কেউ কি এসেছিলেন – বিমল কর

পৌলোমী সেনগুপ্ত

রামতনুর বৈঠকখানায় বসেই গল্পগুজব হচ্ছিল। আমরা তিন-চারজন বুড়ো প্রায় রোজই সন্ধেবেলায় রামতনুর বৈঠকখানায় হাজির থাকি। নানান রকম কথাবার্তা হয়। সংসারের কথা, সুখদুঃখের কথা, এখনকার দিনকালের কথা। চা চুরুট, পান খেতে খেতে গল্পও হয় হরেক রকম।

সেদিন তারকবাবু কথায় কথায় বললেন, ‘খবরের কাগজে একটা অদ্ভুত খবর বেরিয়েছে, আমরা খেয়াল করে দেখেছি কি?’ বলেই উনি সেই খবরের বর্ণনা শুরু করলেন।

খুব একটা অবাক হওয়ার মতন খবর কিন্তু সেটা নয়। কলকাতায় শোভাবাজারে আদ্যিকালের ভাঙাচোরা একটা বিরাট বাড়ি হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার পর—সেই ইট-কাঠের স্তূপ যখন পরিষ্কার হচ্ছিল তখন একটা জুড়িগাড়ির দুই ভাঙা চাকা পাওয়া যায় আবর্জনার মধ্যে। চাকা নিয়ে কেউ তখন মাথা ঘামায়নি। ঘামাবার কথাও নয়। কিন্তু দিন দুই পর থেকে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটতে লাগল। দিনমজুরের দল—যারা মাটি খুঁড়ছিল, ইট কাঠ আলাদা করে সরিয়ে রাখছিল—তারা অবাক হয়ে দেখল, সরিয়ে রাখা ভাঙা চাকা দুটো আবার যথারীতি আবর্জনার মধ্যে কেউ ফেলে দিয়েছে। কে ফেলেছে, কেন ফেলেছে—সে-রহস্যের আর কিনারা করা যাচ্ছে না। পাড়ার লোকের ধারণা, এককালে এই বসাকবাড়ির ছোটবাবু ছিলেন— কলকাতার সেরা জুড়িদার। তাঁর চার জোড়া বাহারি জুড়িগাড়ি আর গুটি পাঁচ-ছয় পয়লা নম্বরের ঘোড়া ছিল। ছোটবাবুর নেশা বলতে ওই গাড়ি আর ঘোড়া। মারাও যান গাড়ি হাঁকাবার সময়, জুড়ি উলটে।

তারকবাবুর বর্ণনা শুনতে শুনতে সদানন্দ বললেন, ‘তুমি কি বলতে চাও, চাকা দুটো ভুতুড়ে? না, বসাকবাড়ির ছোটবাবু এখনও ভূত হয়ে সে-বাড়িতে অধিষ্ঠান করছেন?’

সদানন্দর বলার ভঙ্গিটা ছিল ঠাট্টার।

তারকবাবু বললেন, ‘তা আমি জানি না। কাগজে যা ছেপেছে, বললাম।’

কাগজের খবরটা নিয়ে আমরা হালকাভাবে কথাবার্তা শুরু করলাম। কথায় কথা বাড়ে। হালকা কথাও গম্ভীর হয়ে যায় অনেক সময়। আমরাও বোধহয় খানিকটা গম্ভীর হয়ে উঠলাম।

রামতনু বরাবরই কথা কম বলে, আমাদের কথা শোনে আর ছোট ছোট মন্তব্য করে। ও আমার ছেলেবেলার বন্ধু। ওর স্বভাব জানি। কথা কম বললেও বাজে কথা বলে না। আবার হাসিতামাশা করলেও কাউকে লজ্জায় ফেলে না।

সেই রামতনু বলল, ‘সদানন্দবাবু, জগৎটা বেশ বড়, আর সে-তুলনায় আমরা অতি ছোট। জগতে কত কী হয়, তার খবর কি আমরা রাখি! না, রাখতে পারি! খবরের কাগজে মাঝে মাঝেই কত বিচিত্র খবর বেরোয়। আপনি, আমি তা বিশ্বাস করলেই বা কী, না করলেই বা কী! বসাকবাড়ির ছোটবাবু, ঘোড়ার গাড়ির চাকার কথা এখন বাদ দিন; আমার জীবনে আমি একটা ঘটনা ঘটতে দেখেছি—যার কোনও মানে আমি বুঝিনি, কারণও খুঁজে পাইনি। যদি শুনতে চান—বলতে পারি।’

শোনার আগ্রহ সকলেরই।

গল্প শোনার পক্ষে সময়টাও এখন ভাল। কার্তিক মাসের শেষ। ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। এ সময় সচরাচর মেঘ-বাদলার আবহাওয়া হয় দু’-চারদিনের জন্যে। বাদলা না হোক—দিন দুই মেঘলা ভাব চলছিল। বাইরে অন্ধকার। বাতাসের দমকাও ছিল। দেওয়াল ঘড়িতে সবে সাতটা বাজল।

আমি বললাম, ‘সে কী, তোমার জীবনে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে গেল। আর আমি জানি না! বলছ কী?’

রামতনু বলল, ‘না, জানো না। আমি কাউকেই বলিনি। কেননা, আমি নিজেই বুঝতে পারি না, সত্যি ঘটনাটা ঘটেছিল, না পুরোটাই আমার মনের ভুল! আজও আমি বলতে পারব না, ঘটনাটা সত্যি, না মিথ্যে?’

‘ঠিক আছে। ঘটনাটা বলো—!’

রামতনু সামান্য অপেক্ষা করে বলল, ‘আমার জীবনটা তো রেলে চাকরি করেই কেটে গিয়েছে, তোমরা সবাই জানো। বড় কিছু হওয়ার ক্ষমতা আমার ছিল না। হতেও পারিনি।’

রামতনুর কথার মধ্যে অসত্য বিশেষ ছিল না, তবে বিনয়ও ছিল। সে যে কিছুই হয়নি, তাও নয়। কম বয়েসে সে রেলের চাকরিতে ঢুকেছিল সামান্য এ এস এম হয়ে। কিন্তু ও যখন চাকরি থেকে অবসর নিল তখন আর সামান্য এ এস এম নয়, বড় স্টেশনের মাস্টারমশাই।

রামতনু বলল, ‘যখনকার কথা বলছি তখন আমি ছোকরা। বেণুডিহি বলে একটা ছোট্ট স্টেশনে পোস্টিং নিয়ে এসেছি সদ্য। মাস দুই-তিন কেটেছে বড়জোর। বেণুডিহি হল ব্রাঞ্চ লাইনের একটা নিরিবিলি স্টেশন। স্টাফ বলতে আমরা ক’জন মাত্র। আমি, টিকিটবাবু সত্যদা, কেবিনের প্রসাদ আর পোর্টার জনা দুই। স্টেশনের গায়েই আমাদের রেল-কোয়ার্টার। একটা কুয়ো, রাজ্যের আকন্দ ঝোপ আর একজোড়া কাঠচাঁপার গাছ আমাদের কোয়ার্টারের শোভা বাড়ায়।

‘বেণুডিহি স্টেশনটা না থাকলেও চলত। কিন্তু কাঠ-চালানের জন্যেই বোধহয় ওটা রাখতে হয়েছে। জঙ্গলের ইজারাদাররা যত রাজ্যের গাছ কাটে, সেগুলো এনে স্টেশনের কাছে জমায়। সময়মতন চালানও দেয় খোলা মালগাড়িতে। তবে হ্যাঁ, দু’-চারটে ছোটখাটো গাঁ-গ্রামও যে বেণুডিহির ধারেকাছে ছিল তাও ঠিক। এমনিতে জায়গাটা ভাল। পাহাড়তলি বলে কথা! মন্দর মধ্যে হল ওখানকার ম্যালেরিয়া। সে এক আজব ব্যাপার। মাসের মধ্যে বার দুই অন্তত তোমায় কাবু করে ফেলবে। জ্বর আসবে আচমকা হু হু করে, শীতে কাঁপবে ঠক ঠক করে, কিন্তু জ্বরের মাত্রাটা বেশির ভাগ সময় একশো দুই আড়াইয়ের বেশি হবে না। দু’-একটা দিন ভুগিয়েই আবার জ্বর পালাবে।

‘যেদিনের কথা বলছি সেই দিনটির তারিখ বা মাস আমার সঠিক মনে নেই। শুধু মনে আছে, তখন শীতের শেষ। শেষ হলেও গায়ে গরম জামাকাপড়, গলায় মাফলার রাখতেই হয়।’

‘এই রকম এক দিনে স্টেশনে আমি একলা আর পোর্টার শিউরাম। আমাদের সত্যদা জ্বরের ঘোরে বাড়িতে পড়ে আছে। রাত তখন আটটা। সওয়া আটটা নাগাদ একটা প্যাসেঞ্জার আসবে। সেটাই শেষ গাড়ি, মানে প্যাসেঞ্জার ট্রেন। গাড়িটা চলে যাওয়ার পর আমার একরকম ছুটি।’

‘একটা কথা বলে রাখি। আজকের মতন তখন ইলেকট্রিক ছিল না রেল স্টেশনে। ছোটখাটো স্টেশনে তো নয়ই। ভুসি-ওঠা কেরোসিন ল্যাম্প আর লণ্ঠন দিয়ে আমাদের কাজ সারতে হত। রেলের এঞ্জিন ছিল কয়লার, যাকে বলা যায় কোল এঞ্জিন।’

‘আমার অফিসঘরে একটা দেওয়াল ঘড়ি ছিল। রেল কোম্পানির ঘড়ি। ঘড়িতে যখন আটটা পাঁচটাচ হবে, তখন আমি দু’-একটা অফিসের কাজ সেরে হঠাৎ যেন বুঝতে পারলাম, শরীরটা খারাপ লাগছে। শীত শীত করছিল, চোখ জ্বালা করছে। জ্বর আসবে নাকি?… আর খানিকটা সময় কাটাতে পারলেই বেঁচে যাই।’

‘দেখতে দেখতে সওয়া আটটার গাড়ি এসে পড়ল। আমার বাকি কাজ সেরে ফেলতে একবার বাইরে এলাম। গাড়ি ছেড়ে দিল। এমনিতেই এ সময় গাড়ি থেকে লোকজন বড় নামে না। সেদিন কাউকেই চোখে পড়ল না। হয়তো অন্ধকারের জন্যে আগাগোড়া প্ল্যাটফর্ম দেখতেও পাইনি।’

‘নিজের অফিসে ফিরে এসে গোছগাছ সেরে নিচ্ছি এমন সময় এক ভদ্রলোক এসে ঘরে ঢুকলেন। ভদ্রলোক মাঝবয়েসি। গায়ে কোট, পরনে প্যান্ট। গলায় মাফলার। হাতে একটা চামড়ার গ্ল্যাডস্টোন ধরনের ব্যাগ। ভদ্রলোককে দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। কোট প্যান্ট পরার চলন তখন খুব কম। বিশেষ করে এখানে কে আর সাহেব সেজে আসবে? আর কেনই বা!’

‘ওঁকে কিছু বলার আগেই উনি নিজেই বললেন, ভদ্রলোক একজন ডাক্তার। এখানে এসেছেন কালী রক্ষিতদের বাড়ি থেকে ডাক পেয়ে। কালী রক্ষিতের বাড়াবাড়ি অসুখ। রোগী দেখে কাল সকালে উনি ফিরে যাবেন।’

‘কালী রক্ষিতকে আমি চিনতাম। বেণুডিহি থেকে মাইলটাক দূরে তাঁর বাড়ি। বাড়ি মানে পুরনো আমলের কাছারিবাড়ি। সেই বাড়িকে ভাঙাচোরা দুর্গ বললেও ভুল হয় না। কালী রক্ষিত এদিককার অনেক জমিজমার মালিক। আজকাল আবার কাঠের কারবার শুরু করেছেন।’

‘ভদ্রলোক বললেন, রক্ষিতদের বাড়ির লোক জানে—তিনি এই ট্রেনে আসবেন। ও-বাড়ি থেকে লোক আসবে তাঁকে নিয়ে যেতে। সেই রকমই কথা আছে। উনি আপাতত আমার স্টেশনের অফিসঘরে কিছুক্ষণ বসে থাকতে চান। রক্ষিতবাড়ির লোক এলেই চলে যাবেন। আমার যদি আপত্তি থাকে তবে অবশ্য উনি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারেন।’

‘আমি বললাম, বাইরে আর কোথায় গিয়ে বসবেন! তার ওপর এই ঠান্ডা। আপনি বরং এখানেই বসুন। কী অসুখ রক্ষিতবাবুর?’

‘উনি বললেন, জানি না। গিয়ে দেখতে হবে। শুনলাম বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন।’

‘ভদ্রলোক—মানে ডাক্তারবাবু একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। আমিও উঠতে পারলাম না। ভাবলাম, লোক তো এসে পড়বে এখুনি; ভদ্রলোক চলে গেলে অফিসে শিউরামকে রেখে আমি কোয়ার্টারে চলে যাব। শরীর ভাল লাগছে না। তা ছাড়া খিদেও পাচ্ছিল।’

‘দেখতে দেখতে সাড়ে আটটা বাজল, তারপর পৌনে নয়। আমি অফিস ছেড়ে উঠতে পারছি না। এক ভদ্রলোককে এ ভাবে বসিয়ে চলে যাই কেমন করে? অথচ বেশ কষ্ট হচ্ছিল বসে থাকতে। মাথা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।’

‘আমি উসখুস করছি। ভদ্রলোককে বোঝাবার চেষ্টা করছি, এভাবে আর কতক্ষণ তিনি অপেক্ষা করবেন, আমিই বা বসে থাকব কেমন করে! ভদ্রলোক বড় অদ্ভুত ধরনের। কথাবার্তা প্রায় বলছেনই না, আমার কথার জবাবে দু’-একটা হ্যাঁ, হুঁ কিংবা না। উনি আমাকে লক্ষ করছিলেন না বিশেষ, ঘাড়-মুখ তুলে ছাদের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন।’

‘ন’টা বেজে যাওয়ার পর আমি বাধ্য হয়ে উঠে পড়লাম। বললাম, রক্ষিতবাড়ি থেকে কেউ এখনও এল না। আপনার আসার কথা কি ওরা জানে? ভুল হয়নি তো আপনার? …আমার কথার জবাবে উনি মাথা নাড়লেন, না, ভুল হয়নি।’

‘আমি এ বার উঠে পড়লাম। বললাম, আপনি তা হলে বসুন, আমি কোয়ার্টারে যাচ্ছি। শরীরটা ভাল নয় আমার। এখানে শিউরাম থাকল—পোর্টার, আপনি চলে যাওয়ার পর সে অফিসঘরে এসে শুয়ে থাকবে।’

‘আমি শিউরামকে খুঁজতে আসছি যখন–তখন প্ল্যাটফর্মে একজনের সঙ্গে দেখা। চাদরে মাথা-কান মোড়া, গায়ে একটা মোটা কম্বল গোছের গরম চাদর, পরনে ধুতি। হাতে লণ্ঠন।…লোকটাকে আমি চিনি না। তবু মনে হল রক্ষিতবাড়ি থেকে আসছে। জিজ্ঞেস করলুম, তুমি রক্ষিতবাড়ি থেকে আসছ? লোকটা মাথা হেলাল। বললাম, যাও ডাক্তারবাবু আমার অফিসঘরে বসে আছেন অনেকক্ষণ হল। …লোকটা এগিয়ে গেল, আমিও কোয়ার্টারের দিকে পা বাড়ালাম।’

‘একটা কথা বলে রাখি। বেণুডিহিতে রাত্রে কোনও ঝঞ্ঝাট ছিল না। প্যাসেঞ্জার ট্রেন আসত না; গুডস ট্রেন যা আসত দু’-একটা, তাও থামত না। সোজা চলে যেত। কেবিনম্যান থাকত কেবিনে। যদি কখনও দরকার পড়ত—অফিস থেকে শিউরামরা এসে খবর দিত কোয়ার্টারে, আমি ঘুমচোখে ছুটে যেতাম।’

‘সেদিন নিজের কোয়ার্টারে এসে কোনও রকমে একটু কিছু মুখে গুঁজে একেবারে বিছানায়। ততক্ষণে বেশ জ্বর এসে গিয়েছে। ওখানকার সেই বিচিত্র ম্যালেরিয়াই হবে। আমার আর হুঁশ ছিল না।’

‘পরের দিন আর জ্বর নেই। মুখটা শুধু তেতো হয়ে রয়েছে। তা দিনের বেলায় রোদজল পেয়ে শরীরটা তাজা হয়ে উঠল। নিজের হাতে রান্নাবান্না। একটা কুকার ছিল। একবার করে স্টেশনে যাই, আবার কোয়ার্টারে ফিরে আসি। রক্ষিতবাবুর কথা মনে পড়ল। কিন্তু এমন কাউকে দেখলাম না—যার কাছে খবর নিতে পারি।’

‘যথারীতি সন্ধে হল। তারপর রাত। আটটা বাজল। সেদিনের গাড়িও এল সওয়া আটটায়। প্যাসেঞ্জার গাড়িটা দাঁড়াল মিনিট পাঁচ-সাত। ছেড়েও গেল। …আমি কাজকর্ম সেরে ফেলছিলাম আমার, এমন সময় দেখি কালকের সেই ভদ্রলোক— ডাক্তারবাবু, অফিসঘরে এসে দাঁড়িয়েছেন।’

‘আমি অবাক! ভদ্রলোকের সেই একই রকম পোশাক, হাতে কালকের মতনই গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগ। আসলে ওটা তখনকার দিনের ডাক্তারবাবুদের ব্যাগ। কিছুই বুঝলাম না। বললাম, আপনি?’

‘উনি বললেন, কালী রক্ষিতকে দেখতে এসেছেন, পেশায় উনি ডাক্তার। রক্ষিতবাড়ি থেকে খবর গিয়েছিল, কালীবাবুর বাড়াবাড়ি অসুখ। ওঁর আসার কথা এই সময়, রক্ষিতরা জানে। লোক আসবে ও বাড়ি থেকে তাঁকে নিয়ে যেতে। উনি ততক্ষণ আমার অফিসঘরে বসে অপেক্ষা করতে চান। আমার কি আপত্তি আছে!’

‘আমি হতবাক! ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকছিল না। একটা লোক গতকাল যে-সময়ে এসেছিলেন, আজও সেই সময়ে এসেছেন। একই রকম দেখতে, একই রকম পোশাক। আর আসার কারণও সেই কালী রক্ষিত, রক্ষিতবাবুর বাড়াবাড়ি অসুখ বলে ওঁকে দেখতে এসেছেন।’

‘আমি বললাম, আপনি তো কালও এসেছিলেন।’

‘উনি মাথা নাড়লেন। বললেন, না।’

‘আমি অবাক হয়ে বললাম, সে কী মশাই! কাল আপনি এই সময়ে আমার ঘরে এলেন। বললেন, কালীবাবুকে দেখতে এসেছেন। আমার এখানে ওই চেয়ারে আপনি রাত ন’টা পর্যন্ত বসে ছিলেন। আমি যখন বাড়ি চলে যাচ্ছি—তখন প্ল্যাটফর্মে একটা লোককে দেখলাম। আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছে। …এর পরও আপনি বলবেন, আপনি কাল আসেননি! আশ্চর্য!’

‘ভদ্রলোক একটু হাসলেন যেন। বললেন, আপনি ভুল করছেন। আমি কখনও দু’বার আসি না। একবারই আসি। …বলেই উনি পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকালেন। বললেন, আচ্ছা আমি আসি, ও-বাড়ির লোক এসে গিয়েছে। …বলতে-না-বলতে তিনি অফিসঘর ছেড়ে চলে গেলেন। আমি হতভম্ব।’

‘তারপর কী হল জানেন সদানন্দবাবু! শুনলে অবাক হবেন। আমি বোকার মতন খানিকক্ষণ বসে যখন অফিসঘর ছেড়ে ফিরে আসছি তখন রক্ষিতবাড়ির এক কর্মচারী বৈকুণ্ঠর সঙ্গে দেখা। হন্তদন্ত হয়ে আসছে। বলল, বাবুজি, কালীবাবু মারা গিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক আগে। আমি লোকজন ডাকতে এসেছি। রাত শেষ হওয়ার আগে তাঁকে দাহ করতে হবে।’

‘আমি চমকে উঠে বললাম, সে কী! কাল না এক ডাক্তারবাবু এলেন দেখতে!’

‘লোকটা মাথা নাড়ল। বলল, আসার কথা ছিল বটে একজনের। কেউ আসেনি।’

‘আমি কেমন বোবা বোকা বিমূঢ় হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বুঝতে পারলাম না—কেমন করে তাকে বোঝাব যে, আমি নিজের চোখে পর পর দু’দিন একজনকে আসতে দেখেছি এখানে। তাঁরা ডাক্তার কি না জানি না, কিন্তু এসেছিলেন যে তা ঠিকই।’

গল্প শেষ করে রামতনু বলল, ‘আমি কাকে দেখেছিলাম জানি না। ভুল দেখেছিলাম কি না তাও জানি না। তবে কালী রক্ষিতের অসুখের কথা আমি আগে জানতাম না। জানতাম না, তাঁকে দেখতে আসার জন্যে কোনও ডাক্তারবাবুকে খবর দেওয়া হয়েছিল! তা হলে ওঁরা দু’জন কে? কেনই বা এসেছিলেন?’

১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৬

সকল অধ্যায়

১. ভারত যুদ্ধে পিঁপড়ে – প্রেমেন্দ্র মিত্র
২. বিড়ালের চোখ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
৩. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ – শিবরাম চক্রবর্তী
৪. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ‘তেনা-রা’ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৮. লালটেম – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৯. অশরীরী – লীলা মজুমদার
১০. রাজপুত্তুরের অসুখ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১১. ভূতেরা বড় মিথ্যুক – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১২. রুকু আর সুকু – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৩. রাত তখন এগারোটা – বিমল মিত্র
১৪. ম্যাজিশিয়ান – বিমল কর
১৫. ঘণ্টাকর্ণের কান গেল – মনোজ বসু
১৬. খুনি – সমরেশ মজুমদার
১৭. বনকুঠির রহস্য – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
১৮. একদম রূপকথা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৯. তারিণীখুড়ো ও ডুমনিগড়ের মানুষখেকো – সত্যজিৎ রায়
২০. অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য – সত্যজিৎ রায়
২১. দেবতার ভর – সুকুমার সেন
২২. মজারুমামা – আশাপূর্ণা দেবী
২৩. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
২৪. গঙ্গারামের কপাল – সত্যজিৎ রায়
২৫. গোরক্ষনাথবাবুর নোটবুক – সমরেশ বসু
২৬. ভুনিকাকার চৌরশতম্‌ – বিমল কর
২৭. অনুকূল – সত্যজিৎ রায়
২৮. ক্যাপ্টেন – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
২৯. তুরুপের তাস চুরি – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৩০. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩১. রুপোর গাছ – বাণী বসু
৩২. বনঝাউয়ার রহস্য – ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য
৩৩. জ্বরের ঘোরে শোনা – সমরেশ বসু
৩৪. একটি লাল লঙ্কা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩৫. টিকটিকি অতীন্দ্রিয় শক্তি ও বেদান্ত বর্ধন -আশাপূর্ণা দেবী
৩৬. নদুস্কোপ – রূপক সাহা
৩৭. আতাপুরের দৈত্য – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৮. নিখোঁজ চারু – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৯. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪০. কপালের নাম গোপাল – আশাপূর্ণা দেবী
৪১. শিমুলতলার মাধবী লজ – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪২. কানকাটা বাঘ – শৈলেন ঘোষ
৪৩. হিংসুটে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৪. হরিণ-শিকারির বাড়ি – হর্ষ দত্ত
৪৫. অর্জুন হতভম্ব – সমরেশ মজুমদার
৪৬. কেউ কি এসেছিলেন – বিমল কর
৪৭. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৮. মজাদার এক ফুটবল ম্যাচ আর দানাপুরি – বিমল কর
৪৯. চারুহাসিনীর দেওয়াল-সিন্দুক – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. বন্ধু – তিলোত্তমা মজুমদার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন