শাপে বর

সমর পাল

শাপ অর্থ অভিশাপ বা অভিসম্পাত অর্থাৎ কারো উদ্দেশে অমঙ্গলসূচক বাক্য প্রয়োগ। বর শব্দের অর্থ আশীর্বাদ, অভীষ্ট বা দেবতার কাছে যাচিত বস্তু। কেউ কারো অমঙ্গল ঘটার জন্য অভিশাপ দেবার পর যদি বিপরীত ফল হয় অর্থাৎ তার মঙ্গল ঘটে যায় তবে তাকে শাপে বর বলে।

অযোধ্যার সূর্যবংশীয় রাজা দিলীপের পুত্র রঘু, রঘুর পুত্র অজ এবং অজের পুত্র দশরথ। রাজা অজের ঔরসে ইন্দুমতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন দশরথ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর অজ তার রাজ্যের ভার দশরথকে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দশরথের তিন প্রধান রাণী হলেন কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। দীর্ঘকাল দশরথ অপুত্রক ছিলেন বলে তার মনে স্বস্তি ছিল না।

অপুত্রক রাজা দশরথ মৃগয়া করতে বনে গেছেন। সরযূ নদীর তীরে সেই বন। সেখানে ছিল অন্ধকমুনির আশ্রম। অন্ধক ও তার স্ত্রী (অন্ধক বৈশ্য ছিলেন এবং তার স্ত্রী শূদ্রকন্যা) দুজনেই অন্ধ ছিলেন। তাদের একমাত্র পুত্র সিন্ধু।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে বনভূমিতে। অন্ধকমুনির পুত্র সিন্ধু ঐ সময় নদীতীরে কলসিতে জল ভরছিলেন। দশরথ ভাবলেন বিশাল এক হাতি যেন নদীতীরে জলপান করছে। রাতের অন্ধকারে ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই মুনিকুমারকে হাতি ভেবে নিক্ষেপ করলেন শব্দভেদী বাণ। সিন্ধুর আর্তনাদে দশরথ ছুটে গিয়ে প্রকৃত অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।

সিন্ধুর অনুরোধে অন্ধকমুনি ও তার স্ত্রীকে আনা হলো ঘটনাস্থলে। সিন্ধুই অন্ধ মা-বাবার দেখাশুনা করতেন। সেখানেই সিন্ধুর মৃত্যু হলো এবং তার মা-বাবাও শোকের জ্বালা সইতে না পেরে পুত্রের জ্বলন্ত চিতায় নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিলেন।

চিতারোহণের পূর্বে বৃদ্ধ মুনি দশরথকে তার মতো পুত্রশোকে মৃত্যুর অভিশাপ দেন। এই অভিশাপ দশরথের জন্য তেমন ক্ষতির কারণ হয়নি কারণ তিনি তখনও অপুত্রক। পুত্র না থাকায় পুত্রশোকে মৃত্যুর প্রশ্ন আসে না। সে কারণে প্রকারান্তরে রাজা দশরথ অন্ধকমুনির কাছে পুত্রলাভের বরই পেয়ে গেলেন।

পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ করি যে, রাজা দশরথ ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির দ্বারা পুত্রেষ্টি-যজ্ঞ সম্পাদন করান পুত্র লাভের জন্য। অতঃপর কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে যমজ সন্তান লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন জন্মগ্রহণ করেন।

অন্ধকমুনির অভিশাপ রাজা দশরথের পুত্রলাভে সহায়ক হয়েছিল। এরূপ অনিষ্টের মধ্যে ইষ্ট লাভ হলে শাপে বর প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন