সমর পাল
যেখানে যে যত দোষত্রুটি ও অন্যায় করুক না কেন সব দোষের দায়ভার যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর একচেটিয়াভাবে আরোপ করা হয় তখন এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।
কংসের ভয়ে শ্রীকৃষ্ণের বাবা বসুদেব স্ত্রী রোহিণীকে মথুরার অদূরে ঘোষপল্লীতে আত্মীয় নন্দঘোষের বাড়িতে রেখেছিলেন। তার গর্ভজাত সন্তান বলরাম। রোহিণী হলেন শ্রীকৃষ্ণের সত্মা। বসুদেবের আরেক স্ত্রী দেবকীর সপ্তম সন্তান গর্ভেই বিনষ্ট হয়। শ্রীকৃষ্ণ অষ্টম গর্ভজাত সন্তান কংসের কারাগারে তার জন্ম। গভীর রাতে কৌশলে বসুদেব নন্দের বাড়িতে শিশু শ্রীকৃষ্ণকে রেখে এসেছিলেন। নন্দ ঘোষ বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণকে নিজপুত্রের মতো লালন-পালন করেন শিশুকাল থেকে। নন্দপত্নী যশোদার স্নেহের সীমা ছিল না এই দুই পালিত পুত্রের প্রতি।
গোপপল্লীতে থেকে শ্রীকৃষ্ণ (গোপাল) খুব অত্যাচার করতেন বলে কাহিনী রয়েছে যদিও বিষ্ণুপুরাণ, মহাভারত ইত্যাদি গ্রন্থে সব গল্প নেই। ননি চুরি, মাখন চুরি ইত্যাদি অমূলক গল্প হরিবংশ বা ভাগবত নামক অপ্রাচীন গ্রন্থে ভক্তরা সৃষ্টি করেছেন। নন্দ ঘোষ পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার কারণে বৃন্দাবনে চলে গিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে লোক-প্রচলিত আখ্যান নিয়েই আমাদের প্রবাদ।
যাহোক, কাহিনী অনুযায়ী নন্দ ও যশোদার আস্কারায় গোপাল মাঠঘাট, বনবাদাড় চষে বেড়ানো, ঘোষদের বাড়ি থেকে ননি-মাখন চুরি করে রাখাল ও বানরদের বিলিয়ে দেয়া, গোপনারীদের মাটির কলসি ফুটো করে দেয়া, যশোদার ভাই আয়ান ঘোষের স্ত্রী রাধার সাথে অবৈধ প্রণয়, স্নানরতা রমণীদের উত্যক্ত করা ইত্যাদি ইত্যাদি করতেন। সবাই এসে নন্দ ঘোষকে নালিশ জানাতো। নন্দ স্নেহের বশবর্তী হয়ে গোপালকে শাস্তি না দেওয়ায় সব দোষ তার ওপর দিয়ে ক্ষোভ জানাতো পাড়া-পড়শি। গল্পের গোপালের চিত্র সম্পূর্ণ বাস্তব না হলেও সেই প্রচলিত লোকগল্প থেকেই প্রবাদবাক্যের সৃষ্টি হয়েছে যত দোষ নন্দ ঘোষ।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন