২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে,
অনেক দেরি হয়ে গেল,
দোষী অনেক দোষে।

রাস্তায় বেরিয়ে এসে বাড়িটার দিকে একবার তাকালুম। কারখানার কালো চিমনি ভসভস করে ছেড়ে চলেছে পিঙ্গল ধোঁয়া। সাবান তৈরি হচ্ছে। গন্ধে চারপাশ আমোদিত। মাথা ঝিমঝিম করছে। একটা যা-তা ব্যাপার হয়ে গেল। যে-রাস্তাটা ধরে হাঁটছি, সেইটা কিছুদুরে গিয়ে পড়েছে ট্রাম আর বাস রাস্তায়। ট্রামের শব্দ কানে আসছে। মুকু আমার পাশে পাশে প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে চলেছে।

মুকুই প্রথমে কথা বললে, সব তো ভেস্তে গেল।

কী ভেস্তাল?

ভাইবোনে বিয়ে হয়?

না।

আমরা তো ভাইবোন হয়ে গেলুম।

ও তো একটা বলতে হয় তাই বলা।

কেন? সাহস করে বলতে পারলে না, এ আমার বোন নয়, বউ। বুক ফুলিয়ে বলা গেল না? লোকে খারাপ ভাববে, তাই না? বাঙালি তো, ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচ। বাইরে প্রকাশ হয়ে পড়লেই চরিত্রে চিড় ধরে যাবে।

রাগ করেছ?

দুঃখ পেয়েছি। অভিমান হয়েছে। আমার এই লুকোচুরিটা একেবারে সহ্য হয় না।

যদি অনুমতি দাও তো একটা কথা বলি।

বলো। তুমি তো কথার মালা, কথামালা। কথামালার শৃগাল।

তা হয়তো ঠিক, ধূর্ত এবং ভীরু। তোমার গালাগালের যোগ্য। তুমি ভীষণ কড়া কড়া কথা বলল।

তুমি বলাও।

যে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হল, মেয়েরা রাখি বাঁধে জানো তো, দাদা দিয়েই প্রেমের শুরু। অনেক দাদাই শেষে স্বামী হয়। এই কেসটাও সেই কেস।

আমি এতক্ষণ ধরে কী ভাবলুম জানো, তোমার একজন বোনেরই দরকার, বউ নয়। বোন অনেক পবিত্র। আমি ওপর-পড়া হয়ে তোমার জীবন দখল করতে চেয়েছিলুম, সেটা ঠিক হবে না। তোমার চরিত্রটা বড় এলানো।

আমি তা মনে করি না।

আমার তাই মনে হয়।

আমার আসল দিকটা তুমি দেখোনি। দেখলে তোমার সিদ্ধান্ত পালটাতে।

সেই দিকটা কী? তোমার সবই তো তালগোল পাকাননা। এই তো দেরাদুনের সুযোগটা হারালে। আর একজন যাবেন তোমার জায়গায়। তুমি কলকাতায় বসে বসে বোন আর বাড়ি আগলাবে। সুযোগ বারেবারে আসে না।

প্রথমে তো তাই ঠিক হল। মাঝখান থেকে বিপুলবাবু ঢুকে সব গোলমাল করে দিলেন তোমাকে বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে। বাড়িটার একটা ব্যবস্থা হয়েই গিয়েছিল।

তুমি তো বলতে পারতে, আমি হস্টেলে থাকি।

তা কী করে হয়! বাড়ি ছেড়ে বোন খামোখা কেন হস্টেলে থাকবে, কোন যুক্তিতে?

তুমি তো ব্যাপারটা এক্সপ্লেন করতে পারতে, মায়ের পেটের বোন নয়, মাসতুতো বোন।

তা হলে কী ভাবতেন? ভাবতেন, বাবা নেই, মাসতুতো বোনকে হস্টেল থেকে এনে কী না কী করছে!

আমার কী মনে হচ্ছে জানো, এটা রাস্তা না হলে ঠাস করে তোমাকে এক চড় কষাতুম। একেবারে পারফেক্ট জানোয়ারের মতো কথা। তোমার নোংরা ভাবনাটা অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাও? একজন সুন্দর শিক্ষিত মানুষ কেন এমন ভাববেন? ছেলেবেলা থেকে কিছু গ্রাম্য মহিলার মধ্যে থেকে তোমার এই অবস্থা হয়েছে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে মানেই উঁহুঁ হুঁহু! ভাশুর, ভাদ্দরবউ, বউদি, ঠাকুরপো, তুতো বোন, তুতো ভাই, যেখানে যত আছে সব ব্যভিচার করে বেড়াচ্ছে। একে বলে ঝিয়ে-সাইকোলজি। তোমার উচিত, তোমাদের ওই প্রাগৈতিহাসিক বাড়ি ছেড়ে বৃহৎ বিশ্বে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়া। তোমার মনে নোনা ধরেছে।

মুকু ছিটকে আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে গেল। রেগে গেলে মুকুর মুখচোখ লাল হয়ে ওঠে। চলন-বলন সবই তড়বড়ে হয়ে যায়। কাকড়াবিছের মতো খড়খড় করতে থাকে। প্রকাশ্য রাজপথে সিন ক্রিয়েট করার ইচ্ছে আমার নেই। ইতিমধ্যেই লোকজন তাকাতে শুরু করেছে। নীরবে বাকি পথটুকু হেঁটে আমরা ট্রাম স্টপেজে এসে গেলুম। মুকু একটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়েছে, যেন আমাকে চেনেই না। মধ্যদিনের আলোয় তাকে ভীষণ মায়াবী লাগছে। পানের মতো মুখ। ফুরফুরে চুল। ফরসা দেহত্বক রাতের সমুদ্রের ফেনার মতো জ্বলছে। ভীষণ একটা ভালবাসায় ক্রমশই আমি উতলা হয়ে উঠছি। আমার সমস্ত সমস্যা টমস্যা ভেসে বেরিয়ে যেতে চাইছে। বেশ বুঝতে পারছি মুকুকে ছাড়া আমার চলবে না।

মুকু হঠাৎ আমার কাছে সরে এসে বললে, শোনো, আমি তোমার বোনটোন হতে পারব না। ওসব আদিখ্যেতা আমার সহ্য হবে না। আমি তোমার মতো পাপ করতে পারব না। মুখে বলব এক, কাজে করব আর এক, আমার দ্বারা তা হবে না। তুমি চলো।

কোথায় যাব?

তোমার ওই এম ডি-র কাছে। এইবার যা বলবার আমি বলব।

বেশ ভয় পেয়ে গেলুম, কী বলবে?

বলব, মশাই! আসল ব্যাপারটা হল, আমি বোনটোন নই। ও ওইরকম বলতে হয় বলছে। সাধুপুরুষ সাজবার জন্যে। মায়ের বোন মাসি হয় ঠিকই। একই রক্ত। আমি ওর জ্যাঠাইমার বোনের মেয়ে। তার মানে ঘোড়ার ডিম। আমি ভালবাসি। আজ বাদে কাল বিয়ে করব। স্বামী-স্ত্রী সীমানায় পঁড়িয়ে আছি। আমরা দুজনেই দেরাদুনে যাব। চলো চলো। আর দেরি নয়।

দেরাদুনে যাবার প্রয়োজন নেই মুকু। কলকাতাতেই বেশ থাকা যাবে। তা ছাড়া তুমি যদি চাকরিটা পেয়ে যাও, তা হলে দুজনের রোজগারে রাজার হালে।

ও! এখন থেকেই তুমি আমার রোজগারের আশায় আছ! তা ভাল।

আমি ঠিক অতটা লোভী নয় মুকু। তোমার রোজগারের আশা আমি করি না। আমার একার। রোজগারেই দু’জনের সংসার বেশ ভাল চলে যাবে। আমি তোমাকে ভালবাসি।

ভালবাসো? বাবা, এ যেন ভূতের মুখে রামনাম। শোনো, ওসবে আমি ভুলছি না। তোমাদের ওই বিশ্রী পাড়া ছেড়ে চিরকালের জন্যে প্রবাসী হতে হবে। হিমালয়ের কোলে হলে তো কথাই নেই। চলো চলল।

আমাদের সামনে দিয়ে সাদা রঙের বিলিতি একটা গাড়ি বেরিয়ে গেল। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললুম। পেছনের আসনে বসে আছেন এম ডি। কী একটা পড়ছেন গভীর মনোযোগে। আমি বললুম, ওই দেখো এম ডি বেরিয়ে গেলেন। আজ আর কোনও কথা হবে না। চেম্বার অফ কমার্সে ওঁর মিটিং আছে।

তাতে তোমার আনন্দে নাচার কোনও কারণ নেই। কাল আমি আসব। এসে সমস্ত পরিস্থিতিটা নিজে বুঝিয়ে বলব। আমি কে, তুমি কে, আমরা ভবিষ্যতে কী হব! তোমার কি মনে হয় আমি ইয়ারকি করার জন্যে ওই মুল্লুক থেকে এই মুলুকে এসেছি। আমার একটা পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনাটা শুনবে?

ট্রাম আসছে।

আসুক। আসবে, থামবে, চলে যাবে, আবার আসবে। ট্রামের অভাব নেই। পরের ট্রামে যাব। না হয় তারও পরের ট্রামে।

কিন্তু এই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কঁহাতক আর তর্কাতর্কি করা যায়, তুমিই বলো?

চলো, তা হলে এই পার্কে গিয়ে বসি। ফাঁকা জায়গায় বসে মন দিয়ে আমার পরিকল্পনাটা তোমার শোনা উচিত।

গুটিগুটি এগিয়ে গিয়ে আমরা দু’জনে অদূরের একটা ছোট পার্কে বসলুম। ছোট হলেও মনোরম। গোটা তিনেক বিশাল গাছ। তিনকোনা সবুজ ঘাসের কার্পেট। দু-একটা খালি ঠোঙা, আইসক্রিমের কাপ, ঝরাপাতা, সিগারেটের টুকরো ছড়িয়ে আছে। একটা সুন্দর রুমাল পড়ে আছে। কেউ পেতে বসেছিলেন, তুলতে ভুলে গেছেন। আমরা একটা আড়াল দেখে পাশাপাশি বসে পড়লুম। বসেই মনে হল শুয়ে পড়ি, এত ক্লান্ত। কিছু না করেই ক্লান্ত। শরীর হল মনের খেলা। মন গেল তো সব গেল।

মুকু তার ফরসা ফরসা হাতদুটো দিয়ে আমার ডান হাতটা খপ করে চেপে ধরল। ফরসা। দুধের মতো। অনামিকায় রক্তলাল একটা রুবি। যেন ডালিমের দানা। সিল্কের মতো শরীরের ত্বক। টানটান হয়ে আছে। হাতের কোথাও একটা রোম নেই। শাড়ির তলা দিয়ে পা দুটো বেরিয়ে আছে। মোমের মতো গোড়ালি। পায়ের আঙুল যেন মোচার কলি। ভগবানের নিজের হাতের ভাস্কর্য। এমন। কিছু দেখলে আমার ইচ্ছে করে পায়ের ওপর লুটিয়ে পড়তে। কে বড়, কে ছোট, সে বিচার আর থাকে না। মনে হয় হেরে গেছি, পরাজিত আমি। ঈশ্বরের আর্ট গ্যালারির মেঝেতে আমি ছিঁড়ে পড়ে আছি। পুরনো চার চরণ কবিতা মনে পড়ে যায়:

যে হৃদে আছিল শোভা কত অমরার,
অমরী আসিত যেথা ছুটে বার বার
তুমি নারী, মৃদু হেসে, আঁখি-কোণে চেয়ে
নিলে অনায়াসে লুটে সে হৃদি আমার?

আমার হাত ছেড়ে দিয়ে মুকু একটা গাছের ভাঙা ডাল কুড়িয়ে নিয়ে বঁটার মতো ঘাসের ওপর বোলাল কিছুক্ষণ। মুখটা নিচু করে আছে। কপালের ওপর চুল ঝুলছে কয়েক গুছি। হঠাৎ মুখ তুলে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল। অসাধারণ সেই হাসি! যেন পাথরে চিড় ধরল। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলুম কিছুক্ষণ। এ কেমন মেয়ে! এই বকছে, এই ধমকাচ্ছে, এই হাসছে।

মুকু গাছের ডালটাকে কোলের ওপর শুইয়ে, বেশ গুছিয়ে বসে বললে, আমাদের সংসারটা ভেঙেছে আমার বাবার ভুলের জন্য, একগুঁয়েমির জন্য। যুদ্ধ যখন বাধল, তখন বার্মা থেকে সবাই পালাতে লাগলেন। আমার একগুঁয়ে বাবা শেষ দিন পর্যন্ত পড়ে রইলেন মাটি কামড়ে। সময়ে পালালে কিছু সঙ্গে নিতে পারতেন। ট্রান্সপোর্ট পেতেন। শেষে কী হল? হাঁটাপথে রওনা দিতে হল। রেঙ্গুনের জেল খুলে দিয়েছে। যত চোর গুন্ডা, বদমাশ, উন্মাদ ছাড়া পেয়ে সারা শহরে তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছে। দোকানের পর দোকান লুঠ করছে। শেষে আমাদের পাশের বাড়ির এক বউকে রাতের বেলা বাড়ি চড়াও হয়ে নৃশংসভাবে রেপ করে মেরে ফেললে। তখন আমার বাবার টনক নড়ল। পরের রাতেই আমাদের টার্গেট করত। আমরা পেগুর পথ ধরলুম। সেখান থেকে প্রোম। শ দুই মাইল। ভাবতে পারো? হাঁটছি তো হাঁটছিই। প্রোম থেকে মান্দালয়। কাতারে কাতারে মানুষ চলেছে। এমনি তবুও হাঁটা যায়, সঙ্গে বোঁচকাকুঁচকি। পথের ধারে মৃতদেহ পড়ে পচে ফুলে ঢোল হয়ে আছে। কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। কারও বাবা, কারও মা, কারও মেয়ে। অসুস্থ হয়ে কেউ পড়ে আছে, আর হাঁটতে পারছে না। কে থামবে তার জন্যে! সবাই পালাচ্ছে। টাকার কোনও দাম নেই। হোটেল আছে জায়গা নেই। জল নেই, খাবার নেই। লাখোপতি, কোটিপতি হন্যে হয়ে ঘুরছে। টাকা হয়ে গেছে কাগজ। প্রোমে শুরু হয়ে গেছে কলেরা। আমরা যখন আর হাঁটতে পারছি না, তখন বসে পড়ছি রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নীচে। পাশেই হয়তো পড়ে আছে কেউ, মারা গেছে কলেরায়। কোনওরকমে মান্দালয়ে গিয়ে পৌঁছেলুম। মায়ের অবস্থা তখন খুবই খারাপ। প্রোম থেকে মান্দালয় পাঁচশো মাইল। তুমি ভাবতে পারো? দূরত্ব ভাবলেই মাথা ঘুরে যায়। কোথাও কোনও সাহায্য নেই। কেউ কারওকে সাহায্য করবে না। মান্দালয়ের পথে আমার মা মারা গেলেন। জঙ্গলের গভীরে একটা জায়গায় দুটো গাছের মাঝখানে কিছু মাটি গাছের ডাল দিয়ে উসকে মাকে শুইয়ে দেওয়া হল। প্রথমে চিত করে শোয়ানো হল। বাবা বললেন, না না, অমন সুন্দর মুখ জন্তুজানোয়ারে খেয়ে যাবে। উপুড় করে শোয়াই। মাকে উপুড় করে দেওয়া হল। মা শুয়ে আছেন ঝুরো ঝুরো মাটির ওপর। চারপাশ দিয়ে চলে গেছে ইলিবিলি গাছের শিকড়। মচমচে গাছের পাতা। আমি আর দিদি গাছের পাতা জড়ো করে মাকে চাপা দিচ্ছি। কিছু শুকনো কিছু ভিজে দলা পাকানো। আস্তে আস্তে তলিয়ে গেলেন পাতার স্তূপে। একসময় বাবা বললেন, চলো, আর তো কিছু করার নেই। সামনে অনন্ত পথ। আমাদের তখন এমন অবস্থা কঁদতেও ভুলে গেছি। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই, চান নেই। পশুর মতো অবস্থা। আমার কেবল মনে হচ্ছে, আমিও শুয়ে পড়ি মায়ের পাশে। মাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে যেমন শুয়ে থাকতুম রেঙ্গুনে আমাদের বাড়ির খাটে। মান্দালয় থেকে ভারত কমসে কম দেড় হাজার মাইল। পথ আরও সাংঘাতিক। একের পর এক খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, ইরাবতী, চিড়ুইন। ঠিক হল আমরা কোনওরকমে ইরাবতী পেরিয়ে, আরাকান আকিয়াব হয়ে চট্টগ্রামে ঢুকব। এমন কোনও অখাদ্য নেই যা আমাদের খেতে হয়নি। কুমিরের মাংসও খেয়েছি। এমন একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পরেও বাবার কিন্তু সংসারে বিতৃষ্ণা এল না। মনকে দিয়ে বলাতে পারলেন না, কী ছার সংসার! উলটে বললেন, এই তো সংসার! ভোগ আর দুর্ভোগ এ ছাড়া সংসারে নেই কিছু। আমার কিন্তু শিক্ষাটা হয়ে গেল অন্যরকম। আর কোনওদিন সেই মান্দালয়ের জঙ্গলে যেতে পারব না। পাতার স্তূপ সরিয়ে দেখতে পারব না, কোনও কঙ্কাল শুয়ে আছে কি না চিরনিদ্রায়? আমার মা। আমি দেখেছিলুম, মৃত্যুর সেই মহোৎসবেও পশু মানবের নারীমাংস-লালসা। মৃতদেহের পাশে মানুষের মৈথুন। সবসময় ভিক্টিম হয়েছে মেয়েরা। দিদি আমার চেয়েও বড়। ঘোরতর সুন্দরী। আরাকানের পথে বাবা তার সারাগায়ে কাদামাটি মাখিয়ে দিলেন রূপ চাপা দেবার জন্যে। পরিয়ে দিলেন একটা ঢোলা শার্ট, যাতে দেহের আকর্ষণ চাপা পড়ে থাকে। সেই থেকে পুরুষজাতের ওপর আমার প্রবল ঘৃণা।

তার মানে তুমি আমাকেও ঘৃণা করো?

চুপ! আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। আমি আগে শেষ করি। আমার বাবা আমাদের দু’বোনের জন্যে যথেষ্ট করলেন। লেখাপড়া শেখালেন। কিন্তু তোমার বাবার মতো আমার বাবার জীবনে কোনও ত্যাগ নেই, কোনও আদর্শ নেই। এই বয়সেও নারীসঙ্গের জন্য লালায়িত। আমাদের সমালোচনায় কান দেননি। মায়ের স্মৃতি মুছে ফেলেছেন মন থেকে। কথায় কথায় বলবেন, জীবনের ব্যাপারে আমি একজন পাকা ইংরেজ। আমার আদর্শ চুটিয়ে বাঁচো, মরে যাও। সবারই শেষ একমুঠো ছাই। ফুঁ দিলে উড়ে যাবে। কিছু মনে কোরো না, আমার বাবাকে দেখলে মনে হয়, এক বৃদ্ধ পশু। তোমার বাবাকে দেখে আমার আবার বিশ্বাস ফিরে এল। মনে হল মানুষও দেবতা হতে পারে। আমি প্রেমে পড়ে গেলুম। সে এক অদ্ভুত প্রেম। মেয়ে, স্ত্রী, বন্ধু, মা সব মিলিয়ে একটা ব্যাপার তৈরি হল। তখনই মনে হল, এই মানুষটিকেই আমার জীবনের ধ্রুবতারা করব। শিবের সংসারকে গৌরী হয়ে সাজাব। তোমার সমস্ত ন্যাকামি তছনছ করে তোমাকেও তোমার বাবার মতো করব কুছ নেহি হ্যায় তো থোড়া থোড়া। অন্তত কুড়িটা ছেলে আমার জন্যে হাঁ হাঁ করে আছে। তাদের মধ্যে একজন অধ্যাপকও আছেন। বেশ বুঝতে পারি সবক’টা দেওয়ালি পোকা। চরিত্রের কোনও জোর নেই। অধ্যাপকের আবার বউ আছে। সবকটা এমন হ্যাংলার মতো ভাব করে, পা থেকে মাথা অবদি জ্বলে যায়। একমাত্র তোমার মধ্যে তোমার বাবার গুণ কিছুটা খুঁজে পেয়েছি। তোমাকে এইসময় ধরতে পারলে আমি একজন মানুষ পাব। তোমাকে একটু টেম্পার করে নিতে হবে। বেশ করে তাতে আর পেটাতে হবে। লোহা থেকে তৈরি করতে হবে স্টিল। এও এক ধরনের ভালবাসা। দায়িত্বপূর্ণ। ভালবাসা। মেসোমশাই ফিরে এসে যেন বলতে না পারেন, আমার ছেলেটাকে কেউ দেখেনি। এই দায়িত্ব কেউ আমাকে দেয়নি, আমি নিজেই তুলে নিয়েছি কাঁধে।

মুকু মুখ নিচু করে ঘাসের ওপর হাত বোলাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার মুখের দিকে। পাতার ফাঁক দিয়ে পড়ন্তবেলার রোদ এসে পড়েছে তার রেশম চিক্কণ চুলে। আমার আর বলার কিছু নেই। আমার মাতামহের কণ্ঠে শোনা একটি গানের কলি হয়ে গেছি আমি, দিয়েছ তুমি অনেক দিয়েছ/অযাচিত তব দান/বুঝিনি মহিমা দিইনি মূল্য/তবু দান অফুরান/কত করুণার কণিকা ঝরিয়ে/ নিতি মমতায় রেখেছ জড়িয়ে/ অযতনে আমি ফেলেছি ছড়িয়ে করোনি তো অভিমান ॥ আমার এই প্রবল দুর্দিনে ভগবানের এ কী করুণা! আমার মতো একটা মর্কটকে এইভাবে কেউ ভালবাসতে পারে, এই বিশ্বাসটাই আমার ছিল না। সেই ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি সকলেই আমাকে এলেবেলে ভাবে। খেলার মাঠে যখন টিম তৈরি হত, দু’পক্ষই বলত ও হল এলেবেলে। সেই এলেবেলেকে শিক্ষিতা ডাকসাইটে সুন্দরী এক মেয়ে ভালবেসেছে। প্রেমের আদিখ্যেতা নয়, অভিভাবিকা হতে চাইছে। গভীর একটা ভাবনা রয়েছে আমাকে ঘিরে।

মুকু চোখ তুলে তাকাল। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। বিশ্বাস করো, আমার অনেক জায়গা আছে যাবার, কিন্তু কোথাও যেতে মন চায় না। আমি মানিয়ে নিতে পারব না। কিন্তু তোমাকে পারব। তোমার ভেতর একটা শিশু আছে, যে কোনওদিন বুড়ো হবে না। তোমার ওই অবিষয়ী ভাবালু ভাবটাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। ভালবেসে ফেলেছি তোমাদের সাত্ত্বিক সংসারটাকে।

তোমার মতে আমার তা হলে কী করা উচিত মুকু? তুমি দু’বার দুরকমের পরামর্শ দিলে। একবার বললে, চাকরি ছাড়তে হয় ছাড়বে। এখানেই থাকবে। সব টিপটপ করে সাজিয়ে অপেক্ষা করবে, তিনি আসবেন। এই মুহূর্তে বলছ দেরাদুনে যেতে হবে।

এটা হচ্ছে আমার দ্বিতীয় চিন্তা। একরোখা অভিমানী মানুষ। নিজে তিনি ফিরবেন বলে মনে হয় না। তাকে ফেরাতে হবে। ধরে আনতে হবে। পাহাড়েই তিনি গেছেন। দেরাদুনে থেকে সন্ধান করা সহজ হবে। সামনেই আসছে কুম্ভমেলা। সেই বিশাল জমায়েতে আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজব।

বেশ, তা হলে তাই হোক। কাল আবার আসব। এখন চলো, তোমার হস্টেলে যাই।

পার্ক থেকে বেরিয়ে আমরা একটা ট্রামে উঠে পড়লুম। হস্টেলের সামনে এসে আমরা একটু অবাক হয়ে গেলুম। পুলিশের একটা জিপ দাঁড়িয়ে আছে। আছে আছে, আমরা তেমন গ্রাহ্য করলুম না। মন একমুখী হয়ে আছে। অন্য কোনও ভাবনা ঢুকছে না মাথায়। একটাই চিন্তা, আমাদের যেতে হবে। মালপত্র গোছগাছ করে আমরা বেরিয়ে পড়ব।

মুকু বলল, তুমি বাইরে অপেক্ষা করো। যখন বলব তখন একটা ট্যাক্সি ডাকবে।

মুকু চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে আছি বাইরে। সামনেই জিপগাড়িটা। নিরেট এক ব্যক্তিত্ব। দেখলেই ভয়ভয় করে। হস্টেলের অফিসঘরটা গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। মনে হল ঘরের মধ্যে অনেক মেয়ের জটলা। একজন ভারিক্কি মহিলার তর্জন-গর্জন কানে আসছে। ঠিক বুঝতে পারছি না অশান্তিটা কীসের? কোনও মেয়ে কি আত্মহত্যা করেছে? চুরি হয়েছে? মেয়েরা মারামারি করেছে নিজেদের মধ্যে? কিছু একটা হয়েছে। পুলিশ অফিসারের ইউনিফর্ম চোখে পড়ছে। মেয়েদের হস্টেল। একেবারে সামনে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। একটু দূরে সরে গেলুম। যারা কাগজ কুড়োয়, এইরকম দুটো ছেলে বস্তা থেকে ফুটপাথে সমস্ত কাগজ উজাড় করে কী যেন বাছাবাছি করছে। ভীষণ ব্যস্ত তারা। দিন শেষ হয়ে আসছে। হস্টেলের ভেতর বিশাল দেবদারু। এক ঝাক পাখি চুটিয়ে কলরব করছে। জায়গাটা নিরাপদ বলেই মনে হল। পুলিশের এক বড়কর্তা এসেছেন, তাঁর নির্দেশে ইভ টিজারদের আর রকবাজদের আচমকা খুব ধরা হচ্ছে। কোনও কথা নয়, ধরো আর ভ্যানে তোলো। হস্টেলের ভেতর পুলিশ ঢুকে আছে। বলা যায় না বেরিয়েই আমাকে দেখলে হয়তো চ্যালেঞ্জ করবেন। এ ব্যাপারে আমি বেশ ভিতু। মুকুকে নিয়ে যতক্ষণ আমি পার্কে বসে ছিলুম, কেবলই ভাবছিলুম, এই বুঝি কেউ এসে বলে, অ্যায় কী হচ্ছে। দাঁড়িয়ে পঁড়িয়ে এমন একটা মুখ করে কাগজ বাছাই দেখতে লাগলুম, যেন আমারই কাগজ। আমারই জীবনের ঘেঁড়া পাণ্ডুলিপি। ছেলে দুটোর চারটে কথার তিনটেই খিস্তি। খিস্তির লে নেওয়াও চলতে লাগল। কতরকমের গালাগাল যে আছে!

দাঁড়িয়েই আছি। একসময় জঁদরেল অফিসারকে নিয়ে জিপটা চলে গেল। ছেলে দুটোর সব কাগজ আবার রাস্তার বস্তায় ঢুকে গেল। দুজনে এক পক্কড় ইয়ারকি মারামারি করে, বস্তা কাঁধে সরে পড়ল ডাইনে বামে থুতু ছেটাতে ছেটাতে। আমি দাঁড়িয়েই আছি। দিনের আলো নিবে গেল। রাস্তার আলো জ্বলে উঠল পটপট। হাঁকছে মালাই, হাঁকছে ঘুঘনি। রাতের চরিত্ররা সব বেরিয়ে পড়েছে। ঠুনঠুন রিকশা। দাঁড়িয়েই আছি। মুকুর পাত্তা নেই। একবার মনে হল, যা থাকে বরাতে, নিজের পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে সুপারকে জিজ্ঞেস করি। হঠাৎ মাথায় খেলে গেল, আচ্ছা জিপটা মুকুর কারণেই আসেনি তো! কাল বিকেল থেকে মেয়েটা হস্টেলে নেই। কোনও খবরও দেয়নি। আমার আর সাহসে কুলেল না। হস্টেলের ঘরে ঘরে আলো জ্বলে উঠেছে। একটা ছেলে ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা ঠায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি, সব মেয়েই ঢুকছে একজনও বেরোচ্ছে না, যে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করব। ভেতরের নাটক ছেড়ে কেউই বেরোতে চাইছে না।

আর কাহাতক দাঁড়ানো যায়! উদভ্রান্তর মতো আমি বাড়ির পথ ধরলুম। একা দোকানের সামনে এসে একজনকে ফোন করতে দেখে মনে হল, হস্টেলে একটা ফোন করলেও হয়। বলতেও তো পারি, আমি মুকুলিকার দাদা বলছি। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন হবে, কেমন দাদা? দাবড়ানি খেয়ে ফোন ফেলে দিতে হবে।

এত ফঁকা লাগছে নিজেকে! এককথায় জীবনটা অর্থশূন্য হয়ে গেল। এত বছর বেঁচে আছি এমন নিঃসঙ্গ নিজেকে কখনও মনে হয়নি। মধ্যরাতের নির্জন রাজপথে একাকী একটা ষাঁড়ের মতো মনে হচ্ছে নিজেকে। কোথাও কোনও যাবার জায়গা নেই। কথা বলার মতো কোনও লোক নেই। দু’চারজন বন্ধুবান্ধব সব বিদেশে। আত্মীয়স্বজনের বালাই নেই। পাড়ায় ঢুকব, বলা যায় না মেনির সাপোর্টাররা বদলা নেবার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে কি না! বিষ্টুদার বাড়িতে কথায় কথায় যাওয়া যায় না। লজ্জা করে। বউদি ভাববেন, টিপের সঙ্গে ভাব জমাতে এসেছি। আবোল-তাবোল কীই বা বকব, মনের সে অবস্থা নেই। নিজের বাড়িতে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। নিরানন্দ পুরী। ভীষণ বিষণ্ণতা আসবে।

সামনেই ঠনঠনের কালীবাড়ি। আরতি হচ্ছে। পঁড়িয়ে গেলুম একপাশে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক ভদ্রলোক। ফিনফিনে পাঞ্জাবি, কোঁচানো মিহি ধুতি। সরু গোঁফ। আরতি চলছে। ভদ্রলোক হঠাৎ আমার হাতে মৃদু একটা চাপ দিলেন। আমি তাকালুম। ভদ্রলোক হাসলেন। চিনতে পারলুম না।

ফিসফিস করে বললেন, চিনতে পারছ না?

আজ্ঞে না?

মনে করার চেষ্টা করো।

আরতির বাজনা দ্রুত চলেছে। পুরোহিতের চামর দ্রুত লয়ে দুলছে। দেখছি আর ভাবছি। হঠাৎ দেখি ভদ্রলোক অদৃশ্য। আরতি শেষ। ভক্ত কণ্ঠের মা মা চিৎকার। প্রণাম করে, সামনেই যে ট্রাম পেলুম উঠে বসলুম। ভাড়া দেবার জন্যে পকেটে হাত দিলুম। ফাঁকা। মালমশলা সব উধাও।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ যাত্রা শুরু
২. ১.০২ কৌপীনবন্ত: খলু ভাগ্যবন্ত
৩. ১.০৩ ছায়া, মায়া, কায়া
৪. ১.০৪ Nothing begins and nothing ends
৫. ১.০৫ মাগুর মাছের ঝোল, যুবতী নারীর কোল
৬. ১.০৬ বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে
৭. ১.০৭ সারমন অন দি মাউন্ট
৮. ১.০৮ যামিনী জাগহি যোগী
৯. ১.০৯ Dark idolatry of self
১০. ১.১০ নীলাঞ্জন-সমাভাসং রবিপুত্রং যমাগ্রজম
১১. ১.১১ কেয়া হুয়া, গোদ হুয়া
১২. ১.১২ রতনে রতন চেনে, ভালুক চেনে শাঁকালু
১৩. ১.১৩ প্রেমের তিন পর্ব
১৪. ১.১৪ খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়
১৫. ১.১৫ Inside my brain a dull tom-tom begins
১৬. ১.১৬ সিন্নি দেখেই এগোই কেঁতকা দেখে পেছোই
১৭. ১.১৭ আপনার চেয়ে পর ভাল, পরের চেয়ে বন ভাল
১৮. ১.১৮ My good blade carves the casques of men
১৯. ১.১৯ মারকাটারি বগল চাপ কারবারে গুনচট
২০. ১.২০ যেমন কর্ম তেমন ফল, মশা মারতে গালে চড়
২১. ১.২১ তিন বাতসে লট্‌পাট হেয়
২২. ১.২২ যে হও সে হও প্রভু
২৩. ১.২৩ গোদা রোটি খাও হরিকে গুণ গাও
২৪. ১.২৪ তুমি নাহি দিলে দেখা
২৫. ১.২৫ লে হুঁ মকতব-এ গম-এ দিল-মে সবক হুনূজ্‌
২৬. ১.২৬ Death dances like a fire-fly
২৭. ১.২৭ আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
২৮. ১.২৮ তুই নেই বলে ওরে উন্মাদ
২৯. ১.২৯ আমি দেহ বেচে ভবের হাটে
৩০. ১.৩০ বাংলার বধূ বুকে তার মধু
৩১. ১.৩১ জানি না কে বা, এসেছি কোথায়
৩২. ১.৩২ ওই দেখা যায় বাড়ি আমার
৩৩. ১.৩৩ অধরের তাম্বুল বয়ানে লেগেছে
৩৪. ১.৩৪ আরে সত্যঘাতী মন
৩৫. ১.৩৫ ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে
৩৬. ১.৩৬ খরবায়ু বয় বেগে
৩৭. ১.৩৭ লাখোঁ সুনন্দার সপ্‌নোভিতে
৩৮. ১.৩৮ মরণ মরিতে চায়
৩৯. ১.৩৯ রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম
৪০. ১.৪০ এই মানুষে সেই মানুষ আছে
৪১. ১.৪১ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে
৪২. ১.৪২ পার করো দয়াল, আমায় কেশে ধরে
৪৩. ১.৪৩ নিরাসক্ত ভালবাসা আপন দাক্ষিণ্য হতে
৪৪. ১.৪৪ খেলার খেয়াল বশে কাগজের তরী
৪৫. ১.৪৫ Lead us not into temptation
৪৬. ১.৪৬ The hour has come
৪৭. ১.৪৭ তিনটে কাছি কাছাকাছি যুক্ত
৪৮. ১.৪৮ I may load and unload
৪৯. ১.৪৯ সামনে যখন যাবি ওরে
৫০. ১.৫০ The road of excess
৫১. ১.৫১ বিশাল ধরার চতুঃসীমায়
৫২. ১.৫২ পাগলা মনটারে তুই বাঁধ
৫৩. ১.৫৩ দিয়েছিলে জ্যোৎস্না তুমি
৫৪. ১.৫৪ About, about, in reel and rout
৫৫. ১.৫৫ হেসে নাও এ দুদিন বই তো নয়
৫৬. ১.৫৬ সুখের কথা বোলো না আর
৫৭. ১.৫৭ আব ইয়ে সমঝ্‌মে জফরকি আয়া
৫৮. ১.৫৮ In the great crisis of life
৫৯. ১.৫৯ মনে করি এইখানে শেষ
৬০. ১.৬০ There is no path in the sky
৬১. ১.৬১ One life, one death, one heaven
৬২. ১.৬২ I shall go to her
৬৩. ১.৬৩ I could give all to time
৬৪. ১.৬৪ ফলপাকা বেলী ততী
৬৫. ১.৬৫ সামনে যখন যাবি ওরে
৬৬. ১.৬৬ নিত নাহানসে হরি মিলে তো
৬৭. ১.৬৭ হে অন্তরযামী ত্রাহি
৬৮. ১.৬৮ যে সুরে বাজাই বেসুর লাগে
৬৯. ১.৬৯ সমুখ দিয়ে স্বপনসম
৭০. ১.৭০ Tell me in what part of the wood
৭১. ১.৭১ I am no prophet
৭২. ১.৭২ যে কথা ফোটে না গানে
৭৩. ১.৭৩ দুয়ার খুলে থাকি বসে
৭৪. ২.০১ Does the road wind up-hill all the way?
৭৫. ২.০২ Good night? ah! no, the hour is ill
৭৬. ২.০৩ Love means never having to say you are sorry
৭৭. ২.০৪ What if the Universe wears a mask?
৭৮. ২.০৫ Happiness is beneficial for the body
৭৯. ২.০৬ একদিন কুম্ভকার-গৃহ-পার্শ্ব দিয়া
৮০. ২.০৭ প্রেমের হাতে ধরা দেব
৮১. ২.০৮ রক্ষা করো হে
৮২. ২.০৯ কি সুন্দর–কি মহান–উদ্বেগে দাপটে
৮৩. ২.১০ I do none of the things I promised I would
৮৪. ২.১১ As certain as stars at night.
৮৫. ২.১২ মা গো অত আদর
৮৬. ২.১৩ ট্যাঁ করে জন্মে আমি কী পেলাম
৮৭. ২.১৪ The man that runs away
৮৮. ২.১৫ There are only three things
৮৯. ২.১৬ We’re always too much out or too much in
৯০. ২.১৭ As face reflects face in water
৯১. ২.১৮ If one calls you a donkey
৯২. ২.১৯ Come let us ask life
৯৩. ২.২০ One learns to know oneself best
৯৪. ২.২১ সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
৯৫. ২.২২ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি
৯৬. ২.২৩ If your only tool is a hammer
৯৭. ২.২৪ Who can go out without using the door
৯৮. ২.২৫ Life is like an Onion
৯৯. ২.২৬ অন্তরে লভেছি সত্য, ভ্রমণের ফলে
১০০. ২.২৭ The man that runs away
১০১. ২.২৮ Like a sword that cuts
১০২. ২.২৯ Still nursing the unconquerable hope
১০৩. ২.৩০ What a great happiness not to be me
১০৪. ২.৩১ Nothing at all but three things
১০৫. ২.৩২ You stand upon the threshold
১০৬. ২.৩৩ যেন রে তোর হৃদয় জানে
১০৭. ২.৩৪ The people that walked in darkness
১০৮. ২.৩৫ জীব আজ সমরে
১০৯. ২.৩৬ জন্ম-জরার ঝরাধানে ফোটে নয়ন-চারা
১১০. ২.৩৭ Is man one of God’s blunders
১১১. ২.৩৮ God, like a gardener
১১২. ২.৩৯ He that looks not before
১১৩. ২.৪০ When a man is wrapped up in
১১৪. ২.৪১ If you ever need a helping hand
১১৫. ২.৪২ To see a world in a grain of sand
১১৬. ২.৪৩ Every man is a volume
১১৭. ২.৪৪ There is an Eye that never sleeps
১১৮. ২.৪৫ কোথায় পালাবে তুমি
১১৯. ২.৪৬ Keep your fears to yourself
১২০. ২.৪৭ An animal with some instincts of a God
১২১. ২.৪৮ Every man is the architect
১২২. ২.৪৯ The time, which steals our years away
১২৩. ২.৫০ The flowers fall for all our yearning
১২৪. ২.৫১ Thirty spokes will converge

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন