দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ

সমর পাল

মন্দ বংশে ভালো লোক জন্মালে তাকে প্রবাদে দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ বলা হয়। তুলনীয় প্রবাদ-গোবরে পদ্মফুল বা গোবর গাদায় পদ্মফুল।

ব্রহ্মার মানসপুত্র কশ্যপের স্ত্রী ছিলেন দক্ষের তেরোটি কন্যা। এদের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় দেবতা, দানব, পশুপাখি, গন্ধর্ব, রাক্ষস, বৃক্ষলতা, ভূতপ্রেত সবই। এদের মধ্যে অদিতি হলেন দেবমাতা এবং দিতি হলেন দৈত্যমাতা।

অসুর-সম্রাট হিরণ্যকশিপু ও তার ভাই বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যাক্ষ কশ্যপের ঔরসে দিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। হিরণ্যকশিপু ও তার স্ত্রী জম্ভাসুরের কন্যা কয়াধুর (অন্য নাম কমলা) সন্তান হলেন—হাদ, সংহ্লাদ, অনুহ্লাদ ও প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদ ছিলেন ভাইদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।

এখানে দৈত্য, দানব ও অসুর সমার্থক শব্দ। ভাগবতমতে এরা সুর বা দেবতাদের দলভুক্ত নয়। সুর অর্থ দেবতা। অসুর হলো যারা তা নয়। এরা সুরা অর্থাৎ মদিরাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে অসুর নাম লাভ করে। মূলত অভিজাত প্রাসাদবাসী বিলাসপ্রিয় না হয়ে এরা সাধারণ জনতা। বরাবর এদের রাখা হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রপরিচালনার বাইরে। তাই দৈত্য বা অসুরদের সাথে দেবতা তথা অভিজাতশ্রেণীর দ্বন্দ্ব চিরকালীন। অসুরদের ভয়ঙ্কর মানুষখেকো হিসেবে কোথাও কোথাও বুঝানো হলেও তারা বীর্যবান জাতিসত্তা। বিলাসপ্রিয় রাজাগজা নয়, বরং খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

পিতা হিরণ্যকশিপু বিষ্ণুবিদ্বেষী হলেও প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণু বা হরির ভক্ত। প্রহ্লাদকে হরিভক্তি থেকে বিরত করার জন্য হিরণ্যকশিপু যত রকম ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা নিয়েও সফলকাম হননি। বিষ্ণুর প্রতি প্রহ্লাদের অনুরাগ থাকায় তিনি জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হরিভক্ত হিসেবে আখ্যাত হন। দৈত্যের বংশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রহ্লাদ ভক্তসমাজের আদর্শ। তাই খারাপ বংশে ভালো মানুষ দেখা গেলে মানুষ আলোচ্য প্রবাদ ব্যবহার করে।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন