সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয়তাবাদ

বদরুদ্দীন উমর

সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয়তাবাদ

শিল্প বিপ্লবের পূর্ববর্তী পর্যায়ে কোন দেশে জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব ছিলো না। কারণ জাতীয়তাবাদ মুলতঃ বুর্জোয়া শ্রেণীরই আদর্শ। সামন্ত সমাজ ব্যবস্থায় একদিকে জনগণের আর্থিক জীবন ভূমিনির্ভর হওয়ার ফলে তাদের যেমন চলাচলের বিশেষ প্রয়োজন ছিলো না, তেমনি অন্যদিকে যানবাহন, যোগাযোগ এবং চলাচলের অসুবিধার জন্যে দেশের অভ্যন্তরে মানুষের যাতায়াত খুবই সামান্য ছিলো। চলাচলের এই অভাবের জন্যে একই দেশের বিভিন্ন অংশের জনগণ পরস্পরের বিশেষ খবর রাখতো না, পরস্পরের সাথে পরিচিত হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেতো না। এমন কি বড়ো বড়ো দেশের ক্ষেত্রে এক অংশের মানুষ অন্য অংশের মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কেও অজ্ঞ থাকতো। এই পরিচয় এবং অজ্ঞতা স্বভাবতঃই তাদের মধ্যে এমন কোন বোধ অথবা চেতনা সৃষ্টি করতো না, যার ফলে তারা নিজেদেরকে এক মনে করতো এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে পারতো। অর্থাৎ যে-কোন দেশের সামন্ত অর্থনীতির কাঠামোর মধ্যে জনগণের পারস্পরিক অপরিচয় এবং আর্থিক যোগসূত্রের অভাব যতদিন বর্তমান থাকে, ততদিন সে দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে না।

সামন্তবাদে একটি দেশের যে রাষ্ট্রীয় ঐক্য দেখা যায়, সে ঐক্য সৃষ্টি হয় শাসক শ্রেণীর স্বার্থে। রাজ-রাজেশ্বরেরা জনগণের থেকে রাজস্ব আদায় এবং অন্যান্য শোষণের জন্যে নিজেদের শাসনকে যতদূর সম্ভব বিস্তৃত করার চেষ্টা করে এবং তার ফলে এক একটি এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে তাদের রাজ্য-সাম্রাজ্য। এইসব রাজ্য-সাম্রাজ্য জনগণের জীবনে যে তথাকথিত ঐক্যসূত্র স্থাপন করে, সে ঐক্য জনগণের স্বার্থে নিয়োজিত না থেকে জনগণের শাসক-শোষকের স্বার্থেই নিয়োজিত থাকে। এই স্বার্থরক্ষার জন্যেই এক দেশের শাসক অন্য দেশের শাসকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাদের সাথে স্বার্থে করে এবং সুবিধামতো আবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধ ও সন্ধি ক্ষেত্রে জনগণের কোন ভূমিকাই থাকে না।

ইউরোপেই সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। কিন্তু এই উৎপত্তি ও বিকাশের পূর্বে সেখানে উৎপত্তি ঘটে জাতীয় রাষ্ট্রের।

এইসব জাতীয় রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় রূপ ছিলো রাজতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের বিকাশের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং অগ্রগতির সাথে সাথে ইউরোপে ঘটে শিল্প বিপ্লবের বিকাশ। এই শিল্প বিপ্লবই শ্রমিক ও বুর্জোয়া শ্রেণীর জন্মদান করে।

শিল্প বিপ্লবের দ্বারা সৃষ্ট এই দুই নোতুন শ্রেণীস্বার্থই ছিলো সামন্তবাদবিরোধী। সামন্তবাদী অর্থনীতির রাজনৈতিক রূপ ছিলো রাজতন্ত্র। এ জন্যে স্বাভাবিকভাবেই রাজতন্ত্রের সাথে বুর্জোয়া এবং শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থের একটা সংঘর্ষ দেখা দেয় এবং সেই সংঘর্ষ ক্রমশঃ উচ্চ পর্যায়ে উঠতে থাকে। কলকারখানার বিস্তার ও দেশীয় বাজারের সম্প্রসারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে। এর ফলে একদিকে যেমন নোতুন ধনিক শ্রেণী ও কলকারখানা ইত্যাদি উৎপাদন যন্ত্রসমূহের মালিক বুর্জোয়াদের আর্থিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি ধীরে ধীরে শ্রমিক শ্রেণী এবং ব্যাপক জনগণের মধ্যেও পরস্পরকে উত্তরোত্তরভাবে জানার মাধ্যমে একটা ঐক্যের চেতনা জন্মলাভ করে। বুর্জোয়াদের এই ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি এবং জনগণের এই ঐক্য চেতনা, দুইই ছিলো সামন্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যহীন। শুধু সামঞ্জস্যহীন নয়, তারা ছিল একে অপরের বিরুদ্ধে স্থাপিত।

ধনতন্ত্রের বিকাশের সাথে সাথে অর্থনৈতিক ক্ষমতা বুর্জোয়া শ্রেণীর হাতে কেন্দ্রীভূত হতে থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষমতা তাদের ছিলো না। অন্যদিকে রাষ্ট্রক্ষমতা সামন্তবাদী রাজা-রাজড়াদের হাতে থাকলেও তাদের শাসনের আর্থিক ভিত্তি ক্রমশঃ ক্ষয়প্রাপ্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছিলো।

নিজেদের রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যতীত কোন শ্রেণীই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে পারে না। ইউরোপীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর সে বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছিলো সামন্তবাদী রাজতন্ত্রসমূহ। রাজতন্ত্র অর্থাৎ সামন্তবাদের পক্ষে বিনাযুদ্ধে নিজেদের রাষ্ট্র ক্ষমতা বুর্জোয়াদের হাতে সমর্পণ করা তাদের শ্রেণীস্বার্থেই সম্ভব ছিলো না। এ জন্যে সামন্তবাদ ও ধনতন্ত্রের মধ্যে সংঘর্ষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনিবার্য হয়ে ওঠে। শিল্প বিপ্লবের জন্মভূমি ইংল্যান্ডে এই সংঘর্ষ আঠারো শতকেই সর্বোচ্চ রূপ নেয় এবং রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেখানে যে নোতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে, তাতে বুর্জোয়ারাই প্রাধান্যে আসে। রাজতন্ত্র বজায় থাকলেও সে রাজতন্ত্রকে বুর্জোয়ারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজেদের শ্রেণীস্বার্থেই ব্যবহার করে।

ইংল্যান্ডের কতকগুলি বিশেষ পরিস্থিতির জন্যে সেখানে সংসদীয় রাজনীতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং সামন্তবাদের সাথে ধনতান্ত্রিক শক্তির সংঘর্ষ সত্ত্বেও সেই সংঘর্ষ অনেকখানি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য দেশে অবস্থা অন্য রকম দাঁড়ায়। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে সামন্তবাদ ও ধনতন্ত্রের সংঘর্ষের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে একটা ব্যাপক বিপ্লবের মাধ্যমে। এই বিপ্লবের প্রভাব অন্যান্য জাতীয় রাষ্ট্রগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলোতে একের পর এক সামন্তশাসনের অবসান ঘটিয়ে পত্তন করে বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থার। এইভাবে ঊনিশ শতকে ইউরোপের রাজতান্ত্রিক জাতীয় রাষ্ট্রগুলি রূপান্তরিত হয় বুর্জোয়া জাতীয় রাষ্ট্রে।

এই বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলিতে যে ধনিকশ্রেণী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তারা ছিলো শ্রেণী হিসেবে স্বাধীন। অন্য কোন জাতির ধনিক শ্রেণীর সাহায্য অথবা সহযোগিতার ওপর তারা নিজেদের উন্নতি ও বিকাশের ক্ষেত্রে নির্ভরশীল ছিলো না। দেশীয় সম্পদকে ভিত্তি করেই তারা নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছিলো। তাদের শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ও বাণিজ্য এ দুয়েরই বিস্তার ঘটেছিলো। শিল্পের সম্প্রসারণের ফলে শ্রমিক শ্রেণীও শ্ৰেণী হিসেবে সম্প্রসারিত ও সংগঠিত হচ্ছিলো।

এইসব কারণে ইউরোপে নোতুন বুর্জোয়াশ্রেণী ঐতিহাসিকভাবে একটা প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করে। সামন্তবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে যৌথ উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে তারা উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনও সাধন করে।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বুর্জোয়াশ্রেণী ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পর সেই সব দেশে উৎপাদনের দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং তার ফলে দেশীয় বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আয় ও বণ্টন ব্যবস্থার মৌলিক অসাম্যের ফলে উৎপাদন যে হারে বৃদ্ধি পায় দেশীয় বাজারের বিস্তৃতি সেই হারে ঘটে না। এর ফলে প্রয়োজন দেখা দেয় একদেশের শিল্প সামগ্রী অন্য দেশে বিক্রির।

এই অবস্থাই ইউরোপে জাতীয়তাবাদের প্রকৃত ভিত্তি স্থাপন করে। ঊনিশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে মোটামুটিভাবে বুর্জোয়ারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, কিন্তু তবুও প্রত্যেকটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সমান হয় না। এ কারণে অগ্রসর বুর্জোয়া দেশগুলি তাদের উদ্বৃত্ত পণ্য নিয়ে অনগ্রসর দেশগুলির বাজারে চড়াও হয়। এই পরিস্থিতিই ইউরোপে জাতীয়তাবাদের জন্মদান করে ও তার বিকাশ ঘটায়। ইউরোপীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার পূর্বে এইভাবে নিজেদের মধ্যে একটা জাতীয়তাবাদী রেষারেষির যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ঊনিশ শতকের গোড়াতেই এই রেষারেষি একটা উচ্চ পর্যায়ে ওঠে এবং নেপোলিয়নের সাথে ইংল্যান্ডের প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের মাধ্যমে তা একটি উচ্চতর পর্যায় উন্নীত হয়। প্রত্যেকটি দেশে ধনতন্ত্রের বিকাশ ও উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে এই জাতীয়তাবাদী সংঘর্ষ ইউরোপকে উত্তরোত্তর গ্রাস করে সেই ভূখণ্ডকে দীর্ঘদিন ধরে একটা ব্যাপক যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যে লিপ্ত করতো এবং সেই যুদ্ধঘটিত সংকট শ্রমিক শ্রেণীকেও ক্ষমতা দখলের দিকে দ্রুতভাবে এগিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু ইউরোপীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলি সেই আত্মঘাতী সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা পেলো দেশে দেশে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করে। এরপর থেকে তাদের মধ্যে রেষারেষি পরস্পরের ওপর চড়াও হওয়ার পরিবর্তে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলি দখল করে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপনের দিকে পরিচালিত হলো। প্রতিযোগিতা চলতে থাকলো কোন বুর্জোয়া রাষ্ট্র অন্যান্য দেশে নিজের কত বড়ো ঔপনিবেশিক শাসন কর্তৃত্ব স্থাপন করে প্রয়োজনীয় বাজারকে কতখানি সম্প্রসারিত করবে। ইউরোপীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলি এইভাবে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র থেকে পরিণত হলো সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে।

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, ইউরোপে যে বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে ধনতন্ত্রের বিকাশ ঘটে সে শ্রেণী ছিলো স্বাধীন, অর্থাৎ তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সম্প্রসারণের জন্যে অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল ছিলো না। ধনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে যে মূলধন অধিকতর হারে সেখানে নিয়োজিত হতো, সে মূলধন দেশীয় কৃষি এবং শিল্প ও বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থেকেই আসতো। দেশীয় সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার জন্যে অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে সেকালের বুর্জোয়াদের একটা প্রগতিশীল ভূমিকাও ছিলো। কিন্তু এই বুর্জোয়ারা যখন দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হলো, তখন তাদের সে প্রগতিশীল ভূমিকা আর থাকলো না। এই পর্যায়ে বিশ্ব পরিসরে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রগতিশীল শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো শ্রমিক শ্ৰেণী।

ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রগুলি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে এশিয়া, আফিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে নিজেদের শাসন কায়েম করে। এই শাসনব্যবস্থা ও ব্যবসা- বাণিজ্যের একটা পরোক্ষ ফল হিসেবে এই সমস্ত দেশেও বুর্জোয়া শ্রেণীর উৎপত্তি ঘটে। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদ কবলিত ঔপনিবেশিক দেশের মতো ভারতবর্ষেও তাই ঘটেছিলো।

এই ঔপনিবেশিক বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে ইউরোপীয় বুর্জোয়াদের একটা মৌলিক চরিত্রগত প্রভেদ ছিলো। এই প্রভেদের ভিত্তিভূমি ছিলো তাদের উভয়ের আর্থিক জীবন। ইউরোপীয় বুর্জোয়ারা যেখানে ছিলো স্বাধীন, ঔপনিবেশিক দেশের বুর্জোয়ারা সেখানে হলো পরনির্ভর। এই পরনির্ভরতা বস্তুতঃপক্ষে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের উপর নির্ভরশীলতা।

শ্রেণীগতভাবে এই মৌলিক নির্ভরশীলতার জন্যে এই শ্রেণী ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিলেও কোন ক্ষেত্রেই একটা স্বাধীন অথবা পুরোপুরি প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয় না। এর অর্থ এই যে, একদিকে যেমন এরা নিজেদের বিকাশের জন্যে নিজেদের দেশীয় সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না, অন্যদিকে তেমনি ইউরোপীয় বুর্জোয়াদের মতো এরা সামন্তবাদ উচ্ছেদের দিকেও তেমন যায় না। সাম্রাজ্যবাদী এবং ঔপনিবেশিক বুর্জোয়াদের ছোট তরফের সহযোগী হিসেবে একদিকে যেমন তারা বিদেশের মুখাপেক্ষী, অন্যদিকে তেমনি তারা সামন্তবাদের অবসান ঘটিয়ে দেশীয় অর্থনীতির উপযুক্ত বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রেও পরাঙ্‌মুখ।

সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শাসনের বিরুদ্ধে এই বুর্জোয়া শ্রেণীর ঐতিহাসিক ভূমিকা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা প্রগতিশীল হয়। কিন্তু বিদেশী শক্তির প্রত্যক্ষ শাসনের অবসানের পর যখন এই দেশীয় বুর্জোয়ারা নিজেরাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন তাদের ভূমিকা হয় পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল। জাতীয়তাবাদের ধ্বনি তুলে এরা নিজেদের নীতি ও বাস্তব কর্মকাণ্ডকে সর্বতোভাবে পরিচালনা করে বৃহত্তর কৃষক সমাজ ও শ্রমিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে। এ জন্যে সাম্রাজ্যবাদের এই ক্ষয়িষ্ণুতার যুগে (যে যুগে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শাসনের অবসান ঘটেছে) জাতীয়তাবাদের ধ্বনি কোন দেশে দেশপ্রেমিক ও কৃষক-মজুরদের ধ্বনি নয়। সে ধ্বনি হলো দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক ও কৃষক শ্রমিকদের শত্রুদের ধ্বনি এবং সেই হিসেবে এই জাতীয়তাবাদের আদর্শ ও ধ্বনি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্থাপিত।

কোন দেশে ততক্ষণই বুর্জোয়া শ্রেণীর একটা প্রগতিশীল ভূমিকা থাকে যতক্ষণ তারা দেশীয় সামন্তবাদের অথবা বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের অথবা এই উভয়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় শক্তি হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ কোন দেশের বুর্জোয়া শ্রেণীর সত্যিকার কোন প্রগতিশীল ভূমিকা আছে কি না, সেটা যাচাই করার কষ্টিপাথর হচ্ছে এই যে, তারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সামন্তবাদের অথবা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে কি না। সে লড়াই তারা যতখানি সক্রিয়ভাবে করবে, তাদের প্রগতিশীল ভূমিকার সীমারেখা তার দ্বারাই নির্ধারিত হবে। ইউরোপীয় বুর্জোয়া শ্রেণী নিজের উত্থানের যুগে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং ঘোরতর সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়েছিলো। সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শাসনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত দেশীয় বুর্জোয়ারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো, তারা পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে একটা প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছিলো। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটার পর যে বুর্জোয়া শ্ৰেণী দেশে দেশে শাসন কর্তৃত্ব লাভ করলো সে বুর্জোয়া শ্ৰেণী বস্তুতঃপক্ষে সাম্রাজ্যবাদের দাসানুদাস। সাম্রাজ্যবাদের ঋণ সাহায্য ইত্যাদির ওপরেই নির্ভরশীল তার জীবন ও জীবিকা।

সাম্রাজ্যবাদের ঋণ ও সাহায্যের কবলে পতিত এবং সমস্ত তথাকথিত স্বাধীন দেশগুলোকেই বলা হয় নয়া ঔপনিবেশিক দেশ। এই ধরনের দেশগুলোতে সামন্ত অর্থনীতির অবলুপ্তি না ঘটার জন্যে এগুলোতে কৃষি উদ্বৃত্তের অভাব থাকে। এই অভাবের ফলে শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি দেশীয় সম্পদের থেকে যে পরিমাণ আসে বৈদেশিক ঋণের থেকে আসে তার থেকে অনেক বেশী। অর্থাৎ এই সমস্ত দেশে শিল্প অর্থনীতির ভিত্তি কৃষি অর্থনীতির ওপর রচিত হয় না। সেটা রচিত হয় সাম্রাজ্যবাদী ‘সাহায্য’ এবং আনুকূল্যের ওপর। এই অর্থনীতি যে শ্রেণীর উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটায়, সে শ্রেণী যে স্বাধীন হতে পারে না তা বলাই বাহুল্য। এবং সে শ্রেণী যে জাতীয়তাবাদের ধ্বনি তোলে তা যে প্রকৃতপক্ষে দেশপ্রেমের ধ্বনি নয়, সাম্রাজ্যবাদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষক মজুরের ভাত মারার ধ্বনি, তাতেও কোন সন্দেহ নেই।

সাম্রাজ্যবাদ তাদের আওতাভুক্ত অনুন্নত দেশগুলিতে শিল্পের কিছুটা প্রসার ঘটাতে চায় নিজেদেরই স্বার্থে। কিন্তু এই শিল্প প্রসারকে তারা স্বনির্ভর হতে দেয় না। এ জন্যে একদিকে তারা কৃষিকে যথাসম্ভব পশ্চাৎপদ করে রাখে এবং সামন্তবাদী ক্ষয়িষ্ণু উৎপাদন সম্পর্ককে কৃষি ক্ষেত্রে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টার ফলে অনুন্নত দেশগুলো নিজেদের শিল্প বিনিয়োগের জন্যে কৃষি উদ্বৃত্তের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সাম্রাজ্যবাদী ‘সাহায্য’, ‘ঋণ’ ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল থাকে।

এইভাবে সাম্রাজ্যবাদ একদিকে সামন্ত স্বার্থ রক্ষা করে এবং অন্যদিকে বুর্জোয়া শ্রেণীকে নিজের প্রতি নির্ভরশীল রেখে অনুন্নত দেশগুলির সর্বপ্রধান শোষক শ্রেণী দুটির উপর নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখে। এই কর্তৃত্ব অনুন্নত নয়া ঔপনিবেশিক দেশগুলির সামন্ত ও বুর্জোয়া স্বার্থের রক্ষক হলেও কৃষক-শ্রমিক স্বার্থের তা সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

সাম্রাজ্যবাদের পদানত দেশীয় বুর্জোয়া শ্ৰেণী সামন্ত শক্তির থেকে বেশী সক্রিয় এবং মুখর হওয়ার ফলে সাম্রাজ্যবাদীরা নয়া ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে এই বুর্জোয়াদের ওপরই নির্ভর করে বেশী। এই বুর্জোয়াদের জাতীয়তাবাদের ধ্বনিও সাম্রাজ্যবাদের প্ররোচনা ও সাহায্যেই ওঠে এবং শক্তি সঞ্চয় করে। এই জাতীয়তাবাদের প্রতি সাম্রাজ্যবাদের অশেষ পক্ষপাতিত্বের কারণ এই হাতিয়ার দ্বারাই অনুন্নত দেশগুলোতে তারা শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বানচাল ও ধ্বংস করতে চায়। এর মাধ্যমেই তারা শ্রমিক কৃষকদেরকে ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত ও বিপথগ্রামী করতে অনেক ক্ষেত্রে সক্ষম হয়। এ জন্যেই এই জাতীয়তাবাদ ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্র, মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদ শাসিত দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সব থেকে বড়ো শত্রু।

সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয়তাবাদ একমাত্র প্রত্যক্ষভাবে ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে (সারা পৃথিবীতে এ ধরনের দেশ এখন দুচারটির বেশী নাই) অতি সীমিতভাবে কিছুটা প্ৰগতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশে অথবা অনুন্নত নয়া ঔপনিবেশিক দেশে জাতীয়তাবাদের প্রগতিশীল ভূমিকার কোন প্রশ্ন ওঠে না। উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশে এই জাতীয়তাবাদের কি পরিণতি হয়, সেটা জার্মানী, ইটালী ও জাপানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি যখন ধনতান্ত্রিক অগ্রগতির সাথে সাথে জাতীয় সংহতি অর্জন করেছিলো, জার্মানী এবং ইটালী সে সময় কয়েক খণ্ডে বিভক্ত থাকার ফলে নিজেদের জাতীয় শক্তিকে তারা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, বেলজিয়াম প্রভৃতির মতো সংহত ও সংগঠিত করতে পারেনি এবং উপনিবেশ দখলের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অন্যান্যের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলো। জাপানের শিল্প অগ্রগতি ঊনিশ শতকের এমন পর্যায়ে শুরু, যখন তার পক্ষে উপনিবেশ স্থাপনের সুবিধে আর বিশেষ ছিলো না। দখলের উপযুক্ত দেশগুলো তার পূর্বেই ইউরোপীয় শক্তিগুলোর দ্বারা দখল হয়েছিলো।

এই অবস্থায় জার্মানী, ইটালী ও জাপানে যখন শিল্প অগ্রগতি শুরু হলো, তখন দেশীয় বাজারের কূল ছাপিয়ে যে পণ্যদ্রব্য তাদের উদ্বৃত্ত হতে থাকলো তাকে বাজারজাত করার প্রয়োজনের থেকেই উঠলো এই তিন শক্তিশালী শিল্পসমৃদ্ধ দেশের জাতীয়তাবাদের ধ্বনি। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মতো উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করলেও উৎপন্নদ্রব্য বাজারজাত করার ক্ষমতা তাদের থাকলো না। কাজেই বাজারের জন্যে তারা মরিয়া হয়ে উঠলো।

কিন্তু নোতুন দেশ আর কোথায়? সবই তো ইতিমধ্যে দখল হয়েছে তাদের ভ্রাতৃসম সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা। কাজেই তাদের ক্ষেত্রে বাজার দখল করার অর্থই দাঁড়ালো অন্য দেশের বাজার থেকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, বেলজিয়ামকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরা সেই বাজার দখল করা। এর ফল সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধ। এই বিশ্বযুদ্ধই আমরা দুবার বিশ শতকে ঘটতে দেখেছি।

এই বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের জনগণকে শামিল করার জন্যে, তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে জার্মানী, ইটালী এবং জাপানে জাতীয়তাবাদের ধ্বনি তোলা হয়েছিলো। জনগণ এই ধ্বনির দ্বারা প্রতারিত হলেও এই জাতীয়তাবাদের সাথে জনগণের স্বার্থের কোন সম্পর্ক ছিলো না। তা ছিলো জনগণের শত্রু, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের শত্রু। এই জাতীয়তাবাদের নামই ফ্যাসিবাদ।

অনুন্নত নয়া ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে বুর্জোয়াদের জাতীয়তাবাদ যে সাম্রাজ্যবাদের সাহায্যেই পরিপুষ্ট, সাম্রাজ্যবাদই যে সেই জাতীয়তাবাদের সব থেকে মুনাফাভোগী, একথা আগেই বলেছি। এই জন্যে এই বুর্জোয়া শ্রেণীর পতাকাতলে এবং তাদের রং-বেরঙের জাতীয়তাবাদের ধ্বনির পেছনে সাম্রাজ্যবাদীরা চেষ্টা করে কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্ত জনগণকে সমবেত করতে। এমনভাবে তারা এ কাজ করতে চেষ্টা করে যাতে শ্রমিক শ্রেণীর পতাকাতলে জনগণ সমবেত হতে না পারে, পর পদানত বুর্জোয়াদের পতাকা ও ধ্বনিকেই যাতে তারা নিজেদের ধ্বনি এবং তাদের পতাকাকেই যাতে তারা নিজেদের পতাকা বলে মনে করে। শুধু তাই নয়, এমনভাবে তারা এ কাজ করে যাতে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তের কাছে মনে হয় যে, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম একই সূত্রে গ্রথিত, তারা অবিচ্ছিন্ন।

সাম্রাজ্যবাদ কবলিত নয়া ঔপনিবেশিক দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদীরা এই খেলাই খেলছে। জাতীয়তাবাদের সাথে সমাজতন্ত্রের পতাকাকে একই হাতে তুলে দিয়ে তারা শ্রমিক শ্রেণীর গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পতাকাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে।

যে কোন দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শুরু হওয়ার পূর্বে সে দেশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হওয়া দরকার। এই বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মর্মার্থ হলো উৎপাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামন্তবাদকে উচ্ছেদ করা। সামন্তবাদকে যে সমাজে উচ্ছেদ করা না হয়েছে, সে সমাজে সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্য শুরু হতে পারে না।

উন্নত ধনতান্ত্রিক ইউরোপীয় দেশগুলিতে ঐতিহাসিকভাবে বুর্জোয়া শ্রেণীই নিজের স্বার্থে সামন্তবাদী উৎপাদন সম্পর্ককে নিজের নিজের দেশে খতম করেছে। কিন্তু নয়া ঔপনিবেশিক দেশের মেরুদণ্ডহীন বুর্জোয়াদের দ্বারা তা সম্ভব নয়। এই বুর্জোয়াদের ঐতিহাসিক ভূমিকা হলো সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার হিসেবে সামন্ত উৎপাদন সম্পর্ককে যথাসম্ভব টিকিয়ে রাখা। এই গুরুত্বপূর্ণ কারণেই নয়া ঔপনিবেশিক অনুন্নত দেশগুলিতে বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে কখনো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব অর্থাৎ সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লব সম্পন্ন হতে পারে না। এ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব সাম্রাজ্যবাদের যুগে, বিশেষ করে তার ক্ষয়িষ্ণুতার যুগে, শ্রমিক শ্রেণীর ওপর ঐতিহাসিকভাবে বর্তেছে। এই দায়িত্ব একমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর দ্বারা পালন করা সম্ভব।

শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে এই বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নামই জন-গণতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিপ্লবই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্বসূরী। এই বিপ্লবের ভয়েই সাম্রাজ্যবাদীরা আজ ভীত সন্ত্রস্ত। এই বিপ্লবকে তারা বানচাল করতে সদা সচেষ্ট। কিন্তু একে বানচাল করতে হলে আজকের দিনে সরাসরি সমাজতন্ত্রের পতাকাকে আক্রমণ করে তা সম্ভব নয়। কাজেই এ কাজকে সম্ভব করার উদ্দেশ্যে তারা দেশে দেশে তৈরী করছে জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের এক জগা খিচুড়ী। এই জগা খিচুড়ীর প্রতিবিপ্লবী পতাকাই আজ এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার নয়া ঔপনিবেশিক দেশে দেশে দেশীয় বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক হাতিয়ার।

বুর্জোয়া ‘জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রের’ এই হাতিয়ারের মোকাবেলা আরও জোরালো হাতিয়ারের দ্বারাই সম্ভব এবং এই জোরালো হাতিয়ার হলো জন-গণতন্ত্রের হাতিয়ার, শ্রমিক শ্রেণীর গৌরবময় সংগ্রামের হাতিয়ার, শ্রমিক কৃষক মৈত্রীর হাতিয়ার।

গণকণ্ঠ
৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৭৩ এবং ১লা জানুয়ারী, ১৯৭৪

সকল অধ্যায়

১. বাঙলাদেশে মার্কিন অনুপ্রবেশ
২. “গণমুখী” বক্তৃতা
৩. আওয়ামী লীগের জাতীয়করণ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে
৪. ভারত-বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতা
৫. জাতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ভূমিকা
৬. আওয়ামী লীগ সরকারের শ্রমনীতি
৭. সংবাদপত্র ও প্রকাশনার স্বাধীনতা
৮. আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত সংবিধান
৯. শাসনতন্ত্র প্রশ্নে বিরোধী দলগুলির ভূমিকা
১০. আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি রক্ষা
১১. বাঙলাদেশের সংবিধান ও পরবর্তী নির্বাচন
১২. আইয়ুব খানের অস্ত্রাগার
১৩. আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা
১৪. বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি
১৫. বাঙলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা
১৬. বাঙলাদেশে শ্রমিক হত্যা
১৭. জাতি সমস্যা ও ভাষা আন্দোলন
১৮. আওয়ামী লীগের ‘শুদ্ধি অভিযান’ প্রসঙ্গে
১৯. মাধ্যমিক শিক্ষক ধর্মঘট প্রসঙ্গে
২০. মুদ্রাযন্ত্র ও প্রকাশনা অর্ডিন্যান্স ১৯৭৩
২১. ত্রিদলীয় ঐক্যজোট ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন
২২. ১৯৪৮ সাল থেকে পশ্চিম এশিয়ায় দু’ধরনের যুদ্ধ চলছে
২৩. বাঙলাদেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২৪. বাঙলাদেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি
২৫. ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে
২৬. সংসদীয় বিরোধী দলসমূহের ঐক্য প্রসঙ্গে
২৭. দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি প্রসঙ্গে
২৮. জনগণ গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলির ঐক্য কেন চাইছেন?
২৯. ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের তাৎপর্য
৩০. বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গে
৩১. প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও বাঙলাদেশের স্বাধীনতা
৩২. প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ও বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব
৩৩. সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয়তাবাদ
৩৪. গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও স্বতঃস্ফূর্ততা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন