ভেড়ার পাল

সমর পাল

ভেড়ার পাল

বুদ্ধিহীন প্রাণী হিসেবে এদেশে ভেড়ার পরিচিতি। মনে করা হয় যে, ভেড়ার নিজস্ব বিবেচনাবোধ নেই। তাকে যেভাবে চালানো হয় সেভাবেই চলে অথবা অন্যের অনুসরণ ছাড়া আর নিজস্ব কোনো গতি নেই। ভেড়ার দলের (পাল) মধ্যে একটি ভেড়া যেদিকে যায় অন্যরাও সেইদিকে চলে। মাঝে বিপদের সম্ভাবনা থাকলেও সে বিপদের ভাবনা তার মাথায় ঢোকে না।

একইভাবে একটি শ্রেণীর লোকের মধ্যে একজন যে পথ অবলম্বন করে অন্য সকলে কিছুমাত্র বিবেচনা না করে যদি সেই পথেই চলে তাহলে ঐ শ্রেণীর লোকগুলো ভেড়ার পাল নামে কথিত হয়।

গড্ডলিকা-প্রবাহ অর্থেও ভেড়ার পাল বুঝায়। গড্ডল বা গড্ডর সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ ভেড়া বা গাড়ল। গড্ডলিকা বা গড্ডরিকা অর্থ পালের মধ্যে সবার আগে থাকা ভেড়ি। প্রবাহ বা স্রোতে ভেড়া সাঁতরাতে না পারলেও অন্ধভাবে নেতৃত্বের অনুসরণ করে বলে চোখে দেখেও অগ্রবর্তী নেতা বা নেত্রীর অনুসরণে প্রবহমান জলে ঝাঁপ দিয়ে মরতে পারে। ভালোমন্দ না বুঝে এরূপ অনুসরণ করাকে ভেড়ার চাল বা গড্ডলিকা প্রবাহ বলা হয়। আবার এই ভেড়ার পালের মতো অভ্যাস যাদের তারা ভেড়ার পাল নামে অভিহিত। মূর্খের মতো পরের বুদ্ধিতে পরিচালিত ব্যক্তি আমাদের দেশে গাড়ল নামে পরিচিত যা সংস্কৃতে গড্ডল (ভেড়া)।

ভেড়ার গোয়ালে যদি আগুন লাগে তবে ভেড়া পালানোর চেষ্টা না করে শুধুই চিৎকার করতে থাকে। বিপদ-আপদে মানুষজন যদি প্রতিকারের উপায় চিন্তা না করে শুধু হৈ চৈ কোলাহল করে তবে সাধারণভাবে বলা হয় ভেড়ার গোয়ালে আগুন লেগেছে। এটিও ভেড়ার আচরণ-সংক্রান্ত একটি প্রবাদ।

যেখানে কোনো বিজ্ঞ বা বুদ্ধিমান লোক নেই তেমন স্থানে অল্পজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও অভিজ্ঞ হিসেবে মাতব্বরি করার সুযোগ পায়। এ ধরনের অবস্থাকে আমাদের প্রবাদে বলে—ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল। এই প্রবাদের সাথে তুলনীয় প্রবাদ হলো—দূর্বা বনে খাটাশই (খটাশ, ভাম, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল) বাঘ অথবা নিরস্তপাদপে দেশে এরণ্ডোহপি দ্রুমায়তে—অর্থাৎ যে দেশে বৃক্ষ নেই সেখানে এরণ্ডই (ভেরেণ্ডা বা ভেলনা) বৃক্ষ।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন