পৌলোমী সেনগুপ্ত
কাকাবাবু বললেন, “অসম্ভব! তোমার একথা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি এ-প্রসঙ্গ আর আমার কাছে বোলো না, অন্য কথা বলো!”
অরিজিৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কাকাবাবু, আমার যে আর অন্য কোনও উপায় নেই।”
কাকাবাবু ধমকের সুরে বললেন, ‘হ্যাঁ, উপায় আছে। তুমি এক্ষুনি চান করে নাও, তারপর ভাল করে খাওদাও, তারপর একটা লম্বা ঘুম দাও!”
অরিজিৎ আবার বলল, “কাকাবাবু, তুমি বুঝতে পারছ না…”
কাকাবাবু তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “আমার আর বোঝার দরকার নেই।”
তারপর তিনি গলা চড়িয়ে ডাকলেন, “সন্তু! সন্তু!”
সন্তু একটু আগেই ব্যাডমিন্টন খেলে ফিরেছে। কাকাবাবুর ঘরে একবার উঁকি মেরে ওপরের ঘরে চলে গেছে। কাকাবাবুর ডাক শুনে নীচে নেমে এল তরতর করে। মা-বাবা বেড়াতে গেছেন পুরী, বাড়িতে আর বিশেষ লোকজন নেই।
কাকাবাবুর ঘরে একজন ভদ্রলোককে দেখতে পেল সম্ভ, মুখটা চেনা চেনা। খুব সম্ভবত মধ্যপ্রদেশে কোথাও দেখা হয়েছিল। কিন্তু এখন তার মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। মাথার চুল ধুলোবালি মাখা, তার গায়ের প্যান্টশার্ট দোমড়ানো মোচড়ানো, কেমন যেন পাগল পাগল চেহারা।
কাকাবাবু বললেন, “অরিজিৎকে চিনতে পারছিস তো, সন্তু? অরিজিৎ সিকদার। সেই একবার বস্তার জেলায় নারানপুরে এর সঙ্গে দেখা হয়েছিল?”
সঙ্গে সঙ্গে সন্তুর মনে পড়ে গেল। ভদ্রলোক একজন বটানিস্ট। সারা ভারতের বিভিন্ন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বিচিত্র সব গাছ খুঁজে বেড়ান। সেবারে তিনি বস্তার জেলার জঙ্গলে বুনো চা-গাছ খুঁজছিলেন। অনেক জঙ্গলেই নাকি এরকম বুনো চা-গাছ আছে, চাষ করতে হয় না। নিজে নিজেই জন্মায়, আগে কেউ তার সন্ধান রাখত না।
কিন্তু সেবারে তো ভদ্রলোককে খুব শান্ত আর ভদ্র মনে হয়েছিল, হঠাৎ তার এইরকম চেহারা হল কী করে?
কাকাবাবু আবার বললেন, “দিল্লিতে আমার সঙ্গে কাজ করত সত্যেন, এই অরিজিৎ তার ভাইপো। ওকে অনেক ছোট বয়েস থেকে দেখছি, তখন থেকেই ও আমাকে কাকাবাবু বলে ডাকে। অরিজিৎ আজ রাত্তিরে এখানেই থাকবে, বুঝলি। ওর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে বল রঘুকে, আর চান করার জন্য ওকে বাথরুমটা দেখিয়ে দে।”
অরিজিতের দিকে তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে আর তো কোনও পোশাক নেই। তুমি আমারই একটা পাজামা, পাঞ্জাবি পরে নাও আজ।”
অরিজিৎ উঠে দাঁড়িয়ে একবার কাকাবাবু আর একবার সন্তুর দিকে তাকাতে লাগল। তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। তার এক হাতে একটা ছোট্ট টিনের কৌটো।
কাকাবাবু আলমারি খুলে পাজামা, পাঞ্জাবি বার করলেন, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, “অরিজিৎ, তোমার ওই কৌটোটা আমার কাছে রেখে যাও।”
অরিজিৎ হঠাৎ জোরে চেঁচিয়ে বলল, “না, এটা আমার কাছেই থাকবে!”
কাকাবাবু বললেন, “তুমি চান করতে যাচ্ছ, ওটা সঙ্গে নিয়ে যাবে নাকি? ওটা আমার কাছেই থাক।”
অরিজিৎ কৌটোটা পেছন দিকে লুকিয়ে প্রায় হুংকার দিয়ে বলল, “না! এটা আমি কাউকে দিতে পারব না!”
তার চোখ দুটো এমন জ্বলছে যে, সেদিকে তাকালে গা ছমছম করে।
কাকাবাবু অবশ্য বিচলিত হলেন না। তিনি অরিজিতের চোখের দিকে কয়েক মুহূর্ত অপলক ভাবে চেয়ে রইলেন। তারপর হাত বাড়িয়ে গম্ভীর আদেশের সুরে বললেন, “দাও, দাও ওটা আমাকে।”
কাকাবাবুর ওইরকম গলার আওয়াজ শুনে অনেক বাঘা বাঘা বদমাশকেও ঘাবড়ে যেতে দেখেছে সন্তু। অরিজিৎ আর কিছু বলতে পারল না। কৌটোটা সে তুলে দিল কাকাবাবুর হাতে। তার হাতটা কাঁপছে।
কৌটোটার মধ্যে কী আছে, তা দেখার দারুণ কৌতুহল হল সন্তুর, কিন্তু কাকাবাবু সেটা খুলেও দেখলেন না। রেখে দিলেন জামা-কাপড়ের আলমারিতে। তারপর এমন ভাবে পেছন ফিরে একটা বই হাতে তুললেন যাতে তার সঙ্গে আর কোনও কথা বলা না চলে।
সন্তু অরিজিৎকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিল দোতলার বাথরুমটা। একটা নতুন সাবান আর তোয়ালে এনে দিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, “আপনি দাড়ি কামাবেন? কাকাবাবুর কাছ থেকে ব্লেড এনে দেব?”
অরিজিৎ রুক্ষভাবে বলল, “না, দরকার নেই।”
অরিজিৎ স্নান করল প্রায় এক ঘণ্টা ধরে।
এর মধ্যে সন্তু দু-তিনবার কাকাবাবুর ঘরে উঁকি মেরেছে, যদি কৌটোটা সম্পর্কে কিছু জানা যায়। কাকাবাবু একমনে বই পড়েই চলেছেন। এই সময় তাকে বিরক্ত করা সম্ভব নয়।
ঠিক আটটার সময় খাবার দিয়ে দেওয়া হল। কাকাবাবু রাত্তিরে রুটি খান। সন্তু ভাত ভালবাসে। রঘু ভাত রুটি দু’রকমই বেশি করে বানিয়েছে, তার সঙ্গে ডাল, বেগুনের ভর্তা আর মুরগির মাংস।
খাবার টেবিলে বসার পর কাকাবাবু অরিজিৎকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি রুটি খাবে, না ভাত?”
অরিজিৎ বলল, “ভাত! না, রুটি। থাক, ভাতই খাব।” কিংবা, “রুটি কি বেশি আছে?”
কাকাবাবু বললেন, “তুমি দুটোই খাও।”
কাকাবাবু রুটি খান ঠিক তিনখানা। অরিজিৎ খেল আটখানা রুটি। তারপর সে ভাত নিল। সন্তু যতটা ভাত খায়, অরিজিৎ নিল তার তিন গুণ। রঘু তাকে ভাত দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে, সে না বলছে না।
সে এমন ভাবে খাচ্ছে, যেন বহু দিন খেতে পায়নি। কিন্তু কয়েক দিন উপোস করলেও কি মানুষ একসঙ্গে বেশি খেতে পারে? অরিজিতের রোগা-পাতলা চেহারা। এরকম চেহারার কোনও লোককে সন্তু কখনও এতখানি খেতে দ্যাখেনি।
সবটা ভাত শেষ করার পর অরিজিৎ আরও দু’টুকরো মাংস আর একটু ঝোল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আর রুটি নেই?”।
আর-একখানা মোটে রুটি বাকি ছিল, রঘু সেটাই দিয়ে দিল।
কাকাবাবু এঁটো হাতে চুপ করে বসে অরিজিতের খাওয়া দেখলেন। তারপর বললেন, “এইবার গিয়ে একটা ঘুম দাও। মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। দিল্লিতে টেলিফোনে তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাও?”
অরিজিৎ দু’দিকে শুধু মাথা নাড়ল।
হাত ধোয়ার পর অরিজিৎ কাকাবাবুর ঘরে এসে বলল, “এবার আমার কৌটোটা দিন, ওটা আমার ঘরে রাখব।”
কাকাবাবু বললেন, “ওটা আমার কাছে থাকলে অসুবিধের কী আছে?”
অরিজিৎ বলল, “আপনি বুঝতে পারছেন না, ওটা কোনও ক্রমে নষ্ট হয়ে গেলে মহা ক্ষতি হয়ে যাবে।”
কাকাবাবু বললেন, “আমার কাছে থাকলে নষ্ট হবে কেন? আমি গগন বোসের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি, কাল সকাল এগারোটায় জিনিসটা সায়েন্স কলেজে নিয়ে যাব।”
অরিজিৎ উত্তেজিত ভাবে বলল, “সায়েন্স কলেজে? ওরা কিছু বুঝবে না। ওটা সুইডেনে পাঠাতে হবে। সেখানে এই ব্যাপার নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে।”
কাকাবাবু বললেন, “ঠিক আছে, সুইডেনে পাঠাবারই ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু আজ রাত্তিরে আমার কাছে রাখতে তোমার এত আপত্তি কেন?”
“ওটা আমার জিনিস! আমি ছাড়া কেউ এর সন্ধান জানে না!”
“ওটা তোমার জিনিস, তা মানছি! কিন্তু আমাকে যদি তোমার এতই অবিশ্বাস, তা হলে ওটা নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছ কেন! আর এসেই যখন পড়েছ, তখন তোমাকে আমি মোটেই পাগলামির প্রশ্রয় দিতে পারি না। জিনিসটা আমার কাছেই থাকবে।”
সন্তু আর কৌতূহল দমন করতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কাকাবাবু, কৌটোটার মধ্যে কী আছে?”
কাকাবাবু একটুক্ষণ চুপ করে থেকে অরিজিৎকে বললেন, “আচ্ছা, একটুখানি বসে যাও। তোমার ঘটনাটা সন্তুকে বলো। বারবার নিজের মুখে বললে এক সময় নিজেই তুমি বুঝতে পারবে যে, সবটাই বানানো। তোমার কল্পনা। হয়তো এরকম একটা ব্যাপার কখনও স্বপ্নে দেখেছ, তারপর সেটাকেই সত্যি বলে ধরে বসে আছ। এরকম কিছু বাস্তবে হতে পারে না।”
অরিজিৎ একটা চেয়ারে বসে পড়ে মুখ গোঁজ করে বলল, “ও ছোট ছেলে, ও এসবের কী বুঝবে?”
কাকাবাবু বললেন, “সন্তু তোমার চেয়ে বয়েসে অনেক ছোট হতে পারে, কিন্তু ওর অভিজ্ঞতা কম নয়। তুমি যে-অঞ্চলটার কথা বলছ, সন্তুও সেখানে আমার সঙ্গে গিয়েছিল। সন্তু, সেই যে সেবারে আমরা নেপাল থেকে এভারেস্টের রুট ধরে গিয়েছিলাম, মনে নেই? সেই একটা অতিমানবের দাঁতের খোঁজে?”
সন্তু বলল, “সে-ঘটনা কখনও ভোলা যায়? উঃ, কী শীত ছিল, তারপর সেই সুড়ঙ্গের মধ্যে…”
কাকাবাবু বললেন, “অরিজিতের ঘটনার ব্যাকগ্রাউন্ডটা আমি তোকে বলে দিচ্ছি। অরিজিৎ তো বনে-জঙ্গলে নানারকম অদ্ভুত অদ্ভুত গাছপালা খুঁজে বেড়ায়! এবারে সরকার থেকে ওকে পাঠানো হয়েছিল নেপালে। বারো-তেরো হাজার ফিট উঁচুতেও কিছু কিছু গাছ জন্মায়। সেখানে নাকি কোথাও কোথাও একরকম স্ট্রবেরি গাছ দেখতে পেয়েছে কেউ কেউ। অত ঠান্ডায় স্ট্রবেরি গাছ কী করে বেঁচে থাকে সেটাই ওর গবেষণার বিষয়। কী, তাই তো?”
অরিজিৎ ঘাড় নাড়ল।
কাকাবাবু বললেন, “অরিজিৎ যে-জায়গাটা বেছে নিয়েছিল, সেখানে দু’-একটা গ্রাম আছে, সেখানে ইয়েতিরা এসে মাঝে মাঝে উপদ্রব করে বলে গুজব আছে।”
সন্তু হাসতে হাসতে বলল, “আপনি একটু আগে যে-অভিযানের কথা বললেন, সেবারে আমরা বেশ কয়েকটা ইয়েতি দেখেছিলুম, তাই না?”
কাকাবাবুও এবার মুচকি হেসে ফেললেন।
অরিজিৎ বলল, “তোমরা ইয়েতি দেখেছিলে? সত্যি?”
সন্তু বলল, “এমন মেক-আপ দিয়েছিল যে, আসল না নকল, তা বোঝাই যায়নি অনেকক্ষণ!”।
অরিজিৎ জিজ্ঞেস করল, “মেক-আপ দিয়েছিল মানে? সেজেছিল? কারা?”
কাকাবাবু বললেন, “সে অনেক লম্বা গল্প। সেটা পরে শুনে নিয়ো। আসল ব্যাপার হচ্ছে, ইয়েতি বলে খুব সম্ভবত কোনও প্রাণী নেই।”
অরিজিৎ জোর দিয়ে বলল, “আলবাত আছে!”
“তুমি বললেই তো হবে না। এ পর্যন্ত কেউ কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। কত লোকই তো বলেছে যে, ইয়েতি দেখেছে নিজের চোখে, কিন্তু কেউ একটা ছবি তুলতে পেরেছে?”
‘ইয়েতির পায়ের ছাপ অনেকেই দেখেছে। মস্ত বড় পায়ের ছাপের ছবিও তোলা হয়েছে।”
‘বরফের ওপর পায়ের ছাপ, সেটা আবার প্রমাণ নাকি? মানুষের পায়ের ছাপও বরফের ওপর কিছুক্ষণ বাদে অন্যরকম হয়ে যায়।”
“তবু আমি বলছি, ইয়েতি আছে!”
“না নেই! আমি নেপালে অন্তত তিন-চারজনের মুখে শুনেছি, তারা ইয়েতি দেখেছে। কিন্তু তাদের একটু জেরা করতেই তারা উলটো-পালটা বলতে শুরু করেছে। কেউ বলে গোরিলার মতন দেখতে, কেউ বলে ভল্লুকের মতন। আবার কেউ বলে, দশ হাত লম্বা মানুষের মতন। তাদের দু’-একজনের সঙ্গে ক্যামেরাও ছিল, তবু ছবি তুলতে পারেনি, তার কারণ নাকি ইয়েতিকে একপলক দেখার পরই অদৃশ্য হয়ে গেছে। যত্ত সব গাঁজাখুরি কথা! আসলে বরফের ওপর দিয়ে অনেকক্ষণ হাঁটলে ক্লান্ত হয়ে অনেকে চোখে ভুল দেখে। মরুভূমিতে যেমন মানুষ মরীচিকা দেখে।”
‘কাকাবাবু, আসল ব্যাপারটা কিন্তু আপনিই ঠিক বলেছিলেন।”
“তার মানে?”
“ইয়েতিরা অদৃশ্য হয়ে যায়।”
‘অরিজিৎ, এবার ঘুমোতে যাও! আবার কাল সকালে কথা হবে!”
“আমার কথাটা ভাল করে শুনুন, কাকাবাবু। আমিও তো বিজ্ঞান পড়েছি, কোনও প্রমাণ না পেলে একেবারে গাঁজাখুরি কথা আমি মেনে নেব কেন? নেপালের অন্তত দুটো পুরনো পুঁথিতে লেখা আছে, ইয়েতিদের হঠাৎ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্ষমতা আছে। আমি নিজেও তার প্রমাণ পেয়েছি। এই জন্যই ইয়েতির ছবি তোলা যায় না। মানুষের চোখের সামনে পড়ে গেলেই ওরা অদৃশ্য হয়ে যায়।”
“পুঁথিতে যা কিছু লেখা থাকে, তাই-ই সত্যি নয়।”
“বললাম যে, আমি নিজের চোখে দেখেছি। এমনকী আমি নিজে পরীক্ষা করে দেখেছি।”
কাকাবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্তুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “অরিজিৎ বলতে চায়, হিমালয়ের কোনও একটা জায়গায় নাকি এক রকমের ফল পাওয়া যায়, যা খেলে অদৃশ্য হওয়া যায়। ইয়েতিরা নাকি সেই ফল খায়। আমাদের অরিজিৎ সেই ফলের সন্ধান পেয়েছে। এমনকী নিজে সেই ফল খেয়েও দেখেছে!”
অরিজিৎ ব্যাকুল ভাবে বলল, “আপনি এখনও আমার কথা বিশ্বাস করছেন না?”
কাকাবাবু বললেন, “এসব রূপকথার মতো গল্প, শুনতেই ভাল। কিন্তু বিশ্বাস করার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। শোনো, জল জিনিসটা গরম হলে বাষ্প হয়, তারপর সেই বাষ্প উড়ে যায়। এমনকী অনেক ধাতুকেও প্রচণ্ড উত্তাপে গলিয়ে বাষ্প করা যায়, আবার ঠান্ডা হলে সেই ধাতু বা জল ফিরে আসে। কিন্তু কোনও জীবন্ত প্রাণীকে বেশি গরমে রাখলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, সেই ছাইটাকে ঠান্ডা করলে কিন্তু সেই প্রাণীটাকে ফেরত পাওয়া যাবে না! কোনও জীবন্ত প্রাণী, এমনকী একটা পিঁপড়েকেও, অদৃশ্য করে আর ফিরিয়ে আনা অসম্ভব!”
সন্তু আমতা আমতা করে বলল, “কিন্তু কাকাবাবু, বৈজ্ঞানিকরা টাইম-মেশিনে কি মানুষকে অদৃশ্য করতে পারবে না? স্টার-ওয়র্স ফিল্মে যে দেখি, একটা যন্ত্রের মধ্যে দাঁড়ালে মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, আবার অন্য জায়গায় ফিরে আসছে?”
কাকাবাবু বললেন, “ওসবও এ-যুগের রূপকথা। আগেকার গল্পে যেমন রাজপুত্র পক্ষিরাজ ঘোড়ায় চড়ে আকাশে উড়ে যেত, এখনকার গল্পেও তেমনি নায়করা স্পেস-শিপে চেপে অন্য গ্রহে যায়, এমনকী এই গ্যালাক্সি পেরিয়ে গিয়ে যুদ্ধ করে আসে। এসব রূপকথা ছাড়া কিছুই না।”
অরিজিৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি যদি আপনার চোখের সামনে করে দেখাতে পারি? আমাকে কৌটোটা একবার দিন!”
কাকাবাবু আর কিছু বলার আগেই সে ছুটে গিয়ে জামাকাপড়ের আলমারিটা খুলে কৌটোটা বার করে এনে বলল, “আমি নিজে দু’বার এক্সপেরিমেন্ট করেছি। দু’বারই সাকসেসফুল।”
কৌটোটা খুলে সে সন্তুকে দেখাল।
ভেতরের জিনিসটা দেখে সন্তু খানিকটা নিরাশ হয়ে গেল। এটা তো একটা লঙ্কা। বেশ বড়সড় টাবাটোবা গোলগাল লাল লঙ্কা!
অরিজিৎ যেন তার মনের কথাটাই বুঝতে পেরে বলল, “এটা লঙ্কা বলে মনে হচ্ছে তো? কিন্তু এটা এক ধরনের স্ট্রবেরি। এটা ঝাল নয় মোটেই, বরং টক-মিষ্টি। কাকাবাবু শুনলে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু তোমাকে বলছি সন্তু, একেবারে সত্যি কথা বলছি! পাহাড়ে স্ট্রবেরি খুঁজতে খুঁজতে, ঝোপঝাড়ে যেখানে যে ফল দেখতাম, অমনি আমি তা খেয়ে স্বাদ নিতাম। কোনও বিষাক্ত ফল খেয়ে ফেলারও ঝুঁকি ছিল অবশ্য। একদিন আমি এই ফল একটা খেয়েই অদৃশ্য হয়ে গেলুম!”
কাকাবাবু বললেন, “হুঁ!”
সন্তু বলল, “সত্যি বলছেন?”
অরিজিৎ বলল, “দেড়দিন সেই অবস্থায় ছিলুম। সিংহবাচি গ্রামে এসে ঘুরেছি লোকজনের মধ্যে, কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পায়নি। আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলুম খুব। পরে ওইরকম আর-একটা ফল খেয়ে নেবার পর আবার সব ঠিক হয়ে গেল।”
সন্তু একবার কাকাবাবু আর একবার অরিজিতের দিকে তাকাল। তারপর কৌটোটা হাতে তুলে নিল।
অরিজিৎ বলল, “দারুণ ভাল লাগে সেই সময়টা। কোনও খিদে-তেষ্টা থাকে না। দারুণ হালকা লাগে শরীরটা, মানে, শরীরটা অন্য কেউ দেখতে না পেলেও সেটা তো থাকেই। মনটা খুব ফুরফুর করে। যেখানে ইচ্ছে চলে যাওয়া যায়। কতরকম মজা হয়।”
কাকাবাবু বিদ্রুপের সুরে বললেন, “ইয়েতির গায়ে তো পোশাক থাকে না। মানুষের গায়ে যে প্যান্ট-জামা-জুতো থাকে, সেগুলোও অদৃশ্য হয়ে যায়?”
অরিজিৎ বলল, “দেখবেন? দেখবেন? এক্ষুনি দেখাব? আমি টপ করে ফলটা খেয়ে নেব, তারপর এক মিনিটের মধ্যেই আপনাদের চোখের সামনেই মিলিয়ে যাব! ওটা দাও তো, সন্তু!”
অরিজিৎ হাত বাড়াতেই কাকাবাবু প্রায় গর্জন করে উঠে বললেন, “না! কোনও দরকার নেই!”
অরিজিৎ এবার হেসে বলল, “কাকাবাবু, আপনি ভয় পাচ্ছেন? আপনি অবিশ্বাস করবেন, আবার ভয়ও পাবেন?”
কাকাবাবু বললেন, “ওরকম অচেনা ফল খাবার দরকার নেই!”
অরিজিৎ বলল, “দারুণ ভাল লাগে। দেখলেই খেতে ইচ্ছে হয়। আমি মাত্র তিনটে পেয়েছিলুম, যদি আরও খুঁজে বার করা যায়, তা হলে একটা বিরাট আবিষ্কার হবে!”
কাকাবাবু বললেন, “সন্তু, কৌটোটা আলমারিতে রেখে দে! এবার তোমরা শুতে যাও। আর কোনও কথা নয়! যাও! আমার ঘুম পেয়েছে।”
সন্তু অনিচ্ছার সঙ্গেও কৌটোটা রেখে দিল যথাস্থানে। কাকাবাবু এমন ভাবে চেয়ে আছেন যে, বেরিয়ে যেতেই হল দু’জনকে।
অরিজিৎ সন্তুর কাঁধে হাত দিয়ে বলল, “সন্তু, আমি কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে গল্প শোনাইনি। সত্যি ওই ফলটার অদ্ভুত গুণ আছে। ওটা খেলে মানুষ অদৃশ্য হতে পারে। কাকাবাবু বিশ্বাস করলেন না!”
অরিজিৎকে তার ঘর দেখিয়ে দেবার পর সে শুয়ে পড়ল। সে সত্যিই খুব ক্লান্ত, একটু বাদেই তার নাক ডাকার শব্দ শোনা গেল।
সন্তু উঠে গেল তিনতলায়। বড় হবার পর সে এই ছাদের ঘরটা নিজের জন্য পেয়েছে। এখানে সে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পড়াশুনো করতে পারে। মাঝে মাঝে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা দ্যাখে।
একটা বই নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেও তার মন বসল না পড়ায়। অরিজিতের কথাগুলোই মনে পড়ছে বারবার।
ছেলেবেলা থেকেই সন্তু অদৃশ্য হবার স্বপ্ন দেখেছে। অদৃশ্য হতে পারলে সত্যিই একটা মজার ব্যাপার হয়। তাকে কেউ দেখতে পাবে না, অথচ সে সবাইকে দেখতে পাবে!
হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখা ‘অদৃশ্য মানুষ’ নামে একটা বই পড়ে সন্তুর এক সময় মনে হয়েছিল, সত্যিই ওইরকম একজন অদৃশ্য মানুষ আছে। কিন্তু কাকাবাবু বললেন, বিজ্ঞানের দিক থেকেও নাকি অদৃশ্য হওয়া অসম্ভব। অথচ অরিজিতের কথা শুনে মনে হয় না যে, সে আগাগোড়াই মিথ্যে কথা বলছে।
খাওয়ার সময় অরিজিৎ অতগুলো খাবার খেল। সে বলল, অদৃশ্য হলে নাকি খিদে-তেষ্টাও পায় না। অদৃশ্য অবস্থা থেকে আবার সাধারণ অবস্থায় ফিরে এলে তখন একসঙ্গে দু-তিন দিনের খিদে পায়!
বই পড়াতেও মন নেই, ঘুমও আসছে না। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে সন্তু। ঘড়িতে দেখল রাত দেড়টা বাজে।
বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল সন্তু। মনে হয় সারা কলকাতাই এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। কোথাও কোনও শব্দ নেই।
পা টিপে-টিপে দোতলায় নেমে এল সে। অরিজিতের প্রচণ্ড জোরে নাক ডাকছে। কাকাবাবুরও নাক ডাকার বেশ শব্দ হয়। সারা বাড়িতে এ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই।
কাকাবাবুর ঘরে আলো জ্বলছে। কাকাবাবুর এই এক স্বভাব, প্রায়ই আলো জ্বেলে ঘুমিয়ে পড়েন। মা, বাবা কিংবা সন্তু কেউ একজন পরে এসে আলো নিভিয়ে দিয়ে যায়। আজ বাড়িতে মা-বাবাও নেই।
সন্তু কাকাবাবুর ঘরের দরজাটা ঠেলে খুলল। কাকাবাবু টের পেলেন না। ঘরের মধ্যেও কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল সন্তু, তার খুব লোভ হচ্ছে। ফলটা খেয়ে দেখলে কী হয়? কাকাবাবু রাগ করবেন? অরিজিৎ বলেছিল, অদৃশ্য হলেও সেই অবস্থায় দেড় দিনের বেশি থাকা যায় না। দেড় দিন পরেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কাকাবাবু অরিজিতের কথায় বিশ্বাস করেননি, সন্তুর কথা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন।
আলমারি খুলে সন্তু কৌটোটা বার করল। কাঠের আলমারির পাল্লায় ক্যাঁচ করে সামান্য শব্দ হলেও কাকাবাবু জাগলেন না। সন্তু টপ করে আলো নিভিয়ে, দরজা ভেজিয়ে দৌড়ে উঠে এল ছাদে।
যা থাকে কপালে, খেয়েই দেখা যাক!
সন্তু ঝাল খেতে পারে না বেশি! ফলটাকে লঙ্কার মতন দেখতে, একেবারে টকটকে লাল। যদি এটা লঙ্কা হয়, তা হলে দারুণ ঝাল হবে। সন্তু প্রথমে একটা ছোট্ট কামড় দিল। না, ঝাল নয়, একটু মিষ্টি মিষ্টিই। খানিকটা পিপারমেন্টের মতন। খেতে ভাল লাগছে।
পুরো ফলটাই খেয়ে ফেলল সন্তু, কিন্তু কিছুই তো হল না। তা হলে কি অরিজিৎ একদম বাজে কথা বলেছে? ওঃ হো, আজ তো ১ এপ্রিল! অরিজিৎ কাকাবাবুকে আর সন্তুকে এপ্রিল ফুল করেছে নির্ঘাত!
একটা কীসের শব্দ হতেই সন্তু ঘুরে তাকাল।
ছাদের পাঁচিলে কার যেন একটা কালো রঙের মাথা। ওটা কি কোনও মানুষ, না জন্তু?
সন্তু দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়বার চেষ্টা করেও পারল না। তার আগেই মাথাটা যেন বোঁ বোঁ করে ঘুরতে লাগল, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হল, সে ঝুপ করে পড়ে গেল অজ্ঞান হয়ে।
২
সদ্য বরফ গলতে শুরু করেছে বলে পাথর এখানে সাংঘাতিক পিছল। কাকাবাবু প্রতিবার ক্রাচ তুলছেন আর ফেলছেন দারুণ সাবধানে। তবু এক-একবার হড়কে যাচ্ছেন।
অরিজিৎ করুণ মুখ করে বলল, “কাকাবাবু, আপনাকে আর যেতে হবে না। এর পর ওপরটায় গিয়ে আমিই খুঁজে দেখছি।”
কাকাবাবু কোনও উত্তর না দিয়ে মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালেন। এখন ঘড়ি অনুযায়ী দুপুর সাড়ে তিনটে, কিন্তু এর মধ্যেই যেন সন্ধে হয়ে এসেছে। আকাশের এক দিকটা লাল।
এই গরমেও কাকাবাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তার নিশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে। কাঠমাণ্ডুতে তাকে দু’-তিনজন বারবার অক্সিজেন সঙ্গে নেবার কথা বলেছিল, কাকাবাবু তাতে কর্ণপাত করেননি। তিনি ভেবেছিলেন, আজকাল তো অক্সিজেন ছাড়াই কেউ কেউ এভারেস্টেও ওঠার চেষ্টা করছে, সুতরাং এই বারো-তেরো হাজার ফিটে কী আর কষ্ট হবে। কাকাবাবু নিজেও এর চেয়ে উঁচুতে উঠেছেন আগে, কিন্তু এবার তার হাঁফ ধরে যাচ্ছে। হঠাৎ যেন বাতাস কমে গেছে এদিকে।
অরিজিৎ আবার বলল, “কাকাবাবু, আপনি এখানে বসেই বিশ্রাম নিন বরং। আমি ওপর দিকটা দেখে আসছি। আগের বার এখানেই পেয়েছিলুম।”
কাকাবাবু জোর দিয়ে বললেন, “না, আমি শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই! তুমি আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছ, এইটুকু আর বাকি থাকে কেন?”
অরিজিৎ বললেন, “আপনি বিশ্বাস করুন, আমি আগের বার এই জায়গাতেই পেয়েছি ওই ফল।”
কাকাবাবু বললেন, “এখন আমি তোমার সব কথাই বিশ্বাস করতে বাধ্য।”
চতুর্দিকে সাদা বরফের টোপর-পরা পাহাড়ের চুড়া। মাঝে মাঝে ঘাসের চাপড়া ছাড়া বড় গাছ আর এদিকে নেই। এদিককার শেষ গ্রাম নাংপো থেকে ওরা বেরিয়েছে সকাল ছ’টায়। সারা দিনে একবারও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।
এই নিয়ে তিন দিন কেটে গেল এই অঞ্চলে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও দেখা যায়নি সেই লাল লঙ্কার মতন ফলের গাছ।
দু’জন মাত্র শেরপাকে সঙ্গে আনা হয়েছে। আং শেরিং আর ছোটা দাজু। কাকাবাবু তার পুরনো বন্ধু মিংমাকে খোঁজ করেও পাননি, সে চলে গেছে অন্য কোনও অভিযাত্রীদের সঙ্গে।
আং শেরিং আর ছোটা দাজু দারুণ তেজী আর শক্তিশালী, কিন্তু তারা এই কাস্তের মতন পাহাড়টায় কিছুতেই উঠতে চায় না। তাদের ধারণা, এই পাহাড়টায় অপদেবতা আছে! খানিকটা নীচে তারা থেমে গেছে!
শোঁশোঁ করে হাওয়া বইতে শুরু করে দিল। অরিজিৎ আরও কাঁচুমাচু ভাবে বলল, “কাকাবাবু, আজকে আর থাক, আবার কাল চেষ্টা করা যাবে!”
কাকাবাবু বললেন, “এতখানি উঠেছি যখন, এ-পাহাড়টা আজ দেখা শেষ করতেই হবে! চলো, আর দেরি করে লাভ কী?”
“অন্ধকার হয়ে গেলে আর কিছু দেখা যাবে না!”
“আমার কাছে টর্চ আছে। তুমি জানো না অরিজিৎ, সন্তুকে সঙ্গে না নিয়ে আমি আজকাল কোথাও যাই না! এবার সন্তুর জন্যই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে!”
‘কাকাবাবু, সন্তু যে এরকম একটা কাণ্ড করবে, আমি ভাবতেই পারিনি।”
“আলমারিটায় তালা না দিয়ে আমি ভুল করেছি। আসলে আমি তোমার কথায় বিশ্বাস করিনি, গুরুত্বও দিইনি। এখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!”
সেই রাতের পর থেকে সন্তুকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছাদের ওপর পড়ে ছিল কৌটোটা, তার মধ্যে লাল লঙ্কার মতন ফলটাও নেই। অরিজিৎ তা দেখেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। তার ধারণা, সন্তু সেই ফলটা খেয়ে ফেলে অদৃশ্য হয়ে গেছে!
কাকাবাবু সন্তুর ঘর এবং ছাদের প্রায় প্রতিটি ইঞ্চি পরীক্ষা করে দেখেছেন। সন্তুর হঠাৎ চলে যাওয়ার কোনও চিহ্নই নেই। সে পাজামা পাঞ্জাবি পরে ছিল, তার চটি-জোড়া পর্যন্ত রয়ে গেছে, বিছানার ওপর একটা বই আধ-খোলা। সন্তু কোনও কারণে হঠাৎ কোথাও চলে গেলে নিশ্চয়ই কাকাবাবুকে চিঠি লিখে রেখে যেত কিংবা কিছু একটা চিহ্ন রেখে যেত। সেরকম কিছুই নেই।
তবে, সন্তু যে এই লাল ফলটা চুপিচুপি খেয়েছে, তাও তো ঠিক। সে সত্যিই অদৃশ্য হয়ে গেল?
অরিজিৎ এখন বলছে যে, অদৃশ্য মানুষদের নাকি কথা বলারও ক্ষমতা থাকে না। কিংবা তাদের কথা কেউ শুনতে পায় না। সে নিজে যেবার অদৃশ্য হয়েছিল, সেবার গ্রামের মানুষদের কাঁধে হাত দিয়ে ডেকেছিল, তাও তারা বুঝতে পারেনি কিছুই। অদৃশ্য মানুষের ছোঁয়াও টের পাওয়া যায় না।
এইসব কথা শুনেই রাগে কাকাবাবুর গা জ্বলে গেছে!
দু’দিন অপেক্ষা করেও সন্তুর কোনও খোঁজ না পেয়ে কাকাবাবু উতলা হয়ে উঠেছিলেন। তা হলে কি অরিজিতের কথাই ঠিক? সন্তু একেবারে হাওয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেল! তখন তিনি জেদ ধরলেন, তিনি নিজে ওই ফল একটা খেয়ে দেখবেন! সন্তু একটা ফল খেয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে, এরকম একটা অদ্ভুত কথা তিনি তার বৈজ্ঞানিক-বন্ধুদের কিংবা পুলিশবন্ধুদেরও বলতে পারেননি। তারা নিশ্চয়ই ভাবতেন, কাকাবাবুর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে!
পরের দিনই টিকিট কেটে কাঠমাণ্ডু। তারপর গাড়িতে অনেকটা পথ আসার পর শুরু হয়েছে পায়ে হাঁটা।
আং শেরিং আর ছোটা দাজুকে প্রথমে আসল উদ্দেশ্যটা বলা হয়নি। কাকাবাবু বলেছিলেন তিনি সিলভার লেপার্ডদের ছবি তুলতে চান। পৃথিবীতে শুধু এই অঞ্চলটাতেই রুপোলি নেকড়েদের কদাচিৎ দেখা পাওয়া যায়। কাঠমাণ্ডুতেও তিনি এই কথা বলেই অভিযানের অনুমতি জোগাড় করে এনেছিলেন।
এই কাস্তের মতন পাহাড়টার কাছে এসে আং শেরিং বলেছিল, ‘সাহেব, এখানে তো সিলভার লেপার্ড পাবেন না! এখানে অপদেবতারা আসে, এখানে অন্য কোনও জন্তু-জানোয়ার থাকে না। সিলভার লেপার্ড খুঁজতে গেলে আরও হাজার ফিট উঁচুতে উঠতে হবে।’
তখন কাকাবাবু অন্য কিছু বলতে বাধ্য হলেন। তিনি সরাসরি ইয়েতির প্রসঙ্গ না তুলে বলেছিলেন, “আমি একটা লাল লঙ্কার মতন ফল খুঁজছি, যা অনেক ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে।”
সেই কথা শুনেই আং শেরিং আর ছোটা দাজু একসঙ্গে ভয় পেয়ে বলে উঠেছিল, “বিষফল! বিষফল!”
কাকাবাবু অনেক কষ্টে তাদের কাছ থেকে আরও খবর জেনেছিলেন। ছোটা দাজুর বয়েস কম, সে কখনও ওই ফল দ্যাখেইনি। পাহাড়ে ওই ফল খুব কমই দেখা যায়। আং শেরিং বলেছিল, সে ওই ফল দু’বার মাত্র দেখেছে। তেরো হাজার ফিটের কাছাকাছি উচ্চতায় ওই ফলের গাছ জন্মায় পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে। সেই ফল প্রথমে থাকে কালো, তারপর লাল হবার আগেই কারা যেন তুলে নেয়। ওরকম লাল ফল খুব কমই দেখা যায়। সকলেরই ধারণা, ওই লাল লঙ্কার মতন ফলগুলো অপদেবতাদের খুব প্রিয় খাদ্য।
আং শেরিং আরও একটা রোমহর্ষক কাহিনি শুনিয়েছিল। তাদের গ্রামের দুটি ছেলে একবার এই কাস্তে পাহাড়ের (এরা বলে সরু চাঁদের পাহাড়) ওপরে গিয়ে ওইরকম দুটো বেশ লাল ফল দেখে খেয়ে ফেলেছিল। তারপর তাদের চেহারা বদলাতে শুরু করে, তাদের সারা গায়ে বড় বড় রোম গজিয়ে ওঠে, চেহারাটা হয়ে যায় বাঁদরের মতন, তারা লাফাতে লাফাতে গ্রাম ছেড়ে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি। সেই থেকে ওরা সবাই ওইরকম লাল ফল কখনও দেখতে পেলেও হাত দিতে সাহস করে না।
এই ঘটনা শুনে অরিজিৎ গোল গোল চোখে কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে ছিল তবু কাকাবাবুর বিশ্বাস হয়নি। ওই ফল নিজে খেয়ে দেখার ইচ্ছে তার মনে আরও জোরালো হয়েছিল।
আং শেরিংরা আর আসতে চায়নি, তবু কাকাবাবু চূড়া পর্যন্ত উঠে দেখতে চান।
আকাশের রং ক্রমে ম্লান হয়ে আসছে, এরপর নীচে নামতে আরও বেশি অসুবিধে হবে। তবু কাকাবাবু আস্তে আস্তে ক্রাচ ফেলে ওপরে উঠছেন।
একটু পরে অরিজিৎ বলল, “কাকাবাবু, আমায় ক্ষমা করুন। আমার ভুল হয়েছে! ওই যে পাশের পাহাড়টা দেখুন। এখান থেকে ওটাকেও ঠিক কাস্তের মতন মনে হচ্ছে। পাশাপাশি দুটো ঠিক একই রকমের পাহাড়। আমার মনে হচ্ছে, আমি ওই পাশের পাহাড়টাতেই ফলগুলো পেয়েছিলুম।”
কাকাবাবু থেমে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিলেন। তারপর বললেন, “তোমার আর কিছু ভুল হয়নি তো? তুমি ওই লাল ফল নিজে কি সত্যি খেয়েছিলে?”
অরিজিৎ বলল, “নিশ্চয়ই। আপনার কাছে কি আমি মিথ্যে কথা বলব? তা ছাড়া এরকম একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা না হলে আপনার কাছে আমি এত দূর থেকে ছুটে যাবই বা কেন!”
কাকাবাবুর এক দিকের কাঁধে ঝুলছে ক্যামেরা, অন্য দিকের কাঁধে রাইফেল। তিনি দুটোই নামিয়ে রাখলেন। তারপর ওভারকোটের পকেট থেকে একটা ছোট ফ্লাক্স বার করে এক ঢোঁক গরম চা খেলেন।
হঠাৎ ডান দিকে ঘুরে একটা ক্রাচ তুলে তিনি বললেন, “ওটা কী দ্যাখো তো অরিজিৎ!”
একটা অতিকায় কচ্ছপের মতন দেখতে পাথরের খাঁজে টমাটো গাছের মতন একটা গাছ উঁকি মারছে। তাতে ফলে আছে ক্যাপসিকামের মতন একটা লাল লঙ্কা!
সেদিকে তাকিয়ে অরিজিতের চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। সে কোনও ক্রমে বলল, “এই তো, এই তো!”
কাকাবাবু বললেন, “তোমার কথায় এইটুকু বিশ্বাস করা গেল যে, এত উঁচু পাহাড়েও ওইরকম লঙ্কার মতন ফল দেখা যায়। বেশ ভাল কথা। এবার ওটাকে ছিঁড়ে আনো ৷ আমি খেয়ে দেখব!”
অরিজিৎ আর্তকণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল, “না, না! কাকাবাবু, আপনি খাবেন না। সন্তুর জন্য নিয়ে চলুন!”
কাকাবাবু আর কিছু বলার আগেই একটু দূরে খুব জোরে একটা হা-হা-হা শব্দ হল। কোনও জন্তু যেন খুব যন্ত্রণায় কাঁদছে!
কাকাবাবু ফ্লাস্কটা পকেটে ঢুকিয়ে রাইফেলটা তুলে নিলেন।
অরিজিৎ বলল, “কাকাবাবু, চলুন, পালাই! কে যেন আসছে!”
কাকাবাবু গম্ভীর গলায় বললেন, “ওই ফলটা না নিয়ে আমি যাব না। যে আসে আসুক।”
অরিজিৎ কাকাবাবুর হাত ধরে টানতে যেতেই কাকাবাবু এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিলেন। তারপর লাল ফুলটা ছিঁড়ে নেবার জন্য একটু এগোতেই দেখলেন, মাত্র আট-দশ ফিট দূরে একটা প্রাণীর মুখ। সেটা ভল্লুক কিংবা শিম্পাঞ্জির হতে পারে, কোনও ক্রমেই মানুষের নয়।
কাকাবাবুর প্রথম মনে হল, ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার। কিন্তু রাইফেল নামিয়ে রেখে ক্যামেরাটা তুলে নিতে দেরি হয়ে যাবে। জন্তুটার চোখ দুটো অসম্ভব হিংস্র, সে এক পা, এক পা করে এগিয়ে আসছে।
কাকাবাবু ছবি তোলার বদলে রাইফেল উঁচিয়ে জন্তুটাকে গুলি করতে গেলেন।
সঙ্গে সঙ্গে অরিজিৎ কাকাবাবুর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল, “কাকাবাবু, গুলি করবেন না। ও আমাদের সন্তু! ও সন্তু!”
লোড-করা রাইফেলে ঝাঁকুনি লেগে গুলি বেরিয়ে গেল। তার শব্দ ছড়িয়ে পড়ল এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে। সেই লোমশ প্রাণীটা ভয় পাবার বদলে আরও সামনে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওদের দুজনের ওপর।
অরিজিতের কথা শুনেই কাকাবাবু দ্বিতীয়বার গুলি করতে পারলেন না। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, “সন্তু? তুই কি সন্তু?”
লোমশ প্রাণীটা কাকাবাবুকে এক ধাক্কা মারল। অরিজিৎকে শূন্যে তুলে ছুড়ে দিল নীচের দিকে। সে গড়িয়ে পড়ে যেতে লাগল।
জন্তুটার ধাক্কায় কাকাবাবুও গড়িয়ে গেলেন খানিকটা। কিন্তু এক জায়গায় থেমে যাবার পর বুঝলেন, তাঁর নিজের হাত-পা ভাঙেনি। কিন্তু অরিজিৎ তখনও গড়াচ্ছে।
তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘আং শেরিং, ছোটা দাজু, ওকে ধরো!”
খানিক বাদে ছোটা দাজুর সাহায্য নিয়ে কাকাবাবু নীচে নেমে এলেন। আং শেরিং অরিজিৎকে কোলে নিয়ে বসে আছে। অরিজিতের জ্ঞান নেই, তার মাথা কেটে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে, খুব সম্ভবত একটা হাতের হাড়ও ভেঙে গেছে। জামা-টামা রক্তে মাখামাখি!
আং শেরিং শান্ত গলায় কাকাবাবুকে বলল, “সাহেব, তোমাদের বলেছিলুম না, ওই অপদেবতার পাহাড়ে উঠো না! এক্ষুনি শহরের হাসপাতালে নিয়ে না গেলে এই সাহেবটা বাঁচবে না!”
পরের দিনই কাকাবাবু অরিজিৎকে নিয়ে পৌছে গেলেন কাঠমাণ্ডুতে। কাকাবাবুর নিজেরও যে একটা হাত মচকে গেছে আর ডানদিকের কানের পেছনে অনেকটা জায়গা থেতলে গেছে, সেকথা কাউকে বললেন না। অরিজিৎকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে তিনি সেখানেই বসে রইলেন সারা রাত। ভোরবেলা অরিজিতের জ্ঞান ফিরেছে, আর তেমন বিপদের আশঙ্কা নেই শুনে কাকাবাবু ফিরে গেলেন হোটেলে।
সারা রাত জাগলেও সকালবেলা ঘুমোবার কোনও মানে হয় না। কাকাবাবু ভাল করে স্নান করে ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিলেন। তার চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। তিনি কোনও দিন হার স্বীকার করেন না। তিনি মনে মনে ঠিকই করে ফেলেছেন এর মধ্যে যে, আবার তিনি ওই কাস্তে-পাহাড়ে ফিরে যাবেন। ওই লাল লঙ্কার মতন একটা ফল তার চাই-ই চাই! ওই ফল খাওয়ার পরের ফলাফল তিনি নিজে না বুঝলে সন্তুকে কিছুতেই খুঁজে বার করা যাবে না!
সবেমাত্র ব্রেকফাস্ট শেষ করেছেন, এমন সময় বেজে উঠল টেলিফোন। হাসপাতাল থেকে কোনও খবর এসেছে ভেবে তিনি রিসিভারটা তুলতেই অন্য দিকের গলার আওয়াজ শুনে আনন্দে তার বুকটা কেঁপে উঠল। “সন্তু!”
সন্তু বলল, “উফ, কাকাবাবু, এতক্ষণে আপনাকে পাওয়া গেল। আমি কাল দুপুর থেকে কাঠমাণ্ডুর সব হোটেলে আপনাকে খুঁজছি!”
কাকাবাবু উত্তেজনা দমন করে জিজ্ঞেস করলেন, “সন্তু, তুই কোথা থেকে কথা বলছিস?”
সন্তু বলল, “কলকাতা থেকে। আমাদের বাড়ি থেকে!”
“আমাদের বাড়ি থেকে! তুই তা হলে অদৃশ্য হয়ে যাসনি?”
“হা-হা-হা, কী যে বলেন! আপনিই না বলেছিলেন, মানুষের পক্ষে অদৃশ্য হওয়া অসম্ভব।”
“তা তো বটেই! কিন্তু তোকে আমরা খুঁজে পাইনি কেন? তুই কোথায় গিয়েছিলি? তুই লাল লঙ্কাটা খেয়েছিলি না?”
“হ্যাঁ কাকাবাবু, আমি ভেবেছিলাম, আমি নিজে পরীক্ষা করে দেখব। কিন্তু, ওটা স্ট্রবেরিও নয়, লঙ্কাও নয়, ওটা একটা বিষাক্ত ফল। ওটা খেলে মাথা ঘুরে যায়, কান ভোঁ ভোঁ করে, তারপর মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। অদৃশ্য-টদৃশ্য কিছু হয় না!”
“তা হলে তুই কোথায় ছিলি, সন্তু?”
“সেটা একটা মজার ব্যাপার! আপনার সেই ত্রিপুরার রাজকুমারের কথা মনে আছে? আপনার ওপর তার খুব রাগ! সে দুটো গুণ্ডা পাঠিয়েছিল আমাকে ধরে নিয়ে যাবার জন্য। গুণ্ডা দুটো ড্রেন পাইপ বেয়ে উঠে এসেছিল ছাদে। তারা ভেবেছিল, আমাকে জোর করে, হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাবে। কিন্তু তারা ধরবার আগেই আমি অজ্ঞান। ওরাই ঘাবড়ে গেল!”
কাকাবাবু একটুখানি চুপ করে গিয়ে শান্ত গলায় বললেন, “তোর ভয় পাবার দরকার নেই, সন্তু। আসল ব্যাপার কী হয়েছিল বল তো?”
সন্তু বলল, “আমি আসল কথাটাই বলছি তো! রাজকুমার আমাকে বেঁধে নেবার জন্য দুটো লোক পাঠিয়েছিল। ঠিক সেই সময়ে আমি অজ্ঞান, কোনও বাধাই দিতে পারেনি। লাল লঙ্কাটা তক্ষুনি খেয়েছিলুম যে! তারপর নাকি আমি পাক্কা আড়াই দিন অজ্ঞান হয়ে থেকেছিলুম। গোড়ার দিকটা আমার মনে নেই। কিন্তু শেষের দিকে আমি আধো আধো স্বপ্নে কত দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। অন্যদের কথা একটু একটু শুনতে পেলেও উত্তর দিতে পারিনি! বুঝলেন কাকাবাবু, এই লাল লঙ্কার রহস্যটা আমি আবিষ্কার করেছি। ওটা একটা বুনো বিষাক্ত ফল, ওটা খেলে মানুষ অনেকক্ষণ অজ্ঞান হয়ে থাকে। সেই সময় স্বপ্ন দেখে ভাবে, বুঝি অদৃশ্য হয়ে অনেক জায়গায় ঘুরছে। আমি ডেফিনিট, অরিজিৎদার এইরকম ব্যাপারই হয়েছে!”
কাকাবাবু অবিশ্বাসের সুরে বললেন, “সেই রাজকুমার লোক পাঠিয়ে তোকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে তুই ছাড়া পেলি কী করে!”
সন্তু হাসতে হাসতে বলল, “রাজকুমার খুব জব্দ হয়ে গেছে, কাকাবাবু! ওর লোক তো অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আড়াই দিনের মধ্যে আমি জাগিনি, মাঝখানে কী ঘটেছে তা-ও আমি জানি না! এদিকে রাজকুমার ভেবেছিল, ওর শাগরেদদের হাতে মার খেয়ে আমি বুঝি মরতে বসেছি। ডাক্তার ডেকে এনে আমার চিকিৎসা করিয়েছে। ওষুধ খাইয়েছে। আমি চোখ মেলবার পর সে বলেছিল, উঃ, বাঁচালে! তোমাকে দু’-চারদিন আটকে রেখে তোমার কাকাবাবুর কাছ থেকে দু’-চারটে জিনিস আদায় করব ভেবেছিলাম। শেষে দেখছি, মরা মেরে খুনের দায়ে পড়ার মতন অবস্থা! তুমি মরে গেলে আমাদের পুরো উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যেত! যাও বাছা, এবারের মতন ফিরে যাও ঘরে। কী খেলাই দেখালে। আড়াই দিন অজ্ঞান, অথচ শরীরে মাথায় কোনও চোট নেই। জানেন কাকাবাবু, শেষ পর্যন্ত রাজকুমার আমাকে খাতির করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে কাল দুপুরে। তার পর থেকেই আপনাকে টেলিফোনে ধরবার চেষ্টা করছি।”
সন্তুর সঙ্গে কথা শেষ করার পর কাকাবাবু একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। অরিজিতের ওপর তার রাগটাও কমে গেল। সে বেচারা ওই বিষফল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাই অদৃশ্য হওয়া ভেবেছে। এই জন্যই ঝোপেঝাড়ে যেসব অচেনা ফলটল ফলে থাকে, তা হুট করে খেতে নেই। নিজের ভুলের জন্য অরিজিৎ যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছে।
কিন্তু কাস্তে-পাহাড়ের চূড়ার কাছে যে এসে হঠাৎ হানা দিল, সে কি কোনও ছদ্মবেশী মানুষ, না, সত্যিই ইয়েতি!
কাকাবাবু ঠিক করলেন, আবার ওই পাহাড়ের চূড়ায় একবার যেতে হবে।
২ মার্চ ১৯৮৮
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন