আতাপুরের দৈত্য – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

পৌলোমী সেনগুপ্ত

আতাপুরের দৈত্য – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

বিকেলে বেড়াতে বেরিয়ে আতাপুরের হরি সামন্ত কুটিবাড়ির জঙ্গলে সেদিন যাকে দেখলেন তাকে দেখার কথাই নয়। কারণ, রাক্ষস-খোক্কস বা দৈত্য-দানব দুনিয়াতে আছে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। হরি সামন্তর বয়স একাশি, ডান হাঁটুতে বাত, হার্টেরও একটু গোলমাল আছে। কুটিবাড়ির জঙ্গল ডানহাতে রেখে পালপাড়ার শিবপদ সরখেলের বাড়িমুখো যাচ্ছিলেন। সরখেল মস্ত হোমিওপ্যাথ, তার চেম্বারেই বিকেলে একটা আড্ডা বসে। দিব্যি ফুরফুরে শরতের বিকেল, চারদিকে নরম রোদ ঝলমল করছে।

চোখের ভুল নয়, হরি সামন্ত ডান পাশে মুখ ঘোরাতেই দেখেন, একটা শিমুল গাছের ডালে হাত রেখে কে একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। লোকটার মাথা দোতলার সমান উঁচুতে। হাত, পা, বুক, পেট সমেত অন্তত দশটা দশাসই জোয়ানকে যোগ করলে যা হয় তার মাপ। পরনে একটা লেংটির মতো জিনিস, আদুর গা। হরি সামন্ত হাঁ করে চেয়ে দেখলেন। এদিকে কোথাও ভীম পুজো হয় বলে তিনি জানেন না, তা হলে জঙ্গলে এই ভীমের মূর্তি ফেলে রেখে গেল কে? ভাবতে ভাবতেই দেখলেন, মূর্তি নয়। প্রকাণ্ড লোকটা হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে কটমট করে তাকাল। তদ্দণ্ডেই হরি সামন্তর নাড়ি ছাড়বার কথা। বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ডটা একটা ডিগবাজি খেল, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল, শরীর কাঁপতে লাগল ঠকঠক করে। দৈত্যটা হঠাৎ মড়াত করে গাছের একটা মস্ত ডাল ভেঙে সেটা মুগুরের মতো বাগিয়ে ধরতেই হরি সামন্ত পাঁই পাঁই করে ছুটতে লাগলেন প্রাণের ভয়ে। এই বয়সে পায়ে বাত আর দুর্বল হৃৎপিণ্ড নিয়ে যে তিনি এরকম ছুটতে পারেন তা তার ধারণার বাইরে ছিল।

যখন সরখেলের বাড়িতে এসে দমাস করে পড়লেন তখনই প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বেরোল না। একটু জিরিয়ে নিয়ে দেখলেন, এখনও মরেনি। তবে তাঁর কথা আর কেউই বিশ্বাস করল না। শিবপদ বলে ফেলল, সেই কবে থেকে তো আপনাকে চোখের ছানিটা কাটিয়ে আনতে বলছি, কথা কানেই তুলছেন না।

হরি সামন্ত খ্যাঁক করে উঠলেন, “আমার বাঁ চোখে ছানি, কিন্তু ডান চোখ কী দোষ করল?”

কেউ বিশ্বাস না করলেও ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা হল। তবে সাব্যস্ত কিছুই হল না। কুটিবাড়ির জঙ্গল মোটেই ভাল জায়গা নয়। জঙ্গলের ও পাশে একটা খাল আছে। সুন্দরবনের বাঘ খাল পেরিয়ে ওই জঙ্গলে এসে ঘাপটি মেরে থাকে। সুযোগ বুঝে গাঁয়ে ঢুকে গোরু, ছাগল, মানুষ নিয়ে যায়। ফেরার সময়ে আজ আর কেউ জঙ্গলের পাশের রাস্তা ধরলেন না। দল বেঁধে বাজারের পথ ধরে ফিরলেন।

দিনতিনেক বাদেই সকালবেলায় তিনজন কাঠকুড়ানি মেয়ে জঙ্গলে ঢুকেছিল। হঠাৎ আলুথালু হয়ে তারা চেঁচাতে চেঁচাতে গাঁয়ে এসে ঢুকল, “রাক্ষস! রাক্ষস! মেরে ফেলল গো…।”

দু’দিনের মধ্যেই গাঁয়ের মোড়ল শ্যামকান্ত তার হারানো গোরু খুঁজতে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে দাঁতকপাটি লেগে পড়ে রইল। জ্ঞান হওয়ার পর সেও কবুল করল, জঙ্গলে সে একটা বিকট চেহারার দানবকে দেখেছে।

আতাপুরে হইহই পড়ে গেল।

ঘনঘন মিটিং বসতে লাগল। শ্যামপুকুর থানা থেকে দারোগাবাবু গদাধর মল্লিক খবর পেয়ে নিজে এসে তদন্তে নামলেন। পুলিশ ফোর্স নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে খানিকটা ঘুরেও দেখলেন। দানবের দেখা না পেলেও জঙ্গলের নরম মাটিতে কিছু অতিকায় পায়ের ছাপ দেখা গেল। মানুষের পায়ের ছাপের মতোই দেখতে, কিন্তু বিশাল আকৃতির।

গদাধরবাবুর ভ্রূ কুঁচকে গেল, মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। বললেন, “কোনও লোক যদি রসিকতা করে এ কাণ্ড না করে থাকে তবে বলতেই হবে যে, ব্যাপারটা খুবই রহস্যময়। আমি গ্রামের নিরাপত্তার জন্য দু’জন সেপাই মোতায়েন করে যাচ্ছি। ব্যাপারটা আরও খতিয়ে দেখতে হবে।”

সেই রাত্তিরে দুই সেপাই যদু আর লক্ষ্মণ চণ্ডীমণ্ডপের দাওয়ায় বসে মশা তাড়াতে তাড়াতে গল্প করছিল। হঠাৎ যদু বলে উঠল, “আচ্ছা লক্ষ্মণদা, ওই গম্বুজটা হঠাৎ একটু নড়ে উঠল কেন বলো তো! ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?”

“গম্বুজ! দূর ব্যাটা এখানে গম্বুজ কোথায়?”

‘তা হলে ওটা কী?”

বলা বাহুল্য এর পর দু’জনেরই বাক্য হরে গেল। গম্বুজ নয়, তবে গম্বুজের মতোই বিশাল একটা ছায়ামূর্তি রায়দিঘির ধার দিয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে এল। একটা কুঁড়েঘরের কাছে এসে মূর্তিটা হাঁটু গেড়ে বসে রইল খানিকক্ষণ।

কাঁপা গলায় যদু বলল, “লক্ষ্মণদা, দেখতে পাচ্ছ?”

“পাচ্ছি।”

“ভুল দেখছি না তো?”

“না রে।”

“কী করবে এখন?”

“কিচ্ছুটি নয়। চুপ মেরে বসে থাকো। ওই কুঁড়েঘরটায় একটা বুড়ি থাকে। বোধহয় বুড়িটাকে খাবে।”

“ও বাবা!”

দৈত্য কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল, তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে চারদিকে একটু চেয়ে দেখল। একটা থামের আড়াল থেকে ঘাপটি মেরে দৃশ্যটা দেখতে দেখতে ভয়ে হিম হয়ে যাচ্ছিল দুই সেপাই। দৈত্যটা অবশ্য দেখতে পেল না। যে পথে এসেছিল সেই পথেই আবার চলে গেল।

বেশ কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে ছিল দু’জন। এবার লক্ষ্মণ বলল, “চল রে যদু, বুড়ির কী হল একবার দেখে আসি।”

“চলো, যাই।”

দরজায় বেশ কয়েক বার ধাক্কাধাকি আর ডাকাডাকির পর বুড়ি উঠে দরজা খুলে বলল, “কে বাবারা? ডাকাত হও চোর হও, আগেই বলছি, এবাড়িতে কিছু পাবে না। ইচ্ছে হলে ঢুকে তল্লাশি নিতে পারো। আর যদি আমাকে খুনটুন করতে চাও তো বাছা তাতেও কেউ বাধা দেবে না। আমি বড় দুঃখী মানুষ, মরতে পারলেই বাঁচি।”

যদু বলল, “বুড়িমা, আমরা বদ লোক নই। আমরা সেপাই, ওই রাক্ষসটা তোমার ঘরের কাছেই ঘাপটি মেরে ছিল যে একটু আগে।”

বুড়ি বিন্দুমাত্র ভয় না-পেয়ে বলল, “তা হবে বাছা। পোড়া কপাল আমার, নইলে আমাকে খেয়ে যেত। তা তোমরা কারা? এ গায়ে তো তোমাদের কখনও দেখিনি।”

“আমরা পুলিশের লোক, রাত জেগে গাঁ পাহারা দিচ্ছি।”

বুড়ি খুবই ভালমানুষ। যত্ন করে তাদের দাওয়ায় পিঁড়ি পেতে বসাল। কয়েকটা করে নাড়ু আর জল খেতে দিল। কথায় কথায় জানা গেল, বুড়ির তিন কুলে কেউ নেই। অন্ধের নড়ি একটা ছেলে ছিল, সেও বছর দুই হল নিরুদ্দেশ। লোকে বলে, তাকে বাঘে খেয়েছে। তাই হবে। সে-সময়ে এখানে খুব বাঘের উপদ্রব ছিল বটে!

পরদিন সকালে সারা গায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল, দৈত্যটা গাঁয়ে ঢুকেছিল শুনে। গাঁয়ের বিস্তর লোক পোঁটলা-পুঁটুলি বেঁধে কেউ মামার বাড়ি, কেউ শ্বশুরবাড়ি, কেউ পিসি বা মাসির বাড়ি, কেউবা তীর্থ করতে বেরিয়ে পড়ল। এই বিপদের মধ্যে থাকা ঠিক নয়। দুপুরের মধ্যেই গাঁ বেশ সুনসান হয়ে গেল। যারা রয়ে গেল তারা সব ঘরদোর মজবুত করার কাজে লেগে গেল। লাঠি, বল্লম, ছোরা, কুড়ুল, বন্দুক, যার যা ছিল সব বের করল। ঠিক হল রাতে দল বেঁধে গাঁয়ে টহল দেওয়া হবে। ঘণ্টা, শাঁখ, বাঁশি ইত্যাদিও তৈরি রাখা হল, দৈত্যটাকে যে দেখবে সে-ই বাজিয়ে অন্য সবাইকে জানান দেবে।

এর পর দিনকয়েক আর দানবটার কোনও পাত্তা পাওয়া গেল না। লোকজনের আতঙ্কটাও একটু চাপা পড়তে লাগল। রাতের পাহারাতেও ঢিলেমি দেখা যেতে লাগল। শীত পড়তে লেগেছে, এখন কারই বা রাত জাগতে ভাল লাগে?

বুড়ি এক রাত্তিরে তার ময়লা কাঁথাখানি জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। নিশুত রাতে বুড়ি একটা গলা শুনতে পেল, “ও মা, মা গো! ঘুমোচ্ছিস নাকি? আমার যে বড় খিদে পেয়েছে!”

বুড়ি ধড়মড় করে উঠে বসল। এ যে তার নন্দর গলা। তার ছেলে নন্দ, যাকে কিনা বাঘে খেয়েছে। বুড়ি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলল। তারপর হাঁ হয়ে রইল। নন্দ নয়, এ সেই দানবটা, যার কথা সবাই বলাবলি করে।

বুড়ি অবশ্য ভয় পেল না, এ দুনিয়ায় তার ভয় পাওয়ার আর কিছুই নেই। বুড়ি নরম গলায় বলল, “তুমিই বুঝি সেই রাক্ষস! তা ভাল। কী চাও বাছা?”

দানব হাঁটু গেড়ে বসে আছে, তাতেও তার মাথা ঘরের চাল ছুঁয়েছে। দৈত্য বলল, “মা, আমাকে চিনতে পারছিস না তো! দোষ নেই তোর। আমি নন্দ।”

“নন্দ!” বলে বুড়ি ফের হাঁ, “তুই যে রোগা প্যাকাটির মতো ছিলি বাবা।”

“আর বলিসনে মা। রোগা থেকে মোটা হতে গিয়েই তো বিপদ হল। কিছু খেতে দিবি মা। সাত দিন ধরে জঙ্গলের ফলপাকুড় খেয়ে আছি, ভয়ে গাঁয়ে ঢুকতে পারি না।”

“আয়, বাবা, আয়।” বলতে বলতে বুড়ি আনন্দে কেঁদেই ফেলল। দানব হোক, দৈত্য হোক, শত হলেও এই তো তার হারানো ছেলে। একটু সামলে নিয়ে বলল, “বাবা, লোকে দেখতে পেলে তোকে মারবে। তুই ভেতরের উঠোনে চলে যা। উঠোনের পেছন দিকে বড় কসাড় ঝোপ আছে। তার আড়ালে বসে থাক। আমি খেতে দিচ্ছি।”

কসাড় ঝোপের আড়ালে নিশুত রাতে মায়েপোয়ে অনেক সুখ-দুঃখের কথা হল। নন্দ বলল, কুটিবাড়ির জঙ্গলে একজন অদ্ভুত লোক থানা গেড়েছিল। গাছপাতা দিয়ে নানারকম ওষুধ-বিষুধ তৈরি করত। তার কাছে মোটা হওয়ার ওষুধ চাইতে গিয়েছিল নন্দ। লোকটা তাকে কুটিবাড়ির আস্তানায় রেখে দিল আর রোজ ওষুধ খাওয়াতে লাগল। ফলে ধীরে ধীরে আড়ে দীর্ঘে বাড়তে লাগল নন্দ। বাড় যখন খুব বাড়াবাড়িতে দাঁড়িয়ে গেল, তখনই লোকটা একদিন দুপুরে জঙ্গলে শেকড় খুঁজতে গিয়ে বাঘের খপ্পরে পড়ল। দুদিন বাদে তার আধখাওয়া শরীরটা খালধারে দেখেছিল নন্দ। যত দিন লোকটা বেঁচে ছিল তত দিন একটা ভরসা ছিল তার। লোকটা কথা দিয়েছিল, চিকিৎসা করে তাকে আবার স্বাভাবিক গঠনে ফিরিয়ে আনবে। চেষ্টাও করছিল। আর হল না। মাসখানেক আগে লোকটা মারা যাওয়ার পর নন্দ আর জঙ্গলে থাকতে ভরসা পাচ্ছে না। আজকাল তার মায়ের কথাও খুব মনে হয়।

বুড়ি ঘরে যা ছিল—পান্তা ভাত, নাড়ু, মোয়া, এক হাঁড়ি গুড়, খানিকটা চাল ভাজা—এই সব নিয়ে ছেলেকে খেতে দিল। নন্দ বলল, “আমার শরীরটা বড় বলে যেন ভাবিসনে যে, আমি অনেক খাই। আমার পেটটা আগের মতোই আছে। তবে খোরাকটা একটু বেড়েছে।”

বুড়ি ছেলের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগল। বলল, “গাঁয়ের লোকেরা তোকে দেখে ভয় পাবে ঠিকই প্রথমটায়, কিন্তু আমি ওদের বুঝিয়ে বলব’খন যে, এ-আমার নন্দ।”

নন্দ মাথা নেড়ে বলল, “ও কাজ করিসনি। ওরা বিশ্বাস করবে না, তোকে ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারবে।”

“তা হলে?”

“উপায় একটা করতে হবে। দাঁড়া, ভেবে দেখি। কী কুক্ষণে যে মোটা হওয়ার সাধ হয়েছিল!”

এই সব কথা যখন হচ্ছে তখন হঠাৎ একটা টর্চের আলো এসে নন্দর মুখের ওপর পড়ল। আর সঙ্গে সঙ্গে আর্ত চিৎকার। তার পরই সারা গায়ে কাঁসর, ঘণ্টা, শাঁখ, ঢোল, খোল, সব বেজে উঠল। আর লোকজন সব তেড়ে এল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে।

নন্দ পালাতে গিয়েও পালাল না। মার দিকে চেয়ে বলল, “আমার গায়ে খুব জোর। আমি এদের সবাইকে ছিঁড়ে ফেলতে পারি। জঙ্গলে আমি চার-পাঁচবার বাঘের মুখে পড়ি। আমার কিল খেয়েই বাঘ পালিয়ে গেছে। তিনবার সাপে কামড়েছে। এত বড় শরীর বলে বিষে কাজ হয়নি তেমন। আমার ক্ষমতা অনেক, কিন্তু এরা যদি তোর কোনও অনিষ্ট না করে, তা হলে আমিও এদের ক্ষতি করতে চাই না মা।”

ও দিকে চারদিক থেকে মশাল, টর্চ নিয়ে মেলা লোক আসছে। বিরাট হইহই কাণ্ড। বুড়ির বাড়ির চারদিকে যখন সবাই জড়ো হল তখন বুড়ি বেরিয়ে এসে মোড়লমশাইয়ের দিকে চেয়ে বলল, “খুব তো তেজ দেখছি। দৈত্য যদি তাড়া করে, তা হলে পালাতে পথ পাবে?”

মোড়লমশাই একটু পিছিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, “তা সে দৈত্যটা কোথায়! এখানেই নাকি দেখা গেছে!”

বুড়ি বলল, “এখানেই আছে বাছা। তবে বেশি হইচই করলে সে কিন্তু তোমাদের চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।”

মোড়লমশাই ভয় খেয়ে বলল, “ওরে বাবা, তা সে কোথায় ঘাপটি মেরে আছে? রেগেটেগে যাচ্ছে না তো।”

বুড়ি মাথা নেড়ে বলে, “চিন্তা নেই গো। আমি মায়ের কাছে মন্ত্র শিখেছিলুম ছেলেবেলায়। সেই মন্ত্রে নাকি রাক্ষসও বশ থাকে। এত কাল বিশ্বাস করিনি। তা হঠাৎ এই দানবটা এসে হাজির হওয়ায় মন্ত্রটা জপ করতেই বশ মেনেছে। তবে আগেই বলে রাখছি বাছা, তোমরা যদি তার ক্ষতি করতে চাও তা হলে কিন্তু মন্ত্র তুলে নেব।”

সবাই ভয় পেয়ে সমস্বরে বলে উঠল, “না না, আমরা কোনও ক্ষতি করব না।”

মোড়ল গলাটা একটু খাটো করে বলল, “দূর থেকে এক ঝলক একটু দেখতে পাব কি?”

বুড়ি বলল, “তা পাবে। তবে লাঠিসোটা অস্ত্রশস্ত্র সব ফেলে দিয়ে এসো।”

মশাল আর টর্চের আলোয় কসাড় বনের মধ্যে একটু আবছায়ায় দানবকে দেখে গাঁ-সুদ্ধু লোক একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেল। ভয়ে সকলের হাত-পা ঠান্ডা। বুড়ি অভয় দিয়ে বলল, “গোলমাল কোরো না কেউ। ধীরে ধীরে ঘরে ফিরে যাও। ওটি এখন আমার কাছেই থাকবে।”

সবাই ফিরে গেল। কিন্তু কয়েক দিন সাংঘাতিক উত্তেজনা রইল গ্রামে। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হল না। ফলে দৈত্য দেখতে ভিড়ও হতে লাগল খুব।

নন্দ এক রাতে মাকে বলল, “মা, এ তো বড় মুশকিল হল। এত লোক আমাকে দেখতে আসে, আমার যে লজ্জা করে বড়।”

বুড়ি বলল, “লোকে দেখে বলে লজ্জা কীসের? যারা বড়মানুষ হয় তাদের দিকে সকলের নজর থাকে।”

নন্দ কাহিল গলায় বলল, “কিন্তু আমি তো বড়মানুষ নই রে মা। আমি হলাম অদ্ভুত মানুষ। মানুষ বলে লোকে মনেই করছে না।”

বুড়ি বলে, “অত ভাবিসনে, সময় একটু বয়ে যাক। লোকে সয়ে নেবে।”

সয়ে অবশ্য লোকে নিল না। তবে মহালক্ষ্মী সার্কাসে ভাল চাকরি পেয়ে গেল নন্দ। দু’হাতে পয়সা রোজগার করে দোতলা বাড়ি বানিয়ে ফেলল গাঁয়ে। মাকে বিছেহার গড়িয়ে দিল। খাট-পালঙ্ক কিনল। জমি-জিরেত কিনল, তার চেয়ে বড় কথা, নন্দর নামটাও খুব ছড়িয়ে পড়ল চারধারে।

২৬ ডিসেম্বর ১৯৯০

সকল অধ্যায়

১. ভারত যুদ্ধে পিঁপড়ে – প্রেমেন্দ্র মিত্র
২. বিড়ালের চোখ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
৩. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ – শিবরাম চক্রবর্তী
৪. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ‘তেনা-রা’ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৮. লালটেম – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৯. অশরীরী – লীলা মজুমদার
১০. রাজপুত্তুরের অসুখ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১. ভূতেরা বড় মিথ্যুক – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১২. রুকু আর সুকু – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৩. রাত তখন এগারোটা – বিমল মিত্র
১৪. ম্যাজিশিয়ান – বিমল কর
১৫. ঘণ্টাকর্ণের কান গেল – মনোজ বসু
১৬. খুনি – সমরেশ মজুমদার
১৭. বনকুঠির রহস্য – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
১৮. একদম রূপকথা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৯. তারিণীখুড়ো ও ডুমনিগড়ের মানুষখেকো – সত্যজিৎ রায়
২০. অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য – সত্যজিৎ রায়
২১. দেবতার ভর – সুকুমার সেন
২২. মজারুমামা – আশাপূর্ণা দেবী
২৩. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
২৪. গঙ্গারামের কপাল – সত্যজিৎ রায়
২৫. গোরক্ষনাথবাবুর নোটবুক – সমরেশ বসু
২৬. ভুনিকাকার চৌরশতম্‌ – বিমল কর
২৭. অনুকূল – সত্যজিৎ রায়
২৮. ক্যাপ্টেন – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
২৯. তুরুপের তাস চুরি – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩০. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩১. রুপোর গাছ – বাণী বসু
৩২. বনঝাউয়ার রহস্য – ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য
৩৩. জ্বরের ঘোরে শোনা – সমরেশ বসু
৩৪. একটি লাল লঙ্কা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩৫. টিকটিকি অতীন্দ্রিয় শক্তি ও বেদান্ত বর্ধন -আশাপূর্ণা দেবী
৩৬. নদুস্কোপ – রূপক সাহা
৩৭. আতাপুরের দৈত্য – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৮. নিখোঁজ চারু – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৯. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪০. কপালের নাম গোপাল – আশাপূর্ণা দেবী
৪১. শিমুলতলার মাধবী লজ – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪২. কানকাটা বাঘ – শৈলেন ঘোষ
৪৩. হিংসুটে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৪. হরিণ-শিকারির বাড়ি – হর্ষ দত্ত
৪৫. অর্জুন হতভম্ব – সমরেশ মজুমদার
৪৬. কেউ কি এসেছিলেন – বিমল কর
৪৭. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৮. মজাদার এক ফুটবল ম্যাচ আর দানাপুরি – বিমল কর
৪৯. চারুহাসিনীর দেওয়াল-সিন্দুক – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. বন্ধু – তিলোত্তমা মজুমদার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন