১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়;
কার কি জানি কখন সন্ধে হয়।

খামটার দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। খুলব কি খুলব না। কত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মনের গতি পালটে যায়। হঠাৎ দেহমুখী হয়ে উঠেছিল। আকার, আকৃতি, কণ্ঠস্বর, মহিলাদের অন্তর্বাস, অলংকারের শব্দ, শ্বাসপ্রশ্বাস, স্পর্শ যেন মধুর মতো মন-মাছিকে টেনে নিত। নিজেকে মনে হত প্রবৃত্তির অতলে এক বৃহৎ অক্টোপাস। সবকটা শুড় দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা। মনের ম্যালেরিয়া হঠাৎ কোন কুইনিনে ছেড়ে গেল! ছেড়েছে, না আবার কেঁপে কেঁপে আসবে!

পিতৃদেব ঠিকই বলতেন, ঈশ্বরটিশ্বর জানি না বাপু, সার কথা হল নিজের ওপর নিজের কর্তৃত্ব। দূরে বসে নিজেকে দেখো। যেই বেচাল দেখবে উঠে এসে কান ধরে মারো দুই থাপ্পড়। নিজের। শাসনে নিজেকে না রাখতে পারলে সব অনুশাসনই কাগজের ওপর কালো কালির হরফ।

আজ এই ঊষাকালে প্রথম বুঝলুম, এর চেয়ে সত্য আর কিছু নেই। কী আমি গুরু গুরু করে বাইরে ঘুরে মরছি। মন না রাঙায়ে কাপড় রাঙালে কী হবে যোগী! মন্দিরে তোর নেইকো মাধব শাক কুঁকে গোল করলি পোদো। মাধবকে আগে বসাতে হবে। যার পিতা এমন তার কি অমন হওয়া সাজে! সবাই বলে আমগাছে আমই হয়, আমড়া হয় না। তা হলে! তা হলে, এসব আমি কী ভাবি। কেন আমি ওসব করি! কী পাওয়া যায় ওতে! জীবনের পথ কোন মহাশিখরের দিকে চলে গেছে। অমৃতের পথ। আত্মোপলব্ধির পথ।

It rises through the mortal’s hemisphere
Till borne by runners of the day and dusk.
It enters the occult Eternal Light
And clambers whitening to the invisible Throne.

নাঃ, আর নাচের পুতুলের মতো নাচব না। এ একটা সুতো ধরে টানবে হাতটা নেচে উঠবে। ও টানবে নেচে উঠবে পা। সবকটা সুতো ধরে তালে তালে টানবে, কাঠের পুতুল কোমর-উঁচু মঞ্চে ঘুরে ঘুরে নাচবে। আর না। এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে সেই অসাধারণ দুটি লাইন,

The conscious Doll is pushed
a hundred ways
And feels the push but not
the hands that drive.

গোটাকতক হাত আমি দেখতে পেয়েছি। একটা হাত হল এই খাম। এই হাতে একটি সুতো ধরা আছে। নাচালেই নাচতে হবে। দর্শকশূন্য মঞ্চে নিঃসঙ্গ নৃত্য। বাহবা বলে কেউ তালিও বাজাবে না। বেড়াল যেমন ইঁদুর মেরে দু’হাত দূরে বসে থাকে, আমারও সেই অবস্থা। বহু দূরে একটি হাত সুতো ধরে বসে আছে। আমার সামনে পড়ে আছে টোপ। নির্বুদ্ধি মাছ মাঝে মাঝেই হাঁ করছে। গিলেছে কি মরেছে!

সময় আর বেশি নেই। মন বলছে, ওহে! লগন যে বয়ে যায়। খুলে ফেলল। দেখো কী রহস্য আছে! তোমার জন্যে একটা আংটি আছে। শ্যামদেশের টুকটুকে লাল রুবি বসানো খুব সুন্দর একটি আংটি। যুবতীর নিবেদিত প্রেম। দীর্ঘ একটি চিঠিও আছে। সেই চিঠিতে তুমি হয়তো একটি পরিবারের অনেক গোপন কথা জানতে পারবে। জানতে পাবে একটি মেয়ের হঠাৎ নিরুদ্দেশের কাহিনি। হয়তো অনুসন্ধানের কিছু সূত্রও পেয়ে যেতে পারো। তাতে আমার লাভ? আমি কি গোয়েন্দা? আচ্ছা এই লেফাফায় যদি একটি দীর্ঘ পত্র থাকে, যে-পত্রের ছত্রে ছত্রে মুকু নামক একটি মেয়ের আবেগ উষ্ণ ভালবাসা থাকবেই এমন কোনও কথা নেই, যদি থাকে তা হলে আমার কী হবে? মনে বেশ একটা দোলা লাগবে। কিছুদিন বেশ কেটে যাবে আবার এক নতুন নেশার ঘোরে। চিঠির উত্তরে চিঠি। তার উত্তরে চিঠি। চলতে থাকবে উত্তর-প্রত্যুত্তরের খেলা। তারপর যা হয়, মন্থর হয়ে আসবে আদানপ্রদান। যোগাযোগের অক্ষর-সেতু স্তবকে স্তবকে খুলে পড়ে যাবে সময়ের স্রোতে। স্মৃতি ছাড়া কিছুই আর থাকবে না। আমি তো আর কিং আর্থার নই যে ঘোড়ার পিঠে চেপে ট্রালা ট্রালা করে উদ্ধার করতে ছুটব আমার লেডি-ইন-ডিস্ট্রেসকে। কনক আমার দুর্বলতা। মুকু আমার পরিচিতা। কনকের জন্যে আমি অনেক দূর যেতে প্রস্তুত ছিলুম। সেও একতরফা। কনক আমার জন্যে এক পা-ও যেতে প্রস্তুত ছিল না। সে কথা এখন স্পষ্ট। থাকলে এতদিনে আমাকে অন্তত একটা চিঠি দিত। একটা পোস্টকার্ড, গোটা দুয়েক লাইন। এ বাড়ি থেকে সেই জমিদারপুত্রের বাড়িতে অত সহজে চলে যেত না। স্টুডিয়োতে যেদিন দেখা হল সেদিন মনে হল প্রতাপবাবুকে সে মেনে নিয়েছে। হাবভাবে তেমন কোনও বিদ্রোহ নেই। ওই স্বার্থপর মেসোমশাইয়ের মেয়েরা খুব উদার হবে, ভাবাটাই অন্যায়। ফল তোমার পরিচয়? বৃক্ষে। ওই আইনজীবী ভদ্রলোক আর তার দ্বিতীয় কন্যাটির পাশে পঙ্কজবাবু আর অপর্ণা। মন! তুমি কী বলে? আকাশ আর পাতাল। ফাঁদে যদি পড়তে চাও, কোন ফাঁদ! আর প্রশ্ন নয়। কোনও দেই আর এ শর্মা ধরা দেবে না। সংসারী মানুষ শেষটায় এমন ন্যাতাজোবড়া হয়ে যায়। মৃত্যু, অসুখ, উপেক্ষা, উদ্বেগ, অর্থাভাব, অভিমান। সার সার চৌরাশীটি নরকের কুণ্ড, তাহাতে ডুবায়ে ধরি পাতকীর মুণ্ড। ডাঙশ যমদূতকে আর মারতে হয় না, পরিবার পরিজনেই মেরে শেষ করে দেয়। তুমি বীর্যবান হও, মোহশূন্য হও। চোখকান বুজিয়ে যৌবনটি পার করে দাও।

শ্রীশ্রীসদগুরুর সঙ্গে ব্রহ্মচারীজির জীবনের আর একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল। পরমাসুন্দরী পূর্ণযৌবনা ব্রাহ্মণকন্যা কাদোক্কাদো স্বরে বলছেন, ‘ভেতরে অসহ্য জ্বালা আর আমি সহ্য করতে পারি না, তোমাকে মনে পড়লেই আমার বিষম অবস্থা উপস্থিত হয়। ভোগের লালসায় অস্থির হয়ে পড়ি। আমার এই কামনার পরিতৃপ্তি কর।’

ব্রহ্মচারী বললেন, এক সময় তোমার উপরেও আমার ভয়ানক লোভ ছিল। গুরুদেব তা এখন শান্ত করেছেন। ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করেছি। চিরকালের জন্যে ওসব কাজে বঞ্চিত হয়েছি। যুবতী বললেন, তা হলে আমার এই ভাব যাতে নষ্ট হয়ে যায়, তার উপায় বলে দাও, আমি আর এ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না।

ব্রহ্মচারী বললেন, তুমি নিশ্চিন্ত হও, নিশ্চয়ই আমি তোমার শান্তির ব্যবস্থা করব।’

শোনো মন, মন দিয়ে শোনো, ওই লেফাফাটি ধরার আগে কুম্ভীপাক কাকে বলে আর একবার শুনে নাও। সেই যুবতী সময় পেলেই ব্রহ্মচারীর কাছে এসে বসতেন, ধর্মকথা সদুপদেশ শুনতেন, আর থেকে থেকেই কাতরভাবে বলতেন, অসহ্য জ্বালা, অসহ্য জ্বালা। যা হয় একটা কিছু করো। তুমি হলে কী করতে মন! এখন যা করছ তাই করতে। ব্রহ্মচারী কী করলেন শোনো।

যদিও কামোন্মত্তা কামিনীর কমনীয় অঙ্গস্পর্শে দেবদুর্লভ ব্রহ্মচর্যের অতুলনীয় অমৃতফল ইতিপূর্বেই আমি হারাইয়াছিলাম, তথাপি বর্তমানে গুরুর কৃপায় কামশূন্য অচঞ্চল অবস্থায় অতিরিক্ত গর্বিত থাকাতে, আমি ভাবিলাম শুনিয়াছি বিশুদ্ধ নির্মল হৃদয়ে, নির্বিকার কামশূন্য অবস্থায়, কোনও ব্যক্তি প্রকৃতির রতিমন্দিরে মহাশক্তির পূজা করিলে, তাহাতে কামিনীর কামের উপশম হয়, এবং উপাসকেরও প্রকৃত অবস্থার পরীক্ষা হয়। ভাল আমি তাহাই করি না কেন? যুবতীর অঙ্গস্পর্শ করিতেই আমার নিষেধ, কিন্তু দূর হইতে পূজা করিতে দোষ কি?

তারপর! মাঘ মাসের কোনও এক পবিত্র তিথিতে!

সুযোগ এসে গেল। এই অনুচ্ছেদটি যতবার পড়ি গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

‘জনপ্রাণীশূন্য কোন এক নিভৃত স্থানে অবিলম্বে আমরা পৌঁছিলাম। পরে আসনে উপবেশনপূর্বক কামিনীকে কিঞ্চিৎ অন্তরে অবস্থান করিতে বলিলাম।’

পূজারির সামনে যজ্ঞবেদি, যজ্ঞের কাঠ, ঘি, বেলপাতা, অতসী, জবা, অপরাজিতা, ধূপ, ধুনো, চন্দন। সময় দিবা দ্বিপ্রহর। শ্রীশ্রীচণ্ডীর কিছু অংশ পাঠ করলেন, গায়ত্রী জপ করলেন। যজ্ঞাগ্নি জ্বলে উঠল।

‘কামিনী আমার ইঙ্গিতানুসারে প্রহৃষ্ট অন্তরে অমনি উলঙ্গিনী হইয়া দাঁড়াইলেন। তখন দেবীর অভীপ্সিতা অতসী, অপরাজিতা, জবা, বিদল অঞ্জলি পুরিয়া মস্তকে ধারণ করিলাম। পরে চণ্ডীর যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, ইত্যাদি মন্ত্র উচ্চৈঃস্বরে পঠনান্তর পুনঃপুনঃ নমস্কার করিয়া, সঙ্গে সঙ্গে রমণীর নখাগ্র হইতে কেশাগ্র পর্যন্ত, প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থিরভাবে মনোযোগ পূর্বক নিরীক্ষণ করিতে লাগিলাম। আশ্চর্য দেখিলাম– অকস্মাৎ উহার নাভিস্তর হইতে উরুদ্বয়ের মধ্যদেশ পর্যন্ত, গোলাকৃতি নিবিড় কালো ছায়ায় একেবারে আবৃত হইয়া পড়িল; মধ্যাহ্নে প্রশস্ত সূর্যালোকে চতুর্দিক আলোকিত। আচম্বিতে গৌরাঙ্গীর অঙ্গবিশেষে মহাকালীর আবির্ভাব হইল। বহুক্ষণ বারংবার দৃষ্টি করিয়াও, ঘন কৃষ্ণবর্ণের অন্তরালে দীপ্তিময়ী কাল বিজলীর ঝিকিমিকি ব্যতীত আর কিছুই দেখিলাম না। অসম্ভব দৃশ্য দেখিয়া আমার সর্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত হইল।’

কিন্তু তারপর কী হল!

‘অবাক হইয়া তাকাইয়া রহিলাম। তখন দেখিলাম, রমণীর গৌর মুখমণ্ডল রক্তিমাভ হইয়া ওষ্ঠাধর ঈষৎ কম্পিত হইতেছে; কুঞ্চিত নয়নে দৃষ্টিসঞ্চালন পূর্বক মনোহারিণী শোভা ধারণ করিয়াছেন। উহার পানে তাকাইয়া আমি মুগ্ধ হইয়া পড়িলাম। উঁহার চঞ্চল কটাক্ষে, তড়িৎ বেগে আমার ভিতরে কামোত্তেজনার সঞ্চার হইল।‘

None can reach heaven who has not passed through hell.

ব্রহ্মচারীজি গুরু শ্রীশ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীকে জিজ্ঞেস করছেন, রিপুর উত্তেজনা ক্রমশই যে বাড়ছে। যতই সাধন ভজন করছি ততই বাড়ছে।

গোস্বামীজি বলছেন, ‘ও রকম হয় নির্বাণের পূর্বে প্রদীপের মতো। আমার যখন ওইরকম হত, আমি কয়েক ঘড়া জল অমনি মাথায় ঢেলে দিতাম; কখনও বা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ায়ে হয়রান হলেই বুসে পড়তাম।’

একই ব্যাপার, এই লেফাফা-রমণীকে উলঙ্গ করলেই মনোহারিণী কটাক্ষে চিত্তচাঞ্চল্য। অভ্যন্তরে মুকু। কনকও থাকতে পারে। মেসোমশাইয়ের জীবনাতিরিক্ত জীবনের ইঙ্গিত থাকাও স্বাভাবিক। জল ঢালতে না পারি জলে ঢেলে দিতে পারি। বিসর্জনের এই তো প্রকৃষ্ট সময়। ঊষাকালেই তো যত মহৎ কাজ হয়। রাতের আততায়ী যাকে মেরে রেখে যায় তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়।

বেরি দি পাস্ট। অতীতকে কবরখানায় ভরে দাও। খামটা হাতে নিয়ে নীচে নেমে গেলুম। গাছপালার বৃত্তের মধ্যে ইদারা সদৃশ আমাদের সেই বিশাল কুয়ো। যার মাঝামাঝি জায়গায় একটি সুড়ঙ্গের মুখ। যার ভেতর থেকে বলাইবাবুর অভ্যুত্থান। কুয়োর ভেতর এখনও রাতের অন্ধকার থিরথির করছে। মহাকাল যেন মুখব্যাদান করে রয়েছে। ব্রহ্মচারীজি, যা দেবী সর্বভূতেষু, বলে কামোত্তেজিতা কামিনীর অঙ্গে অতসী পুষ্প ছুঁড়ে মেরেছিলেন, আমি উত্তেজক লেফাফাটি মনের জোরে টুক করে ছেড়ে দিলুম। সেকেন্ড কয়েক সময়, জল স্পর্শ করার মৃদু শব্দ, যেন কোনও রঙিন পাখির ডানার আলতো শব্দ। মনে হল গলায় একটা পাথর বাঁধা ছিল। খুলে পড়ে গেল। জীবনের একটা চাপা অধ্যায় থেকে মুক্তি। বৃত্তে ঘুরছিলুম, আজ সেই বৃত্তের মুখ খুলে গেল। পাতার আড়ালে একজোড়া পাখি শুকশারীর গলায় যেন কথা বলছে। কী করলে, কী করলে!

সত্যিই, এ আমি কী করলুম! বহুতল বাড়ির ছাদ থেকে লাফ মেরে, বাতাসের মধ্যে দিয়ে পড়তে পড়তে আত্মহত্যাকারীর মনের যে অবস্থা হয়, আমার এখন ঠিক সেই অবস্থা। এ আমার কী ধরনের হঠকারিতা। আমি কি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী! আমি এক ভোগী যুবক। দীর্ঘ ভোগের পথ আমার সামনে। রমণীয় রমণী, সুস্বাদু খাদ্য, সুন্দর উপাধান, বিলাসের সামগ্রী, বংশ বিস্তারের অবাধ স্বাধীনতা। কেউ তো বলেননি, ওহে তোমাকে বুদ্ধ হতে হবে, মহাবীর হতে হবে, চৈতন্য হতে হবে। নির্দেশ তো, তুমিই মানব হও। কাগজের কী দাম? একটু সেন্টিমেন্ট। তৎক্ষণ থেকে ওঠা আবেগের তৎক্ষণ-বিলয়। কিন্তু আংটিটা! নিক্তির ওজনে যার দাম!

মানুষের লোভ! নির্লোভ নিষ্কাম হওয়া মুখের কথা নাকি! আংটির চিন্তায় মন একেবারে হাঁচড়পাঁচড় করে উঠল। এইরকম ছেলেকেই বলে সেন্টিমেন্টাল ফুল। ভাবার আগেই কাজ করে বসে। ঈশপস ফেবসের সেই দাড়িঅলা ছাগল। লাফাবার আগে তাকিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করে না।

সরসর করে পাতকোর বালতি নামিয়ে দিলুম। লেফাফা উদ্ধারের শেষ চেষ্টা। যদি তোলা যায়! বালতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিকে-ওদিকে নানাভাবে চেষ্টা করলুম। কোথায় কী! কূপের শীতল জলে সমাধি। সব রহস্যের অবসান। জল সমেত বালতি তুলছি, পেছনে কাকিমা এসে দাঁড়ালেন, কী, মুখ ধোয়া হল! আমার হাতে একটু জল ঢেলে দাও তো।

হাতময় কয়লার কালি। উনুনে মনে হয় আগুন দিয়ে এলেন। ওপরদিকে তাকালুম। নীল আকাশে আমাদের বাড়ির সেই বিখ্যাত চিমনি দিয়ে ধোঁয়া ফুঁসছে। ভোরের বাতাসে ধোঁয়ার রেখা এঁকেবেঁকে যাচ্ছে। কাকিমা নিচু হতেই কাঁধ থেকে আঁচলটা সামনে লুটিয়ে পড়ল। কাকিমা বললেন, তুলে পিঠের দিকে পেঁচিয়ে দাও তো।

আবার সেই রমণীয় রমণীয়তা। ঠাকুর বলতেন কাজলের ঘরে থাকলে গায়ে কালি লাগবেই। আমি যতই অন্য কিছু ভাবার চেষ্টা করি না কেন সেই ভাবনা আসবেই। যে বাঘ একবার মানুষের রক্তের স্বাদ পেয়েছে সে বাঘকে গুলি না-খাওয়া পর্যন্ত মানুষখেকো হয়ে ঘুরতে হবেই।

আঁচলের কেরামতি শেষ করে দু’হাতে জল ঢেলে দিয়ে ওপরে যাবার জন্যে সবে পা বাড়িয়েছি, কাকিমা এই যাঃ বলে কেমন যেন আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। কিছু একটা পড়ে যাবার টুকুস টুকুস শব্দ হল।

কী হল বলে ঘুরে তাকাতেই দেখলুম, দু’টুকরো সাদা মতো কী মেঝেতে পড়ে আছে।

ইস, এ কী হল পিন্টু! এতদিনের শাখা বেড়ে গেল আজ।

কী করে হল?

পাতকোর পাড়ে হাত রেখেছি, খেয়াল ছিল না। অসাবধানে চাপ পড়ে গেছে। ভীষণ অলক্ষণ। কেন ভেঙে গেল বলো তো!

কতদিনের পুরনো জিনিস! এতে অলক্ষণের কী আছে!

মেয়েদের ব্যাপার, ওসব তুমি বুঝবে না। তোমার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে একজোড়া শাঁখা পরে আসব। আর বাবার নামে পুজো দোব। সকালে যাবে, না বিকেলে?

সকালে তো অফিস!

একদিন আমার জন্যে না হয় কামাই করলে।

সে খুব অন্যায় হবে।

অপর্ণা বললে কী করতে?

একই উত্তর দিতুম। কাজ আগে।

ওরে আমার কাজি রে! যাও ওপরে যাও। চট করে গা ধুয়ে নিই। এরপর আজ আর দম ফেলার সময় পাব না।

আমার সামনে গা ধোওয়া যাবে না?

সাতসকালে দুষ্টু দুষ্টু কথা বোলো না।

মাতামহ মশারির ভেতর শিশুর মতো নিদ্রাচ্ছন্ন। পিতার টেবিলে এখনও পাংশু বাতি জ্বলছে। টেবিলে মাথা রেখে নিদ্রাতুর। চারপাশে ছড়ানো বই। কোনওটা উপুড়, কোনওটা চিত। সবই হোমিওপ্যাথির বই। সারারাত এই নিয়েই কেটেছে। ভোরের দিকে টেবিলে মাথা রেখেছেন ক্লান্ত বীর। হাত বাড়িয়ে আলোটা নিবিয়ে দিলুম।

সুইচের শব্দ হতেই পিতা মাথা তুললেন। বললেন, সুপ্রভাত।

আজ্ঞে হ্যাঁ, সুপ্রভাত।

কী বুঝছ?

কীসের?

ওয়ান ডোজ, শেষরাতে জ্বর ছেড়ে গেল। এখন কেমন শান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছেন!

কী করে হল?

মিরাকল। সিম্পলি মিরাকল। এ আমার চ্যালেঞ্জ। একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে পারো! ওই মহিলাকে আর খাঁটিয়ো না। কাল সারারাত বেচারা চোখের পাতা এক করতে পারেনি।

যাচ্ছি, চা করে আনছি।

চা অবশ্য আমাকে আর করতে হল না। কেটলির খুটখাট শুনেই কাকিমা সব ফেলে ছুটে এলেন। হাত থেকে কেড়ে নিতে নিতে বললেন, থাক, খুব হয়েছে। যার কাজ তার সাজে অন্যের মাথায় লাঠি বাজে। গালে একটা ঠোনা মেরে দিলেন। সবে স্নান করে এসেছেন। হাত দুটো কী ঠান্ডা! মহিলার প্রাণে যেন নতুন জীবনের জোয়ার এসেছে। সুখ জিনিসটা কত ক্ষণস্থায়ী! কাকিমাকে দেখলে আমার আতঙ্ক হয়। ডাক্তার যখন জেনে ফেলেন রুগির রোগ ক্রমশই মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে প্রাণকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন তিনি দেখেন আর মনে মনে বলতে থাকেন, হেসে নাও, এ দু’দিন বই তো নয়। নেবার আগে প্রদীপ একবার তেড়ে জ্বলে ওঠে।

চা পর্ব চলেছে। ক্রুশেন সল্টের শিশি নেমে এসেছে টেবিলে। চামচেটা ভারী অদ্ভুত। বাইচ খেলার নৌকোর পাড়ের মতো আকৃতি। ছোট্ট এতটুকু। চিমটে পরিমাণ ওষুধ তোলার ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। বেশিও না কমও না। ডিশে দু’চামচ ওষুধ ফেলে প্রথম চুমুক চা-টি পিতৃদেব স্বাস্থ্যসম্মত। করে তুললেন।

ডিশের চায়ে চুমুক মেরে মুখে যে কুঞ্চন উঠেছিল, দূরে কিছু একটা দেখেই সেইটাই হাসিতে রূপান্তরিত হল। মাতামহ বিছানায় উঠে বসেছেন। পিতা চেয়ার ঠেলে এগোতে এগোতে বললেন, কী, কেমন বোধ করছেন?

ভোরের প্রথম ফোঁটা ফুলের মতো।

ঠিক বলছেন?

কোনও ভুল নেই। শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ। এবার তা হলে অনুমতি দাও।

কীসের অনুমতি?

একবার ঘুরে আসি হরিদ্বার, লছমনঝোলা, হৃষীকেশ।

আপনি শিশুর মতো বায়নাদার হয়ে উঠেছেন। তারা কেবল খাব খাব করে, আপনি কেবল যাব যাব করছেন। আপনাকে আমি জলধর সেনের হিমালয় দিচ্ছি, বসে বসে পড়ুন। মানুষকে অত বঞ্চিত করতে চান কেন?

বঞ্চিত?

তা ছাড়া আবার কী? আমাদের একটু সেবার সুযোগ দিন।

সেবা!

মাতামহ খলখল করে হেসে উঠলেন। হাসি থামিয়ে বললেন, কত বছর বয়েসে আমাদের স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে বলো তো হরিশঙ্কর?

তা ঠিক, আমাদের স্ত্রীভাগ্য দু’জনেরই খুব খারাপ।

আমার ছেলেটাকে তো তুমিই মানুষ করলে!

ও কথা বলবেন না। ডোন্ট ফ্যান মাই ইগো। মানুষ হবে বলেই মানুষ হয়েছে। কেউ কাউকে মানুষ করতে পারে না।

অতসব আমি জানি না বাপু। আমি যদ্দিন বাঁচব তদ্দিন বলে যাব। তোমার গুণগান করে যাব।

আপনি না ঈশ্বরবিশ্বাসী?

ঈশ্বরবিশ্বাসী বলেই কোনও কোনও মানুষে ঈশ্বরদর্শন করি।

এই তো সারের সার উপলব্ধি। যে-ঈশ্বর আমার ভেতর সেই একই ঈশ্বর আপনার ভেতরেও। আপনার সেবা মানে ঈশ্বরের সেবা।

হরিশঙ্কর, সারাজীবন যে আমি বড় অবহেলা পেয়ে এসেছি। তাই ভেতরটা কেমন যেন কলসিতে রাখা সিল্কের কাপড়ের মতো কুঁকড়েমুকড়ে গেছে।

বিউটিফুল, বিউটিফুল। বড় সুন্দর উপমা। আমিও তা হলে বলি, ভালবাসার জলের ছিটে আর সেবার ইস্ত্রি দিয়ে আপনার রেশমের মতো সেই মনকে আমরা মোলায়েম করে দোব, মসৃণ করে দোব। বমিবমি ভাব আছে গেছে।

সে তো এখন বোঝা যাবে না, ব্রোঝা যাবে কিছু মুখে পড়লে।

আপনার ওষুধ এখন আমার হাতের মুঠোয়। পথ্যের ব্যবস্থাও করে ফেলেছি। আচ্ছা এই যে আপনি পালাই পালাই করছেন, কালকের মতো বিদেশ বিভুঁইয়ে হঠাৎ জ্বর এলে কী করতেন?

গাছতলায় কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে জগদম্বার নাম জপ করতুম।

তা হলেই সব হত। হ্যাঁ, কে কোথায় গেলে! মুখ ধুয়ে নিন। খুব লাইট চা আর বিস্কুট খান। তারপর সব ব্যবস্থা করছি। আচ্ছা, জয়কে কি একটা টেলিগ্রাম করা দরকার?

না না, ওকে আর বিরক্ত কোরো না। সত্যি কথা বলব তোমাকে, বিয়ের পর অধিকাংশ ছেলেই। কেমন যেন হাতছাড়া হয়ে যায়!

আঃ, সে তো একটু যাবেই। নান ক্যান হেল্প। বিবাহ একটা রেসপন্সিবিলিটি। ঘরের মধ্যে ঘর।

রাতভোরে পাখি ডাকলে যেমন নতুন দিন আসার আনন্দে মন ভরে যায়, মাতামহর উঠে দাঁড়ানোর আনন্দও অনেকটা সেইরকম। নিবতে নিবতে আবার শিখা জ্বলে উঠেছে।

পিতা বললেন, আমি আজ বাজারে যাচ্ছি। আজকের বাজারে বেশ ঝামেলা আছে। চারামাছ চাই, বরফ চাই, মুড়ি চাই।

বরফ কী করবেন?

সাংঘাতিক একটা টোটকা আবিষ্কার করে ফেলেছি। এক গেলাস জলে এক মুঠো মুড়ি ফেলে, চারপাশে বরফ দিয়ে ঘণ্টাখানেক ফেলে রাখো। তারপর সেই শীতল মুড়ির জল বারেবারে চুমুকে চুমুকে খাওয়াও।

কাল জ্বর হল আজ বরফজল, যদি অন্যরকম কিছু হয়ে যায়!

কী হতে পারে?

যদি নিমোনিয়া হয়, কি ব্রঙ্কাইটিস হয়, তা হলে কী হবে?

তারও ওষুধ আছে। নাও তুমি গোটাকতক ব্যাগ নাও, আর দেরি না করাই ভাল। জ্যান্ত চারামাছ এরপর বাজার থেকে উঠে যাবে।

সকালের বাজারের সে কী শোভা! বেঁচে থাকার আনন্দে চারপাশ টগবগ করছে। বেগুনের বেগুনি, শাকের সবুজ, মাছের রুপোলি তবক, ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি। বাজার শেষ করে বরফের ডিপোয় গিয়ে মন বড় মিইয়ে গেল। ছোট্ট একটা গহ্বরে থান থান বরফ কাঠের গুঁড়োর বিছানায় শুয়ে আছে। ঘষা কাঁচের মতো চেহারা। আগুন নয়, তবু ধোঁয়া উঠছে। মৃত্যুর শীতল মুখগহ্বর থেকে যেন চিতার ধোঁয়া বেরোচ্ছে হিলহিল করে।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন