ভেড়াকান্ত

সমর পাল

ভেড়াকান্ত

অত্যন্ত নিরীহ ও বোকা জন্তু হিসেবে এদেশে ভেড়া বা মেষ পরিচিত। ভেড়াকান্ত হচ্ছে বোকার সেরা বা শ্রেষ্ঠ বোকা। কান্ত শব্দে বুঝায় স্বামী, পতি ইত্যাদি। সুতরাং যে মানুষ নির্বোধের মতো অন্যের কথায় চলে, নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারে না—তার প্রতি ভেড়াকান্ত প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। আবার একইভাবে যদি কেউ এ ধরনের নির্বোধকে নিজের আয়ত্তে বা বশে রেখে ইচ্ছেমাফিক চালায় সেক্ষেত্রে বলা হয় ভেড়া করে রাখা। শ্লেষোক্তি করে নির্বোধ মানুষকে আমরা ভেড়া বলে অভিহিত করি।

সামান্য ব্যতিক্রম বাদে সাধারণত এদেশে বৌমার প্রতি শাশুড়ির এবং ভাই-বৌয়ের প্রতি ননদের কিছুটা ঈর্ষাভাব লক্ষ করা যায়। স্বামী তার স্ত্রীর কোনো আবদার পূরণ করতে অগ্রসর হলে কিংবা স্ত্রীর মতামত নিয়ে কাজ করতে গেলে মাঝে মাঝে বিপত্তি দেখা দেয় শাশুড়ি বা ননদের কারণে। সদাসন্ত্রস্ত থাকতে হয় স্বামীকে। তারপরও বৌয়ের কথামতো চললে কিংবা তার আগ্রহ ও মতামতের গুরুত্ব অধিক বলে মনে হলে স্বামীকে ভেড়াকান্ত আখ্যা পেতে হয়। কেউ শ্বশুরবাড়ির মতামতের ওপর নির্ভর করে চলে মনে করেও বলা হয় ভেড়াকান্ত। কিংবা বৌ অথবা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে (স্বামীকে) ভেড়া বানিয়ে রেখেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

একই অবস্থা অন্যের ওপর নির্ভরশীল ও অনুগত লোকদের প্রতি প্রযোজ্য হতে দেখা যায় আমাদের সমাজে। নিরীহ মেষ বা ভেড়ার সাথে এ ধরনের তুলনা এদেশের মানুষ অহরহ করে থাকে। ভেড়ার মতো নির্বুদ্ধিতাকে ভেড়ামি বলা হয়। ব্যক্তিত্বহীন কাপুরুষ বা স্ত্রৈণ (স্ত্রীর অনুগত) হিসেবে বিবেচিত পুরুষকে ভেড়ুয়া বা ভেড়ো কিংবা ভেড়ের ভেড়ে হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বুদ্ধিহীন মানুষ অন্যের বশবর্তী হয়ে অন্যের দেখাদেখি একইভাবে চললে সে চালচলনকে ভেড়ার চাল বলা হয়। একজন যা বলে অন্যেও নিজস্ব বুদ্ধিবিবেচনা না করে সেই কথামতো চললে এমন প্রবাদের প্রসঙ্গ আসে। একই রকম প্রবাদ হলো মেড়াকান্ত। আলঙ্কারিক অর্থে মেড়া অর্থও ভেড়া (মেঢ্র > মেড়া + মেষ)।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন