পৌলোমী সেনগুপ্ত
ঝকঝকে খটখটে
চলে গেছে দিনগুলো
এখন তো স্যাঁতসেঁতে
তা না হলে সপসপে
দিন আর রাত।
তবু আছি প্রস্তুত
করব না খুঁতখুঁত
মেনে নেব যেমন বরাত।
কবিতাটায় চোখ বুলিয়েই কার লেখা নিশ্চয় বোঝা গেছে। হ্যাঁ, এ অদ্ভুত কবিতা সেই এক এবং অদ্বিতীয় গোয়েন্দা কবি পরাশর বর্মার।
আমার পত্রিকার জন্যে পাঠানো নানা জনের নানা লেখা ঘাঁটতে-ঘাঁটতে তার এই মার্কামারা অপরূপ কাব্যসৃষ্টিটি পেয়ে লেখা বাছাই ছেড়ে তাকে একটা চিঠি লিখছিলাম।
লিখছিলাম: ‘তোমার কবিতাটা পেয়েছি, কিন্তু আমার সামান্য হালকা পত্রিকায় তোমার এই গনগনে কবিতা ছাপলে কাগজ ঝলসে যাবে কি না তাই ভাবছি। শেষ পর্যন্ত কবিতাটা হয়তো না ছেপে উঠতে পারব না, কিন্তু সেই সূত্রে তোমার সম্বন্ধে যা মনে হচ্ছে, তা না লিখে পারছি না। বিলেতের রানির বাইরে কোথাও যাবার সময় রাস্তায় যদি তার যাওয়ার ঘটা কখনও লক্ষ করে থাকে, তা হলে অন্য সব সমারোহের উপকরণের সঙ্গে তার বিরাট কালো লিমুজিনের সামনে ড্রাইভারের ঠিক পাশে বিশেষ একজনকে নিশ্চয় দেখেছ। লম্বা-চওড়া সুঠাম চেহারা, পোশাক একেবারে পুরোপুরি কেতাদুরস্ত, মাথায় বাউলার হ্যাটটি পর্যন্ত একেবারে যেন মেপে তৈরি করে বসানো। ব্রিটিশ মহারানি সরকারি ভাবে কোথাও গেলে তো বটেই, নিজের শখ বা আনন্দের জন্যে যে-কোথাও এই বিশেষ মানুষটিকে একেবারে নিঁখুত পোশাকআশাকে তার কাছাকাছি এমন জায়গায় দেখা যাবে, যেখানে রাজপরিবার বা ওই রকম সম্ভ্রান্তদের ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না। বিলেতের কয়েকটি অ্যাসকট-এর মতো ঘোড়দৌড়ের বড়-বড় প্রতিযোগিতা যথার্থ রাজকীয় উৎসবের ব্যাপার, গ্র্যান্ড অপেরা যাকে বলে, সেরকম ধ্রুপদী নাট্যসংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনও তাই। রানি মহোদয়ার উপস্থিতিতে সে-সব অনুষ্ঠান তার যথাযোগ্য মর্যাদা পায়। সে-সব অনুষ্ঠানেও রানি মহোদয়ার যথাসম্ভব কাছাকাছি নিখুঁত কেতাদুরস্ত পোশাক পরা এমন একজনকে দেখা যায়, যে রাজপরিবার বা কাছাকাছি সম্ভ্রান্ত কোনও খ্যাতিমান কেউ তো নয়ই, এমনকী সাধারণ পুলিশ গোয়েন্দাও নয়।
‘তা হলে কী তিনি? কে তিনি? তিনি একজন বিশেষ ভাবে অনেক কিছুর তালিম নেওয়া গুণী মানুষ, যার হাতের পিস্তলের টিপই শুধু অব্যর্থ নয়, যিনি তার পোশাকের গুপ্ত জেব থেকে নিমেষে সে পিস্তল বার করে যথার্থ সন্দেহভাজনকে অব্যর্থ ভাবে চিনে লক্ষ্য করে নিজের অস্ত্রে তাকে অকর্মণ্য করে দিতে পারেন।
তার খানদানি পোশাক এমন নিখুঁত যে, তার মধ্যে অদৃশ্য ভাবে গুপ্ত পিস্তল রাখার ব্যবস্থা করতে বিলেতের সবচেয়ে বড় ‘ওয়েস্ট এন্ড’-এর শাহানশা দরজিদেরও উপরি-বকশিস দিতে হয়।
‘বিলেতের সবচেয়ে বড় খানদানি মহলের খবর যাতে থাকে, সেই বিখ্যাত ‘বেলফাস্ট নিউজ লেটার্স’ পত্রিকার ক’টা পুরনো কপিতে এই গোয়েন্দাকুলীনদের কথা পড়তে পড়তে তোমার কথা মনে হচ্ছিল। তোমার পিস্তলবন্দুকের অব্যর্থ লক্ষ্যের তুলনায় যা, অনেক বেশি না হোক, সমান দামি, মুখ দেখে মানুষের মনের ভেতরটা রীতিমতো পড়ে ফেলায় তোমার সেই অসাধারণ ক্ষমতার দিক দিয়ে তুমিও লাখের মধ্যে এক। সুতরাং এই জাতের একটা কাজ পাওয়ার যোগ্যতমদের মধ্যে তুমি নিঃসন্দেহে একজন। আর একাজ পেলে তোমার কী সুবিধেটা হত বলো দেখি। আর-কিছু না হোক, দিনে একটা কবিতা লিখতে তো পারতেই। আর তা লিখলে নতুন ছন্দ-মিল, ভাব-ভাষার কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো করতে পারতে আশ…’
ব্যস, ওই পর্যন্ত লেখার পরেই কর্কশ স্বরে টেলিফোন বেজে উঠল। যন্ত্রটা কানে তুলে অবাক। আর কেউ নয়, স্বয়ং পরাশর বর্মাই ফোন করছে।
কিন্তু এ কী ধরনের ফোন করা?
তার গলাটা শুনে রীতিমতো খুশি হয়ে বলতে শুরু করেছিলাম, “আশ্চর্য ব্যাপার! শোনো, এ যেন টেলিপ্যাথিক রিমোট..”
কড়া গলায় বাধা দিয়ে, “থাক থাক! যা বলতে যাচ্ছিলাম, তাতে,” ওদিক থেকে পরাশর তার নিজের কথা হুকুমের মতো করে বলে গেল, “মন দিয়ে কথাগুলো শোনো, তোমার কাছে এখনই একজনকে পাঠাচ্ছি। দেহের মাপটাপ প্রায় তোমারই সমান। তুমি তো আধা মির্জাপুরি খোট্টা, তোমার খোট্টাই কোর্তা-টোর্তা ওর গায়ে একেবারে বেমানান হবে না। ধুতি-জুতো ওর নিজেরই থাকবে। শুধু তোমার লংকোটটা আর-একটা টুপি দেবে রাজা। রাজেন্দ্রলাল-মার্কা। তুমি নিজে যেমন খুশি পোশাক আনতে পারো।”
“কিন্তু”, বলে একবার বাধা দেওয়ার চেষ্টায় কোনও লাভ হল না। আমার বাধাটা আর-এক ধমকে বাতিল করে পরাশর বলে গেল, “এখন সাতটা বেজেছে। যাকে পাঠাচ্ছি মিনিট পনেরোর মধ্যে সে তোমার ওখানে পৌঁছে যাবে। তুমি ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে নাও। একটা সুটকেসে টুথব্রাশ, টুথপেস্টের সঙ্গে সেফটি রেজর আর ক’টা নেহাত দরকারি জামাকাপড়ের সঙ্গে খোট্টাই লংকোট এবং টুপি নিয়ে তোমার কোয়ার্টার্সের দরজায় তালাটালা দিয়ে নীচে এসে অপেক্ষা কোরো। আমি যাকে পাঠাচ্ছি, সে একটা সাদা অ্যামবাসাডরে যাচ্ছে। গাড়ির নম্বর তোমাকে দিচ্ছি না। দেবার দরকার নেই। নম্বর যাই হোক, গাড়িতে যে যাচ্ছে তাকে দেখলেই তোমার চেনবার কথা।
“তবে, একটা বিশেষ কারণে যদি না-চিনতে পারো, তাতেও ভাবনার কিছু নেই। গাড়ির বনেটের মাথায় একটা লাল-সবুজ ফ্ল্যাগ দেখলেই নিশ্চিন্ত হয়ে তুমি তাতে উঠতে পারো। তোমার সুটকেস নিয়ে পিছনের সিটে যার পাশে বসবে, তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে লাভ নেই। কারণ ক্ষমতাই নেই তার কথা বলার।
“গাড়িতে ওঠার পর ড্রাইভারকেও তোমায় কিছু বলতে হবে না। সেও কোনও কথা না বলে সোজা হাওড়া স্টেশনে তোমাদের পৌঁছে দেবে। স্টেশনে যাবার পথে গাড়ির ভেতর তুমি তোমার সঙ্গে আনা খোট্টাই কোট আর টুপি তোমার সঙ্গীকে পরতে দিয়ে তার ছাড়া-পাঞ্জাবিটা তোমার সুটকেসে ভরে নেবে।
“হাওড়া স্টেশনে পৌছবার পর ন’ নম্বর প্ল্যাটফর্মের গেটে গেলেই আমার দেখা পাবে। তোমরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলবে না। শুধু নীরবে আমার পিছু পিছু গেলেই আমি তোমাদের ঠিক ট্রেনের ঠিক কামরায়, তোমার নাম-লেখানো বার্থে পৌছে দেব।
“সেখানে তোমার ঠিক নামই থাকবে। আর তোমার সঙ্গীর নাম থাকবে ‘মোহনলাল’ বলে।
“গাড়িটা হল দেরাদুন এক্সপ্রেস আর কামরাটা হল একটা থ্রি-টিয়ার সেকেন্ড ক্লাস স্লিপার।
“সেখানে তোমাদের সঙ্গে আমার নামটাও পাবে, তবে সেটা পরাশর না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারে। নাম যাই হোক, আমি কোনও ছদ্মবেশ না নিয়ে এই চেহারাতেই থাকব। সুতরাং সেদিক দিয়ে ভাবনার কিছু নেই।
“এ-সব ব্যাপারের মূল রহস্য যে কী, এখন কিছু বলছি না। আশা করছি হাওড়া স্টেশনে গাড়ি ছাড়বার আগেই তা তোমাকে জানাতে পারব।”
ঠিকই তা পেরেছিল পরাশর। হাওড়া স্টেশনে সাদা অ্যামবাসাডর গাড়িতে যথাব্যবস্থা পৌঁছবার পর ন’ নম্বর প্ল্যাটফর্মের গেটেই পরাশরের দেখা পেয়েছিলাম। কেউ কারও সঙ্গে কথা না বললেও তার চিঠিতে জানানো নির্দেশমতো নীরবে আমার সঙ্গীর সঙ্গে তাকে প্ল্যাটফর্মের ভেতর অনুসরণ করে গিয়েছিলাম।
আমার খোট্টাই কোট আর মাথার টুপি-পরা সঙ্গীটি কিছুটা দূর থেকে আমাদের সঙ্গেই যাচ্ছিল। আমার বাসা থেকে সাদা অ্যামবাসাডর গাড়িতে আসার পর, গাড়ির ভেতরের অন্ধকারে তো নয়ই, তারপর স্টেশনে নেমে প্ল্যাটফর্মের আলোয় এসে পড়বার পরেও তাকে বিন্দুমাত্র চেনা বলে আমার কিন্তু মনে হয়নি।
না হওয়ার প্রধান কারণ বোধহয় তার মুখের ডান ধারের গাল আর চিবুকের ওপরকার ফোলা সাদা ব্যান্ডেজটা। ডান গালের ওপরে বা চোয়ালের নীচে কোনও দাঁতের গোড়ায় বেশ বেয়াড়া ঘা-টা হবার দরুন এ ব্যান্ডেজ হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার চেহারার আদলই গেছে ঢাকা পড়ে।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তখন আমাদের এক্সপ্রেস গাড়ি যাকে বলে ‘ইন’ করে দাঁড়িয়ে। প্যাসেঞ্জারের ভিড়ের মধ্যে একদলের সঙ্গী হলেও যেন আলাদা-আলাদা ভাবে এগিয়ে আমাদের বরাদ্দ করা থ্রি-টিয়ার কামরা খুঁজে বার করছি। পরাশর আমাদের আগেই সেখানে গিয়ে আরও অনেক যাত্রীর সঙ্গে দরজায় টাঙানো রিজার্ভ করা বার্থের তালিকা দেখছে। ওই ভিড়ের ভেতরেই তাকে চার্টের বার্থ নম্বর জানবার ব্যস্ততার ছলে কায়দা করে আমার সঙ্গীর ঝোলা খোট্টাই জামার পকেটে একটা কাগজের মোড়ক ফেলে দেওয়ার ইঙ্গিত পেলাম।
পরাশর চার্ট দেখবার পর কামরার ভেতরে ঢুকে নিজেদের বার্থ খুঁজে বার করার সময় বুঝলাম সেগুলো বেশ বুঝেসুঝেই নেওয়া হয়েছে।
মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা খোট্টাই কোট পরা আমার সঙ্গীর বার্থ যে-থাকের একেবারে ওপরে, তার একেবারে নীচের বার্থটি আমার। অর্থাৎ আমি নীচে থেকে যতক্ষণ ইচ্ছে তার বার্থের উপর নজর রাখতে পারব। শুধু তাকেই নয়, আমার নীচের বার্থ থেকে আমাদের বিপরীত বার্থের দিকেও আমি চোখ রেখে মুখে কিছু না বলেও ইশারা চালাচালি করতে পারি। বিপরীত দিকের সবচেয়ে উপরের তাকের এবার্থটি পরাশরের।
কামরায় ঢুকে নিজেদের বার্থ চিনে নেবার পর পরাশরের ইঙ্গিতে তার পিছু পিছু আমার সুটকেসটি নিয়েই আমি প্ল্যাটফর্মে আবার নেমে পড়লাম। বর্তমানে মোহনলাল নামের আমার সঙ্গী গাড়ির কামরাতেই থেকে গেল। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল, নিজের বার্থটি খুঁজে পেয়ে সে যত তাড়াতাড়ি পারে এখন থেকেই শোবার ব্যবস্থা করছে।
ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে কিছু দূরের একটা বুক স্টলে পরাশরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেই দিকেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে দূর থেকে ইশারা করায় তার কাছে না গিয়ে সোজা প্ল্যাটফর্মে ঢোকবার গেটের দিকেই এগিয়ে গেলাম।
পরাশরের এ-ইঙ্গিতের মানেটা খানিক বাদেই পিছন থেকে হনহন করে এসে তার আমাকে পেরিয়ে ঢোকবার গেটের দিকে যাওয়াতেই বোঝা গেল।
এ প্ল্যাটফর্মে কোথাও নয়, তার বাইরে স্টেশনের অন্য কোথাও নির্জনে পরাশর আমাকে যা বলার বলতে চায়।
প্ল্যাটফর্মের বাইরে নির্জন বলতে নিরামিষ রেস্তোরাঁতে সে সুযোগ মিলল। ট্রেন ছাড়তে তখনও বেশ দেরি আছে। রেস্তোরাঁর এক নির্জন কোণে বসে শুধুমাত্র চা-টোস্টের অর্ডার দিয়ে পরাশর সমস্ত ব্যাপারটাই আমায় সবিস্তারে জানাল। বলতে আরম্ভ করার সময়েই সে প্রথম আমায় যা জিজ্ঞেস করেছিল, তাতে আমি সত্যি অবাক হয়েছি।
“সমস্ত ব্যাপারটার মূল রহস্য কী নিয়ে, পরাশর জিজ্ঞেস করেছিল প্রথমেই, তা কি তুমি সত্যি কিছুই বুঝতে পারোনি?”
অবাক ও একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে জবাব দিয়েছিলাম, “না, সত্যিই পারিনি। পারবার কি কোনও ‘ক্লু’ যাকে বলে হদিশ…আছে?”
“আছে বলেই তো মনে করি, পরাশর একটু হেসে বলেছিল, “গাড়িটা তোমায় আনতে গেল, সেটা ভাল করে লক্ষ করলেই বুঝতে পারতে না কি?”
“সেটা…মানে গাড়িটা ভাল করে লক্ষ করলে?” একটু হতভম্ব হয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর প্রায় নিজের গাল চাপড়ে বলে উঠেছি, “গাড়িটা…মানে গাড়ির বনেটের ফ্ল্যাগটার কথা বলছ? আরে ছি, ছি, সত্যি ওটার মধ্যেই যে সব মানে বোঝানো আছে সেইটেই আমি খেয়াল করিনি। লাল-সবুজ! তা হলে লাল-সবুজই সবকিছুর মূলে?”
“হ্যাঁ, তা-ই,” বলে পরাশর এ বার সমস্ত ব্যাপারটার যে বিবরণ শুনিয়েছে, সংক্ষেপে তাই জানাচ্ছি।
লাল-সবুজ বলতে গত পাঁচ বছর ধরে যাদের কীর্তিকলাপ নিয়ে সমস্ত দেশের লোক মশগুল, সেই খেলুড়ে-ক্লাবের ইউনিফর্ম বা জার্সির রং বোঝায়, তা বোধহয় আর বলতে হবে না।
এই লাল-সবুজ ছোপ-মারা দলের ভাগ্য নিয়ে মাতামাতির ভাল দিক যেমন আছে, তেমনি খারাপও। এক জাতের জুয়াড়ি-চক্র লাল-সবুজ দলের প্রত্যেকটি খেলা নিয়ে তো বটেই, সারা দেশের বড়-বড় সব ক’টি লিগ ও শিল্ডের মতো প্রতিযোগিতার সম্পূর্ণ ফলাফল নিয়েও জুয়ার বাজির ব্যবস্থা করে, আকাশ-ছোঁয়া লাভের লোভ দেখানো পুরস্কার ঘোষণা করে।
এ-সব জুয়াই অবশ্য গোপন, বে-আইনি ব্যাপার। কিন্তু অসাধু ধনকুবের আর তাদের সাঙ্গোপাঙ্গদের শয়তানি কৌশলে এ-পাপের ব্যবসা ডালপালা মেলে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এ-জুয়ার কারবারে সবচেয়ে হালে নাম হয়েছে লাল-সবুজের খেলার ফলাফল নিয়ে। লাল-সবুজ দল এবছরের টানা ক’টি প্রতিযোগিতায় এ-পর্যন্ত যত গোল করেছে, তা আগেকার রেকর্ডের সমান। আর একটি মাত্র গোল করলেই তারা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। গোল তাদের মাত্র একটা দরকার, অথচ খেলা বাকি আছে এখনও দুটো। সুতরাং তাদের রেকর্ড-ভাঙা গোল করা সম্বন্ধে কারও কোথাও কোনও সন্দেহ নেই। এ-রেকর্ড ভাঙা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার প্রধান কারণ হল, লাল-সবুজ ফ্ল্যাগ লাগানো সাদা অ্যামবাসাডরে চোয়ালে ব্যান্ডেজ বাঁধা মোহনলাল নামে যে ছোকরাটিকে খানিক আগে রেলের থ্রি-টিয়ার কামরায় ওপরের বাঙ্কে রেখে এসেছি, সে-ই।
মোহনলাল অবশ্য তার আসল নাম নয়। তার নাম আর কীর্তির কথা এখনকার ছেলে-বুড়ো কাউকে বলারও দরকার নিশ্চয়ই নেই। দু’পায়ে বল নিয়ে অসাধারণ কেরামতি করবার ক্ষমতার গুণে সে গত দু’বছরেই ভারতে তো বটেই, তার বাইরেও, নানা দেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। তাকে ইতিমধ্যে ‘ইন্দ-মারাদোনা’ অর্থাৎ ‘ভারতের মারাদোনা’ বলা হয়। এই মারাদোনা এ-পর্যন্ত প্রতি খেলায় গড়পড়তা নির্ঘাত দুটি করে গোল দিয়ে এসেছে। এবছরের বাজি ধরা খেলায় লাল-সবুজের মোক্ষম জয়ের জন্যে একটি মাত্র গোল আর দরকার। অথচ খেলা বাকি এখনও দুটি। এই দুটি খেলায় ইন্দ মারাদোনা আর-একটা গোলও দিতে পারবে না?
জুয়া খেলে লাভের লোভে যারা নিত্য নিজেদের সর্বনাশ করছে, সেরকম সাধারণ জুয়াড়িরা মোটা লাভ করবার নিশ্চিত আশায় একদিকে যেমন নাচছে, জুয়ার জগতের ঘুঘু মালিকরা তেমনি নিজেদের সর্বনাশ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে এক শেষ উপায়ের কথা ভেবেছে। লাল-সবুজের শেষ দুটি খেলায় ইন্দ-মারাদোনা খেলতে নামার সুযোগ পেলে, নেহাত তাকে খুন না করে ফেললে, একটা অন্তত গোল ঠিক দেবেই। জুয়ার জগতের শাহানশাহকে তা হলে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা লোকসান দিতে হবে। খুন-জখমের অনেক ঝামেলা, তা ছাড়া সে সর্বনাশ ঠেকাবার একমাত্র যা উপায়, তারই ব্যবস্থা তাই করছে জুয়া-রাজ্যের শাহানশাহ। ইন্দ মারাদোনাকে চুরি করবার ব্যবস্থা করেছে। শেষ খেলার দুটো দিন ইন্দ-মারাদোনাকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে পারলে খুন-টুন আর জখম-টখমের প্যাঁচে লাল-সবুজের গোল করা একেবারে বন্ধ রাখা অসম্ভব নয়। তা ছাড়া জুয়ার বাজিটা আছে ইন্দ-মারাদোনার গোল করার ওপর। সে-ই যদি মাঠে না নামে, তা হলে রেকর্ড ভাঙবার গোল অন্য কেউ দিলে তো গ্রাহ্য হবে না।
পরাশর বলল, “এইসব প্যাঁচ কষে লাল-সবুজ দলের মাথার মানিককে চুরি করবার যে মতলব জুয়াড়ি দল করছে, আগে থাকতেই নিজেরা ইন্দ মারাদোনাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আমরা তা ভেস্তে দিচ্ছি। আমাদের সব ব্যবস্থা পাকা হয়ে আছে। সারা রাত ওপরের বাঙ্কের সওয়ারির ওপর নজর রেখো। রিজার্ভ করা কামরা। ও কামরায় দু’রাত কাটিয়ে সেই হরিদ্বারে গিয়ে নামবার পর আর কোনও ভাবনা নেই। এই রাস্তাটুকু শুধু আমাদের ইন্দ মারা… থুড়ি এখানকার মোহনলালের ওপর আগাগোড়া নজর রেখো।”
পরাশরের কাছে সমস্ত বৃত্তান্ত জানবার পর আবার ট্রেনে নিজেদের কামরায় গিয়ে উঠেছি। আমাদের মোহনলাল তখন মাথার টুপির সঙ্গে গায়ের কোট-টাই ভাঁজ করে বালিশের মতো মাথায় দিয়ে তার বাঙ্কে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই রিজার্ভ করা কামরায় গোনাগুনতি যাত্রীর মধ্যে তার ওপর নজর রাখাটা সত্যিই এমন কিছু শক্ত হয়নি। শুধু যাওয়ার পথে বিহারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটা অসহ্য হয়ে উঠেছে প্রথম রাত্রে। রেলের আইনকানুন, আর যেখানে খাটুক, বিহারে খাটে না। এক্সপ্রেস ট্রেন বড়-বড় স্টেশনে ছাড়া থামে না। কিন্তু যেখানে থামে সেখানে প্যাসেঞ্জার গাড়ির অধম। পিলপিল করে বেপরোয়া যাত্রীরা রিজার্ভ করা কামরার ভেতরে ঢুকে প্রথমে আমাদের বার্থের ওপরেই অম্লানবদনে ঠেলেঠুলে জায়গা করে নিয়ে তারপর মেঝে পর্যন্ত দখল করে বসে যায়। ট্রেনের কোনও অফিসারকে বলার উপায় নেই, কারণ তারা তখন কামরায় তো নয়ই, এ-ট্রেনের কোথাও আছেন কি না সন্দেহ। এই সব জ্বালার মধ্যে আমাদের মোহনলালকে তার ওপরের বার্থ থেকে নামার উপক্রম করতে দেখে বেশ একটু অস্বস্তি বোধ করলাম। তবে অন্য দিকের ওপরের বাঙ্কে পরাশরকে শুয়ে-শুয়েই এ-দিকে চোখ রাখতে দেখে সে-অস্বস্তিটা কাটল।
আমাদের মোহনলাল বেচারাকে বেশ কষ্ট করেই ওপরের বার্থ থেকে নেমে কামরার মেঝে ও তার পাশের প্যাসেজময় বসে-থাকা যাত্রীদের ভেতর দিয়ে কোনও রকমে পথ করে এক প্রান্তের বাথরুমের দিকে যেতে দেখলাম। ট্রেনটা ঠিক কোন স্টেশনে থেমেছে বুঝতে পারিনি, তবে শেষ রাত্রে এ-দিকটায় বেশ ঠান্ডাই পড়েছে। আমাদের মোহনলাল নামবার সময় গায়ের খোট্টাই কোটটা পরে নেমে ভালই করেছে বুঝলাম।
কিন্তু বেচারার অত কষ্ট করে বাথরুম যাওয়া নিষ্ফল হওয়া খুব খারাপ লাগল। নীচের বার্থে প্যাসেজের দিকে মাথা করেই শুয়ে ছিলাম। সেখান থেকে বাথরুমে যাবার বাঁকটা পর্যন্ত বেশ স্পষ্টই দেখা যায়। বেশ খানিক বাদে যেরকম করুণ, কাতর ভাবে সেদিক থেকে ভিড়ের ভেতর দিয়ে পথ করে আসতে আসতে আমার দিকে চেয়ে হতাশার ভঙ্গি করল, তাতে বুঝলাম, ঢুকতে পেরে থাকুক বা না থাকুক, বাথরুমের অভিজ্ঞতাটা তার খুব প্রীতিকর হয়নি।
আমাদের মোহনলাল এলে তার বার্থে উঠে শোবার পর যতখানি সম্ভব সারারাত জেগেই কাটিয়েছি।
অন্তত একটা জলজ্যান্ত মানুষ চুরির ঘটনা আমার অজান্তে ঘটে যেতে পারে, এমন বেহুঁশ কখনও হইনি।
কিন্তু ভোর হওয়ার পর সেই ঘটনার কথা জানতে পারলাম। মোগলসরাই স্টেশনে তখন গাড়ি থেমেছে। সিট ছেড়ে উঠে জানলা দিয়ে চা-অলাকে ডাকব কি না ভাবছি, এমন সময় ওপর থেকে দুটো ঝুলন্ত পা নামতে দেখে আমাদের মোহনলাল নামছে বলে বুঝলাম।
কিন্তু পরমুহূর্তে ঝুলন্ত পায়ের পরে গোটা মানুষটা ওপর থেকে নীচে নামার পর একেবারে তাজ্জব হয়ে গেলাম।
মোহনলাল? কোথায় গেল মোহনলাল? এখন ওপর থেকে যে নামল, সে কে?
সন্দেহে বিস্ময়ে কেমন যেন দিশেহারা হয়ে অন্য দিকের ওপরের বাঙ্কে পরাশরের দিকে চাইলাম। সেও তার নিজের বাঙ্কে উঠে কেমন যেন গুম হয়ে লোকটির দিকে চেয়ে আছে।
কে এই লোকটি? কোথা থেকে এল? আমাদের মোহনলাল তা হলে কোথায়?
সেই কথাই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, তবে তার আগেই আমার সন্দিগ্ধ দৃষ্টির একাগ্রতাটা লক্ষ করে সে নিজে থেকেই বললে, ‘ক্যা হুয়া বাবুজি! কিছু কোথাও গড়বড় হল কি?”
‘না, না,” আমি কী বলব ঠিক করতে না পেরে একটু অপ্রস্তুত ভাবে বললাম, “আপনি…মানে আপনি কখন এ- কামরায় এলেন, আর মানে ওই বাঙ্কটায় জায়গা পেলেন কী করে?”
ভদ্রলোক আমার কথায় একটু কৌতুক বোধ করে বললেন, “কেমোন করিয়ে আবার। যেমোন করে খালি বার্থ লিতে হয়, তেমনি করে। পিছলি স্টিশনে গাড়িতে উঠলাম, এ কামরা দিয়ে যেতে যেতে এবার্থ খালি দেখলাম, আর উঠে পড়লাম।”
“মানে… মানে..” একটু উত্তেজিত ভাবেই এবার জিজ্ঞেস করলাম, “ও বার্থ আপনি খালি দেখলেন? ওখানে কেউ ছিল না?”
“ঝুটমুট গরম হচ্ছেন কেন বাবু!” লোকটি এ বার একটু অপ্রসন্ন সুরে বলল, “খালি না হলে আমি উখানে উঠি কী করে? আর উখানে কার থাকার কথা আপনি বলছেন? কে ছিল উখানে?”
বেশ গরম গলাতেই হয়তো এ-প্রশ্নের উত্তর দিতাম, কিন্তু পরাশর তখন ওপর থেকে নীচে নেমেছে। তার অত্যন্ত গম্ভীর মুখে কেমন যেন একটা গুম মেরে যাওয়া ভাব। সে-ই যেন পাথর হয়ে মুখ-চোখের সামান্য একটু ইশারায় আমায় থামবার কথা জানিয়ে তারপর ট্রেন থেকে নামায় তৎপর হয়ে ওঠায় আমি বাধ্য হয়ে চুপ করে গেলাম।
নেমেছিলাম মোগলসরাই স্টেশনে। স্টেশনে নেমে এক ফিরতি গাড়িতে কলকাতায় আসার আগে পরাশর লাল-সবুজের ক্লাব-অফিসে একটা দুকথায় টেলিগ্রাম করে দিল। ‘ট্রাম্প কার্ড স্টোলেন’। অর্থাৎ তুরুপের তাস চুরি গেছে।
এর পর খবরের কাগজে ইন্দ-মারাদোনার হঠাৎ নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে বেশ কিছু হইচই অবশ্য হয়েছিল। কিন্তু রহস্যের কোনও হদিশ কোথাও মেলেনি।
লাল-সবুজ দলের দিক থেকে চেষ্টার কোনও ত্রুটি অবশ্য ছিল না। আমাদের ব্যর্থ অভিযান থেকে ফেরার দুদিন পরে পরাশরের বাসায় গিয়ে জেনেছিলাম, সে কী একটা বিশেষ তল্লাশিতে আগের দিনই কলকাতা ছেড়ে গেছে।
কলকাতা ছেড়ে গেছে কোথায়, জিজ্ঞেস করে যা শুনলাম তাতে একেবারে অবাক। সে গেছে নাকি ডিব্রুগড়ে।
গেছে ডিব্রুগড়ে! আমাদের মোহর হারাল পশ্চিমের উঠোনে, আর আমরা তা খুঁজতে যাচ্ছি উত্তরের চিলেকোঠার ছাদে!
খোঁজা নয়, হয়তো নিজের কাজে হার মানবার দুঃখ ভুলবার জন্যে এ একরকম আত্ম-নির্বাসন বলেই মনে হয়েছিল আমার।
এর পর পরাশরের আর কোনও খবর পাইনি। চেষ্টাও করিনি নেবার।
তারপর সেই ঐতিহাসিক দিন এল।
লাল-সবুজের প্রথম বড় প্রতিযোগিতার খেলা চেপে রাখার চেষ্টা সত্ত্বেও ইন্দ-মারাদোনার নিখোঁজ হওয়ার খবরটা তখন খেলার জগতে কোথাও কারও জানতে বাকি নেই।
সল্টলেকের স্টেডিয়াম প্রায় খালিই থাকবে মনে হচ্ছে। খেলাই যাদের প্রধান আকর্ষণ, ইন্দ মারাদোনার খেলবার আশা নেই জেনে তারা মাঠের ধারেকাছে ঘেঁষেনি।
লাল-সবুজ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেবে বলে অনেক আশায় অনেকে নিজেদের সাধ্যের অতিরিক্ত বাজি ধরেছিল। কোনও আশাই আর নেই জেনে, তাদের অনেকেই মাঠের ধারেকাছে ঘেঁষেনি। যারা এসেছে, তারাও যেন শোকসভায় এসেছে, এমন তাদের মুখের চেহারা।
নির্ধারিত খেলা তবু যথাসময়ে আরম্ভ হবার ব্যবস্থা হল। বড় খেলার গোড়ায় যা-যা হয়, সবই হল ঠিকঠিক। রেফারি-লাইন্সম্যানরা এলেন। নামল বিপক্ষ দল। এবার লাল-সবুজের পালা। তারা একে-একে নামছে। যেন মাঠের মাঝখান পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, এমনি তাদের ভেঙেপড়া অবস্থা আর চেহারা। এক, দুই, তিন করে নয়… দশ…।
তারপর ও কী, আকাশ-ফাটা উল্লাসের ধ্বনি সমস্ত মাঠময়।
কেন এই উল্লাসধ্বনি! কেন আর, সবশেষে যে নামছে সে আর কেউ নয়, স্বয়ং এক ও অদ্বিতীয় সেই ইন্দ-মারাদোনা। তাকে মাঠ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেল, আর কেউ নয়, পরাশর।
হ্যাঁ, পরাশর সেবার তার সত্যিকার বাহাদুরি দেখিয়েছিল ইন্দ-মারাদোনাকে চোরেদের হাত থেকে বাঁচিয়ে।
কেমন করে বাঁচিয়েছিল? বাঁচিয়েছিল নিজেই তাকে চুরি করার ব্যবস্থা করে।
বড় বাটপাড়কে হারাবার জন্যেই তাকে নিজের জিনিস চুরি করে রাখতে হয়েছে আগে থেকে।
চুরি করল কখন? কী করে?
চুরি করেছে বিহারের বড় স্টেশনে গাড়ি থামার পরে মোহনলাল-সাজা আসল ইন্দ-মারাদোনার বাথরুম যাবার ছলে খালি চোখের আড়াল হয়ে ট্রেন থেকে নেমে যাবার কৌশলে। সে নেমে আবার ব্যবস্থামতো কলকাতায় ফিরে গেছে, আর তার জায়গায় খোট্টাই কোট, টুপি আর মুখের ব্যান্ডেজ সমেত ইন্দ-মারাদোনার মাপেরই আগে থাকতে তৈরি করা আর-একজন ভেতরে ঢুকে খালি বার্থটায় যখন উঠে শুয়েছে, তখন কেউ কিছু সন্দেহই করতে পারেনি।
এর পর ট্রেন চলবার সময়েই জাল মোহনলাল তার মুখের ব্যান্ডেজ আর মাথার টুপি ইত্যাদি খুলে অন্য মানুষ হয়ে গেছে, আর মোগলসরাই স্টেশনে তাকে দেখে যেন দুঃখে-লজ্জায় পাথর হবার ভান করে পরাশর স্টেশনে নেমে ক্লাব-অফিসে মিথ্যে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে আবার কলকাতায় ফিরে এসেছে।
তার নির্দেশমতো এর আগেই মোগলসরাই স্টেশন থেকে আসল ইন্দ-মারাদোনা কলকাতা আর তারপর ডিব্রুগড়ে আত্মগোপন করে থেকেছে। পরাশর নিজেও তারপর যেন হার মানার দুঃখে সেখানে গিয়ে ওকে পাহারা দিয়ে ঠিক দিনে ঠিক সময়ে খেলার মাঠে এনে হাজির করেছে।
হ্যাঁ, তারপর খেলার কী হয়েছে?
হয়েছে যা, তা সোনার হরফে লিখে রাখার মতো।
ইন্দ-মারাদোনা, তাকে চুরি যারা করতে চেয়েছিল, তাদের শিক্ষা দিতে, একটা-দুটো নয়, পরপর তিনটে গোল দিয়ে হ্যাটট্রিক করে সব রেকর্ড ভেঙে গুঁড়ো করে দিয়েছে। আর জুয়ার রাজ্যের শাহানশাহেরা রীতিমতো একটা ঘাড় মটকানো রদ্দা খেয়ে কিছু দিনের জন্যে অন্তত যে-যার গর্তে গিয়ে লুকিয়েছে।
১২ নভেম্বর ১৯৮৬
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন