পৌলোমী সেনগুপ্ত
হঠাৎই কিংখাবের সঙ্গে ভাব হয়ে গেল তাম্বুলের। হওয়ার কথা ছিল না, কারণ কিংখাবদের ফ্ল্যাট হাউজিংয়ের ভেতরে। আর তাম্বুল থাকে ও-পাশে, খালপাড়ে। বাঁশের বেড়া আর পলিশিটের ছাউনি দেওয়া ঝুপড়িতে। কিংখাবের একা একা হাউজিংয়ের বাইরে যাওয়া বারণ, আর তাম্বুলের বারণ ভেতরে আসা।
সে-দিন বিকেলবেলা কিংখাব একা একা বোলিং প্র্যাকটিস করছিল। তার আর কোনও বন্ধু নেই তা নয়। কিন্তু তাদের সঙ্গে রবিবার ছাড়া খেলা যায় না। মিকি বিকেলটায় সাঁতারে যায়। ঐন্দ্রিলা নাচের ক্লাসে। সায়ন্তনীর টিউটর আসেন এই সময়। আর কাছের আঁকার স্কুলে প্রতি রবিবার ওরা সকলে যায়। কিংখাব নাচ শেখে না, গানও না। কিন্তু মা বলেছেন খুব শিগগির তাকে সরোদের ক্লাসে ভরতি করে দেওয়া হবে। সে অবশ্য সাঁতার শেখে। তার ডে-স্কুল হওয়ায় সকালটায় সাঁতার কেটে ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে চলে যায়। সপ্তাহে তিন দিন। ক্যাম্প থেকে ফিরে স্নান করে তৈরি হয়ে স্কুলে যায়। স্কুলের বাস হাউজিংয়ের গেট থেকে তুলে নেয় কিংখাবকে। তখন মা সঙ্গে থাকেন। আর পাপড়ি, কিংখাবের মায়ের কাজের মেয়ে। তার হাতে থাকে কিংখাবের বইয়ের ব্যাগ আর জলের বোতল। স্কুল থেকে ফিরে খেয়েদেয়ে এক ঘণ্টা শুয়ে বিশ্রাম নিতে হয় তাকে। মায়ের কড়া নির্দেশ। এ সময় খুব ছটফট করে ভেতরটা। এই সময়টুকুও যদি খেলতে পেত! সকালে ক্রিকেট ক্যাম্পে খেলাটা ঠিক খেলার মতো নয়। ইচ্ছেমতো কিছু করার নেই সেখানে। কোচকাকু খেলার গ্রামার সম্পর্কে খুব সতর্ক। একটু ভুল হলেই বকুনি দেন। যখন কিংখাবের খুব ব্যাট করতে ইচ্ছে করছে, তখন বল করান। বল করতে ইচ্ছে করলে ফিল্ডিং। এটাকে ঠিক খেলা বলতে কিংখাব নারাজ। কোচকাকুও বলেন, “মনে রাখবে, তোমরা এখন শিখছ। অনুশীলন করছ। খেলছ না।” কথাটা যে কত বড় সত্যি, কিংখাব তা টের পাচ্ছে। এই বিকেলটুকু তাই তার খুব প্রিয়। সময় যত কমই হোক, সে নিজের মতো খেলতে পায়। আর কেউ থাকে না বলে রবিবার ছাড়া ব্যাট করা হয় না। সে বোলিংটাই চালিয়ে যায় একা একা।
হাউজিংয়ের অন্যান্য ব্লকে অবশ্য কিংখাবের বয়সি অনেকেই খেলাধুলো করে। কিন্তু সে দিকে তার যাওয়া বারণ। হাউজিংয়ের সেরা ব্লকটিতে তারা থাকে। অন্যগুলো, মা বলেন, লোয়ার ক্যাটিগরি ব্লক। কেউ বিশেষ ভাবে নেমন্তন্ন না করলে সেখানে যেতে নেই। তাতে নাকি ‘ডিগনিটি’ থাকে না। ডিগনিটি সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা আছে কিংখাবের। সে দেখেছে, ওই সব ব্লকে গেলে মায়ের চলাফেরা, কথা বলা খুব গম্ভীর আর বিরক্তিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। কিংখাব বোঝে মায়ের সত্যি খুব রাগ বা বিরক্তি হচ্ছে না। তিনি সব কিছুই দেখছেন, কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখছেন, এ রকম ভাব করে ডিগনিটি বজায় রাখছেন।
মায়ের ইচ্ছের বাইরে বা চোখ এড়িয়ে কিছুই করার উপায় নেই কিংখাবের। শুধু স্কুলের গাড়িতে উঠে পড়ার পর একটু সময় সে স্বাধীন। গাড়ির ভোলাদা অবশ্য সকলের ওপর নজর রাখেন। কিন্তু বাড়াবাড়ি কিছু না করলে নালিশ করেন না। কিংখাব তাই গাড়িতে উঠেই যাকে সামনে পায় ধাক্কা মারে। কেউ হয়তো তাকে লেঙ্গি মারল। সে উলটে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। ঠিক আছে। পরে হবে। সে মুখ চিনে রাখে। সুযোগ বুঝে শার্টের ফাঁকে একদিন ঢুকিয়ে দেবে ‘ইচিং পাউডার’। বাসটা যেন একটা খাবলাখাবলির জায়গা। কিন্তু স্বাধীনতা, আর আনন্দেরও।
বিকেলের ওই পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টাও অবশ্য কিংখাবের আরও একটু স্বাধীন সময়। এ-সময় সে খেলতে পায় বলে নয়। এ-সময় কিংখাবকে মাঠে দিয়ে মা জিমে চলে যান। ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন। কোনও দিন একটু বেশি সন্ধে হয়ে গেলে কিংখাব একা একাই ফ্ল্যাটে চলে যায়।
মাঠটা হাউজিংয়ের পাঁচিল ঘেঁষে। মাঠ বলা অবশ্য ঠিক নয়। আসলে এটা বাচ্চাদের ছোট পার্ক। দুটো দোলনা আছে। একটা ঢেঁকি। একটা স্লিপ। বহু দিন হল কিংখাব এ-সবে চড়া ছেড়ে দিয়েছে। সে বোলিং প্র্যাকটিস করে। কখনও পাঁচিলের পিলারকে, কখনও দোলনার বারকে উইকেট ভেবে নেয়। প্রায়ই তার বল বাইরে চলে যায়। পাঁচিলের উচ্চতা তাকে ছাড়িয়ে গেছে। বল বাইরে চলে গেলে পাঁচিলের কারুকাজের খাজে পা রেখে ডিঙি মেরে সে বাইরেটা দেখে। প্রতীক্ষা করে, যদি কাউকে দেখতে পায়, করুণ মুখে অনুরোধ করে, “কাকু, বলটা দেবে!”
একদিন এই বল নিয়েই তাম্বুলের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেল।
বলটা বাইরে চলে গিয়েছিল, কিংখাব পাঁচিলের ওপর দিয়ে ডিঙি মেরেছিল। ও পার থেকে তাম্বুল বলটা হাতে নিয়ে বলেছিল, ক্যাচ। কিংখাব লাফিয়ে নেমে পড়েছিল। তখনই বলটা উড়ে এসেছিল শূন্যে। কিংখাব লুফেছিল। এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার পাঠিয়েছিল বাইরে। তাম্বুল কি জানত কিংখাব বলটা ফেরত দেবে? সেও বলটা ঠিক ঠিক লুফে নিয়েছিল, আবার ফেরতও দিয়েছিল। বেশ জমে উঠেছিল খেলা। এক সময় দূর থেকে মায়ের গাড়িটা ঢুকতে দেখল কিংখাব। সময় নষ্ট না করে সে চেঁচিয়ে বলল, “চললাম।” ততক্ষণে মা পৌঁছে গেলেন। দরজা খুলে দিলেন। কিংখাব উঠে বসল। এখান থেকে তাদের ফ্ল্যাট দু’সেকেন্ড। এরই মধ্যে কিংখাব তাম্বুলের কথা ভাবছিল। যদিও তখন নাম জানা হয়নি। তবু তার ভাবতে ভাল লাগছিল। তারই বয়সি হবে। আধময়লা জামা-প্যান্ট ও হাওয়াই চটি পরা। এ-রকম কারও সঙ্গে কিংখাব কখনও খেলেনি। তার ভেতরে উত্তেজনা হল। যেন নতুন কিছু জেনে ফেলেছে, যা কাউকে বলার নয়। মাকেও নয়। কিংখাব জানে, মা তা হলে ডিগনিটির কথা বলবেন।
থেকে থেকেই কিংখাবের মনে পড়ছিল নাম-না-জানা ছেলেটির কথা। মুখটাও মনে নেই। শুধু কানে বাজছে, ক্যাচ। এমনকী স্কুলেও সে ভাবল। তারপর ছুটি হতে বাড়ি ফেরার পথে খুব উত্তেজিত হয়ে উঠল। ও কি আসবে! আসবে কি। অন্যদিন বিশ্রামের সময়টুকু সে টিনটিন পড়ে বা আনন্দমেলা। এদিন তার কোনও কিছুতেই মন ছিল না। খুব অস্থিরতার সঙ্গে সে বল নিয়ে মাঠে নেমেছিল। প্রথমে আস্তে আস্তে প্র্যাকটিস করেছিল। তারপর ইচ্ছে করে ছুড়ে দিয়েছিল বাইরে। না, বল ফেরত আসেনি। খুব মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল তার। গাঢ় গোপন অভিমানও। যেন নাম-না-জানা ছেলে তাকে কথা দিয়েছিল আসবে। সে তখন পাঁচিলের ওপর দিয়ে ডিঙি মেরেছিল, যদি কাউকে পায়! এবং তাকিয়েই দেখেছিল ছেলেটি বল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাসছে। যেন জানে কিংখাব এ ভাবেই বিরস মুখে উঁকি মারবে।
আনন্দে ঝলসে উঠেছিল কিংখাব। বলেছিল, “এই, তোমার নাম কী?”
“তাম্বুল।”
“আমি কিংখাব। খেলবে?”
“ক্যাচ!” তাম্বুল চেঁচিয়েছিল। কিংখাব আগের দিনের মতোই লাফিয়ে নেমে বল লুফেছিল। খেলা চলেছিল।
কিন্তু বেশি দিন মায়ের কাছে এ-সব লুকনো রইল না। কিংখাব একদিন তাম্বুলকে ভেতরে ডাকল। তাম্বুল পাঁচিল টপকে চলে এল। খেলা দারুণ জমে গেল। এবং কিংখাবের মা জিম থেকে ফিরে তাম্বুলকে দেখলেন।
কোনও প্রশ্নই অবশ্য তিনি করেননি। রোজকার মতো গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। কিংখাবের মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। তাম্বুল পাঁচিল টপকে চলে গিয়েছিল রাস্তায়।
সে দিন রাতে মা-বাবার মুখোমুখি হতে হয়েছিল কিংখাবকে। তাঁদের মধ্যে সংলাপগুলো ছিল এরকম:
মা: কত দিন ধরে এ-সব চলছে?
কিংখাব:—
বাবা: শোনো, বস্তির ছেলেদের সঙ্গে মেশা আমি পছন্দ করি না।
কিংখাব: ও ভাল।
মা; সেটা বোঝা হয়ে গেল?
বাবা: কী করে বুঝলে?
কিংখাব:—
মা: কাল থেকে বিকেলে তুমি খেলবে না।
বাবা: না, মল্লিকা। ওকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া হোক। কথা না শুনলে স্টেপ নেওয়া হবে।
পরদিন বিকেলে কিংখাব খেলতে এল। মা জিমে গেলেন। একটু পরেই পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ল তাম্বুল। কিংখাব বিমর্ষ ছিল। তাম্বুল এসেই বলল, “কী? কাল হয়েছে তো?”
কিংখাব বলল, “ভাল লাগে না। কিন্তু তুমি জানলে কী করে?”
“জানি। তুমি কত বড়লোকের ছেলে। আমার সঙ্গে খেললে বকুনি তো খাবেই।”
“তোমরা কি খুব গরিব?”
“হ্যাঁ। খুব। আমার বাবা নেই তো!”
“আমার সঙ্গে খেল বলে তোমার মাও তোমাকে বকেন?”
“না। শুধু বলেন, বাবা— সোনার কলসি আর মাটির কলসিতে ভাব হয় না কখনও।”
“হ্যাঁ। এটা আমি ফেবলস-এ পড়েছি। তোমার ফেবলস আছে?”
“আছে। বাংলায়। নীতিকথা।”
সে দিন আর খেলা হয়নি। দু’জনে কথা বলেছিল অনেকক্ষণ। জানা হয়ে গিয়েছিল কার ক’টি জামা, ক’টি খেলনা। কে কী রং পছন্দ করে। দু’জনেরই প্রিয় খেলা ক্রিকেট। কিংখাবের প্রিয় বোলার অনিল কুম্বলে। তাম্বুলের প্রিয় শ্রীনাথ। ব্যাটসম্যান হিসেবে দুজনেরই শচীন আর জাডেজাকে পছন্দ। স্কুলের প্রসঙ্গে অবশ্য দু’জনেই একটু স্পর্শকাতর হয়ে গেল। দু’জনেই একই ক্লাস সেভেন। কিংখাবের নিউ হরাইজন। তাম্বুলের বান্ধবপুর হাই। তাম্বুল অবশ্য জানেই না নিউ হরাইজন স্কুলটা কেমন। সে জানিয়েছে, তার পড়াই হত না। ফোর পর্যন্ত দিদিমণিরা অনেক বাচ্চার সঙ্গে রাস্তায় বসে তাকে পড়াতেন। ফল ভাল করায় ওই দিদিমণিদের চেষ্টায় সে হাইস্কুলে পড়ছে। মা আগে তিন বাড়িতে কাজ করতেন। এখন পড়ার খরচ চালাবার জন্য দুটো বাড়ি বাড়িয়েছেন।
কিংখাবের মা আসার আগেই তাম্বুল চলে গিয়েছিল সে দিন। আর এ ভাবেই মায়ের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল তাম্বুল আর কিংখাবের বন্ধুত্ব। কিংখাব আজকাল স্কুলের বন্ধুদের চেয়েও তাম্বুলকে বেশি ভালবাসে। আজকাল বিকেলে আর খেলেই না দু’জন। শুধু কথা বলে। কত যে কথা। ফুরোতেই চায় না। ইতিমধ্যে কিংখাব তাম্বুলকে দু’সেট পোশাক ও কিছু বই দিয়েছে। সঙ্গে এক বাক্স রং-পেনসিল ও দুটি পেন। তাম্বুল নিতে চায়নি। এগুলো বাড়ির বাইরে আনার জন্য কিংখাবকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। জিনিসগুলো সেলোফেন প্যাকে মুড়ে জানলা দিয়ে ফ্ল্যাটের পেছনে ফেলে দিত সে। জায়গাটায় একফালি বাগানমত। মা গাড়ি নিয়ে হাউজিংয়ের বাইরে বেরিয়ে গেলেই দৌড়ে সেটি নিয়ে আসত।
তাম্বুল যখন এগুলো নিতে চায়নি তখন প্রথমটায় খুব জোর করেছিল কিংখাব। কিন্তু তাম্বুল বলেছিল, “আমার যা আছে তাই দিয়ে চলে যায়।” কিংখাবের অভিমান হয়েছিল তখন। মুখে বিষণ্ণতা ছাপ ফেলেছিল। তাম্বুল তা লক্ষ করে থাকবে। সে বলেছিল, “তুমি এগুলো কেন দিচ্ছ? ভালবেসে, না আমার নেই বলে?”
কিংখাব প্রথমটায় কী বলবে ভেবে পায়নি। তারপর বলেছিল, “ভালবেসে।”
তাম্বুল বলেছিল, “বেশ। তা হলে নিলাম। মা বলেন, কেউ ভালবেসে কিছু দিলে নিতে হয়।”
একদিন তাম্বুল বলল, “এ ভাবে বেশি দিন আমি আসতে পারব না।”
“কেন?” কিংখাব প্রশ্ন করল।
তাম্বুল বলল, “তোমার মা একদিন টের পেয়ে যাবেন। তখন কী হবে?”
কিংখাবের মায়ের ওপর রাগ হল। এত ভাল তাম্বুল, অথচ মা কেন তাকে মিশতে দেবেন না? সে রাগ রাগ মুখে বলল, “আমার মা একটুও ভাল না।”
তাম্বুল বলল, “ও রকম বলছ কেন? বলতে নেই। সবার মা ভাল। তা ছাড়া, তোমার মা কত সুন্দর। দুগ্গার পাশে সরস্বতীর মতো।”
“দেখতে ভাল হলে কী হবে! যা ডিগনিটি মানে না! শুধু আমাদের ব্লক ছাড়া অন্য সব ব্লকের সবাই নাকি আমাদের চেয়ে নিচু। আমি তো কিছু বুঝতেই পারি না।
“কী জানি! ডিগনিটি কী! আমি আলাদা। কিন্তু হাউজিংয়ের সবাইকেই তো আমার এ রকম লাগে।
“আমার এ সব ভাল লাগে না জানো! মা আমাকে একা একা হাউজিংয়ের বাইরে যেতে দেন না। আমার ইচ্ছে করে সবার সঙ্গে মিশি। কথা বলি। কী হয় তা হলে?”
তাম্বুল বলল, “আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ছোটরা কখনও স্বাধীন নয়। এই যে তোমার এত কিছু আছে অথচ তুমি কী পরবে, কী খাবে, কোথায় যাবে, সব তোমার মা ঠিক করে দেবেন। বড় না হলে এ রকম চলতেই থাকবে।”
কিংখাব জিজ্ঞেস করল, “তুমি তো একা একা কত জায়গায় যাও। কত লোকের সঙ্গে মেশো, তুমিও স্বাধীন নও?”
“আমিও নই। তবে তোমার সঙ্গে আমার ব্যাপারটা মেলে না। আমি যেখানে খুশি যাই ঠিকই, কিন্তু মা যে সব বাড়িতে কাজ করেন, সে সব বাড়ির লোকেরা সুযোগ পেলেই আমাকে দিয়ে খাটিয়ে নেন। ওঁদের গম পিষতে দেওয়া, কাপড় লন্ড্রিতে দেওয়া, রেশন তোলা। বিনিময়ে আমার মাকে ওঁরা রেশনকার্ডগুলো দেন কেরোসিন তেল তোলার জন্য। একটা বাড়ির বাবু আমাকে দিয়ে পাও টিপিয়ে নেন মাঝে মাঝে। খুব খারাপ লাগে আমার তখন। যদি ছোট না হতাম, এ রকম কি করতে পারত?”
তাম্বুলের গলা বুজে এসেছিল কান্নায়। কিংখাবেরও খুব কান্না পাচ্ছিল। নিজের কথা বলার সময় তাম্বুলকে এত কষ্টে ভরে যেতে কখনও দেখেনি কিংখাব। সে তাম্বুলের কাঁধ জড়িয়ে ধরেছিল। আর সে দিন রাতে স্বপ্ন দেখেছিল কিংখাব। সে বড় হয়ে গেছে। একটা বাইক কিনেছে। পেছনে তাম্বুলকে বসিয়ে হুহু করে এগিয়ে যাচ্ছে সোজা। কী ভালই লাগছে! কিন্তু সে বড় হয়েছে, আর তাম্বুল বাড়েনি কেন? সে কেন আগের মতোই ছোট হয়ে আছে?
১৬ আগস্ট ২০০০
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন