হাবুলমামার ভূতের ব্যবসা এবং… – দুলেন্দ্র ভৌমিক

পৌলোমী সেনগুপ্ত

অনেকদিন পর হাবুলমামার চিঠি পেলাম। হাবুলমামা থাকেন কৃষ্ণনগর টাউন ছাড়িয়ে একটু ভেতরের দিকে। মাঝে-মধ্যেই কলকাতা আসেন আর এলেই অন্তত একটা রাত আমাদের বাড়িতে থেকে যান। হাজার অনুরোধ করলেও একরাতের বেশি তাঁকে কখনও রাখা যায়নি। হাবুলমামার সেই একই উত্তর, “শুধু তোদের এখানে থাকলেই হবে, এই শহরে সিকি ডজন বোন আর হাফ ডজন ভাগনে-ভাগনি ছড়িয়ে আছে, তাদের কাছেও একটু যেতে হবে। তা ছাড়া আমার মির্জাপুরের মেসে একরাত্তির না কাটালে ওরা দুঃখ পাবে।”

হাবুলমামা নাকি দীর্ঘকাল কলকাতার মির্জাপুরের একটা মেসে থাকতেন। কলকাতায় বোমা পড়ার ভয়ে সবাই যখন কলকাতা ছেড়ে পালাতে ব্যস্ত, তখন মেসের মালিক নাকি মামাকে মেসে রেখে নিজেও আরামবাগে চলে গিয়েছিলেন। দেশের বাড়ি থেকে ফিরেছিলেন যুদ্ধ থামবার পর। ভেবেছিলেন তাঁর মেস বুঝি লাটে উঠেছে। কিন্তু মেসের সামনে এসে তাঁর চক্ষু ছানাবড়া। বাড়িটা নতুন রং করা হয়েছে, ঘরভর্তি গিজগিজ করছে লোক। সুটকেস হাতে তাঁকে দেখে মেসের নতুন ম্যানেজার হাতজোড় করে বললেন, “দুঃখিত, আমাদের এখানে কোনও জায়গা নেই।”

মেসের মালিক নিবারণবাবু ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আজ্ঞে, এই মেসে হাবুল হালদার বলে এখন কেউ আছেন?”

ছোকরা ম্যানেজার সঙ্গে-সঙ্গে বলে উঠলেন, “আজ্ঞে আছেন।”

হাবুলমামা ওপর থেকে নেমে আসতেই নিবারণবাবু মামাকে দেখে হাউহাউ করে কেঁদে উঠে বলেছিলেন, “হাবুলদা, এই মেস কার?”

হাবুলমামা উত্তর দিয়েছিলেন, “আপনার।”

মামার উত্তর পেয়েও নিবারণবাবুর কান্না থামে না। কাঁদতে কাঁদতেই বলে চলেন, “মেসের এমন বাড়-বাড়ন্ত হল কেমন করে?”

হাবুলমামা নিবারণবাবুর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলেছিলেন, “কলকাতায় বিস্তর কাবুলির কাছ থেকে আপনার নামে টাকা ধার করেছি। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছি বোমা-প্রুফ, অর্থাৎ বুলেট-প্রুফ পদ্ধতিতে বাড়িটা তৈরি। এই মেসে থাকলে সহজ কিস্তিতে টাকা ধার দেওয়া হয়। এখানে যত বোর্ডার দেখছেন তার সবই উত্তমর্ণ আর অধমর্ণ। টাকা ধার দেবার জন্যে কাবুলিওয়ালা আছে, আর ধার নেবার জন্যে লোকও আছে। মানে পার দেবার ও ধার নেবার দু’পক্ষই এই মেসে আছেন। দিব্যি চলছে।”

অতএব, মেস ছাড়ার পর সেই নিবারণবাবু হাবুলমামার দুটি হাত ধরে বিস্তর কেঁদেকেটে অনুরোধ করেছিলেন, “কলকাতায় এলেই একটিবার আপনার পায়ের ধুলো এই মেসে দেবেন।”

হাবুলমামা বলেছিলেন, “পায়ের ধুলো দিতে পারব না। আমার পায়ে জুতো থাকে। জুতোর ধুলোতে যদি আপত্তি না থাকে, তবে তা দিতে পারি।”

নিবারণবাবু বিষম খেয়ে বলে উঠেছিলেন, “আজ্ঞে, তাই দেবেন।”

অতীতের সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে হাবুলমামা কলকাতা এলেই একটি রাত ওই মেসে কাটিয়ে যান। হাবুলমামা সম্পর্কে আরও একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভাল যে, হাবুলমামা অভ্যাসবশে কখনও চিঠি লেখেন না। তাঁর কাছ থেকে চিঠি আসা মানেই একটা দারুণ চাঞ্চল্যকর কোনও সংবাদ আসা। অনেকে যেমন নববর্যে, বিজয়ায় আত্মীয়দের কাছে চিঠি দেয়, মাঝে-মধ্যে পত্রালাপ করে কুশল জানতে চায়, হাবুলমামার মধ্যে সে-সব নেই। যেমন বছরদুয়েক আগে হাবুলমামা একবার চিঠি দিয়ে জানালেন, ‘গত মাস থেকে ভূতের ব্যবসা করছি। ব্যবসা বেশ ভালই চলছে। ব্যবসায় নেমে দেখছি জগতে ভূতের কোনও অভাব নেই। ভূত নেবারও অনেক লোক অর্থাৎ খদ্দের পাওয়া যাচ্ছে, সবই বিদেশি খদ্দের। এই একটা ব্যবসা, যেখানে ডিমান্ডের চাইতে সাপ্লাই বেশি। আগ্রহ থাকলে চলে আয়।’

এমন জিনিস দেখবার আগ্রহ কার না হয়। অতএব, কালবিলম্ব না করে পরদিন দুপুরেই লালগোলা ধরে কৃষ্ণনগরে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। মামার বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নামতেই আমি চমকে উঠে দেখলুম যে বসবার ঘরের দরজার ওপরে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে, তাতে লেখা ‘ভূত-বিপণি’। নীচে অপেক্ষাকৃত ছোট অক্ষরে লেখা আছে, ‘রকমারি ভূত অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেওয়া হয়।’

আমি যখন ভূত-বিপণির মালিক হাবুলমামার মুখোমুখি হলাম, তখন দেখি একজোড়া সাহেব-মেম মামার সামনে বসে ভূতদের দরদাম এবং স্বভাব-চরিত্র নিয়ে আলোচনা করছেন। মামার মাথার পেছনে পাঁচরকম ভাষায় ভূতের মূল্য-তালিকা টাঙানো রয়েছে। মামা চোখের ইশারায় বসতে বললেন। আমি দেখলাম মূল্য-তালিকায় রয়েছে ব্রহ্মদত্যি পাঁচশো টাকা, মামদো ভূত তিনশো টাকা, গেছো ভূত তিনশো টাকা, শাঁকচুন্নির দেখলাম তিনরকম শ্রেণী। ওদের দাম তিনশো থেকে সাড়ে চারশোর মধ্যে। সবচেয়ে কম দাম ভাগাড়ে ভূতের, মাত্র দেড়শো টাকা, জলা-ভূত আড়াইশো আর কন্ধকাটার পাশে লেখা আছে ‘আউট অব স্টক।’

একজোড়া সাহেব-মেম অনেকক্ষণ কথা বলে একপিস মামদো ভূতের জন্য কড়কড়ে একশো টাকা অগ্রিম দিয়ে রসিদ নিয়ে গেলেন। সাহেব-মেম চলে যেতেই হাবুলমামা বললেন, “লালগোলায় এলি?”

আমার বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। আমি অবাক চোখে আমার কীর্তিমান মামাকে দেখতে দেখতে বললাম, “লালগোলাতেই এলাম। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা কী? এত রকমের ভূত পাচ্ছ কোথায়?”

মামা বললেন, “চল, ভেতরে চল। স্নান-টান করে খেতে বসার সময় ভূত ধরার কায়দাটা তোকে শিখিয়ে দেব।”

স্নান-খাওয়ার জন্য আমার কোনও আগ্রহই ছিল না। আমি স্রেফ ভূতেদের ব্যাপারটা জানার জন্য অধীর ছিলাম। সেজন্য খেতে বসে আমিই বললাম, “তোমার ভূতগুলো থাকে কোথায়?”

মামা ভাতের থালা টেনে নিতে নিতে বললেন, “কেন, আমাদের পৈতৃক খামারবাড়িতে। তা ছাড়া জায়গা কোথায় বল! ফাই-ফরমাশ খাটার জন্যে দু’-তিনটে ভূত অবশ্য এ-বাড়িতে রেখে দিয়েছি।”

দিনের বেলা হলেও আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি বললাম, “ওরা কোন ঘরে আছে?”

মামা ভাত চিবোতে-চিবোতে খুব সহজ গলায় বললেন, “বললাম না, ফাই-ফরমাশ খাটার জন্য রেখেছি, তা ওদের ঘরে আটকে রাখলে কাজ করবে কী করে।”

আমার শরীরের বোধহয় সব ক’টা রোমকূপ ততক্ষণে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি বললাম, “ওরা তোমার এখানে কী কাজ করে?”

মামা আগের মতোই সহজ গলায় বললেন, “যে তোকে ইঁদারা থেকে স্নানের জল তুলে দিল, সেটা একটা মামদো, আর ইঁদারার পাশে বসে যে বাসন মাজছিল, সেটা ভাগাড়ে। গেছো একটা আছে। ওটাকে পাঠিয়েছি আমার সিগারেট আনতে।”

আমি ইঁদারার দিকে তাকালাম। মামদোটা আমারই দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে দেখে আমার নিশ্বাস ফুরিয়ে এল। হাতে ভাত তুলেছিলুম খাব বলে, সেগুলো হাত থেকে ঝুরঝুর করে পাতে পড়ে গেল।

যেন কিছুই ঘটেনি এমন ভাব করে মামা বললেন, “ও কী, খাচ্ছিস না কেন? রান্না ভাল হয়নি?”

আমি জবাব দেওয়ার আগেই মামা বললেন, “চিংড়ির বাটি-চচ্চড়িটা খেয়ে দেখ, দারুণ হয়েছে।”

মামা যখন সঙ্গে আছেন, তখন কোনও অঘটন ঘটবে না এই ভরসায় চিংড়ির বাটি-চচ্চড়িটা দিয়ে ভাত মেখে যখন মুখে তুলতে যাব ঠিক তখনই মামা বেশ গর্বের সঙ্গে বললেন, “একটু বেশি কথা বলে বটে, কিন্তু শাঁকচুন্নিটার রান্নার হাত অতি চমৎকার। চিংড়িটা রেঁধেছে বড় ভাল। যে-কোনও ফাইভস্টার হোটেলের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে। রাত্রে মাংসের দো-পেঁয়াজি রাঁধতে বলব, দেখবি কেমন খাসা বানায়।”

এরপর খাওয়াব মতো সাহস আর আমার ছিল না, কিন্তু খাবার ছেড়ে উঠে যাবারও উপায় নেই। হাত ধুতে যেতে হবে সেই ইঁদারার কাছে, সেখানে মামদো আর ভাগাড়ে পাশাপাশি রয়েছে। মামার এই বাড়িতে একতলায় খানসাতেক ঘর, ওপরে খানচারেক। কোন ঘরে যে কারা কারা রয়েছেন, সেটা নিশ্চিন্তভাবে জানা না থাকায় খাবার টেবিলেই বসে-বসে ঘামতে লাগলুম।

চরম বিপদ ঘনিয়ে এল রাত্রিবেলা। মামার আর আমার পাশাপাশি ঘর। ইচ্ছে ছিল একঘরেই থাকি। কিন্তু মামা আমার জন্যে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছেন, আপত্তি করতে যাবার আগে মনে হল মামা যদি আমাকে ভিতু ভেবে ফেলেন। ভেতরের দরজাটা খোলা রইল। বিছানায় শুয়ে-শুয়ে ভাবলাম, কাল দুপুরের লালগোলা ধরে কলকাতা চলে যাব। বিছানায় শোবার পর মামার কথা থেকে জানা গেল, গেছো নাকি আমার বিছানা পেতে দিয়ে গেছে। এ-কথা শোনার পর কে আর ঘুমোতে পারে। আমি তো ভয়ে কাঠ হয়ে শুয়ে আছি। ও-ঘর থেকে মাঝে-মধ্যেই মামা হাঁকছেন, “ওরে মামদো, খোকার ঘরে খাবার জল রেখে আয়। রাতে যদি তেষ্টা পায়।”

একটু পরেই অন্ধকারে টেবিলের ওপর জল রেখে যাওয়ার শব্দ শোনা গেল। খানিক বাদে মামা হাঁকলেন, “ভাগাড়ে, বৃষ্টি এলে খোকার জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে তুই বারান্দা থেকে খোকার ঘরে শুয়ে পড়িস।”

একজন লোককে ভয়ে ভাবনায় আর অতীব উৎকণ্ঠায় রাত জাগিয়ে রাখার পক্ষে মামার এইসব হাঁকড়ানি যথেষ্ট। সারারাত্রি আমার ঘুম এল না। শেষরাতের দিকে বৃষ্টি আসতেই আমার শিয়রের জানালা পটপট করে বন্ধ করে দিল, বোধহয় ওটা ভাগাড়ের কাজ। এর পরই ওর আমার ঘরে এসে শোবার কথা। আমি উঠে বসলুম। বিলক্ষণ টের পেলুম, কেউ একজন আমার ঘরে এসে মাদুরজাতীয় কিছু একটা বিছিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি যার ভয়ে বিছানায় উঠে বসে জেগে রইলুম, সেই ভাগাড়ে ভূত আমারই ঘরে দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে লাগল। ভূতের কি নাক ডাকে? আমি ঠিক জানি না, কেননা, ইতিপূর্বে কোনও ভূতের সঙ্গে একঘরে রাত্রিবাসের অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। এখন বুঝছি, ওরাও দিব্যি মানুষের মতো নাক ডাকে, অন্তত ভাগাড়ে-ভূত যে ডাকে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ আর রইল না। ঘর বদলে মামার কাছে যাবারও উপায় নেই, কে জানে হয়তো মামার ঘরের মেঝেতে মামদো শুয়ে আছে। হাবুলমামা, মামদো আর ভাগাড়ে এই তিনজনের নাকের ডাকে মনে হচ্ছে দুটো ঘরের মধ্যে একটা হুন্ডা মোটরসাইকেল চক্কর মারছে।

সকাল হবার একটু আগে বসে-বসেই ঝিমুনি এসেছিল। ওরই মধ্যে মাদুর গোটাবার সড়সড় শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি শ্রীমান ভাগাড়ে মাদুর বগলে চলে যাচ্ছে। সারারাতে যখন কোনও দুষ্টুমি করেনি, তখন দিনের বেলায় নিশ্চয়ই করবে না এই বিবেচনা করে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লুম। ঘুম থেকে উঠে দেখি মামা নেই। তাড়াতাড়ি নীচে নামলুম। মামা ততক্ষণে তাঁর ‘ভূত-বিপণি’ খুলে বসে গেছেন। মামার মুখেই শুনলুম, আজ একজোড়া মামদো ডেলিভারি হবে। খামারবাড়িতে ডেলিভারি-ভ্যান চলে গেছে। এক সাহেব দাঁড়িয়ে ছিলেন ভূত ডেলিভারি নেবার জন্যে। আগামীকাল ওই একজোড়া মামদো নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন। ভূতেদের পাসপোর্ট পেতে যে কী ঝামেলা হয়েছে সেই কথা সবিস্তারে বলছিলেন সাহেবটি। খানিক বাদেই ডেলিভারি-ভ্যানে চেপে একজোড়া মামদো এল। ডেলিভারি-ভ্যান মানে তিন চাকার সাইকেলরিকশা-ভ্যান। মামদো দু’জন বসে ছিল ভ্যানের ওপর। ছেলে হোস্টেলে যাবার সময় বাবা যেমন গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে উপদেশ দেন, মামাও তেমনই মামদো দুটোর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, “মন দিয়ে কাজ করবে, একদম দুষ্টুমি করবে না। কোম্পানির গুড-উইল যেন তোমাদের জন্য খারাপ না হয়।”

সাহেব তাঁর গাড়িতে মামদো দুটোকে বসিয়ে বললেন, “একেবারে মানুষের মতো দেখতে। মানুষের মতো বিহেভ করবে তো?”

মামা গ্যারান্টি-কার্ড সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, “ভূত তো মানুষ থেকেই হয়। তা ছাড়া কোম্পানির ট্রেনিং-এর একটা দাম তো আছেই। শুধু ওদের কোনও অন্যায় কাজ করতে বলবেন না, মারধোর করবেন না, তা হলেই ওরা ট্রেনিং ভুলে নিজ মূর্তি ধারণ করবে এবং নির্বিঘ্নে আপনার ঘাড়টি মটকাবে। তাই বলে লাই দিয়ে আবার ঘাড়েও তুলবেন না। ভূত যদি একবার ঘাড়ে চাপে তা হলে নামানো কঠিন এবং ব্যাপারটা আপনার পক্ষে ডেঞ্জারাস।”

সেদিন দুপুরে যথারীতি শাঁকচুন্নির রান্না কলাইয়ের ডাল, আলুপোস্ত আর ডালের বড়ি দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল খেয়ে সাইকেলরিকশা-ভ্যান, অর্থাৎ যাতে করে সকালের দিকে একজোড়া মামদো ডেলিভারি হয়েছিল, সেই ভ্যানে চেপে মামা-ভাগনে মিলে খামারবাড়িতে ভূতের গো-ডাউন কাম ট্রেনিং সেন্টার দেখতে গেলাম। দেখবার মতো ব্যাপার বটে। বিঘে-চার জুড়ে বড় আকারের খামারবাড়ি। মাঝখানে বিঘেখানেক নিয়ে একটা পুকুর, বিস্তর নারকেলগাছ, সুপুরি, আম আর জামরুলেরও বেশ কয়েকটা গাছ আছে। খামারবাড়িতে সবজি-টবজি ফলাবার ব্যবস্থাও রয়েছে। আমার মনে পড়ল, একদা হাবুলমামা এখানে হাঁস-মুরগির পোলট্রি করেছিলেন। সকাল-বিকেল গোটাআষ্টেক ডিম তিনি একাই খেতেন। বন্ধু-বান্ধব এলে মুরগির মাংস রান্না হত। ব্যবসা এমনিতেই উঠত, কিন্তু আরও তাড়াতাড়ি উঠে গেল হাঁস-মুরগির মড়ক লাগার জন্য।

আমি খামারবাড়িতে ঢুকতে যাবার মুখে জিজ্ঞেস করলুম, “এখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা সবাই কি ভূত?”

মামা বললেন, “অফকোর্স! এটার নাম হচ্ছে ভূতনিকেতন। নাম যাই হোক, ভূত সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয় ট্রেনিংয়ে, তারপর এখান থেকে দেশ-বিদেশের খদ্দেরদের কাছে চালান যায়।”

খামারবাড়ির মধ্যে ঢুকে আমি তাজ্জব বনে গেলুম। মামার গো-ডাউনে এত ভূতের স্টক আছে সেটা আমার অনুমানের বাইরে। মামাকে দেখে বিভিন্ন জাতের খানকয়েক ভূত এগিয়ে এল। মামা ওদের মধ্যে একজনকে উদ্দেশ করে বললেন, “এই যে বাবা গেছে, খানকয়েক ডাব পাড় দিকি। ভাগনেকে ডাব খাওয়াই।”

মামার আদেশ পাওয়ামাত্র একটা লিকলিকে ভূত দৌড়ে গিয়ে সামনের নারকেলগাছটায় তরতরিয়ে উঠতে লাগল। খানকয়েক মহিলা-ভূতও দেখলাম। খানিকটা শাঁকচুন্নির মতোই দেখতে। আমি ফিসফিস করে বললাম, “মামা, এখানে ব্রহ্মদত্যি নেই?”

মামা বললেন, “আছে বই কী। দাঁড়া দেখাচ্ছি।”

মামা এগিয়ে গিয়ে ডাকলেন “ও ব্রহ্মি, ব্রহ্মি।”

একটা জোয়ান চেহারার ছোকরা ব্ৰহ্মদত্যি বেরিয়ে এল, তার হাতে আবার একটা বই। ভূতের বই পড়ার অভ্যাস আছে সেটা কখনও শুনিনি। মামাকে বললাম, “ও কি পড়াশোনা করে নাকি?”

মামা বললেন, “ব্রহ্মিটা এইট পর্যন্ত পড়েছে। তারপর বিস্তর চেষ্টা করেও ওকে আর নাইনে তোলা যায়নি। তারপর ব্যাটা ভূত হয়ে গেল। ওই এখানে অন্যদের একটু-আধটু পড়ায়। ভূতেদের ফরেন যেতে হলেও একটু লেখাপড়া জানা দরকার।”

ঘণ্টাখানেক খামারবাড়িতে মামার পেছন পেছন বিস্তর মামদো, গেছো, জলা, ভাগাড়ে আর খানচারেক ব্রহ্মিদত্যির সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সত্যি বলতে কী, আমার ভূতের ভয়টাই চলে গেল। ভূত যে এমন বাধ্য আর বিনয়ী হয়, সেটা আমি জানতাম না। সবক’টা ভূতই একেবারে মানুষের মতো দেখতে। দুটো ভাগাড়ে ভূতকে কাজ করতে-করতে ডিসকো নাচতেও দেখলাম।

মামার সঙ্গে বাড়িতে ফিরেই প্রথম প্রশ্ন করলাম, “ভূতগুলো তো ঠিক ভূতের মতো নয়— ঠিক যেন মানুষ। ওরা কি সত্যিকারের ভূত?”

মামা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, “সত্যিকারের ভূত তুই কখনও দেখেছিস?”

আমাকে বলতেই হল, “আমি কখনও দেখিনি।”

মামাও সঙ্গে-সঙ্গে বললেন, “কেউই কখনও দেখেনি। মিথ্যেবাদীরা ছাড়া কেউ বলবে না সে ভূত দেখেছে।”

আমি বললাম, “তবে এরা কারা?”

মামা দেওয়ালে হেলান দিয়ে বললেন, “ভূত মানে কী?”

আমি উত্তর দিলাম, “ভূত মানে ভয়ংকর একটা প্রাণী। যাঁদের আত্মার সদগতি হয় না, তাঁরা সব ভূত হয়।”

মামা বললেন, “লোকে বলে, মানুষের অপঘাতে মৃত্যু হলে সে ভূত হয়। তার কামনা-বাসনা নিয়ে সে আমাদের চারপাশে ঘোরে। এই থিওরি অনুসারে আমার এখানে যাদের দেখলি, তারা সবাই ভূত। দারিদ্র্যের অপঘাতে, অশিক্ষার অপঘাতে, মহাজনদের অপঘাতে, জাত-পাতের অপঘাতে এরা সবাই মারা গেছে। চেহারায় মানুষ, কিন্তু মানুষের সমস্ত রকম অধিকার থেকে এরা বঞ্চিত। অথচ কামনা-বাসনা, বাঁচবার ইচ্ছা কোনওটাই মরেনি শুধু মানুষ হিসাবে মরে গেছে। অতএব, এরা হচ্ছে, এই কমপিউটারের যুগে একেবারে খাঁটি ভূত। এ-দেশে মানুষের চাইতে ভূতের বাজারদর বেশি। তাই ওদের নিয়ে ভূতের ব্যবসা খুললুম। যারা কিনছে তারা ভূত ভেবেই কিনছে। বাড়িতে কাজ করাচ্ছে, পয়সা দিচ্ছে আর খাওয়া থাকার বন্দোবস্ত করছে। যাদের সাহেব-খদ্দের জুটছে তারা বিদেশেও চলে যাচ্ছে। মানুষ হলে ওদের কেউ নিত? সুতরাং মানুষ হয়ে যখন কিছু হল না, তখন ভূত সাজিয়ে ওদের একটা খাওয়া-থাকার হিল্লে করে দিলাম। আমারও দু’-চার পয়সা হল। এই ভূতের গুষ্টিকে দু’বেলা খাওয়াতে তো কম খরচ হচ্ছে না।”

হাবুলমামার ভূতের ব্যবসা অবশ্য বেশিদিন চলেনি। পুলিশ আর স্থানীয় কিছু লোকের ঝামেলায় এই ব্যবসা শেষ পর্যন্ত তুলে দিতে হয়েছে। বেশি নয়, হাজার-আষ্টেক টাকা লোকসান হয়েছে মাত্র।

দু’বছর পর আবার হাবুলমামার চিঠি এল। খুবই সংক্ষিপ্ত চিঠি, ‘সময় থাকলে চলে আয়। দারুণ মজাদার ব্যাপার।”

একবার গিয়ে ভূতের খপ্পরে পড়েছিলুম, এবার কী ঘটিয়েছেন কে জানে। হয়তো দত্যি-দানবের ব্যবসা শুরু করেছেন বিবেচনা করে সঙ্গে একজন কাউকে নেওয়া ঠিক করলুম। আমাদের পাড়ার অতি পুরাতন ক্লাবের নাম ‘জাগরণ সঙ্ঘ’, শরীর-চর্চায় এই ক্লাবের যথেষ্ট খ্যাতি আছে। বিশেষ করে ক্লাবের গৌরব অতি সম্প্রতি যার জন্য চড়-চড় করে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার নাম সুবল পাল। বডিবিল্ডার হিসাবে তিন বছর আগেই সে গোবরডাঙাশ্রী হয়েছিল, সম্প্রতি কলিকাতাশ্রী এবং এই বছরেই সে বেঙ্গলের হয়ে যাচ্ছে কেরলে। আমাদের ক্লাবের ধারণা, ইন্ডিয়ার সেরা তো সে হবেই, আর সেটা হতে পারলে তাকে নির্ঘাৎ পাঠানো হবে এশিয়ান গেম-এ। আমাদের লক্ষ্য এশিয়া থেকে সুবলের সোনা জেতা। গায়ে তেল-টেল মেখে সে যখন বুকের ছাতি, হাতের গুলি, পায়ের ডিম আর পিঠের মাস্‌ল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়, তখন আমরা তো কোন ছার, স্বয়ং সুবলের বাবাও হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। যেবার সুবল ‘আয়রনম্যান’ আখ্যা পেল, সেইবারেই এক বিশেষ প্রদর্শনীতে সুবল তার শরীরের নানা মাস্‌ল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যখন দেখাচ্ছিল, তখন আনন্দে বিহ্বল হয়ে সুবলের বাবা সুদাম পাল হাঁ করে সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে তার ওপরের পাটির দুটি বাঁধানো দাঁত প্রদর্শনী-মঞ্চের কাছাকাছি কোথাও খুলে পড়ে যায়। সেটা আর পরে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জাগরণ সঙ্ঘের তহবিল থেকে আয়রনম্যানের বাবার দুটি দাঁত বাঁধানোর খরচ দেওয়া হয়। সুবলের ছোটকাকা ছিলেন বদমেজাজি। সে একবার রেগে সুবলকে ঘুসি মারতে গিয়ে কবজি মচকে গুরুতর আহত হয়ে পড়ে। সুবল অবশ্য পরে বলেছিল, “নেহাত ব্লাডের সম্পর্ক আছে তাই, নইলে মাস্‌লটা পুরোপুরি করলে আঙুল ভেঙে যেত। সুবল ছোটবেলা থেকেই শরীর-চর্চা করত। ওকে মারতে গিয়ে ওর মায়ের খানচারেক রুটি বেলার ডান্ডা ভেঙেছে।

আমি ভেবে-চিন্তে দেখলাম, এ-হেন সুবলই আমার সহায় হতে পারে। ওকে বলার সঙ্গে-সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। যাবার আগে কিলোদুয়েক ছোলা, কিলোখানেক মুগডাল, কিলোখানেক কাঁচা বাদাম সঙ্গে নিল। কেননা, রোজ সকালে ওগুলো ওর খেতে লাগে। রাত্রে ভিজিয়ে রাখে সকালে উঠে খায়। এবারও সেই লালগোলা ধরে যাওয়া এবং বিকেল-বিকেল পৌঁছনো। রিকশায় উঠতে যাবার সময় লক্ষ করলাম, রিকশাওয়ালা পর্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গে সুবলকে দেখছে। রিকশা মামার বাড়ির খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি বললাম, “কী হল, থামলে কেন?”

রিকশাওয়ালা খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল, “ওই তো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। এইটুকু হেঁটে চলে যান।”

ঝগড়া না করে নেমে পড়লাম। সুবল একটু ঝগড়া করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি বললাম, “মামা ভূতের ব্যবসা করত বলে অনেকেই ওই ভুতুড়ে বাড়িটাকে ভয় করে, বোধহয় সেইজন্যই কাছে যেতে চাইল না।”

আমরা সদর দরজায় দাঁড়িয়ে মামাকে ডাকলাম। মামা এসে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলে দিয়েই বললেন, “চুপ-চুপ ভেতরে আয়। একদম শব্দ করবি না। ও ঘুমোচ্ছে।”

আমি বললাম, “ও মানে কে?”

মামা উত্তর দিলেন, “আমার বন্ধু। তোদের আর এক মামা। ওর মেজাজটা আজ ঠিক নেই। একটু আগে ঘুমিয়েছে।”

আমরা চুপচাপ ভেতরে এলাম। সুবলের সঙ্গে আলাপ করে মামা খুব খুশি হলেন। সুবল বলল, “দেখবেন, দুর্বল আর ভিতু বাঙালির দুর্নাম আমি ঘোচাব। কেরলের পর আমি এশিয়ান গেম্‌সে ইন্ডিয়াকে রিপ্রেজেন্ট করব।”

মামা বললেন, “তোমার সুন্দর স্বাস্থ্য দেখে বড় আনন্দ হচ্ছে।”

সুবল আবার বড্ড বেশি কথা বলে। সে বলে উঠল, “এই স্বাস্থ্যের ভেতর যে কী পরিমাণ সম্পদ আর বিস্ময় আছে তার খানিকটা নমুনা কাল সকালে আপনাকে দেখাব।”

এবার আমার আর সুবলের থাকবার ব্যবস্থা হয়েছে নীচের তলার একটি ঘরে। পাশাপাশি দুটো খাটে। খাওয়ার সময় বললাম, “মজাদার ব্যাপারটা কোথায়?”

মামা বললেন, “আজ নয়, কাল দিনের বেলা দেখিস।”

সকালবেলা ঘুম ভাঙল সুবলের ডন-বৈঠক মারার হুম-হুম শব্দে। আমি উঠে বসার পর সুবল তোয়ালে দিয়ে শরীরের ঘাম মুছে নিয়ে বলল, “তোর মামাকে ডাক। এবার একটু স্যাম্পেল দেখিয়ে দিই।”

মামার বাড়িতে এবার এসে কোনও চাকর-বাকর দেখিনি। রাত্রের খাবার অন্য বাড়ি থেকে রান্না করে একজন দিয়ে গিয়েছিল। আমি মামাকে ডাকতে যাবার আগেই মামা এসে গেলেন। আয়রনম্যান সুবল তখন ছোলা, মুগ আর বাদাম একটা বাটিতে একসঙ্গে জল থেকে তুলে রাখছে। মামাকে দেখে বলল, “মামাবাবু, আয়রনম্যান সুবল পালের বডির বাহার একটু দেখবেন নাকি?”

মামা বললেন, “দেখাও।”

সুবল দেখাতে আরম্ভ করল। মামা বললেন, “বাঃ বাঃ, বহুত আচ্ছা।”

সুবল বলল, “পায়ের ডিম দেখুন।”

মামা অভিভূত কণ্ঠে বললেন, “দারুণ, তোমার সোনা নেয় কে?”

সুবল বলে উঠল, “আপনার বন্ধুকে ডাকুন। ওঁকেও একটু দেখিয়ে দিই।”

মামা একটু ইতস্তত করে বললেন, “ওকেও দেখাতে চাও? না থাক, ওকে দেখিয়ে কাজ নেই।”

সুবল বলল, “কেন, কাজ নেই কেন? উনিও দেখুন বাঙালি আজ কোথায় পৌঁছে গেছে।”

মামা তবুও বললেন, “ওকে ডাকা ঠিক হবে না। বরং আমিই দেখি।”

সুবল বলল, “উনি কি বাঙালি নন?”

মামা বললেন, “বাংলাতেই যখন থাকেন, তখন অবাঙালি বলি কেমন করে। আসলে আমার বন্ধুটিও খুব শক্তিমান। সে কারণেই দু’জনের মুখোমুখিতে যদি কিছু অনর্থ ঘটে…”

মামাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই সুবল বলে উঠল, “আপনার ভয় নেই, আমার দিক থেকে কোনও আক্রমণ ঘটবে না। আমি শুধু আমার বডিটা দেখাব।”

মামা বললেন, “কিন্তু ওর দিক থেকে যদি ঘটে।”

সুবল হেসে ফেলে বলল, “সেটুকু ঠেকাবার মতো ক্ষমতা এই দুটো হাত রাখে। ডাকুন না বন্ধুকে, দেখা যাক কেমন শক্তিমান। না হয় মামা-ভাগনেতে একটু গা-গরম করে নেওয়া যাবে। আমি এখন দারুণ মুডে আছি। আসছে মাসে কেরল যাচ্ছি বেঙ্গলের হয়ে, তারপর ইন্ডিয়ার হয়ে যাব টোকিওতে।”

মামা চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললেন, “তোমার যখন বডি দেখাবার শখ হয়েছে তখন বন্ধুকে ডেকে আনি।”

মামা উঠে গেলেন। সুবল এক খাবলা ছোলা মুখে ফেলে দিয়ে বলল, “তোর মামার কাছে খুব গপ্প মেরেছে, এখন আমার নাম শুনেই ঘাবড়ে গেছে। বেচারি এলে স্রেফ বুকের ছাতিটা একটু নাচিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলব, “প্লিজ হিট মি।”

সুবলের কথা শেষ হবার সঙ্গে-সঙ্গেই মামা ঘরে এলেন। সুবল বলল, “আমাদের আর-এক মামা কই?”

মামা বললেন, “আসছে।”

মামা দরজার বাইরে মুখ রেখে ডাকলেন, “বন্ধু, চলে এসো।”

সুবল বুকের ছাতি ফোলাতে মনোযোগী হল, আর তখনই দরজা দিয়ে মামার বন্ধু ঢুকলেন। প্রায় সাড়ে ছ’ফুট লম্বা, হলুদ গায়ে ডোরা-ডোরা দাগ, দরজার চৌকাঠের ভেতরে দুটো পা আর মাথা, বাকিটা দরজার বাইরে। নতুন মামাটি ঘরের মধ্যে মুখ বাড়িয়ে শুধু একটা হাই তুললেন আর তাতে তাঁর বিশাল মুখের ভেতর খসখসে একটা জিভ শুধু দেখা গেল। মাত্র এইটুকু দেখেই আমি বিছানার ওপর লাফিয়ে পড়ে মশারি আর চাদরের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। ওদিকে আয়রনম্যান সুবল পাল “ওরে বাপরে” বলে একটা লাফ দিয়ে বুকের ছাতি গুটিয়ে ঘরের মধ্যে কোথায় যে অদৃশ্য হল, দেখতে পেলুম না। দেখবার উপায়ও ছিল না।

মামার বন্ধুটি ধীরে-ধীরে ঘরে এলেন। মুখ বাড়িয়ে সুবলের ভেজানো ছোলা-বাদামের বাটিটা নিমেষে শূন্য করে মামার মুখের দিকে তাকালেন। মামা ডাকলেন, “আয়রনম্যান! ও আয়রনম্যান!”

কিন্তু সুবলের আর কোনও সাড়া পাওয়া গেল না।

বন্ধুকে ওপরে রেখে এসে মামা প্রথমে আমাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করলেন। নাইলনের মশারি, চাদর, পাশবালিশ, মশারির দড়ি— এইসব নিয়ে আমি এমনভাবে জড়িয়ে ছিলুম যে, উদ্ধার কাৰ্যটা খুব সহজ ছিল না। আমার সারা শরীর তখনও কাঁপছে। বিছানার বিবিধ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েই আমি মামাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে আরম্ভ করলুম। মামা আমাকে থামাবার চেষ্টা করতে করতে বললেন, “তোর শরীরে তো দেখছি ভূমিকম্প চলছে। এমন চললে তো হাড়ের কবজা খুলে যাবে রে।”

আমি খানিকটা সুস্থ হতেই আমরা দু’জনে মিলে আয়রনম্যান সুবলের সন্ধানে বেরোলাম। ঘরে এবং ঘরের বাইরে কোথাও সুবল নেই। বাথরুমের দরজা খোলা দেখে ভেতরে উঁকি মেরে দেখলুম, সেখানেও নেই। মামা খানিক ভেবে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যেতে-যেতে বললেন, “জল নড়ে কেন?”

মামার পেছন-পেছন আমিও বাথরুমের মধ্যে ঢুকে পড়লুম। মামা জলের চৌবাচ্চার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চুলের মুঠি ধরে সুবলকে জলের ভেতর থেকে টেনে তুলে বললেন, “আয়রনম্যান, বাঘের ভয়ে জলে ডুব দিলে কুমিরে খায়। তুমি তো চৌবাচ্চার জলে ডুবে মরবে। ছিঃ আয়বনম্যান, উঠে এসো।”

জল থেকে উঠে এসেই সুবল মামার পায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে বলল, “আমি বাড়ি যাব, মার কাছে আমাকে পাঠিয়ে দিন।”

মামা তোয়ালে দিয়ে আয়রনম্যানের শরীর মুছিয়ে দিতে-দিতে বললেন, ‘ভাগনে, আগে বাঘের বিবরণটা শোনো। আমার বন্ধুটি অহিংস এবং নিরামিষাশী। এ যদি হিংস্র হত, তা হলে অ্যাদ্দিনে কি আমাকে না খেয়ে রাখত।

কথাটা আমাদের উভয়ের মনে ধরল। সত্যিই তো, বাঘটা তো মামাকে খায়নি। মাংস নিয়ে তো বাঘের কোনও বাছবিচার থাকার কথা নয়। এমন তো নয় যে, হাবুলমামার চাইতে সুবলের মাংসটাই বেশি সুস্বাদু। মানুষের মধ্যে যেমন অনেকে আছেন পাঁঠার মাংস খান না, কেবল মুরগি খান। আবার কেউ শুধু পাঁঠা-খাসিই খান, মুরগি মুখেও তোলেন না। বাঘেদের তেমন থাকার কথা নয়।

মামা বলতে লাগলেন, “সোঁদরবনে বেড়াতে গিয়ে ওটাকে নিয়ে এলাম। ওখানে গিয়ে শুনলুম, সজনেখালিতে বিস্তর বাঘ দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে বন্দুক নেই। তাই একটা ফন্দি বার করলুম। সঙ্গে ছিল দু’শিশি কামপোজ। একটা কচি পাঁঠা কিনে তার পেট চিরে হাফ-কিলো ঘুমের বড়ি পুরে সেলাই করলুম। চারশো গজ নাইলনের দড়ি আর পাঁঠাটি বগলে নিয়ে ঢুকলুম বনের মধ্যে। পাঁঠার পায়ে দড়ি বেঁধে উঠে গেলুম গাছে। পাঁঠা রইল গাছের তলায়। ঘণ্টাখানেক পরে, আঁধার হতেই উনি এলেন। ঝোপের আড়াল থেকে একটু স্থির চোখে পাঁঠাটার দিকে তাকালেন। তারপর বিরাট এক লাফ দিয়ে এসে পড়লেন পাঁঠার ঘাড়ে। কামড়ে ধরে দে ছুট। বাঘ যত ছোটে, আমি তত দড়ি ছাড়ি। শেষে দেড়শো গজ দৌড়ে গিয়ে থামল। পেটে খিদে ছিল তো, তাই হালুম-হালুম করে খেল আর খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি নামলুম ওর ডিনারের পর। টর্চ মেরে দেখলুম, ঘুমোচ্ছে। এবার দড়ি দিয়ে হাত-পা বাঁধলুম, মুখে পরালাম লোহার জাল। বাঁশের মাচায় করে এনে ফেললুম লঞ্চে। রাত ফুরোবার আগেই এপারে এসে বন্ধুকে জিপে শোয়ালুম। দিব্যি ঘুমোচ্ছে তখনও। প্রথমে ভাবলাম চিড়িয়াখানায় ডোনেট করি। পরে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে ঠিক করলাম, না, ওকে পুষব। নিজে পোষার কথা ভাবতেই মনে হল, ঘরে নেবার আগে ওকে নখ-দন্তহীন করা দরকার। সেইরকম ভেবেই ওকে নিয়ে এলুম কলকাতার ওয়াটার্লু স্ট্রিটে আমার চিনে বহু বিখ্যাত ডেনটিস্ট মিউ ফিউ-এর চেম্বারে। সকালবেলা ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললুম, “ডিয়ার মিউ, পেশেন্ট আছে। সবক’টা দাঁত তুলতে হবে।”

মিউ ফিউ বলল, “এত সকালে আনলে কেন? খুব আর্জেন্ট কি?”

আমি বললাম, “ভেরি, ভেরি আর্জেন্ট।”

মিউ বলল, “এখনও মুখ ধোওয়া হয়নি। পেশেন্ট কোথায়?”

আমি বললাম, “গাড়িতে।”

মিউ বলল, “ওকে চেম্বারে বসাও।”

আমি বললাম, “ডিয়ার মিউ, চেম্বারে বসানো মুশকিল। কাজটা তোমাকে গাড়িতেই সারতে হবে।”

দাঁত তোলার যন্ত্র নিয়ে মিউ ফিউ গাড়ির দিকে আসতে আসতে প্রশ্ন করল, “পেশেন্ট কি আনকনসাস?”

আমি বললাম, “আপাতত তাই। কনসাস হলে আর তোলা যাবে না।”

মিউ ফিউ জিপ গাড়ির কাছে এসে বলল, “কোথায় তোমার পেশেন্ট?”

আমি জিপ গাড়ির পেছনের ঢাকনা তুলে পেশেন্টকে দেখাতেই দাঁত তোলার যন্ত্র রাস্তায় ফেলে দিয়ে বাসি মুখে বেচারি মিউ ফিউ রাজভবনের দিকে সেই যে দৌড় লাগাল, আজও সে তার চেম্বারে ফিরে আসেনি। অগত্যা ওই যন্ত্র দিয়ে দাঁত তোলার কাজটা আমাকেই করতে হল। দাঁত তোলার পর হাত-পায়ের নখও কেটে দিলুম। তারপর ভি আই পি দিয়ে সোজা কৃষ্ণনগর রোড ধরে বাড়ি চলে এলুম। আড়াই মাস বেঁধে রাখতে হয়েছে, তারপর থেকে আর বাঁধবারও দরকার নেই। দেখলি তো, পরিবারের একজন হয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিব্যি পোষ মেনে গেছে। কথাটথা বললে বেশ বুঝতে পারে।”

আমি এতক্ষণ পর ভয়ে-ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি ওকে অহিংস-মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছ?”

হাবুলমামা বললেন, “আমাকে খুব একটা চেষ্টা করতে হয়নি। দিনকয়েকের মধ্যেই বুঝে গেছে ও, একটা ছোট জঙ্গল থেকে আর-একটা বড় জঙ্গলে এসে পড়েছে। খবরের কাগজে খুন-হত্যা এ-সব ছবি দেখে ও খুব উদাস হয়ে যেত। তারপর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যা হত। এখানকার তেল-ঘি খেলে ওর অম্বল হত। তাই ওকে নিরামিষ খাওয়া শিখিয়ে দিয়েছি। এখন ব্রেকফাস্টে, লাঞ্চে, ডিনারে নিরামিষ ডিশ ওর খুব ফেভারিট।”

সুবল খাটের ওপর জড়সড় হয়ে বসে সব শুনছিল। আমি সুবলের পাশে। মামা বললেন, “আর তো ভয় নেই। চল, ওপরে গিয়ে চারজনে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করি। চল।”

সুবল উঠে দাঁড়াল এবং দাঁড়িয়েই বলল, “মামা আমি বাথরুমে যাব।”

মামা বললেন, “যাও।”

সুবল বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল, আর খুলল না। মামা আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওপরে নিয়ে এলেন। আমার নতুন মামাটি তখন ঢাউস একটা মোড়ার ওপর বসে। আমাকে দেখে দু’বার চোখ পিটপিট করলেন, আর তাতেই আমার মনে হল আমারও বাথরুম পাচ্ছে।

কিলোখানেক খই, ডজনখানেক কলা, দুধ আর পাউরুটি একসঙ্গে একটা গামলাতে মেখে নতুন মামাকে দেওয়া হল ব্রেকফাস্টের জন্য। পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে সেটি শেষ হতেই মামা তাঁকে দিলেন খানবিশেক আটার রুটি আর বেগুন ভাজা। সেটি শেষ হতেই শিশি থেকে বার করলেন খানদশেক জেলুসিল। মামা বললেন, “বেগুনভাজা খেল তো, তাই জেলুসিলটা দিয়ে রাখি।”

খাওয়া শেষ করে নতুন মামাটি ঘরের সোফায় গিয়ে বসে রইল। মামা বললেন, “ওর কোনও ঝামেলা নেই। দুপুরে গোবিন্দভোগের চালের ভাত, কলাইয়ের ডাল, একটা ভেজিটেবল কারি, পটলের দোরমা আর বোনলেস বয়েল্‌ড ফিশ। মাছটা দিচ্ছি শুধু প্রোটিনের জন্য। বিকেলে ডিমের পোচ, মুড়ির সঙ্গে আলুসেদ্ধ আর রাত্রে শুধু পাউরুটি আর ঝোলাগুড়।”

আমার অবস্থা তখনও যাচ্ছেতাই-রকমের খারাপ। কখনও ঘামছি, কখনও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, কখনও মনে হচ্ছে পেট মোচড়াচ্ছে। মামার সেদিকে কোনও খেয়ালই নেই। তিনি বলে যাচ্ছেন, “আত্মীয়স্বজনরা আর কেউ এ-বাড়িতে আসে না। একটাও সাহসী চাকর পেলাম না। এক ব্যাটাকে বলে-কয়ে এনেছিলুম। সে তো ওকে দেখামাত্র ইঁদারাতে লাফিয়ে পড়ল। শেষে দড়ি ফেলে হতভাগাকে টেনে তুলি। ওপরে উঠে সেই হতচ্ছাড়া আমাকেই ধাক্কা মেরে খিড়কির দরজা ভেঙে পালিয়ে গেল। আগে কত ছেলে চাঁদা নিতে আসত। ও আসার পর একজন চাঁদাওলাও আর এদিকে আসে না। আজ অবশ্য একটা সবান্ধবে খাবার জন্য নিমন্ত্রণ আছে।

আমি বললাম, “কোথায়?”

মামা বললেন, “মাঠপাড়ায় অষ্টপ্রহর কীর্তন হচ্ছে। সেখানেই প্রসাদ নেবার জন্য একটিবার যেতে হবে।”

আমি বললাম, “তোমার বন্ধু কোথায় থাকবে?”

মামা বললেন, “ওকে তো বাড়িতে একা রেখে যেতে পারি না। ওকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। তোরাও যাবি।”

দুপুরের পর আমরা বেরোলাম। সুবলও সঙ্গে-সঙ্গে জিপগাড়িটা পর্যন্ত এসে আমাকে বলল, “এই রাস্তাটা কোথায় গেছে রে?”

আমি বললাম, “কেষ্টনগর স্টেশনে।”

আমার উত্তর পাওয়ামাত্র আমার আয়রনম্যান সুবলসখা গাড়িতে না উঠে সেই রাস্তা ধরে এমন গতিতে দৌড় লাগাল, যে দেখে মামা বললেন, “বডিতে নয়, রানে ওকে ইন্ডিয়া থেকে এশিয়ান গেম্‌সে পাঠালে ছেলেটা সোনা পেতে পারত।”

দূর থেকে মাঠপাড়ার কীর্তনের আওয়াজ শোনা যেতে লাগল। মনে হল বেশ জম-জমাট আসর। মাঠপাড়ার একদিকে রেলের লাইন। কীর্তনের আসরের পেছন দিকটায় কচুরিপানা ঢাকা একটা এঁদো পুকুর, অন্যদিকে রেললাইন। জিপ থেকে মামা নামলেন। আমিও নামলাম। দুই প্রৌঢ় ভদ্রলোক কপালে ফোঁটা-তিলক কেটে সবাইকে অভ্যর্থনা করছিলেন। তাঁরা বিগলিত হয়ে বললেন, “আসুন, হাবুলবাবু, আসুন।”

মামা ডাকলেন, “বন্ধু এসো।”

জিপগাড়ির পেছন দিক থেকে লাফ দিয়ে মামার বন্ধু নামলেন। নেমেই এসে দাঁড়ালেন মামার পাশে। ব্যস, সেই প্রৌঢ় ভদ্রলোক দুটি শুধু একবার ‘বা-বা’ ডাক ছেড়ে আসরের দিকে ছুটলেন। আর তাই দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্তিবোধ করে মামার বন্ধুটি একটি মাঝারি ধরনের ডাক ছাড়তেই আসরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে গেল। মাথায় ময়ূরের পালক লাগিয়ে যিনি বংশীধারী বালক কৃষ্ণ সেজেছিলেন, সেই বালক লাফিয়ে পড়ল এঁদো পুকুরে। কচুরিপানার ওপরে শুধু ময়ূরের পুচ্ছটা জেগে রইল। গানের দল খোল, করতাল আর হারমোনিয়াম, অর্থাৎ যার হাতে যা ছিল তাই নিয়ে রেললাইন ধরে ছুটতে লাগলেন। হারমোনিয়াম যাঁর গলায় ঝোলানো ছিল তিনি যখন ছুটে যাচ্ছিলেন, তখন হারমোনিয়াম থেকে প্যাঁক-প্যাঁক করে একটা আওয়াজ উঠছিল। এক নিমেষে সব ফাঁকা হয়ে গেল। বড়-বড় কড়াইয়ে পড়ে রইল খিচুড়ি, ঘ্যাঁট আর শুকনো বোঁদে।

মামা হতাশ মুখে শুধু বললেন, “বাড়িতে তো নো মিল করে এসেছি। দেবার লোক যখন নেই তখন নিজেদেরই নিয়ে খেতে হবে।” মামা আর মামার বন্ধু খিচুড়ি, ঘ্যাঁট আর বোঁদে খেতে লাগলেন। আমরা যখন যাচ্ছি তখন লাইটের লোক এসেছিল জেনারেটরের জন্য পেট্রোলের টাকা চাইতে। সে দৃশ্যটা দেখে ‘আমার কী হবে গো’ বলে আছাড় খেতে-খেতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ল পুকুরে এবং কচুরিপানার নীচে গিয়েও যে তার শান্তি ছিল না সেটা বোঝা গেল, যখন দেখলাম খানিক পর-পর সে জল থেকে পানাসুদ্ধ মাথাটা তুলছে আর ‘আমার কী হবে গো’ বলে আবার তলিয়ে যাচ্ছে।

খাওয়া শেষ করে মামা বললেন, “তোর কী হবে কে জানে। আমার প্রসাদ নেওয়া হয়ে গেছে।”

আমরা তিনজনে জিপগাড়ি করে রওনা দিলাম। আমি আর বাড়ি ঢুকিনি। স্টেশনের রাস্তা ধরে সোজা স্টেশনে। গত ছ’মাসে মামার আর কোনও চিঠি পাইনি।

১৩৯৫

অলংকরণ: সুধীর মৈত্র

সকল অধ্যায়

১. প্রোফেসর হিজিবিজ্‌বিজ্ – সত্যজিৎ রায়
২. বাহাদুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩. কুমির – নরেন্দ্রনাথ মিত্র
৪. ননীদা – মতি নন্দী
৫. হর্ষবর্ধনের ভাগনে ভাগ্য – শিবরাম চক্রবর্তী
৬. কর্ভাস – সত্যজিৎ রায়
৭. বেণী লস্করের মুণ্ডু – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৮. টুম্পুর গল্প – সুকুমার দে সরকার
৯. বারীন ভৌমিকের ব্যারাম – সত্যজিৎ রায়
১০. বীর হওয়ার বিড়ম্বনা – শিবরাম চক্রবর্তী
১১. নন্দগুপি – লীলা মজুমদার
১২. পালোয়ান ভূত – মনোজ বসু
১৩. হিসাব – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
১৪. গান – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১৫. জ্যান্ত খেলনা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৬. মুড়ি – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
১৭. কর্নেল মিত্র – বিমল মিত্র
১৮. গুল-ই ঘনাদা – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১৯. ভয়ঙ্কর মুখোশ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
২০. দিনে ডাকাতি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
২১. গন্ধটা খুব সন্দেহজনক – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২২. মেজকর্তার খেরোখাতা – প্রেমেন্দ্র মিত্র
২৩. গোয়েন্দা বরদাচরণ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৪. সাধু কালাচাঁদের ফলাও কারবার – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
২৫. একটি ভুতুড়ে ঘড়ি – বিমল কর
২৬. বুনো হাতির বন্ধুত্ব – সমরেশ বসু
২৭. গোয়ায় গোগোলের প্রথম কীর্তি – সমরেশ বসু
২৮. ইঁদারায় গণ্ডগোল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. চোর সাধু – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৩০. টোরি জঙ্গলের ভক্ত-বাঘ – সুবোধ ঘোষ
৩১. জোনাকি-ভূতের বাড়ি – সমরেশ বসু
৩২. বনবিড়াল – বিমল কর
৩৩. ভয় ও ভূত – সুকুমার সেন
৩৪. সুপারমেন – সমরেশ মজুমদার
৩৫. রাত যখন বারোটা – অশোক বসু
৩৬. প্রেতাত্মার উপত্যকা – ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য
৩৭. আলুর চপ – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
৩৮. হাবুলমামার ভূতের ব্যবসা এবং… – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৯. অশোকের কাণ্ড – হর্ষ দত্ত
৪০. হারাধন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪১. হয়তো এইরকমই – আশাপূর্ণা দেবী
৪২. মহারাজা তারিণীখুড়ো – সত্যজিৎ রায়
৪৩. খুড়ো-ভাইপো – বাণী বসু
৪৪. সহযাত্রী – সত্যজিৎ রায়
৪৫. দারিৎসু – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৪৬. চার বুড়োর আড্ডা – আশাপূর্ণা দেবী
৪৭. রামপলের অন্তর্ধান রহস্য – রূপক সাহা
৪৮. দেয়ালা – অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪৯. শুভ জন্মদিন – জয় গোস্বামী
৫০. ইন্দ্রনাথ সামন্তের বাড়ি – সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন