সাক্ষীগোপাল

সমর পাল

এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ পুরী যাচ্ছেন তীর্থ করতে। পথের মধ্যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। তীর্থসহচরদের মধ্যে তার এক গ্রামবাসী যুবক অনেক সেবাযত্ন করে তাকে সুস্থ করে তোলে। বৃদ্ধ যুবকটিকে কথা দিলেন যে, তীর্থ থেকে বাড়িতে ফিরে তিনি তার সাথে নিজ কন্যার বিয়ে দিবেন।

যুবক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের মুখের কথায় আস্থা স্থাপন করতে না পেরে তাকে নিয়ে গেল নিকটবর্তী শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে। সেখানে গোপাল (শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহের সামনে গিয়ে বিগ্রহকে সাক্ষী রেখে মেয়ের সাথে ঐ যুবকের বিয়ে দিবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি বাক্য উচ্চারণ করলেন বৃদ্ধ।

তীর্থভ্রমণশেষে দেশে ফিরলেন ব্রাহ্মণ। যুবক মাঝে মাঝে তাকে তার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেয়। দিন যায়, মাস যায়। ব্রাহ্মণ আর তার কথা রাখেন না। বিয়ের ব্যাপারে কথাও বলেন না। যুবকের চাপাচাপিতে একদিন ব্রাহ্মণ তার প্রতিশ্রুতির কথা পুরোপুরি অস্বীকার করলেন।

নিরুপায় নাছোরড়বান্দা যুবক আবার সেই শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে গেল। শ্রীকৃষ্ণকে সে তার আর্জি জানিয়ে বললো—

‘হে গোপাল, তুমি তো জানো যে, ঐ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ তোমার সামনেই আমাকে তার কন্যা সম্প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন তিনি তা অস্বীকার করছেন। অতএব সবার সামনে গিয়ে তোমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে।’

গোপালমূর্তি সঙ্গে সঙ্গে যুবকের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে বললো— “ঠিক আছে। তুমি সামনে এগুতে থাকো। আমি তোমার পেছনে পেছনে যাচ্ছি। আমার চরণের নূপুরধ্বনি শুনলেই তুমি বুঝতে পারবে যে, আমি ঠিক ঠিক যাচ্ছি তোমার পিছে পিছে। তবে তুমি যদি পিছন ফিরে দেখো তবে আমি আর যাবো না।’

যুবক চলতে লাগলো। পেছনে নৃপরধ্বনি করে যাচ্ছেন গোপাল। কিছুক্ষণ পর নূপুরধ্বনি শুনতে না পেয়ে পিছন ফিরলো যুবক। গোপালমূর্তি থেমে গেল। যুবক বললো— ‘আমি তোমার নূপুরের শব্দ না পেয়ে পিছন ফিরেছি।’ শ্রীকৃষ্ণ (গোপাল) বললেন, ‘বালুর মধ্যে চলতে চলতে নূপুরের মধ্যে বালু ঢুকে শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। যাহোক, শর্ত মোতাবেক আমি আর অগ্রসর হতে পারবো না। তবে তোমার ভাবনার কারণ নেই। তুমি বাড়ি ফিরে গিয়ে ব্রাহ্মণকে এই ঘটনার কথা বলবে।’

গোপালমূর্তি ঐ স্থানেই স্থির হয়ে গেল। যুবক বাড়ি ফিরে সবাইকে এই ঘটনার কথা বললো। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণও শুনলেন বিস্তারিত ঘটনা। দলে দলে লোকজন ছুটে গেল ঘটনাস্থলে। সবাই গোপালমূর্তির অবস্থান দেখে গেল। লোকমতের প্রভাবে ব্রাহ্মণ তার মেয়ের সাথে ঐ যুবকের বিয়ে দিয়ে প্রতিশ্রুতি পালন করলেন!

পুরী যাবার পথে সাক্ষীগোপালের এই মন্দির অবস্থিত। সর্বদর্শী হয়েও এই গোপাল নিজে কারো পাপ বা পুণ্যের ফল দান করেন না। যে ব্যক্তি নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্যের কার্যকলাপ দর্শন করে অর্থাৎ প্রত্যক্ষকারী অথচ পুতুলের মতো জড় পদার্থ হয়ে থাকে তাকে আমাদের প্রবাদে বলা হয় সাক্ষীগোপাল। অনেকের বিশ্বাস যে, সাক্ষীগোপালের মন্দির দর্শন ছাড়া পুরীর তীর্থযাত্রা পরিপূর্ণ হয় না।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন