১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে লাখোঁ সাঁঝ সবেরা

সরোজবাবু কাগজের বিজ্ঞপ্তিটা দেখে বললেন, ইউনিভার্সিটির পেছনের সেই মর্গেই আমাদের যেতে হবে। দেখি যদি সাধুকে পেয়ে যাই, কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

পঙ্কজবাবুর গাড়ি এখন বেশ ভারী হয়েছে। তাই যেন গুড়গুড় করে চলেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় দারুণ দেখাবে। জনতার মাথার ওপর দিয়ে হুড়হুড় করে উড়ে চলেছে কিংকং-এর মতো এক দৈত্য। সঙ্গে তার ছানাপোনা। গাড়ি কলুটোলায় এসে ডান দিকে বাঁক নিল। বাঁ পাশে রাস্তা ঘেঁষে গাড়ি দাঁড়াল। সরোজবাবু নামতেই গাড়ি আধ হাতটাক ওপরে উঠে গেল।

ফুটপাথের ধারে ভলভল গঙ্গার জল বেরোচ্ছে ফোয়ারার মতো। মেয়ে-পুরুষের ভিড়। মনেই হয় না, এর উলটো দিকের বিমর্ষ চেহারার লম্বাটে ঘরে সারি সারি শুয়ে আছে প্রাণহীন দেহ। সরোজবাবু সাধুর খোঁজে গেছেন।

অক্ষয়বাবু বললেন, অনেক পাপ করলে, মানুষকে মর্গে আসতে হয় মৃতদেহের খোঁজে।

পঙ্কজবাবু জিজ্ঞেস করলেন, দুর্গন্ধ আছে?

একটু পরেই দেখতে পাবেন। নাকে বেশ করে রুমাল জড়িয়ে নেবেন। এখানে যে আমার কত অভিজ্ঞতা আছে, শুনলে আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে।

কীরকম?

একদিন একটি মেয়ের হাত দেখব বলে হাতটা টেনেছি। আত্মহত্যার কেস। পোকামারার ওষুধ খেয়ে সুসাইড করেছে। তখনও কাটাই ভেঁড়াই হয়নি। হাতটা আমার হাতের তালুতে ফেলে, খাতায় সবে আঁকতে আরম্ভ করেছি। আঙুলগুলো অল্প অল্প নড়ে উঠল। মরার পর মানুষের শরীরে টান ধরে, আমি ভাবলুম সেইরকম কিছু। চাপার কলির মতো আঙুল। একেবারে দুর্গা প্রতিমার মতো চেহারা। হাতে আত্মহত্যার যোগ যেমন স্পষ্ট, তেমনই আবার দীর্ঘ জীবন, প্রচুর ঐশ্বর্যের যোগ আছে।

পঙ্কজবাবু জিজ্ঞেস করলেন, তা কী করে হয় অক্ষয়?

কেন হবে না? খুব হয়। একটা ট্রেন ধরুন, বেনারসের কাছে অ্যাকসিডেন্ট থেকে বেঁচে গেল, তারপর সোজা চলে গেল হরিদ্বার। জীবনও সেইরকম, একটা ধাক্কা কাটাতে পারলেই, রয়ে গেল সত্তর কি আশি বছর। এ তো আপনার আর আমার জীবনের দেখা ঘটনা। মনে আছে। আমাদের সেই প্রিভেনটিভ অফিসার ঘোষের কথা। মোটরসাইকেলে রেড রোডে অ্যাকসিডেন্ট করল। শরীর চুরমার। গেল গেল অবস্থা। সেই ঘোষ এখন ডেপুটি কালেক্টর।

উলটো দিকের ফুটপাথ থেকে সরোজবাবু ডাকলেন, চলে আসুন।

অক্ষয় কাকাবাবুর গল্পের শেষটা আর শোনা হল না। উলটো দিকের ফুটপাথে সরোজবাবুর পাশে, সরোজবাবুর হাফ সাইজের একটি মানুষ খাকি জামা পরে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখে বিড়ি।

সরোজবাবু বললেন, অ্যায় সাধু?

সাধু যেন স্বপ্নের ঘোরে পঁড়িয়ে আছে। ফুকফুক বিড়ি টানছে, আর ফুসফুস ধোঁয়া ছাড়ছে। কোনও হুঁশ আছে বলে মনে হচ্ছে না। এ আবার মানুষের কী ব্যামো!

অ্যায় সাধু, বলে সরোজবাবু ঘাড় ধরে এক ঝাঁকুনি মারলেন।

সাধু বললে, বলুন। শুনতে পাচ্ছি।

ক’ ছিলিম টেনেছিস?

কার বাপের কী?

সরোজবাবু সঙ্গে সঙ্গে সপাটে এক চড় কষালেন।

পঙ্কজবাবু আর অক্ষয়বাবু দুজনেই হাহা করে উঠলেন, আহা, কয়রা কী? কয়রা কী?

সরোজবাবু হুংকার ছাড়লেন, তোমার নেশা আমি ঘুচিয়ে দোব। কার সঙ্গে কথা বলছিস জানিস?

সাধু সঙ্গে সঙ্গে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল, মারুন মারুন। গরিবলোক তো বড়লোকের তবলা। তেহাই সাধার জায়গা। এক চড় কেন? তিন চড় মারুন। এই তো গাল পেতে দিচ্ছি। মহাত্মাজির চেলা।

সাধুবাবু যা করছেন সবই ঘুমের ঘোরে। অক্ষয়কাকাবাবু বললেন, সরোজ, একে দিয়ে হবে না মনে হচ্ছে।

খুব হবে, দু-চার ঘা পড়লেই হবে।

না, না, মারধরে দরকার নেই।

সাধুবাবু অমনি মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, না না মারধরে হবে না। প্রেম বিলাও, দিল। দিলাও।

সরোজবাবু এবার সাধুর দুধ ধরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিলেন। রোগা মানুষটার হাড় ক’খানা খুলে পড়ে যায়। চুচুকে মাথা কামানো, ঘাড়ে গর্দানে একটি লোক এগিয়ে এসে বললেন, আরে এ সাধু, দেখা হামারা হাতমে কেয়া হ্যায়।

লোকটির হাতে একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। সাধুর চোখদুটো চকচক করে উঠল। চোখ বড় বড় করে সরোজবাবুকে বললেন, বলুন স্যার, কী করতে হবে?

এতক্ষণ আমার সঙ্গে ইয়ারকি হচ্ছিল, রাসকেল? চল ঘর খুলবি চল।

মর্গের সামনে গোটা দুই ছোট লরি দাঁড়িয়ে। একদল লোক। সবাই ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন। সাধুর একজন ওপরওয়ালা সাধুকে দেখেই ফায়ার হয়ে গেলেন, ব্যাটা তোর চাকরি এবার আমি খাব।

সাধু অম্লানবদনে বললে, সেই ঢোকার প্রথম দিন থেকেই শুনে আসছি। ছাড়ালে, নতুন লোক আর পাবে না। এ হল ভূতের চাকরি।

যাঁরা ভিড় করে আছেন তারা লাশ নিতে এসেছেন। একজন পুলিশের লোক দাঁড়িয়ে আছেন। ঠান্ডাঘর থেকে হুকুম মিলিয়ে দেহ বের করে দেবেন। লরির ওপর থেকে দুটো খাঁটিয়া, ফুল, ফুলের মালা নেমে এল। গোছ গোছ ধূপে আগুন পড়ল। দড়ি নামল। প্রিয়জনকে বাঁধা হবে।

খাকি জামা পরা আরও দু-চারজন কর্মচারী এপাশ ওপাশ থেকে এসে গেলেন। অন্ধকারে ফিসফাস কথাবার্তা, টাকার লেনদেন চলতে লাগল। পুলিশের সেই লোকটি এক ফাঁকে এসে সরোজবাবুকে বলে গেল, কিছু মনে করবেন না স্যার! যেখানকার যা নিয়ম!

সরোজবাবু যেন দেখেও দেখছেন না। গম্ভীর গলায় বললেন, তাড়াতাড়ি ঝামেলা হাটান, আমি এসেছি একজনকে আইডেন্টিফাই করতে।

এই তো স্যার, এক্ষুনি হয়ে যাবে।

একধরনের ধাতব শব্দ হতে লাগল। লোহার ট্রে নামছে বাঙ্ক থেকে। মৃত্যু চলেছে ঝনঝনিয়ে, মল বাজিয়ে। আমি আর পঙ্কজবাবু তাকিয়ে আছি উলটো দিকে। এ দৃশ্য যত কম দেখা যায় ততই ভাল। জীবনের আতঙ্ক!

একবার আড়চোখে তাকিয়েই ভয়ে আতঙ্কে চমকে উঠলুম। একটি মহিলার মৃতদেহ ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে চলেছেন। বেশ সম্পন্ন চেহারার কয়েকজন ভদ্রলোক রয়েছেন সঙ্গে। মহিলা পুড়ে একেবারে কাঠকয়লার মতো হয়ে গেছেন। কয়লার হাত, কয়লার পা, কয়লার মুখ। মাথার চুল পুড়ে গিয়ে, গুঁড়িগুঁড়ি হয়ে আটকে আছে।

আতঙ্কে পঙ্কজবাবুকে জড়িয়ে ধরেছিলুম। তিনি বললেন, ওদিকে তাকিয়ো না। অক্ষয় কাকাবাবুর কোনও কিছুতেই দৃকপাত নেই। সরোজবাবুরও তাই। দু’জনেই গল্পে মশগুল। ডোমজুড়ে বাগানবাড়ি বিক্রি হবে। সরোজবাবু দরদস্তুর করছেন। দু’হাত দূরে মৃত্যু পাকার, এঁরা জীবনের আয়োজনে ব্যস্ত।

মৃতদেহনাড়াচাড়া করে সাধুবাবুর নেশা ছুটে গেছে। তিনি প্রসন্ন মহাদেবের মতো এসে বললেন, কই আসুন। আপনাদের মাল দেখে যান।

চলুন চলুন, বলে সরোজবাবু আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে, মৃত্যুর মতো শীতল সেই ঘরে ঢুকলেন। মৃত্যু যে এত দুর্গন্ধময় কে জানত। কোথায় মানুষের গৌরব! জীবনের সুগন্ধ ছড়ায় কই! মৃত্যু এসে দুর্গন্ধ মাখিয়ে দিয়ে যায়। সাধুবাবু একটা ট্রে টানলেন। একজন কিশোর। ভুল নম্বর টেনেছেন। ছিলিম এখনও ছাড়েনি। দ্বিতীয় ট্রে। একজন বৃদ্ধ। দাঁত খিঁচিয়ে আছেন। সাধু বললেন, অ্যাঃ, শালা সেই বুড়ো। কেউ নিতেই আসে না। থাক শালা, এখানে আজন্ম শুয়ে।

সরোজবাবু ধমক লাগালেন, আবার মার খাবি সাধু, মুখ সামলে।

মুখ আর কী সামলাব হুজুর, এখানে কিছু মাল আছে, যারা চিরকাল থাকবে, কোনওদিন নড়বে না। এই বুড়োকে গলা টিপে মেরেছে। মেরেছে মেরেছে…

সাধু এটা গল্প করার জায়গা নয়। মাল টানো।

টানি হুজুর, আমি আদার বেপারি।

তৃতীয় ট্রে-টা টেনেই সাধু বললে, অ্যায় যাঃ আবার ভুল হয়ে গেল।

ট্রে-টা ভেতরে ঠেলতে যাচ্ছে, আমি চিৎকার করে উঠলুম। না করে পারলুম না, এ যে প্রফুল্লকাকা!

সাধু বললেন, কী হল? আপনারা তো বললেন, মেয়েছেলে, পুরুষ দেখে চিল্লে উঠলেন?

আরে এ যে আমাদের প্রফুল্লকাকা!

কে তোমার প্রফুল্লকাকা? তিনজনেরই এক প্রশ্ন।

ওই যে আমাদের বাড়িতে এসেছেন, কাকিমার স্বামী।

অ্যাঁ, সেকী? পঙ্কজবাবু চিনেছেন, ওই যে মহিলা, যিনি আজ রাঁধলেন, পরিবেশন করে খাওয়ালেন?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

আমার বুকের ভেতর কাঁপতে শুরু করেছে। হাতপা অবশ হয়ে আসছে। আমি ঠিক দেখলুম তো?

সরোজবাবু বললেন, তুমি ভাল করে একবার দেখো। সাধু বের কর।

ট্রে টানার শব্দ হল। চিত হয়ে শুয়ে আছেন। সেই পরিচিত মুখ। ছুঁচোলো গোঁফ। আমাদের প্রফুল্লকাকা। আর দাঁড়াতে পারছি না। সারাশরীর কাঁপছে। এ কী হল! বেশ বুঝতে পারলুম, আমি ধীরে ধীরে পড়ে যাচ্ছি।

সময়ই জানে সময়ের উজানে আমাকে কোথায় এনে ফেলেছে। তিনটি উদ্বিগ্ন মুখ তিন দিক থেকে ঝুঁকে আছে। মাথার ওপর বাড়ি-ঘেরা কলকাতার আকাশ। পঙ্কজবাবুর হুডখোলা গাড়ির পেছনের আসনে পা দুমড়ে চিত হয়ে আছি। মাথাটা ভিজেভিজে। সরোজবাবুর হাতে একটা তালপাতার পাখা। অল্প দূরেই একজন দেহাতি মহিলা। ফুটপাথের বাসিন্দা, আমাকে সুস্থ করার জন্যে পাখা এগিয়ে দিয়েছেন।

তিনজনেরই এক প্রশ্ন, কেমন বুঝছ বাবা!

দুঃস্বপ্ন দেখে যেন জেগে উঠলুম, যা দেখলুম, তা কি সত্যি!

পঙ্কজবাবু বললেন, সে তো তুমিই জানো বাবা।

সরোজবাবু বললেন, একেই বলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনো।

অন্ধকারে সাধুবাবুর গলা, মেয়েটাকে একবার দেখবেন না?

অক্ষয় কাকাবাবু বললেন, যা, দেখতে তো হবেই, সেইজন্যেই তো আসা।

সরোজবাবু সাধুকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা ওই লোকটিকে কোথায় পেলে?

কে জানে? কোথায় যেন মরে পড়ে ছিল। ওসব আমি জানি না। খাতায় আছে।

সরোজবাবু আমার কপালে একটা হাত রেখে বললেন, কী বুঝছ? একটু শক্ত হও। বেঁচে থাকলে কত মৃত্যু দেখবে! অত সহজে টাল খেলে চলে?

দেহাতি মহিলা বললেন, পানি?

তুমি জল খাবে?

আজ্ঞে না। চলুন আমি ঠিক হয়ে গেছি।

ধীরে ধীরে আবার আমরা সেই লাশঘরে এলুম। সাধুবাবু এক টানে সেই ট্রে-টা বের করে ফেললেন। যা দেখার জন্যে আমাদের ছুটে আসা। অক্ষয় কাকাবাবু কাঁধে হাত রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, পাছে পড়ে যাই বা মরে যাই। ধরে রাখলেই যদি ধরে রাখা যেত!

এতক্ষণ চোখ বুজিয়ে ছিলুম। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রায় বন্ধ। চোখ খুললেই তো কনককে দেখতে পাব। প্রথমে পিটপিট করে তাকালুম। না দেখলেই যেন ঘটনা অঘটনা হয়ে যাবে, সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে। সরোজবাবু বললেন, ভাল করে তাকাও।

ভাল করেই তাকালুম। আনন্দে বুক ছলাত করে উঠল। কনক নয়। অন্য কেউ। যৎসামান্য মিল। সে মিল মুখে। ইনি অনেক ময়লা। বয়েসেও বেশি। মাথার চুল কনকের মতো নয়। শুধু এই ভেবে অবাক হচ্ছি, একটু আগে শোকে, আতঙ্কে, জ্ঞানশূন্য হয়েছিলুম, এখন আনন্দে একেবারে ভোরের পাখি।

এ নয় এ নয় বলে, প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলুম। পাখির মতো ডানা ঝটপটিয়ে গলা নামিয়ে নিলুম। মৃতের মঞ্জিলে উল্লাস অশোভন।

পঙ্কজবাবু বললেন, এ নয়? আ গড সেভ দি কিং।

অক্ষয় কাকাবাবু বললেন, এ নয়, আঃ, বাঁচালে।

সরোজবাবু বললেন, যার গেল, তার গেল। নাও সাধু তুলে রাখো।

এতক্ষণ যেন শাড়ির দোকানে কাপড় পছন্দ করা হচ্ছিল। পঙ্কজবাবু বললেন, কিন্তু!

আর কিছু বললেন না। আমাদের সকলের মুখই গম্ভীর হয়ে গেল। ছায়া নামল মনে।

সরোজবাবু বললেন, তুমি আর একবার ভাল করে দেখো তো। তোমার চিনতে ভুল হচ্ছে না তো!

আজ্ঞে না, ভুল হয়নি। খুব ভাল করেই দেখেছি।

কিন্তু কী করে তা হয়! ভদ্রলোক ছিলেন কোথায়? আছেন কোথায়? এখানে কী করে এলেন?

সাধু বললেন, মরে গিয়ে এসেছেন স্যার! এঁরা সবাই যমরাজের অতিথি।

সরোজবাবু থেমে থেমে, কেটে কেটে বললেন, তুউমি চুউপ কঅরো!

পকেট থেকে পাঁচটাকার একটা নোট বের করে সাধুর হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুই আছিস কতক্ষণ?

সারারাত হুজুর।

আমরা হয়তো আবার আসব, বুঝেছিস শয়তান? এসে যদি দেখি তুই সুঁই নিয়ে পড়ে আছিস, কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না।

বেঁচে থাকলে তো বাঁচার কথা আসে হুজুর, আমরা তো মরেই আছি। মড়া ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভূত হয়ে গেছি। মর্গের বাইরে এসে, চুপ করে আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলুম মুক্ত আকাশের তলায়। সরোজবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, এখন তা হলে কী করা যায়!

প্রশ্ন আছে উত্তর নেই। কী করব আমি! জীবনেও ভাবিনি, এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। একটা বাতি জ্বলছে, আমি গিয়ে ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে দোব! এই তো সেদিন, দু’জনে হইহই করতে করতে এলেন। সংসার সাজিয়ে বসলেন। কত আশা, আকাঙ্ক্ষা। একটি সন্তানের জন্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। দুপুরে হেসে খেলে রান্না। পাত পেতে খাওয়া। ছাদে লুডো খেলা। চোখের জল, হাসি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জীবন ধুয়ে সাদা৷ সিঁদুর মুছে ফেলো, শাখা ভেঙে ফেলোশাড়ি ছেড়ে, থান পরো।

না, এ আমি পারব না।

সরোজবাবু উলটো দিকে মুখ ঘুরিয়েছিলেন, ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন, কী পারবে না!

আমি গিয়ে বলতে পারব না, কাকাবাবু মারা গেছেন।

এ কী বোকার মতো কথা, বলতে তো হবেই। ঘটনা ঘটিয়ে সময় চলে গেছে। সময়কে তো ফিরিয়ে আনা যাবে না ভাই। ঘড়ির কাটাকে ঘোরাবে কী করে? তা হলে শোনো।

পঙ্কজবাবু বললেন, এখানে না দাঁড়িয়ে, কোথাও গেলে হয়।

হ্যাঁ, তা হয়। চলুন তা হলে, গাড়িতে চলুন।

ওঁদের মনে কী হচ্ছে আমার বোঝার ক্ষমতা নেই। নিজের মনের কথা বলতে পারি। অন্ধকার সমুদ্রে ঢেউ উঠছে, পড়ছে, ভাঙছে, চুরছে। শ্যাম আকাশের তলায়, ফসফরাসের খলখল হাসি। ভয়ংকর সুন্দর। ওই সাধু গাঁজা চড়িয়ে অসাড়, ঘটনার অ্যানেসথেসিয়ায় আমার চেতনা বিকল হয়ে আসছে।

পৃথিবীতে দুঃখ মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। জল যখন গড়ায় তখন একজনের চোখেই বয়। তা না হলে এই বিভ্রান্তির মধ্যে এমন ঘটনা ঘটবে কেন? একটা কেলে ভুসো কুকুর, পেছনের আসনের তলায় ঠ্যাং ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছিল। আরাম করার আর জায়গা জুটল না! অক্ষয় কাকাবাবু যেই পা রেখেছেন কুকুরটা কেঁউ করে লাফিয়ে উঠে কাকাবাবুর কাছাচোর সঙ্গে জড়িয়ে, ওই অল্প পরিসরে এমন এক কাণ্ড বাধিয়ে বসল! সরোজবাবু আর পঙ্কজবাবু হেই হেই করছেন, আর বলছেন, খুব সামলে, খুব সামলে। কামড়ালেই জলাতঙ্ক। কে শুনবে? কাকাবাবু সাংঘাতিক বেকায়দায় পড়ে গেছেন। পা দুটো যথেষ্ট ট্র্যাক করতে পারলে কুকুরটা বেরিয়ে যেতে পারত।

যাই হোক সবকিছুরই একটা শেষ আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও শেষ হয়েছিল। রাস্তার কূটকচালে ট্রাফিক জটও একসময় খুলে যায়। শেষমেষ একটা রফা হল। কাকাবাবুর কোঁচা গলায় জড়িয়ে, খামচাখামচি করতে করতে কুকুর ফুটপাথে লাফিয়ে পড়ল। অর্ধেক বস্ত্র দান করে ভদ্রলোক রেহাই পেলেন। কামড়ায়নি। কামড়াতে পারেনি, কারণ নিজের মুখ নিজেই খুঁজে পায়নি। কাপড়ে জড়িয়েছিল। যা করে গেছে, সবই পায়ের কাজ।

অক্ষয় কাকাবাবু রাস্তায় নেমে এলেন, কাছা গলায় দিয়ে কুকুর বসেছে গিয়ে যেখানে ভলভল করে গঙ্গার জল বেরোচ্ছে। কাপড়ের যতটুকু কুকুর দান করে গেছে, সেই অংশটুকু লুঙ্গির মতো করে পরে নিলেন। সংসারে কীভাবে যে মানুষের কাছা খুলে যায়!

সরোজবাবু বললেন, হুডখোলা গাড়ি কলকাতায় চলে না। এ এক ভাগাড়ে শহর। অক্ষয়দা, কামড়ায়নি তো!

কামড়ায়নি, তবে আঁচড়েছে।

চলুন তা হলে, ডাক্তার ভবরঞ্জনের কাছে যাই।

আরে দুর, এ অতি সামান্য ব্যাপার। এর চেয়ে কত বড় বড় চোট হয়ে গেছে তাই যাইনি!

গাড়ি চলতে শুরু করল। কুকুর কুকুর গন্ধ বেরোচ্ছে। সরোজবাবু আবার একটা সিগারেট ধরালেন। ভদ্রলোক মনে মনে উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, এবার তা হলে কী হবে।

এবার?

দু’জনে একই কথা বললেন, বলেই চুপ করে গেলেন। পৃথিবীতে এইরকম বহু এবার আছে, যে-বারের পরে আর কিছু থাকে না। থাকে এক ধরনের ঘোলাটে শূন্যতা।

সরোজবাবু বললেন, কেসটা জানা দরকার। হঠাৎ একটা লোক মারা গেল, নিরীহ লোক।

পঙ্কজবাবু বললেন, এখন, এ সময় জানব বললেই কি আর জানা যাবে?

যেতে পারে, যদি বিশুকে ধরা যায়।

এতক্ষণ আমরা কথায় কথায় কেউই লক্ষ করিনি। গোয়ালের গোরুর মতো গাড়ি ঘুরঘুর করে। বিডন স্ট্রিটের দিকেই চলেছে। কোথাও তো একটা যেতে হবে! যে যার ঘরের দিকেই চলে।

পঙ্কজবাবুর বাগানে ভুরভুর করে ফুলের গন্ধ ছাড়ছে। রাত-রানিরা ফুটে বসে আছে। ঢোকার মুখের উঁচু রকে এক সার সুন্দরী বসে আছেন। একটা ফুটফুটে বাচ্চা, চোখে ঘুম নেই, সবে হাঁটতে শিখেছে। টলে টলে বেড়াচ্ছে। দু’পা যায়, ধুপ করে বসে, আধো আধো গলায় বলে, এই দাঃ। আমাদের ঢুকতে দেখে, সকলেই একটু সংযত হলেন। অপর্ণা বাচ্চাটাকে কোলে টেনে নিতেই, মুক্তি পাবার জন্য ধনুকের মতো বেঁকে গিয়ে চিল চিৎকার ছাড়তে লাগল।

অপর্ণার মা বললেন, ওরে ওকে ছেড়ে দে না বাপু, কানের পোকা বের করে দিলে।

বাচ্চাটা ছাড়া পেয়েই অপর্ণাকে চড়, চাপড়, ঘুসি সব একসঙ্গে চালাতে লাগল। শেষে কচি কচি মুঠোয় চুল ধরে টান। সামনের দিকে মাথা নিচু করে অপর্ণা বলছে, উ, ঊ, ছাড় ছাড় দস্যি ছেলে।

অপর্ণার মা উঠে এলেন। নতুন মানুষ দেখে অভ্যর্থনা জানালেন নতুনভাবে, আসুন আসুন। পঙ্কজবাবুকে হাসিহাসি মুখে বললেন, কী, তোমাদের কাজ হল? কী করে এলে, ডাকাতি?

আমাদের মনের অবস্থা জানবেন কী করে! পঙ্কজবাবু যেন একটু বিরক্তই হলেন। সেইভাবেই বললেন, বড় বিপদ, বড় বিপদ।

কী বিপদ? মহিলা যেন কেমন হয়ে গেলেন। বিপদের চেয়ে বিপদের ছায়া অনেক বেশি ভয়াবহ।

চলো চলো, ভেতরে চলো, সব শুনতে পাবে।

শিশুটির দস্যিপনা থামাবার জন্য এইবার কেউ একজন বিরক্ত হয়ে বললেন, ওকে ঘুমপাড়া না বাপু। রাত তো অনেক হল।

সরোজবাবু বসতে বসতে বললেন, বাঃ বড় চমৎকার বসার ঘর।

পঙ্কজবাবু প্রশংসাটা স্ত্রীর দিকে ঠেলে দিলেন, সব এরাই করে। আমাকে বিশেষ ভাবতে হয় না।

সৌভাগ্যবান আপনি। বউদি, জল খাব, ভাল করে এক কাপ চা খাব, কিছু মনে করবেন না, আবদার করছি।

ওমা, সেকী! মনে করব কেন? আমাদের বাড়ি অষ্টপ্রহরই চা হচ্ছে।

আমাদের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে উদ্বিগ্ন মুখে বললেন, হ্যাঁগা, সত্যি করে বলো তো, তোমরা কি শ্মশান থেকে এলে!

শ্মশান? পঙ্কজবাবু টোক গিললেন, ঠিক শ্মশান নয়, বলতে পারো মহাশ্মশান।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন