পৌলোমী সেনগুপ্ত
এদিকে পালামউ জেলার টোরি বস্তি, ওদিকে হাজারিবাগ জেলার বনসিরি, দুইই বেশ বড় রকমের দুটি লোকালয়, কাজকারবারের দুটি গঞ্জ। সড়কটা যেন এই দুই লোকালয়ের মধ্যে ত্রিশ মাইলের ব্যবধান জুড়ে দিয়ে আর দু’পাশের সবুজ শাল-জঙ্গলের ঠাসা বিস্তারের উপর লাল কাঁকরের চেহারা এঁকে দিয়ে পড়ে রয়েছে। এই সড়কেরই পাশে এক জায়গায় ঠাকুরসাহেবদের টোরি জমিদারির তসিল কাছারি। তসিলদার রামতনু অন্য কাছারি থেকে বদলি হয়ে এখানে এসে ঠাঁই নেবার আগে শুধু ভাণ্ডারীজি কপিলবাবু একাই এখানে থেকে খাজনার আদায়-উসুলের সব কাজ করতেন। একটানা চল্লিশ বছর এই টোরি কাছারিতে কাল কাটিয়েছেন কপিলবাবু। যখন এসেছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল পঁচিশ বছর। এখন তিনি পঁয়ষট্টি বছর বয়সের একটি বুড়ো মানুষ, মাথার চুলের প্রায় সবই সাদা হয়ে গিয়েছে।
এখানে এসে প্রথম দিনে কাছারিঘরের মেটে দাওয়ার উপর একটা চারপায়ার উপর আরাম করে বসতে গিয়েই একটু আশ্চর্য হয় রামতনু। এত গভীর জঙ্গলের ভিতরে একটা মন্দির এল কী করে? বেশ পুরনো বলে মনে হচ্ছে। কতকালের পুরনো? মন্দিরের গায়ের উপর হাজার ফাটল ছড়িয়ে রয়েছে। ফাটলের ফাঁকে-ফাঁকে পুরনো বট-অশত্থের শুকনো শিকড়ের এক-একটা গুচ্ছ ঝুলছে; রাজরপ্পার জঙ্গলের ভিতরে দুই নদীর দুই ধারার মাঝখানে একটা বালিয়াড়ির উপর ছিন্নমস্তার যে-মন্দির অনেকবার দেখেছে রামতনু, সে-মন্দিরকেও এত পুরনো বলে মনে হয় না।
ভাণ্ডারী কপিলবাবু বললেন, “মন্দিরটা অন্তত দু’-তিনশো বছরের পুরনো হবে। কিন্তু মন্দিরের ভিতরের বিগ্রহটা যে কত পুরনো সেটা কারও বুঝবার ও বলবার সাধ্যি নেই।”
রামতনু—কেন?
কপিলবাবু—বিগ্রহ বলতে তো ওই একটা কালো পাথরের ওপর খোদাই করা একটা হাত, সেই হাতে একটা খড়্গ আছে বলে মনে হয়। এ ছাড়া আর কিছুই দেখতে ও বুঝতে পারা যায় না। পাথরের উপর সিঁদুরের প্রলেপও পাথর হয়ে গিয়েছে। এই বিগ্রহ নিশ্চয় হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। লোকে গল্প করে, অনেক অনেক দিন আগে, বনবাসী একজন যোগী ওই পাথরটাকে এই ঝিরিয়া নালার জলের ভিতর থেকে তুলে নিয়ে কিনারাতে রেখে দিয়েছিল। তারপর কবে সেখানে কে এসে একটা মন্দির তুলে দিল, তা কেউ বলতে পারে না।
রামতনু—কী নাম বললেন? ঝিরিয়া নালা?
কপিলবাবু—হ্যাঁ, এই যে দেখছেন, আমাদের কাছারি আর ওই মন্দিরের মাঝখান দিয়ে ঝিরিঝিরি শব্দ করে ছোট্ট একটা স্রোতের জল বয়ে যাচ্ছে, সেটারই নাম ঝিরিয়া নালা। জল খুব পরিষ্কার আর ঠান্ডা, পাহাড়ের উঁচুতে চুলহাপানি নামে ছোট একটা কুণ্ড থেকে খুব সরু একটা জলের ধারা গড়িয়ে পড়ে শেষে যে মস্ত বড় একটা চেহারা ধরেছে, সেটাই হল দামোদর নদ। অন্য একটি ধারা সেই একই কুণ্ড থেকে ঝরনা হয়ে গড়িয়ে পড়ে আর এতদূরে এইখানে এসে নাম ধরেছে ঝিরিয়া নালা।
রামতনু—ওই মন্দিরে পুজোটুজো হয় না?
কপিলবাবু—হয়, কিন্তু কোনও পূজারি-টূজারি নেই। গাঁয়ের লোকেরা এসে নিজেরাই পাঁঠা বলি দেয়, ঢাক বাজায় আর চলে যায়। ওরা মা কালীর নামে পাঁঠা বলি দেয়। মন্দিরটাকে ওরা বলে—কালীথান।
টোরি বস্তিতে মঙ্গলবারের বাজার বসেছে। তাই অনেক গো-গাড়ি মালপত্র নিয়ে সামনের ওই সড়ক ধরে টোরি বস্তির দিকে চলেছে। দেখতে পায় রামতনু, সবজি বোঝাই একটা চলন্ত গো-গাড়ি হঠাৎ থেমে গেল। গাড়ির ভিতর থেকে দু’জন চাষি মানুষ নেমে এল। ঝিরিয়া নালার কিনারাতে একটা ডুমুরগাছের ছায়ার কাছে এসে ওরা দাঁড়াল। মাটিতে একবার মাথা ঠেকিয়েই ওরা আবার চলে গেল।
রামতনু—এ আবার কী ব্যাপার ভাণ্ডারীজি?
ভাণ্ডারী কপিলবাবু বলেন—ও একটা ব্যাপারই বটে। আমি তখন সবেমাত্র এই কাছারিতে এসেছি। একদিন ভোরবেলা ঘরের বাইরে এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল, গেরুয়াধারী একজন সাধু ঝিরিয়া নালার কিনারাতে বসে আছেন। আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি এখানে এভাবে বসে আছেন কেন সাধুজি? সাধুজি বেশ মিষ্টিরকমের একটা হাসি হেসে নিয়ে বললেন—আমি এইবার শরীরটাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। তাই বসে আছি।
আমি চমকে উঠলাম। জিজ্ঞাসা করলাম—আপনি কী বলছেন, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
আগন্তুক সাধু—আমি আর কিছুই খাব না। উপোস দিয়ে এখানেই পড়ে থাকব। শরীর শুকিয়ে যাবে, বুকের ভিতর থেকে ধুকপুক প্রাণটা একদিন বেরিয়ে যাবে। মুক্তি পেয়ে যাব আমি।
ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন ভাণ্ডারী কপিলবাবু—এ যে আত্মহত্যা!
আগন্তুক সাধু—আত্মহত্যা নয় বাবুজি, এটা হল ইচ্ছামৃত্যু। খুব চমৎকার একটা ব্রত।
কথা বলতে বলতে ভাণ্ডারী কপিলবাবুর গলার স্বর যেন একটা আবেগের ছোঁয়া লেগে করুণ হয়ে যায়।—আমি অনেক সাধাসাধি করেছিলাম, রামতনুবাবু। রোজই এক লোটা দুধ নিয়ে মিনতি করতাম—খেয়ে নিন সাধুজি। সাধুজি তেমনি মিষ্টিহাসি হেসে বলতেন—না।
কপিলবাবু এইবার যেন তাঁর মনের ভিতরে দূরস্মৃতির সব কলরোল সামলে নিয়ে কথা বলেন—জঙ্গলের নানা গাঁয়ের কত লোক রোজই আসত। উপোসি সাধুর শরীরটার দিকে তাকিয়ে সবাই দুই হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকত। সে একটা ব্যাপারই বটে। সাধু ওইখানে ঝিরিয়া নালার কিনারাতে ঘাসের উপর শুয়ে রইলেন। কিছুই খেলেন না। মাঝে মাঝে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। সাধুজি যেন একটা স্বপ্নের আবেশে ডুবে গিয়ে জড়ানো স্বরে ও আস্তে আস্তে দু’-একটা কথা বলতেন। তাঁর একটা কথা আমার মনের মধ্যে এখনও শুনতে পাই—শুনো বাবুজি, মানুষের যেমন ধর্মজীবন আছে, তেমনই ধর্মমরণও আছে।
মনের আবেগ সামলে নিয়ে ভাণ্ডারীজি বলেন—একদিন দেখলাম, সাধুজির বুকটা খুব জোরে ঢিপঢিপ করছে। বুঝলাম আর বেশিক্ষণ নয়। আর কোনও কথা বলতে পারবেন না সাধুজি। কিন্তু কী আশ্চর্য, তবু কয়েকটা কথা বেশ স্পষ্ট করে বললেন, তাঁর শেষ কথা। বললেন, আমার মরা শরীরটাকে কেউ যেন সৎকার করবার নাম করে পুড়িয়ে নষ্ট করে না দেয়। এইভাবে এখানেই পড়ে থাকতে দিয়ো। কাক শকুন আর শেয়াল যেন আমার শরীরের মাংস খেয়ে আনন্দ করতে পারে। তোমরা ওদের তাড়িয়ে দিয়ো না।
শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল। এক দিন ও এক রাতের মধ্যে সাধুজির মরা শরীরটার সব মাংস কাক শকুন আর শেয়ালে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেল। পড়ে রইল শুধু টুকরো টুকরো কয়েকটা হাড়। ভাণ্ডারী কপিলবাবু একদিন গঙ্গা স্তব আবৃত্তি করে সেইসব হাড় তুলে নিয়ে ঝিরিয়া নালারই একটা ছোট দহের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন।
রামতনু—শুনে আমার খুবই আশ্চর্য লাগছে ভাণ্ডারীজি। অনেকদিন আগে, আমরা যখন স্কুলের ছাত্র, তখন ফ্রান্সিসকান চার্চের এক খ্রিস্টান সাধুর মুখে ঠিক এইরকম ইচ্ছার কথা শুনেছিলাম। হাজারিবাগের বড় ঝিলের মাঝখানে দ্বীপের মতো একটা জায়গায় খেজুরকুঞ্জের মধ্যে তিনি যেন ধ্যানস্থ হয়ে বসে থাকতেন। তিনি বলতেন—আমি চাই আমার মরা দেহটা যেন কবরের ভিতরে ঢুকে নষ্ট না হয়। আমি চাই, পাখিরা যেন আমার মরা শরীরের সব মাংস লুটেপুটে খেয়ে ফেলে আর খুশি হয়।
সাধুর কথা শেষ করেই ভাণ্ডারীজি হঠাৎ একটা বাঘের কথায় এসে পড়লেন। এই বাঘের জীবনের অদ্ভুত যত আশ্চর্যের গল্প শুনে রামতনুর মনটা এবার আরও বড় বিস্ময়ে ভরে যায়।
নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না যে, এই টোরি জঙ্গলের ভিতরে একটি বড় জাতের ডোরাকাটা চেহারার যে বাঘ বিচরণ করে, সে হল একটি ভক্ত-বাঘ। ভাণ্ডারীজি হিসাব করে নিয়ে বললেন, পাঁচ বৎসর ধরে ওই বাঘ টোরির জঙ্গলের ভিতরে দশটা গাঁয়ের মাটি ছুঁয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে মারেনি। কোনও মানুষকে না, গোরুকেও না।
রামতনু—তবে কী খেয়ে বেঁচে আছে বাঘটা? শুধু হরিণ-টরিন খেয়ে?
ভাণ্ডারীজি— না, তাও না।
রামতনু—তবে?
ভাণ্ডারীজি—তার মানে একটা ব্যবস্থা হয়েছে। পালা করে এক-একটা গাঁয়ের মানুষ শনিবারে ও মঙ্গলবারে এই কালীথানে এসে পাঁঠাবলি দেয়। সেই পাঁঠার অর্ধেক শরীরের মাংস প্রসাদ হিসেবে ওরা ঘরে নিয়ে যায়, বাকি অর্ধেক শরীরের মাংস শালপাতায় মুড়ে কালীথানের ওই কুঠরির ভিতরে সিঁদুরমাখা বিগ্রহের সামনে রেখে দিয়ে যায়। বাঘ কোনও সময়ে তার বরাদ্দের ওই মাংস-প্ৰসাদ খেয়ে ফেলে।
রামতনু—আপনি কোনওদিন এরকম অদ্ভুত দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছেন?
ভাণ্ডারীজি—হ্যাঁ, রামতনুবাবু, আমি নিজের চোখে দেখেছি। একদিন সন্ধ্যাবেলাতে দেখেছি। একদিন দুপুরবেলাতে দেখেছি। একদিন মাঝরাতের চাঁদের আলোতে দেখেছি। বাঘ এল, কালীথানের কুঠুরির ভিতর ঢুকল, কিছুক্ষণ পরে চলে গেল।
এ যেন কতকটা প্রাচীন ক্রিটের সেই দানব মিনোটরের ইচ্ছার বিধানের মতো একটা বিধানের গল্প। মিনোটরের ইচ্ছার নির্দেশ ছিল, পালা করে প্রতিদিন সাতজন করে তরুণ-তরুণীকে তার ভোজ্য হবার জন্য তার কাছে উপস্থিত হতে হবে। নইলে…। এই দানবীয় শাসনের নিয়ম অনুযায়ী রোজই সাতজন তরুণ-তরুণীকে ভয়ানক এক মৃত্যুর শাস্তি মেনে নিতে হত। মহাভারতের একচক্রা নগরীর বকরাক্ষসের কথাও মনে পড়ে যায়। পালা করে প্রত্যেক পরিবার থেকে একজনকে বকরাক্ষসের ভোজ্য হতে হত। কুন্তীদেবী একদিন এক পরিবারের করুণ কান্নার শব্দ শুনে জানতে পেরেছিলেন যে…
পাঁচ বছর আগে এদিকের জঙ্গলের ভিতরে একদিন গোরু চরাতে এসে একটা রাখাল ছেলে ভয় পেয়ে চমকে উঠেছিল, আর তখনই ছুটে পালিয়ে গিয়েছিল। কালীথানের দাওয়ার উপর একটা সাংঘাতিক চেহারার বাঘ টান হয়ে শুয়ে রয়েছে। সেইদিনই সন্ধ্যায় টোরির জঙ্গলের একেবারে বুকের ভিতর থেকে বাঘের ডাকের শব্দ উথলে উঠে দশটা গাঁয়ের বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিল। কোথা থেকে এল এই বাঘ? এতদিন এই জঙ্গলের যত গাঁয়ের গোরু মেরেছে খেঁকি নেকড়েরা, বড় বাঘের হাঁক-ডাক ও উপদ্রব ছিল না। হ্যাঁ, পাঁচ বছর আগে একটা বাঘ তিন-চারদিন ধরে হাঁক-ডাক করেই আবার উধাও হয়ে গিয়েছিল। ফিরে আর আসেনি।
রাখাল ছেলেটা যতই ভীরু স্বরে আর গলা কাঁপিয়ে ভয়ানক এক বাঘের আগমনের বার্তা বলে বেড়াক না কেন, গাঁয়ের মানুষ একদিনেই বুঝে ফেলল যে, এই বাঘ যে-সে ও যেমন-তেমন বাঘ নয়। একজন ভক্ত-বাঘ। নইলে কালীথানের দাওয়ার উপর এসে শুয়ে থাকবে কেন?
তাই সব, গাঁয়ের মানুষ পরামর্শ করে ওই ব্যবস্থা করে ফেলেছে। পালা করে শনি ও মঙ্গলবার এক-একটা গাঁয়ের মানুষ কালীথানে এসে পাঁঠাবলি দেয়। ঘটনার বিস্ময়টা নানা মুখের কথায়-কথায় আরও ফেঁপে উঠেছে। এদিকে পালামউয়ের লাতেহার আর ওদিকে হাজারিবাগের চাতরা মহকুমার সদর শহর পর্যন্ত গল্প রটে গিয়েছে যে, টোরি জঙ্গলে এক ভক্ত-বাঘের আবির্ভাব ঘটেছে। কালীথানের প্রসাদী মাংস ছাড়া সে অন্য কিছু খায় না।
সব শুনে হেসে ফেলে রামতনু—আপনার কথা বিশ্বাস করেও আবার বিশ্বাস করতে পারছি না, ভাণ্ডারীজি।
ভাণ্ডারীজিও হেসে ফেলেন—এই তো, মাত্র এক দিন হল আপনি এখানে এসেছেন। কিছুদিন থাকুন, তারপর নিজেই বুঝতে পারবেন।
রামতনু—কী বুঝতে পারব?
ভাণ্ডারীজি—বুঝতে পারবেন যে, জঙ্গলের গাঁয়ের মানুষদের বিশ্বাসটা মিথ্যে নয়। এ-বাঘ সত্যই ভক্ত-বাঘ।
ভট ভট, ভট ভট, দুরন্ত এক ছুটন্ত মোটর সাইকেলের শব্দ শুনে টোরি-বনসিরি সড়কের দুই পাশের দুই সারি গাছের মাথা থেকে পাখির দল উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, ময়না বুলবুল শালিক আর হরিয়াল ঘুঘু। মোটর সাইকেলের সঙ্গে যুক্ত সাইডকারও ছুটে আসছে। কে ওরা?
মোটর সাইকেলের আরোহী হলেন একজন লালমুখো খাঁটি সাহেব, আর সাইডকারে যিনি বসে আছেন, তিনি হলেন পুলিশের অফিসারি উর্দিপরা একটি দেশি মানুষ। দেখে একটু আশ্চর্য হয় রামতনু, মোটর সাইকেলের শব্দের ভটভটানি ঠিক তসিল কাছারির বেড়ার কাছে এসে থেমে গেল।
লালমুখো সাহেব তাঁর দুই কড়া চোখের দৃষ্টি তুলে আর রামতনুর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন, হাম হ্যায় রেলওয়াইকা ইঞ্জিনিয়ার বড়াসাহেব, মিস্টার স্টিল।
পুলিশের থানাদার দারোগার উর্দিপরা ব্যক্তিটি বললেন—হাম হ্যায় রিজুয়া থানাকা দারোগা, বলবন্ত রায়।
রামতনু—শুনে খুশি হলাম।
মিস্টার স্টিল—পাঁচ বছর ধরে কত খোঁজ করেছি, কিন্তু কোনও খোঁজ পাইনি। এখন জানতে পেরেছি, রিজুয়া ফরেস্টের সেই ম্যানইটার পালিয়ে এসে টোরির এই ফরেস্টে ঢুকেছে।
দারোগা—চৌকিদার রিপোর্ট করেছে, এই টোরি জঙ্গলের ভিতরে কয়েকবার বড় বাঘের হাঁক শুনতে পাওয়া গিয়েছে। এখন আপনি বলুন, আপনারা এই ম্যানইটারের কোনও নতুন খবর জানেন কি না?
রামতনু—আমি কোনও ম্যানইটারের কথা শুনিনি, কোনও খবর জানি না।
এইবার ভাণ্ডারীজির দিকে তাকিয়ে গলা ছাড়েন মিস্টার স্টিল—তুম বোলো বুড্ঢা, ম্যানইটারকা কুছ খবর বোলো।
ভাণ্ডারীজি ভ্রূকুটি করেন—আমি কিছুই বলতে পারব না।
দারোগা বলবন্ত রায়—আমি শুনেছি ম্যানইটার প্রায়ই এই কালীথানের কাছে এসে ঘুরঘুর করে, বলির পাঁঠার বাসি রক্ত চেটে নিয়ে চলে যায়।
ভাণ্ডারীজি—শুনেছেন যখন, তখন অবশ্যই শুনেছেন।
দারোগা বলবন্ত রায়—জঙ্গলের যত গাঁয়ের মানুষ বিশ্বাস করে, এটা একটা ভক্ত-বাঘ। তাই না?
রামতনু—হ্যাঁ।
মিস্টাব স্টিল আর রিজুয়া থানার বলবন্ত রায়, দু’জনে কালীথানের চারদিকের মাটির উপর চোখ রেখে আর ঘুরে ফিরে যেন একটা তল্লাশি চালালেন। হুর্রে, এ কী দেখছি! আনন্দের আবেগ সহ্য করতে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন মিস্টার স্টিল। ভক্ত-বাঘের থাবার চার-পাঁচটা ছাপ তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। হ্যাঁ, কোনও সন্দেহ নেই, এইসব ছাপ সেই ম্যানইটারেরই সামনের পায়ের বাঁ দিকের থাবার ছাপ। থাবার এক ইঞ্চি পরিমাণ অংশের কাটা-যাওয়া ফাঁকটারও কী স্পষ্ট চিহ্ন এইসব ছাপের মধ্যে ফুটে রয়েছে।
সড়কের উপর দাঁড়িয়ে স্টিল এইবার টোরি-বনসিরি জঙ্গলের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়েই পাইপ ধরালেন। জঙ্গলের চেহারাটা যেন সবুজ তরঙ্গের একটা উপসাগর এবং এই উপসাগরের বিস্তার যেন দিগ্বলয়ের রেখার কাছে গিয়ে ফুরিয়েছে। এর মধ্যে ম্যানইটারকে খুঁজে বের করা চারটিখানি সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু মিস্টার স্টিলের ভাগ্য ভাল, ম্যানইটারের সন্ধান জানিয়ে দিচ্ছে ম্যানইটারেরই থাবার ছাপ। ওই তো সড়কের এদিকের জঙ্গলের ভিজে মাটির ওপর ম্যানইটারের থাবার অনেক ছাপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। একেবারে টাটকা ছাপ। কোনও সন্দেহ নেই, আজকের শেষরাতে বাঘটা এদিকে এসে ঘোরাফেরা করেছে।
মিস্টার স্টিল বলেন—ওয়েল ডারোগা, হামারা অর্ডার শুনো।
বলবন্ত রায় বিনয়াবনত ভঙ্গিতে কুঁজো হয়ে গিয়ে কথা বলেন—বলুন হুজুর।
মিস্টার স্টিল—ঠিক এখানে আমার তাঁবু কেনবার ব্যবস্থা করে দাও। একটা বড় তাঁবু, তার সঙ্গে লাগোয়া একটা ছোট তাঁবু। একটা খাটিয়া ও একটা চেয়ার। আর, আমার শিকারের কাজে খাটবার জন্য একজন খোঁজি ও একজন চাকর চাই। শিয়ালের ডাক ডাকতে পারে, এরকম একজন ভাল হাঁকোয়া চাকর।
দারোগা বলেন—আমি কালই সব ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু মনে রাখবেন হুজুর…
মিস্টার স্টিল—ইয়েস ইয়েস। অবশ্যই মনে রাখব। হ্যাঁ, পরশুদিন এসে শিকারের মাচানে বসব।
দারোগা—আমি কালই কুলি লাগিয়ে মাচান তৈরি করিয়ে দেব। জঙ্গলের কোনদিকে কত ভিতরে কোন গাছে মাচান বাঁধব হুজুর?
মিস্টার স্টিল—জঙ্গলের খুব ভিতরে নয়। জঙ্গলের ঠিক ওখানে, ওই যে দেখছেন, গ্রেট ওকের মতো চেহারার ওই গাছের উপরে অন্তত কুড়ি ফুট উঁচুতে মাচান বাঁধবেন। উইকেড ম্যানইটার ভয়ানক উঁচু লাফ দিতে পারে।
শিকারি সাহেবটা আর কতদিন আমাদের এই টোরি জঙ্গলে ঢুকে বাঘটাকে গুলি করে মারবার চেষ্টায় মেতে থাকবেন? রামতনুর উত্তেজিত মেজাজের প্রশ্ন শুনে ভাণ্ডারী কপিলবাবু বেশ একটু বিচলিত হয়ে ও নরম নরম উপদেশ দিয়ে রামতনুকে শান্ত করতে চেষ্টা করেন।—আপনি সাহেবের সঙ্গে কোনও ঝগড়া গণ্ডগোল বাধাবেন না রামতনুবাবু। ঠাকুরসাহেবের কাছে অভিযোগ করেও কোনও সাহায্য আপনি পাবেন না। টোরি জঙ্গলে ঢুকে এই সাহেবের শিকার খেলবার শখের বিরুদ্ধে ঠাকুরসাহেব কোনও আপত্তি করতে সাহস করবেন না। গণ্ডগোল করতে গিয়ে আপনিই বিপদে পড়বেন। মনে রাখবেন, পালামউ রাঁচি আর হাজারিবাগ তিন জেলার তিন ডেপুটি কমিশনার হলেন তিন খাঁটি সাহেব। স্টিলসাহেবকে সাহায্য করবেন তিন জেলার সব সাহেব। আপনি গণ্ডগোল করে বাধা দিলে আপনাকে কালাপানি দেখিয়ে দিয়ে ছাড়বে ওরা। বীর বিরসা বলেছিলেন—সাহেব সাহেব এক টোপি হ্যায়। তা ছাড়া আপনি হলেন বাঙালি, ক্ষুদিরামের জাতভাই।
সাহেবের শুধু চোখ দুটো কড়া নয়, তাঁর জেদ এবং ধৈর্যও খুব কড়া। আজ দশ দিন হয়ে গেল, মাচানে বসে আর বন্দুকে টোটা লোড করে নিয়ে রাত কাটিয়েছেন মিস্টার স্টিল, কিন্তু ম্যানইটারের একটা সামান্য আবছায়াও এক মুহূর্তের জন্য তাঁর মাচানের কাছে আসেনি। মাচানের নীচে একটা জ্যান্ত টোপ সারা রাত ব্যা ব্যা করে ডাক ছেড়েছে। শক্ত দড়ির বাঁধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে সারা রাত ছটফট করেছে সেই টোপ, একটা জ্যান্ত ছাগল। কিন্তু কী নির্লোভ বাঘ! কিংবা কী ধূর্ত বাঘ! বাঘটা ছাগল খেতে আসেনি।
বার বার কতবার মাচান বদলালেন মিস্টার স্টিল! জঙ্গলের এক মাইল ভিতরে গিয়ে নতুন মাচান তৈরি করিয়েছেন। কিন্তু বৃথা, বৃথা তাঁর সারা রাত জাগা অপেক্ষা। বন্দুকটাও যেন অপেক্ষার ক্লান্তি সহ্য করতে গিয়ে নেতিয়ে পড়ে, সাহেবের হাতের শক্ত মুঠো শিথিল হয়ে যায়। তবু আশা ছাড়েন না মিস্টার স্টিল। তিনি রাগ করে খোঁজিটাকেই ধমক-ধামক করেন। সাহেবের মতে এই খোঁজি লোকটার মুখটা শজারুর মুখের মতো দেখতে। খোঁজিটা বাঘের যাওয়া-আসার ঠিকপথের সন্ধান দিতে পারছে না। শুধু আন্দাজে এদিক-ওদিকে নতুন মাচা বাঁধতে পরামর্শ দিয়ে সাহেবের টাকা খরচ করিয়ে দিচ্ছে। সাহেবের সন্দেহ লোকটা ইচ্ছে করে সাহেবকে হয়রান করাচ্ছে।
খোঁজিটা হাত জোড় করে কথা বলে—নেহি হুজুর, আমি আপনাকে ঠিক রাস্তা দেখিয়েছি। লেকিন…।
সাহেব গর্জন করেন—কেয়া লেকিন?
খোঁজি—ছাগল-টোপ দিয়ে কাজ হবে না।
সাহেব—কেন?
খোঁজি—এ তো মানুষখেকো বাঘ। মানুষের মাংসের স্বাদ জানে।
সাহেব—ইয়েস!
খোঁজি—সেই জন্যেই বলছি, এই বাঘকে ঘায়েল করতে হলে, মাচানের নীচে একটা মানুষ-টোপ বেঁধে রাখা চাই।
সাহেব—হোয়াট ননসেন্স! কেয়া বোলতা হ্যায় তুম?
খোঁজি—আমি খুব ঠিক কথা বলছি হুজুর।
সাহেব হেসে ফেলেন,—বাস, ঠিক হ্যায়। আমি তবে তোকেই টোপ করে মাচানের নীচে বেঁধে রাখব।
খোঁজি—না গরিব পরবর, আমাকে টোপ করে কোনও লাভ হবে না।
সাহেব—কেন লাভ হবে না?
খোঁজি—আমার এই শুকনো রোগা চেহারার মাংস খেতে কোনও বড় বাঘের ইচ্ছে হবে না।
খোঁজির হাঁটুতে আস্তে একটা লাথি মেরে সাহেব আবার হাসেন—তুমি খুব চালাক আদমি।
খোঁজি—আমি বেশ বুঝতে পারছি হুজুর, বেশ তাজা ও পুষ্ট চেহারার একটা মানুষকে যদি টোপ করা হয়, তবে বাঘ লোভ সামলাতে পারবে না।
সাহেব—ননসেন্স!
খোঁজি—সত্যি একটা জ্যান্ত তাজা-মোটা মানুষকে টোপ করতে বলছি না হুজুর। বলছি, ছেঁড়া কাপড় দিয়ে একটা পুষ্টু মানুষের মূর্তি তৈরি করে নিয়ে, তার গায়ে জামা-কাপড় চড়িয়ে দিয়ে যদি মাচানের নীচে রাখা হয়, তবে কাজ হবেই হবে। আমি গল্প শুনেছি হুজুর, মধুডিহির রাজাসাহেব এইবকম নকল মানুষের মূর্তিকে টোপ করে অনেক মানুষখেকো বাঘ শিকার করেছিলেন।
সাহেব—অ্যাঁ, সত্যি কথা?
খোঁজি—আমি শুনেছি হুজুর, নিজের চোখে দেখিনি।
সাহেব—যা-ই হোক, তবে জ্যান্ত ছাগলের টোপে আর দরকার নেই। একবার পরীক্ষা করেই দেখা যাক। ভাল করে একটা রোবাস্ট চেহারার মানুষের মূর্তি তৈরি করে ফেল। খুব জলদি কর।
খোঁজি—আমি নয় হুজুর, টোরি বস্তিতে একজন দরজি আছে, সে ছেঁড়া কাপড় দিয়ে নিখুঁত চেহারার নকল মানুষের মূর্তি তৈরি করতে পারে। একশো টাকা মজুরি নেয়।
সাহেব—ঠিক হ্যায়, ড্যাম একশো টাকা!
যেমন প্ল্যান, তেমনি কাজ। দশ দিন পরে সত্যিই ছেঁড়া কাপড় দিয়ে তৈরি একটা নকল মানুষের মূর্তিকে জঙ্গলের গভীরে নতুন মাচানের নীচে রেখে মিস্টার স্টিলের শিকার ক্রিয়ার নতুন অধ্যায় শুরু হয়ে গেল।
মিস্টার স্টিল অবশ্য জানেন না যে, জঙ্গলের তিন গাঁয়ের মানুষ কালীথানে এসে মানত করে গিয়েছে—হেই মা, তিনজোড়া পাঁঠা একসঙ্গে বলি দিয়ে তোমার পুজো করব, সাহেব যেন ভক্ত-বাঘকে মারতে না পারে। সাহেবের বন্দুক থেকে গুলি ছুটবার আগে বন্দুকটা যেন ফেটে গিয়ে দু’ টুকরো হয়ে যায়।
প্রথম দিনেই বুঝতে পারা গেল, জংলি গেঁয়োদের মানত সফল হয়েছে। বাঘটা কখন যে মাচানের কাছে এল আর কখন যে চলে গেল, একটুও টের পাননি শিকারি মিস্টার স্টিল। কিন্তু এ কী কাণ্ড, বাঘটার এ কী অদ্ভুত রসিকতা। ভোরবেলা মাচান থেকে নীচে নেমেই সাহেব দেখতে পেলেন, নকল মানুষের মূর্তিটা রক্তমাখা হয়ে পড়ে রয়েছে। মূর্তির গলাটা পেটটা আর বুকটার সব ছেঁড়া কাপড় বাঘের থাবার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে আর রক্তমাখা হয়ে ঝুলছে।
কী ব্যাপার? ভুতুড়ে ঘটনাতেও এরকম অদ্ভুত কাণ্ড দেখতে পাওয়া যায় না। রক্ত কেন? রক্ত কোথা থেকে এল? কেমন করে এল?
খোঁজি বলে—সত্যি রক্তের ছোপ নয় হুজুর।
তবে কীসের ছোপ?
ওটা পলাশগাছের ছালের রসের ছোপ।
কেয়া বোলা?
বাঘেরা শখ করে মাঝে মাঝে যেমন নোনা মাটি চাটে, তেমনি শখ করে পলাশগাছের ছাল ছিঁড়ে নিয়ে চিবোয়। জঙ্গলের গাঁয়ের সব বুড়ো জানে, এটা বাঘের একটা শখের অভ্যেস। পলাশগাছের ছাল চিবিয়ে বাঘের দাঁতের ও মাড়ির খুব সুখ হয়।
ম্যানইটার কি তবে আমাকে ঠাট্টা করবার জন্যে…
না, ঠিক তা নয় হুজুর। বাঘটা বোধহয় আগেই পলাশগাছের ছাল চিবিয়েছিল। তারপর রাত্রিবেলায় এক ফাঁকে চুপিচুপি এসে আমাদের এই নকল মানুষ-টোপটাকে চিবিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে।
তাঁবুতে ফিরে এসেই এক মগ গরম চা খেলেন মিস্টার স্টিল। তারপর মোটর সাইকেল চালিয়ে রাঁচি চলে গেলেন। বলে গেলেন—আমি এক সপ্তাহ পরেই আবার আসছি। আমার প্রতিজ্ঞা, এই ম্যানইটারকে আমি মারবই মারব।
খোঁজি লোকটা রক্তমাখা নকল মানুষের ছেঁড়া মূর্তিটাকে টেনে নিয়ে এসে সড়কের এক পাশে ফেলে রেখে দেয়। পথচারী লোক দেখতে পেয়েই হেসে ওঠে। বাঃ, ভক্ত-বাঘ শুধু ভক্ত নয়, বেশ রসিকও বটে। মনে হচ্ছে, সাহেব খুব রেগেছে।
রিজুয়া থানার দারোগা বলবন্ত রায়ের কাছে মিস্টার স্টিল তাঁর জীবনের একটা সমস্যার কথা একদিন মুখ খুলে বলে ফেলেছিলেন। দারোগা বলবন্ত রায় সে-কথা টোরি স্টেশনের মাস্টার ভৃগুবাবু ও জেলাবোর্ডের টোরি হাসপাতালের ডাক্তার অবনীবাবুকে গল্প করে শুনিয়েছেন। গল্পটা তাই অনেকের কানে পৌঁছে গিয়েছে। বুড়ো ভাণ্ডারীজি আর তসিলদার রামতনুও শুনতে পেয়েছে। বেচারা স্টিলসাহেব! বাঘটাকে মারতে না পারলে ওর জীবনটাই যে মিথ্যে হয়ে যাবে! রেলওয়ের ডানকানসাহেবের রূপসী মেয়ে মিস বারবারা ডানকানের সঙ্গে তাঁর বিয়ের আশাটাই মুষড়ে পড়বে। তারপর হয়তো একেবারে ভেঙেই যাবে। ক্লাবের ঘরে গল্পের আসরে বসে সবারই সামনে একটা মোহময় আশার ইঙ্গিত একদিন ভাষিত করেছিল বারবারা।—ভয়ংকর ম্যানইটারকে মারতে পারে যে-মানুষ তাকে সত্যিকারের একজন হিরো বলে মনে করতে আমার কোনও আপত্তি নেই।
খোঁজি লোকটা আবার পরামর্শ দিল—একটা ময়ূর ছাড়ুন হুজুর। বলেন তো লাতেহার বাজার থেকে আমি একটা ময়ূর কিনে আনি। ময়ূরের অভ্যেস, জঙ্গলের ভিতরে বাঘকে দেখতে পেলেই উঁচু গাছের ডালের উপর বসবে আর চেঁচাবে। বাঘকে ধরিয়ে দিতে ময়ূরের খুব আনন্দ। কেউ কেউ বলে বাঘের ডোরাকাটা হলদে চেহারা দেখতে খুব ভালবাসে ময়ূর। যেখান দিয়ে বাঘ হাঁটাহাঁটি করবে, ময়ূর ঠিক সেখান দিয়ে গাছের মাথায় মাথায় উড়বে আর বসবে। ময়ূরের উড়ে চলার নিশানায় লক্ষ্য রেখে শিকারি যদি এগিয়ে যায়, আর ছোট একটা টিলার উপর উঠে দাঁড়ায়, তবেই চোখে পড়বে, ঘোর জঙ্গলের বাঘ কেমন চুপি-চুপি চলে যাচ্ছে। তখন এক গুলিতে বাঘের প্রাণ সাবাড় করে দিলেই হল।
আপত্তি করেন না মিস্টার স্টিল, যদিও খোঁজির মুখের কথাগুলিকে খুব বিশ্বাসও করতে পারেন না। তিন দিন সকালের দিকে, আর তিন দিন বিকেলের দিকে কেনা ময়ূরের কেরামতির দৃশ্য দেখলেন মিস্টার স্টিল। সকালের দিকে উত্তর থেকে দক্ষিণে, আর বিকেলের দিকে পুব থেকে পশ্চিমের দিকে গাছের মাথা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে ময়ূরটা উড়েছে। বিচক্ষণ শিকারি স্টিলসাহেব বুঝতে পারলেন, সকালের দিকে যদি বাঘটাকে পেতে হয়, তবে সড়কের বেশ নিকটের ওই ডুমুর গাছের উপর মাচান বাঁধলেই চলবে। ময়ূরটা সকালের দিকে পুব থেকে পশ্চিমের ওই ডুমুরগাছের কাছে এসেই যেন গতি বন্ধ করে দিয়ে ডুমুরের ডালের উপর বসে পড়ে। তবে তো বুঝতে হয় যে, বাঘটাও ওই পর্যন্ত এসে গতি থামিয়ে দেয়। হয়তো বাঘটা সেখানেই মাটির উপর বসে পড়ে আর সামনের দুই পায়ের এক জোড়া থাবার উপর মাথা রেখে ঘুমোতে থাকে। নয়তো শুধু হাই তোলে। এই অবস্থায় বাঘকে দেখতে পেলে এক গুলিতে সাবাড় করে দেওয়া খুবই সম্ভব, খুবই সহজ।
কী আশ্চর্য! এটাও কি একটা ধূর্ত কৌতুকের কীর্তি। ডুমুরগাছের উপরে মাচানে বসে পুরো পাঁচটা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাঘের আবির্ভাবের কোনও ছায়াও দেখতে পেলেন না শিকারি মিস্টার স্টিল! ময়ূরটাও কেমন যেন অলস হয়ে একটা গাছের মাথার উপর বসে আছে। ময়ূরটা কি অন্ধ হয়ে গেল? বাঘের আসা-যাওয়ার দৃশ্যটাকে দেখতেই পাচ্ছে না? কিংবা গাছের মাথায় মাথায় উড়ে জঙ্গলের ভিতরে চলন্ত বাঘকে ধরিয়ে দেবার অভ্যাসটাই ছেড়ে দিল?
মাচানের উপর সাহেবের পাশে বসেই চমকে ওঠে খোঁজি, যেন একটা ভয়ানক আশ্চর্যের দৃশ্য দেখতে পেয়েছে। ফিসফিস করে কথা বলে খোঁজি, হুজুর ওই দেখুন, কী আশ্চর্য, বাঘটা সারা গায়ে কাদা মেখে, যেন চেহারাটাকে ঢাকা দিয়ে কাদা দিয়ে তৈরি একটা অদ্ভুত জন্তুর মতো আস্তে আস্তে হেঁটে চলে যাচ্ছে। না, ময়ূরের দোষ নেই। ভুলও করেনি ময়ূরটা। ওই অদ্ভুত কাদামাখা প্রাণীকে কী করেই বা চিনতে ও বুঝতে পারবে ময়ূরটা, ওটা যে একটা বাঘের কাদামাখা চেহারা?… কিন্তু যাক গে, পালিয়েছে বাঘটা।
রাগ করে ও গলার স্বর গরম করে নিয়ে খোঁজিকে ধমক দিলেন মিস্টার স্টিল— তুমি কী বলতে চাও, বলো। বাঘটা কি আবার একটা ঠাট্টার খেলা দেখিয়ে দিল? বাঘটা কি ইচ্ছে করে সারা গায়ে কাদা মেখে চেহারাটাকে পালটিয়ে দিয়েছে আর ময়ূরের চোখ দুটোকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে দিয়েছে?
খোঁজি—কী করে বলব হুজুর। ময়ূরের বুদ্ধি হল ময়ূরের বুদ্ধি, বাঘের বুদ্ধি হল বাঘের বুদ্ধি।
ঘটনার কথা রটে যেতে দেরি হয়নি। দু’দিনের মধ্যেই রটে গেল, কেনা ময়ূর লাগিয়ে ভক্ত-বাঘের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন স্টিলসাহেব, কিন্তু ভক্ত-বাঘ শিকারি সাহেবটাকে একেবারে বুদ্ধু বানিয়ে ছেড়েছে।
মিস্টার স্টিলের ভাগ্যে আরও কঠিন একটা ঠাট্টার আঘাত একদিন আঃখ্ আঃখ্ শব্দ করে বেজে উঠল। সবেমাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। প্রিয় দোনলা ম্যান্টনকে আঁকড়ে ধরে মাচানের উপর বসে আছেন শিকারি মিস্টার স্টিল। এ হেন এক চমৎকার গোধূলিবেলার শেষ লগ্নের ক্ষণে মিস্টার স্টিলের দুই চোখ সহসা বিস্ফারিত হয়ে জ্বলজ্বল করে। বাঘটা মাচানের ঠিক নীচে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই মুহূর্তে প্রিয় দোনলা ম্যান্টনের ট্রিগার টিপলেন সাহেব। বার বার দু’বার। কিন্তু প্রিয় ম্যান্টনের কোনও নলের মুখ থেকে শব্দ করে গুলি ছুটে বের হল না। বন্দুকের চেম্বার হঠাৎ জ্যাম হয়েছে। আঃখ্ আঃখ্, বার কয়েক যেন ভয়ানক বিরক্ত-হওয়া প্রাণের একটা আক্ষেপের শব্দ ছেড়ে দিয়ে বাঘটা চলে গেল। কিংবা হতে পারে, ওটা ভয়ানক একটা ঠাট্টার আঃখ্ আঃখ্ শব্দ।
মিস্টার স্টিল বুঝলেন, তাঁর ভাগ্যটাই তাঁকে ঠাট্টা করেছে। নইলে, যে বন্দুকের চেম্বারে এই পাঁচ বৎসরের মধ্যে কোনওদিনও কখনও জ্যাম হয়নি, সেই বন্দুক কেন একটা সুবর্ণ-সুযোগের লগ্নে এভাবে হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যাবে?
মিস্টার স্টিল টোরি তসিল কাছারির দাওয়াতে উঠে রামতনুকে ইংরেজি ভাষাতে তাঁর প্রতিজ্ঞার কথাটা শুনিয়ে দিয়ে গেলেন। হাসছ কেন ম্যান? বাঘটাকে মারতে বারবার ফেল করেছি বলে? তবে জেনে রাখো, আমার নাম যেমন স্টিল, আমি নিজেও তেমনি স্টিল। আমি দমে যাবার ও নুয়ে পড়বার মতো মানুষ নই। আমার প্রতিজ্ঞার কথাটা দু’জনেই শুনে রাখো, ইউ ইয়ং ম্যান আর ইউ বুড্ঢা ম্যান, এক মাসের মধ্যে আমি এই ম্যানইটারকে মেরে ফেলব। রিজুয়া জঙ্গল থেকে পালিয়ে এই জঙ্গলে চোরের মতো লুকিয়ে থাকলেও আমার বন্দুকের মার থেকে ওর প্রাণ রেহাই পাবে না।
শিকারি মিস্টার স্টিলের নতুন চেষ্টা সম্বন্ধে শুধু এইটুকু জানতে পেরেছে রামতনু, তিনি নতুন বন্দুক কেনবার জন্য কলকাতায় গিয়েছেন। মিস্টার স্টিলের তাঁবুর অবস্থা দেখবার জন্য রিজুয়া থানার দারোগা বলবন্ত রায় একদিন টোরিতে এসে অনেক খোঁজখবর নিলেন। বাঘটা কি সত্যিই একটা ভক্ত-বাঘ? ওকে গুলি করে মেরে ফেলা কি সত্যিই কারও সাধ্যি নয়? তসিল কাছারিতে এসে খবরটা শুনিয়ে গেলেন দারোগা বলবন্ত রায়—এবার কিন্তু আপনাদের ভক্ত-বাঘের আর রক্ষে নেই। শিগগির এসে পড়বেন মিস্টার স্টিল, বেশ দামি একটা নতুন হল্যান্ড অ্যান্ড হল্যান্ড কিনেছেন সাহেব।
কিন্তু ওদিকে সবার গোপনে মিস্টার স্টিলকে তিনি একটা চতুর বুদ্ধিময় পরামর্শ দিয়েছেন। জানতে পেরে খোঁজিটা আর হাঁকোয়া চাকরটা অনেকেরই কানে খবরটা তুলে দিয়েছে। বাঘটাকে গুলি করে মেরে গৌরবের ও বীরত্বের একটা ট্রফির মতো মোটর ট্রাকের ওপর চড়িয়ে নিয়ে মিস্টার স্টিল একেবারে রাঁচির ইউরোপিয়ান ক্লাবের চোখের কাছে, আর একবার বারবারা ডানকানের চোখের কাছে উপস্থিত করবেন। তা হলেই তো তাঁর জীবনের অন্য স্বপ্নটি সফল হয়ে যাবে। তাই মিস্টার স্টিলকে একটা সুপরামর্শ দিয়েছেন দারোগা বলবন্ত রায়—আমি বলি, একটা মরা ছাগলের গায়ে বিষ মাখিয়ে আপনি জঙ্গলের ভিতরে কোথাও রেখে দিন। প্রথম দিনে না হোক দ্বিতীয় দিনে, দ্বিতীয় দিনে না হোক, তৃতীয় দিনে বাঘটা এসে লোভে লোভে ছাগলটাকে নিশ্চয়ই খেয়ে ফেলবে। তারপর আধ ঘণ্টার মধ্যে মরে যাবে। আপনি তখন জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে এক গুলিতে মরা বাঘটাকে মেরে ফেলবেন। কে বুঝবে, ওটা বিষ খেয়ে মরা বাঘ, না আপনার বন্দুকের গুলি খেয়ে মরা একটা দুরন্ত বাঘ? আপনার শিকার-কীর্তির ট্রফি, বিরাট এক ম্যানইটারের ডোরাকাটা দেহটাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে মিস বারবারা ডানকান। তারপর আর কোনও সমস্যাই থাকবে না। তারপর আপনি শুধু মনে রাখবেন হুজুর, অন্তত রায়সাহেব খেতাব না পেলে আমার…।
সাহেব—ও ইয়েস, খুব মনে থাকবে, আমি ডেপুটি কমিশনারের কাছে রায়সাহেব খেতাবের দাবিদার হিসাবে তোমার নাম রেকমেন্ড করব।
তসিল-কাছারির সবাই এবং টোরি বস্তির আরও অনেকে জেনে ফেলেছে, সাহেবের শিকারের কাজের খোঁজি আর চাকর একটা মরা ছাগলের গায়ে ভয়ানক কড়া বিষ মেখে দিয়ে জঙ্গলের ভিতর রেখে এসেছে। কেন? বুঝতে দেরি হয়নি কারও, সাহেব মবা বাঘের উপর গুলি চালাবার মতলব ধরেছেন। কেন? তা-ও সবারই জানা হয়ে গিয়েছে।
মিস্টার স্টিল ঠিক তৃতীয় দিনের সকালবেলায় জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে বিষমাখানো মরা ছাগলের অবস্থাটা দেখলেন। একই অবস্থা। বিষমাখানো মরা ছাগলের শরীরটাকে স্পর্শও করেনি বাঘ। কিন্তু সেই মরা ছাগলেরই পাশে রাখা একগাদা নাড়িভুঁড়ির অর্ধেকটা খেয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে বাঘটা। কী ব্যাপার? কোথা থেকে নাড়িভুঁড়ির এই গাদা এখানে এল?
সাহেব রাগ করে চেঁচিয়ে উঠলেন—এটা আবার কী ব্যাপার?
খোঁজি বলে—জি হাঁ, হুজুর। বাঘটা খুবই ধূর্ত। কালীথানের কলিতলার গর্ত থেকে পাঁঠার একগাদা নাড়িভুঁড়ি তুলে নিয়ে এসেছে, আর এখানেই বসে মজা করে খেয়েছে।
সাহেব—তবে তো বুঝতে হয় যে, বাঘটা আবার আমাকে ঠাট্টা করেছে।
জঙ্গলের বাইরে এসে আর তসিল-কাছারির সামনের সড়কে মোটর সাইকেলের সিটের উপর বসে গর্জন করেন মিস্টার স্টিল—শুনে রাখো তসিলদার, শুনে রাখো ইউ ভাণ্ডারী, ইউ বুডঢা হায়েনা, আমি আবার আসছি, ম্যানইটারের ধূর্ত প্রাণটাকে আমি আমার এই নতুন হল্যান্ড অ্যান্ড হল্যান্ডের এক গুলিতে সাবড়ে দেব আর এইখানে ওটাকে শুইয়ে রেখে ওর বুকের উপর আমার এই বুটপরা একটা পা তুলে দিয়ে ফটো তোলাব।
ভট ভট শব্দ করে মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে গেলেন মিস্টার স্টিল।
ভক্ত-বাঘের কীর্তির কথা চমৎকার রকমের একটা মহিমার কথা হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেই সঙ্গে রাঁচির রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার বড়সাহেব মিস্টার স্টিলের ভয়ানক প্রতিভার কথাও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কালীথানে পুজো দিয়ে এসে জঙ্গলের গাঁয়ের মানুষ বেশ বিষণ্ণ ভীরু ভীরু স্বরে রামতনুকে জিজ্ঞাসা করে—কী হবে, তসিলদারজি? সাহেব কি সত্যিই ভক্ত-বাঘকে মেরে ফেলতে পারবেন?
রামতনুও বিষণ্ণ স্বরে জবাব দেয়।—আমাকে এ-সব কথা জিজ্ঞাসা করবেন না। আমি ঠিক করে কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই ঠিক করে কিছুই বলতে পারব না।
এক দিন দু’দিন তিন দিন, শীতের দিনের কুয়াশামাখা দিনগুলি একের পর এক চলে যাচ্ছে। আট-দশ দিন পরে একদিন অনেক রাতে ভক্ত-বাঘের ডাক টোরি জঙ্গলের বাতাস কাঁপিয়ে দিল। সকালবেলা ঘরের বাইরে এসে দাওয়ার উপর দাঁড়াতেই রামতনুর মনে একটা সন্দেহ চমকে ওঠে। কী যেন অদ্ভুত রকমের একটা কাণ্ড হয়েছে। সড়কের উপর কিছু লোক এরই মধ্যে ভিড় করেছে। ডুমুরগাছের ছায়ার কাছে ঝিরিয়া নালার জলের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে, কী যেন ভাবছে।
আবার চমকে ওঠে রামতনু, ঝিরিয়া নালার স্রোতের কিনারাতে সবুজ-নরম ঘাসের উপর, যেখানে একদিন শুয়ে পড়েছিল এক সাধুজির ইচ্ছামৃত্যুর নিষ্প্রাণ দেহটা, ঠিক সেইখানে পড়ে রয়েছে নিষ্প্রাণ এক বাঘের শরীর। মরেছে, মরে পড়ে রয়েছে ভক্ত-বাঘ। চেহারা দেখেই বুঝতে পারা যায়, ভক্ত-বাঘ বেশ বুড়ো হয়েছে। তাই আয়ু ফুরিয়েছে। না, ভক্ত-বাঘ কোনও শিকারির গুলি খেয়ে কিংবা বিষ খেয়ে মরেনি। তবে কি নিজের ইচ্ছায় মরেছে?
চেঁচিয়ে ওঠে রামতনু—হতে পারে, আমার বিশ্বাস ভাণ্ডারীজি, ভক্ত-বাঘ নিজের ইচ্ছায় মরেছে।
বেলা বাড়ছে। এরই মধ্যে সাত-আটটা শকুন উড়ে এসে ভক্ত-বাঘের শরীরটাকে ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খেতে শুরু করেছে। কেঁদে ফেললেন ভাণ্ডারীজি,—আমিই তবে গঙ্গাস্তব করে ভক্ত-বাঘের সব হাড্ডি তুলে নিয়ে ঝিরিয়া নালার দহের জলে ফেলে দেব।
ভট ভট ভট ভট। দুরন্ত বেগে শব্দ ছুটিয়ে মিস্টার স্টিলের মোটর সাইকেল ছুটে আসছে। ভিড়ের সবারই চোখের দৃষ্টি যেন একসঙ্গে দপ করে জ্বলে ওঠে। থমকে দাঁড়ায় মিস্টার স্টিলের মোটর সাইকেল। সাহেবের কাঁধে চকচকে হল্যান্ড অ্যান্ড হল্যান্ড ঝুলছে।
ততক্ষণে ভক্ত-বাঘের অর্ধেক, শরীরের সব মাংস খেয়ে ফেলেছে শকুনির দল। মিস্টার স্টিলের দুই চোখ কুঁকড়ে গিয়ে কাঁপতে থাকে—অ্যাঁ, কী লজ্জা, ম্যানইটারের এই দশা!
কেয়া বোলা রে সাহেব? লোকের ভিড় হঠাৎ উগ্র হয়ে মিস্টার স্টিলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
সেই মুহূর্তে ব্যস্ত হয়ে মোটর সাইকেল স্টার্ট করে দিলেন মিস্টার স্টিল। ভট ভট। ভট ভট। যেন একটা ব্যর্থ প্রতিজ্ঞা ও বিফল স্বপ্নের বুকফাটা আওয়াজ ছুটে পালিয়ে গেল।
১৩৮৬
অলংকরণ: সমীর সরকার
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন