দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার

সমর পাল

প্রলয় কাণ্ড, চরম হট্টগোল, তুমুল গোলমাল অর্থে আমরা প্রবাদটি ব্যবহার করি। এই প্রবাদ এসেছে প্রজাপতি (সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মানসপুত্র, যাদের মাধ্যমে জীবসমূহের সৃষ্টি। এসব প্রজাপতি হলেন মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, বশিষ্ঠ, দক্ষ, ভৃগু ও নারদমুনি। মূল প্রজাপতি হলেন ব্রহ্মা।) দক্ষের যজ্ঞ থেকে।

দক্ষের জন্ম হয়েছিল ব্রহ্মার বুড়ো আঙ্গুল থেকে। মনুর কন্যা প্রসূতির গর্ভে তার ষোলজন কন্যার জন্ম হয়। তাদের মধ্যে সতীর বিয়ে হয় মহাদেবের সাথে। একবার এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করেন বিশ্বস্রষ্টাগণ। সব দেবতা সেখানে উপস্থিত হন। ঐ যজ্ঞে প্রজাপতি দক্ষ হাজির হলে দেবতারা দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলেও মহাদেব ও ব্রহ্মা আসন ছেড়ে দাঁড়ালেন না। এতে দক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে মহাদেবকে যজ্ঞের ফলভাগ থেকে বঞ্চিত করার অভিশাপ দেন। অবশ্য ব্রহ্মার দাঁড়ানোর প্রশ্ন আসে না, কারণ তিনি সবার ওপরে।

কিছুদিন পর সকল প্রজাপতির প্রধান হিসেবে দক্ষকে মনোনীত করেন ব্রহ্মা। গর্বিত দক্ষ বৃহস্পতি নামক এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করে ত্রিলোকের সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ করেন মহাদেব ও সতীকে বাদ দিয়ে। আমন্ত্রণ না পেলেও সতী পিতার যজ্ঞে উপস্থিত হন মহাদেবের সাথে ঝগড়া করে। তার সামনেই দক্ষ জামাইয়ের বদনাম করতে শুরু করেন। পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে পিতার যজ্ঞস্থলেই সতী প্রাণত্যাগ করেন।

খবর পেয়েই ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব মাথার চুলের একটি জটা ছিঁড়ে মাটিতে ফেললেন! সেই ছিজটা থেকে মহাদেবের ক্রোধানলে তার ভয়ঙ্কর অনুচর বীরভদ্রের উদ্ভব হয়। বায়ু পুরাণের বর্ণনামতে বীরভদ্র সহস্ৰ মস্তক, সহস্র চক্ষু ও সহস্র পদসম্পন্ন, সহস্র গদাধারী, বাঘছাল পরিহিত। ভীষণাকার অতি উজ্জ্বল এর রূপ। এর প্রকাণ্ড পেট, বিকট মুখ ও লম্বা দাঁত। হাতে শূল, দেহের চারপাশে আগুনের শিখার মতো তেজ।

বীরভদ্র তার অনুচরসহ দক্ষযজ্ঞে উপস্থিত হলেন। অসংখ্য গণদেবতা সৃষ্টি করে তাদের নিয়ে যজ্ঞের সমস্ত উপকরণ চূর্ণবিচূর্ণ উৎপাটিত ও দগ্ধ করে উপস্থিত সকলকে পেটাতে শুরু করে বীরভদ্রের বাহিনী। দেবতারা পালিয়ে গেলেন। লণ্ডভণ্ড প্রলয়কাণ্ডে ঋষি ও দেবতাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দক্ষের মাথা ছিঁড়ে ফেলে আগুনে ভস্ম করা হলো। অবশেষে ব্রহ্মা শিবকে স্তুতি ও অনুনয় বিনয় করে কিছুটা শান্ত করেন। দক্ষের প্রাণ গেল। যজ্ঞ ধ্বংস হলো। রুদ্ররোষে লণ্ডভণ্ডকারী প্রলয়কাণ্ডকে তাই দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার বলে থাকি আমরা। দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার মানেই লণ্ডভণ্ড কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত অবস্থা।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন