দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি প্রসঙ্গে

বদরুদ্দীন উমর

১৯৭১ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতার অপরাধে বহু ব্যক্তিকে বাঙলাদেশ সরকার আটক করেছিলেন। এই আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কনভেনশন মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের অনেক নেতা ও কর্মী, শহর ও গ্রামাঞ্চলের অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ও বিত্তবান ব্যক্তি ছিলেন

এই আটক ব্যক্তিদের অধিকাংশই যে কোন না কোন প্রকারে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করেছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে সরকার মামলা খাড়া করতে সক্ষম হলেও অধিকাংশের বিরুদ্ধে সেটা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি প্রধানতঃ দুই কারণে।

প্রথমতঃ, এই সমস্ত আটক ব্যক্তিরা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করলেও তাদের সেই সহযোগিতার এমন কোন প্রমাণ তারা রাখেনি যেগুলি আইনগ্রাহ্য।

দ্বিতীয়তঃ, সরকারী প্রশাসন বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও বিচার বিভাগ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে কিছুদিন পর্যন্ত এমন অসংগঠিত অবস্থায় ছিলো যার ফলে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগ্রাহ্য প্রমাণ সংগ্রহ এবং সেই প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার অনুষ্ঠান সরকারের দ্বারা সম্ভব হয়নি।

যে সমস্ত ব্যক্তিকে সরকার পাকিস্তান বাহিনীর সাথে সহযোগিতার অভিযোগে আটক করেছিলেন ঠিক তাদের সমগোত্রীয় অথবা তাদের থেকে উচ্চ স্তরের অনেক সহযোগিতাকারীরাই শুধু যে বর্তমান সরকারের চোখে শাস্তিযোগ্য মনে হয়নি তাই নয়, সরকার তাদেরকে দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত করে এবং অন্যান্য নানাভাবে পুরস্কৃতও করেছেন। সহযোগিতাকারীদের মধ্যে এইসব তারতম্যের ফলে দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের নৈতিক অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই অনেকখনি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে এই সব আটক ব্যক্তিদের অনেকের জন্যেই জনগণের মনে সহানুভূতির সঞ্চার হয়।

১৬ই ডিসেম্বরের পর ভারত থেকে ফিরে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সরকারের লোকজন যেভাবে দালাল হত্যা এবং দালাল আটকের কাজে নিযুক্ত হয় তার মধ্যে যথেষ্ট নাটক ছিলো। নাটকের প্রথম পর্ব এইভাবে শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্বে দেখা গেলো অনেক রুই-কাতলা স্থানীয় দালাল ব্যক্তি সরকারের ছত্র-ছায়ায় আশ্রয় লাভ করে ক্ষমতা, প্রতিপত্তি এবং বিত্তের অধিকারী হয়েছেন। এই ক্ষমতাসম্পন্ন দালালরাই আটক দালালদের বিচারক ও শাস্তিদাতায় পরিণত হয়েছেন। নাটকের তৃতীয় ও শেষ পর্বে দেখা যাচ্ছে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। দ্বিতীয় পর্বে দালাল সম্পর্কীয় নাটক যে চরিত্র পরিগ্রহ করে তার ফলে এবং খোদ আটক সামরিক ব্যক্তিদেরকে পাকিস্তানের হাতে ফেরত দেওয়ার পর আটক ব্যক্তিদের প্রতি মহানুভব ‘ক্ষমা প্রদর্শনকে’ জনগণ স্বাভাবিকভাবেই ‘উড়ন্ত খই গোবিন্দায়ো নমঃ’ অর্থাৎ যে খই বাতাসে উড়ে যাচ্ছে তাকে গোবিন্দের চরণে সমর্পণ করার মতোই হাস্যকর মনে করছেন।

আটক ব্যক্তিদের মুক্তি বাঙলাদেশের রাজনীতিতে অথবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে কিনা সেটা বিবেচনার পূর্বে দেখা দরকার এই সমস্ত মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাধারণ চরিত্র কি।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এদের মধ্যে অধিকাংশই কোন-না কোনভাবে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করেছিলো। অর্থাৎ নীতিগতভাবে এরা ছিলো পাকিস্তানের সমর্থক এবং সাংগঠনিক দিক দিয়ে হয় মুসলিম লীগ অথবা জামাতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের সদস্য অথবা দরদী।

এই রাজনৈতিক অবস্থানের ভিত্তিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চরিত্র বিচার করলে দেখা যাবে যে, সাধারণভাবে তারা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। দ্বিতীয়তঃ, এই সাম্প্রদায়িক মনোভাবের জন্যে তারা ভারতবিরোধী। তৃতীয়তঃ, আন্তর্জাতিক দিক দিয়ে তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি অনুগত। এবং চতুর্থতঃ, তারা সোভিয়েত বিরোধী।

দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি প্রসঙ্গে একটি জিনিস বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সেটা হচ্ছে এই যে, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সাথে ১৯৭১ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে সহযোগিতার অপরাধে অপরাধীদের সরকার সাধারণভাবে ক্ষমা প্রদর্শন করলেও বাঙলাদেশের কারাগারসমূহ এখনো শূন্য হয়নি। বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা বিভিন্ন কারাগারে এখনো আটক রয়েছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে এখনো মামলা চলছে এবং অনেকের মাথার ওপরে হুলিয়া ঝুলছে। মহানুভব আওয়ামী লীগ সরকার তাঁদেরকে ‘ক্ষমার’ অযোগ্য বিবেচনা করছেন।

বাঙলাদেশের এই তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক সরকার বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদেরকে নিজেদের ক্ষমতার অযোগ্য এবং পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতাকারীদেরকে ক্ষমতার যোগ্য কেন বিবেচনা করলেন, সেটা বোঝার জন্য স্মরণ রাখা দরকার উল্লিখিত সহযোগিতাকারীদের রাজনৈতিক চরিত্র কি। আমরা পূর্বেই বলেছি, এই সমস্ত ব্যক্তিরা সাধারণভাবে সাম্প্রদায়িক, সাম্প্রদায়িক হিসেবে ভারতবিরোধী (তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, ভারতবিরোধী মাত্রেই সাম্প্রদায়িক), সোভিয়েতবিরোধী এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনুগত। অন্যদিকে আটক বামপন্থীরা অসাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক কারণে ভারতবিরোধী এবং মার্কিন ও সোভিয়েতবিরোধী। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, সোভিয়েত ও ভারতবিরোধিতার (দুই ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণে) ক্ষেত্রে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং বর্তমানে আটক ব্যক্তিদের একটা বাহ্যিক মিল থাকলেও সাম্প্রদায়িকতা ও মার্কিনবিরোধীতার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন মিল, ঐক্য অথবা সাদৃশ্য নেই।

একথা অবশ্য সত্য যে, দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদেরকে মুক্তিদানের প্রশ্নটি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর যে সমস্ত অফিসার এবং জোয়ান ভারতীয়দের হাতে বন্দী হয়েছিলো তাদের মুক্তির সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত। ১৯৫ জন বাদে ভারতে আটক পাকিস্তানী সামরিক ব্যক্তিদের সকলকে ইতিমধ্যেই মুক্তিদান করা হয়েছে, তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চলছে। শুধু তাই নয়, অচিরেই ১৯৫ জন আটক সামরিক ব্যক্তিও যে মুক্তিলাভ করে আওয়ামী লীগের নাটকীয় আস্ফালনকে একটা চরম রাজনৈতিক শঠতা হিসেবে প্রমাণিত করবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়টি এখন এতো পরিষ্কার হয়ে গেছে বলেই উপরোক্ত ১৯৫ জনের মুক্তির পূর্বেই সরকার দালালীর অভিযোগে আটক হাজার হাজার ব্যক্তিকে ‘ক্ষমা’ প্রদর্শন করে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দালালীর অভিযোগে যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকার এই সমস্ত ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন তার মধ্যে দেশপ্রেম অথবা প্রকৃত যুক্তি কতখানি ছিলো সেটা স্বতন্ত্র কথা। কিন্তু বামপন্থী ব্যক্তিদেরকে আটক রেখে এবং আরও বিরাট সংখ্যায় বামপন্থীদের আটক করার স্থান সংকুলানের উদ্দেশ্যে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার যে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন সে সিদ্ধান্ত বস্তুতঃপক্ষে সাম্প্রদায়িকতা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শক্তিসমূহকেই মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত।

‘ক্ষমা প্রদর্শন’ উপলক্ষে বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদেরকে দেশ গড়ার কাজে সামিল হওয়ার জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন। এই সমস্ত ব্যক্তি মুক্তিলাভের পর আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে ‘দেশ গড়ার’ কাজে আত্মনিয়োগ করবেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

বন্দীমুক্তির এই প্রশ্নটিকে আন্তজার্তিক কার্যকারণের দ্বারা বিচার করেই অনেকে ক্ষান্ত থাকার পক্ষপাতী। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এইভাবে ক্ষান্ত হওয়া নিতান্ত অর্থহীন। কাজেই দেখা দরকার, কি কারণে এই সমস্ত ব্যক্তি সদলবলে মুক্তি পেলেন, আওয়ামী লীগ সংগঠনের পূর্বোক্ত ‘দেশপ্রেম’ কোন পর্যায়ে আজ উপনীত হওয়ার ফলে তারা সুস্পষ্টভাবে সাম্প্রদায়িক, ভারত ও সোভিয়েত বিরোধী ও মার্কিনপন্থী রাজবন্দীদেরকে মুক্তি প্রদান করে নিজেদের ‘মহানুভবতা’ প্রকাশ করলেন।

প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে সামগ্রিকভাবে যদি সাম্প্রদায়িক, ভারত ও সোভিয়েত বিরোধী ও মার্কিনপন্থী শক্তিসমূহের ক্ষমতা বৃদ্ধি না হতো তাহলে এই ‘ক্ষমা’ প্রদর্শন আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা সম্ভব হতো না। এই পরিবর্তন যদি না ঘটতো তাহলে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭২ সালের প্রথমে যাদেরকে বাঙলাদেশের ‘জাতশত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো সেই জাতশত্রুদেরকে দেশ গড়ার কাজে আহ্বান জানানো বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা কিছুতেই সম্ভব হতো না।

এই সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কিভাবে দেশ গড়বেন সেটা এবার দেখা দরকার। বাঙলাদেশ সরকার সকল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন বেআইনী ঘোষণা করেছেন। কাজেই এদের পক্ষে খোলাখুলিভাবে কোন নোতুন সাম্প্রদায়িক সংগঠন খাড়া করা বর্তমান পরিস্থিতিতে অসম্ভব। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতাকে বিভিন্নভাবে প্রচারের জন্যে যে সাম্প্রদায়িক সংগঠন অপরিহার্য নয় সেটা আমরা গত দুই বৎসরের বাঙলাদেশের ইতিহাসে দেখেছি। মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্যেও সেটা অপরিহার্য হবে না। তাদের মধ্যে যে শহর ও গ্রামাঞ্চলের অনেক প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি আছেন এ কথা সত্য। আমাদের দেশে যেখানে ভূঁইফোড় রাজনৈতিক দলের কোন অভাব নেই, সেখানে এই সমস্ত ব্যক্তির পক্ষে এক অথবা একাধিক রাজনৈতিক সংগঠন খাড়া করা এমন কিছু অসুবিধার ব্যাপার নয়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের জন্মকে এখন প্রায় অবধারিত বলা চলে।

এই সংগঠনগুলোর প্রথম কাজ হবে সাম্প্রদায়িকতা প্রচার। এই প্রচার করতে গিয়ে ভারত বিরোধিতাকে তারা একটা হাতিয়ার হিসেবে ধরে নিয়ে তাকে একটা সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক চরিত্র দান করবে। একটি শোষণমূলক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পরিচয় উদ্ঘাটন না করে, ভারতীয় শোষণকে সেইভাবে চিত্রিত না করে তারা ভারতকে একটি ‘হিন্দু’ রাষ্ট্র হিসেবে ধরে নিয়ে তাদের ভারত-বিরোধী প্রচারণার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এদেশে আরও জোরদার করার চেষ্টা করবে। এখানে অবশ্য উল্লেখ করা দরকার যে ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর দিক দিয়ে বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং এই সমস্ত সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে মৌলিক কোন তফাৎ নেই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতা বিবৃতিতে প্রায়ই বলে থাকেন যে, ভারত-বিরোধিতার অর্থই হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। একথা একমাত্র সেই সমস্ত ব্যক্তি অথবা দলের পক্ষেই বলা সম্ভব যারা ভারতকে একটা হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। কিছু লোক সাম্প্রদায়িক কারণে ভারতের বিরোধী একথা যেমন সত্য, তেমনি একথা আরও কঠিন সত্য যে, অন্যান্য অনেকেই ভারতীয় পুঁজির শোষণের জন্যই ভারতবিরোধী। এই শেষোক্ত ব্যক্তিরা ভারতকে একটি ‘হিন্দু’ রাষ্ট্র বলে বিবেচনা না করে তাকে একটি ‘পুঁজিবাদী’ ও শোষণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করার ফলেই ভারতীয় জনগণের নয়, ভারতীয় সরকারের নানান নীতির বিরোধিতা করেন। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে, ভারতকে যাঁরা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করেন তাঁদের অপেক্ষা ভারতকে যাঁরা ‘হিন্দু’ রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করেন তাঁদেরকেই বাঙলাদেশের তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমার যোগ্য বিবেচনা করে অন্যদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আটক রাখলেন এবং তাদেরই সমশ্রেণীর লোকদেরকে আরও ব্যাপক হারে আটক রাখার উদ্দেশ্যে বাঙলাদেশের কারাগারসমূহ খালি করে স্থান সৃষ্টি করলেন।

এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিরা যে তাঁদের পূর্ববর্তী মার্কিন আনুগত্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবেন সেকথা বলাই বাহুল্য। এদিক দিয়েও আজকের আওয়ামী লীগের সাথে তাদের মৌলিক কোন প্রভেদ নেই। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর মতো মার্কিনের প্রতি বাঙলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর ক্ষেত্রে যে উভয়ের মধ্যে একটা সুগভীর ঐক্য আছে সেটা ইতিপূর্বে প্রাপ্ত পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী সাহায্য এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বৈদেশিক (মূলতঃ মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী) ঋণ ও সাহায্যের প্রয়োজনীয় পরিমাণ থেকে ভালোভাবেই বোঝা যায়। এই পরিকল্পনায় বৈদেশিক ‘সাহায্য’ কার থেকে কত পাওয়া যাচ্ছে তার বিশদ বিবরণ যখন প্রকাশিত হবে তখন পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে, বাঙলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যের ভাত খেয়েই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কৌশলগত কারণে একটা শঠতাপূর্ণ চিৎকার এতদিন করে আসছেন।

দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির মধ্যেও এই সরকারী শঠতারই প্রতিফলন ঘটেছে।

বঙ্গবার্তা
৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭৩

সকল অধ্যায়

১. বাঙলাদেশে মার্কিন অনুপ্রবেশ
২. “গণমুখী” বক্তৃতা
৩. আওয়ামী লীগের জাতীয়করণ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে
৪. ভারত-বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতা
৫. জাতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ভূমিকা
৬. আওয়ামী লীগ সরকারের শ্রমনীতি
৭. সংবাদপত্র ও প্রকাশনার স্বাধীনতা
৮. আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত সংবিধান
৯. শাসনতন্ত্র প্রশ্নে বিরোধী দলগুলির ভূমিকা
১০. আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি রক্ষা
১১. বাঙলাদেশের সংবিধান ও পরবর্তী নির্বাচন
১২. আইয়ুব খানের অস্ত্রাগার
১৩. আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা
১৪. বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি
১৫. বাঙলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা
১৬. বাঙলাদেশে শ্রমিক হত্যা
১৭. জাতি সমস্যা ও ভাষা আন্দোলন
১৮. আওয়ামী লীগের ‘শুদ্ধি অভিযান’ প্রসঙ্গে
১৯. মাধ্যমিক শিক্ষক ধর্মঘট প্রসঙ্গে
২০. মুদ্রাযন্ত্র ও প্রকাশনা অর্ডিন্যান্স ১৯৭৩
২১. ত্রিদলীয় ঐক্যজোট ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন
২২. ১৯৪৮ সাল থেকে পশ্চিম এশিয়ায় দু’ধরনের যুদ্ধ চলছে
২৩. বাঙলাদেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২৪. বাঙলাদেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি
২৫. ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে
২৬. সংসদীয় বিরোধী দলসমূহের ঐক্য প্রসঙ্গে
২৭. দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি প্রসঙ্গে
২৮. জনগণ গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলির ঐক্য কেন চাইছেন?
২৯. ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের তাৎপর্য
৩০. বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গে
৩১. প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও বাঙলাদেশের স্বাধীনতা
৩২. প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ও বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব
৩৩. সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয়তাবাদ
৩৪. গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও স্বতঃস্ফূর্ততা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন