ধুন্ধুমার কাণ্ড

সমর পাল

তুমুল কাণ্ড, প্রচণ্ড কোলাহল, গোলমাল বা বিষম কাণ্ডকে আমাদের দেশে ধুন্ধুমার কাণ্ড নামে অভিহিত করা হয়। এ প্রবাদ ও বাগধারার উৎপত্তি সম্পর্কে নিচে বলা হলো—

অযোধ্যার ইক্ষবাকুবংশীয় (সূর্যবংশ) রাজা বৃহদশ্বের পুত্র হলেন রাজা কুবলাশ্ব। রাজা বৃহদশ্ব যাবেন বনবিহারে মহর্ষি উতঙ্কের আশ্রমে। কিন্তু মহর্ষি উতঙ্ক বৃহদশ্বকে তা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিলেন। কারণ উতঙ্কের আশ্রমের কাছে রয়েছে উজ্জ্বালক নামে এক বালু-সমুদ্র। সেখানে বাস করে মধু দানবের পুত্র ধুন্ধু। ব্রহ্মার বরে সে দেব, দানব, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, রাক্ষস সবার অবধ্য। ভয়ঙ্কর এই দানব নানাভাবে উতঙ্কের আশ্রমে অত্যাচার চালাতো। রাজা বৃহদশ্ব উতঙ্কের কাছে এ সংবাদ শুনে পুত্র কুবলাশ্বকে আদেশ করলেন ধুন্ধুকে দমন করে আশ্রমবাসীর শান্তি ফিরিয়ে আনতে। পুত্রের হাতে রাজ্যভার দিয়ে তিনি গেলেন বানপ্রস্থে।

মহর্ষি উতঙ্কের কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তাকে পূর্বে বর দিয়েছিলেন যে, তার যোগবল অবলম্বন করে রাজা কুবলাশ্ব বধ করবেন ধুন্ধুকে। ধুন্ধুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ উতঙ্কের একান্ত অনুরোধে কুবলাশ্বের দেহে প্রবেশ করলেন বিষ্ণু। রাজা কুবলাশ্ব একুশ হাজার পুত্র (আসলে পুত্রবৎ পালিত স্বজন) ও সৈন্য-সামন্ত নিয়ে অগ্রসর হলেন ধুন্ধুকে বিনাশ করতে।

এক সপ্তাহ ধরে অবরোধ করে বালুর সমুদ্র খুঁড়ে দেখা গেল ধুন্ধু ঘুমাচ্ছে। তুমুল হট্টগোলে উঠে পড়লো সে। তার মুখ থেকে বের হচ্ছে আগুনের তেজ। কুবলাশ্বের পুত্ররা সেই তেজে ভস্ম হয়ে গেল। বিষ্ণুর শক্তিপ্রভাবে কুবলাশ্ব যোগশক্তির প্রয়োগ করে নিভিয়ে দিলেন ধুন্ধুর মুখাগ্নি। অতঃপর ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে বধ করলেন তাকে। ধুন্ধুকে তুমুল উত্তেজনা, কোলাহল আর প্রচণ্ড সংঘর্ষে নিহত করে রাজা কুবলাশ্ব পরিচিত হলেন ধুন্ধুমার অর্থাৎ ধুন্ধুর বিনাশকারী হিসেবে।

আমাদের প্রবাদপুরুষ ধুন্ধুমার হলেন অযোধ্যার রাজা কুবলাশ্ব যিনি তুমুল কোলাহল, ভয়ঙ্কর কাণ্ড ও বিপুল আয়োজন করে বিনাশ করেছিলেন ধুন্ধু নামক প্রবল পরাক্রান্ত দানবকে।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন