মারের ওপর ওষুধ নাই

সমর পাল

আমাদের দেশে প্রবাদটি বেশ চালু। সহজভাবে কোনো মানুষকে সুবিবেচক করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে পথে আনা বিষয়ে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর সংস্কৃতরূপ এ রকম—

হবিবিনা হরিযাতি বিনা পীঠেন মাধবঃ।
কদন্নৈঃ পুণ্ডরীকাক্ষঃ প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ ॥

সুবলচন্দ্র মিত্র (১৮৭২-১৯১৩ খ্রি.) এ প্রসঙ্গে যে উৎস বর্ণনা করেছেন তা সহজভাবে উপস্থাপন করছি।

এক ব্রাহ্মণের চার মেয়েজামাই—হরি, মাধব, পুণ্ডরীকাক্ষ ও ধনঞ্জয়। শ্বশুরের বাড়িতে মহাসুখে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে তারা। বিনা পরিশ্রমে আদর-যত্নে তাদের দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু শ্যালকেরা ভগ্নিপতিদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছে না। নানা কৌশলেও বাড়ি ছাড়া করা যাচ্ছে না জামাইদের। ফন্দি আঁটতে থাকে শ্যালকেরা।

একদিন খাবার সময় জামাইরা দেখলো যে, তাদের পাতে ঘি (হবি ) পড়েনি। বড় জামাই হরি এতে অপমানিত বোধ করলেও অন্যরা তেমন কিছু মনে করলো না। হরি অসন্তুষ্ট হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়লো। থাকলো অন্য তিন জামাই। আরেকদিন খাবার সময় আসন বা পিঁড়ি (পীঠ) দেয়া হলো না জামাইদের। এতে অপমানিত বোধ করে চলে গেল দ্বিতীয় জামাই মাধব। আরেকদিন খাদ্যসামগ্রী ছিল নিকৃষ্টমানের। মনের দুঃখে তৃতীয় জামাই পুণ্ডরীকাক্ষ ত্যাগ করলো শ্বশুরালয়।

কিন্তু চতুর্থ জামাই ধনঞ্জয় আর যায় না। যত অপমানজনক ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন কোনোটিই তাকে টলাতে পারে না। মহাসঙ্কটে পড়ে শ্যালকেরা তাকে একদিন আচ্ছামতো লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দিল। প্রবাদটি সংক্ষেপে প্রহারেণ (প্রহারের দ্বারা) ধনঞ্জয়ঃ বলা হয়। অর্থাৎ মারের দ্বারাই ধনঞ্জয় শ্বশুরবাড়ি ছাড়ে। আমাদের বাংলাদেশেও নানা আলোচনায় ত্যাঁদড় বা বেহায়াকে সোজা করার মোক্ষম ওষুধ হিসেবে শেষ সম্বল মার বা মাইরকে বেছে নেওয়ার জন্য অভিমত দেয়া হয়। সে কারণে বলা হয় এই প্রবাদ বাক্যটি।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন