২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

যেন রে তোর হৃদয় জানে হৃদয়ে তোর আছেন রাজা
একতারাতে একটি যে তার আপন-মনে সেইটি বাজা

উৎকণ্ঠা তো বটেই। হরিশঙ্কর আঙুল রাখবেন ত্রিভুজে। কী প্রকাশ পাবে তার স্বভাবে! নিষ্ঠুরতা, দয়া, মায়া, জ্ঞান? চরিত্রের কোন দিকটা প্রবল হবে? সন্ন্যাসী কী দেখবেন তার ভেতরে। হরিশঙ্করের স্থির অকম্পিত আঙুল কাঙিক্ষত স্থান স্পর্শ করল। তার ঋজু শরীর আরও ঋজু হল। মুখে একটা জ্যোতি। যেন একটা বিদ্যুৎ-তরঙ্গ খেলছে শরীরে। মনের বা চোখের ভুল কি না জানি না, আঙুল ভূমি স্পর্শ করামাত্রই একটা স্পার্ক খেলে গেল। এমনও হয় নাকি! চোখের দেখা আর মনের বিশ্বাসকে এক করতে পারছি না। তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, হরিশঙ্কর স্থির দৃষ্টিতে কারও দিকে তাকালে তার আর নড়বার চড়বার ক্ষমতা থাকে না। আমার মনে আছে, একবার একটা মরচে-ধরা টিনের কৌটোর ঢাকনা কিছুতেই খোলা যাচ্ছিল না, অথচ তার মধ্যে একটা কেমিক্যালস ছিল, যেটা খুবই জরুরি প্রয়োজনের। আমরা সবাই ব্যর্থ হলুম। হরিশঙ্করও প্রথমটায় পারলেন না। সকলেই রায় দিলেন, ঢাকনা এমন আঁটা এঁটেছে ও আর খোলা যাবে না। হরিশঙ্করের চোখে একটা স্পার্ক খেলে গেল। মুখের চেহারা পালটে গেল। কৌটোটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন স্থির হয়ে, তারপর মারলেন এক টান। ঢাকনা খুলে গেল। একবার একটা ড্রয়ারের তালা খুলছিল না। সবাই পরাজিত। হরিশঙ্কর চাবি ঢোকালেন, ঘোরানোমাত্রই খুলে গেল। সবাই জিজ্ঞেস করলেন, কী করে হল? হরিশঙ্কর অদ্ভুত উত্তর দিয়েছিলেন, তোমরা খুলবে না ভেবে চাবি ঘোরাচ্ছিলে, আর । আমি ঘুরিয়েছিলুম খুলবে ভেবে। এই সামান্য তফাত। বলেছিলেন, দেশলাই কাঠি জ্বালাবার আগেই যদি ভাবো নিবে যাবে, তা হলে নিববেই; আর সেটা যদি একেবারেই ভুলে যাও কাঠি কখনওই নিববে না। একে বলে অ্যাপ্রোচ। একে বলে উইল। দুটো কথা আছে, আই ক্যান আর আই ক্যান নট। আমি পারি আর আমি পারি না। একটা শক্তি আর একটা দুর্বলতা। হরিশঙ্কর একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন, কাউন্ট মেরালের উদাহরণ। ইতালির এক মাননীয় মানুষ। হাত অথবা চিরুনি ছাড়াই তিনি চুল আঁচড়াতে পারতেন যেমন খুশি। যেদিকে খুশি টেরি বাগাতে পারতেন। ইচ্ছাশক্তির উদাহরণ। আর একটা গল্প বলেছিলেন জন কাউপারের। নিউ ইয়র্কে ওয়েস্ট ফিফটি সেভেন্থ স্ট্রিটে কাউপারের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকতেন। তার নাম ছিল ড্রেইসার। কাউপার রোজ বিকেলের দিকে তাঁর বাড়িতে আসতেন। কাউপার তখন হাডসন নদীর ধারে ছোট একটা গ্রামে থাকতেন। প্রায় তিরিশ মাইলের দূরত্ব। বেলাবেলি বন্ধুর বাড়িতে ডিনার শেষ করে ট্রেন ধরে তিনি ফিরে যেতেন। গ্রামে। একদিন ডিনার শেষ হয়ে যাবার পর দুই বন্ধুতে খুব গল্প হচ্ছে। কাউপার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন, কথায় কথায় সময়ের খেয়াল ছিল না। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন। আর বসলে ফেরার ট্রেন পাবেন না। বন্ধু একটু হতাশ হলেন। গল্প বেশ জমেছিল। কাউপারকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। কাউপার বিদায় নেওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, মনখারাপ কোরো না, আমি আজই আবার আসছি তোমার কাছে। বন্ধু বললেন, চলে গেলে আবার আসবে কী করে, সেই তিরিশ মাইল দূর থেকে? কাউপার বললেন, তা জানি না, তবে আমি আসব। তোমার সামনে এসে দাঁড়াব আমি। ড্রেইসার বন্ধুর কথা কিছুই বুঝলেন না। কাউপার চলে যাওয়ার পর বই নিয়ে বসলেন। ঘণ্টাদুই কেটে গেছে। হঠাৎ কী খেয়াল হল দরজার দিকে তাকালেন। অবাক কাণ্ড। দরজা আর ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় কাউপার দাঁড়িয়ে আছেন। স্পষ্ট। কোনও ভুল নেই। ড্রেইসার তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে বন্ধুর দিকে এগিয়ে গেলেন। জন, তুমি তোমার কথা। রেখেছ। এসো এসো। বন্ধুর হাত ধরার জন্যে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলেন। কাউপার কোনও কথা বলছেন না। ড্রেইসার যখন আরও কাছে গেলেন, দূরত্ব মাত্র তিন ফুট, কাউপার হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ড্রেইসার প্রথমটায় ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। পরে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বন্ধুকে টেলিফোন করলেন। কাউপারের গলা ভেসে এল। ড্রেইসার এই গলার সঙ্গে পরিচিত। কাউপার বললেন, আমি তোমাকে বলেছিলুম যাব। তুমি তার প্রমাণ পেয়েছ। এর বেশি আর আমাকে কিছু। জিজ্ঞেস কোরো না। গল্প শেষ করে হরিশঙ্কর বলেছিলেন, প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে মানুষের পক্ষে অ্যাস্ট্রাল প্রোজেকশনও সম্ভব। হরিশঙ্কর নিজেও তা পারেন, যেমন পারতেন যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী মশাই। অস্বীকার করেন, কিন্তু আমার কাছে অজস্র প্রমাণ আছে। হালফিল তার প্রমাণ পেয়েছি। আমার রোগশয্যায় মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বপ্ন না-ও হতে পারে।

হরিশঙ্করের উজ্জ্বল মূর্তির দিকে তাকিয়ে সন্ন্যাসী বললেন, ইউ আর অল পাওয়ার ভাইব্রেটিং ইন এ ডিভাইন প্লেন। শাবাশ বেটা। সাইলেন্টলি চালিয়ে যাও তোমার সাধনা। জল একটু বেশি খাবে। চিত হয়ে শোবে, অ্যান্ড ইউস এ ব্ল্যাঙ্কেট। হোয়াইট ছাড়া কিছু পরবে না। তোমার ইষ্ট হলেন। লর্ড ভিষ্ণু।

সন্ন্যাসী হাত দিয়ে সেই অদৃশ্য ত্রিভুজ মুছে দিলেন। তারপর হাত জোড় করে সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই আমাদের শেষ দেখা, আপনারা সবাই ভাল থাকুন। ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করুন। সন্ন্যাসী সিঁড়ির দিকে এগোলেন। মেনিদা বললেন, আমি একটু এগিয়ে দিয়ে আসি। আর তো দেখা হবে না।

.

জয়নারায়ণের গবেষণা শুরু হল, ব্যাপারটা কী? এমনও হয় নাকি? জাদু? হিপনোটিজম? হরিশঙ্কর বললেন, প্লেন অ্যান্ড সিম্পল সাইকোলজি। চালপড়া বলে একটা জিনিস আছে জানো? চালপড়া খাইয়ে চোর ধরা। যে-চোর তার মুখে চাল ভিজবে না। শুকনোই থেকে যাবে। ভয়ে থুতু বেরোবে না। মুখ শুকনো কাঠ। মনস্তাত্ত্বিক কারণে। এও সেইরকম। আমরা সবাই আত্মসচেতন হয়ে উঠেছিলুম। নিজের ভেতরটাকে দেখার চেষ্টা করছিলুম, যেটা সবসময় আমাদের বাইরের তুচ্ছতায় চাপাই পড়ে থাকে, খড়ের গাদায় ছুঁচের মতো। ধরো মানুষ একটা মোটরগাড়ি, তার দু’জন চালক। একজন বসে আছেন সূক্ষ্মে, অন্যজন স্কুলে। স্কুলে যিনি আছেন তার ভূমিকা হল মেন্টিনেনস্ ইঞ্জিনিয়ারের। তার নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিদ্রা, আমাদের স্মৃতি, পরিপাকযন্ত্র ও পরিবর্জন ব্যবস্থা। সূক্ষ্ম মনের উপস্থিতি আমরা ভুলেই যাই। স্কুলের কাজকর্মের দিকেই আমাদের নজর। সরষের ভেতর তেল আছে। বোঝার উপায় নেই। পিষতে হবে। ঘোলে মাখন আছে, মন্থন করতে হবে, মেহেদিতে রং আছে বাটতে হবে। একটা মোহর পড়ে আছে এক বালতি ঘোলা জলে। দেখার। উপায় নেই। ফটকিরি ফেলে জল পরিষ্কার করে নাও, সব দেখতে পাবে। শান্ত হয়ে বোসো। স্কুলের। ক্রিয়া থেকে চিন্তা তুলে নাও। স্থির হও আর তখনই দেখতে পাবে সূক্ষ্মকে। সেই সূক্ষ্মেই আছে। আমাদের স্বভাব। সন্ন্যাসী অলৌকিক কিছুই করলেন না, কায়দা করে আমাদের স্বরূপ দর্শন। করালেন। একসঙ্গে এতজনকে দীক্ষা দিয়ে গেলেন। ভাবে বলে গেলেন, অখণ্ডং সচ্চিদানন্দমবা মনসগোচরম্। আত্মানম্ অখিলাধার অভীষ্টসিদ্ধয়ে আশ্রয়ে। চিত্তের অনন্তবৃত্তি। স্টপ ইট। আত্মাতে যুক্ত হও। সিট স্টিল অ্যান্ড মেডিটেট। আমরা যা করলুম তা এক ধরনের ধ্যান। করেছি। এক মহাশক্তির উপস্থিতিতে। নিজেরা করলে অত সহজে হত না। ওইটাই হল সন্ন্যাসীর সম্মোহন। সাপকে ঝাঁপিতে এককথায় ঢোকাতে পারেন বেদে। সন্ন্যাসী সেই বেদে। আমি বোধহয় একনাগাড়ে বহুক্ষণ বকবক করছি! আমার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। ছিছি তোমরা কী মনে করছ! আই বেগ টু বি এক্সকিউজড ফর মাই অসভ্যতা। এজ হ্যাঁজ মেড মি এ ফুল। তা না হলে কেনই বা ভুলে যাব, নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো ন মেধয়া ন বহুনা শুতেন। একমাত্র প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে মানুষ নিজের শক্তিকে খুঁজে পেতে পারে!

.

হরিশঙ্কর উঠে পড়লেন। শ্যালক জয়নারায়ণ বললেন, অপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আরও কিছুক্ষণ চললে বেশ হত। আর কতকাল নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন? আসুন আমরাও এইবার শুরু করি। এই পানসে সংসার থেকে বেরিয়ে যাই। শ্যামা সুধা তরঙ্গিণীতে ভেসে যাই।

হরিশঙ্কর বললেন, নাক তেরে কেটে তাক বোল মুখে বলা সহজ, হাতে ফোঁটানোই মুশকিল। এই তো তবলা, অক্ষয় একবার চেষ্টা করো না!

অক্ষয় কাকাবাবু বললেন, এমনি হবে? সাধতে হবে।

হরিশঙ্কর বললেন, তারও আগে একটা কথা আছে, কেন সাধবে? মোটিভেশন? বেশ তো আছি! রোগে-ভোগে। বউ ঝাটা মেরেছে? ভাই মামলা ঠুকেছে? চাকরি চলে গেছে? শেয়ার মার্কেটে দেউলে হয়ে গেছি? সংসারের একদল ঝড়তি-পড়তি মানুষ, গালভাঙা, কোলকুঁজো, চোখে ছানিকাটা-চশমা। বুকে ব্রঙ্কাইটিস, কাতরাতে কাতরাতে চলেছে, প্রভু প্রভু করতে করতে, খিচুড়ি আর মালসাভোগ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে, হৃষ্টপুষ্ট মহিলা দেখলেই অক্ষম দেহ হায় হায় করে উঠছে। পেট-চুক্তি হরিনাম। ছ’ঘন্টা নাগাড়ে করতে পারলেই একপাতা খিচুড়ি। হরে কৃষ্ণ হরে রাম-এর বদলে ক্রমান্বয়ে বলে চলেছে, হচে কিষ্ণ হচে রাম। মূল গায়েনের কোনও মাথাব্যথা নেই সংশোধন করে দেবার। লক্ষ্য তো রাম নয়, কৃষ্ণও নয়। লক্ষ্য উদর ও উদরের নিম্নভাগ। এই মিছিল ঈশ্বরের দিকে যত এগোতে থাকে, ঈশ্বর ততই পেছোতে থাকেন। শবযাত্রীর দল আসছে গামছা কাঁধে। স্বর্গের দেউড়ি বন্ধ করো। পূর্ণ প্রাণে চাবার যাহা রিক্ত হাতে চাস নে তারে, সিক্ত চোখে যাস নে দ্বারে। তোমায় আমায় মিলন হবে বলে, যুগে যুগে বিশ্বভুবনতলে, পরান আমার বন্ধুর বেশে চলে চিরস্বয়ম্বরা। রাজার ছেলে রামচন্দ্র, রাজার ছেলে বুদ্ধ, জনকরাজা, মহাপণ্ডিত কন্দর্পকান্তি শ্রীচৈতন্য, সেই পথের পথিকের এই হল চেহারা। রাজসমারোহে এসো। কার অভিসারে তুমি চলেছ! রাজসভায় ভোজ খেতে চলেছ তুমি। তুমিও যাও রাজার মতো। টু মিট এ কিং, বি এ কিং, নট এ বেগার। ভিখিরি রাজার দর্শন পায় না। ওহো, ধরো গান, জয় সুর লাগাও,

একমনে তোর একতারাতে একটি যে তার সেইটি বাজা–
ফুলবনে তোর একটি কুসুম, তাই নিয়ে তোর ডালি সাজা ॥
যেখানে তোর সীমা সেথায় আনন্দে তুই থামিস এসে,
যে কড়ি তার প্রভুর দেওয়া সেই কড়ি তুই নিস রে হেসে।
লোকের কথা নিস নে কানে, ফিরিস নে আর হাজার টানে,
যেন রে তোর হৃদয় জানে হৃদয়ে তোর আছেন রাজা–
একতারাতে একটি যে তার আপন-মনে সেইটি বাজা ॥

জমজমাট ব্যাপার, সেই কালী কীর্তনের মতো, হতেছে পাগলের মেলা খেপাতে খেপিতে মিলে/ আনন্দেতে সদানন্দে আনন্দময়ী/ পড়ছে ঢলে ॥ বড় ধুম লেগেছে হৃদকমলে। হু করে বেজে উঠল চটকলের বাঁশি। দক্ষিণেশ্বরে বসে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই বাঁশি শুনে গেছেন। শ্রীশ্রীমা এই বাঁশিকে বলতেন শ্যামের বাঁশি। ঠাকুরের আহারাদির পর এই বাঁশি শুনে তিনি সেবায় বসতেন। এই বাঁশি শুনতে শুনতে আমার মাতামহ উত্তরের বারান্দায় পায়চারি করতে করতে তেল মাখতেন। সবসময় তাঁর বিভোর অবস্থা। দেহ একখানে মন আর একখানে। হরিদ্বার, হৃষীকেশ, লছমনঝুলা, কেদারনাথ। আজ এই আসরে তিনি থাকলে কী মাতনই না হত! যখন তানপুরা কাঁধে নিয়ে গান ধরতেন, যদি দান দিলে আমায় এ বিপুলধরণী।/ তবে কেন প্রাণ দিলে না, দিলে না ॥/ আঁখি যদি দিলে মা গো এ বিশ্বমাঝারে।/ তবে আঁখিজল কেন দিলে না, দিলে না ॥

ভেঙে গেল আসর। শেষ হল আহারাদি। বাগানের রোদ পলাতক বালকের মতো পাঁচিল টপকে সারগাছের মাথায় গিয়ে চড়ল। ডালে ডালে বিষণ্ণ পাখি। উজ্জ্বল একটি দিনের মৃত্যুতে শোকার্ত। হঠাৎ হরিশঙ্কর ঘোষণা করলেন, কালই তিনি চলে যাবেন। জানলার কাছে বসে আছি আমি। বিভোর আমার স্বপ্নে। সব হারিয়ে আবার সব ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন। সওদাগরের জাহাজ ডুবে গিয়েছিল, মা-লক্ষ্মীর কৃপায় আবার ভেসে উঠেছে। হঠাৎ এ কী সিদ্ধান্ত? ঘরে যেন বজ্রপাত হল। কোথায় যাবেন? কেনই বা যাবেন! প্রশ্ন করলুম, কোথায় যাবেন?

প্রশ্নটা একটু বোকার মতো হল। তোমার কী ধারণা? আমার কোনও যাওয়ার জায়গা নেই? তোমার কি ধারণা, এতকাল আমি ছেঁড়া কম্বল কাঁধে ধর্মশালায় ধর্মশালায় ঘুরছিলাম, লাইক ওয়ান অফ দি সো মেনি আইডলারস!

আমি তা মনে করিনি। ভেবেছিলুম সন্ন্যাসী হয়ে গেছেন। কারণ আপনি কিছুই নিয়ে যাননি। একবস্ত্রে গৃহত্যাগ করেছিলেন।

ইয়েস মাই সান, হরিশঙ্কর কনভেনশনাল সন্ন্যাসে বিশ্বাসী নয়। হরিশঙ্কর গুরুবাদে বিশ্বাসী নয়। হরিশঙ্কর কনভেনশনাল ধর্ম বিশ্বাস করে না। মন্দির, মসজিদ, গির্জা সব তার কাছে সমান। সন্ন্যাসী হবার জন্যে কোথাও যাবার দরকার হয় না। অন্তরের কয়েকটা ময়লা জিনিস বাইরে ফেলে দিতে পারলেই একজন সন্ন্যাসী। যে-কোনও জায়গায়, যে-কোনও অবস্থায়। এম্পটি ইয়োর ডার্টি বাস্কেট অ্যান্ড ইউ আর এ সেজ। দেয়ার আর থ্রি ক্যাটস, কাম, ক্রোধ, লোভ, তিনটেকে বিদায় করো, তুমি সন্ন্যাসী। আর একবস্ত্র? যখন এসেছিলুম সঙ্গে ক’টা বস্ত্র এনেছিলুম? ওইটাই হরিশঙ্করের আত্মবিশ্বাস। যেচে, সেধে চ্যালেঞ্জ নেওয়া। অলওয়েজ এক্সপ্লোর নিউ হরাইজন। নতুন দিগন্ত। এ। নিউ স্ক্র্যাচ, অ্যান্ড বিগিন। নতুন একটা আঁচড় থেকে তৈরি করো নতুন ভবিষ্যৎ। ফ্রম নাথিং টু সামথিং। জগতের হাটে হরিশঙ্কর নিজেকে বাজাতে জানে। অ্যাডভেঞ্চার ইজ লাইফ। তুমি ভীরু, তুমি ঘরকুনো, তোমার পক্ষে জীবনের বিশালতা বোঝা সম্ভব নয়। ইউ আর এ পেটিকোট ম্যান।

ভয়ংকর আক্রমণে স্তব্ধ হয়ে যেতে হল। এই কারণেই আমার যত অভিমান, যত হতাশা। বয়সটা কাদার নয়। মুখ গোঁজ করে থাকার। আমি পেটিকোট ম্যান! বারনার্ড শ র কথা থেকে শব্দটা নিলেন, শ বলেছিলেন, A woman is really only a man in petticoats, or, if you like that a man is a woman without petticoats: আমি সামান্য প্রতিবাদ জানাতে চাইলুম। আপনি এখনও আমার ওপর রেগে আছেন?

তুমি এটাকে রাগ ভাবছ? একটু তলিয়ে দেখলে বুঝতে পারতে, এ রাগ নয়, এ তোমার শক থেরাপি। মিনমিনে ঘিনঘিনে জীবন থেকে তোমাকে বের করে আনার চেষ্টা। এই বয়েসে আমি যা পারি, তুমি তা পারো না? মুখে পাউডার লেপে ফিনফিনে কথা বলে মেয়েদের প্রিয় হতে চাও। ওমর খৈয়াম, গালিব পড়ো। কেন মিলটন, হোমার, ভার্জিল পড়তে পারো না? গোলাপি কাগজে প্রেমপত্র লেখো। লাইফ ইজ নট দ্যাট রোজি পিন্টু। জীবন অবশ্যই একটা কবিতা, তবে বীররসের কবিতা। লাইফ ইজ এ হিরোয়িক পোয়েম, রাইমড় আর আনরাইমড়। তোমাকে আমি তোমার মুখ । দেখাতে চাই। মনে আছে সেই গল্প! সিংহশাবক ভেড়ার পালে বড় হতে হতে ভেড়াই হয়ে যাচ্ছিল। একদিন এক সিংহ এসে তাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল জলার ধারে। জলে পাশাপাশি দু’জনের প্রতিবিম্ব। দেখ, তোর আর আমার দু’জনের মুখই একরকম দেখতে। তুইও সিংহ আমিও সিংহ। এই নে চেখে দেখ এক টুকরো মাংস। তুমি আমার ছেলে হয়ে, আমার উপহাস হয়ে জীবন নষ্ট করছ। তোমার লজ্জা করে না। আমি এক ধরনের জীবন শেষ করে আর এক ধরনের জীবন শুরু করেছি। অবসরভোগী বৃদ্ধ হয়ে ছেলের রোজগারে অলস জীবন আমি কাটাতে চাই না।

ছেলের সেবাও আপনি নেবেন না?

সেবা খুব কঠিন জিনিস পিন্টু। বলা সহজ, করা শক্ত। বিরক্ত না হয়ে সেবা ক’জন করতে পারে? আর শক্তি থাকতে সেবা নোব কেন?

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি এখন কী করছেন? যদি আমাকে একেবারেই পর না ভাবেন তা হলে বলবেন, আর যদি ভাবেন আমি আপনার কেউ নই তা হলে বলবেন না। আমি আমার পথ আপনারই আশীর্বাদে ঠিক খুঁজে নিতে পারব। ছোট মুখে বড় কথা মার্জনা করবেন, একটা উদাহরণ মনে আসছে, পাখির মা পাখিকে যখন উড়তে শেখায় তখন কিন্তু ঠোকরায় না। পাহারা দেয় ডালে বসে, অন্য পাখির ঠোকরের হাত থেকে বাঁচায়।

হরিশঙ্কর অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং খুশিই হলেন, বাঃ, ওয়েল সেড। সুন্দর উপমা। ভেরি পোয়েটিক। বাট মাই সান, ইফ ইট ইজ নট এ বার্ড? যদি পাখি না হয়ে একজন প্যারালিটিক মানুষ হয়? এ ক্রিপল? তাকে বকে, ধমকে, তিরস্কার করে, যন্ত্রণা দিয়ে হাঁটাতে হয়। দয়া করলে, অনুকম্পা দেখালে তার ক্ষতি হয়। জীবনের দীর্ঘপথ পড়ে আছে তোমার সামনে, যে-পথে তোমার সঙ্গী হবে না কেউ, সেই পথে হাঁটার শক্তি তোমাকে অর্জন করতে হবে। প্রেমের কাছে, সহানুভূতির কাছে, সাহায্যের কাছে, মানুষের করুণার কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়ো না। এই তো আসল কুরুক্ষেত্র পিন্টু। কেউ কারও নয়। না ঘর মেরা, না ঘর তেরা। নিজের এই অসুস্থতার সময় অবশ্যই বুঝে গেছ নির্ভর করার মতো একজনই আছেন, তিনি কে? তুমিও জানো না, আমিও জানি না। কেউই জানে না। জাস্ট এ ওয়াইল্ড গেস। একটা অনুমান মাত্র। ডপেলগ্যাঙ্গার বলে একটা শব্দ কখনও শুনেছ?

আজ্ঞে না।

শব্দটা জার্মান। ইংরেজি মানে হল তোমার সাইকিক ডবল। তোমার দ্বিতীয় সত্তা। চুয়াল্লিশ সালের ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তখন এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। ফরাসি রণাঙ্গনে এক আমেরিকান ইনফ্যান্ট্রি সার্জেন্ট। তাঁর নাম গ্রিফিথ। গ্রীষ্মের শেষবেলায় তার বাহিনী নিয়ে বেরিয়েছেন টহলে। জায়গাটার নাম রেনে। চারপাশ শান্ত। সরু একটা পথ। ধুলোয় ঢাকা। দলের আগে আগে চলেছেন গ্রিফিথ। হঠাৎ গ্রিফিথের সামনে মাত্র কয়েক গজ দূরে এক মূর্তির আবির্ভাব হল। গ্রিফিথ চমকে গেলেন। সামনে পথ আগলে যে দাঁড়িয়ে সেও গ্রিফিথ। একই আকৃতি, একই পোশাক, এমনকী দাড়ির ক্ষতে যে স্টিকিং প্লাস্টার লাগানো, দ্বিতীয় গ্রিফিথের দাড়ির ঠিক সেই জায়গাতেও প্লাস্টার। দ্বিতীয় গ্রিফিথ হাত নেড়ে ইশারা করছে, ফিরে যাও। গ্রিফিথ ভয় পেয়ে গেলেন। শুনলেন সেই নির্দেশ। ফিরে চললেন তার বাহিনী নিয়ে। তিনি ফিরছেন এমন সময় সৈন্য-বোঝাই একটা জিপ তার পাশ দিয়ে তিনি যে-দিকে যাচ্ছিলেন সেই দিকেই গেল। পরক্ষণেই তার কানে এল স্পন্ডাই মেশিনগানের শব্দ। জিপগাড়িটার উলটে যাওয়ার শব্দ। ওই জায়গায় জার্মান সৈন্যরা একটা গোপন ঘাঁটি গেড়েছিল। গ্রিফিথের মূর্তি যদি গ্রিফিথকে সাবধান না করত তার বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। বিজ্ঞানে এর কোনও ব্যাখ্যা পাবে না। একবার নয় গ্রিফিথের জীবনে এই ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটল কুড়ি বছর পরে। গ্রিফিথ তখন বিয়ে করেছেন। দুটি ছেলে। ঘটনাস্থল কানাডা। সপরিবারে বেড়াতে বেরিয়েছেন। দু’সার প্রাচীন গাছের মধ্যে দিয়ে পথ চলে গেছে। আবহাওয়া সুন্দর, তবে দমকা বাতাস বইছে। তারা একটা ফাঁকা জায়গায় এসে সবে দাঁড়িয়েছেন, হঠাৎ সামনে আবির্ভূত হলেন সেই দ্বিতীয় গ্রিফিথ। যুদ্ধের পোশাক, চিবুকে প্লাস্টার। ইশারায় বলছে, পালাও, গো ব্যাক। গ্রিফিথ এক মুহূর্ত দেরি না করে পেছন ফিরে সপরিবারে ছুটতে লাগলেন। দমকা বাতাস তখন ঝড়ের চেহারা নিয়েছে। গ্রিফিথ যে-জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেইখানে হুড়মুড় করে বিশাল একটা গাছ ভেঙে পড়ল। সরে না এলে সপরিবারে মারা পড়তেন। এই ডপপেলগ্যাঙ্গারের অভিজ্ঞতা। পৃথিবীতে আরও অনেক ভাগ্যবানের জীবনে ঘটেছে। বার্লিনের ঘটনা। থিওলজির অধ্যাপক বাড়ি ফিরছেন সন্ধেবেলা। উলটো ফুটপাথে আর একজন। দেখেই চমকে গেলেন। আর একজন তিনি নিজেই। অধ্যাপক দ্রুত পা চালালেন। তার দ্বিতীয় মূর্তির চলার গতিও বাড়ল। অধ্যাপক পাশের রাস্তায় ঢুকলেন। এড়াতে পারলেন না। বাড়ির দরজার কাছে মূর্তি তাঁকে অতিক্রম করে গিয়ে নিজেই বেল টিপল। অধ্যাপক স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উলটো ফুটপাথে। দর্শক হয়ে। পরিচারিকা বাতি হাতে দরজা খুলল। দু’জনে দোতলায় উঠছেন। দোতলার ঘরে আলো দেখা গেল। পরমুহূর্তেই পুরো ছাতটা ভেঙে পড়ল সশব্দে। এর কী ব্যাখ্যা হবে পিন্টু? তুমিই তোমার ভগবান। কারও দর্শন হয়, কারও হয় না।

হরিশঙ্কর নিঃশব্দে উঠে গেলেন বারান্দায়। কেন আমি ওঁর জ্ঞানকে স্পর্শ করতে পারি না! কেন পারি না ওঁর মতো একটা মনের উত্তরাধিকারী হতে! নিজের মর্তসীমা চূর্ণ করে কেন মিশে যেতে পারি না বিশালের বিশালে! অনেকদিন পরে আদেশ এল, এসরাজটা নামাও। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলছেন।

এসরাজ নামালুম। ঘরে এসে বললেন, আমাদের সেই মলসন্দটা বিছাও। ঠিক আছে না ইঁদুরে কুটি কুটি করেছে?

আজ্ঞে না ঠিকই আছে।

বহুত আচ্ছা! তা হলে পেতে ফেলো। হারমোনিয়মটা সাবধানে বের করে আনন। এসরাজের সিল্কের তৈরি ঢাকা খুললেন। ঝকঝকে শরীরে মিহি ধুলো। নরম কাপড় দিয়ে সযত্নে মোছা হল। ছড়িতে রজন ঘষলেন। রজন ঘষার সরঞ্জাম তার এক অসাধারণ কারিগরি। ছোট্ট একখণ্ড কাঠ। বাটালি দিয়ে কুঁদে নৌকোর মতো আকৃতিতে এনেছেন। মসৃণ। ওভ্যাল। ভেতরের খোলে রজন গলিয়ে ঢেলে দিয়েছেন। তৈরি হয়েছে রজনের খোপ। বস্তুটা অপূর্ব এক কারুকর্ম। নাম– রজন কাঠ। ছড়ির ছড় বারকয়েক ঘষলেই তারে স্বচ্ছন্দ গতি।

এসরাজ বাঁধা হল। আমাকে বললেন, ওই গানটা গাইবার চেষ্টা করো। তাহারে আরতি করে…। এসরাজে ছড় টানলেন। মিঠে মোলায়েম সুর ডানা মেলে উড়ে গেল।

তাঁহারে আরতি করে চন্দ্রতপন, দেব মানব বন্দে চরণ–
আসীন সেই বিশ্বশরণ তার জগতমন্দিরে ॥

রমেশবাবু যেভাবে গান, সেইভাবে গাইবার চেষ্টা করছি। হচ্ছে না। তবু চেষ্টা আপ্রাণ।

অনাদিকাল অনন্তগগন সেই অসীম-মহিমা-মগন
তাহে তরঙ্গ উঠে সঘন আনন্দ-নন্দন-রে ॥

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন