেঙে পড়েছেন। এত ভেঙেছেন যে আজ আর আমাদের সঙ্গে আসেননি। মাতামহ যা ধরেন, তার শেষ দেখে ছাড়েন। আমরা দুজন বারকতক বাস পালটে, সন্ধের মুখে এখানে এসে হাজির হয়েছি। একে একে আমাদের মতো আরও সব বিশ্বাসী মানুষ এসে পড়েছেন। মহিলারাও আছেন। এক এক জনের এক এক সমস্যা। কারুর ছেলের অসুখ। কারুর স্বামী মরণাপন্ন। কারুর চাকরি নেই। সমস্যার ভারে সবাই নেতিয়ে পড়ে, এখানে ওখানে বসে আছেন চুপচাপ। অন্ধকারে বসে বসে কবিতার সেই লাইন ক’টা মনে পড়ছে: মুখ দিল যে, ভুখ দিল সে, মৃত্যু দিল লেলিয়ে পাছে পাছে।

মাতামহ মাঝে মাঝে চটাস করে মশা মারছেন। সামান্য শব্দ, তাই কত জোর মনে হচ্ছে! নির্জনতা এমন জিনিস! মাতামহ গুনগুন করে গান ধরলেন, শ্মশান ভালবাসিস বলে শ্মশান করেছি হৃদি/শ্মশানবাসিনী শ্যামা নাচবে বলে নিরবধি! ক্রমশই ভাব আসছে। হঠাৎ গাঁক গাঁক করে চিৎকার করে না ওঠেন! গান থেকে মনটাকে ঘুরিয়ে আনা দরকার।

দাদু!

বল।

ঘুরঘুরে বাবা কখন আসনে বসবেন?

আর একবার শেয়াল ডাকুক।

কখন আবার ডাকবে?

সে ওদের ঘড়ি আছে। সেই ঘড়ির নিয়মে ওরা ডাকে। তুই কি ভাবিস মানুষই একমাত্র জীব। পৃথিবীতে কত আধ্যাত্মিক প্রাণী আছে জানিস? এই যে কচ্ছপ, কচ্ছপ কত বড় যোগী! শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর কী কন্ট্রোল! কুম্ভক করে বসে রইল সারাদিন। এক-একটা কচ্ছপ তিনশো চারশো বছর বাঁচতে পারে। ঐরাবতের স্বভাব হল ঋষিদের মতো। নিরামিষাশি। শরীরটা দেখেছিস! একেবারে পর্বতের মতো। ধীর, স্থির। রেগে গেলে দুর্বাসা।

কিন্তু দাদু, শেয়াল তো শুনেছি ভীষণ ধূর্ত। চোর। শেয়ালের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার কী আছে?

শেয়াল হল তান্ত্রিক। শৃগাল ছাড়া তন্ত্রসাধনা হয় না। শেয়ালের ডাক শুনেছিস? এমন উদাত্ত গলায় আর কোনও প্রাণীকে ডাকতে শুনেছিস? শেয়ালের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ভীষণ জোরদার। শুভ, অশুভ দুটোই আগেভাগে জানতে পারে। যেসব প্রাণী রাতে জাগে তারা সবাই হল সাধক।

পাখি তা হলে সাধক নয়?

হ্যাঁ, পাখিও সাধক। শেষরাত্রে সে ঈশ্বরকে ডাকে। একটি ডালে দুটি পাখির অর্থ বুঝিস?

না।

জীবাত্মা আর পরমাত্মা। পাশাপাশি, দুটোই এক। কথামৃতে ছবি দেখেছিস তো? পাখি ডিমে তা দিচ্ছে। চোখদুটো ফ্যালফেলে। ঠাকুর বলছেন, যোগীর চোখ ওইরকম ফ্যালফ্যাল করে। তখন থেকে তুই ছটফট করছিস কেন? শান্ত হয়ে বোস না।

ভীষণ মশা কামড়াচ্ছে যে!

সহ্য করতে শেখ। সাধনজগতে শরীরকে তৈরি করতে হবে লোহার মতো করে। টললে চলবে না, টসকালে চলবে না। আমি লৌহভীম বলে শুরু করতে হবে। চাকরিটা কেমন লাগছে?

বেশ ভালই। তবে চাকরি তো। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত, আট ঘণ্টা আটকে থাকা।

খাঁচার পাখি, তাই না! বড় দুঃখু রে! ভেবেছিলাম তোকে সংসারী করে দিয়ে কংখলে চলে যাব। যাঃ শালা, মেয়েটাই হারিয়ে গেল। তুই আমাকে একটা জিনিস কিনে দিবি?

কেন দোব না! বলুন কী চাই?

কলুটোলা থেকে আমাকে একটা আলবোলা কিনে এনে দিবি! বেশ লম্বা নলঅলা। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে, বেশ ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাং তুলে, জমিদারদের মতো ফরসিতে অম্বুরি তামাক খাই। শোন, সংসারে যদ্দিন বাঁচবি, রাজার মতো বাঁচবি।

অন্ধকারে ফোঁসফোঁস করে মেয়েলি গলার কান্না শোনা গেল। কাঁদে কে? মাতামহ চঞ্চল হয়ে উঠলেন। অন্ধকার কোণ থেকে প্রবীণা কোনও মহিলার উত্তর ভেসে এল, আমার মেয়ে বাবা।

মাতামহ বললেন, কেন, খিদে পেয়েছে?

আমার মাতামহের এই এক দোষ। কখন কী যে বলে বসেন! আঃ, দাদু, খিদে পাবে কেন? যিনি কাঁদছেন তিনি বয়েসে বড়, শিশু নয়।

ও, তাই নাকি! তা হলে, মনে খুব দুঃখ হয়েছে। দেখো, কী আবার হল!

প্রবীণা মহিলা বললেন, এক শয়তান ছেলে মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিয়ে পালিয়েছে। বাবা কথা দিয়েছেন, এর জীবনের একটা বিলিব্যবস্থা করে দেবেন।

মাতামহ গর্জন করে উঠলেন, ওর আর বিলিব্যবস্থা কী? কোথায় সেই ছেলেটা আছে বলো, জুতিয়ে লাশ করে দিই।

সে আর এ দেশে নেই বাবা, জার্মানিতে গিয়ে বসে আছে। সেখানে এক মেমসায়েব জুটিয়েছে।

বসে আছে বসে থাক। মেয়ের আবার বিয়ে দাও।

এ পোড়া দেশে বাবা মেয়েদের একবারই বিয়ে হয় না, দ্বিতীয়বার কে বিয়ে করবে? তেমন ছেলে কি আছে? ঠোকরানো ফল কি দেবতার পুজোয় লাগে!

তা হলে মেয়েকে বিন্ধ্যাচলের কোনও আশ্রমে পাঠিয়ে দাও। আসল দেবতার সেবা করুক।

সকলে কি তা পারে বাবা! সংসারের মায়ায় সব লাটুর মতো ঘুরছে।

মাতামহ উঠে পড়লেন, চল, একটু ঘুরেফিরে দেখি। দুঃখ, দুঃখ আর দুঃখ। কেন যে মানুষ জন্মায়!

অন্ধকারে অন্ধকারে অনেকেই এসেছেন। এক ভদ্রলোক মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। অন্ধকারে। কে যেন জিজ্ঞেস করলেন, প্রবোধ, খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা!

মাতামহ থমকে দাঁড়ালেন। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?

উত্তর এল, আর কী হবে দাদা! রাজরোগ। পেটে ক্যান্সার।

আরও দু’ধাপ এগোতেই দেখা গেল সামান্য একটু শ্বাস নেবার জন্যে এক মহিলা ডাঙায় তোলা মাছের মতো খাবি খাচ্ছেন। এই বয়েসেই হাঁপানি! এই অমাবস্যার রাতে, ঘুরঘুরে বাবার আশ্রমে নামহীন মানুষের দল এমন কিছুর আশায় এসেছেন, যা অলৌকিক। বিজ্ঞান যা দিতে পারে না, বাবা তাই দেবেন।

বাবার গলা পেয়ে আমরা ফিরে তাকালুম।

বাবার বিশাল শরীর দাওয়ায় পিলারের মতো খাড়া। ঘরের দরজা খোলা। ঘরে মিটমিট আলো জ্বলছে। সেই আলোর সামনে বাবাকে মনে হচ্ছে অন্ধকারের দেবতা। বাবা অদ্ভুত গলায় ডাকছেন, আয়, আয়, আয়। অতি সাধারণ একটি শব্দ, কিন্তু ডাকার ধরনে এই ছায়াময় পরিবেশ কেমন যেন ভৌতিক হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে সমস্ত অশুভ শক্তি চারপাশ থেকে হিলহিল করে ছুটে আসছে। চতুর্দিকে যেন বিচিত্র সব আকার আকৃতি প্রাণময় হয়ে উঠছে। বাবা ভৌতিক গলায় প্রেতাত্মাদের ডাকছেন, আয়, আয়। প্রদীপের মিটিমিটি আলোয় ছায়া কাঁপছে। চোখের ভুল কি না জানি না, বাবা ক্রমশই একটি লাল আগুনের মতো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছেন। সারাশরীর যেন জ্বলজ্বলে আগুনের রেখা। প্রতিবার আয় বলছেন, আর মুখ দিয়ে যেন ভলকে ভলকে নীল আগুন ছুটছে, বেশ। মোটা বিদ্যুতের রেখার মতো। ভয়ে মাতামহের গা ঘেঁষে দাঁড়ালুম। তিনি ফিসফিস করে বললেন, তোরা বিশ্বাস করিস না, শক্তিটা একবার দেখ। আরে বোকা! ভয়ে কাঁপছিস কেন?

যা দেখছি, তা কি সত্যিই দেখছি?

অন্ধকারে কারা যেন ছুটে আসছে। আকৃতি বিশিষ্ট তাল তাল অন্ধকার এপাশ থেকে ওপাশ থেকে তেড়ে আসছে। মাতামহ ফিসফিস করে বললেন, কী আসছে বুঝতে পারছিস?

না দাদু, মনে হচ্ছে কুকুর।

কুকুর নয় রে বোকা। শেয়াল। কত শেয়াল দেখছিস!

বাবা বললেন, নে সেবা কর।

কী যেন সব ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগলেন। একটা-দুটো নয়, অনেক শেয়াল, গোটা বারো তো হবেই, নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে, শান্ত হয়ে খেতে লাগল। কড়মড় শব্দ শুনে মনে হচ্ছে, হাড় চিবোচ্ছে। এতক্ষণ যেখানে যত আর্তনাদ আর চাপা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল, সব থেমে গেছে। শুধু কানে আসছে শেয়ালদের নড়াচড়া, নিশ্বাস, আর হাড় ভাঙার শব্দ। মিটিমিটি প্রদীপের আলোয় বাবার বিশাল ছায়া কাঁপছে। নারকেল গাছের পাতায় পাতায় বাতাসের শ্বাস ভাঙার শব্দ উঠছে।

বাবা হুংকার ছাড়লেন, নে, এবার তোরা পাগলির জয়ধ্বনি কর। ডাক ডাক, গলা ছেড়ে ডাক। একবার তেড়েফুঁড়ে ওঠ মা। একবার তেড়েফুঁড়ে ওঠ।

শেয়ালগুলো অমনি আকাশের দিকে মুখ তুলে সমস্বরে ডেকে উঠল, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া। আর বাবার সেই চ্যালা, বামন পঞ্চানন, কোণে দাঁড়িয়ে রামশিঙায় ফুঁ দিল। শেয়ালের ডাক আর ভো ভো। শব্দে তলতলে অন্ধকার থলথল করে কাঁপতে লাগল। সারাগায়ে আমার কাঁটা দিয়ে উঠল। কী। অদ্ভুত সাধনপদ্ধতি। এমনটি আমি কোথাও দেখিনি। আমি ধ্যান দেখেছি, জপ দেখেছি, ভাবে বিভোর হয়ে মানুষকে নাচতে দেখেছি, সাধনসংগীতে অশ্রু বিসর্জন দেখেছি, হোম দেখেছি। এ জিনিস দেখিনি।

বাবা পা ফাঁক করে স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ খলখল করে হেসে উঠলেন। মনে হল বিশাল এক জলপ্রপাত উঁচু পাহাড় থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নীচে নেমে আসছে। মনে হচ্ছে কোনও গুহার মধ্যে দিয়ে নদী ছুটে চলেছে। হাসি থামিয়ে, দু’হাত ওপর দিকে ধুলো ছোঁড়ার মতো করে ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাবা বলতে লাগলেন, যাঃ ব্যাটারা, যাঃ চলে যা, যাঃ যাঃ।

নিমেষে সমস্ত শেয়াল অদৃশ্য হয়ে গেল।

বাবা হঠাৎ ভীষণ রেগে গেলেন। অদৃশ্য সেই মহাশক্তিকে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন, আর কত খাবি, আর কত খাবি! এখনও তোর খিদে মিটল না! দন্ডুরাং দক্ষিণব্যাপি-লম্বমানকচোচ্চয়াং। এই নে, তোরা সব নে। লুটে নে, লুটেপুটে নে।

বাবা দু’হাতে মহাশূন্য থেকে কী সব ধরে ধরে আমাদের দিকে ছুঁড়তে লাগলেন। মাতামহ মহা ব্যস্ত হয়ে বললেন, তুলে নে, তুলে নে।

আমাদের এপাশে ওপাশে কী সব পড়তে লাগল। হুটোপাটি শুরু হয়ে গেল। কে জানে কী পরমপদার্থ জিনিস! নিচু হয়ে অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে একটা সংগ্রহ করলুম। নরম তুলতুলে, অনেকটা লিচুর মতো। মাতামহও একটা পেয়েছেন। আমাকে বললেন, শিগগির মুখে পুরে দে।

কী এটা? মুখে পুরে মরব নাকি? ধুলোবালি লেগে আছে।

খবরদার, মনে কোনও অবিশ্বাস আনবি না। বিপদ হবে। ভক্তিভরে খেয়ে নে। অমর হয়ে যাবি। আমার ভেতর থেকেও কে যেন বলে উঠল, মূর্খ, যা পেয়েছিস খেয়ে নে। ভয়ে ভয়ে মুখে পুরে দিলুম। অদ্ভুত স্বাদ। পৃথিবীর কোনও বস্তুর স্বাদের সঙ্গে মেলে না। ফল, তবে কোনও বিচি নেই। জিভে পড়ামাত্রই বরফের টুকরোর মতো গলতে শুরু করল। সুন্দর গন্ধ। সারাশরীর স্নিগ্ধ হয়ে গেল। ফিনফিনে বৃষ্টিধারার মতো মনে চিনচিন করে উঠল সুখ। সব দরজা যেন একে একে খুলে যেতে লাগল। মনে হতে লাগল, আমার ভেতর দিয়ে একটা রাজপথ চলে গেছে, আর সেই পথে চলেছে। অসংখ্য তীর্থযাত্রী। কেউ বলছেন, হরি ওম তৎসৎ, কেউ বলছেন, জয় শিবশম্ভ, কেউ বলছেন রাম নাম সত্য, কেউ বলছেন, আল্লাহ আকবর। মনে হতে লাগল, ধীরে ধীরে আমি মহাশূন্যের দিকে ভেসে উঠছি৷ কানে আসছে বাবার হাসির শব্দ। খলখল করে হাসছেন, আর বলছেন, জাগ শালারা, জাগ গুয়ের পোকা, কামিনীকাঞ্চনের দাস। জাগ শালারা শয়তানের ক্রীতদাস।

বাবার চ্যালা আবার শিঙা ধরেছে। শব্দে আকাশের চাঁদোয়া কঁপছে। তারারা মিটিমিটি করছে। দূরে মড়মড় করে একটা গাছের ডাল ভেঙে পড়ল। বাবা চিৎকার করে বললেন, পালালি কেন শালা! পালালি কেন? এরা আমার কাছে এসেছে। এরা আমার আশ্রিত। ব্রহ্মশভুজলৌযে চ শবমধ্য-প্রসংস্থিতে। প্রেতকোটি-সমোযুক্তে কালিকায়ৈ নমোহস্তুতে ॥ কৃপাময়ি হরে মাতঃ সর্বাশাপরিপূরিতে। বরদে ভোগদে মোক্ষে কালিকায়ৈ নমোহস্তুতে ॥

বাবা ত্রিশূল হাতে ধেই ধেই করে নাচতে লাগলেন। আর হুংকার ছাড়তে লাগলেন, হুংহুংকারে শবারূঢ়ে নীলনীরজলোচনে। বাবার নৃত্য দেখে ভক্তরাও নাচতে লাগলেন, আর চিৎকার করতে লাগলেন, বাবা, বাবা। মাতামহ বললেন, আহা, যেন সাক্ষাৎ শিব। উঃ, কত ভাগ্যে মানুষের এইসব দর্শন হয়? শালা, সংসারের নিকুচি করেছে। ডেকে নিয়ে আয় তোর প্রাইম মিনিস্টার, তোর চিফ মিনিস্টারকে। সব তুচ্ছ, সব তুচ্ছ। ডাক তোর টাটা বিড়লা ডালমিয়াকে। সব তুচ্ছ, সব তুচ্ছ।

বেশ বুঝতে পারছি, মাতামহের পা দুটো নেচে ওঠার জন্যে ছটফট করছে। চেপে ধরে না থাকলে ধেই ধেই করে নৃত্য শুরু করে দেবেন।

বাবা নাচতে নাচতে হাতের ত্রিশূলটি মাটিতে পুঁতে দিলেন। বুকে দু’হাত রেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁকলেন, তোদের যার যা অসুখ আছে, এই ত্রিশূল ছুঁলেই সেরে যাবে। একে একে এগিয়ে আয় শালারা। সেই ক্যান্সারের রুগি কোঁত পাড়তে পাড়তে এগিয়ে গিয়ে ত্রিশূল স্পর্শ করলেন। কী হল, তা বলতে পারব না। ভদ্রলোক ছিটকে হাত দুয়েক দূরে উলটে পড়লেন। বাবা অট্টহাসি হেসে বললেন, যাঃ শালা, মরেই গেল বুঝি।

সঙ্গে যে-ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি আর্ত চিৎকারে ডাকতে লাগলেন, বাবা প্রবোধ, ওরে আমার প্রবোধ।

প্রবোধবাবু হাতপা চিতিয়ে পড়ে আছেন ঘাড় কাত করে। বাবা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ডান পায়ের আঙুলটা গায়ে ঠেকাতেই প্রবোধবাবু ধড়মড় করে উঠে বসলেন। সঙ্গী ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, কেমন বুঝছ বাবা প্রবোধ?

তড়াক করে খাড়া লাফিয়ে উঠে প্রবোধ বললেন, পারফেক্টলি কিওরড মেসোমশাই।

মাতামহ ঝুঁকে পড়ে বললেন, একেবারে সেরে গেলেন?

আজ্ঞে হ্যাঁ, বাবার দয়া।

ভদ্রলোক বাবা বলে চিৎকার করে মহাপুরুষের পায়ে পড়লেন।

বাবা স্নেহের সুরে বললেন, ওঠ, ওঠ, যোলো আনা কি একদিনেই সারে! কর্কট ব্যাধি। অনেক নিয়ম মেনে চলতে হবে বাবা। স্ত্রীসঙ্গ চলবে না, পান বিড়ি সিগারেট খাবে না। ভোরে উঠে আসনে বসবে। জোরে জোরে শ্বাস নেবে। অনুভব করবে, শীতল বাতাস মেরুদণ্ডের দুপাশ বেয়ে ধীরে ধীরে ওপরে উঠে তোমার মাথায় ছড়িয়ে পড়ছে। শ্বাস যখন ছাড়বে, তখন মনে করবে গরম কালো বাতাস মেরুদণ্ড বেয়ে নীচের দিকে নেমে চলেছে। যা, পালা শালা।

মাতামহ একপাশে সরে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ওভাবে ছিটকে পড়লেন কেন?

প্রবোধবাবু বললেন, উঃ, কী বলব মশাই, যেই না ত্রিশূলে হাত দিয়েছি, মনে হল হাজার ভোলটের ইলেকট্রিসিটি খেলে গেল সারাশরীরে। অলৌকিক ব্যাপার মশাই। বাবা সাক্ষাৎ দেবতা। এসব জিনিস বিশ্বাস না করলে সন্দেহই থেকে যায়।

প্রবোধের মেসোমশাই বললেন, আমিও তা হলে ছুঁয়ে আসি একবার। গত তিন বছর লামবেগোয় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি।

কিন্তু ত্রিশূলের চারপাশে এখন তাণ্ডব চলছে। রোগের শেষ নেই, রুগিরও শেষ নেই। হাঁপানি, যক্ষ্মা, বাত, মৃগী, আলসার, প্যারালিসিস সব লাইন দিয়ে চলেছে, আর ছিটকে ছিটকে পড়ছে। রোগ যেন ফুটবল। বাবার ত্রিশূলের লাথি খেয়ে ঠিকরে যাচ্ছে।

মাতামহ বললেন, যা না তুই একবার স্পর্শ করে আয়। তোর তো পেটের ব্যামো, দেখবি সেরে যাবে।

না দাদু, আমার সাহস নেই।

তোর মতো ভিতু আমি জীবনে দুটো দেখিনি।

বাবাকে এইবার মহিলারা ঘিরে ধরেছেন। কারুর মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ অত্যাচারিতা, কারুর মেয়ের মাথায় গোলমাল। সারাপৃথিবী যেন শিকড় সমেত উঠে এসেছে। বাবা বললেন, অপেক্ষা কর, এবার আমি আসনে বসব।

মাতামহকে জিজ্ঞেস করলুম, আমাদেরটা কখন হবে? রাত তো অনেক হল।

আজ আর রাতের হিসেব করিসনি। বাবা আমাদের অন্তর্যামী, সময় হলেই ডেকে পাঠাবেন। আয়, আবার আমরা একপাশে চুপ করে বসি।

একটা জারুল গাছের তলায় দু’জনে চুপ করে বসলুম। কালো আকাশে আর গাছের পাতায় মাখামাখি। তারাদের ড্যাব ড্যাবা চোখ জ্বলছে। জ্বোরো রুগির উত্তপ্ত নিশ্বাসের মতো বাতাস বইছে। হঠাৎ চাঁ চা করে একসঙ্গে অনেক প্যাঁচা দিগ্বিদিকে ডেকে উঠল। সত্যিই কী অদ্ভুত, গা ছমছম করানো পরিবেশ। পৃথিবীর চেনা মুখ দিয়ে অচেনা সব বস্তু আর ঘটনা বেরিয়ে আসছে।

আশ্রম প্রায় খালি। কিছু মহিলা কেবল বসে আছেন। বাবা কখন ডাকবেন কে জানে! দূরে বেলতলায় পঞ্চমুণ্ডীর আসনে বাবা খাড়া বসে আছেন। গাছের কোটরে নিবুনিবু প্রদীপ জ্বলছে। পিঙ্গল জটার মতো ধোঁয়া উঠছে আকাশের দিকে। চারপাশ নিস্তব্ধ। পাচারা একবার না দু’বার

ডেকেই চুপ মেরে গেছে।

কোনও কথা না বলে, কতক্ষণ বসে থাকা যায়। বাবার মতোই সিদ্ধাসনে মাতামহ ক্রমশ ধ্যানস্থ হয়ে পড়েছেন। দু’জনেই একপথের পথিক। আমি এক দল ছাড়া আসামি।

মৃদু স্বরে ডাকলুম, দাদু।

বেশ ভাবগম্ভীর উত্তর এল, বলে ফেল।

আপনার কি মনে হয় কনক খারাপ পথে চলে গেছে!

দুর পাগল, তুই মেয়ে চিনিস না। যেসব মেয়ে খারাপ হয়, তাদের চেহারাই আলাদা। শাস্ত্রে তাদের পরিষ্কার বর্ণনা আছে। খনার বচনে আছে। তোকে দোব পড়ে দেখিস। জানবি মেয়েদের মধ্যেই স্বর্গ আছে নরক আছে। কনক আলাদা জাতের মেয়ে। কিছু পাখি আছে যারা ডাকতে ডাকতে ক্রমশই আকাশের ওপর দিকে উঠে যায়। কনক হল সেই জাতের পাখি, যার আরোহণ আছে অবরোহণ নেই। সে গেছে, সে ভাল দিকেই গেছে।

মেয়েছেলের এত সাহস হয় কী করে! একা একা বেরিয়ে চলে গেল।

সাহস! বলিস কী রে ব্যাটা! সাহস তো মেয়েদেরই হবে। তারা যে শক্তি। জানিস সন্তানধারণ কত বড় সাহসের কাজ! সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে কত মায়ের মৃত্যু হয় জানিস! ব্যাপারটা যদি উলটে যায়, তা হলে কী হবে? কোনও পুরুষের অত সাহস হবে, পারবে অত কষ্ট সহ্য করতে! আমার মেয়ে যদি তোকে ধারণ না করত, তা হলে তুই আসতে পারতিস এই পৃথিবীতে!

তাতে আমার কী লাভ হল? মা তো আমাকে ফেলে পালালেন।

হ্যাঁ, তা ঠিক, ও কাজটা সে খুব ভাল করেনি। থাকলে আমাকেও একটু দেখতে পারত। কিন্তু শালা, তার জন্যে তো তুমিই দায়ী। তুমি এলে, আর অমনি আমার মেয়েটিকেও নিয়ে গেল! না রে, এ আমি এমনি বললুম! পৃথিবীতে কে কীসের জন্যে দায়ী হতে পারে। কোনও কিছুর ওপর মানুষের হাত নেই। মানুষ আসে, মানুষ যায়, মানুষের সুদিন আসে দুর্দিন আসে। জুড়াইতে চাই, কোথায় জুড়াই, কোথা হতে আসি, কোথা ভেসে যাই।

খুব চাপা গলায় মাতামহ গাইতে লাগলেন, ফিরে ফিরে আসি কত কাঁদি হাসি, কোথা যাই সদা ভাবি গো তাই।

আজ কিন্তু বেশ ভালই গাইছেন। বেশ মিঠে লাগছে। হয়তো পরিবেশের গুণে। মাতামহ অন্তরায় উঠলেন, কে খেলায়, আমি খেলি বা কেন, জাগিয়ে ঘুমাই কুহকে যেন! এ কেমন ঘোর হবে নাকি ভোর, অধীরে অধীরে যেমতি সমীর, অবিরাম গতি নিয়ত ধাই!

বৃদ্ধ মানুষ, কত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এতটা পথ এসেছেন, হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। চাপা আবেগে বিশাল বুক ফুলেফুলে উঠছে। মাতামহের কান্না দেখে, মন বড় বিমর্ষ হয়ে গেল। মানুষকে কীভাবে যে একটু আনন্দে রাখা যায়।

পঞ্চমুণ্ডীর আসনে বসে বাবা হঠাৎ সাংঘাতিক এক শব্দ ছাড়লেন। বুম বুম করে সেই ডাক যেন অনন্তের টাগরায় গিয়ে ঠেকল। আমার তলপেট গুড়গুড় করে উঠল। মাতামহের চাপা কান্না বন্ধ হয়ে গেল। বাবা ওঁ স্বাহা ওঁ স্বাহা বলে আগুনে কী যেন আহুতি দিচ্ছেন, লেলিহান শিখা নটরাজের মতো নেচে নেচে উঠছে। রাত্রি এখন নিদ্রামগ্ন, জেগে আছেন শুধু সাধক, জেগে আছেন রোগী, আর পুড়ে যাওয়া কিছু সংসারী মানুষ।

বাবা হাঁকলেন, আয় তোরা আয়।

মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমরা এগিয়ে গেলুম। বাবা বসেছেন ঠিক যেন মহাদেবের মতো। ডান হাতে ধরে আছেন একটি চিমটে। কে একজন তার সমস্যার কথা বলতে গেলেন, বাবা সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিলেন, চুপ, চুপ করে বোস। তোরা বলবি কেন? আমি তো সব দেখতে পাচ্ছি রে শালা।

চিমটেটা মাটিতে ঠুকে বললেন, এই রুখে দিলুম। যেখানে আছিস সেইখানেই থাক।

হোমের শিখায় এক সার লাল লাল, উদ্বিগ্ন মুখ। কেউই কিছু বুঝলেন না, বাবা কী রুখে দিলেন, কাকে রুখে দিলেন!

মাতামহ সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন, কাকে রুখলেন বাবা!

সর্বাণীর স্বামীকে। তোর স্বামীকে মা বেঁধে দিলুম। দিনকতক হাজতবাস করুক। নির্জনে থাকতে থাকতে তোর কথা মনে পড়বে। সামনের বছর পুজোর আগেই সে ফিরে আসবে। রোজ মাঝরাতে হাড়ের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবি।

মহিলা বাবা বলে পা ছুঁতে গেলেন, মহাপুরুষ চিমটে ঠুকে বললেন, খবরদার, আমাকে ছুঁবি না। ওপাশে গিয়ে বোস। ভোর হলে চলে যাবি। শ্যামা! শ্যামা কোথায়?

শ্যামা মৃদু গলায় বললেন, এই যে বাবা।

প্রস্তুত হ, প্রস্তুত। তোর বৈধব্যযোগ এসে গেছে।

শ্যামা ফুঁপিয়ে উঠলেন, বাবা, বাঁচিয়ে দাও। বাবা, আমার যে আর কেউ নেই গো!

ভাগ্যের চাকা ঘুরছে মা, তাকে আমি থামাই কী করে? তোর প্রারব্ধ।

মেয়েটি এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বাবা এক দাবড়ানি দিলেন, চুপ। গত জন্মে যা করে এসেছিস এ জন্মে তার ফল ভুগতে হবে না! তখন মনে ছিল না! এই দেখ।

বাবা একটা জ্বলন্ত কাঠ হাতে তুলে নিলেন। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! এমনভাবে ধরে আছেন যেন আগুন নয়, আইসক্রিমের কাঠি। বাবা আগুন নাচাতে নাচাতে বললেন, এর নাম জীবন। সহ্য করতে শেখ। আগুন নিয়ে খেলতে শেখ। পুড়ে পুড়ে পোড়াকাঠ হয়ে যা। এই দেখ।

বাবা সেই আগুন মুখে পুরে দিলেন। একেবারে রোমহর্ষক ব্যাপার। একবার করে হাঁ করছেন, মুখ দিয়ে ভক ভক করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। অবাক কাণ্ড! কাঠের টুকরো হোমের আগুনে ফেলে দিয়ে বাবা বললেন, পৃথিবীতে বাঁচতে এসেছিস ফুলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবার জন্যে? মামার বাড়ি! সহ্য কর, সহ্য কর, সহ্য কর। আগুন যা জলও তাই, দুঃখও যা সুখও তাই। সবই সেই অনন্ত শক্তির লীলা। ভগবানকে জব্দ কর।

সব শেষে বাবা মাতামহের দিকে তাকিয়ে বললেন, কাছে সরে আয়। তোর মনের দরজা খুলে গেছে। সামনের বার তোর কিছু হবে। এবারটা চোখকান বুজিয়ে কাটিয়ে যা।

মাতামহ এক হাতে আমার হাত চেপে ধরে আছেন। তার সারাশরীর কাঁপছে। বাবা এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখতে চাস?

থতমত খেয়ে বললুম, কী মহারাজ?

তোর সেই মেয়েটিকে?

আজ্ঞে হ্যাঁ, পেতে চাই।

পেতে চাস? না পেলে? শালা মানুষ, কী পেতে চায়, ঠিক কী পেতে যে তার মন চায় মানুষ জানে? আমার দিকে তাকা। বড় বড় চোখে তাকা।

বাবা ফটাস করে একটা তালি বাজালেন।

আমার সারাশরীর কেমন যেন এলিয়ে পড়ল। দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে এল। আমি মারা যাচ্ছি। আমার শরীর স্থির। চিন্তাশূন্য অবস্থা। বিস্মৃতি নেমে আসছে, আঁধার নেমে আসছে। অস্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, বাবা বলছেন, বেরিয়ে আয়, বেরিয়ে আয়, পাখির মতো উড়ে যা, খুঁজে দেখ, খুঁজে দেখ।

সারাশরীরে কেমন যেন একটা হ্যাঁচকা টান লাগল। আমার আর কিছু মনে রইল না। শুধু মনে। হল আমার অন্দরমহল থেকে কে যেন বেরিয়ে চলে গেল।

একসময় আমার চেতনা ফিরে এল। আমি মরিনি। তবে আমার আমি আমাতে ছিল না। সবে ভোর হচ্ছে। পুব আকাশ জবাফুলের মতো লাল। আমি হাতপা ছড়িয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছি। শরীর যেন পাথরের মতো ভারী। হাত নড়ছে না, পা নড়ছে না। দাতে দাঁত লেগে আছে। মাথাটা মনে হচ্ছে আমার নয়, অন্য কারুর।

অনন্ত আকাশের পটভূমিতে ভাসছে আমার স্নেহময় মাতামহের মুখ।

বাবার গম্ভীর গলা কানে এল, ফিরে এসেছে!

মাতামহ বললেন, হ্যাঁ বাবা। কিন্তু দাতে দাঁত লেগে আছে।

বাবা ফট করে একটা তালি বাজাতেই খট করে আমার দাঁত খুলে গেল।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন