মান্ধাতার আমল

সমর পাল

প্রসেনজিৎ ও গৌরীর সন্তান সূর্যবংশীয় রাজা যুবনাশ্ব। রাজা যুবনাশ্বের পুত্র হলেন মান্ধাতা। মান্ধাতার জন্মবৃত্তান্ত বিষ্ণুপুরাণে নিম্নরূপ—

দীর্ঘদিনেও রাজা যুবনাশ্বের পুত্র না হওয়ায় সংসার ত্যাগ করে মনের দুঃখে তিনি মুনিদের আশ্রমে গিয়ে বাস করতে থাকেন। কালক্রমে মুনিগণের মনে দয়ার উদ্রেক হলো। যুবনাশ্বের যাতে পুত্রলাভ হয় সেজন্য তারা এক যজ্ঞ শুরু করেন। মাঝরাতে যজ্ঞ শেষ হলে মুনিগণ মন্ত্রপূত জলের কলস বেদির উপর রেখে ঘুমাতে চলে যান।

গভীর রাতে প্রচণ্ড তৃষ্ণা অনুভব করেন রাজা যুবনাশ্ব। ঋষিগণকে না জাগিয়ে তৃষ্ণার্ত রাজা বেদির উপর রাখা মন্ত্রপূত জল পান করেন। ভোরবেলা মুনিগণ জেগে দেখলেন মন্ত্রপূত যজ্ঞকলস জলশূন্য। খোঁজ নিয়ে তারা জানলেন যে, যুবনাশ্ব ঐ জল সবটুকুই পান করে ফেলেছেন। যজ্ঞকলসের ঐ জল মুনিগণ রেখেছিলেন যুবনাশ্ব-পত্নীর জন্য। ঐ জল খেয়ে তিনি গর্ভবতী হবেন—এমন কথাই মুনিদের ভাবনার মধ্যে ছিল। রাজা জানালেন যে, পিপাসায় কাতর হয়ে অন্যের ঘুম নষ্ট না করে অজান্তে তিনি কলসের মন্ত্রপূত জল পান করে ফেলেছেন।

মন্ত্রপূত জলের প্রভাবে রাজা যুবনাশ্বের গর্ভসঞ্চার হলো। তবে মুনিদের আশীর্বাদে গর্ভধারণের কষ্ট থেকে রেহাই পেলেন তিনি। শতবর্ষ পূর্ণ হলে যথাসময়ে যুবনাশ্বের ডান কুক্ষি ভেদ করে ভূমিষ্ঠ হলো সূর্যের মতো তেজস্বী এক পুত্র। রাজা এবং ঋষিগণ নবজাতকের বেঁচে থাকা নিয়ে চিন্তায় পড়লেন। মাতৃস্তনের অভাবে কী খেয়ে বাঁচবে এ শিশু?

নবজাত শিশুকে নিয়ে যখন সবাই চিন্তিত সে সময় ঐ সময়ের দেবরাজ ইন্দ্র এসে হাজির হলেন সেখানে। তিনি বললেন, ‘ধাস্যতি মাময়ং’ অর্থাৎ আমার সাহায্যে বেঁচে থাকবে। এই কারণে শিশুর নাম হলো মান্ধাতা। ইন্দ্রের আঙ্গুল চুষে একদিনেই বড় হয়ে গেলেন তিনি। মহারাজ শশবিন্দুর কন্যা বিন্দুমতীর সাথে বিয়ে হয়ে মান্ধাতার। তার গর্ভে মান্ধাতার তিন পুত্র পুরুকুস, অম্বরীষ ও মুচুকুন্দ এবং পাঁচ কন্যার জন্ম হয়। পিতৃরাজ্যে অভিষিক্ত হয়ে মান্ধাতা পৃথিবী জয় করতে বের হলেন। সুমেরু পর্বতে রাবণের সঙ্গে তার যুদ্ধ হলো। কিন্তু উভয়ের বলবীর্য সমান হওয়ায় একে অপরের বন্ধু হলেন। স্বর্গরাজ্য জয়ের জন্য মান্ধাতা অভিযাত্রা করেন কিন্তু মহাসুর লবণের হাতে নিহত হন।

অতিপ্রাচীনকালে মান্ধাতা ছিলেন বিশাল রাজ্যের অধীশ্বর। তার সম্পর্কে বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে—

যাবৎ সূর্য উদেতি স্ম যাবচ প্রতিতিষ্ঠতি।
সর্বং তৎ যৌবনাশ্বস্য মান্ধাতূঃ ক্ষেত্রমুচ্যতে ॥

অর্থাৎ–সূর্য যেখানে থেকে উদিত ও যেখানে অস্তমিত হয় তার অন্তর্গত সমস্ত স্থানই যুবনাশ্ববংশীয় রাজা মান্ধাতার ক্ষেত্র।

মান্ধাতা অত্যন্ত প্রাচীনকালের সূর্যবংশীয় রাজা। পৌরাণিক মান্ধাতা রাজার আমল বলে উল্লেখ করা হয় পুরানো ঘটনা বা বিষয়ের প্রসঙ্গে।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন