২.১২ মা গো অত আদর

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

মা গো অত আদর, অত স্নেহ সব করিলি মাটি।
চোখ রাঙ্গিয়ে করলে শাসন, হতাম আমি খাঁটি ॥

দূর থেকে দেখছি, বাড়ির সামনে রকের ওপর এক মহিলা বসে আছেন উদাস হয়ে। পাশে একটা ছোট টিনের সুটকেস। কোলে একটা পুঁটলি। কে? এ আবার কে? এইবার ঈশ্বর কোন খেলা খেলতে চাইছেন। একেবারে চিনতে পারছি না। জীবনে কখনও দেখেছি বলেও মনে হচ্ছে না। আমি আর মুকু একটু আগু-পিছু হনহন করে হাঁটছিলুম। মুকুর গতি শ্লথ হল। জিজ্ঞেস করলে, কে বলো তো?

ওই একই প্রশ্ন আমারও।

অন্য কোনও বাড়ির নয় তো! কিংবা বিশ্রাম নিচ্ছেন অনাথ কোনও মহিলা!

আমার তা মনে হয় না। আমাদের বাড়িতেই এসেছেন। মুকু, চলো পালিয়ে যাই। আমার লোকজন ভাল লাগছে না মনের এই অবস্থায়।

বাঃ! অসাধারণ! কোনও তুলনা হয় না তোমার! অসহায় এক মহিলাকে পথের ধারে বসিয়ে রেখে তুমি সরে পড়তে চাইছ? অনেক স্বার্থপর দেখেছি, তোমার মতো স্বার্থপর খুব কম দেখা যায়। আমি তোমার দলে নেই।

মুকু এইবার আমাকে পেরিয়ে চলে গেল। হাঁটার গতি হয়ে গেল দ্বিগুণ। বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মধ্যবয়সি সেই মহিলা উঠে দাঁড়ালেন। কোথায় যেন এই পরিবারের মুখের সঙ্গে মিল আছে। পরে আছেন নরুন পাড় ধুতি। মুখটা কৃশ হলেও একটা আকর্ষণ আছে। চোখদুটো অসাধারণ জ্বলজ্বলে। মহিলা লম্বার দিকেই।

ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এইটাই কি হরিশঙ্করবাবুর বাড়ি?

হাতের মুঠোয় বহুকাল আগের একটা পোস্টকার্ড। দোক্তাপাতার মতো মুচমুচে হয়ে গেছে। অতি সাবধানে ধরে রেখেছিলেন সেটিকে।

বললুম, আজ্ঞে হ্যাঁ।

তোমরা কি তার ছেলেমেয়ে?

আমি ছেলে। এ আমার মাসির মেয়ে।

তোমার মায়ের তো কোনও বোন ছিল না!

আমার খুব রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল বলি, অত কথার কী আছে? কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললুম, আমার মেজো জ্যাঠাইমার বোন ছিলেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পড়েছে। তারা তো রেঙ্গুনে ছিলেন। আমি ছবি দেখেছি। তা আমি কে, নিশ্চয় চিনতে পারোনি?

আজ্ঞে না।

আমি তোমার বড় জ্যাঠামশাইয়ের বড় মেয়ে। তোমার যখন বছর তিনেক বয়স, তখন তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।

আত্মহত্যা করবেন কেন? তিনি দোতলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।

আমার কাছে সত্য ঘটনা শুনে রাখো, এক বদ মেয়েছেলে তাকে ওষুধ খাইয়ে পাগল করে দিয়েছিল। সেই অবস্থায় তিনি একদিন লাফ মেরেছিলেন।

মুকু বললে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এইসব কথা না বলে ভেতরে চলুন না!

তালা খুলছি, মহিলা বললেন, ছোটকাকা কোথায়?

কিছুদিনের জন্যে বাইরে গেছেন।

আমরা একে একে ঢুকে পড়লুম। মহিলা ভয়ে ভয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে চলেছেন। বুকের কাছে দু’হাতে ধরে আছেন সেই পুঁটলি। মুকুর হাতে সুটকেস। মুকুর এই একটা গুণ, নিমেষে মানুষকে অধিকার করে ফেলতে পারে। সে এমন অধিকার যেন শিশুর আঁকড়ে ধরা পুতুল। কিছুতেই আর ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে না নিজেকে।

মহিলা ওপরের বারান্দায় এসে বললেন, আমি তা হলে সম্পর্কে তোমাদের কে হলুম বলো তো? দিদি।

মুকু বললে, হ্যাঁ, তাই তো হলেন। দিদি।

তোমার নামটি কী ভাই! ভারী মিষ্টি মেয়ে।

মনে মনে হাসলুম, একটা ঘণ্টা যেতে দিন, তখন যেন আবার মন্তব্য বদল না হয়।

মুকু বললে, আমাকে আপনি মুকু বলেই ডাকবেন।

বাঃ, ছোট সুন্দর নাম। আমার ভায়ের নামটাও আমি ভুলে গেছি।

আমাকে বলতে হল না, মুকুই বললে, পিন্টু।

হ্যাঁ হ্যাঁ, পিন্টু।

মুকু সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, দিদি, আপনার নাম?

আমার নাম পাঁচি।

মুকু থমকে গেল, এইরকম নাম হয় নাকি! আমাদের দিদিটি আবার মেঝেতে বসতে যাচ্ছিলেন, মুকু হাঁ হাঁ করে উঠল, মেঝেতে নয়, মেঝেতে নয়। চেয়ারে, চেয়ারে।

মাটির মানুষ মাটিতেই বসি বোন, আমাকে অত খাতির কোরো না। আমি অত খাতিরের নই। আমাকে একটা ঝিয়ের বেশি সম্মান দেবার প্রয়োজন নেই। যা প্রথম থেকে পেয়ে আসছি তাই যেন পাই শেষে।

পাকা পাকা কথা না বলে এই চেয়ারটায় বসুন।

মুকু এইবার বেরোচ্ছে। মুকু থেকে মুকু বেরোচ্ছে। খোল থেকে শামুক বেরোনোর মতো। হাত ধরে বসিয়ে দিল চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললে, ঠিক ঠিক নামটা বলুন তো!

দিদি একটু ঘাবড়েছেন। ইতস্তত করে বললেন, সে নাম শুনলে তোমরা অট্টহাসবে। তবু বলি, অপরাজিতা। সবেতেই যে পরাজিত, তার নাম অপরাজিতা!

আপনি সেই থেকে হাতে কী একটা পাঁপড়ভাজা ধরে আছেন?

ও হ্যাঁ। এটা একটা পোস্টকার্ড। সেই কোন কালে আমার কাকা লিখেছিলেন মাকে। বিজয়ার নমস্কার। আমার মাকে, মানে তোমাদের বড় জ্যাঠাইমাকে তো কেউ দেখতে পারতেন না। আর কেনই বা পারবে! অহংকারে দেমাকে মটমট করছেন। রূপের অহংকার, জমিদার বাপের টাকার অহংকার। আমার বাবাকে তো তোমরা দেখেনি। আমারও তেমন মনে নেই। মহাদেবের মতো দেখতে ছিলেন।

বললুম, শুনেছি। ব্যায়াম আর কুস্তির ভক্ত ছিলেন। বিশাল শরীর ছিল। বাদাম আর সিদ্ধির শরবত খেতেন কাশীর পালোয়ানদের মতো।

ওই সিদ্ধি আর পালোয়ানিই তো কাল হল। কাকার মুখে শোনোনি?

বাবা অতীতের কোনও কথাই বলতেন না।

এই কারণেই। তোমার বড় জ্যাঠামশাই আর জ্যাঠাইমা এই পরিবারের অতীতের মুখে আলকাতরা মাখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। অতীত তো ওইটাই। ধ্বংসের অতীত।

মুকু বললে, পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কী দিদি! অতীত কবরে আছে কবরেই থাক। এখন কাজের কথায় আসুন। এতদিন পরে আপনি কেন এলেন? কী কারণে? ভুলে যখন ছিলেন, ভুলে থাকতেই তো পারতেন।

মুকুর সত্যি মুখের কোনও আঁট নেই। কতবার শুনেছে, অপ্রিয় সত্য বলতে নেই। মহিলাকে অপ্রস্তুত করা।

দিদি কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলেন। দৃষ্টি কোন উদাসে। শ্যামলা মেয়েটির শরীরে এখনও সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে। তপঃক্লিষ্ট এক সাধিকার মতো। চোখদুটো ভারী সুন্দর। তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ জল নামল। এক বিন্দু, দু’বিন্দু। নিঃশব্দে গড়িয়ে চলেছে গালের ওপর দিয়ে। এত খারাপ লাগছে! মুকুর স্বভাবই হল খোঁচা মারা।

দিদি আঁচলে চোখ মুছে বললেন, যার কেহ নাই, তুমি আছ তার। যে-মানুষটির কাছে আমি ছুটে এসেছি, তিনি হলেন গিরি গোবর্ধনধারী। বুঝতেই তো পারছ বোন, আমি নিরাশ্রয়। মনে করো, আমি তোমাদের একজন কাজের লোক। চব্বিশ ঘণ্টার ঝি। আমি খুব ভাল রাঁধতে পারি। বাসন মাজতে পারি ঝকঝকে করে। ঝাট দিতে পারি পরিষ্কার করে, কোনও কিছুর তলায় ধুলো না জমিয়ে। দাগ না ফেলে মেঝে মুছতে পারি। বড়ি দিতে পারি, গুল দিতে পারি। আচার তৈরি করতে পারি। সেলাই জানি, রিফু জানি। সামান্য হাঁটকাট জানি। সবার ওপরে রোগীর সেবায় আমাকে কেউ হারাতে পারবে না। টানা তিন বছর আমার মা, টানা দু’বছর আমার স্বামী বিছানায় পড়ে ছিলেন। আমি ঘৃণাকে জয় করেছি, জয় করেছি নিদ্রা। আমার আহার হল পাখির আহার। আমি যে কোনও জায়গায় ঘুমোতে পারি। যে-কোনও অপমান সহ্য করতে পারি। একটু হয়তো জল বেরোবে চোখে। বুক ফাটবে তবু মুখ ফুটবে না। আমি বঙ্গ রমণী। ঝাটা, জুতো আর লাথি জন্ম থেকেই খাচ্ছি। বেঁচে আছি শুধু মরতে পারিনি বলে। আমি বঙ্গ রমণী।

এইবার মুকুর পালা। হরিণের মতো চোখ। মা দুর্গার মতো মুখ। জল। পৃথিবীর যেমন তিন ভাগ জল, মেয়েদেরও সেইরকম তিন ভাগ জল, এক ভাগ খিলখিল হাসি। মুকুর জলের ফোঁটা অনেক বড়। দিদির হল মিহি দানা, মুকুর হল বড় দানা।

মুকু দিদির কঁধদুটো ধরে বললে, আমি ক্ষমা চাইছি। আমার রাগ হয়েছিল, আপনি আমাদের চেনেন না বলে। কেন চেনেন না? নিকট আত্মীয়দের আপনারা কেন কোনও খবর রাখেন না? জানেন না এটা স্বার্থপরতা, এ ভাল নয়। আত্মীয়দের আজ প্রয়োজন না হলেও কাল প্রয়োজন হতে পারে। মানুষের এই ভুলে থাকায় আমার রাগ হয়েছিল, যদিও এই ভয়ংকর দোষ এই পরিবারেরও আছে। এরাও কারও খোঁজখবর রাখে না।

না বোন, এদের দোষ নেই। দোষ আমাদের। বাবা মারা যাবার পর, মা শ্রাদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল না। আমাদের দু’বোনকে নিয়ে অহংকারে মটমট করতে করতে বাপের বাড়ি চলে এল। মেজকাকা ছোটকাকা সম্পর্ক রাখার বহু চেষ্টা করেছিলেন। শেষে হাল ছেড়ে দিলেন। তার সাক্ষী এই চিঠি। এইটাই ছিল ছোটকাকার শেষ চিঠি। এ-যেন সম্পর্কের শেষ খেয়া। পড়ে দেখতে পারো। এখনও পড়া যায়।

চিঠিটা সাবধানে হাতে নিলুম। কালো কালির লেখা, বাদামি হয়ে গেছে। আমার বাবার কতকাল আগের হাতের লেখা। বাবা লিখছেন,

পূজনীয়া বড়বউদি,

এদিক থেকে এইটাই হবে শেষ চিঠি। তোমাকে বারবার অনুরোধ করা হল, নিজের সংসারে ফিরে এসো। তুমি এলে না। প্রতিটি চিঠির বিলম্বিত উত্তরে তুমি আমার বড়দা, আমাদের পরিবারকে অকথ্য গালাগালই দিয়ে গেলে। একবারও বোঝার চেষ্টা করলে না, তোমারই অহংকারে বড়দা ছিটকে গেলেন পরিবারের বাইরে। পড়তি জমিদারের অহংকারের চেহারাটা কেমন জানো, ভিজে কাঠের আগুনের মতো। আগুন নেই শুধু ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় তুমি আচ্ছন্ন। নিজেকেই নিজে দেখতে পাচ্ছ না। আমাদের পরিবার আপাতত রমণীশূন্য। তুমি যদি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াতে, সংসারজীবনের পুরো স্বাদটা পেতে। তুমি কি খুব সুখে আছ! সুখের সন্ধানে পালিয়ে গিয়ে তুমি মহা। দুঃখেই আছ। নিজের অহংকারের জন্যে ভুল সংশোধন করতে পারছ না। আমার অবস্থা ঝড়ের সমুদ্রে ফুটো জাহাজের ক্যাপ্টেনের মতো। কখনও পাম্প চালিয়ে জল হেঁচছি, কখনও স্টিয়ারিং ধরে টালমাটাল সামলাচ্ছি। দু-দুটো বউ পরপর চলে গেল। সবচেয়ে আদরের ছোটবোন কাপড় শুকোতে দিতে গিয়ে ছাতের আলসে ভেঙে পড়ে মারা গেল। আমরা দু ভাই, একটা শিশু–এই তিনটি প্রদীপ টিং টিং করে জ্বলছে। এখনও সময় আছে। এসে তোমার কর্তৃত্বের আসনে বোসো। বড়দাকে এইভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ো না। ভাইঝি দুটোকে লেখাপড়া শেখাই। ভালঘরে বিয়ে দিই। সংসারে একটা পূর্ণতা আসুক। বিষয়সম্পত্তিতেও তোমার একটা অংশ আছে। তারও একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার। আর অধিক কী? প্রণাম নিয়ো। ইতি,

চিঠি পড়া শেষ করে মুকুকে বললুম, একটা খাম দাও। চিঠিটা যত্ন করে রাখা উচিত।

দিদি বললে, নিজের মা যে ছেলেমেয়ের কত সর্বনাশ করতে পারে আমার মা-ই তার উদাহরণ। বুড়ো নায়েবের পরামর্শে দুম করে আমার বিয়ে দিয়ে দিলে এক আধবুড়ো অকর্মণ্যের সঙ্গে। সে তো বিয়ে নয়, আমার কাশীবাস। সাতটা বছর বেঁচে ছিল শুধু কেশে কেশে। তখন আমার ভরা যৌবন। সেই জ্ঞানপাপী বুড়ো কেবল বলে, এ বউ তো আগুন, আমার তো তেমন ঘি নেই। শ্বাস নিত যখন, মনে হত বাঁখারির খাঁচা। সবকটা পাঁজর ঠেলে ঠেলে উঠত। তার আবার একটা বখা ভাগনে ছিল। নাম তার পল্টন। মাঝে মাঝে অন্ধকারে আমাকে জড়িয়ে ধরত। মুখে ধেনোর গন্ধ। কানের কাছে মুখ এনে বলত, মামা বিয়ে করেছিল আমার জন্যে। মামা তোমাকে ভাত কাপড় দেবে, আমি তোমাকে আনন্দ দোব। তুমি আমার ঘরের মুরগি। একদিন বেশ করে ঝাটাপেটা করলুম। কর্তা আমাকে চেলা কাঠ পেটা করলে। বললে, জানিস না, ভাগনে শব্দের অর্থ? ভাগ নে। পেটে যদি আসেই, তার জন্যে তো আমি আছি। আর যেন কোনও বেচাল না দেখি। বাংলার বধূ ত্যাগের জন্যে জন্মায়, ছাত পেটাই হবার জন্যে জন্মায়। সর্বংসহা শব্দটা কি অ্যায়সি এসেছে! সেই রাতেই ভাগনে বোতল বগলে মাইফেলে এল, গাইতে গাইতে, মামি নাচবে খেমটা নাচ। মামা ধরবে পোঁ। তার পরের লাইন আমি বলতে পারব না তোমাদের। আমি পেছনের দরজা দিয়ে মাঠময়দান ভেঙে চম্পট। প্রথমে এক গির্জায় গিয়ে ফাদারের কাছে আশ্রয় নিলুম। তিনি আমার খুব করেছিলেন। পড়িয়েছিলেন, নার্সিং শিখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, হিন্দুদের হাত থেকে যদি বাঁচতে চাও খ্রিশ্চান হও। গ্রামে রটে গেল, অপরাজিতা কুলত্যাগ করেছে। কুলটা। বুড়ো বরে শানাল না, তাই বেশ্যা হয়ে ঘর ছেড়েছে। তাকে যে বোতল বাবাজি খাবলাতে এসেছিল, সেই কথাটা কেউ একবারও মুখে আনলে না। শয়তান পুরুষমানুষগুলো আর কত হাজার বছর ধরে যে আমাদের ছিঁড়ে খাবে! এই শয়তানদের ছেলেমেয়েকে আমাদের গর্ভে ধারণ করতে হয়। পৃথিবীতে ভগবান আসবেন কী করে? শয়তানদের ছেলেরা তো শয়তানই হবে!

লক্ষ করছি, মুকুর ফরসা মুখ ক্রমশই লাল হয়ে উঠছে। গোলাপের মতো।

মুকু বললে, আপনি এই সংসারে আপনার মর্যাদায় থাকবেন। এত সব কাণ্ড যখন হচ্ছে, তখন আপনার ছোটকাকাকে কেন জানালেন না? তার মতো মানুষ এককথায় সব ঢিট করে দিতেন।

আমি তো তখন কিছুই জানতাম না বোন। আমার তখন উথালপাথাল অবস্থা। লম্পটের শিকার ফসকেছে। হায়নার মতো আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।

কেন, এইসব লোকের জন্যে তো সব জায়গাতেই ঘর আছে!

ও, সে বুঝি জানো না, ব্যাটাছেলেদের অদ্ভুত একটা মজা আছে, ঘরের বউকে খারাপ করে পথে বের করার আলাদা একটা আনন্দ আছে। আমি ওদের হাড়ে হাড়ে চিনে গেছি বোন। সেই ফাদার। আমাকে রাতের অন্ধকারে হুগলির গির্জায় পাঠিয়ে দিলেন। আর সেই ভাগনেচন্দ্র চার বছরে মামার যা কিছু ছিল সব ফুকে দিয়ে সরে পড়ল। তারপর হল ধর্মের কল বাতাসে নড়ল। একদিন দেখি। অন্ধকার মাঠের ওপর দিয়ে সাদা একটা পুঁটলি গড়াতে গড়াতে আসছে। প্রথমে ভেবেছিলুম ভূত। তারপর দেখি আমার সোয়ামি। ওগো! আমি এলুম। আমার যে কেউ নেই। তুমিই যে আমার সব। সেকী? আমি তোমার সব কী গো! আমি যে কুলত্যাগী, বেশ্যা গো! পুঁকতে ধুঁকতে বললে, তুমি দেবী, তুমি অন্নপূর্ণা। সে একেবারে পায়ে পড়ে আর কী! বলে কিনা, আমি তোমার সন্তানের মতো। আর মেয়েদের মন! জানোই তো! মেয়েদের মনে মায়ের বাসা। একবার মা বললে আর রক্ষে নেই। মানুষটাকে দেখে চোখ ফেটে জল এল। একেবারে জরাজীর্ণ। একটুখানি বাতাসের জন্যে শ্বাস টানছে, মনে হচ্ছে হাপর চলছে। নিজের শরীরস্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে লজ্জা হচ্ছিল; আমি এত সুস্থ, লোকটা এত অসুস্থ! যতই হোক আমার স্বামী। সংস্কার যাবে কোথায়! জীবন আবার ঘুরে গেল পুরনো খাতে। নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েও হারাতে হল একটা কারণে। জানো তো ভাই, বরাত জিনিসটা আগেই। তৈরি হয়ে থাকে, পথের মতো। অদৃশ্য ভগবান ঠিক করে রাখেন কে কোন পথে হাঁটবে।

মুকু বললে, ভগবান-টগবান সব বাজে। আসলে যা হয়, তাই হয়। মানুষ ভগবান ভগবান বলে। চেঁচায়। মানুষের যতরকমের দুর্বলতা, তারই নাম ভগবান! এ তো সবাই জানে, পৃথিবীটা লড়াই। করার জায়গা। লড়তে গেলে অস্ত্র চাই। প্রথম হল শরীর, দ্বিতীয় হল শিক্ষা, তৃতীয় হল মনের জোর, চতুর্থ হল বিচার, পঞ্চম হল নীতি, ষষ্ঠ হল বুদ্ধি, সপ্তম হল মাত্ৰাজ্ঞান, অষ্টম হল সম্পর্ক তৈরি, নবম হল চেতনা, দশম হল সাহস। মা দুর্গা দশভুজা; কারণ এই দশ অস্ত্র ছাড়া লড়াই জেতা অসম্ভব। পৃথিবীতে সবাই অসুর। সবাই ভগবান ভাবলে মরতে হবে।

দিদি বললেন, জীবনে ভিক্ষে ছাড়া সবই করেছি। হয়তো বরাতে সেটাও লেখা আছে।

আবার বরাত!

তা কী হবে! আমার তো বিদ্যাবুদ্ধি নেই। মাঝবয়সি এক মেয়েছেলে। কিছুকাল খ্রিস্টানদের মধ্যে ছিলুম বলে, জড়ভরত ভাবটা তেমন নেই। আর বলতে পারি কইতে পারি, সে আমার বংশাবলির ধারা। আমার মায়ের বাক্যির শেষ ছিল না।

তা হলে দিদি শুনুন, মনু কী বলে গেছেন। পৃথিবীতে যে নাচতে পারে সে নাচবে, যে গাইতে পারে সে গাইবে, যে পড়তে পারে সে পড়বে, যে যুদ্ধ করতে পারে সে যুদ্ধ করবে, যে কাপড় কাঁচতে পারে সে কাপড় কাঁচবে, ব্রাহ্মণ, শূদ্র, মুচি, মেথর বলে কিছু দেগে দেওয়া নেই। নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী বৃত্তি বেছে নিয়ে মানুষেরই সেবা করে মানুষকে বাঁচতে হবে। পৃথিবীতে কোনও তোলা-সিস্টেম নেই যে আরামে গড়াব, সকালে রাজবাড়ি থেকে ভারে ভারে তত্ত্ব আসবে। যে ডাকাত সে ডাকাতি করবে, যার অনেক রূপ যৌবন, সে মনোরঞ্জন করবে। যে ব্যাবসা বোঝে সে ব্যাবসা করবে। তা হলে শুনুন দিদি বাইবেল কী বলছেন:

He shall be like a tree
Planted by the rivers of water,
That brings forth its fruit in its season,
Whose leaf also shall not wither
And Whatever he does shall prosper.

ফাদারদের কাছে বাইবেল তো অনেক শুনেছেন দিদি, নিতে কি কিছু পেরেছেন?

তুমি এত জানলে কী করে?

খুব সোজা। বইয়ের শেষ নেই। পড়ো আর কপচাও। আমি তো দর্শনের ছাত্রী। তবে কথাটা খুব সুন্দর।

বলো শুনি। শুনে আর কী হবে! মরণকালে হরিনাম।

সে হবে গাছের মতো। কে? মানুষ। বীজ পুঁতেছে নদীর জল। নদীর জলে বীজ ভেসে এসেছে। ঢেউয়ের ধাক্কায় সেই বীজ ডাঙায় উঠেছে। অঙ্কুরিত হয়ে ক্রমশ একটি বড় গাছ। ঠিক সময়ে বছর বছর তাতে ফল ধরবে। আর গাছটা কেমন? না, তার পাতা কখনও শুকোবে না। পাতা হল মানুষের সৎকর্ম। আর তার কর্তব্য কী? না, সে যা-ই করুক তাতে যেন মঙ্গল হয়। উন্নতি হয়। মানুষকে হতে হবে গাছ। গাছের মতো সহিষ্ণু, ফলপ্রদ। কত সুন্দর সুন্দর কথা মানুষ বলে গেছে, লিখে গেছে।

ও কিছু না। শয়তানে মাঝে মাঝে ভগবান ভর করে। পৃথিবীটা কিন্তু শয়তানেরই।

বিরক্ত হয়ে বললুম, মুকু, আমরা কিন্তু এখনও উপোস করে আছি।

একা তুমি নেই, আমরাও সবাই আছি। দিদি, আপনি ক’দিন উপোসে আছেন? সত্য বলবেন।

একেবারে নির্জলা দেড়দিন। আর আধপেটা কদিন আমার মনে নেই।

শুনলে তো! আর খাইখাই কোরো না। বেলা চারটের সময় কেউ ভাত খায় না।

তা, যা হয় টুকটাক তো একটু কিছু হবে। পিত্তি পড়ে গেল। আমার আবার পিত্তর ধাত। সত্যিই আমি আর থাকতে পারছি না। পেটে চো চো শব্দ হচ্ছে।

মুকু বললে, তোমার তো ধাতের শেষ নেই। পিত্তির ধাত, সর্দির ধাত, বাতের ধাত, অম্বলের ধাত। এখনও সময় আছে, রোজ সকালে উঠে মেসোমশাইয়ের মুগুর আর ডাম্বেল নিয়ে ভাঁজো, তা না হলে অকালে বুড়ো হয়ে যাবে।

দিদি বললেন, আমাকে সব দেখিয়ে দাও, ছোটখাটো জলখাবার একটা করে ফেলি।

মুকু বললে, এই অবস্থায় তো আপনাকে আমি খাওয়ার জিনিস ছুঁতে দেব না।

কেন? আমি কিন্তু খ্রিশ্চান হইনি।

আমাদের জাতিভেদ নেই দিদি। আপনার রাস্তার কাপড়। আগে ভাল করে চান করুন। দেখি পুঁটলিতে কী আছে!

মুকু পুঁটলিটা টেনে নিয়ে খুলতে শুরু করল। দু’খানা নরুন পাড় ধুতি, দুটো ব্লাউজ, একটা চাদর, গামছা আর একটা ঝকঝকে পেতলের ঘটি বেরোল। মুকু সব পরীক্ষা করে বললে, নাঃ, আপনার পরিষ্কার স্বভাব। গামছাটা তেলচিটে নয়, ধুতি চাদর বেশ পরিষ্কার, আর ঘটিটা ঝকঝকে। ঘটির মায়া ছাড়তে পারেননি!

না বোন, ওটা মায়া নয়। বড় কাজের জায়গায় অজায়গায় জল খাওয়া যায়। ধরতে পারলে জলটাই তো বিনাপয়সায় পাওয়া যায়। প্রয়োজনে বাঁধাও দেওয়া যায়। সোনার পরেই কাসা। এই ঘটিটা সাতবার বাঁধা পড়েছে। এক রেট, আড়াই টাকা। ভরনের কাসা। ফেলনা নয়। ঘটিটা সঙ্গে থাকলে মনে বেশ একটা বল পাওয়া যায়। ধার আর বাঁধা, এ ছাড়া বাঙালি বাঁচবে কী করে? বাপের সম্পত্তি বেচবে আর ফুর্তি করবে। চলো বোন, তোমাদের চানের জায়গাটা দেখিয়ে দাও আর এক টুকরো কাপড়কাঁচা সাবান দাও।

এখন আর কাপড়জামায় সাবান দিতে হবে না। জলকাঁচা করে দিন।

সাবান আমি গায়ে মাখব।

গায়ে মাখা সাবান বাথরুমেই আছে।

গন্ধ সাবান মাখব বোন!

বেশি আদিখ্যেতা করবেন না, বিচ্ছিরি লাগছে। যা স্বাভাবিক তাই করুন। দুঃখ নিয়ে দারিদ্র্য নিয়ে নাকে কাঁদবেন না। পৃথিবীতে কেউ দরিদ্র হবে, কেউ হবে ধনী। কেউ খেয়ে মরবে, কেউ না খেয়ে। এতে অবাক হবার কী আছে! কেউ চরিত্রবান হবে, কেউ দুশ্চরিত্র। যান, চান করে আসুন। মাথা ভেজাবেন না। নতুন জল সহ্য হবে না।

দু’জনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমার আর একবার হা হা করে হাসতে ইচ্ছে করল। হায় ভগবান, ম্যান প্রোপোজেস গড ডিসপোজেস। হয়ে গেল। কোষ্ঠীতে একেই বলে, বন্ধনযোগ। দুই রমণীকে এখন বহে বেড়াও। ঈশ্বর এক হাতে নেন, আর এক হাতে দেন। কল্য, অহো, গতকল্য করেছে প্রস্থান/লইয়া বঙ্কিম মধু বিহারী ঈশান! আজ আমি আছি যবে, জগৎ-চষকে। প্রাণপণে প্রাণ ভরি করি সুধাপান।

দিদির পুঁটলিটা খোলা পড়ে আছে মেঝেতে। একটি ধুতি, একটি ব্লাউজ, চাদর, ঘটি। ছোট টিনের সুটকেসে কী আছে জানি না। এত বছর সংসার করে এই মাত্র সম্বল! কী করতে মানুষ আসে এখানে! মাঝে মাঝেই আমার মাথায় একটা গানের লাইন খেলে যায়–্যা করে জন্মে আমি কী পেলাম! একটু কৃশ হয়েছেন ঠিকই, তবু চেহারায় অভিজাত শ্রেণির ধার। পরিচ্ছন্ন। যে-জীবনই কাটিয়ে আসুন, নিজেকে ধরে রেখেছেন, ভেসে যেতে দেননি। দরিদ্র, কিন্তু দারিদ্র্য দাঁত ফোঁটাতে পারেনি। একেই বলে, গ্রেট ফাঁইটার। ঈশ্বর যেন উদাহরণ ভেট পাঠালেন, দেখো পিন্টু! সামান্য এক মহিলা! কোন শক্তিতে আজও যোদ্ধা! তুমি হলে কী করতে? অবশ্যই আত্মহত্যা। দেখে শেখো। দুটো দিক, শ্রুতি আর দর্শন। শুনে শেখা আর দেখে শেখা।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন