২.১৭ As face reflects face in water

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

As face reflects face in water
So the mind of man reflects man.

আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কানে রিসিভার। ওপাশ থেকে কোন সংবাদ ভেসে আসছে বোঝার উপায় নেই। তবে সুরঞ্জনার বাবার মুখের চেহারা যেন পালটাচ্ছে। টেলিফোন ধরা বা করার সময় বোঝা যায় নিজের ওপর একজন মানুষের কতটা নিয়ন্ত্রণ। সুরঞ্জনার বাবা শান্ত স্থির, সংযত। শুধু শুনে যাচ্ছেন। কোনও কথা নেই। সব শেষে স্থির গলায় একটি কথাই বললেন, আমি আসছি। ধরে রাখুন।

ফোন নামিয়ে আমাদের কাছে এসে বসলেন। পরিবারের সকলের এমন ট্রেনিং, কেউ কোনও কৌতূহল প্রকাশ করলেন না, কার ফোন, কী ফোন? সবাই কিন্তু টানটান হয়ে ছিলেন। সকলেই একটি সংবাদের প্রতীক্ষায়। কোথায় সে? নিজের মন দিয়ে অন্যের মন বুঝতে পারি! দূর থেকে যখন দেখি বাড়ির দিকে পিয়ন ভদ্রলোক এগিয়ে আসছেন, আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।

গলা শুকিয়ে আসে। সুরঞ্জনার বাবা কিছুক্ষণ বসে রইলেন স্থির হয়ে। আমরা সকলে নীরবে তাকিয়ে আছি তার মুখের দিকে। হয়তো কিছু বলবেন। সুরঞ্জনার মা কাঠের পুতুলের মতো হয়ে গেছেন। সুরঞ্জনার বাবা অবশেষে বললেন, একটা খবর এল। বিলুর ব্রিফকেসটা পাওয়া গেছে।

সুরঞ্জনার মা সামান্যতম উত্তেজনা না দেখিয়ে শান্তভাবে বললেন, আর বিলু?

কোনও সন্ধান নেই। ব্রিফকেসটা খগপুরের লেফট লাগেজে জমা পড়েছিল। টোকেন নাম্বার টু থ্রি। কেসটা কলকাতায় এসেছে। আমি একবার যাই। দিস ইন্ডিকেটস, বিলু আর নেই। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। মোটিভ? হয় নির্ভেজাল ডাকাতি, হয় কোনও ষড়যন্ত্র। হোয়াটেভার ইট মে বি, বিলু আমাদের জীবনে আর ফিরছে না! ক্লোজড চ্যাপ্টার। ঠিক এই সময় আমি ফিল করছি হরিদার অভাব। হরিদার গিয়ার যদি আমি পেতুম! হিজ ব্যালেন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল। তার ডাইভারশন ট্যাকটিক্স। তার বিচার।

কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, কিছু করার নেই। টেক ইট ইজি, টেক ইট ইজি। মানুষের জীবনে কখনও কখনও এইরকম হয়। অন্য পরিবারে না হয়ে আমাদের পরিবারে হয়েছে। দি চপার ফেল অন আস।

ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। সমস্ত বাতাস কে যেন শুষে নিল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সুরঞ্জনার মায়ের মুখে কালো একটা ছায়া দুলছে। সুরঞ্জনা আমার ডান হাত চেপে ধরেছে। হাত বরফের মতো শীতল। এত জোরে ধরেছে, কোনও খেয়াল নেই, মানুষের হাত না লোহা!

আমার ভেতরে আবার সেই বিদ্রোহ, কী হয়? ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে লাভ কী, যে-ঈশ্বর মানুষকে রক্ষা করতে জানে না। শুধু ভক্তি নেবেন, পূজা নেবেন, ত্যাগ নেবেন, বৈরাগ্য নেবেন, দেওয়ার বেলায় কিছুই দেবেন না। তিনি কি আছেন? সেই অলমাইটি! হিজ লর্ডশিপ। God is dead! Heaven is empty, weep, children, you no longer have a father / Goie wicht is go বিশ্বাস নিয়ে গান করলেন, ধ্যান করলেন, তাদের জন্যে একটু ভাল খবর কি আসতে নেই! বিধির বিধান অতি বিচিত্র! এই সংশয়েরও উত্তর আছে। যারা আছেন মহামানবের দলে তারা জানেন। বলবেন, কী জানো, সুখ-দুঃখ দেহধারণের ধর্ম। কবিকঙ্কন চণ্ডীতে আছে যে, কালুবীর জেলে গিয়েছিল, তার বুকে পাষাণ দিয়ে রেখেছিল, কিন্তু কালুবীর ভগবতীর বরপুত্র। দেহধারণ করলেই সুখ-দুঃখ ভোগ আছে। আবার, শ্ৰীমন্ত বড় ভক্ত। আর তার মা খুল্লনাকে ভগবতী কত ভালবাসতেন। সেই শ্ৰীমন্তের কত বিপদ। মশানে কাটতে নিয়ে গিয়েছিল। আরও আছে, একজন কাঠুরে পরমভক্ত, ভগবতীর দর্শন পেলে; তিনি কত ভালবাসলেন, কত কৃপা করলেন। কিন্তু তার কাঠুরের কাজ আর ঘুচল না। সেই কাঠ কেটে আবার খেতে হবে। কারাগারে চতুর্ভূজ শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী ভগবান দেবকীর দর্শন হল। কিন্তু কারাগার ঘুচল না।

হাতে এক ফোঁটা জল পড়ল। তাকিয়ে দেখি সুরঞ্জনার দু’গাল বেয়ে জল নামছে। ফোঁটা ফোঁটা। একের পর এক গড়িয়ে চলেছে। প্রথামতো কিছু বাঁধা বুলি এইসময় মুখে আসতে চায়, ভাবছ কেন? বিচলিত হচ্ছ কেন? মন শক্ত করো। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ভাগ্যে যা থাকে তাই হয়। এখনই কেন ভাবছি তিনি নেই? এইসব ফাঁকা ফাঁকা বহু ব্যবহৃত কথা।

সুরঞ্জনা আমার পাশের চেয়ারেই বসে ছিল। ধীরে ধীরে তার মাথাটা আমার কাঁধে নেমে এল। আলতো, আলগোছে। একমাথা চুল, কিছু আমার গালে, কানের কাছে, এক স্তবক আমার বুকের কাছে, রেশমের চামরের মতো দুলছে বুকের কাছে। অদূরেই মুকু। আমার ভয় করছে। আমার শিথিল বাঁ হাত চাইছে সুরঞ্জনার মাথায় উঠে যেতে। সুরঞ্জনার মনের ভাব আমি পড়তে পারছি না।

সুরঞ্জনার মা বললেন, তোমার সঙ্গে আমার বিলুর চেহারার অনেক মিল। মুখটা তো একেবারে কেটে বসানো। ও কেমন করে বলছে, বিলু নেই! ব্রিফকেসটা কেমন করে না-থাকার প্রমাণ হয়! আমি ঠাকুরকে এত ডাকি! তবু আমার এই সর্বনাশ কেন হবে! তিনি আমার কথা শুনবেন না!

সুরঞ্জনার মায়ের মুখ উদাস, বর্ণহীন। কথাগুলো ভাবে বলছেন। স্বগতোক্তির মতো। সুরঞ্জনার বাবা ফুল-ইউনিফর্মে ঘরে এলেন। রিভলভারটা তুলে নিয়ে ভরে দিলেন কোমরের খাপে। আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, সরি! তোমাদের সব কথা শোনার সময় আমার হল না আজ। পরে শুনব। আর একদিন এসো। কী করব বলো? বড় বিপাকে পড়েছি।

সুরঞ্জনার মা বললেন, তোমার সঙ্গে যাব?

না না, তুমি কোথায় যাবে? আগেই খারাপটা ভাবছ কেন? তোমরা বোসো। অন্য প্রসঙ্গ করো।

একেবারে অন্য একজন মানুষ। সেই কোমল ভাব অদৃশ্য। ঋজু, কঠিন। স্প্রিং-এর মতো বেরিয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে। সুরঞ্জনা এগিয়ে গেল পেছন পেছন। আমি মুকুকে তৎক্ষণাৎ ইশারা করলুম, চলো, আমরাও উঠি।

মুকু হাতের ইশারায় বললে, আর একটু!

সুরঞ্জনার মা উদ্দেশ্যহীনভাবে সারা ঘরটা একবার ঘুরে এলেন, তারপর টেবিলের সামনে পঁড়িয়ে বললেন, এখন আমি কী করি? আমার ভেতরটা যে ভীষণ ছটফট করছে। মনে হচ্ছে ফেটে যাবে।

মুকু বললে, জপ করুন! স্থির হয়ে বসে নিরবচ্ছিন্ন জপ!

অ্যাঁ, তুমি তো ঠিক বলেছ! কেমন করে বললে? এইটুকু মেয়ে, তুমি জানলে কী করে? তুমি কি দীক্ষিতা!

আমার একজন গুরু আছেন। তিনি কোথাও লুকিয়ে আছেন আমাদের পরীক্ষা নেবার জন্যে। একলা আমরা পথ হাঁটতে পারি কি না দেখার জন্যে। যাঁর খোঁজে আজ আমরা এখানে কাকাবাবুর কাছে এসেছি। আমার সব শিক্ষা তার কাছে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ভেতরে আলো জ্বালাতে পারলে বাইরে আর অন্ধকার থাকে না। কোনও দিনই মেঘলা নয়। সেই দিনই মেঘলা যেদিন তাকে স্মরণ করা হয় না। একদিন দুপুরে খুব মন খারাপ করে বসে আছি জানলার ধারে, তিনি এসরাজের খোল সেলাই করছিলেন, আমাকে কাছে ডাকলেন, কী হয়েছে তোমার? বললুম, আমার কেউ নেই, থেকেও নেই। আমি অনাথ। তিনি বললেন, তোমার এই বিশ্বাস নেই, পৃথিবীতে কেউ অনাথ নয়? আমরা সবাই রাজা, সেই রাজার রাজত্বে। বলতে পারছ না, যার কেহনাই তুমি আছ তার? আমারই বা কে আছে? কিন্তু আমি আত্মসমর্পণ করেছি। যথার্থ আত্মসমর্পণ। তিনি আমাকে একটা উদাহরণ দিলেন, জনক রাজার। তিনি অষ্টাবক্রের কাছে আধ্যাত্মিক বিষয়ে উপদেশ চাইতে গিয়েছিলেন। উপদেশলাভের পর জনকরাজা যখন ফেরার জন্যে ঘোড়ায় চড়তে যাচ্ছেন, এক পা জিনের পাদানিতে রেখেছেন, সেই সময়ে অষ্টাবক্র বললেন, কই, আমার গুরুদক্ষিণা দিলে না যে! জনক বললেন, আমার সর্বস্ব আপনাকে দিলাম। আমার রাজ্য, আমার বলতে যা কিছু আছে সব, এমনকী নিজেকে পর্যন্ত গুরুদক্ষিণারূপে আপনাকে দিলাম। অষ্টাবক্র সে দক্ষিণা গ্রহণ করলেন। রাজা জনক। এক পা পাদানিতে রাখা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে রইলেন, ঘোড়ার পিঠে চড়তে পারলেন না। কিছুক্ষণ। পর অষ্টাবক্র তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হল, ঘোড়ায় উঠছ না কেন? মিথিলায় ফিরবে না? জনক বললেন, যাই কী করে? আমার সর্বস্ব তো আপনাকে সমর্পণ করেছি, আমার নিজের বলতে কিছুই তো নেই। কাজেই নিজের ইচ্ছা বলতেও কিছু নেই আর। ঘোড়ায় চড়ার ও মিথিলায় ফিরে যাবার শক্তিই আমার নেই। অষ্টাবক্র তখন জনককে সব ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, আমার হয়ে তুমি রাজ্যশাসন করো। এরই নাম যথার্থ আত্মসমর্পণ! তুমি সব দিয়ে দাও তাকে, দেখবে তোমার সবকিছু ফিরে আসবে। কেউ নেই মানে? তিনি আছেন, ভয়ংকরভাবে আছেন। আছ অনল-অনিলে চিরনভোনীলে ভূধরসলিলে গহনে/ আছ বিটপীলতায় জলদেরি গায় শশী-তারকায় তপনে ॥ অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে। সে পায় তোমার হাতে। শান্তির অক্ষয় অধিকার। কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে। শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে। আপন ভাণ্ডারে।

মুকু হুহু করে কেঁদে ফেলল। এ কী ভাব! সুরঞ্জনার মা মুকুকে জড়িয়ে ধরলেন দু’হাতে। তিনিও কাঁদছেন। অপূর্ব দৃশ্য। অপরাধীর মতো আমি একপাশে চুপ। অপরাধী, কারণ আমার চোখে এক ফোঁটা জল নেই। আমার পিতার প্রসঙ্গে দু’জনে কাঁদছে। আমি কেন কাঁদতে পারছি না? আমি কি এমনই পাষণ্ড! সুরঞ্জনা ঘরে ঢুকল। আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বললে, কী হয়েছে?

উত্তর দিতে গিয়ে আমার গলা দিয়ে স্বর বেরোল না। পুঁটলির মতো কী একটা আটকে গেল স্বরযন্ত্রে। জল আসছে চোখে। দীর্ঘ খরার পর বহুঁকাঙিক্ষত বর্ষণ। সুরঞ্জনা অবাক হয়ে বললে, কী হল আপনাদের?

অতি কষ্টে বললুম, কিছুই হয়নি। তেমন কিছু নয়।

সুরঞ্জনা এগিয়ে গিয়ে তার মায়ের পিঠে হাত রেখে বললে, তুমি কেঁদো না মা। শরীর খারাপ হবে। আবার তুমি বিছানায় পড়বে।

মুকু একপাশে সরে গিয়ে চোখ মুছল। ভারী গলায় বললে, আমরা তা হলে আসি আজ?

সুরঞ্জনা বললে, এখনই যাবে?

আমরা এখন বেরোলে বাড়ি পৌঁছোতে রাত দশটা বাজবে। আমাদের দিদি একলা আছেন। কাল আমরা খবর নোব। আমার গভীর বিশ্বাস, দাদা ফিরে আসবেন।

লুকিয়ে থাকার তো কোনও কারণ নেই!

হয়তো আছে, আমরা জানি না। আমার মেসোমশাইয়ের অদৃশ্য হবার কারণ কী? কেউ জানে না। আমরা রাস্তায় নামলুম। মুকু বললে, সুন্দর পরিবার! তবে কোথাও একটা পাপ লুকিয়ে আছে। সুরঞ্জনার মা মনে হয় মারাঠি মহিলা। সুরঞ্জনার বাবা তার দ্বিতীয় স্বামী। এই পয়েন্টে একটা গোলমাল আছে।

তুমি একেবারে সবজান্তা। বিকেল থেকে খুব অকাল্ট পাওয়ার দেখাচ্ছ। তোমার অত ক্ষমতা নেই।

এটা অলৌকিক ক্ষমতা নয়, চোখ। চোখ খোলা রাখলে তুমিও দেখতে পেতে।

কী দেখতে পেতুম?

একটা গ্রুপ ফটো। ছবিতে সুরঞ্জনার মা, আর একজন ভদ্রলোক ও একটি শিশু। ওই শিশুটি হল সুরঞ্জনার দাদা। প্রথম পক্ষের ছেলে।

তোমার শার্লক হোমস হওয়া উচিত ছিল।

পিয়োর ডিডাকশন মাই ডিয়ার ওয়াটসন।

ট্রাম ট্রাম বলে মুকু ধড়ফড়িয়ে ছুটল। রাতের প্রায়-খালি ট্রাম। আমরা বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলুম। একটু শীত-শীত ভাব। মুকু পাশে থাকায় বেশ একটা নির্ভরতার ভাব আসছে। মনে হচ্ছে, মায়ের একটু হাত ধরে বেড়াতে বেরিয়েছে ছেলে। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ নিজের জীবন বয়ে বেড়াননা। সামনে কত চড়াই, উতরাই। কত বছর যে হাঁটতে হবে। চোখ বুজিয়ে ভাবছি। হঠাৎ এক চিমটি, ঘুমোচ্ছ কেন?

ঘুমোইনি তো! ভাবছি!

সুরঞ্জনার দাদা হল প্রথম পক্ষের ছেলে। তিনি তার বাবার কাছে ফিরে গেছেন, কারণ সেই মানুষটি মহারাষ্ট্রের কোনও শহরে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন! এক নারীর বিশ্বাসঘাতকতায় সমস্ত নারীর প্রতি তার ঘৃণা! মেয়েদের সাধারণত মাথার ঠিক থাকে না। জানো তো, আবেগও একটা বেগ।

মুকু হঠাৎ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললে, তোমার চশমা?

আমার চশমা? চশমা আমার চোখে নেই? চোখে হাত দিলুম। ফাঁকা।

তোমার চোখে চশমা আছে কি নেই বুঝতে পারছ না?

তাই! তাই ভাবছি, আলোগুলো কেমন যেন ছেতরে গেছে! মানুষের মুখগুলো বড় বড় আর অন্ধকার।

কোথায় ঘুচিয়ে এলে প্রভু!

এখন মনে পড়ছে। তখন চোখে জল এসে গিয়েছিল। চোখ মোছার জন্যে চশমাটা খুলে টেবিলেই রেখে এসেছি।

বেশ করেছ। আবার নামো। আবার ফিরে চলো। একটা কাজ যদি সুষ্ঠুভাবে হয়! বিরক্তি!

ট্রাম আট-নটা স্টপ চলে এসেছে। আমরা নেমে পড়লুম। উলটো দিকের ট্রাম ধরে আবার সুরঞ্জনাদের বাড়িতে। সদর দরজা বন্ধ। কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে আছি। সুরঞ্জনাই দরজা খুলল। বেশবাস পালটে গেছে। আমাদের দেখে অবাক, কী হল? ফিরে এলেন?

আমার চশমা, আপনাদের ওপরের টেবিলে। যদি দয়া করে এনে দেন।

ভেতরে আসবেন না?

আর না। সেই কোথা থেকে ফিরে আসছি!

ছি ছি, আমারই লক্ষ করা উচিত ছিল।

মুকু বললে, যার চশমা তারই যদি খেয়াল না থাকে, আমরা কী করতে পারি! ফ্যাশনের চশমা। সুরঞ্জনা চলে গেল। দরজার মাথার ওপর ঘষা কাঁচের শেডে আলো জ্যোৎস্নার মতো ছড়িয়ে গেছে। আমরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাড়িটা বড় বেশি নির্জন। যেন সব ঘটনা থমকে গেছে! একটা গাড়ির হেডলাইট আমাদের ওপর দিয়ে ঘুরে গেল। বাঁক নিচ্ছিল। দরজার সামনে এসে থামল। পেছনের দরজা খুলে সুরঞ্জনার বাবা নামছেন। মুকুর কী হচ্ছে জানি না। আমি পাথর হয়ে গেছি। কী খবর বাড়িতে ঢুকছে কে জানে!

ভদ্রলোক এগিয়ে এসে অবাক হলেন, কী ব্যাপার! তোমরা দাঁড়িয়ে?

মুকু বললে, কাকাবাবু, কী খবর?

মুকুর পিঠে হাত রেখে হাসিমুখে ভদ্রলোক বললেন, ওটা আমার ছেলের ব্রিফকেস নয়, নামটা যদিও এক। ভেতরের কন্টেন্টসও সব অদ্ভুত। সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই। বিলু স্মোক করে না। একটা ময়লা রুমাল। কিছু চিঠি। ছোট্ট একটা নোটবুক। লোহালক্কড়ের হিসেব। একই নাম আর টাইটেলের কত লোক আছে!

সুরঞ্জনা এসে গেছে। হাতে চশমা। মুকু বললে, কী বলেছিলুম সুরঞ্জনা? ওটা দাদার ব্রিফকেস নয়। আমি একটা কথা বলব কাকাবাবু?

বলো মা।

কিছু মনে করবেন না?

কেন করব?

দাদাকে খোঁজ করুন তার বাবার কাছে।

ভদ্রলোক একেবারে স্তব্ধ। সুরঞ্জনা চশমাটা এগিয়ে দিল আমার হাতে। হাত কাঁপছে।

ভদ্রলোক নিজেকে সহজ করে নিয়ে বললেন, তুমি এই সিক্রেটটা জানলে কী করে মা? কেউ বলেছে?

আজ্ঞে হ্যাঁ। একটা গ্রুপ ফটো। দেয়ালে ঝুলছে।

উঃ, তোমার সাংঘাতিক অবজার্ভেশন! কিন্তু দ্বিতীয়টা? কী করে বললে সেখানেই গেছে?

কাকাবাবু, আমার ইনটিউশন।

তুমি আজ আমাকে মস্ত বড় একটা কিউ দিয়ে চলে গেলে। চলো, তোমাদের পৌঁছে দিয়ে আসি।

না কাকাবাবু, সে অনেক দূর। আমরা লজ্জায় মরে যাব। আপনাকে আবার অতটা পথ ফিরে আসতে হবে। আমরা এমনিই বেশ ফিরে যেতে পারব। তেমন বেশি রাত হয়নি কাকাবাবু!

তুমি কি পড়ছ?

আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি এম এ দিচ্ছি, ফিলজফিতে।

তোমাকে আমি বলে রাখছি, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে পরীক্ষা দিয়ো। তুমি খুব শাইন করবে। তোমার মতো বাঙালি মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি।

আমাদের বাড়ি ফিরতে রাত প্রায় এগারোটা হয়ে গেল। সদর দরজা বন্ধ। ওপরের ঘরে একটা মাত্র আলো। সদরের কড়াদুটো বিশাল বালার মতো। তাইতে আবার নানা কারুকার্য। একবার মাত্র নাড়তেই দিদির গলা পাওয়া গেল।

দরজা খোলামাত্রই আমরা অবাক, দিদি হঠাৎ মন্ত্রবলে ছেলে হয়ে গেলেন নাকি? বিশাল বড় নাক। ঝোলা গোঁফ। ইনি আবার কে? খাকি ইউনিফর্ম। প্রশ্ন করার আগেই তিনি বললেন, রাখলে ভেতরে থাকব, তাড়িয়ে দিলে রকে রাত কাটাব। লোক খারাপ নই, তবে একটু চরিত্রদোষ আছে। এখন যেমন বিধান দেবেন, আপনারাই মালিক।

আমি তো আমি, মুকু পর্যন্ত হতভম্ব। এ আবার কে? শরীরে নাকটাই যার সর্বস্ব। যেন ভগবান ম্যানুফ্যাকচার করার সময় গন্ডারের ওয়ার্কশপ থেকে একটা নাক এনে ফিট করে দিয়েছেন। মুকু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি কে ভাই?

মানুষের স্যাম্পলটি হাসলেন! অসম্ভব ঝকঝকে দু’সার দত। বললেন, আমি মনে হয় ঠিক ভাই নই। ভাগনে হতে পারি। আপনারা আমার দূর সম্পর্কের মামা আর মামি!

মুকু বললে, মামি কী করে হলুম? মামি তো এমনি এমনি জন্মায় না! মামা হতে পারে। মামি হতে হয়। কোনও এক মামাকে বিয়ে করলে তবেই মামি হওয়া যায়। অবিবাহিতা মামি হয় না!

দিদির কাছে, তোমাদের দিদির কাছে আমি সব শুনে নিয়েছি। ছেলেমানুষের মতো হইহই করে নেচে উঠল। মামার তুমি মামি হবে। আমি সব শুনে নিয়েছি।

মামার মামি হবে কী রে! বলো, মামার বউ হবে। ব্যাপারটা বোঝা যাচ্ছে না, এই বড় খোকাটি কে? মুকু পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল। আমি পড়লুম মহাবিপদে। লোকটি খপ করে আমার হাতদুটো ধরে ফেলল। সাংঘাতিক জোর। তেমনি খসখসে। হাতদুটো ঝাঁকাতে ঝকাতে বললে, বলল মামা, তুমি আমাকে চরণাশ্রয় দিলে?

ভয় পেয়ে গেলুম, আশ্রয় মানে, কতদিনের আশ্রয়! শক্ত গলায় বললুম, ওপরে চলো। আগে জানা দরকার তুমি কে? হঠাৎ কোথা থেকে এলে? কেনই বা এলে?

এটা কোনও কথা হল? মাকে ছেড়ে ছেলে থাকতে পারে? যেখানে মা, সেইখানেই ছেলে।

কোনওরকমে নিজেকে মুক্ত করে ওপরে এলুম। দোতলার সিঁড়ির ওপরের ধাপে বাইশো বাইশ একটা বুট জুতো, মালিক অবশ্যই ওই ছেলেটি। ছেলে বলব, না লোক বলব? বয়েস তো বুঝতে পারছি না! মুখ বলতে তো নাক, আর কাঠবেড়ালির ল্যাজের মতো গোঁফ!

ওপরে এসে বুঝতে পারলুম, দিদি কেন নীচে নামেননি। ময়দা মাখছেন। ঠেসছেন তো ঠেসছেন! মুকু রাস্তার কাপড়ে রান্নাঘরে ঢুকবে না। আমার পিতার নির্দেশ। রান্না মানে পুজো। সবার আগে কাপড় ছাড়তে চলে গেছে। আমাকে দেখেই দিদি উঠে পড়লেন। আমার খুব কাছে এসে বললেন, ছাতের সিঁড়ির কাছে চলো।

অন্ধকারে তিন-চার ধাপের মতো ওপরে উঠে গেলুম। একটা খুরি ছিল কোথাও। গড়াতে গড়াতে নীচে পড়ে গেল। দিদি আমার খুব কাছে সরে এসে বললে, ভাই, আমি বড় অপরাধী! আমার ভীষণ লজ্জা করছে। পাগলটা খুঁজে খুঁজে ঠিক এখানে চলে এসেছে। এখন কী উপায় হবে ভাই?

এ কে?

আমার মতোই এক অভাগা। এর মায়ের স্বভাবচরিত্র ভাল ছিল না। এ যখন বছর তিনেকের, মা ফেলে পালিয়েছিল। মিশনারিদের অরফানেজে মানুষ। ও আমাকেই মা বলে জানে! ওর অনেক গুণ! বলে, আমি হলুম মানুষ কুকুর। এঁটোকাটা খেতে পারি। রাস্তার ধারে ঘুমোতে পারি। নর্দমার জল খেতে পারি চকচক করে। আর আমাকে যে ভালবাসে তার জন্যে জীবন পর্যন্ত দিতে পারি। স্কুলে দরওয়ানের কাজ করে। আজ তোমরা চলে যাবার পর এসে হাজির। বলে, কুকুর তো, গন্ধ শুকে শুকে চলে এসেছি। এখন লাথি মেরে তাড়াও, আমি বসে থাকব। মাকে ছেড়ে থাকি কী করে! কী করব ভাই! আমি তাড়াতে পারলুম না! পাগলকে বোঝাই কী করে,আমার নিজেরই চালচুলোর ঠিক নেই। আপনি পায় না খেতে শঙ্করাকে ডাক।

মাথা কি খুব খারাপ? একেবারে পাগল?

না, অল্প ছিটিয়াল! যা বলবে তাই করবে। গাধার মতো খাটতে পারে। রুগির মাথার কাছে বসে সারারাত জাগতে পারে। নিজের মুখের খাবার অপরকে তুলে দিতে পারে। লক্ষ গালাগাল দাও হ্যাঁ হ্যাঁ করে হাসবে। রাগ নেই, মানসম্মান বোধ নেই।

কী নাম?

গগন!

রান্নাঘরের কাছ থেকে গগনের গলা এল, কোথায় গেল সব? আঁচ বইছে! ময়দার তাল পড়ে আছে। গেল কোথায়? মা!

দিদি তাড়াতাড়ি তিন ধাপ নেমে গিয়ে বললে, এই তো আমি। ষাঁড়ের মতো চেল্লাচ্ছিস কেন?

তুমি থেকে থেকে কোথায় যাও মা! আঁচ বইলে কয়লা পোড়ে তা জানো কি?

জানি বাবা।

করবে লুচি আলুর দম, সেই সন্ধে থেকে খুচুর খুচুর করছ। সরো তো, আজ আমি রাঁদি! আমার রান্নার বহুত সুনাম! আমি থাকতে তুমি কষ্ট করবে কেন?

ঠিক সেই সময় মুকু এসে হাজির। তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল, একী একী, রান্নাঘরে কেন? এটা মেয়েদের এলাকা। হাত ধোয়া নেই, পা ধোয়া নেই, কাপড় ছাড়া নেই, খাওয়ার জিনিসে হাত!

গগন নিচু হতে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। মুখে স্বর্গীয় হাসি, মাইমা, তুমি আমার গুরুজন, রাগ কোরো না, তোমার একটু ঘুচিবাই আছে। সামনে এটা কী দেখছ? আগুনে পড়লে সব শুন্ধু। পচা মড়া, টাটকা মড়া, জ্যান্ত মড়া, চিতায় ফেলো, পরিষ্কার ছাই। তুমি দাঁতও মাজতে পারবে সেই ছাই দিয়ে! তুমি জানো কি, রোজ আমি দশটা করে তুলসীপাতা খাই!

দিদি এক ধমক লাগালেন, মুখে মুখে তর্ক করছিস? যা বাইরে যা। ঘর থেকে বেরো।

তর্ক করব কেন, ব্যাপারটা বুঝে নিচ্ছি। চুঁচিবাই থাকলে হাতের আঙুলে হাজা হয়।

মুকু বললে, আমি মুখে মুখে তর্ক, বাজে কথা, ফাজলামো একদম সহ্য করতে পারি না। তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি। তোমাকে আমি বেরোতে বলেছি, বেরোবে। বেরিয়ে আসবে এক কথায়।

গগন এইবার খেপা খোকা হয়ে গেল, না আমি বেরোব না! আমি রান্না করব। তোমাকে খাওয়াব।

মুকু আমার দিকে তাকিয়ে বললে, বেআদবটাকে ঘাড় ধরে বের করে দাও!

মুকুর সম্পূর্ণ অন্য চেহারা! মুখ থমথমে, যেন দ্বিতীয় হরিশঙ্কর। এ নির্দেশ পালন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শিশুর মতো জেদি এক যুবক। দুর্গার মতো এক শক্তি। দিদি এক কোণে মহা অপরাধী।

মুকু বললে, কাজটা তা হলে আমাকেই করতে হয়, কারও মুরোদে যখন কুলোচ্ছে না!

মুকু যেই এগোতে গেল, দিদি ছুটে এল, আমি আমি। আমি ঝেটিয়ে বের করছি।

দিদি যেই ঘুরতে গেল, আঁচলটা ঝপ করে উনুনে পড়ল। গনগনে আঁচ! দপ করে আগুন ধরে গেল।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন