১.৪৫ Lead us not into temptation

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

Lead us not into temptation
but deliver us from evil.

আটটা বেজে দু’মিনিটে ট্রেন ছাড়বে। এখনও সময় আছে। হুইলারের স্টলে দাঁড়িয়ে মাতুল ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাচ্ছেন। চারপাশে লোকজন ছোটাছুটি করছে। আঁকা ঝকা ফজলি এসেছে। মালদা থেকে। প্ল্যাটফর্মে পড়ে আছে। নীল পোশাক পরা রেলের একজন কর্মচারী লম্বা একটা কাগজে পেনসিলের টিক মেরে চলেছেন। মাথায় বিরাট বিরাট বোঝা নিয়ে পোর্টাররা ছুটছে। পেছন পেছন তাল রেখে চলার চেষ্টা করছেন এক একটি পরিবার। এইসব কালা আদমিদের মাঝখানে, প্ল্যাটফর্ম আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন এক সায়েব দম্পতি। সায়েবের বুকের কাছে ঝুলছে। ছোট্ট একটি ক্যামেরা। মুকু, মেসোমশাই আর পিতৃদেব দাঁড়িয়ে আছেন কিছু দূরে ঘড়ির তলায়। এই বিপুল ব্যস্ততার মাঝে মানুষ কিছুই আর ভাবতে পারে না। গতির চিন্তা ছাড়া আর কোনও চিন্তাই আসে না। এখানে এলেই মনে হয় যেতে হবে, যেতে হবে। বেরিয়ে পড়েছি, একটা কোথাও যেতে হবে।

মাতুল বললেন, এই দেখ আমার ছবি বেরিয়েছে।

একটি সিনেমা পত্রিকার পাতায় মাতুলের ছবি। পাশে আরও দু’-তিনজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন সুন্দরী চিত্রা দেবী। আর একজন মানুষ দু’জনের কাঁধের ফাঁক দিয়ে মুভুটা সামনে বের করে চোখ আর মুখের এমন একটা ভাব করেছেন, দেখলেই হাসি পায়। মাতুল বললেন, চিনিস না? এঁর নাম নবদ্বীপ হালদার।

চতুর্দিকে এঁর গলা শুনেছি। সময় সময় একটু ভালগার মনে হলেও, সেরা কমেডিয়ান। মাতুল আর একজনকে দেখিয়ে বললেন, এঁকে চিনিস?

আজ্ঞে না।

সেকী রে! ইনি হলেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য।

মানুষটিকে ভাল করে একবার দেখার ইচ্ছে হল। গানে গানে পাগল করে রেখেছেন। আজ দুপুরেই শুনেছি বাঁকা ভুরু মাঝে আঁকা টিপখানি, আঁখি হিল্লোলে মরিমরি, কী ছাদে বেঁধেছ। কবরী। যেমন কণ্ঠ তেমনি আবেগ। আমাদের পাড়ায় বিশাল এক ফাংশনে এসেছিলেন। প্যান্ডেলে যারা ঢুকতে পারেননি, এইরকম কয়েক হাজার শ্রোতা দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে বসেছিলেন। শিল্পীর এমনই জনপ্রিয়তা, মাইকে যেই বললেন, আমার অনুরোধ, গান শোনার জিনিস, দেখার নয়, আপনারা শান্ত হয়ে বাইরে থেকেই শুনুন, অমনি সব গোলমাল থেমে গেল।

মাতুল কাগজটা কিনলেন। মুকুর জন্যে কিনলেন শার্লক হোমসের হাউন্ডস অফ বাস্কারভিল। মাতুলকে হঠাৎ কেনায় পেয়ে বসল। লজেন্স, চকোলেট, মুসাম্বি, চোখে যা পড়ছে সবই কিনছেন, শেষে একটা ব্যাগ কিনে সব ভরে ফেললেন।

বোঝার আয়তন দেখে মুকু কেমন যেন বিব্রত হয়ে পড়ল। বলা উচিত নয়, মেসোমশাই কৃপণ না হলেও বেশ হিসেবি। মেয়েকে কখনও কোনও উপহার কিনে দিয়েছেন বলে মনে হয় না। অথচ মানুষ উপহার পেতে ভালবাসে। মেয়েরা আরও বেশি।

পিতা বললেন, বেশ করেছ। এসব ব্যাপারে তোমার কোনও তুলনা হয় না। তোমার মনটা হল রাজপথের মতো।

ভসভস শব্দ করতে করতে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে লাগল। শুরু হয়ে গেল প্রাথমিক খণ্ডযুদ্ধ। আমাদের চিন্তা নেই, রিজার্ভেশন আছে। অবস্থা মোটামুটি আয়ত্তে আসতেই মেসোমশাই বললেন, এবার তা হলে এগোনো যাক। মিনিট দশেক আর সময় আছে।

কম্পার্টমেন্টের বাইরে নামের লিস্ট আর টিকিট নম্বর ঝুলছে। সেই দেখে মেসোমশাইদের স্থান খুঁজে নিতে অসুবিধে হল না। সহযাত্রীদেরও বেশ ভাল বলেই মনে হল। উলটো দিকের বার্থে স্বামী-স্ত্রী। চাকরি নিয়ে বিদেশে চলেছেন। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীই বেশি চটপটে। তাদের মাথার ওপর একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। মেসোমশাইয়ের মাথার ওপর একজন যুবক। যেমন স্বাস্থ্যবান, তেমনি সুরূপ। চা বাগানের মালিক। কলকাতায় এসেছিলেন বন্দুকের কার্তুজ কিনতে, আর নতুন একটা গাড়ি বুক করতে। সঙ্গে এক পাঁজা ঝকঝকে ভাল ভাল বই সংস্কৃতির পরিচয় দিচ্ছে। মাতুলের সঙ্গে পরিচয় বেরিয়ে গেল। ছেলেটির মা আর মাতুল একই গুরুর কাছে সংগীত শিক্ষা করেছেন। ছেলেটি ভদ্রতা জানেন। পরিচয় বেরিয়ে পড়তেই মাতুলকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন।

চাকরেবাবুর স্ত্রী আড়ে আড়ে মাতুলকে দেখছিলেন। না দেখে উপায় নেই। এমন খাপ-খোলা তরোয়ালের মতো চেহারা সহজে চোখে পড়ে না। হিংসে করার মতো অভিজাত চেহারা। আমার মাতামহেরই কৃতিত্ব। রক্তের ধারায় গন্ধর্ব আর কিন্নরের বীজ ঘুরছে।

যা ভেবেছিলুম তাই, মেসোমশাই যুবকটিকে লুফে নিলেন। সারাটা পথ কবজা করার চেষ্টা করবেন। স্বার্থসিদ্ধি করতে গিয়ে বড় মেয়েটিকে খুইয়েছেন। হয়তো পড়েছেন, অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। লোভ জাগলে সে কথা আর মনে থাকে না। মানুষ নামক প্রাণীর এইটাই মনে হয় স্বধর্ম। ভুল, আবার ভুল, ভুলের ওপর ভুল, অবশেষে সেই স্কুপ চাপা পড়ে মৃত্যু।

গার্ডের বাঁশি বেজে উঠল। আচ্ছা আসি, সাবধানে যাবেন, মাকে আপনার কথা বলব, গিয়ে চিঠি ইত্যাদি মিলিত মিশ্রিত কথার স্রোত ঠেলে আমরা প্ল্যাটফর্মে নেমে এলুম। সেই মহিলা তখনও মাতুলের দিকে ‘সতৃষ্ণ নয়ন’ বলে যাকে, সেই চোখে তাকিয়ে আছেন। ওঁর স্বামীটির জন্যে বড় বেদনা হল। সংসারকে জ্ঞানীরা এমনিই বলছেন- ধোঁকার টাটি, মাতুলের মুখে কবীরের ভজন শুনেছি, কঙ্কর চুন চুন মহল বানায়া, লোভ কহে ঘর মেরা, না ঘর মেরা, না ঘর তেরা, তারপর ভুলে গেছি। সেই সংসারী মানুষ যদি এমন স্ত্রীর সঙ্গে ঘর বাঁধেন, যাঁর আঁখিপাখি খাঁচাছাড়া, তার অবস্থা কী হবে! বসে থাকতে হবে পথ চেয়ে। যৌবনের পালক ঝরে গিয়ে স্ত্রী যতদিন না রোঁয়া-ওঠা শালিক হচ্ছেন ততদিন বালুকাবেলায় বসবাস।

মুকু ইশারায় জানলার কাছে সরে আসতে বলল। ট্রেনের শেষ পতাকা গার্ডের কামরার কাছে দোল খাচ্ছে। পাশের কম্পার্টমেন্টের জানলার কাছে একটি শিশু মায়ের কোলে ঝিকি মেরে মেরে কাঁদছে আর চিৎকার করছে, বাবা বাবা। মেয়েটির বাবা জানলা দিয়ে হাত বের করে ক্রমান্বয়ে নাড়ছেন। ড্রাইভারে আর গার্ডসায়েবে পতাকায় পতাকায় কথা হচ্ছে, ভেঙে দে, ভেঙে দে, মিলনমেলা ভেঙে দে। আর সময় নেই। ইঞ্জিনে গতির টান লেগেছে। কী আশ্চর্য! মুকু কিছু বলছে না কেন?

বলো, কিছু বলো।

মুকু বললে, বাড়ি গিয়ে মায়ের ছবির পেছনটা একবার দেখো।

ট্রেন ধীরে ধীরে সামনে এগোচ্ছে। মুকু চট করে আমার হাতের মুঠোয় একটা চিরকুট গুঁজে দিল। গতির টানে হাত থেকে হাত খুলে গেল। মুকু আমার হাতে কী গুঁজে দিল, দেখতে গিয়ে যেই মুঠো খুললুম, চলমান ট্রেনের নিশ্বাসে একটুকরো কাগজ উড়তে উড়তে ট্রেন আর প্ল্যাটফর্মের খাঁজে ঢুকে গেল।

পেছন থেকে পিতা আর মাতুল বলছেন, চলে এসো, চলে এসো।

কথা আমার কানে ঢুকছে না। লাইনে আর অপসৃয়মান সরীসৃপের চাকায় চাকায় ঝটাপটির শব্দ হচ্ছে। দূরে ইঞ্জিনে তাল ধরেছে, ভেঙে যায় চুরে যায়, ভেঙে যায় চুরে যায়। হাত নেড়ে বললুম, যাচ্ছি।

ঠ্যাঙা গার্ডের কামরা, এক জোড়া নুলো হাতের মতো বাফার আর লাল আলো নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। শূন্য প্ল্যাটফর্ম আর অনেক নীচে জোড়া জোড়া লাইন। রত্ন হারিয়ে মানুষ যে-চোখে তাকায় সেই চোখে পাতা লাইনের দিকে তাকালুম, যদি পাই লাফিয়ে পড়ব। কোথায় কী! এক টুকরো কাগজের বদলে অসংখ্য টুকরো পড়ে আছে। পড়ে আছে কলার খোসা, ডাবের খোলা, তেল কালি, কয়লা ছাই।

কাঁধে হাতের স্পর্শ। মাতুল বললেন, চলে আয়। স্মৃতি লাইনে কেউ ফেলে যায় না, রেখে যায়। মনে। কত যাবে, কত আসবে, মন খারাপ করলে চলে! ভাবকে চেপে রাখবি মনে, তবে সে ঠেল মারবে সৃষ্টিতে!

মাতুল বীরের মতো বলছেন বটে, কিন্তু তারও চোখদুটি ছলছল করছে। চশমার কাঁচে আলো পড়লেও দেখা যাচ্ছে। মাতুল শিল্পী মানুষ, তিনি সৃষ্টির কথা বলতে পারেন, আমার তো সবই। অনাসৃষ্টি।

এসেছিলুম পাঁচ জন। ফিরে চলেছি তিন জন। ঘটনা প্রতি মুহূর্তেই জীবনের সার কথা বলে যেতে চায়। পাগল ছাড়া কেউ বোঝে না। আমাদের মণিপাগলি বেশ বলে, সুর করে গায়, আমার দিন থাকে না, আমার রাত থাকে না। আমার প্রাণ থাকে না, আমার মান থাকে না। তারপর মার্চিং সঙের মতো ধমকে ধমকে বলতে থাকে, দশ, নয়, আট, সাত, ছয়, পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক, শূন্য, ফক্কা ফাঁক।

মাতুল পিতাকে বললেন, চলুন, আজ আপনাকে সারা কলকাতা ঘোরাব। এমন সুন্দর রাত! দখিনা বাতাস বইছে।

কলকাতায় কী ঘুরবে! শুধু শুধু সময় নষ্ট। চলো বাড়ি ফিরে যাই।

কাল তো রবিবার! ভয় পাচ্ছেন কেন? অদ্যই শেষ রজনী। কাল তো আর গাড়ি থাকবে না! কলকাতার শনিবারের রাত দেখে নিন। কতদিন পরে আবার আপনার সঙ্গে দেখা হবে! আপনি আমার পিতার মতো, নেকস্ট টু মাই ফাদার!

তোমার কথায় আজ বড় বৈরাগ্যের সুর বাজছে। ব্যাপারটা কী বলো তো! তখন বললে পথের সন্ধান পেয়েছ, সমস্যার সমাধান করে ফেলেছ। খুলে বলো তো!

মাতুল চালককে বললেন, পার্ক স্ট্রিট চলল। তারপর পিতাকে বললেন, সহজ সমাধান। সিম্পল সলিউশন। ছবিটা যে-অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাতেই পড়ে থাক। গাড়িটা বেচে দিয়েছি। সেই টাকায় ছোটখাটো দেনা শোধ। আমি একটা চাকরি পেয়েছি।

সে কী? চাকরি! দাসত্ব তোমার মেজাজে ধরবে না। তুমি রজোগুণী মানুষ!

চাকরিটা একটু অন্যরকম, তাই সাহস করে নিতে পেরেছি। টিসকোর একটা মিউজিক কলেজ আছে। সেই কলেজে প্রিন্সিপ্যালের চাকরি। মনে হয় দশটা-পাঁচটার ব্যাপার নয়। মাইনেও ভাল। যদি কিছু টাকা জমাতে পারি, যদি একজন ফাঁইনান্সার পাই, ছবিটা শেষ করব। যদি হিট করে, এক সপ্তাহে টাকা উঠে আসবে, তখন বাড়িটার মর্টগেজ ছাড়াব। গয়না উদ্ধার করব। এক মাস যদি রমরম করে চলে, মধুপুরের বাড়িটার সংস্কার করব, নতুন আর একটা ছবি করব।

সবই ভাল, তবে কী জানো, বড় বেশি যদি রয়েছে। যদিগুলোকে যদি বাদ দিতে পারতে!

আজ্ঞে টাকার অভাব হলেই যদি আসবে। একমাত্র টাকাতেই যদির উৎপাটন সম্ভব! টাকাই হল সুপ্রিম ডেনটিস্ট।

তোমার বুঝি সেইরকম ধারণা?

আজ্ঞে হ্যাঁ। টাকা হল জার্মান ট্যাঙ্কের মতো, গড়গড়িয়ে চলে।

খুব ভাল ধারণা হে! এই তো একজন মানিড ম্যানকে আমরা সি-অফ করে এলুম। তিনি কি সুখী! টাকা তার জীবন-সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? পারেনি। একটা মজার ইংরিজি উক্তি শোনো, মন দিয়ে শুনবে, অনেক ‘পান’ আছে: The only incurable troubles of the rich are the troubles that money cannot cure. /Which is a kind of trouble which is even more trou blesome if you are poor. শুনলে?

আজ্ঞে হ্যাঁ, তবে ও হল গরিবের দ্রাক্ষাফল টক জাতীয় কথা। পিতা শব্দ করে হাসলেন, হেসে বললেন, তা হতে পারে, বড়লোক না হলে যাচাই করা যাবে না।

টাকার দুটো পিঠই যে সমান, টাকা না হলে বুঝি কী করে!

প্রসঙ্গ পালটে পিতা বললেন, ও অমন ম্যাদামারা হয়ে বসে আছে কেন?

আমার কথা হচ্ছে। মাতুল বললেন, মন খারাপ হয়েছে। মা-মরা ছেলেরা সকলকে বড় আঁকড়ে ধরতে চায়। বড় ভাবপ্রবণ হয়। মনে একটা শূন্যতা নিয়ে ঘোরাফেরা করে।

তা বললে তো চলবে না। তোমার ইমোশনকে কে বসে বসে পাখার বাতাস করবে? মনকে শক্ত করতে হবে। যোদ্ধা হতে হবে।

মাতুল বললেন, বি চিয়ারফুল মাই বয়।

পেছনের কোনও কথাই আমার তেমন কানে যাচ্ছে না। আমি ভাবছি মুকু শেষ মুহূর্তে আমার হাতে যে চিরকুটটা গুঁজে দিয়েছিল, তাতে কী লেখা ছিল? কী এমন কথা যা মুখে বলা যায় না! অদৃষ্টলিপির মতো যা ট্রেনের চাকায় চাকায়, ইঞ্জিনের নিশ্বাসের টানে উধাও হয়ে গেল! কী লেখা ছিল! মায়ের ছবির পেছনে কী আছে! কী রেখে গেছে মুকু! এই আলোকিত পার্ক স্ট্রিট, এই রাতের কলকাতায় উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াবার প্রস্তাব, কোনওটাই আমার ভাল লাগছে না।

মাতুলের নির্দেশে গাড়ি রাস্তার বাঁ দিকে থেমে পড়ল। আমাদের নামতে বললেন। সামনেই খুব ভদ্র চেহারার সায়েবি রেস্তোরাঁ। সামনের দিকটা পুরো কাঁচ দিয়ে ঢাকা। ভেতরে মোম-মোলায়েম আলোর বাহার। যাঁরা বসে আছেন, তাদের বাইরে থেকে যতটুকু দেখা যাচ্ছে, তাইতেই মনে হচ্ছে ফিল্টার করা ভদ্রলোক।

পিতা বললেন, এখানে তুমি কী করবে?

আপনাকে এক কাপ সর্বাঙ্গসুন্দর চা খাওয়াব, আর দু-একটা সুইস প্যাস্ট্রি।

বড় ফ্যাশানেবল জায়গা যে! কৃত্রিম মানুষে ভরা। এখানে খাওয়ার চেয়ে খাওয়ার ভড়ংটাই বড় হয়ে উঠবে, জয়।

ও আপনি একটু ক্ষমাঘেন্না করে নেবেন। চায়ের তৃষ্ণাটা মিটিয়ে নিই। এই শহরে আজ আমার শেষ রাতের আগের রাত। আজ একটু বেহিসাবি হতে দিন।

বেহিসাবি? তোমার বেহিসেবটাই তো হিসেব, জয়! শিল্পীর জীবন, তোমাকে ক্ষমা করা যায়। তুমি যদি খেরোর খাতা খুলে বসো বড় বেমানান হবে! কবে যাচ্ছ তুমি?

কালকের দিনটা আছি।

মাতুলের সঙ্গে আমরা রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়লুম। এলাহি ব্যাপার। পিতা কিন্তু বেশ মানিয়ে নিলেন। একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব বেরিয়ে এল। মনে হল রোজই তিনি সকাল-বিকেল এখানে চা খেতে আসেন। ওঁরা কথা বলতে লাগলেন, আমি তাকিয়ে রইলুম দেয়ালে সাঁদ করানো বিশাল অ্যাকোরিয়ামের দিকে। স্বপ্ন ভরা, কাঁচের চৌকো আধার। আলোর তরল ধারায় রঙিন ইচ্ছের মতো মাছ ঘুরপাক খাচ্ছে। ঠিক নীচেই বসেছেন একজন পুরুষ আর মহিলা পাশাপাশি। দুজনেই সুন্দর। মহিলার মুখ চোখ ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সুখের সমুদ্রে পদ্মের মতো পাপড়ি মেলেছেন। বাতাসে নৌকা ভাসিয়েছেন। আমার ভীষণ মুকুর কথা মনে পড়ছে। আজ থেকে হয়তো সাত বছর পরে ওইরকম কোনও সুবেশ সুন্দর তরুণের সঙ্গে মুকু ঠিক ওই জায়গাটিতে এসে বসবে। ওইরকম সুখী চেহারা নিয়ে। পেছনে মাছ খেলবে। ঘাড় একপাশে কাত। বড় ঘনিষ্ঠ। কুচকুচে কালো চুলের চকমকে খোঁপা পিঠের কাছে, একমুঠো নরম কামনার মতো দলা পাকিয়ে থাকবে। কী আশ্চর্য মানুষের মন। পাশেই বসে আছেন দুই গুরুজন। আর আমি কী সব ভাবছি! মানুষের আগুন কীভাবে জ্বলে ওঠে! জলে ভাসমান এক টুকরো জ্বলন্ত কর্পূরের মতো!

বড় সুস্বাদু প্যাস্ট্রি। জিভে পড়ামাত্র মিলিয়ে যাচ্ছে চকোলেটের গন্ধ নিয়ে। চায়ের তেমন কোনও আহামরি বুঝছি না। পিতা কিন্তু খুব তারিফ করছেন। বলছেন, রিয়েল ইংলিশ টি।

পিতা বললেন, তুমি কি একলা যাচ্ছ?

না, সপরিবারে।

থাকার ব্যবস্থা?

ভাল কোয়ার্টার।

বেশ, তা তোমার পিতৃদেব?

নিয়ে যাওয়া যাবে না। তিনি একই দিনে রওনা হচ্ছেন হরিদ্বার। আটকানো গেল না।

কই আমাকে তো কিছু বললেন না?

নিশ্চয়ই বলবেন। আপনি ওঁর বড় ছেলে। আমার ওপর ভীষণ অভিমান হয়েছে। অভিমান হলেই ওঁর বৈরাগ্য আসে।

তুমি কী বুঝবে বলো! একে বলে, ওয়ান চাইল্ড সিন। ওঁর আর আমার একই অবস্থা!

বিল এসে গেল। পিতৃদেব আর মাতুল একসঙ্গে হাত বাড়ালেন। মাতুল বললেন, এটা আমার বিষয়।

পিতা বললেন, পাগল হয়েছ, জীবনে আমি কখনও অন্যের পয়সায় খাইনি, তুমি আমার সে রেকর্ড নষ্ট করে দিতে পারো না! তা হলে তোমার অপরাধ হবে। তা ছাড়া, আমার বয়েস। বয়েসটার কথা একবার ভাবো!

বয়েস আমি ভাবতে রাজি আছি। আপনি আমার চেয়ে বড়। বয়েসে, সম্মানে; কিন্তু পরের পয়সা! কথাটায় বড় আঘাত পেলুম। আমি তো কখনও আপনাকে পর ভাবিনি। আপনি আমি আর দিদি একই বিছানায় দিনের পর দিন শুয়েছি। অসুখে আপনি আমার সেবা করেছেন। সেসব ঋণ আমি জীবনে শোধ করতে পারব।

স্নেহের ঋণ অর্থে শোধ করা যায় না, জয়। সে চেষ্টা কোরো না। পৃথিবীটা তা হলে বিশাল এক গোলদারি দোকান হয়ে বসবে। কারেন্সি নোটে স্নেহ বিক্রি হবে। দশ টাকার ভালবাসা, বিশ টাকার ভালবাসা।

মাতুল করুণ মুখে বললেন, আপনার হিসেব থেকে একটা দিন আমাকে দিন, ওনলি ওয়ান ডে, তা না হলে মনে হবে, আপনি আমাকে পপার ভাবছেন!

যেদিন তুমি প্রকৃত নিঃস্ব হবে সেদিন তো তুমি আরও কাছে চলে আসবে। মনে আছে, তুমি আমার কোলে বসে প্রথম আসরে গান গেয়েছিলে, একটি ভজন, জয় রঘুপতি, শ্রীরামচন্দ্র, সীতাপতি রঘুরাই। শ্রোতারা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিভা মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়, আর তখনই সে হয় প্রকৃত ধনী।

মাতুল করুণ মুখে বললেন, তা হলে আমি কী করব! আমার যে বড় আশা ছিল।

ঠিক আছে, আজ তুমিই দাও। অনুমতি দিলুম।

সামান্য ব্যাপার কত অসামান্য হয়ে ওঠে। মাতুলের মুখ দেখে মনে হল হাতে স্বর্গ পেলেন। টাকাপয়সা মিটিয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে এলুম। রাত যেন আরও মদির হয়েছে।

মাতুল বললেন, এইবার আমরা আর এক জায়গায় যাব, যেখানে গেলে আপনি ভীষণ খুশি হবেন।

কোথায়?

আমার গুরু এসেছেন, অনেকদিন পরে এই কলকাতায়।

তোমার তো তিনজন গুরু।

শেষ তালিম যার কাছে, সেই বিখ্যাত বিনায়ক রাও পটবর্ধন।

বলো কী। তিনি এসেছেন! কোথায় উঠেছেন?

প্রিটোরিয়া স্ট্রিটের এক বাড়িতে।

চলো তা হলে?

নিউ মার্কেট থেকে তা হলে কিছু ফল আর ফুল কিনে নিই। বড় সাত্ত্বিক মানুষ। এক ভরি ভাল আতর কিনতে পারলে বেশ হত।

আতর তুমি এ পাড়ায় পাবে না, ছুটতে হবে কলুটোলা।

নিউ মার্কেটের দিকে গাড়ি ঘুরল। ফলের বাজার লাল করে রেখেছে আপেল। আঙুর এসেছে। আপেলের দাপটে ন্যাসপাতি কোণঠাসা। দেখতে দেখতে ঠোঙা ভরে উঠল। থরে থরে সাজানো শুকনো ফল। নিজেকে মনে হচ্ছে ওমর খৈয়াম। পারস্যের কোনও এক অতীত রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আধঘণ্টার মধ্যেই মাতুলের আশি টাকা শেষ। গাড়ি চলেছে প্রিটোরিয়া স্ট্রিটের দিকে। ফল আর মেওয়ার গন্ধ ফুলের গন্ধের সঙ্গে মিশে নতুন এক সুগন্ধ তৈরি করেছে। মনে হচ্ছে এখুনি বুলবুল শিস দিয়ে উঠবে।

দেবদারু গাছ দিয়ে ঘেরা সাবেক আমলের বিশাল এক বাড়ি। কলকাতার নির্জনতম এলাকা। যত না রাত, মনে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি রাত জমেছে এ তল্লাটে। আদ্যিকালের আলোকস্তম্ভ থেকে পাণ্ডুর আলো অন্ধকারের নিতম্বে সামান্য লজ্জাবস্ত্রের মতো দুলছে।

সামনেই বিশাল গেট। গেটের বাইরে আলোকিত কাঁচের ফলকে গৃহস্বামীর নাম ও নম্বর। মোরাম-বিছানো পথ বাঁ দিকে চলে গেছে ভদ্র মোচড় মেরে, অতি গভীর এক গাড়িবারান্দার দিকে। সেখানে সাদা একটা ডুম থেকে বৈধব্যের আঁচলের মতো আলো লুটিয়ে পড়েছে। গাড়ির চাকায় চাকায় মোরামের মুমূর্ষ আর্তনাদ।

প্রাসাদের মতো বিশাল বাড়িটি যেন সুরসাগরে ভাসছে। কোথাও কোনও এক জায়গায় একসঙ্গে গোটা তিনেক তানপুরা বাজছে। মাতামহ ঠিকই বলেন, সুরে বাঁধা তানপুরায় হরি ওঁ, হরি ওঁ শব্দ ওঠে। গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হতেই, দেবদারুর পাতায় পাতায় বাতাসের শব্দের সঙ্গে সুর ভেসে এল। ভেতরে আলাপ চলেছে। ভরাট নিটোল কণ্ঠ।

গাড়ি থেকে নেমে আমরা তিনজন কিছুক্ষণ স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে রইলুম। সুরে অবগাহন। পাথরের সিঁড়ি ধাপে ধাপে উঠে গেছে পালিশ করা বিশাল দরজার দিকে। সেখানে ঝকঝক করছে পেতলের হাতল। একটি মকরের মুখ।

মাতুল ফিসফিস করে বললেন, আহা মারু বেহাগ।

আমাদের অবস্থা ফণা-তোলা সাপের মতো। স্থির হয়ে গেছি। নড়তে চড়তে পারছি না। শরীর প্রতিটি কোষ দিয়ে আরকের মতো সুর শুষছে। ইতিমধ্যে আলাপ থেকে শিল্পী নেমে এসেছেন বাণীতে,

ভবানী স্তোতুং ত্বাং প্রভবতি চতুর্ভিনবদনৈঃ
প্রজানামীশোন ত্রিপুরমথনঃ পঞ্চভিরপি।

ধরতাই ভবানী শব্দটি খাদ থেকে একেবারে তারায় চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কুণ্ডলিনী শক্তি সাধকের সহস্রার ভেদ করে জ্যোতিলোকে চলে যাচ্ছে।

আমরা সিঁড়ি বেয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ধাপে ধাপে উঠছি। হাতে ফল। একগুচ্ছ সাদা গোলাপ।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন