সমর পাল
শাঁখ হলো সমুদ্রজাত শঙ্খ। শঙ্খবণিক বা শাঁখারিগণ দূর অতীত থেকে শাঁখ থেকে প্রস্তুত সামগ্রীর ব্যবসা করে জীবনধারণ করে আসছে। নগেন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৬-১৯৩৮ খ্রি.) সঙ্কলিত বিশ্বকোষে (বিংশ ভাগ ১৩১৬ বঙ্গাব্দ) বলা হয়েছে—
‘বাঙ্গালার ঢাকা অঞ্চলের শঙ্খবণিকেরা শাঁখ কাটিয়া সুন্দর সুন্দর চুড়ি, বালা, শাঁখা-বোতাম, পায়ের বেঁকি প্রভৃতি প্রস্তুত করিয়া থাকে। ছোট শাঁখ অপেক্ষা বড় শাঁখের আদর বেশি, কারণ তাহাতে নানা শিল্পকার্য চলিতে পারে। ভারতের সভ্য ও অসভ্য জাতির মধ্যে শঙ্খনির্মিত অলঙ্কার ধারণ করিবার রীতি আছে। কোন কোনো দেবমন্দিরে শঙ্খের প্রদীপে ঘৃত দিয়া আলোক জ্বালিয়া দেওয়া হয়। ধোবারা বস্ত্রাদি আড়নদাস্ত করিবার সময় উপরিভাগ শাঁখ দিয়া ঘষিয়া দেয়, তাহাতে উপরের পাড় বেশ চকচকে দেখায়।’
শঙ্খ থেকে নানা রকম অলঙ্কার ও ব্যবহার্য উপকরণ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় বিশেষ ধরনের করাত। এই করাতে দু’দিকেই ধার থাকে। এই করাত যারা দেখেছেন, তারা জানেন যে, শাঁখারিরা শঙ্খ কাটার সময় করাত ব্যবহার করতে সামনে ও পেছনে করেন। সাধারণ কাটকাটা করাত শুধু ফিরে আসার সময় কাটে। কিন্তু শাঁখের করাত যেতেও কাটে, ফিরে আসতেও কাটে। সেজন্য বলা হল—
সুজনের সাথে আনের পিরিতি
কহিতে পরাণ ফাটে।
শঙ্খ বণিকের করাত যেমন
আসিতে যাইতে কাটে ॥
উভয় সঙ্কট বুঝাতে কিংবা উভয়দিকে বিপদ বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে মানুষ শাঁখের করাত প্রবাদ ব্যবহার করে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন