পৌলোমী সেনগুপ্ত
সকালে হাতে-গড়া রুটি আর গুড় হল গিয়ে জলখাবার। মারধোরের বিরাম নেই বলে দুপুরে কালাচাঁদ বিশেষ কিছুই খেয়ে যায় না স্কুলে। গরম ভাত, গরম ডাল—তারপর তিন মাইল মাঠ ভেঙে স্কুল—সেই রোদ্দুরের ভেতর দিয়ে—কার ভাল লাগে বেঞ্চে দাঁড়াতে তখন—বেত খেতে— নীলডাউন হতে—বিশেষ করে ভরপেটে?
তাই কোনও একটা কিছু খেয়ে—হালকা মতো— কালাচাঁদ গুটি গুটি স্কুলে গিয়ে হাজির হয়। জুবিলি স্কুলে ক্লাসের ক্লাস-টিচারের সই সে জাল করতে পারে। জাল-ছুটির জাল দরখাস্তগুলো নাইন-টেনের সেরা সেরা দাদারা তাকে দিয়েই সই করিয়ে নিয়ে যায়।
ফার্স্ট পিরিয়ড থেকে লাস্ট পিরিয়ড যেন আর শেষই হয় না। অঙ্ক পিরিয়ডে স্যার তাকে গৌরাঙ্গ হতে বলেন। কালাচাঁদ দু’হাত ওপরে তুলে হাঁটু মুড়ে নাম সংকীর্তন করার ভঙ্গিতে স্যারের টেবিলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে।
হাইজিন-স্যার বেশ ভাল। কালাচাঁদকে বিশেষ কষ্ট না দিয়ে ক্লাসের দোরগোড়ায় পুরো পিরিয়ড দৌবারিক বানিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শরীরে কোন অস্থি কোথায় থাকে তা বারবার বলে দিলেও কালাচাঁদ মনে রাখতে পারে না। তাই ওই শাস্তি।
একদিন অঙ্ক পিরিয়ডে কী করে যেন একটা ল-সা-গু রাইট করে ফেলল কালাচাঁদ। অঙ্ক-স্যার বললেন, “তুই টুকেছিস।”
কালাচাঁদ বলল, “না স্যার। এমনি মিলে গেল। আমি তো আপনার কাছেই গৌরাঙ্গ হয়ে দাঁড়াই রোজ। তাই দেখতে দেখতে অঙ্ক শিখে ফেলেছি।”
স্যার বললেন, “তুমি তো গুণধর। কত সুন্দর সই জাল করো। ইচ্ছে করলে অঙ্কও জাল করতে পারো। দেখি হাতখানা।”
“মারবেন তো স্যার। কোন হাত দেব? মা বলেছেন, ডান হাতে কাটাকুটি হলে ভাগ্যরেখা মুছে যায়। তখন আর ভাগ্য ঘোরে না।”
“ভাগ্যরেখা ডিস্টার্ব করব না। বাঁ হাত দে।” কয়েক ঘা মেরে স্যার আবার বোর্ডে অঙ্ক লিখতে লাগলেন।
কে একজন মরে গেল বলে পরের পিরিয়ডেই ছুটি হয়ে গেল। ব্যাগে বই ভরে কালাচাঁদ গুটি গুটি বাড়ির পথ ধরল। আমবাগান, পিচরাস্তা, জেলখানার ঘাট— পরপর পার হয়ে বড় মাঠে পড়ল। আকাশ উপুড় করে মেঘ ঝুলে পড়েছে মাঠের শেষে। ছায়ার ভেতর দিয়ে বিকেলবেলার সূর্য মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছিল।
জ্ঞানেন্দ্ররা ফুটবল পেটাচ্ছে। কালাচাঁদকে ডেকে বলল, “আয় খেলবি।”
কতকাল খেলে না কালাচাঁদ। সে প্রামাণিক-বাড়ির ছেলে। স্কুলের পর অনেক মাথা ঘামিয়ে কালাচাঁদ আজ ক’দিন হল নিজের জীবনী লিখছে। তৃতীয় অধ্যায় লেখা শেষ। এবার তার ছাত্রজীবনের কথা লিখবে। কবে ভর্তি হল, কবে নিচু ক্লাস থেকে কঠিন সংগ্রাম করে প্রোমোশন পেয়ে পেয়ে ক্লাস সেভেনের মতো উঁচু ক্লাসে উঠল—এসব কথা এবার লিখতে হবে।
খেলাধুলোর ওপর এক চ্যাপটার লিখতে হবে। এসব ভেবেই কালাচাঁদ ব্যাগ রেখে মাঠে নেমে পড়ল। খানিকক্ষণ খেলে তার মনে হল—খেলতে তো বেশ লাগে। জুবিলি স্কুলের পড়াশোনার চেয়ে সোজা। এমনকী, নিজের জীবনী লেখার চেয়েও আরামের। মা তার হাত দেখিয়েছিল কুলগুরুকে। তিনি বলেছেন, কালে কালাচাঁদ একটা মানুষের মতো মানুষ হবে। দিকে দিকে নাম ছড়িয়ে যাবে। লোকে দেখতে আসবে। একটা জীবনের মতো জীবন হবে তার। তাই ভেবেই কালাচাঁদ নিজের জীবনী লিখে রাখছে আজ ক’দিন হল। জন্ম থেকে যতটা মনে আছে তাই লিখে রাখছে। পাছে পরে ভুলে যায়। মা তো বলেইছে, আমাদের কালাচাঁদ সাধু প্রকৃতির—
অনেক দিন খেলে না বলেই হয়তো খেলতে খুব ভাল লাগছিল কালাচাঁদের। পেনাল্টি এলাকায় ঢুকে অফসাইড বাঁচিয়ে একটা গোলও দিয়ে ফেলল।
জ্ঞানেন্দ্র ওরা সবাই বলল, “কালাচাঁদদা, তুই খেলিস না কেন? কী সুন্দর ক্যারি করে পাস দিস।”।
রোগাভোগা মুরারি টাইপের চেহারা হলে কী হবে, কালাচাঁদকে সবাই কিছুটা সমীহ করেই চলে। স্যারদের সই জাল করতে হলে কালাচাঁদদাকে চাই-ই চাই।
খেলতে খেলতে সন্ধে হয়ে এল। বাতাস দিল। মেঘ উড়ে গিয়ে আকাশের জ্যোৎস্না বেরিয়ে পড়ল। আবছা অন্ধকারেও খেলা চলছিল। বল পায়ে নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে হঠাৎ কালাচাঁদ দাঁড়িয়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল, “আমি আর পারছি না। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে, উঃ! বাবা গো—”
সিধু, জ্ঞানেন্দ্র, বিভু ছুটে এল। ওরা কালাচাঁদের এক ক্লাস, দু’ক্লাস নীচে পড়ে।
‘কী হল কালাচাঁদদা? বলবে তো? চুপ করে থেকে কাঁদলে কোনও লাভ হবে?”
“আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। পেটের নাড়িভুড়ি হজম হয়ে গেল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।”
“কেন? দুপুরে খেয়েদেয়ে স্কুলে আসোনি?”
“তখন আমি হালকা মতো খেয়ে বেরোই। উঃ! আমায় ধর। পড়ে যাব।”
জ্ঞানেন্দ্র শক্ত করে ধরল। কালাচাঁদ সত্যি সিধে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।
“বিকেলে বাড়ি ফিরেই তো পেট ভরে খাই। এখন কে কোথায় আছ আমায় বাঁচাও। যা হোক কিছু খেতে দাও গো। মরে যাব—”
আবছা অন্ধকারমতো মাঠে জ্ঞানেন্দ্র বিপদে পড়ে গেল। বাড়ি ফিরবে? না, কালাচাঁদকে রিকশায় তুলে পৌঁছে দেবে? এই কালাচাঁদই তাদের পায়রা চুরি করে ফিস্টি করেছিল। জ্ঞানেন্দ্রর বাবা গোঁসাই মানুষ। মহেন্দ্র গোস্বামী। মাছ মাংস খান না। কীর্তন গেয়ে বেড়ান। ঢোল-কর্তালের দল নিয়ে সামনে থালা সাজিয়ে চোখ বুজে আসর দেন। পায়রা খুন হওয়ায় প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন বাবা।
জ্ঞানেন্দ্রর ইচ্ছে ছিল, কালাচাঁদকে তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে দুটো মালপোয়া খাওয়ায়। বাবা কোত্থেকে গেয়ে ফেরার সময় কাল ওগুলো এনেছে। কিন্তু বাবা যদি এখন বাড়ি থাকে? যদি কালাচাঁদকে দেখেই চিনতে পারে? অবিশ্যি গানের ঘোরে থাকলে বাবা একা একা শুধু গুনগুন করে। তখন কারও দিকে তাকায় না।
মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। মাঠের গায়ে পিচ-রাস্তার ওপারেই ঘণ্টা বাজিয়ে কাদের বাড়ি পুজো হচ্ছে। আজ কি শনিবার? তা হলে তো সত্যনারায়ণের সিন্নি আছে। ঘরের বাইরে খোলা আকাশের নীচে কলাপাতা পেতে প্রসাদ নিতে হয়। কিন্তু ও-বাড়ির কাউকে তো সে চেনে না।
“কালাচাঁদদা, ও-বাড়ি যাবে?”
তার তখন খিদেয় মরো মরো অবস্থা। গলা দিয়ে কথা ফুটছে না প্রায়। কেন যে জীবনী না লিখে খেলতে গেল। বিকেলে বাড়ি ফিরে প্রথমে পেট ভরে খায়। তারপর আরাম করে মাদুর পেতে আত্মজীবনী লিখতে বসে। লিখতে লিখতে এক-একদিন সন্ধে হয়ে যায়। চোখ জড়িয়ে আসে। তখন মা তাকে বিছানায় তুলে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। ঘুম ভেঙে উঠে দেখে পরের দিনের সকাল হয়ে গেছে।
“আমি যে হাঁটতে পারছি না জ্ঞানেন্দ্র—”
“চলো-না কষ্ট করে। ওখানে বোধহয় সত্যনারায়ণের সিন্নি হচ্ছে—বেশ পেট ভরে খাবে।”
সিন্নির কথায় কালাচাঁদ একটু জোর পেল গায়ে। যদিও বাড়িটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। তবু সন্ধের ফিকে অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে, ওপাশে কীসের একটা ধুম লেগেছে। বিয়ে অন্নপ্রাশনের মতো বারান্দায় হ্যাজাক জ্বলছে।
ডাবের জল, আটা, বিচে কলা, মিছরি, দুধ—কত কী দিয়ে সিন্নি হয়। এসব ভাবতেই কালাচাঁদের গায়ে জোর ফিরে এল। এখন যা খিদে, তাতে অমন সিন্নি দশ হাতা সে খেয়ে নিতে পারে।
জ্ঞানেন্দ্রর এক কাঁধে ভর দিয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে রাস্তায় উঠে এল কালাচাঁদ।
কিন্তু আলো জ্বালানো বাড়িটার বারান্দায় পৌঁছে তো জ্ঞানেন্দ্রর চক্ষুঃস্থির।
তারই বাবা চোখ বুজে গলা ভাঁজছে। সামনে ঢোল-কর্তালের দল। তারপর প্যালা দেওয়ার থালা। সেখানে আধুলি সিকি দিয়ে কয়েকখানা নোট চাপা দেওয়া রয়েছে। পাছে বাতাস উঠলে উড়ে যায়। তারই পাশে কাঠের বড় বারকোশে ঢিবি দিয়ে মালপোয়া সাজানো। এমন সুন্দর গন্ধ দিচ্ছে।
তারপর সারি সারি শ্রোতারা বসে। একদিকে পিসিমা, কাকিমা, জেঠিমা, দিদিমাদের রো। মাঝখানে চলাফেরার একটা সরুমতো ফালি। তার বাঁদিকে দিদি, দাদা, বাবা, কাকা, জ্যাঠার দলের ভিড়। লম্বা বারান্দার আগাগোড়াতেই পালাকীর্তন শুনতে চোখ বুজে ভক্তিভরে ওয়েট করছে সবাই। ধূপধুনো, সদ্যভাজা মালপেপার গন্ধের সঙ্গে ঢোল-কর্তালের বোল মিশে যাচ্ছে। তা ঘিনা ঘিনি ঘিনি। কাই কাই কাই কাই। জ্ঞানেন্দ্রর বাবার গানের পুঁথির পাতা খোলা পড়ে আছে। দূরে হ্যাজাকগুলো নিভু নিভু। পুঁথির সামনে প্রদীপের শিখা ঢোলের চাটিতে কেঁপে কেঁপে উঠছে। এত কিছুর মাঝে মহেন্দ্র গোঁসাই চোখ বুজে আখর দিচ্ছিলেন। হঠাৎ চোখ খুলে জ্ঞানেন্দ্রকে দেখেই হাঁক দিলেন, “নে বসে পড়। ধরতাই মতো গলা দিবি—”
জ্ঞানেন্দ্র মানে মানে বসে পড়ল তার বাবার সামনে, ঢোল-কর্তালের মাঝখানে। কালাচাঁদকেও টেনে বসাল। ‘গান হয়ে গেলেই মালপো।’—আস্তে করেই বলল।
কালাচাঁদও বসল। সিধু বিভুও বসে পড়ল। তখন সামনের দেওয়ালের ঘড়িতে ঠিক সন্ধে সাতটা। অমনি মহেন্দ্র গোঁসাই গলা ঝেড়ে শুরু করলেন…
“দিয়া তুলসী তিল-অ-অ—”
তাঁর গলা নামতেই ঢোল-কর্তালের মাঝখান থেকে জনা তিনেক একসঙ্গে ধরে বসল— তিল-অ-অ-অ-ও-ও-ঔ—
জ্ঞানেন্দ্র আস্তে আস্তে টিপুনি দিল কালাচাঁদকে, “তুমিও ধরো।”
“আমি তো জানি না—”
“তাতে কী! হাঁ করে থাকো। সবাই ভাববে গাইছে। চোখ বুজে নাও—”
কালাচাঁদ চোখ বুজে হাঁ করল। ঠং ঠং করে সিকি-আধুলির প্যালা পড়ছে থালায়। এ কী গেরো বাবারে! খিদেয় তখন কালাচাঁদের বুকের নীচে পেটটা একদম উবে গেছে। সেই অবস্থায় চোখ বুজে আখর শুনে শুনে জায়গামতো হাঁ করে থাকতে হচ্ছে! তার ভেতর মহেন্দ্র গোঁসাইয়ের গলা যে-ই না উঠছে— অমনি হাঁ বুজিয়ে ফেলার চান্স পাচ্ছে কালাচাঁদ। খানিকক্ষণের ভেতরেই কালাচাঁদের চোয়াল ব্যথা করতে লাগল। খানিক হাঁ করে থাকা—আবার মুখ বুজিয়ে নেওয়া। দু’-একবার ভুল জায়গায় হাঁ করে ফেলল কালাচাঁদ। জিভ কেটে চোখ খুলতেই দেখে, ঘিয়েভাজা মালপোর ঢিবিতে একটা বড় মতো নীল মাছি বোঁ বোঁ করে রাউন্ড দিচ্ছে। বারকোশের ওপারেই একজন খুব মন দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে।
কালাচাঁদ খানিকক্ষণ হাঁ করে থাকল। একবার লক্-জ হয়ে গিয়ে তার বাঁ কানের গোড়ায় চিন-চিন করে ব্যথা ধরে গেল। সেই ব্যথাই দু’ মিনিটে তার মাথা ধরিয়ে দিল। কিন্তু এর ভেতরেও তার ওঠার উপায় নেই। রেকর্ডের গানের মতো ভেবেছিল তিন-চার মিনিটে গান থামবে—থামলেই সুবিধেমতো মালপো নিয়ে উঠে যাবে।
কিন্তু পালাকীর্তন যে ঘণ্টা দেড় ঘণ্টার মামলা, সেরকম কোনও আন্দাজই ছিল না কালাচাঁদের। মাথা ধরা নিয়ে আবার হাঁ করল। করেই বুঝল—এখন ভুল জায়গায় হাঁ করেছে। অমনি মুখ বন্ধ করে চোখ খুলল। বারকোশের ওপাশে ছাতা-কোলে মানুষটা তখনও তার দিকে মন দিয়ে তাকিয়ে আছে। বাকি সবাই ভক্তিভরে গান শুনছে। কেউ আবার চোখ বুজে আছে। নীল মাছিটা মালগোর ঢিবিতে ডাইভ দিল।
অনেকক্ষণ আসন করে আছে বলে কালাচাঁদ পা মেলতে গেল। পারল না। বেজায় ঝিঁঝি ধরেছে। কোনও সাড় নেই পায়ের আঙুলে। বুড়ো আঙুলে চিমটি কাটতে কাটতে আবার চোখ বুজে হাঁ করতে হল কালাচাঁদকে। থামার উপায় নেই। খুচরো পয়সায় থালা বোঝাই হয়ে গেছে। প্রদীপের শিখা সিধে দাঁড়ানো। একটুও কাঁপছে না। দেওয়াল-ঘড়িতে আটটা চল্লিশ। আর কতক্ষণ?
মহেন্দ্র গোঁসাইয়ের থামার কোনও লক্ষণ নেই। চোখ বুজেই পুঁথির পাতা ওলটালেন।
কালাচাঁদ জ্ঞানেন্দ্রকে চিমটি কাটল। আর কতক্ষণ?
জ্ঞানেন্দ্র চিমটি খেয়েও তার বাবার গলার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে যেতে লাগল। চোখ খুলল না। তখন ঢোল বলছে—ঘিনি ঘিনি ঘিনিত্তা—উপায় নেই। কালাচাঁদকে ব্যথাসুদ্ধ হাঁ করে থাকতে হল। নইলে সবাই তাকাবে। লক্ষ করবে। বিশেষ করেএকটা লোক তো বারকোশের ওপারে বসে সেই থেকে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কোলে ছাতা।
ঠিক এমনি সময়ে মালপো থেকে উঠে এসে নীল মাছিটা একদম কালাচাঁদের হাঁ বরাবর পাক খেয়ে মহড়া দিতে শুরু করল।
এ-অবস্থায় কে আর গলা মেলাতে যাবে। চোখ খুলে হাঁ বন্ধ করল কালাচাঁদ। নইলে মাছিটা একদম তার পাকস্থলীতে গিয়ে থামত।
তখনই দেখল—ছাতা কোলে লোকটি নিঃশব্দে হাসছে। মুখের ভাবখানা—হুঁ। ভেবেছ কী! আমি বুঝি আর কিছু বুঝি না?
মুখ বন্ধ করে সোজাসুজি তাকাল কালাচাঁদ।
লোকটি তখনও হাসছে। তার হাসিই কথা হয়ে ফুটে উঠছে। হুঁ। অত সোজা নয়। এর নাম হল গিয়ে পালাকীর্তন!
মাছিটা আবার মালপোর ঢিবিতে ফিরে গেল। দেওয়াল-ঘড়িতে প্রায় ন’টা। কালাচাঁদ দেখল, লোকটা ছাতা উঁচু করে কোল পালটে রাখল।
আরে! এ যে তার চেনা ভঙ্গি। এ তো তাদের অঙ্ক স্যার। মহেন্দ্র গোঁসাই থামতে আবার হাঁ করার জায়গা এসে গেল। কালাচাঁদ তবু মুখ বন্ধ করেই বসে রইল। হাঁটু অবধি ঝিঁঝি ধরে গেছে। পরিষ্কার বুঝল, তার এখন চোয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই শরীরের। বাকিটা খিদে এসে খেয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন