যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা

সমর পাল

কেউ কেউ গোঁয়ার অথচ মূর্খ— এ ধরনের মানুষকে আমাদের সমাজে যণ্ডামার্কা বা যণ্ডামার্ক বলে আখ্যায়িত করা হয়। ষণ্ড বা ষণ্ডা অর্থ ষাঁড়। গুণ্ডা প্রকৃতির মানুষকে যণ্ডামার্কা বলা হয়। আসলে ষণ্ডামার্ক শব্দ বা প্রবাদ ষাঁড় থেকে উদ্ভূত হয়নি। এসেছে অন্য উৎস থেকে। সে উৎসটি এখানে উল্লেখ করছি।

সর্বশাস্ত্রবিদ দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য ছিলেন মহর্ষি ভৃগুর পুত্র। এ জন্য তিনি ভার্গব নামে পরিচিত। তার বংশে পরশুরামের জন্ম। পরশুরামকেও ভার্গব (অর্থাৎ ভৃগুবংশীয়) বলা হয়। ভৃগুপুত্র শুক্রাচার্য ছিলেন দৈত্যদের পুরোহিত তথা গুরু। দৈত্যগুরু নামে তিনি প্রসিদ্ধ। শুক্রাচার্যের দুই পুত্রের নাম ষণ্ড ও অমর্ক। প্রহ্লাদের বাবা হিরণ্যকশিপুর গুরু শুক্রাচার্য। সেজন্য শুক্রাচার্যের সন্তান ষণ্ড ও অমর্ক তার বাড়িতে থাকতেন।

ষণ্ডামার্ক ছিলেন জ্ঞানী ও শাস্ত্রবিদ পণ্ডিত। রাজা হিরণ্যকশিপু তাদের হাতে পুত্র প্রহ্লাদকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য দেন। অর্থাৎ ষণ্ডামার্ক প্রহ্লাদের শিক্ষাগুরু। তারা দু’জনেই ছিলেন অসুরদের সেনানায়ক। গোঁয়ারগোবিন্দ ও বলশালী এ দুভাই যুদ্ধে দেবতাদের পরাজিত করেন। দেবতারা তখন কৌশলে এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করে ষণ্ড ও অমর্ককে সেখানে নেমন্তন্ন করেন। বায়ুপুরাণ ও মৎস্যপুরাণ অনুযায়ী জানা যায় যে, দেবতারা দু’ভাইকে প্রচুর খানাপিনা করায়। সুরা পান করিয়ে দেবতারা কৌশলে এদের অনুরোধ করেন অসুরপক্ষ ত্যাগ করতে। সুরাপানে মত্ত এই দুই অসুর-সেনাপতি অসুরদের পক্ষ ত্যাগ করে। ফলে দেবতাদের কাছে অসুররা পরাজিত হয়।

যণ্ডামার্ক ছিলেন ভয়ানক গোঁয়ার ও গুণ্ডা প্রকৃতির দৈত্য। সে কারণে ঐ স্বভাবের মানুষকে আমাদের সমাজে ষণ্ডামার্ক বা ষণ্ডামার্কা বলা হয়। প্রহ্লাদের গুরু হবার কারণে প্রবাদে ষণ্ডামার্ক গুরুও বলা হয়। হিরণ্যকশিপুর কথায় ষণ্ডামার্ক প্রহ্লাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করেছিলেন বলেও নামটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে। এই প্রবাদের সাথে তুলনীয় প্রবাদ— গোঁয়ার গোবিন্দ।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন