১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
বাঁধা মূলাধারে।
পাঁচ ক্ষমতার সারথি তার
রথ লে দেশ-দেশান্তরে ॥

জীবনে এমন একটা-দুটো রাত আসে, যে-রাত ভোর হলে বাঁচা যায়। ভয়ে চৈতন্য হারালে ভয়ের হাত থেকে বাঁচা যায়। না হারালে অবস্থা হয় আমার মতো। টর্চ ছিটকে চলে গেছে রান্নাঘরের সামনের নর্দমায়। ড্যাম্প লেগে আলোর তার নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ লিক করছিল। দেয়ালে হাত ঠেকলেই শক মারছিল। কানেকশন কেটে দেওয়া হয়েছে। কবে মিস্ত্রি আসবেন কে জানে, তারপর আলো জ্বলবে। সে এখন বিশবাঁও জলে।

পরিস্থিতি মানুষকে কীভাবে সাহসী করে তোলে! কী জানি কাকিমার চোখের ভুল কি না! হয়তো রান্নাঘরে শেকল তোলেননি। নিজের ভুলে নিজেই অজ্ঞান। অন্ধকারে যেখানে যেভাবে পড়ে আছেন, সেখান থেকে এখুনি সরাতে না পারলে ভূতের হাত থেকে বাঁচলেও, বিছে কিংবা সাপের হাত থেকে বাঁচা যাবে কি না সন্দেহ!

মৃত্যুর জড়তার চেয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে মানুষের কত প্রবল! শরীরে কোথা থেকে পালোলায়ানের মতো শক্তি এসে গেল। বড় এক বালতি জল তুলতে যার হাত কাঁপে, দম বেরিয়ে আসে, সে

অনায়াসে একজন মহিলাকে, একটা হাত দুটো পায়ের তলায়, আর একটা হাত পিঠের নীচে দিয়ে। কেমন অক্লেশে তুলে ফেলল! ভীষণ ভয় করছে। পৃথিবীর সবই প্রায় অচেনা, নিজের বসতবাটিও যে কত অচেনা, ভয়ংকর, এই মুহূর্তেই বুঝছি।

বেড়াল যেভাবে মুখে বাচ্চা নিয়ে লটরপটর করে হাঁটে, আমিও সেইভাবে সিঁড়ির দিকে এগোতে শুরু করলুম। কাকিমার পিঠ ঘামে একেবারে ভিজে গেছে। সারাশরীর এলিয়ে আছে। দুটো হাত শরীরের দু’পাশে লটপট করছে। হাতের ওপর দিয়ে ঝুলে আছে ভাঁজ করা দুটো পা। হাঁটুর ভাজ ভিজেভিজে। এই অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে যে-দৃশ্য মনে পড়ল, মন তোমার খুরে খুরে নমস্কার। রোগাপটকা রাজকাপুর যেন আওয়ারা ছবিতে দিঘল নার্গিসকে নিয়ে ড্রিম-সিনে ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে।

পা দিয়ে কী একটা সুট করলুম। হৃৎপিণ্ডে ধড়াস করে একটা শব্দ হল। সেই টর্চ। এতক্ষণ পাশেই পড়ে ছিল। এইবার সত্যি সত্যিই নর্দমায় গিয়ে পড়ল। যাক, আপদ শান্তি, বিপদ শান্তি। কোনওরকমে সিঁড়ি অবদি পৌঁছোতে পারলে, ধাপের ওপর বসিয়ে একটু বাতাসটাতাস করলে। হয়তো সুস্থ হয়ে উঠবেন! এ দেশের মেয়েদের সাজপোশাকের কোনও মাথামুন্ডু নেই। লজ্জা রাখতে গিয়ে হার্টফেল করার অবস্থা! বুক বেঁধে মানুষ বিপদে ঝাঁপ দেয়, মাঝরাতে বিছানায় শুতে যাওয়ার কী মানে? মেয়েদের অনেক কিছুরই মানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। চেষ্টা করাই বৃথা।

যে-দিকে চলেছি সেই দিকেই সদর। সিংহ দরজা বললেই ভাল হয়। মানসিংহ স্বচ্ছন্দে টাট্টু চেপে টগর গিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন। দরজাটা আবার তিনপাট। বহুকালের পুরনো। বাঘের আঁচড়ের মতো কালের আঁচড় খেয়ে ফাটাফাটা, সরু সরু চিড় ধরেছে। এপাশ থেকে ওপাশের আলো নজরে পড়ে। যেন ঝিলমিল দরজা। এখন বাইরে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার। আলো দেখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

বেশি না, আর সাত-আট পা এগোতে পারলেই সদর। পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায় গোটা দুয়েক দাঁচ মেরে। সিঁড়ির তলায় ঘুপচিতে আগে আমাদের কুকুর থাকত। সেসব দিন চলে গেছে, এখন আমরা ঝাড়া হাতপা।

দরজার দিকে চোখ পড়তেই বুকটা আবার ছাত করে উঠল। দরজার তলার দিকে ছোট্ট একটা আলোর টিপ স্থির হয়ে আছে। জোনাকি? জোনাকির আলো স্থির হয় না। জ্বলে আর নেভে। ভয়ে, কৌতূহলে পা থেমে পড়ল। বিন্দু সূক্ষ্ম সরলরেখার আকারে বিশেষ একটি ফাটা ধরে জ্বলন্ত সুতোর মতো এঁকেবেঁকে বিদ্যুৎগতিতে নীচের দিক থেকে ওপরে উঠছে। যেন আলোর পুঁয়ে সাপ। এরকম একটা নয়, দেখতে দেখতে চোখের সামনে অসংখ্য আলোর ঝিলমিল তৈরি হয়ে গেল। মনে হচ্ছে দেওয়ালির রাত। আলোর রং কেমন যেন হলদেটে।

মন এইবার যুক্তিতর্কের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসবের মানে বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের শক্তি কমে আসছে। এ লোকের চেয়ে পরলোকের ক্ষমতা অনেক বেশি। কোনওরকমে যেখানে দাঁড়িয়েছিলুম সেইখানেই ধীরে ধীরে বসে পড়লুম। অশরীরী! কোনও অন্যায় তো করিনি, তবে কেন এমন করে ভয় দেখাচ্ছ।

চিন্তা, দৃষ্টি ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে। পাতলা এক পরদা কুয়াশা নেমে আসছে। চিন্তায় কিংবা কাজে সত্যিই কি আমি কোনও অন্যায় করিনি, পাপ করিনি! জোর গলায় বলতে পারো? কীসের স্বার্থে তুমি একজন মহিলার কাছে তার স্বামীর মৃত্যুসংবাদ চেপে রেখেছ! তোমার অনুকম্পা! নিজের ভেতরটা একবার ভাল করে হাতড়ে দেখো তো?

দোতলা থেকে অস্পষ্ট ভেসে আসছে গভীর ঘুমে শোনা স্বপ্নের শব্দের মতো, ওপার নদী থেকে ভেসে আসা পিতার ভারী কণ্ঠস্বর, একী, সব খুলেটুলে রেখে গেল কোথায়, বাথরুমে নাকি? কোথায় গেলে হে। বাতাসে যে বইয়ের পাতা উড়ছে! আঃ ছিঁড়ে যাবে এক্ষুনি।

প্রায়-সংজ্ঞাহীন সেই অবস্থায় অদ্ভুত এক পাপবোধের তাড়নায় প্রাণপণ চেষ্টা করলুম উঠে দাঁড়াবার। কাকিমার স্বার্থে এখুনি আমার ওপরে উঠে যাওয়া উচিত, এমন একটা নির্দেশ উঠছে মনে। পারছি না, কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। দেহ যেন তালশাঁসের মতো থ্যাসথ্যাস করছে।

দরজার দিকে চোখ চলে গেল। সেই আদ্যিকালের ফাটাফাটা দরজা, খিল দিয়ে জমপেশ করে আঁটা। আলোর ঝিলমিলি আর নেই। খেলা করে চলে গেছে। এতক্ষণ গলায় কোনও স্বর ছিল না। স্বর ফিরে এসেছে। ভাগ্য খুবই সুপ্রসন্ন। কাকিমা ধীরে ধীরে আমার কোল থেকে মাথা তুললেন। ফিসফিস করে বললুম, কোনও ভয় নেই, সট করে সিঁড়ির তলায় ঢুকে পড়ুন। বাবা উঠেছেন। একটু আগেই যাকে বিছে কামড়াতে পারে ভেবে অস্থির হয়েছিলুম, প্রাণে মরার ভয়ে তাকেই ঠেলে দিলুম অন্ধকার আবর্জনায়। তিনিও ভূত ভুলে অম্লানবদনে সেখানে চলে গেলেন। কেন গেলেন, না গেলে কী হত এসব ভাবার কোনও প্রয়োজন হল না। আমরা দুজনেই মনে হয় এক নৌকোয় চেপে বসে আছি। উই আর অন দি সেম বোট, ফাদার।

মিথ্যে বলার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলেছি। গলা তুলে বললুম, আমি নীচে।

অন্ধকারে নীচে কী করছ?

সঙ্গে টর্চ আছে। কী একটা শব্দ হল, তাই দেখতে এসেছি।

অ্যাঁ, তাই নাকি? সাহস তা হলে বেড়েছে বলো! ভেরি গুড। সন্দেহজনক কিছু পেলে? আমি নামব?

আজ্ঞে না। তেমন কিছু দেখছি না।

সদরের খিলটা একবার ভাল করে চেক করো। ওটার দুপাশই খোলা হ্যাঁচকলের মতো, ঠিকমতো লাগে না। বাইরে থেকে সরু পাত গলিয়ে ঠেললেই খুলে যায়।

আজ্ঞে হ্যাঁ, চেক করেই উঠব।

আমি এবার তা হলে শুয়ে পড়ছি, তুমি উঠে এসো। শোবার আগে ফুল এক গেলাস জল খেয়ে শোবে।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

আমার ভুরুর কাছটা কুঁচকে উঠেছে। বেশি কথা না বলে উনি শুয়ে পড়ছেন না কেন? দরজা বন্ধ ও ছিটকিনি লাগানোর শব্দ হল। কী আশ্চর্য! ওঁর ঘরে ঢোকার জন্যে, ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেবার জন্যে আমি হঠাৎ এত ব্যস্ত হয়ে পড়ছি কেন? আমার কি কিছু হয়েছে?

প্রায় শিস দেবার মতো করে বললুম, বেরিয়ে আসুন।

অন্ধকারে কাকিমা এগিয়ে আসছেন। সাদা শাড়ি, সামান্য চুড়ির শব্দ, জীবন্ত একটি মনুষ্য শরীরের উত্তাপ আর গন্ধ, রহস্যময় রাত্রি। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কাকিমা ঠিক আমার পাশটিতে এসে দাঁড়ালেন। চারপাশের দেয়াল কোথায় যেন সরে গেছে। মনে হচ্ছে গভীর এক অরণ্যে দাঁড়িয়ে আছি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই মহিলা, আমার আর পাশে নন, একেবারে শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। মাংসপিণ্ড গলে গলে পড়ছে।

তুমি অমন থরথর করে কাঁপছ কেন পিন্টু! একী, তোমার গা যে আগুনের মতো গরম! জ্বর আসছে নাকি! ঘরে এসো, ঘরে এসো। এই নীচে কিছুতেই আমি আর একা থাকতে পারব না। ভোর অবদি তুমি আমার কাছে থেকে যাও। উনি জানতে পারবেন না।

ওপরে আমার ঘরে আলো জ্বলছে।

নিজের কণ্ঠস্বরে নিজেই চমকে উঠলুম। এ কার গলা! ধরাধরা, ভাঙাভাঙা। আমার ভেতর থেকে আর একজন কেউ বেরিয়ে আসতে চাইছে। আমি তাকে চিনি না। অনেকদিন ধরে দেখে আসছি, বাগানের একপাশে ছোট একটা গর্ত। সবাই বলে, ও কিছু নয়, ইঁদুরের গর্ত। মাঝে মাঝে দেখার চেষ্টা করি, কে আছে ভেতরে! একফালি অন্ধকার। সময় সময় কী একটা নড়েচড়ে, কোনওদিন দেখতে পাই না। হঠাৎ একদিন ফোঁস করে তেড়ে উঠল একটা সাপ। ফণা তুলে হেলছে, দুলছে। বিস্ময়ে আমি জড়বৎ। সত্যিই তা হলে ছিল! ইঁদুরের গর্তে সাপ থাকে একথা তা হলে মিথ্যে নয়!

কাকিমা বললেন, জ্বলুক আলো। দিন ফুটলে তেজ কমে ফ্যাকাসে হয়ে যাবে। তখন আর বোঝাই যাবে না, শুধু শুধু আলো জ্বলছে। তুমি কাপছ, তোমার জ্বর আসছে! তুমি আমার কাছে এসো। আমি তোমাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকি। আরাম পাবে। কে আছে তোমার? কেউ তো নেই!

যা আমি বলতে চাই, তা তো সাহস করে বলতে পারব না। আর একজন মুখ চেপে ধরছে। জ্বর নয়, এ হল আমার প্যাশন। এতকাল গর্তে শুয়ে ছিল ন্যাজ গুটিয়ে, শীতঘুমে। হঠাৎ জেগে উঠছে। গ্রীষ্ম এসেছে। সদর দরজার ফাটলে ফাটলে আগুনরেখার যে ঝিলিমিলি দেখেছিলুম, তা আমার জ্বলন্ত ধমনীরই প্রতিচ্ছবি। লাভার মতো রক্তস্রোত বইছে। আমি আমার ছোট্ট নির্জন ঘরে ফিরে যেতে চাই, যেখানে একটি দীপ জ্বলে আছে আমার অপেক্ষায়, আমার ফেলে আসা সাধনা, মুখ-আঁটা একটি খামে আছে, একটি মেয়ের কোনও গোপন কথা। আমি যে পারছি না ফিরে যেতে। কে প্রবল? আমি, না আমারই রক্তে পুষ্ট সেই অন্যজন। আমি তার কাছে পরাজিত হতে চলেছি। স্ট্রেট সেটে। দুটো শরীর ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে একটি আয়োজনের দিকে পায়ে পায়ে। একজন। জানে না আর-একজন কীভাবে অন্য আর-একজন হয়ে গেছে। সে এখন পুরুষ। চৌকাঠ, মেঝে, নিবে-যাওয়া হ্যারিকেনের কেরোসিন গন্ধ, অন্ধকারে ভাসমান চৌকি, একটি অন্যের ব্যবহৃত বিছানা, শাড়ির ক্ষারক্ষার গন্ধ, দেহের কিছু আবৃত অনাবৃত অংশ, জমাট বাতাস, ফিকে অন্ধকার। এই সেই বিছানা, যার একজন অংশীদার কোনও এক রাতে, কোনও এক অরণ্যভূমির প্রান্তে, ভাগ্যের শিকার হয়ে নীল শীতল ঘরে একটি ধাতুর চাঁদরে পড়ে ছিলেন কারুর অনিশ্চিত অপেক্ষায়। কেউ আসেনি। সেখান থেকে লাশকাটা ঘরে, তারও পরে অবয়বহীন, নামহীন একটা হাড়ের খাঁচা। গভীর রাতে ভৌতিক চেরাই ঘরের দেয়ালে। ছাত্ররা আসবে, দেখবে চিনবে, ফেমার, পেলভিস, ইলিয়াম, স্কাপুলা, ম্যাকসিলা, ম্যানভিবল– সব মানুষেরই তখন এক নাম।

অন্ধকার আমাদের দুজনকেই গ্রাস করে নিয়েছে। ফিসফিস করে মহিলা বললেন, তুমি অমন থরথর করে কাপছ কেন? ম্যালেরিয়া আসছে নাকি? একটু শান্ত হও, একটু স্থির হও।

আমি নিজেকেই বোঝাতে পারছি না, তা এই মহিলাকে বোঝাই কী করে, এ এক অন্য ধরনের ম্যালেরিয়া। শরীরে আমাদের সাপ আছে। সাধকরা জানেন। সারপেন্ট পাওয়ার। এক স্থান মূলাধারে আর স্থান সহস্ৰারে। ভুজঙ্গ রূপা লোহিতা, স্বয়ম্ভুতে সুনিদ্রিতা। চতুর্দলবিশিষ্ট হস্তীপৃষ্ঠে পৃথীবীজ লং, স্বয়ম্ভশিববেষ্টিতা কুণ্ডলিনী নিদ্রিতা, দেবতা ব্রহ্মা ও দেবী সাবিত্রী। সেই সর্প পিঠ বেয়ে ঘাড়ের পেছন দিয়ে সোজা উঠে পড়েছে মাথায়। মেরুদণ্ডে নিউরনের সংকেত থ্যালামাসে গিয়ে ধাক্কা মারছে। আজ্ঞাচক্রে এ কীসের আজ্ঞা ভেসে বেড়াচ্ছে! দ্বিদলবিশিষ্ট এই চক্রের একটি দলে হং অন্যদলে ক্ষং বীজ। মুক্ত ত্রিবেণীতে কোথায় আমার ওঁকারধ্বনি। পরশিব, দেবী সিদ্ধকালী, ষড়মুখ ও চার হস্তযুক্ত হাকিনী দেবীই বা কোথায়! শুধুই থ্যালামাস। সেরিব্রাল করটেক্স বলছে, বড় নরম, বড় গরম, বড়ই গভীর আর গোপনীয়। সহস্রারে, সহস্রদলের মাঝে মিথুনাত্মক পরমশিব আর আদ্যাশক্তি। আমি তিনবার বলেছি, বাঁচাও বাঁচাও। কেউ আসেননি আমাকে বাঁচাতে। আমার দ্বিতীয় ‘আমি’ শুধু খ্যাখ্যা করে হাসছে। তুমি কার কথায় ভুলেছ রে মন, ওরে আমার শুয়া পাখি। : আমারই অন্তরে থেকে, আমারে দিতেছ ফাঁকি।

কাকের গলায় বললুম, আমি ওপরে যাই। টেবিলে আমার আলো জ্বলছে।

অন্য তরফে সাড়া নেই। বিস্ফোরণে প্রকোষ্ঠ আমার ভেঙে পড়েছে। ওই যে রাত্রে এসে ছয়টা চোরে মেটে দেয়াল ডিঙিয়ে পড়ে। অন্ধকার আমাদের আবৃত করে রেখেছে, তাই আর একধাপ নীচে নামলেই কাল দিনের আলোয় নিজের মুখের সামনে নিজেই আর দাঁড়াতে পারব না। দেহের ওপর দেহ ভাঙছে, তটের ওপর ঢেউ ভাঙছে, নিদ্রাশেষে স্বপ্ন ভাঙছে, মৃত্যু এসে ঘট ভাঙছে। সবই যখন ভাঙনের খেলা, আমার আমিও ভাঙবে, তবু শেষ চেষ্টা। এই বদ্ধঘরেও ভেসে এল দূর থেকে ভোরের প্রথম পাখির শিস।

এস্কিমোরা যেমন কুঁজো হয়ে ইগলু থেকে বেরিয়ে এসে অরোরা বোরিয়ালিস দেখে, আমি সেইভাবে আর একটি শরীরের তলা থেকে বের করে আনলুম আমার ঘৃণিত শরীর। তোমাকে আমার ধিক্কার জানাই। তুমি শঠ, তুমি প্রবঞ্চক, তোমার ভেতরে বসে আছে তক্ষক। তুমি তার। শিকার।

সদর দরজার ফাটলে সার সার রুপোলি রেখা। সদরে দিন এসে দাঁড়িয়েছে। এ দীনের আর ভাবনা কী! দুরারোগ্য ব্যাধিতে মরমর হয়েছিল। আবার বেঁচে ফিরে এসেছে। ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে, যেন বহুকাল পরে, কত অচেনা! দোতলার বারান্দায় ঊষার আঁচল উড়ছে, প্রতিদিনের মতো তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছি না। অপবিত্র হয়ে মানুষ যেমন বলে, একটু সরে দাঁড়াও, আমাকে যেতে দাও, আমাকেও সেইভাবে পাশ কাটিয়ে সরে আসতে হল। টেবিলের আলো আমার জন্যে জেগে জেগে ঘুমিয়ে পড়েছে। জ্ঞান-ঠাসা কেতাব, সোনার জলের লেখায় ব্যঙ্গের হাসি হাসছে। শূন্য ঘরে কেউ নেই, তবু মনে হচ্ছে অদৃশ্য একঘর মানুষ হইহই করে বলছে, এসো, এসো। মায়ের ছবির দিকে তাকাতে পারছি না। দুটি চোখে আগের রাতের স্নেহের দৃষ্টি যেন আর নেই। ঘৃণা ধিক্কার, ঠোঁটের অভ্র হাসি মিলিয়ে গেছে। রক্তের ঋণ শোধ করে এলুম মা।

হঠাৎ মনে হল গঙ্গার জলে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সব পাপ ধুয়ে যাক। ভূতের ব্যাখ্যা আমি পেয়ে গেছি। ভূত হল মানুষের দ্বিতীয় আমি। কখনও সে ছায়া, কখনও সে কায়া। সেই সুললিত কণ্ঠের মানুষটি, যিনি রোজ প্রাতে নাম গান করতে করতে স্নানে চলেন, তিনি চলেছেন। ভৈরবীতে ধরেছেন, রাই জাগো, রাই জাগো বলে ডাকে শুকসারি।

কোমরে গামছা বেঁধে রাস্তায় নেমে পড়লুম। পিচ এখনও ভিজেভিজে। রাত সারারাত শিশিরে কেঁদেছে।

একটি রাতের খতিয়ান বড় কম হবে না। কত লক্ষ প্রাণ এল, কত লক্ষ প্রাণ গেল, কত অপরাধ ঘটে গেল, কত পবিত্র অপবিত্র হল! ভোরের প্রসন্ন আলোয় পুরুষ আর মহিলারা স্নানে চলেছে। বিধবা মহিলাদের সাদা থান, হাতে ঝকঝকে কমণ্ডলু, কারুর কারুর হাতে পেতলের সাজিতে সাদা আর নীল অপরাজিতা। টকটকে চেহারার বিলাসী বধূরাও চলেছে। বুকের ওপর আড়াআড়ি পেতে দিয়েছেন লাল ডুরে গামছা। রাতের আলস্য পায়ে পায়ে জড়িয়ে আছে। শরীরে শয্যার গন্ধ, সুবাসিত তেলের গন্ধ, শাড়ির বেড় তখনও ঢিলেঢালা, খোঁপা আলগা। যাবার আগে রাত যেন আর এক তোলা যৌবন দান করে গেছে। সখীতে সখীতে কী যে আলাপ, চুড়ির শব্দের মতো হাসি উঠছে রিনরিনিয়ে।

সেই বিশাল সন্ন্যাসী চলেছেন। গলায় রুদ্রাক্ষ। রক্তাম্বর পরনে। শুভ্র কেশ, শুভ্র শ্মশ্রু, ঊর্ধ্ব নেত্র, পায়ে কাষ্ঠপাদুকা। গম্ভীর কণ্ঠে শুধু বলে চলেছেন হরি ওঁ, হরি ওঁ। প্রতি পদক্ষেপে পৃথিবী যেন সংকুচিত হচ্ছে। প্রতিবার মন্ত্র উচ্চারণে বাতাস যেন কেঁপে উঠছে। আমিও চলেছি তার পেছন পেছন।

গৈরিক জলধারা তরতর করে বয়ে চলেছে সমুদ্রের দিকে। সামনেই পশ্চিম। আকাশে তখনও অন্ধকারের শেষ পটিটুকু লেগে আছে। মন্দিরের চূড়া ভোরের আলো ধরে, সম্রাটের মতো মাথা তুলে পঁড়িয়ে আছে। জলে ভোরের আলো চুমকি বসিয়ে দিয়েছে। আকণ্ঠ নিমজ্জিত নরনারী, নানা সুরে স্তোত্র পড়ে চলেছেন। কেউ কেউ উধ্ববাহু হয়ে সবিতা স্তোত্র পড়ছেন, কেউ আবৃত্তি করছেন গায়ত্রী, কেউ করছেন পিতৃপুরুষের তর্পণ, অঞ্জলিবদ্ধ হাতের ফাঁক বেয়ে জল ঝরে পড়ছে। ঝরা জলে খেলছে সূর্যের সাতটি রং।

সেই রুদ্রাক্ষধারী সন্ন্যাসী সাঁতার দিয়ে প্রায় মাঝগঙ্গায় চলে গিয়ে শবের মতো চিত হয়ে ভাসতে ভাসতে ভাটার টানে শ্মশানঘাটের দিকে চলেছেন। দুটো হাত মাথার দু’পাশে টানটান, দুটো পা ছড়ানো, দেহ চিত, ঊর্ধ্বমুখী, কোনও স্পন্দন নেই, নিখুঁত শবাসনে ভাসমান। কাছাকাছি কোনও শকুন থাকলে শব ভেবে বুকের ওপর এসে বসে পড়ত। জলে আমার পাশে দাঁড়িয়ে একজন স্নান করছিলেন। তিনি খুব অবজ্ঞাভরে বললেন, ভেলকি দেখাচ্ছে, ভেলকি। কথা শেষ করে ভুস করে একটা ডুব মারলেন, পরক্ষণেই উঁহু উঁহু করে উঠে পড়লেন। যন্ত্রণায় বিকৃত মুখ। পরিচিত একজন জিজ্ঞেস করলেন, কী হল মুকুজ্যে?

দেখো তো ভাই, পিঠে কী একটা মেরে গেল। মনে হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। ভীষণ জ্বলছে।

জল থেকে একটু ওপরে উঠতেই দেখা গেল, চওড়া পিঠের বাঁ পাশে মেরুদণ্ডের কাছে রক্ত বেরোচ্ছে। চোখের ভুল কি না জানি না, রক্তের অক্ষরে পরিষ্কার একটি শব্দ ফুটে উঠেছে, ওঁ। কে যেন দেগে দিয়ে গেছে গরম লোহা দিয়ে।

সবাই বলতে লাগলেন, ওহে, আড়ট্যাংরায় কাটা ঝেড়েছে। বেশ ভোগাবে কিছুদিন। আমার মনে হল ভদ্রলোক সন্ন্যাসী-নিন্দার ফল হাতে হাতে পেয়ে গেলেন। আমরা সবাই স্নান করছি, ট্যাংরা মেরে গেল বেছে বেছে ওই নিন্দুককেই।

পুব আকাশ লাল হয়ে উঠেছে জবাফুলের মতো। পাশের খেয়াঘাট থেকে একটি নৌকা ছেড়ে। গেল ওপারের দিকে। তিনজন মঠবাসিনী বসে আছেন উদাস হয়ে। দুটো জেলেনৌকা তরতর করে দক্ষিণ দিকে চলে গেল। কে একজন হেঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কী মাছ আছে গো কত্তা? তারা কোনও উত্তর দিল না।

মেয়েদের স্নানঘাটের দিকে দৃষ্টি চলে গেল। কোমর পর্যন্ত জলে নেমে কে একজন পেতলের। ঘড়া জলে ভাসিয়ে দোল খাইয়ে খাইয়ে জল ধরার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। চমকে উঠলুম, মায়া। আমার দিকে তাকিয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে ভিজে শাড়ি লেপটে গেছে সারাশরীরে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে একজন হাতের মুদ্রা করে, চোখের সামনে ধরে সূর্য নমস্কার করছেন, ওঁ নমঃ বিবস্বতে। চোখ তার সূর্যের দিকেই নেই, জবাকুসুমসঙ্কাশং যেন নেমে এসেছেন মায়ার টোল-খাওয়া বুকে। মনে হল একবার বলি, এই ব্যাটা, আকাশের দিকে তাকা। সকাল না-হতেই মানুষের খিদে। পেটের খিদে, মনের খিদে, দেহের খিদে।

শরীরের অদ্ভুত ভঙ্গি করে মায়া ঘড়াটা কাঁখে রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে ইশারা করলে, উঠে এসো। ভদ্রলোকের স্তোত্র ভুল হয়ে যাচ্ছে, জবা জবা করছেন। থাকতে না পেরে বলে ফেলেছি, কুসুম সঙ্কাশং। ভদ্রলোক বলে উঠলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ কুসুম সঙ্কাশং।

ভিজে পাতা যেন সোনার পাত। জলের কিনারায় ফুল ভাসছে, ভাসছে চিতার কাঠকয়লা। ঘাটের বাইরে কাখে কলসি নিয়ে মায়া পঁড়িয়ে আছে যক্ষিণী মূর্তির মতো। ভিজে কাপড় থেকে জল ঝরেছে পায়ের কাছে। সামনে দাঁড়াতেই মায়া বললে, কী গো একেবারে ভুলে গেলে? বলেই সে ধীর পায়ে চলতে লাগল। দূরে আরও দূরে। বৈষ্ণব কবি হলে লিখতেন, আমার আঁখিভ্রমর জড়িয়ে গেল তার ভিজে কাপড়ে জড়ানো শরীরের ছন্দে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন