২.১৪ The man that runs away

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

The man that runs away
Lives to die another day.

বড় লজ্জা নিয়ে নেমে এসেছিলুম গাড়ি থেকে। মুকু জামা খামচে ধরে টেনে নামাচ্ছে আর স্বামীজি মহা ঘৃণায় বলেছিলেন, নামিয়ে দাও, নামিয়ে দাও। ইংরেজিতে বললে বলতেন, ক্লিয়ার আউট, ক্লিয়ার আউট। ফেলে দাও, ফেলে দাও ঘৃণার মাংপিণ্ডটাকে। আনন্দ আর দুঃখের এমন দার্জিলিং-আসাম ব্লেন্ড কদাচিৎ দেখা যায়। উন্মাদ ভালবাসা, অসহ্য ঘৃণা।

আমাকে যিনি ঘৃণা করেন, আমি তার কাছে যাই না। ঘৃণার কাজ করলে ঘৃণা করুন আমি মেনে নেব, অকারণে ঘৃণা কেন! একটা দুঃখের স্মৃতি জেগে উঠছে। বয়েস পেছোচ্ছে। আমার তখন আট বছর বয়স। আমার মেজ জ্যাঠামশাই খুবই অসুস্থ। আমার সেই জ্যাঠামশাই, যাঁর স্নেহ আর ভালবাসার স্মৃতি আমাকে আমার চিতা পর্যন্ত অনুসরণ করবে। শীতের রাতে লেপের তলায় কোলের কাছে নিয়ে গল্প বলা, যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পড়ছি। আমার ক্ষুদ্র হাতটি ধরে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন খেলার মাঠে। বড়দের বলখেলা হচ্ছে, আমরা বসে আছি দু’জনে একপাশে। মাঠের উত্তর দিকের শেষ মাথায় এক বয়স্ক বেলগাছ, যে-গাছটার খ্যাতি সর্বত্র ব্রহ্মদৈত্যের আস্তানা বলে। শীতের অপরাহে ফুটবল খেলা যখন বন্ধ, তখন আমরা দু’জনে ওই মাঠের মাঝখানে এসে বসতুম। চারপাশে জোড়া জোড়া পুকুর। শেষবেলার শীতে জল কালো হয়ে গেছে। বিদেশি হাঁসের দল উড়ে এসেছে আরও কোনও শীতের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে। কেউ জলে মাথা গুঁজছে পেছন উলটে। কেউ জল থেকে শরীর সামান্য উঁচু করে ডানার জল ঝাড়ছে। প্রান্তর পেরিয়ে ছুটে আসছে শীতের শীতল বাতাস। আমার মাথার রঙিন টুপি কান পর্যন্ত টেনে নামিয়ে দিচ্ছেন জ্যাঠামশাই। গলার মাফলার ঠিকঠাক করে দিচ্ছেন। সবে এসেছি পৃথিবীতে। সবই আমার চোখে তখন নতুন। চারিদিকে ছড়ানো পৃথিবীর যাবতীয় বিস্ময়। একপাশে বিশাল খড়ের গাদা, মাথায় চড়ে নাচছে চড়াই শালিক ছাতারে। দুগ্ধধবল দুটি গাভী রোমন্থনে নেশাতুর। আমারই মতো সদ্য-আগত দুটি ছাগশিশু সামনের দুটি পা তুলে নেচে নেচে উঠছে। জ্যাঠামশাই বসে আছেন। আমি সারামাঠে ছুটে ছুটে বেড়াচ্ছি। আমি ছুটছি, আমার পেছনে ছুটছে ছাগলছানা। হঠাৎ ঘাসের মধ্যে থেকে কুড়িয়ে পেলুম নিটোল গোল, মসৃণ একটা গুলি। পোড়ামাটির গোল গুলি। একটি শিশুর কাছে কী বা মাটি, কী বা হিরে, একটা কিছু পাওয়াটাই মহা বিস্ময়ের! কুড়িয়ে পাওয়া সেই অসাধারণ গুলি আমার কাছে বহুদিন ছিল। সেই গুলির নির্মাতাও আমার শ্রদ্ধেয় ছিল। অমন নিটোল, অমন মসৃণ কেমন করে করা সম্ভব হয়েছিল! আমার জ্যাঠামশাইও ছিলেন অদ্ভুত এক মানুষ। বয়স্ক এক শিশুর মতোই। গুলির আনন্দে তিনিও বিভোর। অমন একটা জিনিস কে করেছে, কীভাবে করেছে! পোড়াবার পর একটুও ফাটেনি কেন! মহা গবেষণার পর গুলিটা নিজের পকেটে রেখে বললেন, রবিবার ওইরকম একশোটা গুলি তিনি আমাকে করে দেবেন পুকুর থেকে এঁটেল মাটি তুলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই মাঠ থেকে আবিষ্কার করলুম আর এক বিস্ময়। গোলাপি মাঞ্জা দেওয়া অনেকটা ঘুড়ির সুতো পড়ে আছে। কড়কড়ে তাজা! হাতের আঙুলে গুটিয়ে আমার হাতে দিয়ে জ্যাঠামশাই বললেন, একে বলে চ্যঁ-ভোঁ মাঞ্জা। শিশুর কল্পনা বুড়ি হয়ে ঘুড়ি হয়ে উড়ে গেল আকাশে। একের পর এক প্যাঁচ লড়ে যাচ্ছি। সবাই ডোকাটা হয়ে যাচ্ছে। আমি নীল আকাশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। সেই বিকেলেই জ্যাঠামশাই আমাকে একটা নীল ঘুড়ি কিনে দিলেন। পাতলা কাগজ কাপকাঠি আর বুককাঠির বাঁধনে টানটান। কাগজের কী সুন্দর গন্ধ! ঘুড়িটা হাতে নিয়ে মনে হয়েছিল, নিজের টানটান হৃদয়টাকেই যেন ধরে আছি। সেই কতদিন আগের কথা। আজও মনে আছে। স্মৃতি এক অসাধারণ ব্যাঙ্ক।

সেই জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে বায়ু পরিবর্তনে হাজারিবাগে গেলুম। তখন তিনি ভীষণ অসুস্থ। পরে জেনেছিলুম, অনেক পরে বড় হয়ে, তার টিবি হয়েছিল। কোনও ওষুধ তখনও আবিষ্কার হয়নি। যক্ষ্মা থেকে রাজ্যক্ষ্মা, অবশেষে মৃত্যু। ডাক্তারবাবুরা বলেছিলেন স্বাস্থ্যকর জায়গায় নিয়ে যান। ভালমন্দ খাওয়ান। এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। সেই ভয়ংকর গরমে আমরা হাজারিবাগ হাজির হলুম। আশেপাশে সুন্দর সুন্দর সব বাগানবাড়ি। বাগান, বাগানে থরেথরে ফুটে আছে গোলাপ। গাছে দুলছে পাকা পাকা পিচফল। একটা বাগানবাড়ির নাম ছিল সুরিয়া হাউস। হলদে রঙের বাড়ি। সাদা ইটের কেয়ারি। সেই বাগানে বেশ কিছু আমগাছ ছিল। সিপিয়া ল্যাংড়া। বাগানের দিকের বারান্দায় বেতের আরামকেদারায় ড্রেসিং গাউন পরে এক গম্ভীর চেহারার ভদ্রলোক বসে থাকতেন। ফরসা রং। সুন্দর স্বাস্থ্য। একদিন জ্যাঠামশাইকে বললুম, ওই বাগান থেকে আম চেয়ে আনব? জ্যাঠামশাই তখন ভীষণ অসুস্থ। বেশিরভাগ সময় শুয়েই থাকেন। মুখ শুকনো। চোয়ালের হাড় জেগে উঠেছে। চোখদুটো ঢেকে গেছে। ছোট আমি। কেমন করে বুঝব তাঁর কী হয়েছে? কী দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে? অফিস গেছে। বিদেশে পড়ে আছেন। কলকাতায় সংসার টানছেন হরিশঙ্কর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দাপটে পৃথিবী কাঁপছে। চিকিৎসায় জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। অসুখের লজ্জায় জ্যাঠামশাই মরমে মরে আছেন। আমার কথা শুনে, জ্যাঠামশাই স্থির চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। শেষে বললেন, ছি ছি বাপি, তুমি চেয়ে আম খাবে? আমরা এত গরিব হয়ে গেছি! ভিক্ষে করতে হবে?

এতই স্পর্শকাতর আমি, জ্যাঠামশাইয়ের সেই মুখ চোখ আর ছি ছি বলার ধরনে আমি কুঁকড়ে গেলুম। ছুটে বেরিয়ে এলুম ঘরের বাইরে। আমরা যে বাড়িতে ভাড়া ছিলুম, তারও একটা ন্যাড়ান্যাড়া বাগান ছিল। খুব একটা যত্নের নয়। সেই বাগানে একা একা ঘুরে বেড়ালুম অনেকক্ষণ। একটা পিচফলের গাছ ছিল। ফল ধরেছে অনেক। একটা পেড়ে খেলুম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলুম, জীবনে জ্যাঠামশাইয়ের সামনে আর কখনও খাব না। কথা তো বলবই না। হঠাৎ আকাশের দিকে নজর গেল। রোদ ঢেকে আসছে মেঘে। কালো মেঘ হুহু করে এগিয়ে আসছে। বিনবিন একটা আওয়াজ। মেঘ তো আওয়াজ করে না। এ আবার কী? মেঘের তো ডানা থাকে না! হঠাৎ দূরে একটা শোরগোল উঠল, পঙ্গপাল পঙ্গপাল। পঙ্গপাল নামটা শোনা ছিল। দলছুট কয়েকটা আমার দিকে উড়ে এল। বিশাল বড় ফড়িঙের মতো। ভয়ে ছুটে পালিয়ে এলুম ঘরে। চারপাশ অন্ধকার। সূর্যে যেন গ্রহণ লেগেছে। ফিরফির আওয়াজে কানের পরদা কাঁপছে। বাইরে হইহই চিৎকার।

মানুষ কিছু ভোলে না। বেঁচে থাকাটা আর কিছুই নয়। অভিজ্ঞতার সঞ্চয়। গাছে যেমন ফল ধরে, মানুষে তেমনি স্মৃতি ধরে। শেষকালে মানুষ একেবারে নুয়ে পড়ে। বিশাল একটা কেতাবের মলাট বন্ধ হয়ে যায়। জীবিতের সংসারের একপাশে পড়ে থেকে থেকে একদিন কীটদষ্ট বিস্মৃতি। জ্যাঠামশাই হাজারিবাগে এসেছিলেন হেঁটে হেঁটে, ফিরে চললেন স্ট্রেচারে শুয়ে। এই বাড়ির দক্ষিণের ঘরে তিনি বিছানা নিলেন। দরজার পাশ থেকে উঁকি মেরে মেরে দেখি। সংসার একেবারে এলোমেলো। অনবরতই ডাক্তার-বৈদ্যের আসা-যাওয়া। বড়র বড়, তারও বড়। গম্ভীর মুখে আসেন, ফিরে যান গম্ভীরতর মুখে। গোটা বাড়িতে ফিনাইল আর কার্বলিকের গন্ধ। মহা আহ্লাদে আমি ঘুরি। শাসন নেই কোনও। জ্যাঠামশাইয়ের ঘরের পাশে খোলা বারান্দায় ক্যারামবোর্ড পেতে সমবয়সি ইয়ারদের সঙ্গে সারাদুপুর পিটি। কোনও দৃকপাত নেই। কে মরে আর কে বাঁচে। এক কিশোরের সঙ্গে জীবনমৃত্যুর কী সম্পর্ক? হাজারিবাগের অভিমান কলকাতায় এসে যেন দুধে-ফোলা পাউরুটি! কেন জ্যাঠামশাই আমাকে ডেকে বললেন না, বাপি, রাগ কোরো না! বোধের কী অভাব! একবারও বুঝলুম না। জ্যাঠামশাইয়ের তখন কথা বলার কোনও ক্ষমতা নেই। তরী ভেসে চলেছে নিঃশব্দে জীবনমৃত্যুর মোহানার দিকে। একদিন ক্যারামের আসর খুব জমেছে, ক্ষীণ একটা ডাক কানে এল, বাপি।

কী আনন্দ! আমার সবচেয়ে প্রিয়জন অবশেষে ডেকেছেন। স্ট্রাইকার ফেলে ছুটলুম। জ্যাঠামশাই চিত হয়ে শুয়ে আছেন। ঠোঁটদুটো অল্প ফঁক। চোখদুটো ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। জ্যাঠামশাই, বলে কাছে ছুটে গেলুম। তিনি তখন বহু দূরে চলে গেছেন। জীবনের ধনুক থেকে প্রাণের তির ছিটকে বেরিয়ে গেছে। বহু, বহু দূর থেকে ডাক ভেসে এল, বাপি, তোমার সঙ্গে ভাব হয়ে গেল। তবে এখানে নয় ওখানে। তোমার খেলা শেষ করে এসো। বাকি কথা হবে পরে।

সেই অভিমান! আজও আমি অতিশয় অভিমানী। জীবনের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারিনি। স্বামী নির্মলানন্দ? আমি কী করি? আপনার কাছে যেতে চাই। আমার অভিমান টেনে ধরে আছে। তবে আমি আর কিশোর নই। পোড়খাওয়া এক যুবক। আমি যাব। আমার হৃত গৌরব উদ্ধার করতে। সঙ্গে হরণকারিণীকেও নিয়ে যাব।

কোমরে আঁচল জড়িয়ে মুকু রান্নাঘরের কাছে বীর দর্পে ঘোরাঘুরি করছে। দিদি ঘরের ভেতরে। টুংটাং খুটখাট নানা শব্দ, সংসারের শব্দ। মুকু আবার মাঝে মাঝে গান গাইছে, হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যা হল, ঘোল খাওয়ালে মোরে!

মুকু, শেষটা হল পার করো আমারে।

সে কথাটা এই আমার কাঁচা বয়সে বলি কী করে! জীবনের কত সাধ আহ্লাদ বাকি আছে ভাই। এখনই যাই কী করে! আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তোমাকে জ্বালিয়ে তারপর যাব, যতদিন না তোমার মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে লোহারই বাঁধনে বেঁধেছে সংসার, দাসখত লিখে নিয়েছ হায়!

দিদি কুটনো কুটছিলেন, মুখ তুলে বললেন, হ্যাঁরে! তোরা কি বিয়ে করবি?

মুকু বললে, সেইরকমই ইচ্ছে আমাদের।

বাঃ বেশ হবে। মানাবে ভাল। তা কাকা ঘি আর আগুন পাশাপাশি রেখে চলে গেলেন!

তার কারণ আছে। আমরা সংযমী। কুকুর বেড়াল নই।

দিদি একটা বেগুন নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, যাক বাবা, ভালই হয়েছে। আমার একটা এক ভরির মতো সোনার বালা আছে, সেইটা ভেঙে তোকে একটা সুন্দর গয়না গড়িয়ে দোব। চল আজই কোনও স্যাকরার কাছে যাই।

একেই বলে উঠল বাই তো কটক যাই। বিয়ের এখনও দেরি আছে। আগে আমরা মেসোমশাইকে খুঁজে বের করব। তারপর আমি এম এ পাশ করব। তারপর।

দিদি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মেসোমশাইকে খুঁজে বের করবি মানে?

আমরা দুজনে থতমত। সত্য বেরিয়ে পড়েছে। সত্যের যা ধর্ম। আর চেপে রাখা সাজে না। প্রকাশ করে দেওয়াই ভাল।

আমিই বললুম, দিদি, আপনাকে আসল কথাটাই বলা হয়নি। আমরা হাসছি, খাচ্ছি, কথা বলছি, কিন্তু আমরা আজ অনাথ। বাবা কারওকে কিছু না বলে হঠাৎ ভোররাতে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন আমরা জানি না।

দিদির আনাজ কোটা বন্ধ হয়ে গেল। তারার মতো চোখ মেলে বলল, সেকী রে! কাকা নেই!

আছেন। কোথাও-না-কোথাও আছেন, আমরা এখনও জানি না।

তা হলে কী হবে!

আমাদের জানা নেই। ভগবানকে মানুষ যেমন ডাকে, আমরাও মনে মনে অনবরতই তাকে স্মরণ করছি। দেখা দিন, দেখা দিন।

দিদি মাথা নিচু করলেন। পিঠের দিকটা ফুলছে। মুখ তুললেন। চোখে জল। ধরা গলায় বললেন, অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়।

আপনার কোনও ভয় নেই দিদি। আমরা আপনাকে মাথায় করে রাখব।

তা তো হল, কিন্তু আমার কাকাকে ফিরিয়ে আনার কী হবে?

আমাদের দু’জনের মুখেই আর কোনও কথা সরল না। এই সুবিশাল ভারতভূমে কত গুহা, নদী, প্রান্তর, মন্দির, আশ্রম! তিনি কোথায় আছেন! জায়গার তো অভাব নেই আত্মগোপন করার। কেমন। করে জানব? দিদি মসৃণ বেগুনটা হাতে তুলে নিয়ে খুব আন্তরিক গলায় বললেন, একটা কিছু কর ভাই।

মুকু বললে, আজ রাতে আমরা পরামর্শে বসব।

মুকুকে ইশারায় ডেকে আমার ঘরে নিয়ে এলুম, আমার একটা অনুরোধ রাখবে?

বলো।

মুকু কী পরিশ্রম করেছিল কে জানে, ঘেমে গেছে! মুখটা মোমের মতো চকচক করছে। প্রাণের দীপ্তিতে চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। সারাশরীর ঘিরে থমকে আছে উষ্ণ আকর্ষণ। বড় দুর্বল মনে হচ্ছে নিজেকে।

আবার এও মনে হচ্ছে, Love’s way is life, without it humans are but bones skin-clad. প্রেমই জীবন। প্রেম ছাড়া মানুষ চামড়ার আস্তরণে হাড়ের খাঁচা।

মুকু বললে, কই বলো! কী দেখছ অমন করে? আমার অস্বস্তি হচ্ছে।

তুমি আমাকে পাগল করে দেবে দেখছি!

পাগলকে আর কী পাগল করব বলো! তোমার অনুরোধটা তাড়াতাড়ি বলে ফেলল। আমার প্রচুর কাজ।

তোমাকে আমার সঙ্গে একবার স্বামী নির্মলানন্দজির কাছে যেতে হবে।

আমাকে? আমি গিয়ে কী করব!

আমার সম্মান বাঁচাবে।

তোমার অসম্মানের কী হল?

আমার জামা খামচে ধরে তুমি আমাকে গাড়ি থেকে টেনে নামাচ্ছিলে, তিনি ভীষণ ঘৃণায় বলেছিলেন, নামিয়ে দাও, নামিয়ে দাও। যেন আমি কত খারাপ, চরিত্রহীন যুবক। আসল ব্যাপারটা তাকে জানানো দরকার।

না জানালে?

আমার যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে চিরকালের জন্যে।

যায় যাবে। তাতে তোমারই বা কী, আর আমারই বা কী!

ও কথা বোলো না। আমি কোন জলের মাছ জানো?

খুব জানি। গভীর জলের মাছ। তুমি গাছেরও খাবে, তলারও কুড়োবে।

তুমি একটা অধার্মিক, নাস্তিক।

তোমার মতো আস্তিক হওয়ার চেয়ে নাস্তিক হওয়া ভাল।

তুমি তা হলে যাবে না?

অবশ্যই যাব। কখন যেতে হবে বলো?

বিকেলের দিকে।

বেশ তাই হবে।

মুকু চলে গেল। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলুম। অদ্ভুত একটা আলস্য এসে যাচ্ছে। নিজের ভবিষ্যতটাকে কেমন তিল তিল করে নষ্ট করছি! কেবল ভাবছি। ভেবেই চলেছি। চাকরিবাকরি লাটে উঠে গেল। পড়াশোনা গোল্লায়। নিজেকে কখনও শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবছি, কখনও বিবেকানন্দ। আর বুকে হাত মুড়ে গোল্লা গোল্লা চোখ করলেই কি স্বামীজি হওয়া যায়! সংস্কার চাই, প্রারব্ধ চাই। পৃথিবীতে কত রকমের ইডিয়েট আছে? আমি একটা রকম। যা হতে পারব না, তা হবার চেষ্টায় মরছি। নিজের সম্মান বাঁচাবার চেষ্টায় একবার থানায় গেলুম না। কী? না, লোক জানাজানি হয়ে যাবে। সবাই বলবে, ছি ছি, ছেলের জন্যে বাবা গৃহত্যাগী। মাসতুতো বোনকে এনে ফুর্তি লুটছে। ভগবানের অসীম কৃপা। কোথা থেকে এক দিদিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বদনামের হাত থেকে কিছুটা বাঁচা যাবে অন্তত।

বেলা চারটের সময় আমরা আশ্রমে গিয়ে পৌঁছোলুম। আশ্রমের দরজার সামনে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে রইলুম দুজনে। স্বামীজির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি কী বলবেন! কঠিন তিরস্কার? মুকু বললে, কবে যে তোমার জড়ভরত ভাবটা যাবে! চলো না। যা হবার তা হবে। চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন না তো! বড়জোর বলবেন, গেট আউট। বেরিয়ে চলে আসব। ঈশ্বর তো কারও একার সম্পত্তি নয়। নিজেদের চেষ্টাতেই তাকে ধরব। গেরুয়া পরলেই কি তাকে পাওয়া যায়? অত সহজ নয়! শুনবে, তুলসীদাসজি কী বলছেন, তুলসী দিনে হরি মেলে তো, মেয় পেঁদে কুঁদা আউর ঝাড়। পাথর পুজনে হর মেলে তো ময় পুজে পাহাড়। তুলসীর মালা পরলে যদি জগদীশ্বর লাভ করা যায় তা হলে গলায় আমি তুলসীগাছের একটা কুঁদো ধারণ করি, কি তুলসীর একটা ঝাড় ঝুলিয়ে রাখি। আর যদি মনে করে থাকো একটা শিলার অর্চনা করলেই মহেশ্বরকে পাওয়া যাবে, তা হলে আমি একটা পাহাড়কেও পুজো করতে প্রস্তুত আছি। যা চাইছ তা অত সহজ নয়। চেলা মিলে লাখ তো গুরু মিলে এক।

আমরা দু’জনে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা গজগজ করছি, কারণ আমাদের মতের মিল তো কোনওদিন হবে না। যদি আমরা কোনওদিন স্বামী-স্ত্রী হই, এটা তো তারই লক্ষণ। অস্কার ওয়াইল্ডের কথা মনে পড়ছে, ম্যারেজ ইজ এ পার্মানেন্ট ডিসএগ্রিমেন্ট।

এক সরল চেহারার মানুষ রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ভাবলেন আমরা ঢুকতে ভয় পাচ্ছি। সাহস দিলেন, যান না, যান, ভেতরে যান, কেউ কিছু বলবে না। মহারাজরা খুব ভাল। রাত্তিরবেলা ভোগে গাওয়া ঘিয়ের লুচি হয়। খাঁটি গাওয়া। আমি সবদিন পাই না, তবে রোজ গন্ধ পাই। ভুর ভুর ভুর ভুর। রান্নাঘরের পাশেই তো আমি থাকি। যান যান, ভেতরে গিয়ে দেখুন। জুতো সাবধান। ভীষণ জুতো চুরি হয়।

মুখে অদ্ভুত একটা হাসি ঝুলিয়ে মানুষটি চলে গেলেন। আমরা নিজেদের ঝাড়াঝাড়ি করে ভেতরে ঢুকে পড়লুম। বাঁ দিকের অফিসঘরে আর গেলুম না। সোজা দোতলার মন্দিরে। ফুলের মালা পরে মা হাসছেন। দু-চারজন ভক্ত। মুকু বেশ অভিভূত হয়ে থেবড়ে বসে পড়ল। হাত জোড় করে প্রথমেই বললে, মা, তোমার যদি ক্ষমতা থাকে মেসোমশাইকে ফিরিয়ে এনে দাও।

এই কথাটা তো আমি মাকে বলতে পারিনি। আমি আসি যাই, নিজের কামনাই জানাই। বড় স্বার্থপর আমি! মুকুর মুখের দিকে তাকালুম। অদ্ভুত একটা ভাব খেলছে। ভীষণ হিংসে হল। মুকুর মন কত পরিষ্কার। আমি কত কুচুটে! সবসময় নিজের ধান্দা। মুকু যেভাবে বসেছে, সহজে উঠবে না। ফিসফিস করে বললুম, চলো, মহারাজের কাছে যাই।

মহারাজ আগে, না মা আগে!

থমকে গেলুম। সত্যই তো, মা-ই তো সব। মাকে সব নিবেদন করে আমরা তো ফিরেও যেতে পারি। যাই হোক মুকুর দয়া হল। প্রণাম করে উঠে দাঁড়াল। আমরা তিনতলার সিঁড়ির মুখে এসে দাঁড়ালুম। ভয়ে বুক কাঁপছে। কপালে কী লেখা আছে জানি না।

দুরুদুরু বুকে মহারাজের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালুম। লাল ঝকঝকে মেঝে। চকচকে টেবিল। চেয়ারে টকটকে গেরুয়া পরে বসে আছেন মহারাজ। মুখ নিচু করে কিছু একটা লিখছেন। মুকু হঠাৎ আমাকে ঠেলে ঘরে ঢুকে গেল। মহারাজ মুখ তুলছেন। মুকু ততক্ষণে মাটিতে গড় হয়ে প্রণামে।

মহারাজ বললেন, কে তুমি? আমাকে দেখেও দেখলেন না।

মুকু সোজা হয়ে হাত জোড় করে বললে, আমি মুকু। মায়ের মেয়ে।

মহারাজ থতমত। মুখ অতিশয় গম্ভীর। এই গাম্ভীর্য ভীষণ ভয়ের। থমথমে মুখ তীক্ষ্ণ চোখ। সামনে দাঁড়ালে কেঁচো হয়ে যেতে হয়। মুকু কিন্তু নির্ভয়। এমন উত্তর মহারাজ কখনও শোনেননি, মায়ের মেয়ে।

মহারাজ বললেন, অনিশ্চিত পরিচয়কে নিশ্চিত করো। দেশ কাল-পাত্রের সীমায় বাঁধে।

পেছনে লেজ গুটিয়ে যে ভীরু দাঁড়িয়ে আছে, আমি তার বোন। এইবার কেমন বোন? না মাসতুতো বোন। আরও এক ধাপ এগোলে, আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ দর্শনের ছাত্রী। এইবার আরও একটি সংযোজন, সেদিন আপনার গাড়ি থেকে জামার বুক খামচে ধরে যে-মেয়েটা ওকে টেনে নামিয়েছিল, সেই মেয়েটাই আমি। এইবার প্রার্থনা, প্রণাম করেছি, আশীর্বাদ করেননি। গম্ভীর মুখ। একটু হাসি আশা করি। আশীর্বাদ চাই, স্বামীজি ভারতীয় নারীকে যে-রূপে দেখতে চেয়েছিলেন আমি যেন সেইরকম হতে পারি। স্বামীজি বলেছিলেন, আমাদের মেয়েরা বরাবরই প্যানপেনে ভাবই শিক্ষা করে আসছে। একটা কিছু হলে কেবল কাঁদতেই মজবুত। বীরত্বের ভাবটাও শেখা দরকার। সূর্বশক্তিমত্তা, সর্বব্যাপিতা ও অনন্ত দয়া–সেই জগজ্জননী ভগবতীর গুণ। জগতে যত শক্তি আছে তিনিই তার সমষ্টিরূপিনী। জগতে যত শক্তির বিকাশ দেখা যায়, সবই সেই মা। তিনিই প্রাণরূপিনী, তিনিই বুদ্ধিরূপিনী, তিনিই প্রেমরূপিনী।

মুকু একটু থেমে মহারাজের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত মিষ্টি গলায় বললে, মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করবেন না মহারাজ?

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন