১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
পাণ্ডুর হল আকাশের চাঁদ

কোনওকালে আমাদের বাড়িতে গোরু ছিল না; কিন্তু জাবনা দেবার একটা কাঠের পাত্র ছিল। আমাদের এইরকম অনেক কিছুই আছে। মাল আছে মালিক নেই। ভাব আছে ভাবী নেই? শাড়ি আছে, গহনা আছে, রমণী নেই। রান্নাঘর আছে রাঁধুনি নেই।

সেই কেঠোটি এখন শোবার ঘরে খাটের পাশে চলে এসেছে। ভেতরে গরম জল গোলাপি ধোঁয়া ছাড়ছে। পাশে একটা বালতিতে ঠান্ডা জল, মগ ভাসছে দুলে দুলে। আধ হাত ওপরে পিতার চরণদ্বয় ঝুলছে। ফুটবাথের প্রস্তুতি। মাথায় দু’পুরু ভিজে তোয়ালে। ঘড়ির শেষ শব্দ এইমাত্র বাতাসে মিলিয়েছে। এগারোটা বাজল। মেঘলা আকাশের তলায়, বৃষ্টি-ভেজা পথে রাত এগিয়ে চলেছে মধ্যযামের দিকে। বৃষ্টির বিরাম নেই। ঝোড়ো বাতাসে বন্ধ জানলা কেঁপে কেঁপে উঠছে।

পায়ের পাতা গরম জল স্পর্শ করেই ছো-মারা চিলের মতো ওপরে উঠে গেল। পিতা বললেন, মাই গড, ঢালো এক মগ ঠান্ডা জল।

আগেও কয়েক মগ ঢেলেছি। জল কিছুতেই সহনীয় উত্তাপে নামতে চাইছে না। পাদস্পর্শ সম্ভব হলেও পদকেলির সুযোগ মিলছে না। ছোবল-মারা উত্তাপ। চাঁদরের ঝোলা অংশটা হঠাৎ তুলে। ধরে বললেন, একী, কোথা থেকে রক্ত এল? হাত কেটেছে বুঝি? বঁটিতে পেয়ারা কাটতে গিয়েছিলে?

পা দুটো ওপরে তোলা ছিল। কথা বলতে বলতে খেয়াল নেই। জলে পা পড়ে গেল। উঁহু উঁহু করে পা তুলে নিলেন। বললেন, জল একবার গরম হলে আর ঠান্ডা হতে চায় না। কতটা কেটেছে?

ওটা রক্তের দাগ নয়, আয়োডিন।

হাত কাটেনি তো আইডিন নিয়ে কী করছিলে? এমব্রয়ডারি! চাদরটা দাগরাজি করে দিলে।

পা আবার ধীরে ধীরে জলের দিকে নামছে। এখুনি হ্যাঁকা লেগে যাবে। সাবধান সাবধান বলে একটু জোরে চিৎকার করে ফেলেছি।

ষাঁড়ের মতো চেল্লাচ্ছ কেন?

আজ্ঞে না।

আরও দুমগ জল ঢালো। হট বাথের চেয়ে কোলড বাথই ভাল। ধৈর্য থাকে না।

আজ মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে। জল ভেঙে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। দুমগ জল ঢাললুম। পা এবার ডুবেছে। কিছুক্ষণ পরেই খলবল খলবল করে শব্দ হবে। জলে এক তোলার মতো নুন। পড়েছে। এবার একটু সুস্থ হয়ে বসতে পেরেছেন। দু’পাশে দুটি হাত। মাথায় ভিজে তোয়ালে। ব্যাং ডাকছে। বৃষ্টির শব্দ, বাতাসের শব্দ। প্রকৃতির জলসাঘরে বসে আছি। চাঁদরে আবার একটা কী খুঁজে পেয়েছেন। দু’আঙুলে ধরে ওপর দিকে টেনে তুলছেন। উঠছে উঠছে। কী রে বাবা! লম্বা চুল। আলো আর চোখের মাঝখানে চুলটাকে দু’আঙুলে ঝুলিয়ে বললেন, একী? চাঁদরে মেয়েদের চুল। আশ্চর্য? সামথিং ফানি।

এ যেন ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া হচ্ছে। ওইরকম গোটাকতক চুল পেলেও আশ্চর্য হব না। পিতা বললেন, আইডিন, এলোচুল, মানুষ খুন করেছ নাকি?

আজ্ঞে না! কাকাবাবু কাকিমাকে চাবুক মেরেছেন।

চাবুক মেরেছে? কেন, লটারি পেয়েছে নাকি?

আজ্ঞে?

লটারি পেয়ে জমিদার বাচ্চা হয়েছে?

না, সেরকম তো কিছু দেখলুম না। তা ছাড়া লটারি পেলে মানুষ তো হাসতে হাসতে মরে যায় শুনেছি।

তা হলে চাবুক মারার জমিদারি শখ হল কেন?

তা তো জানি না। তবে কাকিমা এসেছিলেন, পিঠ দুফাঁক, ডায়াগোনালি মেরেছেন।

তুমি সেই পিঠে আইডিন লাগালে?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

বাঃ বেশ। তিনি এই বিছানায় বসলেন, তুমি লাগালে, তিনি শুয়ে পড়লেন, সারা চাঁদরে আইডিন আর লম্বা লম্বা চুল। জানো, এটা ব্যাচেলারদের বিছানা। বিছানা কত পবিত্র জানো? জানো বিছানা হল সাধনার পীঠস্থান! তান্ত্রিকের পঞ্চমুণ্ডী আসনের মতো।

আজ্ঞে হ্যাঁ জানি। তবে আপনি যদি দেখতেন, আপনিও কাতর হতেন। সে এক পাশবিক ব্যাপার।

পৃথিবীটাই তো পাশবিক। মানুষ এখানে আসে শাস্তি পেতে, সাফার করতে। নারী নির্যাতন এদেশে কোনও নতুন ঘটনা নয়।

আপনার কিছু বলা উচিত।

আমি বলব অন্যভাবে। আমার নীতি হল, টিট ফর ট্যাট। ওকে ঘুম থেকে টেনে তুলে স্কেল দিয়ে মেপে, সমান মাপের একটি ক্ষত তৈরি করে দেব।

সেটা কি ঠিক হবে?

তুমি কী করতে বলো?

আমার সেই ঘটনাটা মনে পড়ছে। সেই ভুজাওয়ালা!

ওঃ হেঃ আমাদের বাড়ির সামনের সেই উৎপাত!

আজ্ঞে হ্যাঁ, রাত বারোটার সময় স্ত্রীকে ধরে পেটাচ্ছিল, আপনি যেই স্বামীটাকে তেড়ে গেলেন। পেটবার জন্যে স্ত্রী অমনি ঝাটা নিয়ে আপনাকে তেড়ে এল। মনে পড়ছে?

হুঁ, পড়ছে। মার যে সোহাগ বুঝতে পারিনি। তোমার কি মনে হয় এটাও সেম কেস।

তা বলতে পারব না, তবে কাকিমা কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, একটু বিষ পেলে জীবনযন্ত্রণা জুড়োতেন।

হ্যাঃ, তুমিও যেমন, জীবনযন্ত্রণা জুড়োতেন। এদেশের মেয়েরা প্রতি মুহূর্তে আত্মহত্যার চিন্তা করে। সেই চিন্তা নিয়েই সুখে শেষ জীবন পর্যন্ত সংসারের জোয়াল ঠেলে। মৃত্যুর কথা ভাবা যায়, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া যায় না।

তা হলে এ নিয়ে আর রাগারাগি না করাই ভাল।

তুমি কিন্তু ডেঞ্জার জোনে চলে গেছ।

ডেঞ্জার জোন?

তোমার তো যোনো হয়ে গেছে?

আজ্ঞে হ্যাঁ, বহুদিন আগে।

তা হলে খোলাখুলি বলা চলে, কী বলে?

আজ্ঞে হ্যাঁ, পুত্র মিত্র, কী যেন বলে?

পা দুটো জলে খলবল করে উঠল। কোন দিকে মোড় নেবেন বুঝতে পারছি না। গভীর প্রদেশে চলে যাবেন নাকি? যেখানে জীব জগতের প্লাস আর মাইনাস ফ্যাক্টর অনবরত দাঁড়কাকের মতো

শুকনো ডালে বসে খাখা করছে। নীরবতা ভঙ্গ হল। পদকেলি শান্ত।

বুঝলে, মানুষের একটা বয়েস আসে, যে বয়েসটাকে বলে পিউবার্টি। তোমার গলার স্বর কত পালটে গেছে লক্ষ করেছ। তোমার ভেতরেই, তোমার অজান্তেই একজন পুরুষ বাসা বেঁধেছে। সেই পুরুষের অনেক চাহিদা আছে। বুঝতে পারো কিছু?

আজ্ঞে না, তেমন তো কিছু বুঝি না।

হয় তুমি অসুস্থ, না হয় তুমি মিথ্যেবাদী।

মিথ্যেবাদী শব্দটা সহ্য করতে পারি না। মাথায় আগুন জ্বলে যায়। আমি মিথ্যে কথা বলছি! পুরুষের ভেতর তো পুরুষই থাকবে। মেয়েছেলে থাকতে যাবে কোন আক্কেলে। মেয়েলি পুরুষকে তো লোকে গালাগালিই দেয়। বলে এফিমিনেট লৌভা। তা হলে প্রতিবাদ করা উচিত।

মিথ্যেবাদী বলছেন কেন? আমি তো কোনও মিথ্যে বলিনি। আমার গলা যখন সরু থেকে মোটা হল, তখন আপনি বয়সা লেগেছে বয়সা লেগেছে বলে দিনকতক এমন কাণ্ড করলেন, মনে হল আমার চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। মুখে একটা ব্রণ বেরিয়েছিল, সেই দেখে সাত দিন ভাল করে কথা বলেননি। প্রায় ত্যাজ্য পুত্র করে দেবার মতো অবস্থা। আজ বলছেন মিথ্যেবাদী। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

শোনো, শোনো মাই ডিয়ার সান, বাক্য দিয়ে, আবেগ দিয়ে সত্য চাপা যায় না। তোমার এই বয়েসটা আমিও পেরিয়ে এসেছি। কাম বলে একটা জিনিস আছে, জানো কি?

আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনেছি।

শোনননি, অনুভব করেছ। তুমি তো মানবপুত্র। যে-কোনও সুস্থ মানুষ জীবনের অসংখ্য মুহূর্তে ওই আবেগে বিচলিত হয়। দেবতারাও মুক্ত ছিলেন না। আমাদের শাস্ত্রকাররা বড় প্র্যাকটিক্যাল ছিলেন। যৌবনেই তারা বিবাহের বিধান দিয়েছিলেন। আমাদের অর্থনীতি পারমিট করে না বলেই, সাকার হয়ে সংসারী হতে হয়। অনেকে প্রৌঢ় বয়সে বিবাহ করে, যখন বিবাহের আর কোনও প্রয়োজন থাকে না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে– Early marriage late orphan, late mar riage early orphan. আমি তোমাকে একটা স্বাভাবিক চ্যানেলে ফেলে দিতে চাই। পজেটিভ লাইফ।

তার মানে? এখন কি আমার নেগেটিভ লাইফ!

দেখো বাপু, আমার মুখটা বড় আলগা। অবশ্য ভালগার নই। জীবন আমার কাছে জীবন। কোদাল আমার কাছে কোদাল। চাঁদ আমার কাছে চাঁদ, পৃথিবীর মৃত উপগ্রহ, প্রেয়সীর মুখ নয়। কিছুদিন আগে, তোমার মনে আছে নিশ্চয়, এ পাড়ার মানুষ এক হুলোর জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠেছিল। মাঝরাতে পাঁচিলে পাঁচিলে আউ ওঁআউ করে ডাকত। আমি চাই না, তুমি চাঁদনিরাতের কামতাড়িত হুলো হয়ে যাও।

নাঃ, আর বসে থাকা যায় না। অসহ্য আক্রমণ। একেই বলে হিটিং বিলো দি বেল্ট। সামনে থেকে সরে যাই। মুখে মুখে তর্ক করে লাভ নেই। ব্যাপারটা থিতিয়ে যাক।

চললে কোথায়? আমার সামনে থেকে পালালে, নিজের কাছ থেকে পালাতে পারবে? পারবে না। ধৈর্য ধরে বোসো। আমার চেয়ে ভাল বন্ধু পাবে না, আমার চেয়ে ভাল উপদেষ্টা পাবে না। তোমার শুরু আমার শেষ। যাবার আগে তোমার মা বলেছিলেন, খোকা রইল, তুমি দেখো। তোমাকে আমি তুলোয়-রাখা আঙুরের মতো মানুষ করেছি। অস্বীকার করতে পারো?

আজ্ঞে না।

তোমার চেয়ে জীবনকে আমি অনেক বেশি চিনি। অস্বীকার করতে পারো?

আজ্ঞে না। আমি তোমার চেয়ে অনেক বেশি পোড়-খাওয়া মানুষ। কোনও সন্দেহ আছে?

আজ্ঞে না।

তা হলে শোনো, যুদ্ধ দুর্গে বসেই করা ভাল।

কীসের যুদ্ধ?

ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অনবরতই মানুষের যে যুদ্ধ চলেছে, হারছে, জিতছে, উঠছে, পড়ছে, সেই অদৃশ্য যুদ্ধ সংসার দুর্গে বসে করাটাই হল গৃহীর ধর্ম। শক্তির আঁচলে বেশ করে নিজেকে বাঁধে, বেঁধে তাল ঠুকে বলো, কে আসবি আয়।

আপনি ধ্যান, জপ, দীক্ষা, এইসবের কথা বলছেন?

মনে হয় না। আধার ঠিক না হলে, ও সব হল ফাঁকি। মুখে বলি হরি, কাজে অন্য করি। মন্দিরে যার মাধব আছে তারই শাঁক ফোকা চলে। তোমাকে আমি সংসারী করব।

তার মানে?

চাকরিটা তোমার হচ্ছে, জানো বোধহয়।

আজ্ঞে না, হচ্ছে? আপনি কীভাবে জানলেন?

যে ভাবেই জানি, তোমার হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যেই চিঠি পাচ্ছ। সামনের ফাল্গুনেই তোমার আমি বিয়ে দেব। পাত্রী ঠিক করে ফেলেছি।

ইমপসিবল। হতেই পারে না।

ইমপসিবল কেন? তুমি নিজে কি কোথাও ঠিক করে বসে আছ?

নিজে ঠিক করব কেন? আমি কি বিয়ে-পাগলা!

বলা যায় না, এখন তো প্রেম আর আত্মহত্যার একটা হিড়িক পড়েছে। সেই বাতাসে তুমিও উতলা!

আজ্ঞে না। বিয়ে একটা থার্ড ক্লাস নোংরা ব্যাপার।

তাই নাকি! তা হলে আমরা খুব অন্যায় করে ফেলেছিলুম বলো! তোমার মায়ের সঙ্গে একটা থার্ড ক্লাস অ্যাফেয়ারে জড়িয়ে পড়ে, তোমার মতো একজন ফাস ক্লাস মহামানব লাভ করেছি!

আমি সে কথা বলিনি। আমার মত আলাদা, পথ আলাদা। সংসারে একজন সন্ন্যাসী হলে চতুর্দশ পুরুষ উদ্ধার হয়ে যায়। আমি সংসারের পাঁকে ডুবতে চাই না।

সন্ন্যাসী তুমি হতে পারবে না।

আলবাত পারব।

আমি লিখে দিচ্ছি তুমি পারবে না। সে গাছ আলাদা, সে ফল আলাদা, সে মাটি আলাদা। তুমি তো এই গাছের ফল। আমার ভেতরটা দেখো। সাংসারিক বুদ্ধিতে জবজবে, বৈরাগ্যের ছিটেফোঁটাও নেই। এখনও ভাদুয়া ঘিয়ে ভাজা ফুলকো ফুলকো লুচির লোভ গেল না। শীতের প্রথম বেগুনভাজার জন্যে প্রাণ আঁকুপাঁকু করে। ঈশ্বরে ছিটেফেঁটাও বিশ্বাস নেই। আমি বুঝি কর্ম। কর্মেই মুক্তি, কর্মেই সিদ্ধি। তুমি তো খুব কথামৃত পড়ো, ঠাকুরের সেই কথাটা মনে পড়ে?

কোন কথা?

সেই যে সাধুর কমণ্ডলু চার ধাম ঘুরে আসে, কিন্তু যেমন তেতো, তেমনি তেতো থাকে। মলয়ের হাওয়া যে-গাছে লাগে, সব চন্দন হয়ে যায়। কিন্তু শিমুল, অশ্বথ, আমড়া এরা চন্দন হয় না। কেউ কেউ সাধুসঙ্গ করে গাঁজা খাবার জন্যে। সাধুরা গাঁজা খায় কিনা তাই তাদের কাছে এসে বসে গাঁজা সেজে দেয় আর প্রসাদ পায়।

আপনি যাই বলুন, বিয়ে আমি করব না। নারী নরকস্য দ্বার।

বাঃ, তোতাপাখির মতো বেশ কপচাতে শিখেছ তো! নারী যে শক্তি তা কি জানো? তোমার অস্ত্রেই তোমাকে কাত করে দিই। ঠাকুর এক জায়গায় বলছেন, বিদ্যারূপিণী স্ত্রীও আছে, আবার অবিদ্যারূপিণী স্ত্রীও আছে। বিদ্যারূপিণী স্ত্রী ভগবানের দিকে নিয়ে যায়, আর অবিদ্যারূপিণী। ঈশ্বরকে ভুলিয়ে দেয়, সংসারে ডুবিয়ে দেয়। আমি যার হাতে তোমাকে তুলে দিচ্ছি, তিনি হলেন বিদ্যারূপিণী। তাঁর পাশে তুমি এক মর্কট।

তা হলে, জেনেশুনে আপনি বিদ্যার গলায় একটি মর্কট ঝোলাতে চাইছেন কেন?

যদি তুমি একটু মানুষ হও। তোমার এই উড়ুউড়ু, পাখি-পাখি ভাবটা কেটে গিয়ে, যদি একটু দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হতে পারো।

মানুষ হবার জন্যে মানুষ গুরুর কাছে যায়, সুন্দরী স্ত্রীর কাছে যায় না।

টেবিলের ওপর থেকে ওই খামটা নিয়ে এসো।

খাম থেকে সেই বর্ষণসিক্ত মধ্যরাতে অর্ধমাপের একটি ছবি বেরিয়ে পড়ল। ফুটবাথের জল শীতল হয়ে গেছে। তবু ডুবে আছে। এই মানুষটি দিনরাতের হিসেব তেমন গ্রাহ্য করেন না। কত রাত জেগে কাটিয়েছেন! কত রাতে এসরাজ বেজে গেছে দরবারির কোমল মোচড়ে।

এদিকে এগিয়ে এসো। অবাধ্য হোয়ো না। বসন্ত আসছে। এ সংসারে আমরা বড় রুক্ষ হয়ে আছি। আমাদের চিন্তাভাবনা বড় বাউন্ডুলে হয়ে গেছে। একটু সবুজ হতে হবে। জীবনের কথা কেউ বলতে পারে! আজ আমি আছি, কাল হয়তো থাকব না। কে বলতে পারে, ঘরের ওই কোণে মৃত্যু হয়তো এসে বসে আছে। ঘড়ি দেখছে, ক্যালেন্ডার দেখছে। তুমিও জানো না, আমিও জানি না। ছবিটা একবার দেখে যাও। আমার বন্ধুর মেয়ে। ঈশ্বর কত বড় স্রষ্টা একবার দেখে যাও! আমি অবশ্য ঈশ্বর মানি না।

পিতার ভাবাবেগ অঝোর বর্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে। পুত্রের সঙ্গে কোন পিতা এমন খোলাখুলি কথা বলতে পারেন! মিথ্যে বলব না, বন্ধুকন্যা অপরূপা। কুমোরটুলিতে অর্ডার দিয়ে তৈরি। রবিবর্মার পৌরাণিক ছবির নারীমূর্তির মতো। তেমনভাবে তাকাতে পারছি না। ফিচিক ফিচিক করে চোরাচাহুনিতে যতটুকু দেখা যায়।

পিতা বললেন, তুমি হেরে গেলে। তোমার বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে।

কেন?

তুমি সোজাসুজি তাকাতে পারছ না। তুমি সংকুচিত। তোমার মধ্যে প্রেমও নেই ভক্তিও নেই। ও দুটো না থাকলে সন্ন্যাসী হওয়া যায় না। প্রেমার্পণ সম দরশন জগজন-দুঃখ যায়। শঙ্করের মাথা চৈতন্যের হৃদয় চাই। জানি এখুনি তুমি প্রতিবাদ করবে। তোমার মধ্যে শিশুর সরলতা থাকলে। এদিকে তাকাতে অমন ইতস্তত করতে না। হৃদি বৃন্দাবনে বাস যদি করো কমলাপতি/ওহে ভক্তিপ্রিয় আমার ভক্তি হবে রাধাসতী, মুক্তিকামনা আমারই হবে বৃন্দে গোপনারী/দেহ হবে নন্দের পুরী স্নেহ হবে মা যশোমতী ॥

প্রায় সংগীতের মতো করে পিতা চরণকটি উচ্চারণ করলেন। পা দুটো জল থেকে উঠে এসে আপাতত ভোয়ালের আশ্রয়ে। ছবিটা বিছানায় চিত হয়ে পড়ে আছে। পিতার পাশে কন্যার মতো। চোখ পড়লেই মনে হচ্ছে সেই অন্তরালবর্তিনী হেসে উঠছে। নাকে মনে হয় ছোট্ট একটি হিরের। ফুল। সাদাকালো ছবিতেও চিকিরমিকির করছে। বেশ স্নেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আগামী জীবনের সুন্দর একটা পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছি, এখন তুমি যদি না বানচাল করে দাও। এই জরাজীর্ণ বাড়িটা আমি এবার বেচে দেব। এর দেয়ালে দেয়ালে জীবনের বিষণ্ণ স্মৃতি। আর একটু নিরিবিলি দিকে সরে গিয়ে বিযেখানেক জমি কিনব। সেই জমিতে ছোট্ট একটা। কটেজ টাইপ বাড়ি করব। চারপাশে বাগান করব নিজের হাতে। স্থলপদ্ম, টিকোমা জেসমিন, সবরকমের করবী, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, গুলমোহর, জবা, টগর, গোলাপের ফোয়ারা ছোটাব। চটিটা একটু এগিয়ে দাও তো, উঠে দাঁড়াই।

চটিজোড়া খাটের পাশে এগিয়ে দিতে গিয়ে মেঝে থেকে আর একটি মেয়েলি জিনিস আবিষ্কার করলুম, মুখখোলা সেফটিপিন। সর্বনাশ! পায়ে ফুটলে হয়েছিল আর কী! সাধে কি মেয়েরা কাছখোলা।

ঘরে পায়চারি করতে করতে পিতা বলতে লাগলেন, বাথরুমটা করব বেশ বড়। দেয়াল, মেঝে সব মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধাব। বিরাট একটা বাথটব বসাব। শাওয়ার থাকবে। তোমার মা খুব চান করতে ভালবাসত। খুব শখ ছিল এইরকম একটা বাথরুমের। এই বাথরুম আমি উৎসর্গ করব আমার পুত্রবধূকে। একে বলে হামাম। দুটো হলঘর হবে। একটায় বসবে জলসা, আর একটা হবে লাইব্রেরি। বাগানে থাকবে গার্ডেন লাইট আর ফোয়ারা। যুদ্ধে আমার জীবন হয়ে গেছে পোড়ামাটি। তোমার জীবন আমি ভরে দোব। ফুলের মতো একটি নাতি আর একটি নাতনি। নাতিকে আমি নিজে হাতে তৈরি করব। বিরাট ম্যাথেমেটিশিয়ান, এ গ্রেট র্যাংলার। নাতনিকে করব ডাক্তার, এ লেডি উইথ দি ল্যাম্প। তোমার মনে নেই, আমাদের একটা কুকুর ছিল। তার নাম ছিল জিম। নিউফাউন্ডল্যান্ড ডগ। মেজদা মারা গেল, সাত দিনের দিন মারা গেল জিম। ওইরকম একটা কুকুর পুষব। যারা চলে গেছে তাদের আর ফেরাতে পারব না। তা না পারি, নতুন হাট তো বসাতে পারি। এক কূল নদী ভাঙে নিরবধি আবার অন্য কূলে আকুলে সাজায়। লেট আস হ্যাভ সাম মিউজিক।

ঘরের কোণে টেবিলের ওপর পরিপাটি করে রাখা দম দেওয়া গ্রামাফোন, এত বড় তার চোঙা। দম দেবার হাতলটা ভারী সুন্দর। কুকুর-মার্কা ছোট্ট কৌটো থেকে পিন বেরোল। ঘরঘর করে দম দিলেন বারকতক। বাইরে বৃষ্টি ভেতরে সংগীত। শূন্য এ বুকে পাখি মোর, আয়, ফিরে আয়, ফিরে আয়।

পেছনে হাত জোড় করে ঘরে পায়চারি করছেন। ঘড়ির পেন্ডুলাম ঠাস ঠাস করছে। জ্ঞান গোস্বামীর গলায় গানের সুর তিরের ফলার মতো বিধছে–তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ, পাণ্ডুর হল আকাশের চাঁদ।

ঘরের মাঝখানে থেমে পড়ে পিতা বললেন, মেয়েটির নাম অপর্ণা। আমি তাকে এই এতটুকু দেখেছি। তোমার মায়ের চেহারার সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য। শুধু সুন্দরী নয়, সুশিক্ষিতা। লেটার নিয়ে ইন্টারমিডিয়েট করেছে। সামনের বার ফিলসফিতে অনার্স নিয়ে বি এ দেবে। বি এর আগেই বিয়ে, তারপর এম এ করাব। তোমরা সুখী হও।

গানের শেষ চরণ বাজছে, শূন্য এ বুকে পাখি মোর, আয়, ফিরে আয়, ফিরে আয়। খটাস আওয়াজ করে রেকর্ডের ওপর থেকে হাতলটা সরে গেল একপাশে। এবার শুধু বৃষ্টির শব্দ, হাওয়ার ওঠাপড়া। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পিতা দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুক কেঁপে উঠল। এ বাড়িতে অল্পবিস্তর অশরীরীদের আনাগোনা আছে। এই ঝড়ের রাতে কেউ অভিসারে এলেন নাকি! চৌকাট টপকে সরার মতো কী একটা বস্তু মেঝেতে ঠকাস করে উলটে পড়ল।

ইনি আবার কে এলেন, এই মাঝরাতে?

আজ্ঞে ওটা একটা কচ্ছপ।

কচ্ছপ? কচ্ছপ কোথা থেকে এল? দেখো দেখো, এরপর হয়তো একটা গজ এসে ঢুকবে।

আজ্ঞে না, গজ মনে হয় আসবে না। কচ্ছপ আজ দুপুরে পাতকো থেকে উঠেছে।

সেকী?

মনে হয় সুড়ঙ্গপথে গঙ্গা থেকে এসেছে। নীচে ছিল বালতিতে চোবানো, ওপরে উঠে এসেছে।

বলো কী? অত্যন্ত শুভলক্ষণ। ভবিষ্যতের চিন্তা করতে না করতেই প্রাপ্তিযোগ। ইনি পুরুষ না মহিলা?

তা তো জানি না।

এর একটা নাম রাখতে হয়। কী নাম রাখা যায়!

বলাই।

বলাই। নট ব্যাড। বলাইবাবু। ওটাকে আমি পুষব। আপাতত আজ রাতের মতো এই বালতিতে থাক। আপ মাই বয়, আপ।

দেখবেন, কামড়ে না দেয়!

কামড়াবে কেন?

দু’হাতে তুলে বালতিতে বলাইবাবুকে ফেলা হল। সলিলশয্যায় বলাই ভাসতে লাগল। পিতা একটি রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড চাপালেন। পঙ্কজ মল্লিক। কেন বাজাও কাঁকন কনকন। বড় ডেকচেয়ারে হাত-পা ছড়িয়ে বসে বললেন, পাজিটা একবার দাও। ইচ্ছে করলে শুয়ে পড়তে পারো।

সিঁড়িতে এবার স্পষ্ট পায়ের শব্দ। পিতা শুনতে পাননি। পাঁজি নিয়ে ব্যস্ত। শব্দটা খুবই চেনা। দরজার মুখে প্রফুল্লকাকা, ভাই হরি!

পিতা মুখ না তুলে গম্ভীর গলায় বললেন, গেট আউট।

সেভ মি হরি। ওয়াইফ ফিভার। স্পিকিং ডিলিরিয়াম।

পিতা মুখ তুললেন, আর একটু ধরে পেটাও না রাসকেল।

রাগের মাথায় অন্যায় করে ফেলেছি ভাই। এই আমি কান ধরে ওঠবোস করছি।

কান ধরে সত্যিই ওঠবোস শুরু করলেন ভদ্রলোক। আর ঠিক সেইসময় বলাইবাবু মেঝেতে উলটে পড়লেন।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন