রাত তখন এগারোটা – বিমল মিত্র

পৌলোমী সেনগুপ্ত

রাত তখন এগারোটা – বিমল মিত্র

ঘটনাটি ঘটল রাত এগারোটার সময়।

কলকাতা থেকে দেশে যাচ্ছি। দেশ বলতে যেখানে আমি জন্মেছি। কলকাতা থেকে ট্রেনে যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে।

সকাল পাঁচটায় একটা ট্রেন আছে। তাতে গেলে মাজদিয়া রেল স্টেশনে সকাল আটটা সাড়ে আটটা বেজে যায়। স্টেশনে নেমে আরও পাঁচ ক্রোশ হাঁটা। খুব তাড়াতাড়ি হাঁটলেও তাতে সময় লাগে আরও দু’ ঘণ্টা।

তারপর আর একটা ট্রেন আছে। সেটা ছাড়ে সকাল ন’টায়। তার পরে দুপুর দুটোয়। তারপর সন্ধে ছ’টায়।

সন্ধে ছ’টার ট্রেনে গেলে রাত ন’টায় পৌঁছতে পারা যায় মাজদিয়া স্টেশনে। কিন্তু তাতে গেলে বাড়ি পৌঁছতে রাত এগারোটা বেজে যায় বলে সাধারণত সে-ট্রেনে যাই না।

তখন আমি কলকাতার একটা মেসে থেকে পড়াশোনা করি। প্রত্যেক শনিবার দিন দুপুর দুটোর ট্রেনে দেশে যাই। তাতে সুবিধে খুব। ট্রেনে ভিড়ও কম থাকে। আর সন্ধের আগেই বাড়িতে পৌঁছনো যায়।

কিন্তু সব-সময়ে সে-ট্রেনে যাওয়া সুবিধে হয় না। লেখাপড়া ছাড়া ফুটবল খেলার নেশা আছে। রবিবার দিনটায় দেশে না কাটিয়ে কলকাতায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কাটাতে বেশি ভাল লাগে।

কোনও শনিবার বাড়িতে না গেলে বাবার চিঠি আসে। লেখেন—‘‘তুমি গত শনিবারে বাড়ি আসো নাই কেন? আমরা তোমার পথ চাহিয়া বসিয়া ছিলাম। তোমার শরীর খারাপ হইল কি না ভাবিয়া খুবই চিন্তিত আছি। পত্রপাঠ উত্তর দিবে…” ইত্যাদি…

আমি বাবার একই সন্তান। বাবার বয়স হয়েছে। আমাকে নিয়েই তাঁর যত ভাবনা-চিন্তা-স্বপ্ন সবকিছু। আমি বড় হব, আমি মানুষ হব, আমি বংশের মুখ উজ্জ্বল করব।

কিন্তু তত দিনে আমারও একটা নিজস্ব জগৎ গড়ে উঠেছে। দেশের চেয়ে কলকাতার আকর্ষণই আমার কাছে বেশি। আমার জন্যে বাবা মোটা হাত-খরচ পাঠান। সেই টাকা দিয়ে আমি ময়দানে ফুটবল খেলা দেখি, ক্রিকেট খেলা দেখি, আবার কখনও কখনও বা সিনেমা দেখতে যাই। কলকাতার জীবন গ্রামের জীবনের মতো একঘেয়ে নয়। সেখানে চারদিকে এঁদো পানা-পড়া পুকুর আর কেবল খেত-খামার আর বন-জঙ্গল। আমাদের মতো যাদের অবস্থা ভাল নয়, তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে কেবল বারোয়ারি-তলায় বটগাছের ছায়ায় হারু মুদির দোকানের মাচায় বসে আড্ডা মারে। তাস খেলে। আর আমি গেলে তারা আমার কাছে কলকাতার গল্প শোনে। কারওর কোনও কাজ নেই। বাড়ির অবস্থা খারাপ বলে তারা কলকাতায় আসতে পারে না। সে-পয়সা তাদের নেই। তাই আমাকে তারা একটু একটু হিংসেও করে। আমার চাল-চলন, জামা-প্যান্ট দেখে তারা অবাক হয়ে যায়।

আমার জুতো, আমার চুল-ছাঁটা, আমার সাবান-মাখা দেখে তাদের তাক লেগে যায়। কারণ আমাদের গ্রাম এমন এক গ্রাম যেখানে শহরের কোনও সভ্যতা ঢোকবার সুযোগ পায়নি।

আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতেন নসুকাকা। আসল নাম বোধহয় ছিল নৃসিংহ ভট্টাচার্য। বাবা তাঁকে নসু বলে ডাকতেন। তিনি গ্রামে গ্রামে যজমানদের বাড়িতে গিয়ে পুজো করে বেড়াতেন। বড় ভাল লোক। আমি দেশে গেলেই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। বলতেন, “কীরকম লেখাপড়া হচ্ছে বাবা? ভাল তো?”

আমি তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতাম। বলতাম, “হ্যাঁ।”

তিনি বলতেন, “হ্যাঁ, খুব মন দিয়ে লেখাপড়া করবে বাবা। এখন দিন-কাল খুব খারাপ আর কলকাতা শহরে যে-রকম গাড়ি-ঘোড়া ট্রাম-বাস শুনেছি, খুব সাবধানে চলা-ফেরা করবে।”

নসুকাকা আমাদের দেশের নামকরা পুরুতমশাই। তিনি না হলে কারওরই কোনও পুজো-আচ্চা হত না। কেউ হাতেখড়ি দেবে তাতেও যেমন তাঁর ডাক পড়ত, আবার তেমনি কারও বাড়িতে ছেলের অন্নপ্রাশন হবে তাতেও তাঁকে চাই। তারপর আছে বারোয়ারিতলা, দুর্গাপুজো, কালীপুজো থেকে আরম্ভ করে তিন ক্রোশ দূরে জমিদারবাবুদের বাড়িতে যত উৎসব, যত বিয়ে, ব্ৰত-উদ্‌যাপন, সবেতে তাঁর ডাক পড়ত।

তা এই আবহাওয়াতেই আমি মানুষ কিন্তু এই আবহাওয়াতে মানুষ হয়েও যে ঘটনাটা ঘটল তার কথাই বলি।

কলকাতায় তখন আমার স্কুলের পরীক্ষা চলছিল। তিন সপ্তাহ দেশে যেতে পারিনি। বাবাকে সে-কথা লিখে দিয়েছিলাম যে, আমি তিন সপ্তাহের জন্যে দেশে যেতে পারব না।

পরীক্ষা যেদিন শেষ হল সেদিন শনিবার। মেসে এসে ভাবলাম দুটোর ট্রেন ধরব। কিন্তু কয়েক দিন ধরে রাত জেগে পড়বার পর বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঘড়িতে তখন সাড়ে বারোটা। ভাবলাম আধঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়া যাক।

কিন্তু যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখলাম দেয়াল-ঘড়িতে বেলা সাড়ে তিনটে। আমার বন্ধু, যে আমার পাশের বিছানায় শুত, সে-ও দেখলাম অঘোরে ঘুমোচ্ছে।

মনে হল, সর্বনাশ! দুটোর গাড়ি তো কখন ছেড়ে দিয়েছে। এর পরে তো সেই সন্ধে ছ’টার আগে দেশে যাবার আর কোনও গাড়ি নেই! সে-গাড়িতে গেলে দেশের বাড়িতে পৌঁছতে তো সেই রাত এগারোটা বেজে যাবে!

কিন্তু শেয়ালদা স্টেশন থেকে গাড়ি ছাড়তেই সেদিন কেন জানি না আধঘণ্টা দেরি হয়ে গেল। ভাবলাম ট্রেনটা হয়তো একটু দেরি করেই মাজদিয়াতে পৌঁছবে। তার মানে যখন পাঁচ ক্রোশ হেঁটে বাড়ি পৌঁছব তখন রাত বারোটা বেজে যাবে।

বাবা হয়তো বকাবকি শুরু করে দেবেন। বলবেন—দুপুর দুটোর ট্রেনে আসতে পারলে না?

কিন্তু না, ট্রেনটা ঠিক সময়েই মাজদিয়া স্টেশনে গিয়ে পৌঁছল।

আমি নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাম। এদিককাব প্লাটফর্ম ছেড়ে উল্টোদিকের প্লাটফর্মে পৌছে টিকিট দেখিয়ে গেট পার হলাম। বেশি যাত্রী ছিল না ট্রেনে। গেটের বাইবেই বাজার। অত রাত বলেই বাজারে লোকজনের ভিড় বেশ পাতলা। তাড়াতাড়ি বাজার ছাড়িয়ে বড় রাস্তায় গিয়ে পৌঁছলাম। ভেবেছিলাম একটা সাইকেল রিকশা ভাড়া করে বাড়ি পৌঁছব।

কিন্তু কোনও রিকশাওয়ালাই অত দূরে যেতে চাইলে না। বেশি টাকার লোভ দেখিয়েও কাউকে রাজি করাতে পারলাম না।

সবাই-ই এক কথা বললে—অত দূরে সওয়ারি নিয়ে গেলে ফিরে আসতে রাত একটা বেজে যাবে।

আমি বললাম—আমি তোমাদের ডবল ভাড়া দেব। তবু কেউ যেতে রাজি হল না।

অগত্যা হাঁটতে শুরু করলাম। হাতে অনেক জিনিস ছিল আমার। বাবা কাশির ওষুধ কিনে নিতে লিখেছিলেন। শেয়ালদা স্টেশনে পৌঁছবার আগে ওষুধের দোকান থেকে তা কিনে নিয়েছিলাম। মা’র জন্যে নিয়ে গিয়েছিলাম হাজার মলম। মা’র পায়ে হাজা হয়েছিল। তারপর গামছা কিনেছিলাম একটা বাবার জন্যে। আরও অনেক খুচরো-খুচরো জিনিস কিনেছিলাম—যা যা বাবা কলকাতা থেকে কিনে নিয়ে যেতে বলেছিলেন।

রাস্তা দিয়ে একলা একলা হেঁটে চলেছি। চারিদিকে নিশুতি অন্ধকার। রাতে গ্রামের লোকজন সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ ভোর ভোর উঠতে হয় সকলকে। বড় বড় গাছগুলোকে দূর থেকে অন্ধকারের পাহাড় বলে মনে হচ্ছে।

খানিক দূর গিয়েই পিচের রাস্তা শেষ হয়ে গেল। আকাশে যে চাদটা ছিল তাও ডুবে গেল। তখন শুধু তারাগুলো জ্বলছে মাথার ওপর। মাঝে মাঝে শেয়ালের হুক্কা-হুয়া কানে আসছে। দু’-একটা কুকুর আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠল। কিন্তু আমাকে চিনতে পেরে আবার চুপ করে গেল। তবু আমার কেমন যেন ভয় করতে লাগল। কিন্তু কীসের যে ভয় তা বলতে পারব না।

একটা রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালাম। চারদিকে কয়েকটা বড় বড় বটগাছ ডালপালা ছড়িয়ে জায়গাটিকে ঢেকে রেখেছে। শনি-মঙ্গলবার ওই জায়গাটায় হাট বসে। হাট বেলাবেলি শেষ হয়ে গেছে। চারদিকে দু’চারটে ছোটখাটো দোকান। তারাও দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে তখন যে-যার বাড়ি চলে গেছে।

বহু দিন আগে ওই বটগাছের ডালে একজন মানুষ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। সে ছোটবেলাকার ঘটনা। কিন্তু তখন থেকেই জায়গাটায় এসে দাড়ালেই দিনের বেলাতেও কেমন গা ছমছম করত। আর তখন তো রাত সাড়ে দশটা বেজে গেছে।

মনে পড়ল, বাবা-মা বোধহয় এতক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে রাত হয়ে গেল। তাঁরা ভাবছেন আমি আর আসব না। মা আমার জন্যে ভাত রান্না করে বসে ছিল।

বাবা বলছেন—আর কেন বসে আছ, খোকা আজকে বোধহয় এল না, তুমি খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ো।

মাও বোধহয় তখন খেয়ে নিয়েছে। তারপর আমার কথা ভাবতে ভাবতেই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই হেঁটে চলেছি। রাত তখন এগারোটা বেজে গেছে। রাস্তাটা গিয়ে নলগাড়ির নাবালে গিয়ে মিশেছে। আগে এখানে একটা নদী ছিল। আগে যখন নদীতে জল ছিল তখন খেয়ানৌকোয় এপার-ওপার করতে হত। কিন্তু এখন নদীটা শুকিয়ে গিয়েছে। সেখানে ঢালু জমিতে এখন চাষ-বাস হয়। তারই এক পাশ দিয়ে গোরুর গাড়ি যাবার রাস্তা হয়েছে। বর্ষার পর গরম পড়াতে রাস্তায় আবার ধুলো জমেছে। এখানকার লোক তাই ও-জায়গাটার নাম দিয়েছে ‘নলগাড়ির নাবাল’।

আমি ঢালু রাস্তায় নামতে লাগলাম। তারপর সামনের দিকে নজর পড়তেই যা দেখলাম তাতে আমার শরীরের রক্ত হিম হয়ে এল।

দেখলাম ওপারের রাস্তা দিয়ে একটা দাড়িওয়ালা মূর্তি ঢালু রাস্তা দিয়ে আমার দিকে নেমে আসছে। রাস্তায় তার পা নেই, শুধু হাওয়ায় ভাসতে ভাসতেই এগিয়ে আসছে আমার দিকে।

আমি আর এগোলাম না। এগোতে ভয় করল। ও কি তবে সেই লোকটার মূর্তি যে একদিন বটগাছে গলায় দড়ি দিয়ে মরেছিল? তখন কত লোকের মুখে শুনতে পেতুম যে, সে নাকি ওই অঞ্চলে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়ায়! কিন্তু আমি নিজের চোখে কখনও তা দেখিনি।

হঠাৎ আমাকে লক্ষ করে মূর্তিটা কথা বলে উঠল।

বললে, “কে ওখানে?”

আমি কী জবাব দেব বুঝতে পারলাম না। শুধু একটু থেমে বললাম, “আমি।”

“আমি কে?”

বলতে বলতে মূর্তিটা আমার দিকে আরও এগিয়ে আসতে লাগল।

সামনে মুখের কাছে এসে বললে, “কে? কে তুমি?”

আমি ভয়ে শিউরে উঠেছি তখন। কিছুই জবাব দিতে পারলাম না সেই মুহূর্তে।

মূর্তিটা জিজ্ঞেস করলে, “ও, তুমি! বিমল! ধীরেশদার ছেলে?”

আমার তখন যেন জ্ঞান ফিরে এল। চিনতে পারলাম মূর্তিটাকে। আমার নসুকাকা।

বললাম, “নসুকাকা, আপনি?”

নসুকাকা বললেন, “হ্যাঁ, আমি। তা তোমার আসতে এত দেরি হল যে?”

বললাম, “দুপুর দুটোর ট্রেনটা ধরতে পারিনি, ঘুমিয়ে পড়েছিলুম, তাই সন্ধে ছ’টার ট্রেন ধরে আসছি।”

নসুকাকা বললেন, “তা, আজকে এই অমাবস্যার রাতে না এলেই পারতে! এই রাতবিরেতে আসা কি ভাল? আমাদের গাঁয়ে যে পরশুদিন বাঘ বেরিয়েছিল। তারপর ক’দিন আগে বাবুদের বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল—।”

বললাম, “তা, আপনি এত রাত্তিরে কোথায় যাচ্ছেন?”

নসুকাকা বললেন, “জমিদারবাবুর স্ত্রী হঠাৎ ডেকে পাঠিয়েছেন, তাঁর বড় ছেলের খুব অসুখ, আমাকে সেখানে গিয়ে শান্তি-সস্তেন করতে হবে। যত রাতই হোক আমাকে যেতেই হবে। তার বড় ছেলের এখন-যায় তখন-যায় অবস্থা। তাই খেয়ে নিয়েই দৌড়চ্ছি। আমাকে যে ডাকতে এসেছিল তাকে বলেছি, তুমি এগিয়ে যাও, আমি খেয়ে উঠেই যাচ্ছি, তোমার সঙ্গে রাস্তায় কোনও লোকের দেখা হয়নি?”

আমি বললাম, “কই, না তো—”

নসুকাকা বললেন, “তা রাত্তিরবেলা হয়তো ঠাহর হয়নি তোমার। তা, তুমি বাবা একলা এত রাত্তিরে এসে ভাল করোনি। চলো, আমি তোমাকে গাঁ পর্যন্ত পৌঁছে দিই।”

বললাম, “আপনি আবার কেন এত কষ্ট করতে যাবেন। আর আপনারও তো তাড়াতাড়ি আছে।”

নসুকাকা বললেন, “সে কী কথা! এই এত রাতে তোমাকে কি এই অবস্থায় একলা ছেড়ে দিতে পারি? শুনলে ধীরেশদা যে আমার ওপর রাগ করবে। বলবে, তুমি খোকাকে ওই অবস্থায় একলা ফেলে কী করে চলে গেলে।”

কী আর করা যাবে। এদিকে জমিদারবাবুর বাড়িতে তার বড় ছেলের এখন-যায় তখন-যায় অবস্থা, আর তিনি কিনা নিজে আমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দিতে চান?

রাস্তায় যেতে যেতে নসুকাকা বলতে লাগলেন, “তুমি তিন সপ্তাহ বাড়ি আসনি, সেজন্যে ধীরেশদা খুব ভাবছিলেন। কলকাতায় থাকো তুমি, তোমার বয়স হয়েছে। তোমার যত পড়াশোনাই থাক, হপ্তায় একদিনের জন্যে বাবা-মাকে দেখতে আসতে পার না? তুমি যখন বড় হবে, আর নিজে বাবা হবে, তখন বুঝবে ছেলেকে দেখতে না পেলে বাপের মনে কী কষ্ট হয়।”

আমি নসুকাকার কথা শুনে কোনও জবাব দিতে পারলাম না, চুপ করে নসুকাকার সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলাম। তারপর যখন বাড়ির কাছাকাছি এসেছি তখন নসুকাকা বললেন, “ওই দেখো, তোমাদের বাড়ি, এবার আর কোনও ভয় নেই, আমি চলি, আমার খুব তাড়া আছে।”

বলে তিনি চলে গেলেন।

আমি আমাদের বাড়ির সদর দরজায় কড়া নেড়ে ডাকতে লাগলাম, “বাবা বাবা, বাবা।”

বাবা আমার ডাক শুনেই ধড়ফড় করে জেগে উঠেছেন। মা-ও জেগে উঠেছেন।

তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে আমাকে দেখে বললেন, “খোকা, তুমি এসে গেছ? কোন ট্রেনে এলে? দুপুরের ট্রেনে আসতে পারলে না?”

বললাম, “দুপুরবেলা পরীক্ষা দিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলুম, তাই—”

বাবা বললেন, “তা বলে সন্ধের ট্রেনে আসতে হয়? জানো বাড়ি পৌঁছতে রাত এগারোটা বেজে যাবে। তা ছাড়া গায়ে পরশুদিন বাঘ বেরিয়েছিল, তা জানো? ক’দিন আগে বাবুদের বাড়ি ডাকাত পড়েছিল—”।

আমি বললাম, “আমি তো তা জানতুম না। রাস্তায় দেখা হয়ে গেল নসুকাকার সঙ্গে, তিনিই আমাকে নিজে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেলেন।”

“নসু? নসুকাকা?”

বললাম, “হ্যাঁ, তার সঙ্গে নলগাড়ির নাবালে দেখা হয়ে গেল। তিনি জমিদারবাবুদের বাড়ি যাচ্ছিলেন, তাদের বড় ছেলে মরো মরো, তাই তিনি শান্তি-সস্তেন করতে সেখানে যাচ্ছিলেন।”

বাবা আমার দিকে হতবাকের মতো চেয়ে রইলেন।

মা-ও অবাক।

বাবা বললেন, “তুমি ঠিক দেখেছ? তোমার নসুকাকা? তিনি তোমার সঙ্গে কথা বলেছেন? তুমি কীসব আবোল-তাবোল বকছ?”

আমি বললাম, “বা রে, আমি ভুল দেখব কেন? আমি নসুকাকাকে চিনতে পারব না?”

বাবা বললন, “কিন্তু তোমার নসুকাকা যে পরশুদিন মারা গিয়েছেন, আমরা যে নবদ্বীপে গিয়ে তার সৎকার করে এলুম—”

১৮ জুলাই ১৯৭৯

সকল অধ্যায়

১. ভারত যুদ্ধে পিঁপড়ে – প্রেমেন্দ্র মিত্র
২. বিড়ালের চোখ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
৩. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ – শিবরাম চক্রবর্তী
৪. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ‘তেনা-রা’ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৮. লালটেম – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৯. অশরীরী – লীলা মজুমদার
১০. রাজপুত্তুরের অসুখ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১. ভূতেরা বড় মিথ্যুক – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১২. রুকু আর সুকু – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৩. রাত তখন এগারোটা – বিমল মিত্র
১৪. ম্যাজিশিয়ান – বিমল কর
১৫. ঘণ্টাকর্ণের কান গেল – মনোজ বসু
১৬. খুনি – সমরেশ মজুমদার
১৭. বনকুঠির রহস্য – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
১৮. একদম রূপকথা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৯. তারিণীখুড়ো ও ডুমনিগড়ের মানুষখেকো – সত্যজিৎ রায়
২০. অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য – সত্যজিৎ রায়
২১. দেবতার ভর – সুকুমার সেন
২২. মজারুমামা – আশাপূর্ণা দেবী
২৩. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
২৪. গঙ্গারামের কপাল – সত্যজিৎ রায়
২৫. গোরক্ষনাথবাবুর নোটবুক – সমরেশ বসু
২৬. ভুনিকাকার চৌরশতম্‌ – বিমল কর
২৭. অনুকূল – সত্যজিৎ রায়
২৮. ক্যাপ্টেন – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
২৯. তুরুপের তাস চুরি – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩০. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩১. রুপোর গাছ – বাণী বসু
৩২. বনঝাউয়ার রহস্য – ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য
৩৩. জ্বরের ঘোরে শোনা – সমরেশ বসু
৩৪. একটি লাল লঙ্কা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩৫. টিকটিকি অতীন্দ্রিয় শক্তি ও বেদান্ত বর্ধন -আশাপূর্ণা দেবী
৩৬. নদুস্কোপ – রূপক সাহা
৩৭. আতাপুরের দৈত্য – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৮. নিখোঁজ চারু – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৯. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪০. কপালের নাম গোপাল – আশাপূর্ণা দেবী
৪১. শিমুলতলার মাধবী লজ – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪২. কানকাটা বাঘ – শৈলেন ঘোষ
৪৩. হিংসুটে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৪. হরিণ-শিকারির বাড়ি – হর্ষ দত্ত
৪৫. অর্জুন হতভম্ব – সমরেশ মজুমদার
৪৬. কেউ কি এসেছিলেন – বিমল কর
৪৭. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৮. মজাদার এক ফুটবল ম্যাচ আর দানাপুরি – বিমল কর
৪৯. চারুহাসিনীর দেওয়াল-সিন্দুক – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. বন্ধু – তিলোত্তমা মজুমদার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন